Ajker Patrika

মনোনয়ন-বাণিজ্য বন্ধের পথ পাচ্ছে না কমিশন

  • নির্বাচনে কালোটাকার ব্যবহার বন্ধ করার পথও খুঁজছে কমিশন।
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার সুপারিশ দেওয়া হবে।
  • দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা হলে নিম্নকক্ষে ভোট, উচ্চকক্ষে আনুপাতিক।
  • ব্যালটের পক্ষে মত, কয়েকটি আইন পরিবর্তনের সুপারিশ হতে পারে।
মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা 
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ০৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নির্বাচনে মনোনয়ন-বাণিজ্য ও অদৃশ্য নির্বাচনী ব্যয় বা কালোটাকার ব্যবহার বন্ধ করার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। অংশীজনদের সঙ্গে এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনায়ও এর সমাধান মেলেনি। কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের পক্ষে। এ ছাড়া সংস্কার কমিশন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো এবং একই ব্যক্তি টানা দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না—এমন সুপারিশ দিতে পারে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পরিবর্তে ব্যালট পেপারে ভোটের পক্ষে। এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা চালুর বিষয়েও মতামত এসেছে। সূত্র বলেছে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে প্রচলিত পদ্ধতির ভোটে নিম্নকক্ষ গঠন এবং আনুপাতিক হারে উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে কমিশনে আলোচনা চলছে। সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে ভোট এবং মহিলা আসনসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়া, দলীয় প্রার্থী হতে হলে কমপক্ষে তিন বছর দলের সদস্য থাকা এবং নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনীকে আবার যুক্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্কার কমিশন।

ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন এ কমিশন ইতিমধ্যে একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়ে আশাবাদ জানিয়েছে কমিশন। গত ৩ অক্টোবর এই কমিশন গঠন করা হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের সূত্র বলেছে, কমিশনের সদস্যরা মনে করেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার পথে বড় বাধা প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বাণিজ্য এবং কালোটাকার দৌরাত্ম্য। নির্বাচনে এ দুটি ঠেকানোর উপায় খুঁজে বের করা তাঁদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এর সমাধান খুঁজছেন তাঁরা। এ নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। আলোচনাও প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রবাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় বাকি আছে। তাঁরা আশা করছেন, সবার সঙ্গে মতবিনিময় সম্পন্ন হলে একটি সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি এবং আগে জাতীয় সংসদ, না কি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে—এসব নিয়ে কমিশনে আলোচনা চলছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং শাসনপ্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ মীর নাদিয়া নিভিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুটি বিষয়কে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে। একটি হচ্ছে মনোনয়ন-বাণিজ্য এবং অন্যটি অদৃশ্য নির্বাচনী ব্যয় বা কালোটাকার ব্যবহার বন্ধ করা। এ দুটি বিষয় নিয়ে সমাধান খুঁজে পেতে আমরা সত্যিই হাবুডুবু খাচ্ছি।’ তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যত দিন বাণিজ্যমুখী থেকে জনমুখী রাজনীতি না করবে, তত দিন এ ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না। চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের জন্য এগুলো বন্ধে কিছু সুপারিশ হয়তো তাঁরা দিতে পারেন; কিন্তু রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে এটি বন্ধ করা কঠিন।

সূত্র জানায়, কমিশন ১২ ডিসেম্বর অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার ব্যাপারে কমিশন আশাবাদী।

কমিশনের সূত্র বলেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে জাতীয় সংসদে আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলও এর পক্ষে মত দিয়েছে। তবে জনগণের কাছ থেকে কমিশন যেসব মতামত পাচ্ছে, তাতে আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের বিষয়টিতে একটু পরিবর্তন এসেছে। এখানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে মতামত এসেছে। এতে নিম্নকক্ষে প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোটে সদস্য নির্বাচন ও উচ্চকক্ষে আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের প্রস্তাব এসেছে। তবে আনুপাতিক হার কীভাবে নির্ধারণ করা হবে, তা নিয়ে পর্যালোচনা করছে কমিশন।

সূত্র জানায়, কমিশন মনে করে, প্রযুক্তিতে মানুষের তেমন আস্থা নেই। তাই কমিশনের সদস্যরা নির্বাচনে ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালট পেপার ব্যবহারের পক্ষে। তাঁরা মনে করেন, শুধু প্রবাসী ভোটারদের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।

কমিশনের সূত্র বলেছে, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে বিভিন্ন মহল থেকে জোরালো মতামত এসেছে। তাদের প্রস্তাব, আসন ঘুরিয়ে সরাসরি ভোটে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন করা হোক। কমিশনের সদস্যরাও ঘূর্ণমান পদ্ধতির পক্ষে। তবে কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৫০টি থেকে বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে।

কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন প্রণয়ন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব প্রদান, নির্বাচন কমিশনের কাজের পরিধি, ‘না’ ভোটের বিধান আবার যুক্ত করা, ‘না’ ভোট বেশি পড়লে পুনরায় ভোট, সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনের পরিবর্তন, সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন, হলফনামা যাচাই, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সহজ করা, প্রবাসীদের ভোটার করা। এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ (প্রার্থীর যোগ্যতা), ১৩, ৪৪ এবং ৭৩ থেকে ৮৯ পর্যন্ত ধারা পরিবর্তনের সুপারিশ করা হতে পারে। বিতর্কিত নির্বাচনের জন্য বিগত তিনটি নির্বাচন কমিশনের বিচারের পাশাপাশি ভবিষ্যতে কোনো কমিশন এমন অপকর্মে জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান করারও সুপারিশ আসতে পারে। রাজনৈতিক দলে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর বিষয়েও সংস্কার কমিশন কাজ করছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য মীর নাদিয়া নিভিন বলেন, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে জনগণ, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন অংশীজন ও কমিশনের সদস্যদের দেওয়া মতামত বিশ্লেষণ চলছে। কমিশন কোন কোন বিষয়ে কাজ করছে, অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে সে ধারণা দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হবে। যেসব আইন পরিবর্তনের সুপারিশ করা হবে, সংযুক্তিতে সে সব আইনের খসড়া যুক্ত করে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনকে সামনে রেখে সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রেস ইউং
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রেস ইউং

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব ধরনের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিকে নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সব ধরনের সাইবার অপরাধকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’

ড. ইউনূস বলেন, সরকার সব ধরনের নাগরিক সেবাকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে অনেক সেবা দেশে ও বিদেশে অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। এসব সেবাকে সুরক্ষিত ও নির্বিঘ্ন রাখতে হলে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। নাগরিক সেবার খাতগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

ড. ইউনূস আরও বলেন, সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিসহ যেসব প্রতিষ্ঠান সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা নেবে, তাদের নিয়মিত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার হালনাগাদ করতে হবে। পাশাপাশি এসব ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত জনবলকে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট জনবলকে একটি রেটিং পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে, যাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাইবার সুরক্ষাসহ প্রকৃত মূল্যায়ন সহজ হয়। ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে কোনো অপরাধ করে যেন কেউ পার পেয়ে না যায়—সে বিষয়েও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিকে বিচার বিভাগের পাশাপাশি কার্যকর ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ইতিমধ্যে ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠান এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুজব, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশনসহ অন্যান্য সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি এবং বিটিআরসির মধ্যকার সমন্বয়সাধনের বিষয়ে জোর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরের সাইবার নিরাপত্তা আরও দৃঢ় করতে ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং আরও কিছু কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া তিনি সেক্টরাল সার্ট (সিইআরটি) গঠনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সদস্যসচিব ও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির মহাপরিচালক ড. মো. তৈয়বুর রহমান পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এজেন্সির কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনাসহ সাইবার পরিমণ্ডলে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রণীত ‘সাইবার ইনসিডেন্ট রিপোর্টিং অ্যান্ড রেস্পনস সিস্টেম’-এর বিস্তারিত উপস্থাপন করেন।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

২১ মে সাইবার সুরক্ষা অধ‍্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়নের পর এই সংশোধিত অধ‍্যাদেশের অধীনে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত ২৬ আগস্ট জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিল গঠিত হয়। ২৫ সদস্যের এই কাউন্সিলের নেতৃত্বে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয় পরিদর্শন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা

বাসস, ঢাকা 
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ফাইল ছবি
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ফাইল ছবি

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় আজ রোববার পরিদর্শন করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি বলেছেন, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টারের উপদেষ্টা সম্পাদক কামাল আহমেদ, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা।

প্রতিষ্ঠান দুটির ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পরিদর্শন শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, পক্ষে-বিপক্ষে মতভেদ থাকাটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে সহিংসতা ও হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়ায় সরকার এর ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকা উচিত। দেশ গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকার ও গণমাধ্যমকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, পত্রিকা প্রকাশের সক্ষমতা বড় সাহসিকতা ও পেশাদারত্বের পরিচয়। মিডিয়া সত্য তুলে ধরবে—এটাই জনগণের প্রত্যাশা। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

এ সময় ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃঢ়তার প্রশংসা করেন। ক্ষতিগ্রস্ত গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বলেন, গণমাধ্যম ঘুরে দাঁড়াবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মনোনয়নপত্রে সন্তানের আয়ের তথ্য দেওয়া ঐচ্ছিক—বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর ইসির চিঠি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে থাকা ‘সন্তানের আয়’ দেখানোর বাধ্যবাধকতা বিষয়ে স্পষ্টতা চেয়ে আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এর পরপরই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, এই তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক।

আজ রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আরপিওতে না থাকা সত্ত্বেও মনোনয়নপত্রে সন্তানেরও আয়ের হিসাব দেওয়ার বিষয়টি রাখা হয়েছে। যেটা নিয়ে সব জায়গায় একটা প্রশ্ন উঠেছে। কারণ অনেকের সন্তানেরা নিজেরাই উপার্জনক্ষম এবং তাঁরা নির্ভরশীল নন। অনেকেই দেশের বাইরে থাকেন। অনেকেই নিজেরা আলাদাভাবেই ট্যাক্স দেন। এই বিষয়টা নিয়ে একটা জটিলতা হয়ে গেছে। যার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছি এবং কথা বললাম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন নির্ভরশীল সন্তানদের বুঝিয়েছেন। তাঁরা এর ব্যাখ্যা দেবেন যে, এই ‘সন্তান’ শব্দটার অর্থ হলো ‘নির্ভরশীল সন্তান’।

সিইসির সঙ্গে বিএনপির এই বৈঠকের পর বিষয়টি স্পষ্ট করে বিকেলে সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, হলফনামার ক্রম ১০-এ আয়কর সংক্রান্ত তথ্যে সর্বশেষ আয়কর রিটার্ন জমার বিবরণ অংশে প্রদত্ত ছকের ক্রমিক ২,৩ ও ৪ এ উল্লিখিত যথাক্রমে স্বামী/স্ত্রী, সন্তান ও নির্ভরশীলদের আয়কর সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া ঐচ্ছিক মর্মে বিবেচিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩৩
আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: সংগৃহীত
আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই সম্পন্ন করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, হাদি হত্যার তদন্ত শেষপর্যায়ে রয়েছে এবং আগামী ১০ দিনের মধ্যে (৭ জানুয়ারি) এ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা সম্ভব হবে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে মামলাটি ইতিমধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে তদন্তের স্বার্থে সব তথ্য প্রকাশ না করলেও উপদেষ্টা বেশ কিছু অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনার মূল হোতা ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির, মা হাসি বেগম, স্ত্রী শাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু ও প্রেমিকা মারিয়া আক্তার লিমা রয়েছেন। এ ছাড়া মো. কবির, নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, সিবিয়ন দিও, সঞ্জয় চিসিম, মো. আমিনুল ইসলাম রাজু ও মো. আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন ও চারজন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন, ছোরা, ভুয়া নম্বরপ্লেটসহ একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য আলামত পুলিশের হাতে রয়েছে।

তদন্তে ৫৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে মোট ২১৮ কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক জব্দ করা হয়েছে, যা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভেতরে ফ্যাসিস্টের দোসর ও দুষ্কৃতকারীরা ওত পেতে রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ করব—দলের ভেতরে খোলস পাল্টানো সুযোগসন্ধানী ও দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করুন। তারা যেন আপনাদের দলে আশ্রয় না পায়, সে বিষয়ে সচেতন হোন। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিন।’

কোর কমিটির সভায় দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করা হয়। উপদেষ্টা জানান, ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে (অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২) এ পর্যন্ত ২২ হাজার ৩৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১০২টি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার বিষয়েও কথা বলেন। তিনি জানিয়েছেন, এ ঘটনায় র‍্যাব ও পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। লক্ষ্মীপুর নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের মূল আসামি রুবেল এবং খুলনায় শ্রমশক্তি নেতা মোতালেব শিকদারকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হাদি হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল অনবরত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত