Ajker Patrika

৫ আগস্টের পর আওয়ামীপন্থী বলে গণমাধ্যমের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা হয়: জাতিসংঘ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষুব্ধ জনতা প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য গুরুতর সহিংস হামলায় লিপ্ত হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, প্রকৃত বা ধারণাকৃত সমর্থক, পুলিশ ও আওয়ামীপন্থী হিসেবে বিবেচিত গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে এসব সহিংসতা চালানো হয়। এতে আওয়ামী লীগের ১৪৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে স্বাধীনভাবে তদন্ত পরিচালনার পর এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। গত জুলাই-আগস্ট মাস পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দ্বারা সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আন্দোলনের মধ্যে কিছু সহিংস গোষ্ঠী প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করে। ১৯ জুলাই উত্তরায় গাজীপুরের সাবেক মেয়রকে গণপিটুনি দেওয়া হয় এবং তাঁর এক সহযোগীকে হত্যা করা হয়। বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগে এ ঘটনা ঘটে।

৪ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করে। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে পাঁচজন আওয়ামী লীগ নেতা ও একজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। একই দিনে এনায়েতপুর স্টেশন আক্রমণের ঘটনায় ১৫ পুলিশ সদস্য নিহত হন।

গত ৫ আগস্ট ফেনীতে বিক্ষুব্ধ জনতা তিনটি থানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় এবং ১৬ জন পুলিশ কর্মকর্তার ওপর আক্রমণ করে। এর আগের দিন ৪ আগস্ট একই জেলায় ৩০০-৪০০ জন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্র-বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত ও ৭৯ জন গুরুতর আহত হয়।

রংপুরে একজন আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর ও তাঁর এক সহযোগীকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। নরসিংদীতে ৬ জন আওয়ামী লীগ কর্মীকে ধাওয়া করে হত্যা করা হয়, যারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর দেশজুড়ে প্রতিশোধমূলক হামলা বেড়ে যায়। পুলিশের ৬৩৯টি স্টেশনের মধ্যে ৪৫০টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সাভার, সিলেট, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে থানা আক্রমণের ঘটনা ঘটে। উত্তেজিত জনতা যাত্রাবাড়ী থানায় পেট্রলবোমা দিয়ে হামলা করে। এতে দুজন র‍্যাব কর্মকর্তাসহ চারজন আনসার ও পুলিশ সদস্য নিহত হন। উত্তরা থানায় চার পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় এবং আশুলিয়ায় তিনজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা

৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যাত্রাবাড়ীতে আওয়ামী লীগের কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যশোরে একটি হোটেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যেখানে ২৪ জন নিহত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া সাক্ষ্য অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকেরাও এসব সহিংসতায় জড়িত ছিল। বিএনপি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে, তাদের কিছু স্থানীয় নেতা-কর্মী, বিশেষ করে ছাত্র ও যুব সংগঠনের সদস্যরা প্রতিশোধমূলক সহিংসতায় অংশ নিয়েছিল। ১০ আগস্ট বিএনপি সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৪ জন স্থানীয় নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করে।

১৪ আগস্ট বিএনপি-সমর্থিত ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি কারখানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যেখানে শ্রমিকদের মারধর করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

এক ঘটনায় বিএনপির সমর্থকেরা এক সিনিয়র যুবলীগ নেতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে তাঁর বাবা-মাকে জিম্মি করে। এরপর স্থানীয় এক বিএনপির নেতা মুক্তিপণ আদায় করেন। পরে বিএনপির কর্মীরা ওই নেতার ব্যবসা দখল করে নেয়। এ ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গেলে ভুক্তভোগীর পরিবারের এক সদস্যকে আক্রমণ করা হয়।

যশোরে এক আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন একটি হোটেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে প্রায় ২৪ জন নিহত হয়। এ ছাড়া বিরোধীদলীয় সমর্থকেরা শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে লুটপাট ও পেট্রলবোমা হামলার ঘটনাও ঘটে।

গণমাধ্যমের ওপর হামলা ও সাংবাদিক নির্যাতন

আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ও সাবেক সরকারের সমর্থক হিসেবে বিবেচিত সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও চালানো হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার কিছুক্ষণ পর সংক্ষুব্ধ জনতা একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে হামলা চালিয়ে তা পুড়িয়ে দেয় বা ভাঙচুর করে।

৩ আগস্ট একাত্তর টিভিতে লাঠিসোঁটা ও পাথর হাতে সশস্ত্র একদল লোক হামলা চালায়, যারা অন্যান্য বিক্ষোভকারীর চেয়ে আলাদা ছিল। ৫ আগস্ট কয়েক শ লোক একাত্তর টিভিতে আবারও হামলা ও ভবনে ঢুকে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ করে।

সময় টিভিও আক্রমণের শিকার হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ে একদল লোক সেখানে হামলা চালিয়ে ভবনে আগুন দেয়। এটিএন নিউজ টিভিতে হামলাকারীরা দুই সাংবাদিক ও আরও দুই কর্মীর ওপর শারীরিকভাবে আক্রমণ করে, পাশাপাশি অফিস ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।

৫ আগস্ট এটিএন বাংলা, ডিবিসি নিউজ, মাই টিভি, বিজয় টিভি ও গাজী টিভির দপ্তরেও হামলার ঘটনা ঘটে। ৭ আগস্ট প্রায় ২০০ জনের একটি দল আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিএনপির স্লোগান দিতে দিতে মোহনা টিভির ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে। তারা একজন সিনিয়র সাংবাদিককে মারধর করে এবং ভবন ধ্বংস বা আগুন না লাগানোর শর্তে চাঁদা আদায় করে।

একাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা ও অন্যান্য সহিংস অপরাধের অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন বিশিষ্ট সাংবাদিককে এসব মামলার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এই মামলাগুলো সাজানো বলে উদ্বেগ রয়েছে।

অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। ২১ নভেম্বর এক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা স্বীকার করেন, হত্যা মামলাগুলো ‘দ্রুতগতিতে, পুরোনো আইন ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে’ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আইনের আওতায় ভুক্তভোগীরাই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এবং এতে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সরকার আরও জানায়, তদন্ত সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করা হবে।

৫ আগস্টের পর থেকে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের পর্যবেক্ষকদের মতে, উল্টো ধরনের ভয়ভীতি ছড়ানোর একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন গণমাধ্যমকর্মীরা আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনো সংবাদ প্রকাশ করতে বা বিরোধী দলের সমালোচনা করতে সতর্কতা অবলম্বন করছে।

নারীদের ওপর সহিংসতা

আগস্ট মাসে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ সদস্য এক নারীকে দুই ব্যক্তি আটকায়। বয়স ও পোশাক দেখে তাঁদের ছাত্রদের মতো মনে হয়নি। তাঁরা ওই নারীকে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য করে, তাঁর পোশাক ধরে টান দেয়, গালে চড় মারে এবং বুকে ঘুষি মারে। কয়েক দিন পর ওই নারীর ওপর আরও ভয়াবহ হামলা হয়। একদল লোক তাঁকে ঘিরে ফেলে তাঁর পোশাক ছিঁড়ে ফেলে, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে ধর্ষণ করে। শুধু তা-ই নয়, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি।

অন্য কয়েকটি ঘটনায় নারী আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সমর্থকদের ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। এসব সরাসরি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওএইচসিএইচআর মনে করে, বাস্তবে লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা আরও বেশি ঘটেছে, তবে সবকিছু নথিভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। আন্দোলনের পর অনেক নারীনেত্রী ও পরিচিত কর্মী হুমকির মুখে পড়েন এবং প্রতিশোধমূলক হামলার ভয়ে মুখ ও চুল ঢেকে রাখতে বাধ্য হন।

আওয়ামী লীগের তথ্য অনুসারে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। ৫ আগস্ট এক দিনেই ৬৮ জন নিহত হন। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে ৪৪ পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং ২ হাজার ৩০৮ জন আহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় উপস্থিত হয়ে তাঁর শোকাহত জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জানাজা শেষে প্রধান উপদেষ্টা তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন এবং এই কঠিন সময়ে তাঁর ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করে বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, কূটনৈতিক মহল এবং সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশ নেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পোস্টাল ভোট দিতে ১১ লাখ নিবন্ধন, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়াল ইসি

বাসস, ঢাকা  
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে এখন পর্যন্ত ১১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৩ জন ভোটার নিবন্ধন করেছেন। ভোটারদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোট নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৮০ হাজার ৪২৪ জন এবং নারী ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৭ জন।

ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, পূর্বঘোষিত সময়সীমা আজ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রবাস ও দেশের অভ্যন্তরের ভোটারদের বিশেষ অনুরোধে নিবন্ধনের সময় আরও পাঁচ দিন বাড়ানো হয়েছে। ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিজ এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীরা এই নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া আইনি হেফাজতে (কারাগারে) থাকা ভোটাররাও পোস্টাল ভোটের এই সুবিধা নিতে পারবেন।

প্রবাসী ভোটারদের পরিসংখ্যান

প্রবাসী ভোটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন করেছেন সৌদি আরব থেকে, যার সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ১২ জন। এরপর কাতারে ৬৮ হাজার ৬৬৮, মালয়েশিয়ায় ৬৩ হাজার ৮৩, ওমানে ৫০ হাজার ৩৯ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩১ হাজার ৫৫৫ জন ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। গত ১৮ নভেম্বর থেকে চালু হওয়া এই অ্যাপের মাধ্যমে বিশ্বের ১৪৮টি দেশের প্রবাসীরা নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন।

দেশের অভ্যন্তরে নিবন্ধন

দেশের ভেতরে ‘ইন-কান্ট্রি পোস্টাল ভোট’ ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন করেছেন ৪ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৪ জন। জেলাভিত্তিক তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা, যার সংখ্যা ৮৮ হাজার ৬৮২ জন। এরপর ঢাকায় ৮২ হাজার ১৮৫ ও চট্টগ্রামে ৭৫ হাজার ৫৮৯ জন। আসনভিত্তিক হিসেবে ফেনী-৩ আসনে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ১৩৯ জন নিবন্ধন করেছেন। এরপর চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ১১ হাজার ৫৮৯ জন ও নোয়াখালী-১ আসনে ১১ হাজার ৪৭৬ জন নিবন্ধন করেছেন।

ব্যালট প্রেরণ কার্যক্রম

প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন বিষয়ক ‘ওসিভি-এসডিআই’ প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমাদ খান বাসসকে নিশ্চিত করেছেন, গত ১২ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৫ জন প্রবাসী ভোটারের ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার এক দিনেই পাঠানো হয়েছে ২৭ হাজার ৪৪২টি ব্যালট।

নির্বাচন কমিশন জানায়, নিবন্ধনের জন্য প্রবাসী ভোটারদের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজায় এসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের স্পিকারের কুশল বিনিময়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৩
আজ বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানের আগে ঢাকায় কুশল বিনিময় করেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। ছবি: প্রেস উইং
আজ বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানের আগে ঢাকায় কুশল বিনিময় করেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। ছবি: প্রেস উইং

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানের আগে ঢাকায় কুশল বিনিময় করেছেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর।

আজ বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে দুই দেশের শীর্ষ এই প্রতিনিধির মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। খালেদা জিয়ার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে তাঁরা উভয়েই ঢাকায় অবস্থান করছেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মহল গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং তাঁর জানাজায় অংশ নিতে একাধিক দেশের প্রতিনিধিরা ঢাকায় এসেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালজুড়ে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ‘মব সন্ত্রাস’: আইন ও সালিশ কেন্দ্র

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
২০২৫ সালজুড়ে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ‘মব সন্ত্রাস’: আইন ও সালিশ কেন্দ্র

২০২৫ সাল জুড়ে ‘মব সন্ত্রাস’ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো ধরনের প্রমাণ, তদন্ত বা আইনিপ্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, সন্দেহ, গুজব সৃষ্টি করে মানুষকে মারধর ও হত্যা করা হয়েছে। ‘তওহীদি জনতা’র নামে বেআইনিভাবে মব তৈরি করে শিল্প-সংস্কৃতি কেন্দ্র ভাঙচুর, বাউল সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, এমনকি কবর থেকে তুলে লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। মুক্তিযোদ্ধাসহ বিরুদ্ধ মতের মানুষকে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে উদাসীনতার প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে, যা দেশে আইনের শাসনের জন্য চূড়ান্ত হুমকিস্বরূপ এবং সমাজে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সব কথা বলা হয়েছে। আজ বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

আসকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মব সন্ত্রাসে কমপক্ষে ১৯৭ জন নিহত হয়েছে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১২৮ জন।

আসকের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালে কমপক্ষে ২৯৩ জন নাগরিক মব সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত হয়েছে। মবের শিকার হয়ে ২০২৫ সালে ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ২৭, গাজীপুরে ১৭, নারায়ণগঞ্জে ১১ জন নির্মমভাবে নিহত হয়েছে। ২০২৫ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে গণপিটুনির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য মাসের থেকে বেশি ঘটেছে। এই সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরাও গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন, যদিও অধিকাংশ ভুক্তভোগী ছিলেন দল-মত নিরপেক্ষ সাধারণ নাগরিক।

আসকের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২০২৫ সালে কমপক্ষে ৩৮ জন ব্যক্তি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে। এ সব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে, নির্যাতনে, কথিত ‘গুলিতে’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে। ২০২৫ সালে কমপক্ষে ১০৭ জন ব্যক্তি দেশের বিভিন্ন কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছে। এর মধ্যে ৬৯ জন হাজতি এবং কয়েদি ৩৮ জন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে অন্তত ৪০১টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রায় ৪ হাজার ৭৪৪ জন আহত এবং ১০২ জন নিহত হয়েছে। সহিংসতার এই চিত্র কেবল প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সংঘাতে সীমাবদ্ধ নয়; বরং দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভক্তিও সহিংসতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনি নিপীড়নের ঘটনা একটি উদ্বেগজনক ধারায় পৌঁছেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অন্তত ৩৮১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা নির্যাতন, হয়রানি বা হুমকির শিকার হয়েছেন অন্তত ২৩ জন সাংবাদিক। প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন ২০ জন। প্রকাশিত সংবাদ বা মতামতকে কেন্দ্র করে মামলার সম্মুখীন হয়েছেন কমপক্ষে ১২৩ জন সাংবাদিক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সরাসরি হামলার শিকার হয়েছেন ১১৮ জন সাংবাদিক। এ সময়কালে দুর্বৃত্ত কর্তৃক হত্যার শিকার হয়েছেন ৩ জন সাংবাদিক এবং দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রহস্যজনকভাবে ৪ জন সাংবাদিকের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে।

আসকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৪২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলাসমূহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩টি বাড়িঘর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ৩৬টি বসত ঘরে। এ ছাড়া ৪টি মন্দিরে হামলা, ৬৪টি প্রতিমা ভাঙচুর, ৯টি জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ জন, আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। এ বছর দেশে ২১৭ জন নারী স্বামীর মাধ্যমে হত্যার শিকার হয়েছেন এবং ৬৩ জন নারীকে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা হত্যা করেছে। নিজের পরিবারের সদস্যদের হাতেও ৫১ জন নারী প্রাণ হারিয়েছেন। পারিবারিক সহিংসতা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে না পেয়ে অন্তত ১৬৮ জন নারী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ধর্ষণের ৭৪৯টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৬৯টি ছিল একক ধর্ষণ এবং ১৮০টি দলবদ্ধ ধর্ষণ। ধর্ষণের পর অন্তত ৩৬ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে, ৭ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন এবং ধর্ষণের চেষ্টার পর প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৬ জন নারী।

আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অন্তত ৪১০ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে ধর্ষণের পর হত্যা, শারীরিক নির্যাতন, অপহরণ, আত্মহত্যা এবং বিস্ফোরণে মৃত্যু।

আসক মনে করে, দেশে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের মধ্যে আশা ও প্রত্যাশা সৃষ্টি হলেও বাস্তব পর্যায়ে বৈষম্য, নিপীড়ন ও দমন-পীড়নের চিত্রে আশানুরূপ ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সামগ্রিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে বলে লক্ষ্য করা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত