Ajker Patrika

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইন সংস্কার জরুরি

তানিম আহমেদ, ঢাকা 
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৯
যাত্রীবাহী বাস ও ধানবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ছবি: সংগৃহীত
যাত্রীবাহী বাস ও ধানবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ছবি: সংগৃহীত

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও দুর্ঘটনা কমাতে সড়ক পরিবহন আইন আরও যুগোপযোগী করার দাবি উঠেছে। অন্যদিকে চালকদের ক্ষেত্রে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারের ধারা বাতিলের দাবি জানিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন পরিবহন খাতসংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থায় সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।

পরিবহনশ্রমিকদের আপত্তির বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, আগে পরিবহন আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল ৩০৪ ধারায় ৩ বছর সাজা। রাজধানীতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম ও আবদুল করিম রাজীবকে বাসচাপা দেওয়ার মতো ঘটনায় বলা হয়েছিল, ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা হবে; যেখানে যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে। সেটিতে আপত্তি পরিবহনসংশ্লিষ্টদের। তাঁদের চাপের মুখে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আইনটি পুনর্বিবেচনা করে সংশোধনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল ২০২৪ সালে।

কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে সরকার কঠোর অবস্থানের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরও আইনটি সংশোধনের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন পরিবহনশ্রমিকেরা। গত ১০ আগস্ট সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন তাঁরা।

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, চালকদের সাজা ছাড়াও আইনের আরও কিছু দিক নিয়ে পরিবহন খাতসংশ্লিষ্টদের আপত্তি রয়েছে। তবে শুধু চালক নয়, জনগণের স্বার্থটাও দেখা হবে। কমিটি পরিবহন খাত ছাড়াও যেসব সংগঠন নিরাপদ সড়কের দাবিতে কাজ করে, তাদেরও মতামত নেবে। সবার মতামত নিয়ে আইনের সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করা হবে।

সড়ক পরিবহন আইনে চালকদের জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তারের সুযোগ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন সড়ক পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকেরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, ‘এটা তো মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে। আমাদের দাবি যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করতে হবে। সেটি আমলে নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে চালকের গ্রেপ্তারের বিধানটি জামিনযোগ্য করতে হবে।’

২০১১ সালে মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ, এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশফাক মুনীর মিশুকসহ তাঁদের তিন সহকর্মী; যে মামলায় বাসচালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি চলমান রয়েছে উচ্চ আদালতে।

এরপর ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় নিহত হয় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে প্রথমে মাঠে নামে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে এই আন্দোলন ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির চিত্র বদলায়নি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রতিবেদন অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২৪ সালে দেশে প্রাণহানি হয়েছে ৫ হাজার ৩৮০ জনের। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন তাদের হিসাবে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বলেছে ৭ হাজার ২৯৪ জনের। আবার যাত্রী কল্যাণ সমিতি ওই বছরে ৮ হাজার ৫৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল।

দেশের পরিবহন খাত দীর্ঘদিন ধরে ১৯৩৯ সালের ‘বেঙ্গল মোটর ভেহিকেল অ্যাক্ট’ এবং পরে ১৯৮৩ সালে মোটরযান অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। এই আইনে অপরাধের সাজা খুব কম ছিল। এরপর ২০১০ সালে নতুন সড়ক আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১২, ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে চার দফা খসড়া প্রণয়ন করা হয়। শুরুতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দায়ে সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত শাস্তির বিধান রাখা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবার খসড়ার সময় পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শাস্তি কমানোর দাবি আসে। শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছরের সাজার বিধান রেখে আইন পাস হয়।

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ তৈরির সময় পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা চালকদের লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর সুযোগ রাখার বিরোধিতাও করেছিলেন। ওই বছর সব পক্ষের সম্মতি নিয়েই আইনটি তৈরি করা হয়; যা পরে জাতীয় সংসদে পাস হয়। সে সময় বলা হয়েছিল, প্রজ্ঞাপন হলেই আইনটি বাস্তবায়িত হবে; যে প্রজ্ঞাপন হয়েছিল ২০১৯ সালের শেষের দিকে; যার জন্য আদালতে রিটও করেছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের মাধ্যমে প্রত্যাশার ৮০ শতাংশ পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ঘাটতি থাকলেও আইনটি কার্যকর করা হোক। এর মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। দুর্ঘটনায় জীবনহানি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

তবে মাঠপর্যায়ে সড়ক পরিবহন আইনের অনেক বিধান কার্যকর নয় বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তদন্ত সাপেক্ষে চালকদের নেতিবাচক নম্বর দেওয়ার বিধান আছে আইনে; যার একপর্যায়ে লাইসেন্স বাতিলের কথা বলা আছে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি প্রয়োগ হচ্ছে না বলেও মনে করেন তাঁরা।

এ ছাড়া সড়ক পরিবহন আইনে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হলেও আইন দ্বারা গঠিত তহবিল সক্রিয় নয় বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ বা দেওয়ার জন্য কোনো মানদণ্ড বা প্রক্রিয়া কার্যকর নয়। অবহেলার কারণে হওয়া সড়ক দুর্ঘটনাকে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি বাধ্যতামূলক এবং সমন্বিত যাত্রীবিমা (জলপথ, সড়ক ও বিমানপথের আওতাভুক্ত), ক্ষতিগ্রস্তদের হারিয়ে যাওয়া কর্মক্ষম সময়সীমা, মৃত্যুর কারণে নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগ এবং দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ক্ষতি তাদের উন্নতি ও কল্যাণকে প্রভাবিত করে এমন বিধান আইনে সংযুক্ত করার দাবি বিশেষজ্ঞদের।

সড়ক পরিবহন আইনের মূল লক্ষ্য সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা বলে মনে করেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, যদি কোনো পক্ষ বা গোষ্ঠী সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। এ জায়গায় কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া উচিত নয়। সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা করতে হবে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ মনে করেন, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ পূর্ণাঙ্গ নয়। তিনি বলেন, ‘আইনের শিরোনামটিই ভুল বলে মনে করি। এটি হওয়া উচিত ছিল সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন। সেটা হলে সড়ক নিরাপত্তার সব বিষয় আইনে আনা যেত। কিন্তু সড়ক পরিবহন আইন হওয়ায় সব বিষয় থাকলেও ব্যাখ্যার জায়গাতে অসম্পূর্ণতা থাকে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো শঙ্কা নেই। প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। কোনো রকমের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল(অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিজিবিও সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের প্রায় ৩৫ হাজার সদস্য নির্বাচনের সময় নিয়োজিত থাকবে। এর মধ্যেও দুই-চারটা অস্ত্র যে দেশে ঢুকছে না তা না। তবে এগুলো ধরাও হচ্ছে। প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। কোনো রকমের কোথাও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

আজ ‎সোমবার বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো শঙ্কা নেই। এবারই নির্বাচনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

কেরানীগঞ্জ মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কেরানীগঞ্জে যেই ব্যক্তি অপকর্মটা ঘটিয়েছে সে পলাতক রয়েছে। কিন্তু তার সহযোগীকে ধরা হয়েছে। পলাতক ওই ব্যক্তিকেও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‎

এসব ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কিনা —এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্ট যারা আছে তারা সব সময়ই এটা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সবার সহযোগিতা যদি থাকে তবে নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর হবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এ রকম একটা নির্বাচনই এই সরকারের দেওয়ার ইচ্ছা এবং এটা বাস্তবায়ন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুয়াশায় গাড়ি চালানো নিরাপদ করতে বিআরটিএর নির্দেশনা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতকালে ঘন কুয়াশার কারণে চালকের দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। এ পরিস্থিতিতে নিরাপদে গাড়ি চালাতে মোটরযান চালক ও মালিকদের জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিআরটিএ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এসব নির্দেশনা প্রকাশ করে।

বিআরটিএ নির্দেশনায় বলা হয়েছে—

১. কুয়াশায় দৃষ্টিসীমার মধ্যে থামানো যায় এমন নিয়ন্ত্রণ উপযোগী ধীর গতিতে সর্বদা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হবে।

২. সর্বদা ‘লো-বিম বা ডিপার’ জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। ‘হাই-বিম বা আপার’ কুয়াশাকে আরও বেশি ঘন করে বিধায় ‘হাই-বিম বা আপার’ জ্বালিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না।

৩. লেন পরিবর্তন/ওভারটেকিং করা যাবে না। যেসব স্থানে দৃষ্টি যায় না বা বাঁক নেওয়ার আগে দেখা যায় না, সেসব স্থানে দরকার হলে বিপদ এড়ানোর জন্য হর্ন বাজাতে হবে।

৪. ঘন কুয়াশার কারণে একেবারেই দেখা না গেলে বা দৃষ্টিসীমা শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেলে নিরাপদ জায়গায় গাড়ি থামিয়ে হেডলাইট বন্ধ করে হ্যাজার্ড লাইট জ্বালাতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসীরা যেন পালাতে না পারে, সতর্ক থাকার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

‎সীমান্ত দিয়ে কোনো অপরাধী বা সন্ত্রাসী যেন পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ‎

আজ ‎সোমবার বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা ও দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবিকে আরও পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ‎

বক্তব্যের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির সাহস ও আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ‎স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং ওই আন্দোলনে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ছাত্র-জনতার প্রতি সম্মান জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিজিবি একটি গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। বর্তমানে বিজিবি একটি “ত্রিমাত্রিক বাহিনী” হিসেবে সীমান্ত সুরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা এবং জনকল্যাণমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।’

বিজিবির সার্বিক উন্নয়নে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

‎স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে কোনো ধরনের মাদক দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা জোরদার করতে হবে।’

একই সঙ্গে অবৈধ পথে দেশীয় পণ্য বিদেশে পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

‎‎চোরাকারবারি ও মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে জড়িত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পাশাপাশি অধীনস্ত সদস্যদের কল্যাণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সর্বদা সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্তসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা অত্যন্ত কৌশল ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, যাতে দেশের স্বার্থ শতভাগ সুরক্ষিত থাকে। সীমান্ত ব্যবহারকারী চোরাকারবারিদের আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় বজায় রাখার নির্দেশ দেন তিনি। ‎

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবি সদস্যদের ‘চেইন অব কমান্ড’-এর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও আনুগত্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বিজিবি দেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে তার গৌরবময় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে এমন প্রত্যাশা তাঁর।

‎‎অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং বিজিবির মহাপরিচালকসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায় বিআইডব্লিউটিসি

  • অনুমোদিত মূলধন ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব
  • কোম্পানির শেয়ার বিআইডব্লিউটিসি রাখতে পারবে, প্রয়োজনে অন্যকেও দেবে
  • বিআইডব্লিউটিসির পরিচালনা পর্ষদে সদস্যসংখ্যা দুজন বাড়িয়ে ৭ করার প্রস্তাব
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায় বিআইডব্লিউটিসি

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) এক বা একাধিক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায়। এসব কোম্পানির শেয়ার করপোরেশন নিজে ধারণ করতে পারবে এবং প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও ধারণের অনুমতি দিতে পারবে।

বিআইডব্লিউটিসি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এসব কোম্পানি করবে সরকারের পূর্বানুমোদন নিয়ে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ায় এসব প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির অনুমোদিত মূলধন ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে মতামতের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

খসড়া বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে বিআইডব্লিউটিসির কার্যক্রমে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্ব ও কাজের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি আন্তদেশীয় প্রটোকলের আওতায় নৌযান পরিচালনা করতে পারবে। পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে অভ্যন্তরীণ, উপকূলীয় ও আন্তদেশীয় প্রটোকল রুটে দুর্ঘটনাকবলিত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বা যেকোনো বিপর্যস্ত নৌযান উদ্ধারে সহায়তা করতে পারবে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিসি পরিচালিত যেকোনো যাত্রী ও ফেরি নৌপথে নৌ যোগাযোগ ও পরিবহন সেবা যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু থাকে, সে জন্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট নৌপথে পলি অপসারণের কাজ করতে পারবে।

অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মো. সলিমউল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ক্যাবিনেটের নির্দেশনায় আগের অধ্যাদেশ পুনর্লিখন করা হচ্ছে। এর আওতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আইনটিকে যুগোপযোগী করতে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যাতে করপোরেশন আরও কার্যকর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে।

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে বিআইডব্লিউটিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরে ১৯৭৬ এবং ১৯৭৯ সালে এই অধ্যাদেশে সংশোধন আনা হয়। পরবর্তী সময়ে এই অধ্যাদেশ সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।

নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির অনুমোদিত মূলধনের বিষয়ে পরিবর্তন এনে অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার এই অর্থ দেবে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই মূলধন আরও বাড়াতে পারবে। আগে করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ছিল মাত্র ৪০ লাখ টাকা।

খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে পরিচালনা পর্ষদে মোট পাঁচজন সদস্য ছিলেন। খসড়ায় আরও দুই সদস্য যুক্ত করে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসংখ্যা সাত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন যুক্ত দুই সদস্যের একজন হবেন নৌ মন্ত্রণালয় থেকে মনোনীত যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, অন্যজন হবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে মনোনীত একই পদমর্যাদার কর্মকর্তা। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ও চারজন পরিচালক পদাধিকার বলে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য থাকবেন।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান, পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁদের সবার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের মতো আইন প্রযোজ্য হবে।

বিআইডব্লিউটিসি অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান উদ্দিন বলেন, অধ্যাদেশের খসড়ার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে তা দেশের নৌপরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা করা যায়। তবে শুধু কাগজ-কলমে আইন ও নীতি প্রণয়নেই সীমাবদ্ধ না থেকে প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক সাংগঠনিক কাঠামোর সব কর্মপরিধি যাতে সুচারুভাবে সম্পন্ন হয় এবং দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো যেন যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হয়, সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত