Ajker Patrika

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত

নারী প্রার্থী ক্রমে ১০০ হবে, প্রতি নির্বাচনে বাড়বে ৫%

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৪৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব কেমন হবে, তা নিয়ে অবশেষে একটি সিদ্ধান্তে এসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার পক্ষে রাজনৈতিক মতৈক‍্য হলেও বেশির ভাগ দল ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। সংলাপে কিছু দল সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে এবং কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। এই অবস্থায় বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত নারী আসন রাখার পাশাপাশি জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩০০ সংসদীয় আসনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন। সেই সঙ্গে চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

গতকাল ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে নারী আসন নিয়ে আলোচনার পর এসব সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। পরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, ১২টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া দিতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—অ্যাটর্নি জেনারেল; জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ; তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান; আইন কমিশনের চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর; বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; সশস্ত্র বাহিনীসমূহের (সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী) প্রধান, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) মহাপরিচালক নিয়োগ।

নারী আসনে নিয়ে বারবার প্রস্তাব পরিবর্তন: সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার পক্ষে রাজনৈতিক মতৈক‍্য হলেও বেশির ভাগ দল ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। দলগুলোর অনাগ্রহের কারণে জাতীয় ঐকমত‍্য কমিশন বেশ কয়েকবার প্রস্তাবে সংশোধনী আনলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথমেই ১০০ আসনে নারীর সরাসরি ভোটের প্রস্তাব করেছিল। সংলাপে নারী আসনে নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে ১৪ জুলাই নতুন প্রস্তাব হাজির করে কমিশন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, কমপক্ষে ২৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থীর এক-তৃতীয়াংশ নারী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারীদের জন‍্য পৃথকভাবে কোনো সংরক্ষিত আসন থাকবে না। কিন্তু বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। পরের এক আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস‍্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিদ‍্যমান ৫০ সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে ৫ শতাংশ আসনে সরাসরি নির্বাচনে নারীদের প্রার্থী করার প্রস্তাব দেন।

গতকাল বুধবার দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২২তম দিনের আলোচনায় নতুন প্রস্তাব হাজির করে ঐকমত‍্য কমিশন। পরিবর্তিত প্রস্তাবে বলা হয়, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫-এর দফা (৩)-এ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রেখে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। পরের নির্বাচন, অর্থাৎ চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ১৫ শতাংশ আসনে সরাসরি নির্বাচনের জন্য নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে। এভাবে প্রতি নির্বাচনে ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে নারী প্রার্থী ১০০-তে উন্নীত করবে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো এতেও রাজি হয়নি।

কমিশনসংশ্লিষ্ট একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা জুলাই আন্দোলনের চেতনা এবং নারীদের সঙ্গে বেইমানি করেছি। পুরুষতন্ত্রের কাছে নারীর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

গতকালের সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস‍্য সালাহউদ্দিন আহমদ সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে সংশোধনের প্রস্তাব দেন, যেখানে তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে প্রার্থী তালিকায় নারীদের জন্য ৫-৭ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলেন। তিনি প্রস্তাব করেন, চতুর্দশ সংসদ থেকে ধাপে ধাপে নারী প্রার্থী ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে এবং এভাবেই শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো ১০০ জন নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে সক্ষম হবে। নিজের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপির পক্ষেও মোট প্রার্থীর ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ হবে এখন।

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিএনপির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তির চেতনা সমুন্নত রেখে বিকল্প উপায়ে হলেও ১০০টি সংরক্ষিত আসন রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তাঁর দল সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে বৃদ্ধির পক্ষে।

অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস‍্যসচিব আখতার হোসেন জাতীয় ঐকমত্য কমিটির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং ১০০টি নারী সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে নিজের দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জুলাই চার্টারের খসড়া বাস্তবায়ন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তানিয়া রব এবং এনডিএমের মোমিনুল আমিন নারীদের মনোনয়ন-সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করার প্রস্তাব দেন, যাতে দলগুলো ৫-৭ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের ‘সুযোগ’ তৈরি করার অঙ্গীকার করে। অন্যদিকে জাসদের মুশতাক হোসেন গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরপিও) অনুযায়ী নিজেদের সংগঠনে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স কমিশনের প্রস্তাবে হতাশা জানিয়ে ১০০টি সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আশরাফ আলী আকন এই আসনগুলোয় ভোটভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেন। খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ১০০টি সংরক্ষিত নারী আসনে ভোটভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে তাঁর দল প্রস্তাবে সই করবে না।

মুশতাক এই পরিমার্জিত প্রস্তাবের বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন, আর গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রস্তাবটি সমর্থন করেন, তবে ১৪তম জাতীয় সংসদ থেকে নারীদের ১৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ জানান।

বিরতির পর আলী রীয়াজ জানান, সংসদে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা ধাপে ধাপে ১০০ আসনে উন্নীত করার বিষয়টি কমিশনের নীতিগত অবস্থান। তিনি বলেন, কেউ পিআর চায়, কেউ চায় সরাসরি নির্বাচন—দুই ধরনের মতামতই সনদে‌ উল্লেখ‌ থাকবে।

আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের জন্য উৎসাহিত করার আহ্বান জানান এবং বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন রাখার পক্ষে মত দেন। প্রতি নির্বাচনে নারী প্রতিনিধিত্বে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির মাধ্যমে একসময় ৩০০টি সাধারণ আসনের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন।

আজ শেষ হচ্ছে সংলাপ

জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। এদিনই গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে চায় কমিশন। গতকাল পর্যন্ত সনদের খসড়া নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল কমিশনে তাদের মতামত জানিয়েছে। তবে জুলাই সনদের খসড়া এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে আপত্তি ও ভিন্নমত থাকায় এখন পর্যন্ত মতামত দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ আরও অনেক দল। এদিকে গতকালের সংলাপে প্রথম পর্বের আলোচনায় ঐকমত্যে উপনীত হওয়া ৬২টি বিষয়ও উপস্থাপন করে কমিশন।

গতকাল আলোচনা শুরুর আগে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তার একটি তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেব। আশা করছি, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে পারব।’

রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বসহ অমীমাংসিত বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গতকাল দ্বিতীয় ধাপের ২২তম দিনে বৈঠকে বসে কমিশন। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা বিষয়গুলো ছিল—সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব; সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান-সম্পর্কিত; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব [অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)]; রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ ইত্যাদি; উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি; নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ-সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি।

এখন পর্যন্ত যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান, হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর, জরুরি অবস্থা জারি, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ , ইসি গঠনের পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান।

এর আগে প্রথম পর্বের আলোচনায় যে ৬২ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—আইনসভা গঠন, জাতীয় সংসদে নারী আসনের বিধান, ডেপুটি স্পিকার পদে বিরোধী দল থেকে মনোনয়ন, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়া, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অধীনে ন্যস্ত করা, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ৩২ক বিলুপ্ত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের দিল্লি ও আগরতলা মিশন থেকে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাই কমিশনের সামনে এ সংক্রান্ত নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

দিল্লিতে বাংলাদেশ ভবনের সামনে হট্টগোল ও হুমকির অভিযোগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আর উত্তেজনার মধ্যে সাময়িকভাবে ভিসা কার্যক্রম বন্ধের এ খবর এল।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির হত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভ বিক্ষোভের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় দুটি পত্রিকা অফিস এবং ছায়ানট ভবনে হামলা হয়। সেই রাতে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে একদল মানুষ বিক্ষোভ দেখায়, সেসময় মিশনে ঢিলও ছোড়া হয়।

এরপর চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভ্যাক) কার্যক্রম রোববার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ভালুকার একটি কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে (২৮) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ গাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর শনিবার রাতে দিল্লিতে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’ নামের এক সংগঠনের ২০-২৫ জন সদস্য বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে। তারা সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস মিনিস্টার মো. ফয়সাল মাহমুদকে উদ্ধৃত করে রোববার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ‘বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে কিছু কথাবার্তা (তারা) বলছে—হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে হবে; হাইকমিশনারকে ধরো। পরে তারা মেইন গেটের সামনে এসে কিছুক্ষণ চিৎকার করে। ওরা চিৎকার করে চলে গেছে—এতটুকুই আমি জানি।’

সেই খবরের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘এ ঘটনা নিয়ে আমরা বাংলাদেশি কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা লক্ষ করেছি। বাস্তবতা হলো, ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে প্রায় ২০-২৫ জন যুবক জড়ো হয়েছিল। ওই যুবকেরা ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্লোগান দিচ্ছিলেন এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছিলেন।’

মুখপাত্র স্পষ্ট করে বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা হাইকমিশনের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা করেনি বা কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেনি।’

সেখানে মোতায়েন থাকা পুলিশ সদস্যরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন। তিনি আরও জানান, এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ জনসমক্ষে পাওয়া যাচ্ছে।

বিবৃতিতে রণধীর জয়সওয়াল আরও উল্লেখ করেন, ‘ভারত বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছে। আমাদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে ভারতের গভীর উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। আমরা দিপু চন্দ্র দাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছি।’

তিনি আবারও বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ভারতের মাটিতে অবস্থিত সব বিদেশি মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘নয়াদিল্লি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

তবে ভারতের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, দিল্লিতে কূটনৈতিক এলাকার গভীরে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের সামনে ‘হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনের বিক্ষোভকারীদের আসার সুযোগ করে করে দেওয়া’ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ভারতীয় প্রেসনোটে যে কথা বলা হয়েছে, এটা আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করি এ জন্য যে, বিষয়টি যত সহজভাবে উত্থাপন করা হয়েছে, আসলে অত সহজ না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মিশন, বাংলাদেশের মিশন কূটনৈতিক এলাকার গভীরে অবস্থিত। এমন না যে এটা বাইরে কোনো জায়গায় অথবা কূটনৈতিক এলাকার শুরুতে, তা কিন্তু না। তারা বলছে ২০-২৫ জনের একটা দল, হতে পারে। হয়তো একটু কম বেশি হতেও পারে সংখ্যাটা। কিন্তু সেটা কথা না। একটা হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনের ২৫ বা ৩০ জনের একটা দল এত দূর পর্যন্ত আসতে পারবে কেন, একটা স্যানিটাইজড এলাকার মধ্যে? তার মানে তাদের আসতে দেওয়া হয়েছে তাইলে। যেভাবে হোক তারা এসেছে, আসতে পারার কথা না কিন্তু নরমালি।’

উপদেষ্টা বলেন, সেখানে তারা দাঁড়িয়ে যে শুধু ওই হিন্দু নাগরিকের হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দিয়ে চলে গেছে, তা না। তারা আরও অনেক কিছু বলেছে, সেটা আমরা জানি। এবং আমাদের পত্রপত্রিকায় যে রিপোর্টটা আসছে, সেটাকে যে তারা বলতেছে যে ‘মিসলেডিং’, এটাও সত্য না। আমাদের পত্রপত্রিকায় মোটামুটি সঠিক রিপোর্টই এসেছে, যেটুকু আমরা তথ্য পেয়েছি। আমার কাছে প্রমাণ নেই যে তাকে (হাইকমিশনার) হত্যার হুমকি দিয়েছে, কিন্তু আমরা এটাও শুনেছি যে, তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সেটা কেউ একজন কথা বলল, সেটার মধ্যে হতে পারে।

কূটনৈতিক এলাকার এত ভেতরে বিক্ষোভকারীরা কীভাবে যেতে পারল, সেই প্রশ্ন তুলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সাধারণত কোনো প্রটেস্ট গ্রুপ যখন যায়, সেটা আগে থেকে ইনফর্ম করা হয় এবং পুলিশ তাদের একটু দূরে এক জায়গাতে আটকে দেয়। কখনো যদি কোনো কাগজপত্র দেওয়ার থাকে, দুজন এসে দিয়ে যায়। এটা হলো নর্ম। সবখানে এটা হয়, আমাদের দেশেও হয়।’

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার নিশ্চিতের যে আহ্বান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সে বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘একজন বাংলাদেশি নাগরিক নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। এটার সঙ্গে মাইনরিটিজের নিরাপত্তাকে একসঙ্গে করে ফেলার কোনো মানে হয় না। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, যাকে হত্যা করা হয়েছে এবং অবিলম্বে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে অ্যাকশন নিয়েছে। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন যে, বেশ কিছু অ্যারেস্ট করা হয়েছে। তো, এ ধরনের ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশে ঘটে তা নয়, এই অঞ্চলের সব দেশেই ঘটে। এবং প্রত্যেক দেশের দায়িত্ব হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া, বাংলাদেশ নিচ্ছে। অন্যদেরও উচিত সে রকম ব্যবস্থা নেওয়া। কাজেই এটা গ্রহণযোগ্য না, যেভাবে এটাকে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ হাই কমিশন এলাকায় নিরাপত্তার নিয়মকানুন সঠিকভাবে ‘রক্ষা করা হয়নি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, নরমালি সিকিউরিটির যে নিয়ম কানুন আছে, সেটা এখানে ঠিকমতো পালিত হয়নি। তারা বলছে যে, আমাদের সব মিশনের নিরাপত্তা দেখছে, আমরা সেটা নোট করেছি।’

কর্মরত কূটনীতিবিদদের নিরাপত্তার খাতিরে বাংলাদেশ মিশনকে সংকুচিত করার কথা সরকার ভাববে কি না, সেই প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি তেমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাহলে আমরা সেটা করব। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা যেটা দেখছি, আমরা এখনো ভরসা রাখছি, ভারত যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবে।’

বাংলাদেশ মিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি ছিল কি-না, এমন প্রশ্নে এক সময় দিল্লি মিশনে কাজ করা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ব্যাপারটা কিন্তু শুধু যে তারা এখানে এসেছে, দুটো স্লোগান দিয়েছে তা না। এর ভেতরে কিন্তু একটা পরিবার বাস করে; হাইকমিশনার এবং তার পরিবার কিন্তু ওখানে বাস করে। তারা কিন্তু থ্রেটেনড ফিল করেছে। এবং তারা কিন্তু আতঙ্কিত হয়েছে, কারণ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। দুজন গার্ড ছিল, তারা চুপ করে দাঁড়িয়েছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে আদালতের নির্দেশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে আদালতের নির্দেশ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ এ নির্দেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আদালতে হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণের নির্দেশ চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, শরিফ ওসমান হাদি (৩৩) ১২ ডিসেম্বর পল্টন থানাধীন বিজয়নগর এলাকায় দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে আহত হন। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লাশ দেশে আনা হয় এবং ২০ ডিসেম্বর লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করা হয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাশাত জাবীন ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন।

মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে ডিএনএ নমুনা সিআইডির প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ জন্য আদালতের নির্দেশ প্রয়োজন।

শুনানি শেষে আদালত নির্দেশ দেন। এ ছাড়া প্রোফাইলিং ও সংরক্ষণ কার্য সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের চিফ ডিএনএ অ্যানালিস্ট ফরেনসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

হাদিকে গুলি করার পর ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। হাদির মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভোটারদের উৎসাহিত করতে জাতিসংঘের উদ্যোগে নতুন ওয়েবসাইট চালু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ, নারী, প্রান্তিক ভোটারসহ সব নাগরিকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে জাতিসংঘের উদ্যোগে একটি নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে নির্বাচন কমিশন। ‘ফিউচার বাংলাদেশ ইউ ওয়ান্ট’ নামক এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করা হবে।

আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরও জোরদার এবং নাগরিক অংশগ্রহণকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। ওয়েবসাইটটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো—তরুণ প্রজন্মসহ সব বাংলাদেশিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে উৎসাহিত করা। এই প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধনের মাধ্যমে নাগরিকেরা তাঁদের প্রত্যাশিত ‘ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ সম্পর্কে সরাসরি মতামত প্রকাশ করতে পারবেন।

ওয়েবসাইটটি থেকে গণতন্ত্র, সুশাসন, দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব ও নির্বাচনী অংশগ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ থাকবে।

নির্বাচন কমিশন ও জাতিসংঘ বিশ্বাস করে, একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ে তুলতে সচেতন নাগরিক অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সে লক্ষ্যেই এই ওয়েবসাইটে নাগরিক দায়িত্ব, ভোটাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বার্তা অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক হিসেবে কাজ করবে। এটি দেশের সব স্তরের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত, যা ভবিষ্যতে ইতিবাচক সংলাপ ও দায়িত্ববোধ বিকাশে সহায়ক হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আনতে চলবে ১০টি বিশেষ ট্রেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪০
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহ থেকে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলটির নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় আনার জন্য বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ বরাদ্দের আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চাহিদার ভিত্তিতে ১০টি রুটে বিশেষ ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে।

চাহিদার ভিত্তিতে বিশেষ ট্রেন চলবে নিম্নোক্ত রুটগুলোতে—কক্সবাজার–ঢাকা–কক্সবাজার, জামালপুর–ময়মনসিংহ–ঢাকা–জামালপুর, টাঙ্গাইল–ঢাকা–টাঙ্গাইল, ভৈরববাজার–নরসিংদী–ঢাকা–নরসিংদী–ভৈরববাজার, জয়দেবপুর–ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট–জয়দেবপুর (গাজীপুর), পঞ্চগড়–ঢাকা–পঞ্চগড়, খুলনা–ঢাকা–খুলনা, চাটমোহর–ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট–চাটমোহর, রাজশাহী–ঢাকা–রাজশাহী এবং যশোর–ঢাকা–যশোর।

বিশেষ ট্রেন পরিচালনার কারণে স্বল্প দূরত্বের তিনটি ট্রেনের চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হবে। ট্রেনগুলো হলো—রাজবাড়ী কমিউটার (রাজবাড়ী–পোড়াদহ), ঢালারচর এক্সপ্রেস (পাবনা–রাজশাহী) এবং রোহনপুর কমিউটার (রোহনপুর–রাজশাহী)। ২৫ ডিসেম্বর এসব ট্রেনের যাত্রা এক দিনের জন্য স্থগিত থাকবে।

এতে সংশ্লিষ্ট রুটের যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বিশেষ ট্রেন পরিচালনা ও অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের আনুমানিক ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হবে।

স্পেশাল ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন আচরণ বিধিমালা–২০২৫ কঠোরভাবে প্রতিপালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত