ভারতে পাসপোর্ট আটকে বাংলাদেশির সাক্ষাৎকার নেওয়ার অভিযোগ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯: ০৩
Thumbnail image
ফরিদপুরের যুবক শুভ্র কর্মকারের পাসপোর্ট আটকে সাক্ষাৎকার নেওয়ার অভিযোগ। ছবি: স্ক্রিনশট

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম এবিপি আনন্দকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ফরিদপুরের এক যুবক। বাংলাদেশে হিন্দুরা অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ওই যুবক। তবে তাঁর পরিবারের দাবি, সীমান্ত দিয়ে ওপারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাসপোর্ট আটকিয়ে সাক্ষাৎকারটি নেয় ভারতীয় ওই গণমাধ্যম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই যুবকের নাম শুভ্র কর্মকার। তিনি ফরিদপুর শহরের নিলটুলী স্বর্ণকারপট্টির গিনিভবনের বাসিন্দা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুনীল চন্দ্র কর্মকারের একমাত্র ছেলে। গত রোববার তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। এ সময় পেট্রাপোল সীমান্তে তাঁর সাক্ষাৎকারটি নেয় এবিপি আনন্দ।

ওই সাক্ষাৎকারে শুভ্র বলেন, ‘আগে থেকে অনেক খারাপ অবস্থা। হিন্দুদের ওপর অনেক অত্যাচার, অবিচার, হিন্দুদের বাড়িঘর দখল, দোকানপাট ভাঙচুর, মন্দির ও শ্মশান পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা ইতিহাসে হয়নি। ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য অনেক কষ্ট লাগে, তাদের মারধর করা হয়, তাদের অত্যাচার করা হয়। মা–মেয়েকে নির্যাতন করা হচ্ছে। রাতের বেলা ঘুমাচ্ছি যে সকালবেলা দোকানে যেতে পারব কিনা বা বাড়ি গিয়ে আরেকজনের সঙ্গে কথা বলতে পারব কিনা এই আতঙ্কে আছি।’

ওই যুবক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মাদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘সে আসার পরে চাল, ডাল সবকিছুর দাম বেড়েছে। গরিবদের পেটে লাথি মারা হয়েছে এবং দরিদ্ররা খেতে পারছে না।’

তাঁর এমন সাক্ষাৎকার ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। স্থানীয় হিন্দুরাও এমন বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

স্বর্ণকারপট্টির মেঘনা জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী স্বপন কুমার কর্মকার বলেন, ফরিদপুরের হিন্দুরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করছে। তার বক্তব্য ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণ মিথ্যা। সে একটা মানসিক রোগী। আমাদের এখানে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছে। আমরা ওর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই এবং ওর বিচার দাবি করি।

জেলা জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নন্দ কুমার গড়াল বলেন, শুভ্র বর্ডারে বক্তব্য দিয়েছে, এতে আমরা ফরিদপুরবাসী স্তম্ভিত। ও আমাদেরই একধরনের বিপদে ফেলে দিয়েছে। বরং গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা স্বেচ্ছায় আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বিগত চার মাসে ব্যবসা-বাণিজ্যে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। এখন শুভ্র যে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ওর কথা যদি সত্য হতো তাহলে তো আমরা দোকান খুলে স্বর্ণের ব্যবসা করতে পারতাম না!

আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় শুভ্র কর্মকারের বাবা সুনীল চন্দ্র কর্মকারের সঙ্গে। তিনি ছেলের বরাত দিয়ে দাবি করেন, পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছে ভারতীয় মিডিয়ার লোকজন। সুনীল চন্দ্র বলেন, ‘এমন ঘটনা জানার পর ওর সঙ্গে যোগাযোগ করি। ও আমাকে বলেছে, সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের পরপরই ভারতের সাংবাদিকেরা এসে পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে জোর করে বলিয়েছে। ওরে ওই সব কথা বলতে বাধ্য করেছে।’

তিনি বলেন, ‘ও যে সাক্ষাৎকার দিয়েছে, এ ধরনের ঘটনা আমাদের এখানে ঘটেনি। আজ পর্যন্ত আমাদের কেউ হুমকি–ধমকিও দেয়নি। আমারে এই এলাকার সকলেই সম্মান করে। আমার সামনে একজন লোক সিগারেট পর্যন্ত খায় না!’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ফরিদপুরে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ফরিদপুরে কোনো হিন্দুর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেনি। উনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা মনগড়া। বিষয়টি নিয়ে ওনার বাবার সঙ্গে কথা বলব এবং পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত