আজকের পত্রিকা ডেস্ক

চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, এই ফোরামটি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহুপাক্ষিকতার অধীনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয়। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে। বিশ্ব সম্মিলিত পদক্ষেপের এক উদ্বেগজনক ঘাটতির সম্মুখীন।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ও জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন নিয়ম, প্রবিধান ও প্রযুক্তি শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছে। এক দশক আগে যে অনুমানগুলো নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল, সেগুলো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনোই এত বেশি অনুভূত হয়নি।
২০০৭ সালে আমি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করার জন্য যোগ দিয়েছিলাম। আজ, আমি আপনাদের সামনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকায় দাঁড়িয়েছি। আজ আমি এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে একটি ঐতিহাসিক রূপান্তর লাভ করেছে। বিশ্ব নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এক জাতিকে দেখেছে। আমাদের যুবসমাজ ও নাগরিকেরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যতিক্রমী দৃঢ়তা ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে। জন আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
মাননীয় মহোদয়গণ,
এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্ন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের খরচ এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরও গভীর করছে।
২০৩০ এজেন্ডার প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও, অগ্রগতি ধীর। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো বার্ষিক ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসডিজি অর্থায়ন ঘাটতির সম্মুখীন। এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও, এশিয়ার টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের শিকার হয়েছে। এই দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক ক্ষতি হয়, যা তারা যে মোট ওডিএ (বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা) পায় তার কয়েকগুণ বেশি। সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য এশিয়ার একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের বাজেট, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা অপরিহার্য।
জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নিট-আমদানিনির্ভর (যেসব দেশের আমদানি রপ্তানির চেয়ে বেশি) উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণ সংকট দেখা দেয়। আমাদের টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মানবপুঁজি উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশিক্ষিত, দক্ষ কর্মীবাহিনী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে চালিত করে। যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা উন্নত অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা দেখতে পায়। আমাদের যুবকদের ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
আমরা আত্মঘাতী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি বৃদ্ধির নামে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ এবং পরিবেশের অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়। আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে ঝুঁকতে হবে যা লাভের চেয়ে মানুষ ও গ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবজাতির জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, জলবায়ু দুর্যোগ-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল, যা ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পদ স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করছে। আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার বাইরে, অ-ঋণ সৃষ্টিকারী, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে একটি ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করবে।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি একটি সতর্ক বার্তা ছিল, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর বৈষম্যকে তুলে ধরেছে। এশিয়ার মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া উচিত।
উপাত্তভিত্তিক প্রযুক্তি, রোবোটিকস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে নতুন আকার দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির তুলনায় এশিয়ায় কম সক্ষমতা, সামর্থ্য এবং সম্পদ সংস্থান ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তবে এটি অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এশিয়াকে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত নারী ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, তার ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন এবং রীতিনীতির সমৃদ্ধ চিত্র, মানব সভ্যতার স্থিতিস্থাপকতা এবং সৃজনশীলতার প্রমাণ। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শন, অন্যদের মধ্যে, বিশ্ব চিন্তাভাবনাকে রূপ দিয়েছে, নৈতিকতা, শাসন এবং মানব আত্মা সম্পর্কে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।
এশিয়া তার বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করেই সমৃদ্ধ হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত আদান-প্রদান কেবল এই অঞ্চলকেই প্রভাবিত করেনি, বিশ্বকেও রূপ দিয়েছে। আজ, এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি তার বিশ্বব্যাপী প্রভাবের চালিকাশক্তি। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, পূর্বপুরুষদের প্রজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের পাশাপাশি, একটি গতিশীল শক্তি তৈরি করে যা এই অঞ্চলকে তার গভীর ঐতিহাসিক শিকড়কে সম্মান জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এশিয়ার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিশাল সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে। একটি ক্রমবর্ধমান কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে তরুণেরা, উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতাকে এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার ও সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য অর্থায়নের সুযোগ দিতে হবে। মানবপুঁজি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিনিয়োগ করতে হবে যা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং এশিয়ার ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলকতাকে রূপ দেবে।
এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনো কম। নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিঙ্গবৈষম্য বিদ্যমান। আমাদের অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা দূর করতে হবে এবং সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বহু-সংকটময় বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে এবং অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। গাজায় গণহত্যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার পরেও অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিমদের উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমরা উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত খরচ বহন করে চলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি সংহতি জানাতে শিবির পরিদর্শন করেছেন। যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য একত্রিত হতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই ফোরামে, এশিয়াকে চারটি মূল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, আর্থিক সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সহযোগিতা। এশিয়া এখনো সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এই দুর্বল সমন্বয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
তৃতীয়ত, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা। আমাদের সম্পদ-সাশ্রয়ী চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক টেকসই কৃষি সমাধান এবং পুনর্জন্মমূলক ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে উদ্ভাবন সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, প্রযুক্তি সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। আমাদের জ্ঞান, ডেটা শেয়ার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ওপর সহযোগিতা অগ্রগতিকে চালিত করবে।
অবশেষে, মেধা সম্পদ এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করা আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে: একটি আত্ম-সংরক্ষণকারী এবং আত্ম-পুনর্বিন্যাসকারী সমাজরে দিকে এগিয়ে যেতে হলে। আমাদের ‘শূন্য-বর্জ্য’ জীবনযাত্রার নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
ভোগ কেবল প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সামাজিক ব্যবসার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবসার ভবিষ্যতের পথ নির্দেশক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে; যেখানে উদ্ভাবন, উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব একত্রিত হয়। বোয়াও ফোরাম এবং এশিয়ার অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে যুব ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে এশিয়া আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান হয়।
আমি সব সময় বলি, প্রতিটি যুবক-যুবতীর ‘থ্রি-জিরো বা তিন-শূন্য’ ধারণা সংবলিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেড়ে ওঠা উচিত—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে শূন্য বেকারত্ব। এটাই সেই অভিন্ন ভবিষ্যৎ, যা আমাদের এশিয়ায় একসঙ্গে তৈরি করতে হবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, এই ফোরামটি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহুপাক্ষিকতার অধীনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয়। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে। বিশ্ব সম্মিলিত পদক্ষেপের এক উদ্বেগজনক ঘাটতির সম্মুখীন।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ও জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন নিয়ম, প্রবিধান ও প্রযুক্তি শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছে। এক দশক আগে যে অনুমানগুলো নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল, সেগুলো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনোই এত বেশি অনুভূত হয়নি।
২০০৭ সালে আমি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করার জন্য যোগ দিয়েছিলাম। আজ, আমি আপনাদের সামনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকায় দাঁড়িয়েছি। আজ আমি এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে একটি ঐতিহাসিক রূপান্তর লাভ করেছে। বিশ্ব নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এক জাতিকে দেখেছে। আমাদের যুবসমাজ ও নাগরিকেরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যতিক্রমী দৃঢ়তা ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে। জন আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
মাননীয় মহোদয়গণ,
এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্ন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের খরচ এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরও গভীর করছে।
২০৩০ এজেন্ডার প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও, অগ্রগতি ধীর। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো বার্ষিক ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসডিজি অর্থায়ন ঘাটতির সম্মুখীন। এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও, এশিয়ার টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের শিকার হয়েছে। এই দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক ক্ষতি হয়, যা তারা যে মোট ওডিএ (বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা) পায় তার কয়েকগুণ বেশি। সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য এশিয়ার একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের বাজেট, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা অপরিহার্য।
জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নিট-আমদানিনির্ভর (যেসব দেশের আমদানি রপ্তানির চেয়ে বেশি) উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণ সংকট দেখা দেয়। আমাদের টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মানবপুঁজি উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশিক্ষিত, দক্ষ কর্মীবাহিনী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে চালিত করে। যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা উন্নত অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা দেখতে পায়। আমাদের যুবকদের ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
আমরা আত্মঘাতী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি বৃদ্ধির নামে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ এবং পরিবেশের অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়। আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে ঝুঁকতে হবে যা লাভের চেয়ে মানুষ ও গ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবজাতির জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, জলবায়ু দুর্যোগ-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল, যা ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পদ স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করছে। আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার বাইরে, অ-ঋণ সৃষ্টিকারী, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে একটি ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করবে।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি একটি সতর্ক বার্তা ছিল, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর বৈষম্যকে তুলে ধরেছে। এশিয়ার মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া উচিত।
উপাত্তভিত্তিক প্রযুক্তি, রোবোটিকস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে নতুন আকার দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির তুলনায় এশিয়ায় কম সক্ষমতা, সামর্থ্য এবং সম্পদ সংস্থান ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তবে এটি অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এশিয়াকে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত নারী ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, তার ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন এবং রীতিনীতির সমৃদ্ধ চিত্র, মানব সভ্যতার স্থিতিস্থাপকতা এবং সৃজনশীলতার প্রমাণ। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শন, অন্যদের মধ্যে, বিশ্ব চিন্তাভাবনাকে রূপ দিয়েছে, নৈতিকতা, শাসন এবং মানব আত্মা সম্পর্কে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।
এশিয়া তার বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করেই সমৃদ্ধ হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত আদান-প্রদান কেবল এই অঞ্চলকেই প্রভাবিত করেনি, বিশ্বকেও রূপ দিয়েছে। আজ, এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি তার বিশ্বব্যাপী প্রভাবের চালিকাশক্তি। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, পূর্বপুরুষদের প্রজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের পাশাপাশি, একটি গতিশীল শক্তি তৈরি করে যা এই অঞ্চলকে তার গভীর ঐতিহাসিক শিকড়কে সম্মান জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এশিয়ার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিশাল সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে। একটি ক্রমবর্ধমান কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে তরুণেরা, উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতাকে এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার ও সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য অর্থায়নের সুযোগ দিতে হবে। মানবপুঁজি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিনিয়োগ করতে হবে যা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং এশিয়ার ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলকতাকে রূপ দেবে।
এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনো কম। নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিঙ্গবৈষম্য বিদ্যমান। আমাদের অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা দূর করতে হবে এবং সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বহু-সংকটময় বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে এবং অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। গাজায় গণহত্যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার পরেও অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিমদের উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমরা উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত খরচ বহন করে চলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি সংহতি জানাতে শিবির পরিদর্শন করেছেন। যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য একত্রিত হতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই ফোরামে, এশিয়াকে চারটি মূল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, আর্থিক সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সহযোগিতা। এশিয়া এখনো সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এই দুর্বল সমন্বয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
তৃতীয়ত, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা। আমাদের সম্পদ-সাশ্রয়ী চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক টেকসই কৃষি সমাধান এবং পুনর্জন্মমূলক ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে উদ্ভাবন সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, প্রযুক্তি সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। আমাদের জ্ঞান, ডেটা শেয়ার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ওপর সহযোগিতা অগ্রগতিকে চালিত করবে।
অবশেষে, মেধা সম্পদ এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করা আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে: একটি আত্ম-সংরক্ষণকারী এবং আত্ম-পুনর্বিন্যাসকারী সমাজরে দিকে এগিয়ে যেতে হলে। আমাদের ‘শূন্য-বর্জ্য’ জীবনযাত্রার নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
ভোগ কেবল প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সামাজিক ব্যবসার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবসার ভবিষ্যতের পথ নির্দেশক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে; যেখানে উদ্ভাবন, উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব একত্রিত হয়। বোয়াও ফোরাম এবং এশিয়ার অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে যুব ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে এশিয়া আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান হয়।
আমি সব সময় বলি, প্রতিটি যুবক-যুবতীর ‘থ্রি-জিরো বা তিন-শূন্য’ ধারণা সংবলিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেড়ে ওঠা উচিত—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে শূন্য বেকারত্ব। এটাই সেই অভিন্ন ভবিষ্যৎ, যা আমাদের এশিয়ায় একসঙ্গে তৈরি করতে হবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, এই ফোরামটি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহুপাক্ষিকতার অধীনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয়। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে। বিশ্ব সম্মিলিত পদক্ষেপের এক উদ্বেগজনক ঘাটতির সম্মুখীন।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ও জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন নিয়ম, প্রবিধান ও প্রযুক্তি শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছে। এক দশক আগে যে অনুমানগুলো নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল, সেগুলো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনোই এত বেশি অনুভূত হয়নি।
২০০৭ সালে আমি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করার জন্য যোগ দিয়েছিলাম। আজ, আমি আপনাদের সামনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকায় দাঁড়িয়েছি। আজ আমি এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে একটি ঐতিহাসিক রূপান্তর লাভ করেছে। বিশ্ব নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এক জাতিকে দেখেছে। আমাদের যুবসমাজ ও নাগরিকেরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যতিক্রমী দৃঢ়তা ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে। জন আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
মাননীয় মহোদয়গণ,
এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্ন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের খরচ এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরও গভীর করছে।
২০৩০ এজেন্ডার প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও, অগ্রগতি ধীর। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো বার্ষিক ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসডিজি অর্থায়ন ঘাটতির সম্মুখীন। এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও, এশিয়ার টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের শিকার হয়েছে। এই দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক ক্ষতি হয়, যা তারা যে মোট ওডিএ (বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা) পায় তার কয়েকগুণ বেশি। সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য এশিয়ার একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের বাজেট, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা অপরিহার্য।
জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নিট-আমদানিনির্ভর (যেসব দেশের আমদানি রপ্তানির চেয়ে বেশি) উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণ সংকট দেখা দেয়। আমাদের টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মানবপুঁজি উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশিক্ষিত, দক্ষ কর্মীবাহিনী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে চালিত করে। যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা উন্নত অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা দেখতে পায়। আমাদের যুবকদের ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
আমরা আত্মঘাতী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি বৃদ্ধির নামে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ এবং পরিবেশের অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়। আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে ঝুঁকতে হবে যা লাভের চেয়ে মানুষ ও গ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবজাতির জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, জলবায়ু দুর্যোগ-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল, যা ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পদ স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করছে। আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার বাইরে, অ-ঋণ সৃষ্টিকারী, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে একটি ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করবে।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি একটি সতর্ক বার্তা ছিল, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর বৈষম্যকে তুলে ধরেছে। এশিয়ার মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া উচিত।
উপাত্তভিত্তিক প্রযুক্তি, রোবোটিকস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে নতুন আকার দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির তুলনায় এশিয়ায় কম সক্ষমতা, সামর্থ্য এবং সম্পদ সংস্থান ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তবে এটি অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এশিয়াকে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত নারী ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, তার ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন এবং রীতিনীতির সমৃদ্ধ চিত্র, মানব সভ্যতার স্থিতিস্থাপকতা এবং সৃজনশীলতার প্রমাণ। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শন, অন্যদের মধ্যে, বিশ্ব চিন্তাভাবনাকে রূপ দিয়েছে, নৈতিকতা, শাসন এবং মানব আত্মা সম্পর্কে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।
এশিয়া তার বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করেই সমৃদ্ধ হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত আদান-প্রদান কেবল এই অঞ্চলকেই প্রভাবিত করেনি, বিশ্বকেও রূপ দিয়েছে। আজ, এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি তার বিশ্বব্যাপী প্রভাবের চালিকাশক্তি। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, পূর্বপুরুষদের প্রজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের পাশাপাশি, একটি গতিশীল শক্তি তৈরি করে যা এই অঞ্চলকে তার গভীর ঐতিহাসিক শিকড়কে সম্মান জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এশিয়ার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিশাল সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে। একটি ক্রমবর্ধমান কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে তরুণেরা, উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতাকে এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার ও সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য অর্থায়নের সুযোগ দিতে হবে। মানবপুঁজি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিনিয়োগ করতে হবে যা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং এশিয়ার ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলকতাকে রূপ দেবে।
এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনো কম। নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিঙ্গবৈষম্য বিদ্যমান। আমাদের অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা দূর করতে হবে এবং সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বহু-সংকটময় বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে এবং অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। গাজায় গণহত্যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার পরেও অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিমদের উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমরা উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত খরচ বহন করে চলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি সংহতি জানাতে শিবির পরিদর্শন করেছেন। যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য একত্রিত হতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই ফোরামে, এশিয়াকে চারটি মূল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, আর্থিক সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সহযোগিতা। এশিয়া এখনো সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এই দুর্বল সমন্বয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
তৃতীয়ত, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা। আমাদের সম্পদ-সাশ্রয়ী চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক টেকসই কৃষি সমাধান এবং পুনর্জন্মমূলক ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে উদ্ভাবন সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, প্রযুক্তি সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। আমাদের জ্ঞান, ডেটা শেয়ার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ওপর সহযোগিতা অগ্রগতিকে চালিত করবে।
অবশেষে, মেধা সম্পদ এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করা আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে: একটি আত্ম-সংরক্ষণকারী এবং আত্ম-পুনর্বিন্যাসকারী সমাজরে দিকে এগিয়ে যেতে হলে। আমাদের ‘শূন্য-বর্জ্য’ জীবনযাত্রার নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
ভোগ কেবল প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সামাজিক ব্যবসার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবসার ভবিষ্যতের পথ নির্দেশক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে; যেখানে উদ্ভাবন, উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব একত্রিত হয়। বোয়াও ফোরাম এবং এশিয়ার অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে যুব ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে এশিয়া আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান হয়।
আমি সব সময় বলি, প্রতিটি যুবক-যুবতীর ‘থ্রি-জিরো বা তিন-শূন্য’ ধারণা সংবলিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেড়ে ওঠা উচিত—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে শূন্য বেকারত্ব। এটাই সেই অভিন্ন ভবিষ্যৎ, যা আমাদের এশিয়ায় একসঙ্গে তৈরি করতে হবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, এই ফোরামটি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহুপাক্ষিকতার অধীনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয়। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে। বিশ্ব সম্মিলিত পদক্ষেপের এক উদ্বেগজনক ঘাটতির সম্মুখীন।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ও জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন নিয়ম, প্রবিধান ও প্রযুক্তি শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছে। এক দশক আগে যে অনুমানগুলো নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল, সেগুলো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনোই এত বেশি অনুভূত হয়নি।
২০০৭ সালে আমি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করার জন্য যোগ দিয়েছিলাম। আজ, আমি আপনাদের সামনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকায় দাঁড়িয়েছি। আজ আমি এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে একটি ঐতিহাসিক রূপান্তর লাভ করেছে। বিশ্ব নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এক জাতিকে দেখেছে। আমাদের যুবসমাজ ও নাগরিকেরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যতিক্রমী দৃঢ়তা ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে। জন আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
মাননীয় মহোদয়গণ,
এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্ন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের খরচ এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরও গভীর করছে।
২০৩০ এজেন্ডার প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও, অগ্রগতি ধীর। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো বার্ষিক ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসডিজি অর্থায়ন ঘাটতির সম্মুখীন। এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও, এশিয়ার টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের শিকার হয়েছে। এই দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক ক্ষতি হয়, যা তারা যে মোট ওডিএ (বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা) পায় তার কয়েকগুণ বেশি। সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য এশিয়ার একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের বাজেট, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা অপরিহার্য।
জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নিট-আমদানিনির্ভর (যেসব দেশের আমদানি রপ্তানির চেয়ে বেশি) উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণ সংকট দেখা দেয়। আমাদের টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মানবপুঁজি উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশিক্ষিত, দক্ষ কর্মীবাহিনী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে চালিত করে। যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা উন্নত অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা দেখতে পায়। আমাদের যুবকদের ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
আমরা আত্মঘাতী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি বৃদ্ধির নামে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ এবং পরিবেশের অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়। আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে ঝুঁকতে হবে যা লাভের চেয়ে মানুষ ও গ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবজাতির জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, জলবায়ু দুর্যোগ-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল, যা ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পদ স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করছে। আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার বাইরে, অ-ঋণ সৃষ্টিকারী, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে একটি ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করবে।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি একটি সতর্ক বার্তা ছিল, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর বৈষম্যকে তুলে ধরেছে। এশিয়ার মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া উচিত।
উপাত্তভিত্তিক প্রযুক্তি, রোবোটিকস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে নতুন আকার দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির তুলনায় এশিয়ায় কম সক্ষমতা, সামর্থ্য এবং সম্পদ সংস্থান ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তবে এটি অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এশিয়াকে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত নারী ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, তার ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন এবং রীতিনীতির সমৃদ্ধ চিত্র, মানব সভ্যতার স্থিতিস্থাপকতা এবং সৃজনশীলতার প্রমাণ। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শন, অন্যদের মধ্যে, বিশ্ব চিন্তাভাবনাকে রূপ দিয়েছে, নৈতিকতা, শাসন এবং মানব আত্মা সম্পর্কে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।
এশিয়া তার বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করেই সমৃদ্ধ হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত আদান-প্রদান কেবল এই অঞ্চলকেই প্রভাবিত করেনি, বিশ্বকেও রূপ দিয়েছে। আজ, এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি তার বিশ্বব্যাপী প্রভাবের চালিকাশক্তি। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, পূর্বপুরুষদের প্রজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের পাশাপাশি, একটি গতিশীল শক্তি তৈরি করে যা এই অঞ্চলকে তার গভীর ঐতিহাসিক শিকড়কে সম্মান জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এশিয়ার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিশাল সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে। একটি ক্রমবর্ধমান কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে তরুণেরা, উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতাকে এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার ও সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য অর্থায়নের সুযোগ দিতে হবে। মানবপুঁজি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিনিয়োগ করতে হবে যা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং এশিয়ার ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলকতাকে রূপ দেবে।
এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনো কম। নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিঙ্গবৈষম্য বিদ্যমান। আমাদের অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা দূর করতে হবে এবং সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বহু-সংকটময় বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে এবং অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। গাজায় গণহত্যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার পরেও অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিমদের উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমরা উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত খরচ বহন করে চলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি সংহতি জানাতে শিবির পরিদর্শন করেছেন। যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য একত্রিত হতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই ফোরামে, এশিয়াকে চারটি মূল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, আর্থিক সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সহযোগিতা। এশিয়া এখনো সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এই দুর্বল সমন্বয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
তৃতীয়ত, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা। আমাদের সম্পদ-সাশ্রয়ী চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক টেকসই কৃষি সমাধান এবং পুনর্জন্মমূলক ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে উদ্ভাবন সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, প্রযুক্তি সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। আমাদের জ্ঞান, ডেটা শেয়ার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ওপর সহযোগিতা অগ্রগতিকে চালিত করবে।
অবশেষে, মেধা সম্পদ এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করা আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে: একটি আত্ম-সংরক্ষণকারী এবং আত্ম-পুনর্বিন্যাসকারী সমাজরে দিকে এগিয়ে যেতে হলে। আমাদের ‘শূন্য-বর্জ্য’ জীবনযাত্রার নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
ভোগ কেবল প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সামাজিক ব্যবসার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবসার ভবিষ্যতের পথ নির্দেশক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে; যেখানে উদ্ভাবন, উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব একত্রিত হয়। বোয়াও ফোরাম এবং এশিয়ার অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে যুব ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে এশিয়া আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান হয়।
আমি সব সময় বলি, প্রতিটি যুবক-যুবতীর ‘থ্রি-জিরো বা তিন-শূন্য’ ধারণা সংবলিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেড়ে ওঠা উচিত—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে শূন্য বেকারত্ব। এটাই সেই অভিন্ন ভবিষ্যৎ, যা আমাদের এশিয়ায় একসঙ্গে তৈরি করতে হবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই আপিল করা হয়। আপিল দায়েরের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
৬ মিনিট আগে
বাংলা ভাষায় এই প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘কাগজ ডট এআই— kagoj. ai’ চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে উন্মোচন করা হয়েছে নতুন বাংলা ফন্ট ‘জুলাই।’
২১ মিনিট আগে
শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার কারণেই ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, ‘২০২৪ সালের ৮ আগস্টের সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব আততায়ী রাজনীতির ভিত্তি তৈরি করেছে এবং শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ করা তার দৃশ্যমান প্রমাণ।’
২৮ মিনিট আগে
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। আজ সোমবার সকালে গুলশানে ইয়ুথ ভোটার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ড পরিবর্তন করতে আপিল করা হয়েছে।
আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই আপিল করা হয়। আপিল দায়েরের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
গাজী তামিম বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ডকে মৃত্যুদণ্ডে উন্নীত করার জন্য আটটি গ্রাউন্ডে আপিল করেছি। প্রথম গ্রাউন্ড হলো—আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে যে শাস্তির কথা বলা আছে, তার প্রথমেই ডেথ পেনাল্টি দিয়ে বর্ণনা করা আছে। তারপরে গ্রাভিটি অব দ্য অফেন্সের কথা বলা আছে। যেহেতু আইনে একটি শাস্তি প্রেসক্রাইব করা আছে, এ জন্য ডেথ পেনাল্টি তারা সকল চার্জেই পাওয়ার যোগ্য। এটা আমাদের প্রথম গ্রাউন্ড ছিল। দ্বিতীয় গ্রাউন্ডে আমরা বলেছি—জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেটা হলো ভায়োলেশন অব সিরিয়াস হিউম্যান রাইটস। সেখানে জঘন্য অপরাধ হয়েছে। যার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত। তৃতীয় গ্রাউন্ডে আমরা বলেছি—স্কেল অব অ্যাটাক যেটা অ্যাগেইনস্ট সিভিলিয়ান, নিরস্ত্র, নিরীহ মানুষের ওপরে হয়েছে তার ব্যাপকতা ছিল মারাত্মক। এর কারণে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি প্রদান করা আইনত সঠিক হয়নি। চতুর্থ গ্রাউন্ডে আমরা বলেছি—গ্রাভিটি অব দ্য অফেন্স। গ্রাভিটি অব অফেন্স অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত এই ধরনের অপরাধীদের।’
তামিম বলেন, ‘পঞ্চম গ্রাউন্ডে আমরা বলেছি—শুধুমাত্র আসামির অধিকার দেখলেই হবে না। এখানে রাইটস অব দ্য ভিকটিমস এবং সোসাইটির রিজনেবল এক্সপেক্টেশনটাও দেখতে হবে। একটা সমাজ এই ধরনের অপরাধের কী ধরনের শাস্তি প্রত্যাশা করে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধপ্রবণতা বন্ধ করার জন্য আদালত কর্তৃক কী ধরনের শাস্তি প্রাপ্ত হলে বা প্রদত্ত হলে সমাজ এই ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত হবে। ষষ্ঠ গ্রাউন্ডে বলেছি—এই আসামিরা ইচ্ছাকৃতভাবে পলাতক আছেন। তাঁরা জানছেন যে তাঁদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে, সাজা হচ্ছে, আপিলের মেয়াদ শেষ। এগুলো জেনেই তাঁরা নিজেদের পলাতক রেখেছেন এবং পলাতক থেকে বিভিন্ন ট্রায়ালে বাধা প্রদান করার জন্য বিভিন্ন বক্তব্য, বিবৃতি প্রদান করে যাচ্ছেন।’
আপিল নিষ্পত্তির বিষয়ে গাজী তামিম বলেন, ‘আইনে পরিষ্কার করে বলা আছে ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে। আমরা অবকাশের পর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করব। তারপর আপিল বিভাগে আপিলটি নিষ্পত্তি হবে।’
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে জানতে চাইলে তামিম বলেন, ‘প্রসিকিউশন যেহেতু বলেছেন তিনি ফুল অ্যান্ড ট্রুথ ডিসক্লোজ করেছেন। তাই আমরা আসলে আর করতে পারি না। তবে পক্ষদের আপিল করার সুযোগ আছে। তাঁরা চাইলে আপিল করতে পারতেন। আমার জানামতে এখনো কোনো আপিল হয়নি।’
এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দেওয়ার সময় পাঁচটি পৃথক অভিযোগ ছিল। তবে গত ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনাল অভিযোগগুলো দুটি ভাগে ভাগ করেন। এর মধ্যে গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, ১৪ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাকসুদ কামালকে ফোন করে আন্দোলনকারীদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে তাঁদের ফাঁসি দেওয়ার কথা বলে উসকানি, আদেশ এবং অপরাধ সংঘটনে অধীনস্থদের বাধা প্রদান না করা, রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা তাপস এবং পরবর্তীকালে হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথোপকথনে ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়, আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হেলিকপ্টার এবং লেথাল উইপন ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ, অপরাধ সংঘটনে অধীনস্থদের বাধা প্রদান না করা, ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল ছয়জনকে গুলি করে হত্যা, ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল। আর মামলার আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এই মামলায় চৌধুরী মামুনকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ড পরিবর্তন করতে আপিল করা হয়েছে।
আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই আপিল করা হয়। আপিল দায়েরের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
গাজী তামিম বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ডকে মৃত্যুদণ্ডে উন্নীত করার জন্য আটটি গ্রাউন্ডে আপিল করেছি। প্রথম গ্রাউন্ড হলো—আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে যে শাস্তির কথা বলা আছে, তার প্রথমেই ডেথ পেনাল্টি দিয়ে বর্ণনা করা আছে। তারপরে গ্রাভিটি অব দ্য অফেন্সের কথা বলা আছে। যেহেতু আইনে একটি শাস্তি প্রেসক্রাইব করা আছে, এ জন্য ডেথ পেনাল্টি তারা সকল চার্জেই পাওয়ার যোগ্য। এটা আমাদের প্রথম গ্রাউন্ড ছিল। দ্বিতীয় গ্রাউন্ডে আমরা বলেছি—জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেটা হলো ভায়োলেশন অব সিরিয়াস হিউম্যান রাইটস। সেখানে জঘন্য অপরাধ হয়েছে। যার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত। তৃতীয় গ্রাউন্ডে আমরা বলেছি—স্কেল অব অ্যাটাক যেটা অ্যাগেইনস্ট সিভিলিয়ান, নিরস্ত্র, নিরীহ মানুষের ওপরে হয়েছে তার ব্যাপকতা ছিল মারাত্মক। এর কারণে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি প্রদান করা আইনত সঠিক হয়নি। চতুর্থ গ্রাউন্ডে আমরা বলেছি—গ্রাভিটি অব দ্য অফেন্স। গ্রাভিটি অব অফেন্স অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত এই ধরনের অপরাধীদের।’
তামিম বলেন, ‘পঞ্চম গ্রাউন্ডে আমরা বলেছি—শুধুমাত্র আসামির অধিকার দেখলেই হবে না। এখানে রাইটস অব দ্য ভিকটিমস এবং সোসাইটির রিজনেবল এক্সপেক্টেশনটাও দেখতে হবে। একটা সমাজ এই ধরনের অপরাধের কী ধরনের শাস্তি প্রত্যাশা করে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধপ্রবণতা বন্ধ করার জন্য আদালত কর্তৃক কী ধরনের শাস্তি প্রাপ্ত হলে বা প্রদত্ত হলে সমাজ এই ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত হবে। ষষ্ঠ গ্রাউন্ডে বলেছি—এই আসামিরা ইচ্ছাকৃতভাবে পলাতক আছেন। তাঁরা জানছেন যে তাঁদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে, সাজা হচ্ছে, আপিলের মেয়াদ শেষ। এগুলো জেনেই তাঁরা নিজেদের পলাতক রেখেছেন এবং পলাতক থেকে বিভিন্ন ট্রায়ালে বাধা প্রদান করার জন্য বিভিন্ন বক্তব্য, বিবৃতি প্রদান করে যাচ্ছেন।’
আপিল নিষ্পত্তির বিষয়ে গাজী তামিম বলেন, ‘আইনে পরিষ্কার করে বলা আছে ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে। আমরা অবকাশের পর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করব। তারপর আপিল বিভাগে আপিলটি নিষ্পত্তি হবে।’
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে জানতে চাইলে তামিম বলেন, ‘প্রসিকিউশন যেহেতু বলেছেন তিনি ফুল অ্যান্ড ট্রুথ ডিসক্লোজ করেছেন। তাই আমরা আসলে আর করতে পারি না। তবে পক্ষদের আপিল করার সুযোগ আছে। তাঁরা চাইলে আপিল করতে পারতেন। আমার জানামতে এখনো কোনো আপিল হয়নি।’
এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দেওয়ার সময় পাঁচটি পৃথক অভিযোগ ছিল। তবে গত ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনাল অভিযোগগুলো দুটি ভাগে ভাগ করেন। এর মধ্যে গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, ১৪ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাকসুদ কামালকে ফোন করে আন্দোলনকারীদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে তাঁদের ফাঁসি দেওয়ার কথা বলে উসকানি, আদেশ এবং অপরাধ সংঘটনে অধীনস্থদের বাধা প্রদান না করা, রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা তাপস এবং পরবর্তীকালে হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথোপকথনে ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়, আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হেলিকপ্টার এবং লেথাল উইপন ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ, অপরাধ সংঘটনে অধীনস্থদের বাধা প্রদান না করা, ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল ছয়জনকে গুলি করে হত্যা, ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল। আর মামলার আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এই মামলায় চৌধুরী মামুনকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়।

চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে...
২৭ মার্চ ২০২৫
বাংলা ভাষায় এই প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘কাগজ ডট এআই— kagoj. ai’ চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে উন্মোচন করা হয়েছে নতুন বাংলা ফন্ট ‘জুলাই।’
২১ মিনিট আগে
শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার কারণেই ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, ‘২০২৪ সালের ৮ আগস্টের সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব আততায়ী রাজনীতির ভিত্তি তৈরি করেছে এবং শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ করা তার দৃশ্যমান প্রমাণ।’
২৮ মিনিট আগে
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। আজ সোমবার সকালে গুলশানে ইয়ুথ ভোটার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলা ভাষায় এই প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘কাগজ ডট এআই— kagoj. ai’ চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে উন্মোচন করা হয়েছে নতুন বাংলা ফন্ট ‘জুলাই।’
আজ সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ দুটি প্রযুক্তির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, ‘গত ২ সপ্তাহে ৪ হাজার মানুষ এটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেছেন। তারা ভালো ফল পেয়েছেন। বাংলা ভাষাকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে এর এপিআই উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করে সোর্স কোডও উন্মুক্ত করা হবে। ভাষার স্থানীয় সাংস্কৃতিক ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে অচিরেই প্রতিটি নৃগোষ্ঠীর ভাষার ১০ হাজার ওরাল মিনিট সংগ্রহ করা হবে। তৈরি করা হবে বাংলা এলএমএল। ডেভেলপমেন্ট জার্নি এবং এই ইকো সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে পারলে ভাষাগুলোকে সাইবার স্পেসে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘কাগজ ডট এআই’ বাংলা ভাষাভিত্তিক লেখালেখি, দাপ্তরিক নথি প্রস্তুত, ভাষা প্রক্রিয়াকরণ ও কনটেন্ট তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিশ্চিত করবে, যা বাংলা ভাষার ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বাংলা ভাষার জন্য এর আগে এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ এআই প্ল্যাটফর্ম চালু হয়নি।
অন্যদিকে নতুন বাংলা ফন্ট ‘জুলাই’ দাপ্তরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যা কম্পিউটারনির্ভর বাংলা লেখার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দূর করতে সহায়ক হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জহিরুল ইসলামসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন হওয়া দুইটি সেবা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

বাংলা ভাষায় এই প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘কাগজ ডট এআই— kagoj. ai’ চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে উন্মোচন করা হয়েছে নতুন বাংলা ফন্ট ‘জুলাই।’
আজ সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ দুটি প্রযুক্তির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, ‘গত ২ সপ্তাহে ৪ হাজার মানুষ এটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেছেন। তারা ভালো ফল পেয়েছেন। বাংলা ভাষাকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে এর এপিআই উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করে সোর্স কোডও উন্মুক্ত করা হবে। ভাষার স্থানীয় সাংস্কৃতিক ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে অচিরেই প্রতিটি নৃগোষ্ঠীর ভাষার ১০ হাজার ওরাল মিনিট সংগ্রহ করা হবে। তৈরি করা হবে বাংলা এলএমএল। ডেভেলপমেন্ট জার্নি এবং এই ইকো সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে পারলে ভাষাগুলোকে সাইবার স্পেসে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘কাগজ ডট এআই’ বাংলা ভাষাভিত্তিক লেখালেখি, দাপ্তরিক নথি প্রস্তুত, ভাষা প্রক্রিয়াকরণ ও কনটেন্ট তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিশ্চিত করবে, যা বাংলা ভাষার ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বাংলা ভাষার জন্য এর আগে এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ এআই প্ল্যাটফর্ম চালু হয়নি।
অন্যদিকে নতুন বাংলা ফন্ট ‘জুলাই’ দাপ্তরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যা কম্পিউটারনির্ভর বাংলা লেখার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দূর করতে সহায়ক হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জহিরুল ইসলামসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন হওয়া দুইটি সেবা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে...
২৭ মার্চ ২০২৫
আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই আপিল করা হয়। আপিল দায়েরের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
৬ মিনিট আগে
শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার কারণেই ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, ‘২০২৪ সালের ৮ আগস্টের সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব আততায়ী রাজনীতির ভিত্তি তৈরি করেছে এবং শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ করা তার দৃশ্যমান প্রমাণ।’
২৮ মিনিট আগে
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। আজ সোমবার সকালে গুলশানে ইয়ুথ ভোটার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার কারণেই ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, ‘২০২৪ সালের ৮ আগস্টের সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব আততায়ী রাজনীতির ভিত্তি তৈরি করেছে এবং শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ করা তার দৃশ্যমান প্রমাণ।’
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে ‘আততায়ী রাজনীতি ও গণকর্তব্য’—শীর্ষক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন। ভাববৈঠকি ও গণ-অভ্যুত্থান সুরক্ষা মঞ্চ নামের সংগঠন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এটি কোনো আবেগতাড়িত অভিযোগ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা, সংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার অনিবার্য পরিণতি।’
পুরোনো কাঠামো ভাঙনের পর নতুন করে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগের যে ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছিল, ৮ আগস্টের সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত সেটিকে বন্ধ করে দেয়—বলেও মন্তব্য করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে ভাঙনটি ঘটেছিল, তা ছিল কেবল সরকার পরিবর্তনের নয়, তা ছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বৈধতার উৎস নিয়ে একটি মৌলিক প্রশ্ন-গণসার্বভৌমত্ব বনাম প্রশাসনিক-বিচারিক কর্তৃত্ব।’
তাঁর মতে, ‘এই ভাঙনের পর নতুন করে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগের যে ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছিল, ৮ আগস্টের সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত সেটিকে বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ জনগণের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে পাশ কাটিয়ে পুরোনো সংবিধান, পুরোনো রাষ্ট্রযন্ত্র ও পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলোকে অক্ষুণ্ন রেখে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা হয়।’ তিনি মনে করেন, বর্তমান মুহূর্তটিই হলো সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব যেখানে বিপ্লবী পরিস্থিতিকে আইনের ভাষায় ‘নিয়ন্ত্রণ’ করে। অর্থাৎ পুরোনো ক্ষমতা-বণ্টন পুনঃস্থাপন করা হয় বলে মনে করেন ফরহাদ মজহার।
কোনো রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠান-নিরপেক্ষ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন পুরোনো ব্যবস্থা ভাঙনের মুখে পড়ে, তখন ক্ষমতাবান সংগঠনগুলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী, আমলাতন্ত্র, বিচারিক কাঠামো, দলীয় ক্যাডার নেটওয়ার্ক নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সহিংসতা, ভয় ও দমনমূলক কৌশলের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ৮ আগস্টের পর ঠিক এই কাজটিই হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে গড়ে ওঠা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই আদতে সংবিধান রক্ষার অজুহাতে টিকিয়ে রাখা হয়েছে।’
‘সংবিধান বাঁচানোর’ নামে মূলত এই ব্যবস্থাই রক্ষা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নতুন গঠনতন্ত্র ছাড়া জনগণের মুক্তি নেই এবং সেখানে প্রত্যেকে অংশগ্রহণ করতে হবে। ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানকে ধরে রাখতে হবে, ৮ আগস্টের প্রতিবিপ্লবকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের তাৎপর্য হলো জনগণের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। বিশেষত শ্রেণিভিত্তিক রাজনীতি যারা করেন, তাদের গণ-অভ্যুত্থানের তাৎপর্য বোঝা উচিত। সমাজে গণসার্বভৌমত্ব মানে জনগণের হাতে ক্ষমতা বিষয়টি পরিষ্কার নয়।’
সরকার ও রাষ্ট্র এক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সমাজে একটি পরিষ্কার ধারণা নেই যে—সরকার এবং রাষ্ট্র এক নয়। অধিকাংশ মানুষ সরকার ও রাষ্ট্রকে গুলিয়ে ফেলে। সরকার গঠন করাকে রাষ্ট্র গঠন করা বলা যায় না। রাষ্ট্র গঠন করে জনগণ। রাষ্ট্র গঠনের সময় জনগণ কিছু সর্বজনীন নীতি প্রস্তাব করে। একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো রাষ্ট্র এমন কোনো আইন করতে পারবে না যা দ্বারা ব্যক্তির মর্যাদা এবং ব্যক্তির স্বাধীনতা, অধিকার হরণ করা হয়। এই নীতিটি হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী একটা প্রস্তাব।’
রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধান প্রণয়নে গঠনতন্ত্র প্রণয়নে দাবি তোলেনি মন্তব্য করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘তারা প্রত্যেকেই সংসদের সার্বভৌমত্ব চায়, যাতে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যা খুশি আইন প্রণয়ন এবং লুটপাট করতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতাধারী, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। যার মানে, এখানে কোনো গণতন্ত্র নেই। এই সংবিধান থাকা মানে গণতন্ত্রহীনতা এবং জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া।’
নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা জনগণের ক্ষমতা হরণ করবে, মর্যাদা হরণ করবে এবং লুটপাট করবে বলে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘কেন মানুষ নির্বাচন নিয়ে এত ব্যস্ত? কারণ, নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা জনগণের ক্ষমতা হরণ করবে, মর্যাদা হরণ করবে এবং ব্যাংক ও বড় বড় প্রকল্প লুটপাট করবে। সমস্যা নির্বাচন না, বরং নির্বাচন পদ্ধতি। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের অন্যান্য মৌলিক অধিকার উপেক্ষা করে শুধু ভোটের অধিকারের পক্ষে কথা বলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা।’

শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার কারণেই ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, ‘২০২৪ সালের ৮ আগস্টের সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব আততায়ী রাজনীতির ভিত্তি তৈরি করেছে এবং শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ করা তার দৃশ্যমান প্রমাণ।’
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে ‘আততায়ী রাজনীতি ও গণকর্তব্য’—শীর্ষক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন। ভাববৈঠকি ও গণ-অভ্যুত্থান সুরক্ষা মঞ্চ নামের সংগঠন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এটি কোনো আবেগতাড়িত অভিযোগ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা, সংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার অনিবার্য পরিণতি।’
পুরোনো কাঠামো ভাঙনের পর নতুন করে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগের যে ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছিল, ৮ আগস্টের সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত সেটিকে বন্ধ করে দেয়—বলেও মন্তব্য করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে ভাঙনটি ঘটেছিল, তা ছিল কেবল সরকার পরিবর্তনের নয়, তা ছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বৈধতার উৎস নিয়ে একটি মৌলিক প্রশ্ন-গণসার্বভৌমত্ব বনাম প্রশাসনিক-বিচারিক কর্তৃত্ব।’
তাঁর মতে, ‘এই ভাঙনের পর নতুন করে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগের যে ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছিল, ৮ আগস্টের সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত সেটিকে বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ জনগণের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে পাশ কাটিয়ে পুরোনো সংবিধান, পুরোনো রাষ্ট্রযন্ত্র ও পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলোকে অক্ষুণ্ন রেখে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা হয়।’ তিনি মনে করেন, বর্তমান মুহূর্তটিই হলো সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব যেখানে বিপ্লবী পরিস্থিতিকে আইনের ভাষায় ‘নিয়ন্ত্রণ’ করে। অর্থাৎ পুরোনো ক্ষমতা-বণ্টন পুনঃস্থাপন করা হয় বলে মনে করেন ফরহাদ মজহার।
কোনো রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠান-নিরপেক্ষ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন পুরোনো ব্যবস্থা ভাঙনের মুখে পড়ে, তখন ক্ষমতাবান সংগঠনগুলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী, আমলাতন্ত্র, বিচারিক কাঠামো, দলীয় ক্যাডার নেটওয়ার্ক নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সহিংসতা, ভয় ও দমনমূলক কৌশলের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ৮ আগস্টের পর ঠিক এই কাজটিই হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে গড়ে ওঠা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই আদতে সংবিধান রক্ষার অজুহাতে টিকিয়ে রাখা হয়েছে।’
‘সংবিধান বাঁচানোর’ নামে মূলত এই ব্যবস্থাই রক্ষা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নতুন গঠনতন্ত্র ছাড়া জনগণের মুক্তি নেই এবং সেখানে প্রত্যেকে অংশগ্রহণ করতে হবে। ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানকে ধরে রাখতে হবে, ৮ আগস্টের প্রতিবিপ্লবকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের তাৎপর্য হলো জনগণের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। বিশেষত শ্রেণিভিত্তিক রাজনীতি যারা করেন, তাদের গণ-অভ্যুত্থানের তাৎপর্য বোঝা উচিত। সমাজে গণসার্বভৌমত্ব মানে জনগণের হাতে ক্ষমতা বিষয়টি পরিষ্কার নয়।’
সরকার ও রাষ্ট্র এক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সমাজে একটি পরিষ্কার ধারণা নেই যে—সরকার এবং রাষ্ট্র এক নয়। অধিকাংশ মানুষ সরকার ও রাষ্ট্রকে গুলিয়ে ফেলে। সরকার গঠন করাকে রাষ্ট্র গঠন করা বলা যায় না। রাষ্ট্র গঠন করে জনগণ। রাষ্ট্র গঠনের সময় জনগণ কিছু সর্বজনীন নীতি প্রস্তাব করে। একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো রাষ্ট্র এমন কোনো আইন করতে পারবে না যা দ্বারা ব্যক্তির মর্যাদা এবং ব্যক্তির স্বাধীনতা, অধিকার হরণ করা হয়। এই নীতিটি হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী একটা প্রস্তাব।’
রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধান প্রণয়নে গঠনতন্ত্র প্রণয়নে দাবি তোলেনি মন্তব্য করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘তারা প্রত্যেকেই সংসদের সার্বভৌমত্ব চায়, যাতে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যা খুশি আইন প্রণয়ন এবং লুটপাট করতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতাধারী, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। যার মানে, এখানে কোনো গণতন্ত্র নেই। এই সংবিধান থাকা মানে গণতন্ত্রহীনতা এবং জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া।’
নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা জনগণের ক্ষমতা হরণ করবে, মর্যাদা হরণ করবে এবং লুটপাট করবে বলে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘কেন মানুষ নির্বাচন নিয়ে এত ব্যস্ত? কারণ, নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা জনগণের ক্ষমতা হরণ করবে, মর্যাদা হরণ করবে এবং ব্যাংক ও বড় বড় প্রকল্প লুটপাট করবে। সমস্যা নির্বাচন না, বরং নির্বাচন পদ্ধতি। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের অন্যান্য মৌলিক অধিকার উপেক্ষা করে শুধু ভোটের অধিকারের পক্ষে কথা বলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা।’

চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে...
২৭ মার্চ ২০২৫
আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই আপিল করা হয়। আপিল দায়েরের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
৬ মিনিট আগে
বাংলা ভাষায় এই প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘কাগজ ডট এআই— kagoj. ai’ চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে উন্মোচন করা হয়েছে নতুন বাংলা ফন্ট ‘জুলাই।’
২১ মিনিট আগে
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। আজ সোমবার সকালে গুলশানে ইয়ুথ ভোটার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। আজ সোমবার সকালে গুলশানে ইয়ুথ ভোটার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আইনশৃঙ্খলা অবনতি সুষ্ঠু ভোটের বাধা হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলো কোথায়? মাঝেমধ্যে দুয়েকটা খুন-খারাবি হয়। হাদির একটা ঘটনা হয়েছে। আমরা এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি। এই ধরনের ঘটনা তো সবসময়ই ছিল। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া-এর প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা তো সবসময় ছিল। এ ধরনের ঘটনা হয় বাংলাদেশে, এটা নতুন কিছু না।’
সিইসি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বরং উন্নতি হয়েছে। ৫ই আগস্ট ২০২৪-এর সঙ্গে তুলনা করুন। যখন থানাগুলো ইনঅ্যাক্টিভ ছিল। পুলিশ স্টেশনে ওয়ার্ক করছিল না। এখন তো অনেক উন্নতি হয়েছে ইনশাআল্লাহ। আমরা তো শান্তিতে চলাফেরা করতে পারছি। শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। আমরা গতকালই আমাদের শীর্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তারা নিশ্চিত করেছে যে নির্বাচনের সময় পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনে তারা সক্ষম।’
মিডিয়াসহ বিভিন্ন মহলে নির্বাচন নিয়ে কিছু আশঙ্কা হয়তো আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। ইনশাআল্লাহ, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সকলের সহযোগিতা নিয়ে। এ ব্যাপারে কোনোই শঙ্কা নেই, যা-ই আসুক না কেন। যত ধরনের দুশ্চিন্তা মাথায় আসুক না কেন, দুশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে সবাই মিলে যাতে আমরা নির্বাচনটা করতে পারি। ’
সিইসি আরও বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, নির্বাচন সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। জাতিকে আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন ইনশাআল্লাহ তা পরিপালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আপনাদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান করব ইনশাআল্লাহ।
সিইসি আরও বলেন, ‘সর্বোপরি, এইবার একটি গণভোটও একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই সমস্ত দিক থেকে এটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। আমরা যে সাহস করে এই পথে নেমে পড়েছি, আমাদের এই সাহসী পদক্ষেপের সঙ্গে যদি আপনাদের সকলের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের, অংশগ্রহণ থাকে, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হব।’

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। আজ সোমবার সকালে গুলশানে ইয়ুথ ভোটার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আইনশৃঙ্খলা অবনতি সুষ্ঠু ভোটের বাধা হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলো কোথায়? মাঝেমধ্যে দুয়েকটা খুন-খারাবি হয়। হাদির একটা ঘটনা হয়েছে। আমরা এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি। এই ধরনের ঘটনা তো সবসময়ই ছিল। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া-এর প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা তো সবসময় ছিল। এ ধরনের ঘটনা হয় বাংলাদেশে, এটা নতুন কিছু না।’
সিইসি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বরং উন্নতি হয়েছে। ৫ই আগস্ট ২০২৪-এর সঙ্গে তুলনা করুন। যখন থানাগুলো ইনঅ্যাক্টিভ ছিল। পুলিশ স্টেশনে ওয়ার্ক করছিল না। এখন তো অনেক উন্নতি হয়েছে ইনশাআল্লাহ। আমরা তো শান্তিতে চলাফেরা করতে পারছি। শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। আমরা গতকালই আমাদের শীর্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তারা নিশ্চিত করেছে যে নির্বাচনের সময় পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনে তারা সক্ষম।’
মিডিয়াসহ বিভিন্ন মহলে নির্বাচন নিয়ে কিছু আশঙ্কা হয়তো আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। ইনশাআল্লাহ, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সকলের সহযোগিতা নিয়ে। এ ব্যাপারে কোনোই শঙ্কা নেই, যা-ই আসুক না কেন। যত ধরনের দুশ্চিন্তা মাথায় আসুক না কেন, দুশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে সবাই মিলে যাতে আমরা নির্বাচনটা করতে পারি। ’
সিইসি আরও বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, নির্বাচন সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। জাতিকে আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন ইনশাআল্লাহ তা পরিপালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আপনাদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান করব ইনশাআল্লাহ।
সিইসি আরও বলেন, ‘সর্বোপরি, এইবার একটি গণভোটও একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই সমস্ত দিক থেকে এটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। আমরা যে সাহস করে এই পথে নেমে পড়েছি, আমাদের এই সাহসী পদক্ষেপের সঙ্গে যদি আপনাদের সকলের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের, অংশগ্রহণ থাকে, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হব।’

চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে...
২৭ মার্চ ২০২৫
আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই আপিল করা হয়। আপিল দায়েরের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
৬ মিনিট আগে
বাংলা ভাষায় এই প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘কাগজ ডট এআই— kagoj. ai’ চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে উন্মোচন করা হয়েছে নতুন বাংলা ফন্ট ‘জুলাই।’
২১ মিনিট আগে
শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার কারণেই ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, ‘২০২৪ সালের ৮ আগস্টের সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব আততায়ী রাজনীতির ভিত্তি তৈরি করেছে এবং শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ করা তার দৃশ্যমান প্রমাণ।’
২৮ মিনিট আগে