Ajker Patrika

বারবার ট্রেনে নাশকতা: নির্বাচনী ব্যস্ততায় এগোচ্ছে না তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০: ৪৪
বারবার ট্রেনে নাশকতা: নির্বাচনী ব্যস্ততায় এগোচ্ছে না তদন্ত

রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে। ট্রেনটির পরিচালক (গার্ড) এস এম নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ট্রেনে নাশকতা চালিয়ে যাত্রী হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। তবে আসামি অজ্ঞাতনামা।

এর আগে রাজধানীর তেজগাঁও, গাজীপুরের ভাওয়ালসহ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি স্থানে ট্রেনে আগুন দেওয়া ও নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার কোনোটাতে আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে, আবার কোনোটাতে এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্তই করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নতুন কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। মামলার তদন্তকাজ চলছে। নির্বাচন নিয়ে সবার ব্যস্ততা থাকায় তদন্ত আগের অবস্থাতেই রয়েছে। 

গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগে। ঘটনার ১৮ দিন পেরিয়েও গেলেও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে পুড়ে মা-শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মামলাটির তদন্তে কাজ করছে ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ। থানা-পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র‍্যাবসহ বিভিন্ন ইউনিট ছায়া তদন্ত করছে।

আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানা-পুলিশসহ তদন্তসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ট্রেনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেননি তাঁরা। তবে গত ২১ ডিসেম্বর এ ঘটনায় সন্দেহভাজন নয়জনকে আটকের কথা জানালেও ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে জানায় র‍্যাব। 

র‍্যাব-১-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা নিয়ে আমরা কাজ করছি। নির্বাচনে যেন কোনো ধরনের নাশকতা না হয়, তা নিয়ে ব্যস্ত আছি। নির্বাচন শেষে ট্রেনের আগুন দেওয়ার ঘটনা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হবে।’

ঢাকা রেলওয়ে থানায় এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস বিশ্বাস। তিনি আজ সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এই মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। আমরা মামলার তদন্ত করছি।’

গত ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল রেলস্টেশন এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি রেললাইন কেটে ফেলায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে আসলাম হোসেন নামের ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের এক যাত্রী নিহত হন। আহত হন আরও সাতজন। পরে এই ঘটনায় ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করে রেলওয়ে। মামলাটি তদন্তের জন্য গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ে হস্তান্তর করা হয়। এখন পর্যন্ত নয়জন গ্রেপ্তার রয়েছে এই মামলায়। মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. মাকসুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এর আগে এ মামলায় নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের তদন্তকাজ চলছে।’

এর আগে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের দিন রেলভবনে রেলের নাশকতার তদন্তের বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ‘নাশকতার জন্য মামলা হয়। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব মামলার তদন্ত করে থাকেন। আর রেল তাদের অভ্যন্তরীণ কোনো দায় আছে কি না, সেটি খুঁজে দেখে। রেলের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা বের করে। অপরাধীদের ধরার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।’

রেলওয়ে সূত্র বলছে, গত দুই মাসে রেলপথের ১৩টি স্থানে এবং ছয়টি ট্রেনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া তিনটি স্থানে রেললাইন কাটা এবং ফিশপ্লেটের ক্লিপ খুলে নেওয়া হয়েছে। রেলওয়ে পুলিশের ছয়টি অঞ্চলের মধ্যে নাশকতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঢাকা অঞ্চলে। 

রেলপথের বড় দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, রেলপথে সরাসরি আক্রমণের প্রথম ঘটনা ঘটে ১৬ নভেম্বর। টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের ২টি কোচে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরপর ১৯ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যমুনা এক্সপ্রেসে পরিকল্পিত নাশকতা করা হয়েছে। এ দুই ঘটনায় কোনো প্রাণহানি না হলেও বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। 

পরের তিন দুর্ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ২২ নভেম্বর সিলেটে উপবন এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হয়। ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে ২০ ফুট রেলওয়ে ট্রাক কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনায় একজন যাত্রী মারা যান আর ৫০ জন আহত হন। আরও অনেক বেশি হতাহত হতে পারত, ঘন কুয়াশার জন্য আস্তে ট্রেন চলছিল বলে রক্ষা পাওয়া যায়। এরপর গত ১৯ ডিসেম্বর বিমানবন্দর স্টেশন ছেড়ে তেজগাঁও আসে, তখন আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনটি কোচ পুড়ে যায়, আর এখন পর্যন্ত চারজন মারা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে।

এসব গণমাধ্যমে খালেদা জিয়াকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের শক্তি, শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইত্যাদি অভিধায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির শিরোনাম করা হয়েছে ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেলেন।’

কাতারি সম্প্রচার মাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে শিরোনাম করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মারা গেছেন, বয়স হয়েছিল ৮০ বছর’।

হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের শিরোনামে বলা হয়েছে, দীর্ঘ রোগভোগের পর মারা গেলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে শিরোনাম করা হয়েছে, ‘খালেদা জিয়া, সাবেক বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী ও হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, ৮০ বছরের বয়সে মারা গেছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এপির শিরোনাম— ‘খালেদা জিয়া, সাবেক বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী ও হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, ৮০ বছরের বয়সে মারা গেছেন।’

আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের শিরোনাম— ‘খালেদা জিয়া, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তি, ৮০ বছরের বয়সে মারা গেলেন।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের শিরোনাম করা হয়েছে— ‘খালেদা জিয়া, সাবেক বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী ও হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, ৮০ বছরের বয়সে মারা গেছেন।’

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এ একই শিরোনাম করা হয়েছে।

আর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের শিরোনাম— খালেদা জিয়া, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, ৮০ বয়সে প্রয়াণ।

এছাড়া ভারতীয় ও পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলোতেও খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৫৮
খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

বিএনপির চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তথ্য জানিয়েছেন বলে জানান উপদেষ্টা। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি নির্ধারণে আয়োজিত উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল।

ব্রিফিংয়ে আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের জন্য রাষ্ট্রীয় শোক ও কাল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

সভায় শুরুতেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন মোনাজাত পরিচালনা করেন।

সভায় খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ও আগামীকাল এক দিনের সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়, যা পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।

রাষ্ট্রীয় শোকের তিন দিন দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একই সঙ্গে আগামীকাল দেশের প্রতিটি মসজিদে খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়েও আয়োজন হবে বিশেষ প্রার্থনার।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকবই খোলা হবে।

সভায় বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাসহ সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।

মির্জা ফখরুল জানান, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও এর সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাঁকে শহীদ রাষ্ট্রপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হবে।

সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দাফন ও জানাজা সম্পর্কিত বিষয়ে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে গভীর শোকের সময় আমরা সবাই সমবেত হয়েছি। পুরো জাতি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছিল, যাতে তিনি আমাদের সাথে আরও অনেক বছর থাকেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। জাতির পক্ষ থেকে আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাঁর দাফন ও জানাজার বিষয়ে যা যা কিছু প্রয়োজন সব ধরনের সহায়তা সরকার করবে।’

স্মৃতিচারণা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সর্বশেষ উনার সাথে দেখা হয়েছিল ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে। সেদিন তিনি খুব উৎফুল্ল ছিলেন। আমার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করেছেন। আমার, আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। তিনি নিজে অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু সবার সুস্থতা নিয়ে তাঁর উদ্বেগ ছিল। তিনি আমাদের সাথে ছিলেন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে, এ সময় তাঁর উপস্থিতি আমাদের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তার চলে যাওয়া জাতির বিরাট ক্ষতি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জেলজীবন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩০
খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন ও ‘আপসহীন’ নেত্রী খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির এক অনন্য অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।

দলীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, হৃদ্‌রোগসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে তাঁর রক্তচাপ কমে যায় এবং শ্বাসকষ্ট তীব্রতর হয়। চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে হাজারো নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ ভিড় জমিয়েছেন।

কণ্টকাকীর্ণ জেলজীবন

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় অংশ কেটেছে বন্দিদশায়। পাঁচবার কারাবরণ করা এই নেত্রীর জেলজীবন ছিল আত্মত্যাগ ও ধৈর্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

১. এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সেই দিনগুলো

১৯৮২ সালে রাজনীতিতে আসার পর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথ কাঁপিয়েছেন তিনি। এই সময়ে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে এবং ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর—এই তিন দফায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও সেসব ক্ষেত্রে তাঁকে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা সম্ভব হয়নি, তবে এই গ্রেপ্তারগুলোই তাঁকে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

২. ২০০৭: মইনুল রোডের বাড়ি থেকে সংসদ ভবনের সাবজেল

এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় তাঁকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাবজেলে বন্দী রাখা হয়।

জেলখানায় দুই ঈদ: এই কারাবাসকালে তিনি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা—উভয় উৎসবই নির্জন প্রকোষ্ঠে পালন করেন। ঈদের দিন পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেতেন।

সন্তানদের বন্দিত্ব ও শোক: সেই সময় তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোও কারাবন্দি ছিলেন। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর মাত্র ৬ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি মায়ের লাশ দেখার অনুমতি পান। প্রায় ৩৭২ দিন বন্দী থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করেন।

৩. ২০১৮-২০২৪: নাজিমুদ্দিন রোডের নির্জনতা ও দীর্ঘ অসুস্থতা

জিয়ার জেলজীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় শুরু হয় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে।

একমাত্র বন্দী: একটি বিশাল পরিত্যক্ত কারাগারে তিনি ছিলেন একমাত্র বন্দী। সেখানে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে তাঁর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটে। পরে তাঁকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি ও গৃহবন্দিত্ব: ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির সময় সরকার নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে তাঁর সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার অনুমতি দেয়। কিন্তু ফিরোজা বাসভবনে থাকলেও সেটি ছিল মূলত একধরনের গৃহবন্দিত্ব। সেখানে বাইরের কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ছিল অত্যন্ত সীমিত।

জুলাই বিপ্লব ও সম্মানজনক মুক্তি

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এরপরই রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে তাঁর দণ্ড মওকুফ করা হয়। দীর্ঘ আইনি ও রাজনৈতিক লড়াইয়ের পর গত ২৭ নভেম্বর তিনি সব মামলা থেকে সসম্মানে খালাস পান। মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে তিনি অন্তত এই সান্ত্বনা নিয়ে গেছেন যে তিনি একটি স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করছেন।

রাজনৈতিক উত্তরাধিকার

খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। নারী শিক্ষা প্রসারে উপবৃত্তি চালু, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষায় তাঁর ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে বিএনপি সাত দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৩
মঙ্গলবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: প্রেস উইং
মঙ্গলবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: প্রেস উইং

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে আগামীকাল বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে এই ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা প্রথমেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতান্ত্রিক যাত্রায় তাঁর অনন্য ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

দেশের এই রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে একজন ‘অভিভাবকের’ মৃত্যুতে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন।

সভায় শুরুতেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন মোনাজাত পরিচালনা করেন।

সভায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ও আগামীকাল একদিনের সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয় যা পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।

রাষ্ট্রীয় শোকের তিন দিন দেশের সব সরকারি আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একই সঙ্গে আগামীকাল দেশের প্রতিটি মসজিদে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয় গুলোতেও আয়োজন হবে বিশেষ প্রার্থনার।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক বই খোলা হবে।

সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দাফন ও জানাজা সম্পর্কিত বিষয়ে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে গভীর শোকের সময় আমরা সবাই সমবেত হয়েছি। পুরো জাতি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছিল, যাতে তিনি আমাদের সাথে আরও অনেক বছর থাকেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। জাতির পক্ষ থেকে আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাঁর দাফন ও জানাজার বিষয়ে যা যা কিছু প্রয়োজন সব ধরনের সহায়তা সরকার করবে।’

স্মৃতিচারণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সর্বশেষ ওনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে। সেদিন তিনি খুব উৎফুল্ল ছিলেন। আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করেছেন। আমার, আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। তিনি নিজে অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু সবার সুস্থতা নিয়ে তাঁর উদ্বেগ ছিল। তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে, এসময় তাঁর উপস্থিতি আমাদের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তাঁর চলে যাওয়া জাতির বিরাট ক্ষতি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত