Ajker Patrika

নিষিদ্ধ যানে বিশৃঙ্খল মহাসড়ক

আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ১২
অলিগলি ছাড়িয়ে এখন মহাসড়কেও দাপিয়ে বেড়াছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের থ্রি-হুইলার। এসব যানের কারণে ভেঙে পড়েছে সড়কের শৃঙ্খলা। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গতকাল ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার মানিকনগর এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
অলিগলি ছাড়িয়ে এখন মহাসড়কেও দাপিয়ে বেড়াছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের থ্রি-হুইলার। এসব যানের কারণে ভেঙে পড়েছে সড়কের শৃঙ্খলা। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গতকাল ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার মানিকনগর এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের মহাসড়কগুলোতে এখন আতঙ্কের নাম ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ তিন চাকার যান। এসব নিষিদ্ধ যানবাহন প্রায়ই দূরপাল্লার বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে। অনেক সড়কে উল্টো পথে চলছে বেপরোয়া গতিতে। ফলে দূরপাল্লার যানবাহনের গতি কমার পাশাপাশি প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ হারাচ্ছে বহু মানুষ। হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কারণে এসব অবৈধ গাড়িতে মহাসড়ক ভরে যাচ্ছে বলে যাত্রীসহ সচেতন নাগরিকেরা অভিযোগ করেছেন।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা গতি বাড়ানোর জন্যই কিন্তু এত টাকা বিনিয়োগ করে মহাসড়ক করছি। কিন্তু সেই মহাসড়কের যে প্রোডাকটিভিটি থাকার কথা, সেটা তো আমরা পাচ্ছি না। কারণ, এই ধরনের বিশৃঙ্খল, ফিটনেসবিহীন, অবৈজ্ঞানিক, অননুমোদিত এবং অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন মহাসড়কে চলছে।’

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৯২৭টি। এগুলোর মধ্যে মহাসড়কে ঘটেছে ২ হাজার ৩৫৭টি, যা মোট সংখ্যার ৩৪ শতাংশ। তিন চাকার যানবাহনে দুর্ঘটনার সংখ্যা (ইজিবাইক-সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটো ভ্যান-মিশুক ইত্যাদি) ২ হাজার ১৮৫টি। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যায় শীর্ষ অবস্থানে আছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের মতো যানবাহন, যা মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। এ ছাড়া অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৬৩৭টি। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এই অঞ্চলে ১ হাজার ৫৮২টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৮৪০ জন নিহত হয়েছে।

গত ২৭ মার্চ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গাবতলী থেকে নবীনগর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে দেখা যায়, একমুখী রাস্তায় উভয় দিকেই গাড়ি চলাচল করছে; বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও মোটরসাইকেলগুলোকে উল্টো সড়কে চলতে দেখা যায় বেশি। মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন নিষিদ্ধ হলেও সড়কজুড়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য রয়েছে। রাস্তার ওপর যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোকে কখনো কখনো রাস্তার মাঝ ধরেই উল্টো পথে আসতে দেখা যায়। আমিনবাজার থেকে সাভার পর্যন্ত এমন অনিয়ম বেশি দেখা যায়।

হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এলাকায় একজন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক জানান, ইউটার্ন দূরে হওয়ার কারণে উল্টো পথ দিয়েই আসেন তাঁরা। এতে সময় বেঁচে যায়।

রিকশাচালক আলাউদ্দিন বলেন, ‘মহাসড়কে রিকশা অবৈধ, এটা আমি জানি না। আমি তো একা চালাই না, অনেকেই চালায়। তা ছাড়া আমরা তো পুলিশের সামনেই চালাচ্ছি। পুলিশ তো কিছু বলে না।’ পুলিশকে কোনো টাকা দিতে হয় কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না।’

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ

জানা যায়, টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের অধীনে ১৩৩ দশমিক ২৫ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৫৭ দশমিক ৯০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ৩৮৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার জেলা মহাসড়ক রয়েছে। এই মহাসড়কগুলোতে বাস, ট্রাকসহ ভারী যানবাহনের পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশা, নছিমন চলাচল করছে অবাধে।

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের আশেকপুর বাইপাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া গ্রামের প্রদীপ পাল। টাঙ্গাইল-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুরের গোলাবাড়ী নামক স্থানে বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আব্দুল গফুর, শিক্ষার্থী রুহুল আমিন রনি ও রুহুল আমিন নিহত হন।

বগুড়া-ঢাকা, বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের বগুড়া জেলায় ছয় লেনের মহাসড়ক রয়েছে ৬৮ কিলোমিটার। এই মহাসড়কে সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের জন্য পৃথক লেন রয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, সেই লেনে চলাচল না করে এসব যান মূল মহাসড়কেই চলছে। এ ছাড়া বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক ও বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কেও একই চিত্র। মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে নিষিদ্ধ এসব যানবাহনের সংখ্যাই বেশি। বগুড়ার শেরপুর ও নন্দীগ্রামে দুটি হাইওয়ে থানা থাকলেও হাইওয়ে পুলিশের তেমন তৎপরতা দেখা যায় না নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে। অনেক সময় দেখা যায়, হাইওয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই এসব যানবাহন চলাচল করছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম

বুধবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘুরে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর, মদনপুর পর্যন্ত সড়কে দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। পুলিশের নজরদারি না থাকায় ইজিবাইকের এমন বেপরোয়া চলাচল।

চার লেনের মহাসড়কের সাইড লেন ছেড়ে দিতে হচ্ছে ইজিবাইকচালকদের জন্য। ফলে প্রশস্ত সড়ক পেয়েও তা ব্যবহার করতে পারছে না দ্রুতগতির যানবাহন। এ ছাড়া বিভিন্ন শাখা সড়কের মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় ইজিবাইক দাঁড় করিয়ে রাখা এবং যাত্রী ওঠানো-নামানো হচ্ছে।

মনজিল বাসের চালক আজিজ বলেন, ‘মহাসড়কে আমরা চলি অনেক দ্রুত। আর ইজিবাইক চলে আস্তে আস্তে। এর মধ্যে কয়েকটা উল্টো পথে চালায়। ওদের জন্য আমাদের চলাচলে সমস্যা হয়। রাস্তায় বারবার ব্রেক করা লাগে। দিনের বেলা দেখা যায়, রাতে তো অ্যাক্সিডেন্ট হয় প্রায়ই।’

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ থ্রি-হুইলারগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহাসড়ক, মানছে না কোনো নিয়মকানুন। এসব যান চলতে থাকে সড়কের উল্টো পথে। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ থ্রি-হুইলারগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহাসড়ক, মানছে না কোনো নিয়মকানুন। এসব যান চলতে থাকে সড়কের উল্টো পথে। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রিজে উল্টো পথে আসা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে ইজিবাইক চালকসহ যাত্রী মা ও ছেলে নিহত হন। ৮ এপ্রিল রাত ৯টায় ঢাকাগামী ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেসের সঙ্গে উল্টো পথে আসা ইজিবাইকের সংঘর্ষ হয় ৷ এতে ইজিবাইকচালকসহ ৬ জন গুরুতর আহত হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লার ১০৪ কিলোমিটার। দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে চৌদ্দগ্রামে আমজাদের বাজার পর্যন্ত এই অংশে ব্যস্ততম বাইপাস, চৌমুহনী, বাজার এবং বাস স্টপেজগুলোতে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার গাড়ির সংখ্যাই বেশি। কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই মহাসড়ক দাবড়ে বেড়াচ্ছে মহাসড়কে।

কুমিল্লা জেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটি জেলার তিন চাকার যানবাহনপ্রবণ ১২টি স্থান চিহিত করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজার, ইলিয়টগঞ্জ বাজার, বলদা খাল, গোমতী-মেঘনা সেতুর টোল পয়েন্ট, শহীদ নগর; চান্দিনা উপজেলার মাদাইয়া বাজার ও চান্দিনা বাগুর বাসস্ট্যান্ড; বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজার; আদর্শ সদর উপজেলার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট মোড় ও আলেখারচর; সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, সুয়াগাজী বাজার ও কোটবাড়ি ইউটার্ন; চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চৌদ্দগ্রাম বাজার, চিওড়া বাজার, মিয়াবাজার ও বাবুর্চি বাজার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের ওই সব এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ যান। অনেক সময় চলন্ত গাড়ি সংকেত দিয়ে দাঁড় করিয়ে মহাসড়কে পারাপার হচ্ছে এসব যান।

ঢাকা-ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ বিআরটিএ কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৩২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছে ৪৫৯ জন। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে বাসের সঙ্গে থ্রি-হুইলারের।

গতকাল রোববার দিনভর মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ, ঢাকা বাইপাস, দীঘারকান্দা, চুরখাই, বইলর, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, রাঘামারা, ভরাডোবা, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, সীডস্টোর, মাস্টারবাড়ী, জয়নাবাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে রয়েছে অটোরিকশার জট। বাইপাস ও চরপাড়া মোড় থেকে ত্রিশাল অভিমুখে ছেড়ে যেতে দেখা যায় তিন চাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র নামে পরিচিত (কালো) অটোরিকশা। এসবের চালকেরা দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাঁদের বাহনটি চালাচ্ছেন মহাসড়কে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি বাজার থেকে জৈনা বাজার পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কে গিজগিজ করে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। বিশেষ করে জৈনা বাজার, নয়নপুর, এমসি, মাওনা, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, মাধখলা বাজার বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে শত শত তিন চাকার যান। মহাসড়কের একটি লেন সব সময় অটোরিকশাচালকদের দখলে থাকে। সড়কের পুরোটাজুড়ে দূরপাল্লার পরিবহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করে। সামনে অটোরিকশা পড়ায় দূরপাল্লার পরিবহনগুলোকে ধীরগতিতে চলাচল করতে দেখা যায়। অনেক বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়।

প্রভাতী পরিবহনের বাসচালক আব্দুল হাই বলেন, ‘আমরা সব সময় ভয়ে থাকি অটোরিকশার জন্য। ওদের নাই কোনো প্রশিক্ষণ। যত্রতত্র এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে ফেলার কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়।’

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকা পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে ৩০টি অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। মহাসড়ক পেরিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ঠাসা থাকে শাখা সড়কগুলো। টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, টঙ্গী পূর্ব থানার প্রধান ফটকে, চেরাগ আলী, কলেজ গেট, হোসেন মার্কেট, এরশাদ নগর, খাঁ পাড়া সড়ক, গাজীপুরা বাসস্ট্যান্ড, তারগাছ, বোর্ডবাজার, কলমেশ্বর, ভোগড়া বাইপাস, চৌরাস্তা এলাকা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থেমে থেমে এসব যানবাহনের জটলা দেখা যায়।

প্রযুক্তি নেই, সরাসরি নজরদারিও নেই

মহাসড়কে অব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে চাইলে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, মহাসড়কের অনিয়মগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য সার্ভিল্যান্স ক্যামেরা থাকতে হয়, স্পিড ক্যামেরা থাকতে হয়। প্রযুক্তির সাহায্য নিলে এগুলো সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু আমাদের মহাসড়কগুলোতে এর ব্যবস্থা খুব একটা নেই। তিনি বলেন, এখন প্রযুক্তিগত নজরদারিও হচ্ছে না, সরাসরি নজরদারিও করছে না পুলিশ। ফলে মানুষের মধ্যে আইন ভাঙার প্রবণতা বেশি। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। অতএব প্রযুক্তিগত নজরদারির ব্যবস্থা নিতে হবে, সে অনুযায়ী আইনও প্রয়োগ করতে হবে। আইন আসলে মানার বিষয়, মানুষ আইন মানতে চায় না। আইন মানার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা যা বলেন

শুধু অবকাঠামো তৈরি করে আসলেই দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয় জানিয়ে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ করতে আমাদের অবশ্যই সমন্বিত পদক্ষেপ লাগবে। কারণ, দুর্ঘটনা কোনো একক কারণে হয় না। যানবাহন থেকে শুরু করে যারা সড়কের ব্যবহারকারী আছে, সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি আমি সবচেয়ে বড় কথা বলব, সড়ক আমি যতই প্রশস্ত করি না কেন, সড়কের দুই পাশে ভূমি ব্যবস্থাপনার ওপর যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারি, এই সড়ক সাময়িক কিছুটা স্বস্তি দিলেও এটা খুব দ্রুত ব্ল্যাক স্পটে পরিণত হয়ে যাবে। সেটা যেন না হতে পারে, তার জন্য অবশ্যই আমাদের পলিসি লাগবে। ভূমি ব্যবহারের ওপরে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। নতুবা শুধু সড়ক নড়াচড়া করে আসলে এই দুর্ঘটনা কমবে না।’

হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ তিন চাকার যান থাকার কথা না। যদি থাকে, তাহলে এসব গাড়ি উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্টো পথে গাড়ি চালালেই মামলা দেওয়া হবে।’

[প্রতিবেদন তৈরি করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা এবং টাঙ্গাইল, বগুড়া, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রায়পুরা, টঙ্গী ও শ্রীপুর প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সাল ও তাঁর সহযোগী ভারতে পালিয়েছেন—জানাল ডিএমপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৭
হাদি হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্তে অগ্রগতি নিয়ে ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাদি হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্তে অগ্রগতি নিয়ে ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল গভীর ও পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ (ওরফে রাহুল দাউদ) এবং তাঁর এক সহযোগী ইতিমধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

আজ রোববার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, ফয়সাল করিম মাসুদ এবং তাঁর এক সহযোগী ময়মনসিংহের দুর্গম সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন। পুলিশি নজরদারি এড়াতে তাঁরা স্থানীয় দালাল চক্রের সহায়তা নিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়, এটি ছিল সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো একটি পরিকল্পনা। ডিএমপি এ পর্যন্ত এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে, যেখানে তারা হত্যাকাণ্ডের মূল মোটিভ এবং পরিকল্পনার খুঁটিনাটি প্রকাশ করেছে।’ ডিএমপি আশা করছে, আগামী ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে এই মামলার একটি পূর্ণাঙ্গ অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করা হবে।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১২ ডিসেম্বর হামলার শিকার হন ওসমান হাদি। ওই দিন বেলা আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটের দিকে মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে অনুসারীদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন শরিফ ওসমান হাদি। পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর এক সহযোগী চলন্ত অবস্থায় হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালান।

গুলিবিদ্ধ হাদিকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে এবং পরে ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে পল্টন থানায় একটি মামলা করেন। প্রাথমিক এজাহারে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হলেও হাদির মৃত্যুর পর ২০ ডিসেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্দিক আজাদের নির্দেশে মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) সংযোজন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শপথ নিলেন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৪
প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। আজ রোববার বঙ্গভবনে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

শপথ অনুষ্ঠানে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, অন্যান্য উপদেষ্টা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২৩ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইনসচিব লিয়াকত আলী মোল্লার সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

১৯৮৫ সালে জুবায়ের রহমান চৌধুরী জজকোর্টে এবং ১৯৮৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পান তিনি। এর দুই বছর পর হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হন জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

জুবায়ের রহমান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ও এলএলএম করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০২
শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাড়ে চার বছর বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাবে দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। অথচ যে জেনারেটরের অভাবে উৎপাদন চালু করা যাচ্ছে না সেটি প্রতিস্থাপনে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় নতুন জেনারেটর ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুনরায় উৎপাদনে যেতে অন্তত আরও এক থেকে দেড় বছর লাগবে। এতে কেন্দ্রটির লোকসানের অঙ্ক আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

বিপিডিবি সূত্র জানায়, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্রটির গড় উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৫ মেগাওয়াট। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে উৎপাদন হয় প্রায় ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ, যা মাসে দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি ৪৪ লাখ ইউনিট। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ৫ টাকা ৪০ পয়সা। বিপরীতে বিদ্যুতের বর্তমান বিক্রয়মূল্য আবাসিক খাতে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা, ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ টাকা ৭৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিক খাতে ১৩ টাকা ১ পয়সা। সব মিলিয়ে গড় বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় প্রতি ইউনিট ১০ টাকা ৭৭ পয়সা। ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে কেন্দ্রটির গড় লাভ হয় ৫ টাকা ৩৩ পয়সা। এই হিসাবে কেন্দ্রটি চালু থাকলে মাসে বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে লাভ হতো প্রায় ৫৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে গত সাড়ে চার বছরে বিপুল এই সম্ভাব্য আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সংশ্লিষ্ট হিসাব অনুযায়ী, এ সময় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি উৎপাদন শুরু করে। প্রায় ১৩ বছর নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জেনারেটর ও অন্যান্য যন্ত্রাংশে গুরুতর ত্রুটি দেখা দেয়। একপর্যায়ে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রাথমিক মেরামতের পর উৎপাদনে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ২০২৩ সালের আগস্টে কেন্দ্রটির জেনারেটর আগুনে পুড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা মত দেন, জেনারেটর ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আর মেরামতযোগ্য নয়। নতুন যন্ত্রপাতি ছাড়া কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব নয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৯১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার একটি প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ কেনা হলেও জেনারেটর সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় সেগুলো এখনো স্থাপন করা যায়নি।

শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রধান প্রকৌশলী গোলাম হায়দার তালুকদার জানান, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২১০০তম সভায় নতুন জেনারেটর কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন আরোপিত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর), ২০২৫ অনুসরণ করে জেনারেটর ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জেনারেটর কেনায় বিলম্ব ও দীর্ঘদিন প্ল্যান্ট বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের আগস্টে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরপরই জেনারেটর মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে জার্মানির সিমেন্সের বিশেষজ্ঞ দল আসতে দেরি হয়। পরবর্তীকালে তারা মত দেয়, জেনারেটরটি আর মেরামতযোগ্য নয়। এরপর বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে নতুন জেনারেটর কেনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পিপিআর-২০২৫ কার্যকর হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। এতে অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগছে।’

কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিডিউলভিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে টারবাইন, কম্প্রেসার ও কম্বাশন চেম্বারের মেজর ওভারহোলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ ইতিমধ্যে কেন্দ্রের ভান্ডারে মজুত রয়েছে। তবে জেনারেটর সমস্যার কারণে টারবাইন অংশের ওভারহোলিং শেষ করা সম্ভব হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নতুন জেনারেটর কিনতে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। তবে জেনারেটর স্থাপন শেষে পুনরায় উৎপাদনে গেলে কেন্দ্রটি থেকে আগের মতোই বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।

১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্র বন্ধের প্রভাব ২২৫ মেগাওয়াট প্ল্যান্টেও বিপিডিবির অধীনে চট্টগ্রামে মোট সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্র কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহায় অবস্থিত, যার দুটি ১৫০ ও ৬০ মেগাওয়াটের পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং একটি ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্ট। এর মধ্যে ৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এবং ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ আছে গত সাড়ে চার বছর ধরে। বর্তমানে শুধু কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দীর্ঘদিন ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় পার্শ্ববর্তী ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপরও চাপ বেড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওভারহোলিং প্রয়োজন হলেও বিদ্যুতের চাহিদার কারণে গত পাঁচ বছর কেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে হয়েছে। ফলে ওভারহোলিং করা সম্ভব হয়নি।

বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট এড়াতে ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের ওভারহোলিং নিশ্চিত করতে হলে ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি দ্রুত উৎপাদনে আনা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫১
আজ শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক চিঠি পাঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক চিঠি পাঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা

ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে পদ থেকে ইস্তফা চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আজ শনিবার তিনি ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক অব্যাহতিপত্র পাঠিয়েছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ইস্তফাপত্রটি আগামীকাল রোববার সকালে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

ওই চিঠিতে অ্যাটর্নি জেনারেল লিখেছেন, যথাবিহিত সম্মানপূর্বক আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি বিগত ০৮ আগষ্ট ২০২৪ ইং তারিখ থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে কর্মরত আছি। বর্তমানে আমি ব্যক্তিগত কারণে উক্ত পদে দায়িত্ব পালনে অপারগ।

বিধায় আমাকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদ হতে অব্যাহতি প্রদানে মহোদয়ের মর্জি হয়।

গত ৫ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে ভোট করবেন। সেদিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আমি ভোট করব। আমি নমিনেশন ওখানে চেয়েছি। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আছি এখনো। আমার অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছেড়ে গিয়ে আমি ভোট করব। যখন সময় আসবে, তখন করব।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান দেশের ১৭তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে এ পদে নিয়োগ দেন। তিনি বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত