Ajker Patrika

শাহজালালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং

টাকা দিয়েও সেবা পায় না দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনস

  • সেবা দিতে নিজস্ব স্টাফ নিয়োগ দিতে হচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোকে
  • বাড়ছে পরিচালন ব্যয়, প্রভাব পড়ছে টিকিটের মূল্যে
  • কার্গো পরিবহন ব্যবসা যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশে
  • তৃতীয় টার্মিনালে একাধিক দক্ষ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের দাবি
মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় নির্ধারিত ফি পরিশোধ করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। তাদের অভিযোগ, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস প্রয়োজনীয় জনবল, সরঞ্জাম ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ছাড়া ও যাত্রীসেবা নিশ্চিতে নিজেদের স্টাফ নিয়োগ করে কাজ চালাতে হচ্ছে এয়ারলাইনসগুলোকে। এতে এয়ারলাইনসের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে টিকিটের মূল্যে।

শুধু যাত্রীসেবা নয়, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দুর্বলতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কার্গো পরিবহন ব্যবসাও। দেশে ৮টি কার্গো এয়ারলাইনসের কার্যক্রম থাকলেও রপ্তানিকারকেরা কার্গোর বড় একটি অংশ সড়কপথে ভারতের বিমানবন্দরগুলোয় পাঠায় প্রসেসিং ও শিপমেন্টের জন্য। এয়ারলাইনসগুলোর অভিযোগ, সেবা দিতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং প্রতিষ্ঠান বিমানের সঙ্গে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর যে সার্ভিস লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এসএলএ) রয়েছে, তার বিন্দুমাত্র বাস্তবায়িত হচ্ছে না, যা সেবার জন্য এয়ারলাইনসগুলো থেকে নেওয়া ফির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। উল্টো উড়োজাহাজে মালামাল ওঠানামা করার জন্য নিজেদের উদ্যোগেই জনবল নিয়োগ নিতে হচ্ছে। এটি বিমানবন্দরে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কাও তৈরি করছে।

কাতার এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপক (কার্গো) সুহেদ আহমেদ চৌধুরী জানান, ‘আমরা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ হাজার টন পণ্য রপ্তানি করি। এ জন্য বিমানবন্দরে আমাদের ৮২ জন স্টাফ রাখতে হয়েছে। অথচ পুরো কাজটা করার কথা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার বিমানের। তারা অর্থ নিয়েও সেবা দিচ্ছে না। আমরা চাই, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমানের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে, সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হোক।’

এয়ারলাইনস অপারেটরস কমিটির (এওসি) ঢাকার চেয়ারপারসন দিলারা হোসেন বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে ক্রমেই বিদেশি এয়ারলাইনস বাড়ছে। বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ফি প্রতিবেশী দেশ এমনকি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর চার্জ থেকেও অনেক বেশি। বিমানের শিফট পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল। তারা পর্যাপ্ত চেক-ইন কাউন্টার, গেট, র‍্যাম্প, লোডিং স্টাফ দিতে পারছে না। এত চার্জ দেওয়ার পরও প্রতিটি বিদেশি এয়ারলাইনসকে বিমানবন্দরের নানা কাজের জন্য কমবেশি ৭০ জন করে নিজস্ব জনবল নিয়োগ করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এয়ারলাইনসগুলোর অপারেশনাল ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, টিকিটের দামের ওপর প্রভাব ফেলছে।

জানা গেছে, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে ৩৬টি বিদেশি কমার্শিয়াল এয়ারলাইনস, ৮টি কার্গো এয়ারলাইনস, ৪টি দেশীয় এয়ারলাইনস, হেলিকপ্টারসহ ১৩টি এভিয়েশন প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমানবন্দরের ১ এবং ২ নম্বর টার্মিনাল সর্বশেষ ২০২৩ সালে বিমানবন্দর ৯৫ লাখ যাত্রী হ্যান্ডেল করেছে। নতুন টার্মিনাল অর্থাৎ তৃতীয় টার্মিনালের ফলে যাত্রী হ্যান্ডেলের সক্ষমতা দুই কোটিতে গিয়ে ঠেকবে। এ ছাড়া কার্গো সক্ষমতা ২ লাখ টন থেকে বেড়ে ৫ লাখ টন হবে।

ভবিষ্যতের এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সামলাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৩-এর অপারেশন একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তির মাধ্যমে জাপানি কনসোর্টিয়ামের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। টার্মিনাল অপারেশনের একটি বড় অংশ হলো গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও কার্গো হ্যান্ডলিং। চুক্তি অনুযায়ী, জাপানি কনসোর্টিয়াম নির্ধারণ করবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাদের মাধ্যমে করা হবে। যদিও সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জিম্মায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দুই বছরের জন্য ন্যস্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সেক্রেটারি জেনারেল ও নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, সম্প্রতি বিমানের জিম্মায় তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দুই বছরের জন্য প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জোর বিতর্ক চলমান এবং তা যৌক্তিক। তৃতীয় টার্মিনাল অপারেশনের ক্ষেত্রে বর্তমান একচেটিয়া ব্যবস্থা ভেঙে একাধিক কোম্পানিকে সুযোগ দিলে সেবা উন্নত হবে এবং দেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে। বিমানকেও জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে যোগ্য বিবেচনায় দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

এর আগে তৃতীয় টার্মিনালের সার্বিক সেবা বিশ্লেষণ করতে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনকে (আইএফসি) পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আইএফসি তাদের প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে, টার্মিনাল-৩-এর আকার এবং গুরুত্বের কারণে ন্যূনতম দুটি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানি থাকা উচিত। বিমানের (জাতীয় এয়ারলাইনস হিসেবে) একটি বড় অংশ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে থাকলেও দ্বিতীয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানি হওয়া উচিত; যার পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় টার্মিনাল-৩-এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা প্রতিযোগিতামূলক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বিশ্বের প্রথিতযশা কোম্পানি ডি-নাটা (সংযুক্ত আরব আমিরাত), সুইসপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল (সুইজারল্যান্ড), মেনজিস এভিয়েশন (যুক্তরাজ্য) এবং সেলেবির মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বেবিচক।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, আইএফসির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডি-নাটা, সুইসপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল এবং মেনজিস এভিয়েশন টার্মিনাল-৩-এ কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে মেনজিস এভিয়েশন ইউকে বেবিচকের কাছে বিস্তারিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে। অন্যদিকে সুইসপোর্টও বেবিচকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। উভয় প্রতিষ্ঠানই দ্রুততম সময়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিতে প্রস্তুত থাকার বিষয়টি বেবিচক কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করেছে।

এদিকে টার্মিনাল-১ এবং ২-এ বিমানের কার্গো হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনা দেখে টার্মিনাল-৩-এর হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনা কেমন হতে পারে, সেটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাঁরা মনে করেন, সেবায় প্রতিযোগিতা সৃষ্টি এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ জরুরি। বর্তমান মনোপলি ব্যবস্থার পরিবর্তে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে দক্ষ অপারেটর নিয়োগ দিলে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে, যা ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ট্রান্সফারের মাধ্যমে বিমানের সেবার মানও বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম জানান, বিশ্বের কোথাও কোনো একটি সংস্থা এককভাবে বিমানবন্দর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করে না। কিন্তু শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দর এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করছে বিমান। এ বিষয়ে সেবা দিতে গিয়ে বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এখন তারা শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এটা তারা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে, তা বলা যায় না।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (কাস্টমার সার্ভিস) হায়াত-উদ-দৌলা খান জানান, ‘টার্মিনাল-৩ চালু হলে একসঙ্গে ২০টি উড়োজাহাজ পরিচালনা করতে ৩ হাজার ৮৭৮ জনবল লাগবে। তবে বর্তমান জনবল রয়েছে ২ হাজার ৪৯৪ জন। আরও ১ হাজার ৩৮৪ জনকে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সিভিল এভিয়েশন আমাদের নিয়মিত মনিটরিং করছে। আমরা ডিটেইল অ্যাকশন প্ল্যান দিয়েছি। আশা করছি থার্ড টার্মিনালে আমরা সবাইকে কাঙ্ক্ষিত সার্ভিস দিতে পারব।’

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘এত দিন বিমানের যে সার্ভিসটা পেয়ে আসছি, সেটা যে লেভেলের হওয়া উচিত ছিল, সেই লেভেলের না। আমরা এসব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিনই আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বা নিতে হবে, সেগুলো আমরা আলোচনা করছি। টার্মিনাল-৩-এ যদি বিমানের সক্ষমতার অভাব হয়, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে তাদের বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশে আসবে ওসমান হাদির মরদেহ

বাসস, ঢাকা  
শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি
শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনা হবে।

এনসিপির স্বাস্থ্য সেলের প্রধান ও হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকা ডা. আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে রওনা হয়ে সম্ভাব্য সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবে।’

বাংলাদেশ সময় আজ বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি।

গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগে অংশ নিতে গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে শরিফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করে আততায়ী। এ সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাদির মৃত্যুতে শুক্রবার বিশেষ মোনাজাত ও শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অস্ত্রোপচারের সময় মারা যান ওসমান হাদি: ডা. আহাদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বন্দুকধারীর হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। রাজধানীর পল্টন এলাকায় তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। অস্ত্রোপচারের পর গতকাল তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বন্দুকধারীর হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। রাজধানীর পল্টন এলাকায় তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। অস্ত্রোপচারের পর গতকাল তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের (এনএইচএ) সদস্যসচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

ডা. আহাদ জানান, বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে শরিফ ওসমান হাদির পরিবার অস্ত্রোপচারের জন্য সম্মতি দেয়। পরে তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘অপারেশন শেষ হওয়ার পর আর কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। পরে সরাসরি তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়।’

এদিকে হাদির মরদেহ শুক্রবার সকালে দেশে এসে পৌঁছাবে বলেও জানিয়েছেন ডা. আহাদ।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগে অংশ নিতে গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে শরিফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করে আততায়ী। এ সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাদির মৃত্যুতে শুক্রবার বিশেষ মোনাজাত ও শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির মৃত্যুতে শুক্রবার বিশেষ মোনাজাত, শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৩৫
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভিডিও থেকে নেওয়া
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভিডিও থেকে নেওয়া

শহীদ শরিফ ওসমান হাদির অকাল মৃত্যুতে আগামী শনিবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এই ঘোষণা দেন তিনি।

সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন হাদি। এই উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি সংবাদ নিয়ে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি আর আমাদের মাঝে নেই।’

শরিফ ওসমান হাদির এই অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, তাঁর প্রয়াণ দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিসরে এক অপূরণীয় ক্ষতি।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত স্ত্রী, পরিবারের সদস্যবৃন্দ, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। শহীদ ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে।’

এ সময় হাদির মৃত্যুতে আগামী শনিবার (২০ ডিসেম্বর) এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, শহীদ শরিফ ওসমান হাদির অকাল মৃত্যুতে আগামী শনিবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছি। এই উপলক্ষে শনিবার দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

একই সঙ্গে আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা দেশের প্রতিটি মসজিদে শহীদ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও আয়োজন হবে বিশেষ প্রার্থনার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যুতে দেশ সাহসী কণ্ঠস্বর হারাল: প্রধান বিচারপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৪৯
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি শোকবার্তায় বলেন, শরিফ ওসমান হাদির অকাল ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে দেশ এক সাহসী কণ্ঠস্বরকে হারাল।

প্রধান বিচারপতি হাদির রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত