Ajker Patrika

সাবেক আইজির পর দ্বিতীয় রাজসাক্ষী হলেন পুলিশের এসআই, জবানবন্দি দিলেন ট্রাইব্যুনালে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৮
সাবেক আইজির পর দ্বিতীয় রাজসাক্ষী হলেন পুলিশের এসআই, জবানবন্দি দিলেন ট্রাইব্যুনালে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের সাবেক এসআই শেখ আবজাল হোসেন।

আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। শুনানির সময় এই মামলায় গ্রেপ্তার সাত আসামি ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, ডিবি পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান ও কনস্টেবল মুকুল। সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজন এখনো পলাতক।

জবানবন্দিতে আবজাল বলেন, গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আশুলিয়া থানার ওসি এ এফ এম সায়েদকে মোবাইল ফোনে আন্দোলন দমনসহ বিরোধীদের গ্রেপ্তারে মাঝেমধ্যে নির্দেশনা দিতেন এমপি সাইফুল ইসলাম। এসব নির্দেশনা অধস্তন কর্মকর্তাদের দিয়ে বাস্তবায়ন করতেন ওসি সায়েদ। ৫ আগস্ট সকালে থানার সব কর্মকর্তা ও অধস্তনদের নিচে ডাকেন ওসি সায়েদ। সবাইকে আন্দোলনে শক্তভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন তিনি। এরপর অন্য ইউনিট থেকে আসা বেশির ভাগ কর্মকর্তা ও ফোর্স নিয়ে বাইপাইল কেন্দ্রীয় মসজিদের দিকে যান ওসি। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলে বেলা আড়াইটার দিকে ফোর্স নিয়ে থানায় চলে আসেন ওসি সায়েদ। এরপর তাঁদের থানার পূর্ব-পশ্চিমে মোতায়েন করেন। তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান, ডিবি (অপারেশন) আরাফাত, মালেক, আরাফাত, কামরুল, মুকুলসহ অন্যান্য ইউনিট থেকে আসা সদস্যদের নিয়ে থানার গেটে অবস্থান নেন।

আবজাল বলেন, ‘বিকেল ৪টায় ছাত্র-জনতার একটি অংশ থানার দিকে বিজয় মিছিল নিয়ে এলে ওসির নির্দেশে এএসআই বিশ্বজিৎ ও অন্য ইউনিট থেকে আসা কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিছিল লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। তাৎক্ষণিক কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যান। পরে ওসি সায়েদের নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা লাশগুলোকে তিন চাকার ভ্যানে তুলে পুলিশের আরেকটি পিকআপ ভ্যানে ওঠান। ওই সময় এসআই আব্দুল মালেক ও এএসআই বিশ্বজিৎকে নিয়ে পরামর্শ করছিলেন ওসি। আমি গেলে কথা বন্ধ করে দেন। মনে হলো, তাঁরা কোনো পরিকল্পনা করছিলেন। আমি নার্ভাস অনুভব করি। সিদ্ধান্ত নিই, এখানে থাকা ঠিক হবে না। এরপর থানায় গিয়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট খুলে সিভিল পোশাকে পিস্তল নিয়ে থানা থেকে বের হয়ে ফল বিক্রেতা কামালের সঙ্গে তাঁর ভাড়া বাসায় অবস্থান করি। পরদিন ভোরে সেখান থেকে বের হয়ে আমার বাসায় ফিরে যাই।’

আবজাল বলেন, ‘১৫ আগস্ট থানায় গিয়ে আমার নামে ইস্যু করা পিস্তল ও গুলি জমা দিই। থানায় গিয়ে সবকিছু এলোমেলো দেখতে পাই। তখন জানতে পারি, পুলিশ যাদের হত্যা করে পিকআপে রেখেছিল, সেসব লাশে ওই দিনই সায়েদ ও বিশ্বজিৎ মিলে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। ওই দিন তাঁরা বিকেল সাড়ে ৫টায় থানা ছেড়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্যান্টনমেন্টে চলে যান। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুল ইসলাম, তৎকালীন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান রিপন, সাভার (ক্রাইমস অ্যান্ড অপস) অ্যাডিশনাল এসপি আব্দুল্লাহিল কাফি, সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুলকে ওই ঘটনার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। আমাকে চলতি বছরের মে মাসে গ্রেপ্তার করা হয়।’

জবানবন্দিতে আবজাল বলেন, ‘আমি শহীদ ভাইদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে কোনো প্রলোভন-প্ররোচনা ছাড়া এই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার জন্য আবেদন করি, যাতে ট্রাইব্যুনালকে এ মামলার বিষয়ে সত্য তথ্য দিয়ে বিচারকাজে সহায়তা করে শহীদ ভাইদের ঋণ কিছুটা পরিশোধ করতে পারি। আমি শহীদ ভাইদের জন্য কিছু করতে না পারায় তাদের পরিবার ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’

জবানবন্দি শেষে আবজালকে আংশিক জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান। জেরায় ৫ আগস্টের পরও থানায় যোগ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনা দেখার পর আমি ট্রমায় ছিলাম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ