Ajker Patrika

মৎস্যসম্পদ নিয়ে প্রকল্প

আড়াই হাজার কোটির প্রকল্পে অনিয়ম আড়াই শ কোটির

  • অডিটে প্রকল্পজুড়ে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিত।
  • চাষিদের উন্নয়নের নামে কর্মকর্তাদের পকেট ভারী।
  • স্পিডবোট কেনার চার বছর আগেই চালক নিয়োগ।
  • মেয়াদ ফুরিয়ে এলেও অগ্রগতি মাত্র অর্ধেক।
সাইফুল মাসুম, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মৎস্য খাতের বড় সরকারি উদ্যোগ ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প’তে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্পটিতে অডিট অধিদপ্তর ২৫৮ কোটি টাকার গুরুতর আর্থিক অনিয়ম পেয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অসাধু একটি চক্র মৎস্য খাতের উন্নয়নের নামে প্রকল্পটি থেকে পকেট ভারী করেছে। বঞ্চিত মৎস্যজীবীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি এ নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) একাধিক রাষ্ট্রীয় সংস্থা।

দেশের মৎস্য খাতকে এগিয়ে নিতে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প’ শুরু করে মৎস্য অধিদপ্তর। বিশ্বব্যাংকের ঋণের টাকায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটিতে শুরু থেকেই অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ ছিল। প্রকল্পের মেয়াদ আর মাত্র দুই মাস থাকলেও অগ্রগতিও অর্ধেকের মতো। কিন্তু প্রকল্পটির অনিয়ম ও ধীরগতি নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা সব সময় অদৃশ্য কারণে নীরব ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসার পর প্রকল্পটি থেকে ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়’ উল্লেখ করে বাদ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। সম্প্রতি দুর্নীতির তথ্য সামনে আসায় কয়েকবার প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বদলেরও ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও পাঁচ মাস বাড়াতে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

অডিটে ধরা রাজ্যের আর্থিক অনিয়ম

টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের সামুদ্রিক ও উপকূলীয় মৎস্যসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। কিন্তু অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সেই উদ্দেশ্য অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই অডিট অধিদপ্তর এতে ২৫৮ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম পেয়েছে। মৎস্য খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অনিয়মে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ ছিল প্রকল্প পরিচালকের।

অডিটের তথ্যমতে, প্রকল্পের বড় আর্থিক অনিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজে ডিফর্মড বার ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে ঠিকাদারকে ৪৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা দেওয়া, খালের মাটি খননের অতিরিক্ত উচ্চতা দেখিয়ে বিল পরিশোধ করার মাধ্যমে সরকারের ১৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা ক্ষতি করা, অনুমোদন ছাড়া মূল বিশেষজ্ঞ পরিবর্তন করে আরডিপিপি বরাদ্দ থেকে অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় করা, কাজ সম্পাদনের ভুয়া তথ্য দিয়ে ঠিকাদারকে তিন কোটি টাকা আর্থিক সুবিধা দেওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় পরামর্শককে বিল পরিশোধ, একই কাজের জন্য দুবার বিল পরিশোধ, আর্থিক বিবরণীতে ৩৭ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা অতিরিক্তভাবে দেখানোর মতো নানা অনিয়ম করা হয়েছে। সমর্থনযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই ব্যাংকের হিসাব বিবরণীতে ৪৮ কোটি ৫০ হাজার টাকার ভ্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

চিংড়িচাষিদের উন্নয়নের নামে অর্থ লোপাট

প্রকল্পে চিংড়িচাষিদের উন্নয়নে নানা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, প্রান্তিক চাষিরা এর ছিটেফোঁটা সুবিধাও পাননি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাষিদের নামে বরাদ্দ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে উন্নত জাতের রেণু পোনার আমদানির নামে ভুয়া বিল করে দুই কোটি টাকা হাতিয়েছে একটি চক্র। এ বিষয়ে বঞ্চিত একজন চাষি প্রকল্প পরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী ও মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, ৫০ হাজার সামুদ্রিক চিংড়ির রেণু পোনা (পিপিএল) আমদানির জন্য কক্সবাজার জেলার নামসর্বস্ব এমকেএ হ্যাচারির সঙ্গে সাড়ে ৫ কোটি টাকার ভুয়া চুক্তি করে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটিকে এ জন্য আড়াই কোটি টাকার বেশি অগ্রিমও দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র অথবা থাইল্যান্ড থেকে রেণু পোনা কেনার কথা থাকলেও এমকেএ হ্যাচারি উপকূল থেকে অবৈধভাবে ধরা রেণু পোনা বিদেশ থেকে আনা বলে চালিয়ে দেয়। দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, হ্যাচারিকে ভুয়া কাগজপত্র তৈরিতে সহযোগিতা করেন প্রকল্প পরিচালক ও অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক। অভিযোগটি আমলে নিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।

মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক জিল্লুর রহমান আজকের পত্রিকার প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রচলিত নিয়মেই এমকেএ হ্যাচারিকে টাকা দেওয়া হয়েছে। আর তিনি ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

স্পিডবোট কেনার চার বছর আগে চালক নিয়োগ

প্রকল্পে উপকূলের মাছ ধরার নৌযানগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য কিছু স্পিডবোট কেনার কথা ছিল। তবে স্পিডবোট কেনার দীর্ঘ চার বছর আগে ‘রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজিস লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৬ জন চালক, ১৬ জন সহকারী এবং ১৬ জন মেকানিক নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে জনপ্রতি দেড় থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে চালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া চরমোনাইয়ের বাসিন্দা মো. রেদোয়ান খান বলেছেন, তাঁকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। রেদোয়ানের প্রথম কর্মস্থল কুতুবদিয়ায় কোনো স্পিডবোট না থাকায় তাঁকে দিয়ে পিয়নের কাজ করানো হতো। স্পিডবোটের সহকারী (ডেকহ্যান্ড) হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বরিশাল সদর এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, তিনিও ধার করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন। একাধিক স্পিডবোটচালক অভিযোগ করেছেন, রেডিসন টেকনোলজিস তাঁদের বেতনের অ্যাকাউন্টের চেকবই নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আবু জাফরকে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তাঁর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সম্প্রতি ভারত থেকে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা করে ছয়টি স্পিডবোট কেনা হয়েছে। নৌযানগুলো উচ্চমূল্যে কেনার অভিযোগ উঠেছে। স্পিডবোটের ব্যবস্থাপনায় যুক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘নিম্নমানের স্পিডবোট উচ্চমূল্য দেখিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তারা টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রকৃত বাজারমূল্য যাচাই করলেই এই চুরি ধরা পড়বে।’

এদিকে হঠাৎ করেই চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ১০ জন স্পিডবোটচালক, আটজন সহকারী ও আটজন মেকানিককে।

গাড়ি ভাড়ায়ও অনিয়ম

প্রকল্পের আওতায় চীনের তৈরি ১৬টি চেরি গাড়ির প্রতিটি মাসে ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সরকারি অন্যান্য প্রকল্পে একই গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয় ১ লাখ ৬০ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রকল্পের ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো অভিযোগে বলা হয়, বাড়তি টাকায় গাড়ি ভাড়া নেওয়ার পেছনে পিডি ও ডিপিডি (উপপ্রকল্প পরিচালক) মনীষ কুমার মণ্ডলের ‘কমিশন-বাণিজ্য’ রয়েছে। অভিযুক্ত মনীষ কুমার মণ্ডল বলেছেন, দরপত্রের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। আর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না।

অভিযোগ রয়েছে, গাড়িগুলো ঠিকমতো প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হয় না। ভাড়া করা গাড়ির একটি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-২১-৮৬৪৬) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব অঞ্জন কুমার সরকার নিয়মিত ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, এই গাড়ি মৎস্য অধিদপ্তরের, তা ঠিক আছে; তবে এই প্রকল্পের নয়। আরও অন্তত চারটি গাড়ি মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা মাঝেমধ্যে ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. জিয়া হায়দার চৌধুরীকে কয়েক দিন একাধিকবার কল ও মেসেজ দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প দপ্তরে গিয়ে জানা যায়, তিনি ওমরাহ হজ পালনের প্রস্তুতির কারণে অফিসে আসেননি। তবে ভারপ্রাপ্ত পিডি উপপ্রকল্প পরিচালক বরুণ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, অভিযোগের বিষয়গুলো সত্য নয়। একটি পক্ষ বিশেষ উদ্দেশ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

১ মে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফকে ফোন করলে তিনি বলেন, অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নেবেন। হালনাগাদ তথ্য জানতে এক সপ্তাহ পরে আবার ফোন করা হলে মহাপরিচালক জানান, ব্যস্ততার কারণে খোঁজ নিতে পারেননি।

প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই। জেনে পরে কথা বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর দোষ স্বীকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর দোষ স্বীকার

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তাঁর বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও তাঁর শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন আদালত।

অন্যদিকে ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে জব্দ করা ফায়ার কার্তুজ ও ফায়ার বুলেট সদৃশ বস্তুর ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করে বিস্তারিত মতামত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনজন। একইদিনে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে জব্দ করা কার্তুজ ও বুলেট পরীক্ষার নির্দেশ দেন আদালত।

ঢাকার মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনজনের জবানবন্দি

গতকাল বুধবার সামিয়া, মারিয়া ও সিপুকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি। মামলার তদন্তকর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তিনজনের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। পরে আসামি মারিয়া ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কামাল উদ্দিনের আদালতে এবং সামিয়া ও সিপু ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম জুনাঈদের আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

জবানবন্দিতে তিনজন কী বলেছেন তা জানা যায়নি। তবে বিশ্বস্ত এক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার আগে ও পরে ফয়সাল কি করেছে এবং কি বলেছে সে সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন তিনজন।

এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর এই তিনজনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে ২০ ডিসেম্বর তিনজনকে আবার দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর সামিয়া ও সিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে আটক করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, এ মামলায় গ্রেফতার ফয়সালের মা ও বাবাও স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

কার্তুজ-বুলেট ব্যালিস্টিক পরীক্ষা

বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ ঘটনাস্থলে জব্দ করা ফায়ার কার্তুজ ও বুলেট সদৃশ বস্তু পরীক্ষার নির্দেশ দেন।

আবেদনে বলা হয়, শরিফ ওসমান হাদি ওরফে ওসমান গণি (৩৩) গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটের দিকে পল্টন থানাধীন বিজয়নগর বক্স কালভার্ট রোড সংলগ্ন ডিআর টাওয়ারের সামনে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে গত ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে নিয়ে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃতদেহ বাংলাদেশ বিমান যোগে দেশে এনে ২০ ডিসেম্বর সকালে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।

মামলায় ঘটনাস্থল হতে ফায়ার কার্তুজ ও ফায়ার বুলেট সদৃশ বস্তু আলামত জব্দ করা হয়। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আলামতসমূহ ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করে বিস্তারিত মতামত প্রদান করার জন্য সিআইডির ব্যালিস্টিক শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিমানবন্দর-৩০০ ফুট-গুলশানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৩
বিমানবন্দর, ৩০০ ফুট ও গুলশানসহ রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
বিমানবন্দর, ৩০০ ফুট ও গুলশানসহ রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদারে বিমানবন্দর, ৩০০ ফুট ও গুলশানসহ রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে বিমানের বিজি-২০২ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন তারেক রহমান। স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানও তাঁর সঙ্গে আসছেন।

সকাল ৯টা ৩৪ মিনিটে একটি ছবি শেয়ার করে ফেসবুকে তারেক রহমান জানান দেশের সীমানায় প্রবেশ করেছেন তিনি। পোস্টে লেখেন ‘দীর্ঘ ৬ হাজার ৩শ ১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!’

এর কিছুক্ষণ আগেই উড়োজাহাজের ভেতরে নির্দিষ্ট আসনে বসা তারেক রহমান বিমানের টিকিট হাতে নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন—ফেরা।

এদিকে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দিতে ঢাকার ৩০০ ফুট এলাকায় ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুটের মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কুড়িল থেকে সংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন রঙের ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। মঞ্চের দুই পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে লাগানো হয়েছে মাইক।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান। এরপর আর ফিরতে পারেননি। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আজ দেশে ফিরছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজ শুভ বড়দিন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬: ৪৩
আজ শুভ বড়দিন

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আজ ২৫ ডিসেম্বর। এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট আজকের এই দিনে প্রাচীন ফিলিস্তিনের বেথলেহেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘বড়দিন’ হিসেবে উদ্‌যাপন করে থাকে। দিনটি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি।

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল। মুসলিমদের কাছে যিশুখ্রিষ্ট হজরত ঈসা (আ.) হিসেবে পরিচিত। ঈসা (আ.)-এর ওপর নাজিল হওয়া আসমানি কিতাবের নাম ইঞ্জিল শরিফ। তবে দুই ধর্মের বিশ্বাসে কিছু তফাতও রয়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদ্‌যাপন করবে।

বড়দিন উপলক্ষে সারা দেশে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বাড়ি ও গির্জা উৎসবের সাজে সাজানো হয়। এ দিন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

অনেক পরিবার তাদের বাড়িতে তৈরি করে প্রতীকী গোয়ালঘর। বিদেশি অতিথিদের বিবেচনায় তারকা হোটেলগুলো ক্রিসমাস ট্রি, সান্তা ক্লজসহ বিভিন্ন অনুষঙ্গ দিয়ে সাজানো হয়।

বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহামতি যিশুখ্রিষ্ট ছিলেন মানবজাতির মুক্তির দূত এবং শান্তি, সত্য ও ন্যায়ের প্রচারক। তাঁর আদর্শ ভালোবাসা, সেবা ও ক্ষমার শিক্ষা দেয়। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দেশ ও জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বড়দিন সবার জীবনে আনন্দ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বাণীতে বলেন, বড়দিন শান্তি, ন্যায় ও মানবমুক্তির বার্তা বহন করে। যিশুখ্রিষ্টের মানবসেবা, ভালোবাসা ও ক্ষমার আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বড়দিন উদ্‌যাপন দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করবে। বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

আতশবাজি, পটকা ও ফানুস নিষিদ্ধ

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র বড়দিন উদ্‌যাপন উপলক্ষে আতশবাজি, পটকা ফোটানো এবং ফানুস ও গ্যাস বেলুন ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুভ বড়দিন ভাবগম্ভীর ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের ২৮ ধারার ক্ষমতাবলে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো এবং ফানুস ও গ্যাস বেলুন ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বড়দিনের অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও নিরাপদে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পদত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৪০
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। তিনি প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন।

খোদা বখশ চৌধুরীর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন জানিয়ে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে শেষ দিকে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন ওঠে। ওই পদে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও গুঞ্জন ছিল।

সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছিল, গত মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা ছিল খোদা বখশ চৌধুরীর। কিন্তু এ নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হওয়ায় আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন প্রধান উপদেষ্টা।

একটি সূত্র বলছে, উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন।

এর আগে গত ১০ মার্চ প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলামও এভাবে পদত্যাগ করেছিলেন।

অধ্যাপক আমিনুলকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু গত ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও মানবাধিকারকর্মী সি আর আবরারকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পাঁচদিন পর পদত্যাগ করেন অধ্যাপক আমিনুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত