Ajker Patrika

গণমাধ্যম সংস্কারে সব পক্ষের সঙ্গে বসা শেষ হয়নি: নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ০৮
গণমাধ্যম সংস্কারে সব পক্ষের সঙ্গে বসা শেষ হয়নি: নাহিদ ইসলাম

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের গঠনের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে বসা শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। মালিক, সাংবাদিক, সম্পাদকসহ অন্যান্য সব পক্ষের সঙ্গে বসে পরামর্শ নিয়ে কমিশন গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘সংবাদমাধ্যম সংস্কার: কেন? কীভাবে?’ শীর্ষক একটি মুক্ত আলোচনায় তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। 

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘সম্পাদক পরিষদের সঙ্গেও বসা হয়েছে। আজকের এই আলোচনাটাও এটা এক ধরনের ইনসাইট দেবে। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বসতে হবে। এখনো সেই বসাটা শেষ হয়নি। সব পক্ষের সঙ্গে বসে তাদের একটা পরামর্শ নিয়ে, আমরা সবাই সংস্কার কমিশনটা ঘোষণা করতে পারব।’ 

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সব সময় সম্পাদক বা মালিক পক্ষের সঙ্গে বসা হচ্ছে কিন্তু যারা মাঠে কাজ করেন তাদের ভয়েস আমাদের কাছে আসে না। এই অনুষ্ঠান সেই দূরত্ব দূর করতে ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করার চেষ্টা করব।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন মুক্ত গণমাধ্যম বা গণ্যমাধ্যম সংস্কারের কথা বলছি-আজকের আলোচনায় সাংবাদিকতার পেশাদারত্বকেই সেন্ট্রাল পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়েছে। এটা খুবই যুক্তিযুক্ত যে-সাংবাদিকতা যদি একটা পেশা হয়, তাহলে কতটুকু পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং সেই কাজ যদি না করতে পারে, তাহলে তার কারণ ও সমস্যা কী, সেটা থেকে বের করতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নানা আইন কানুন ও বিধিনিষেধ থাকে। সাংবাদিকতাকে এক ধরনের আবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা থাকে। অর্থনৈতিকভাবে গণমাধ্যমকে নানা ধরনের বাধা প্রদান করা হয়। সাংবাদিকতাকে যদি পেশাদারত্বের জায়গা থেকে চিন্তা করি, তাহলে সে ধরনের চর্চা আমাদের দেশে অনুপস্থিত। আমাদের মধ্যে মিডিয়া লিটারেসি গড়ে ওঠেনি।’ 

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার খুব অল্প সময়ের দায়িত্বের অভিজ্ঞতায় সাংবাদিকতা নিয়ে আমি যেটি বুঝেছি সেটি হচ্ছে-এখানে নানামুখী স্টেক হোল্ডার ও পরস্পর বিরোধী পক্ষ রয়েছে। যাদের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে ও ঐকমত্যে আসতে হবে। যখন ওয়েজবোর্ডের কথা আসে, তখন সম্পাদক ও মালিকেরা ওয়েজবোর্ডের বিরোধিতা করে। আবার অনেক সময় বিভিন্ন হাউস থেকে বেতন পরিশোধ করা হয় না। মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকেরা এগুলো নিয়ে অভিযোগ করেন।’ 

তিনি বলেন, ‘এ বেতনের বিষয়টি সুরাহা হওয়া উচিত। এটি যদি একটি পেশা হয়, তাহলে সে পেশাকে মর্যাদা দিতে হবে। এখানে দাসসুলভ আচরণ করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের এখানে সাংবাদিক সংগঠনগুলো রয়েছে, তাদের সাংবাদিকদের প্রকৃত স্বার্থে কাজ করা উচিত। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে, আমরা সেগুলোও বিবেচনা করব। সাংবাদিকতার যে বহুমুখী স্টেকহোল্ডার আছেন, তাদের নিয়ে আমাদের একটা ঐকমত্যে যেতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা এই আন্দোলনে দেখেছি সাংবাদিকেরা কি ধরনের কাজ করেছে, আবার যারা গণমাধ্যমের স্টেকহোল্ডার আছেন তারা কি করেছেন। সেখানে মালিকদের এক ধরনের ভূমিকা ছিল। সেটা আমাদের জন্য একটা কেস স্টাডি। এটা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি-অনেক সাংবাদিক আমাদের কাছ থেকে নিউজ নিতো, কিন্তু সেটি প্রকাশ হতো না। তখন আমরা শুনেছি-একটা হাউস পলিসি আছে কোনটি যাবে আর কোনটি যাবে না। আবার হাউসের ওপরে হাউস আছে, কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার সময় কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। আমরা আন্দোলনের সময় দেখেছি-ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আন্দোলনের কোনো তথ্য সেভাবে প্রচার করা হয়নি, যখন শাটডাউন ছিল। আর কি তথ্য প্রচার করা হয়েছে সেটিও দেশের মানুষ দেখেছে।’ 

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘তাহলে এই দায়িত্বটা নেবে কে। যদি দায়িত্বশীলদের বলা হয় তখন তারা বলে-সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিএফআই দিয়ে চাপ দেওয়া হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘কাউকে না কাউকে এ দায়িত্ব নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এই নীতিগত সংস্কারের কথা বলছি। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের মধ্য থেকেও সেই রেজিস্ট্যান্স প্রয়োজন। আমরা ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের মধ্যে সেটি দেখেছিলাম কিন্তু এই আন্দোলনে সেটি দেখা যায়নি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। আমরা সামনের দিকে এগোতে চাই, যাতে তরুণেরা এ পেশায় আসতে চায়। কিন্তু তরুণদের মধ্যে এই আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। একটা সময় এই পেশাকে মর্যাদার সঙ্গে দেখা হতো। সেই জায়গাটা এখন কমে এসেছে। সেই জায়গার সমাধানে যাওয়ার চেষ্টা করব।’ 

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা মহোদয় সংস্কার কমিশন নিয়ে কথা বলেছেন। আমাদের তরফ থেকে আমরা বলতে চাই-প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। মিডিয়া ফ্রিডম, প্রেস ফ্রিডম নননিগোশিয়েবল, এই জায়গায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করব না। আপনারা দেখেছেন প্রায় দুই মাস এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কোথাও কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয়েছে? আমি মনে করি, স্বাধীনতার পরে গত দুইটা মাস ছিল গোল্ডেন পিরিয়ড।’ 

তিনি বলেন, ‘কিন্তু কথা হচ্ছে-এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমরা ধরে রাখব কীভাবে। এটাকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। আগের সরকারে আমরা যে সমস্যাগুলো ফেস করেছি, পরবর্তীতে একটি রাজনৈতিক সরকার আসলে যেন সেই সমস্যা ফেস না করতে হয়। পরবর্তী যে রাজনৈতিক সরকার আসবে তারা হয়তো আরও ভালো করবেন। কিন্তু আমরা যে ভয়ের সময় কাটিয়েছি, সেটা যে আবার পুনরাবৃত্তি হবে না সেটির কোনো গ্যারান্টি নেই। যতগুলো কালো আইন আছে, সেগুলো নিয়ে আমাদের মিডিয়ার সংস্কার কমিশন কথা বলবেন।’ 

বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকতাকে বলি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু এই স্তম্ভের খেয়াল তো আমরা করিনি। আমাদের বিচার বিভাগ, আমাদের প্রশাসন সেগুলোর দিকে মনযোগ ছিল। কিন্তু আমরা এমন এক ট্রেন যে, আমরা সবার দিকে লাইট ফেলি কিন্তু নিজের দিকে আমাদের লাইটটা পরে না। আমরা নিজেরা নিজেদেরকে অন্ধকারে রেখেছিলাম। আমরা জনগণের কণ্ঠস্বর, এগুলো আমরা বলি কিন্তু আমরা এর আগে নিজেদেরকে নিয়ে এভাবে কথা বলেছি?’ 

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, আমরা সাংবাদিকেরা এটা পাহারা দেওয়ার জন্য কী ভূমিকা পালন করব?’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিগ পাওয়ারহুড এবং বিগ মিডিয়া এটা ছোট করতেই হবে। একজন মালিকের একটার বেশি মিডিয়া থাকতে পারবে না। তারপর কালো টাকার মালিকদের মিডিয়াতে আসা কীভাবে আসা বন্ধ করা যায়। মিডিয়া বন্ধ না করে, কালো টাকার জায়গায় তাঁকে ধরেন। তার যে অর্থনৈতিক অবদান সেখানে তাঁকে ধরেন। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ যেন না ওঠে।’ 

এ মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকের থেকে সাংবাদিকদের বেতন কম। কারণ গার্মেন্টস শ্রমিকেরা রক্ত দিয়েছে। দিয়ে দিয়ে...তারা এখনো দিচ্ছে। আমাদের সব পেশার একটা সুরক্ষা আছে। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশার কি সুরক্ষা আছে? আমাদের যে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট, সেটাকে কী আরও শক্তিশালী করতে হবে? আমাদের সবচেয়ে বড় যে হোতা প্রেস কাউন্সিল, সেটাকে সত্যিকারভাবে শক্তিশালী করা এবং তার মধ্য দিয়ে অনেকগুলো কাজ ঠিক করতে হবে। আমাদের যদি কমপিটিশন বাড়ে, তাহলে ভালো সাংবাদিকেরা সামনে আসবে। আর আমাদের আইন যদি সংস্কার হয়, তাহলে সাংবাদিকদের সুরক্ষা হবে।’ 

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী, সাংবাদিক সেলিম খান, কাওসার মাহমুদ, খাজা মইনউদ্দিন, আহমেদ জুয়েল, অধ্যাপক আর আর রাজী, আসাদুল কিবরিয়া, আরিফুল সাজ্জাদ প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তফসিলের পর চার আসনের সীমানা পরিবর্তন করে ইসির গেজেট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পাবনা ও ফরিদপুর জেলার চারটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই চার সংসদীয় আসন হলো পাবনা-১, পাবনা-২, ফরিদপুর-২ ও ফরিদপুর-৪। হাইকোর্ট কোর্টের আদেশ অনুযায়ী সীমানায় এই পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিলো ইসি।

আজ শুক্রবার ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

তফসিল ঘোষণার আগে ইসি গাজীপুরের একটি আসন কমিয়ে এবং বাগেরহাটের একটি আসন ফেরত দিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছিল কমিশন। এবার তফসিল ঘোষণার পর আরও চারটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনল। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে এমন নজির দেখা যায়নি।

সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত ইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার প্রকাশিত গেজেটের তথ্যানুযায়ী, পাবনা-১ আসনের সীমানায় সাঁথিয়া উপজেলা এবং বেড়া উপজেলার বেড়া পৌরসভা, হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন, নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন, চাকলা ইউনিয়ন ও কৈটোলা ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

পাবনা-২ আসনের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সুজানগর উপজেলা এবং উল্লিখিত একটি পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়ন (বেড়া পৌরসভা, হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন, নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন, চাকলা ইউনিয়ন ও কৈটোলা ইউনিয়ন) ব্যতীত বেড়া উপজেলা।

আর ফরিদপুর-২ আসনের সীমানায় নগরকান্দা উপজেলা ও সালথা উপজেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে-ভাঙ্গা উপজেলা, চরভদ্রাসন উপজেলা এবং সদরপুর উপজেলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩১
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত