Ajker Patrika

নির্বাচনী আচরণবিধি মানতে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকারপত্র চান সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৫, ১৭: ৪৪
জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন এ এম এম নাসির উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন এ এম এম নাসির উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী আচরণবিধি নিশ্চিত করতে সব রাজনৈতিক দল থেকে যদি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অঙ্গীকারপত্র নেয়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের কাজ অনেকটাই সহজ হবে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। আজ রোববার (২ মার্চ) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনা সভায় এ প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন তিনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বেশি বলা হয়ে যায় কি না জানি না, ওনারা যখন সব দলকে ডাকেন। যদি বলত আপনারা কি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চান? তো বলত যে, চাই। তখন বলত যে সই করেন, নির্বাচনী আচরণবিধি মানবেন, আপনার দলের প্রার্থী যদি কোনো গোলমাল করে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেবেন এবং সুন্দর একটি নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করবেন। এই রকম একটি ডকুমেন্ট যদি সব দলের থেকে স্বাক্ষর করে নিত, তাহলে নির্বাচনে আচরণবিধি মানার ক্ষেত্রে একটি চাপ থাকবে। এটি যদি হয়, তাহলে আমাদের কাজটা কিন্তু অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (নির্বাচনে কারসাজি), ভোট সন্ত্রাস করে আপাতদৃষ্টে জেতা যায়। কিন্তু আখেরে নিজের জন্য, দলের জন্য, দেশের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে, আখেরে টেকা যায় না। আমার প্রত্যাশা, কেউ এ জাতীয় উদ্যোগ নেবেন না; চেষ্টা করবেন না।’

দেশের মানুষকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা যুদ্ধে আছি। অত্যন্ত সীমিত সময়ের মধ্যে আমরা খুব কষ্ট করে এগিয়ে যাচ্ছি। মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। এখন ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সময় এসে গেছে। ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়া শুধু আর অধিকার নয়, এটা একটা দায়িত্বও। আমাদের ওপরে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। অন্য কোনো ইসির ওপর এত প্রত্যাশা ছিল না।’

রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী বক্তব্যের বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আমাদের এখানে অনেকেই আছে, যারা মনে করে আমার দলই দেশপ্রেমিক, আর কোনো দল নয়। এটি ঠিক না। মানুষ কিন্তু জন্মগতভাবেই দেশপ্রেমিক। জন্মের পর দেশপ্রেমটা পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে কমবেশি হয়।’

ইসি সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় জুলাই আন্দোলনে আহত ১৩ জনের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেন সিইসি।

সভায় আরও জানানো হয়, চলমান হালনাগাদ কার্যক্রম শেষে ৩০ জুনের মধ্যে আরও একটি সাময়িক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেটি সমন্বয় করে পরে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৬
গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সহিংসতার বিরুদ্ধে দেশের সব নাগরিককে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায় সরকার। বিবৃতিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়া হবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আহ্বান জানানো হচ্ছে—কয়েকজন বিচ্ছিন্ন উগ্র গোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে সতর্ক থাকুন।’ এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন, অগ্নিসংযোগ এবং জানমাল ধ্বংসের সকল কর্মকাণ্ডকে দৃঢ়ভাবে ও দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানাই।’

অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশের ইতিহাসের এই সংকটময় সময়ে আমরা একটি ঐতিহাসিক গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। যারা বিশৃঙ্খলাকে পুঁজি হিসেবে নেয় এবং শান্তির পথকে উপেক্ষা করে—এমন অল্প কয়েকজনের কারণে এই অগ্রযাত্রা আমরা কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দিতে পারি না এবং দেব না।’

নির্বাচন ও গণভোটের বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে বলা হয়, ‘আসন্ন নির্বাচন ও গণভোট কেবল রাজনৈতিক অনুশীলন নয়; এগুলো একটি গুরুতর জাতীয় অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে সেই স্বপ্নের সঙ্গে, যার জন্য শহীদ শরিফ ওসমান হাদি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁর আত্মত্যাগ ও স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে হলে সংযম, দায়িত্বশীলতা এবং ঘৃণা প্রত্যাখ্যানের প্রতি অবিচল অঙ্গীকার প্রয়োজন।’

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো ও নিউ এজের সাংবাদিকদের প্রতি আমরা বলতে চাই, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনারা যে সন্ত্রাস ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তার জন্য আমরা গভীরভাবে দুঃখিত। সন্ত্রাসের মুখেও আপনাদের সাহস ও সহনশীলতা জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা মানেই সত্যের ওপর হামলা। আমরা আপনাদের পূর্ণ ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিচ্ছি।’

ময়মনসিংহে একজনকে পিটিয়ে হত্যার বিষয়ে সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ময়মনসিংহে এক হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে নিন্দা জানাই। নতুন বাংলাদেশে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এই নৃশংস অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

‘এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাই—সহিংসতা, উসকানি ও ঘৃণাকে প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধের মাধ্যমে শহীদ হাদির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করুন’—বলা হয় বিবৃতিতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪৪
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর সংবাদমাধ্যম দুটির সম্পাদকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বিষয়টি জানানো হয়।

প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় পত্রিকা দুটির সম্পাদকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।’

এতে আরও বলা হয়, ‘প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনামের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের প্রতিষ্ঠান ও সংবাদকর্মীদের ওপর এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও ন্যক্কারজনক হামলা আমাকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছে। আপনাদের এই দুঃসময়ে সরকার আপনাদের পাশে আছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ওপর এই হামলা স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হামলার শামিল। এই ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে এক বিরাট বাধা সৃষ্টি করেছে। টেলিফোনে আলাপকালে সম্পাদকদের ও সংবাদমাধ্যমগুলোর পূর্ণ নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধান উপদেষ্টা।’

শিগগির এই সম্পাদকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক শাহবাগ থেকে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার বিচার দাবিতে শাহবাগে ছাত্র–জনতার বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার বিচার দাবিতে শাহবাগে ছাত্র–জনতার বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ থেকে এই আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা।

শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আজ শুক্রবার সকাল থেকে শাহবাগে অবস্থান নিতে থাকেন ছাত্র-জনতা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে বিক্ষোভ থেকে ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘ভারতীয় পণ্য, বয়কট, বয়কট’—স্লোগান দিতে থাকেন।

হাদি মারা যাওয়ার খবর ঘোষণার পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা। পরে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতার বিভিন্ন অংশ সেখানে যোগ দেয়। আজ সকাল থেকেও ছাত্র-জনতা শাহবাগে উপস্থিত হন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে অনেকেই যোগ দিচ্ছেন।

এ দিকে ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের সেনানী শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদিকে ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্তৃক গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে’—আজ বেলা ৩টায় শাহবাগে আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশের ঘোষণা দেয় ডাকসু, ইসলামি ছাত্রশিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

গতকাল রাতে শাহবাগের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কার্যত একটি যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-তরুণ এবং দেশপ্রেমিক নাগরিকদের জীবন আজ হুমকির মুখে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের কেউ পরাজিত করতে পারবে না।’

নাহিদ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় যেসব স্পটে আপনারা নেমে এসেছিলেন—যেমন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, রংপুর এবং ঢাকায় যাত্রাবাড়ী ও উত্তরাসহ সব জায়গায় অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করুন।’ শাহবাগে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।

গতকাল রাতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদে উত্তাল হয়ে উঠে রাজধানী ঢাকা। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক শরিফ ওসমান হাদি গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরে গণসংযোগকালে চলন্ত রিকশায় আততায়ীর গুলিতে আহত হন। গুলিটি তাঁর মাথায় লাগে। ঢাকা এবং পরে সিঙ্গাপুরে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকা এখন এক উত্তাল ও থমথমে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

ওসমান হাদির মরদেহ আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে এসে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যমুনা রেলসেতু: মেয়াদ বাড়ছে, কমছে প্রকল্পের খরচ

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
যমুনা রেলসেতু: মেয়াদ বাড়ছে, কমছে প্রকল্পের খরচ

যমুনা নদীর ওপর নির্মিত ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের যমুনা রেলসেতুতে ট্রেন চলাচল করলেও প্রকল্পের আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি রয়েছে। তাই প্রকল্পের মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের মেয়াদ এই ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। তবে নতুন প্রস্তাবে এই মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে এই প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় ২৬৮ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা কমিয়ে ১৬ হাজার ৫১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, যমুনা রেলসেতুর কাঠামো ও রেললাইন নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হয়। তবে ঠিকাদারের কাজের বিল বকেয়া রয়েছে। সংকেত (সিগন্যালিং) ব্যবস্থার কিছু কাজ এবং নতুন একটি প্যাকেজের আওতায় অবকাঠামো নির্মাণ-কাজ এখনো বাকি।

বিশেষ করে নতুন প্যাকেজের দরপত্র প্রক্রিয়াই শুরু করা যায়নি। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) যমুনা রেলসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে প্রথম সংশোধনীতে সেই মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডে এই প্রকল্পের ব্রিজ লাইটিংয়ের কিছু মালামাল পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মালামাল ঠিকাদার নিজ দায়িত্বে আবার সংগ্রহ করে সরবরাহ করবে। এ ছাড়া ওই অগ্নিকাণ্ডের পর আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স কিছুদিন বন্ধ থাকায় সিগন্যালিং-সংক্রান্ত কিছু মালামাল আমদানিতে বিলম্ব হয়েছে। পরে রুট পরিবর্তন করে এসব মালামাল অন্য বন্দর দিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ কারণে কাজ সম্পন্ন করতে অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় একটি বিশেষ নির্মাণ প্যাকেজের (ডব্লিউডি-৫) অধীনে রেলওয়ে সেতু জাদুঘর, পরিদর্শন বাংলো, ক্যাফেটেরিয়া, অভ্যন্তরীণ সড়ক, মাটি ভরাট ও ড্রেনেজ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৪ কোটি টাকা। তবে ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্যাকেজে পরিবর্তন আনা হয়। সংশোধিত পরিকল্পনায় রেলওয়ে সেতু জাদুঘর বাদ দিয়ে পরিদর্শন বাংলো, অভ্যন্তরীণ সড়ক, ড্রেনেজ এবং সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিবর্তিত এই প্যাকেজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৪ কোটি টাকা। তবে এখনো এই কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। দরপত্রপ্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং নির্মাণকাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় লাগবে।

এদিকে প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ‘সিসিটিভি নজরদারি ব্যবস্থা’ শীর্ষক একটি আলাদা প্যাকেজ যুক্ত করা হয়েছে। এই প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজও বাকি রয়েছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, সার্বিকভাবে যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৯ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব ইতিমধ্যে রেলপথ উপদেষ্টার অনুমোদন পেয়েছে। এখন এটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। প্রকল্পের ভেতর এখনো কিছু ছোটখাটো কাজ বাকি থাকায় চূড়ান্তভাবে কাজ শেষ করতে এই অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন। তিনি বলেন, ডব্লিউডি-৫ প্যাকেজের কাজ শেষ করতে আনুমানিক ছয় মাস লাগতে পারে। তবে এ নিয়ে বড় কোনো জটিলতা নেই। সিগন্যালিংয়ের কাজ আগামী মধ্য জানুয়ারিতে শেষ হবে। বাড়তি সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবে বলে তাঁরা আশাবাদী।

প্রকল্পের ব্যয় কমেছে

প্রকল্পের আওতায় যমুনা রেলসেতুসহ ভায়াডাক্ট, অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট, লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। সয়দাবাদ ও ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন আধুনিকীকরণ, ইয়ার্ড রিমডেলিং, সিগন্যালিং ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সেতু রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিস ও আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে।

মূল ডিপিপিতে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়। তবে দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় ২৬৮ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা কমিয়ে ১৬ হাজার ৫১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই প্রকল্পে ৪ হাজার ৬০৪ দশমিক ৪১ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হয়েছে দেশীয় উৎস থেকে এবং বাকি ১১ হাজার ৯০৮ দশমিক ১১ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা।

১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বহুমুখী সেতু দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুতে ফাটল দেখা দিলে ট্রেনের গতি সীমিত করা হয়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন সরকার।

প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মূল সেতু চালু হওয়ায় বড় অর্জন হয়েছে। তবে সিগন্যালিং, স্টেশন অবকাঠামো ও নিরাপত্তাব্যবস্থার মতো বিষয়গুলো সম্পূর্ণ না হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না। তাই প্রকল্পের মেয়াদ যৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে কাজ শেষ করাই বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত। তবে পরিকল্পিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারা একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে, এটা বন্ধ করা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত