Ajker Patrika

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড

ক্ষমা চেয়ে রাজসাক্ষীর জবানবন্দিতে যা যা বলেন সাবেক আইজিপি মামুন

  • ২০১৪ সালের পর পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক রাজনৈতিক মেরুকরণ হয়
  • নির্বাচনের আগের রাতে ৫০ শতাংশ ব্যালট ভর্তি করার পরামর্শ দেন জাবেদ পাটোয়ারী
  • আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় প্রায়ই রাতের বেলায় বৈঠক বসত
  • প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের দুটি গ্রুপ ছিল
  • র‍্যাবের অধীনে অনেকগুলো বন্দিশালা ছিল
  • র‍্যাবের মাধ্যমে কাউকে হত্যার নির্দেশ আসত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে
  • ডিজিএফআইয়ের প্রস্তাবে সমন্বয়কদের আটক করা হয়
  • ডিবিপ্রধান হারুনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘জিন’ বলে ডাকতেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৭
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি নেন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি নেন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তিনি। আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তাঁর জবানবন্দি নেওয়া হয়। তাঁকে নিয়ে এ মামলায় ৩৬ জন সাক্ষ্য দিলেন।

জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি বলেন, ‘আমার ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। আমাকে প্রথমে দেড় বছর এবং পরে আরও এক বছর আইজিপি হিসেবে এক্সটেনশন দেওয়া হয়। আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে গোপালগঞ্জকেন্দ্রিক গ্রুপিং ছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক রাজনৈতিক মেরুকরণ হয় এবং গোপালগঞ্জকেন্দ্রিক বলয় তৈরি হয়। পুলিশ অফিসারেরা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে পড়ে। এসব কারণে সিনিয়র অফিসারদের পক্ষে পুলিশকে কন্ট্রোল করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।’

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় আমি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ছিলাম। তখন আইজিপি ছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী। আমি জানতে পারি, তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ৫০% ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামর্শ দেন। সরকারের পক্ষ থেকে সে মোতাবেক ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়ন করা হয়। আর যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করে, তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপিএম ও পিপিএম পদক প্রদানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব আরও বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাদের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল।’

চৌধুরী মামুন আরও বলেন, ‘তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় প্রায়ই রাতের বেলায় বৈঠক বসত এবং তা গভীর রাত পর্যন্ত চলত। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ওইসব বৈঠকে অংশগ্রহণ করত, তাদের মধ্যে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির অ্যাডিশনাল কমিশনার হারুন অর রশীদ, এসবির অ্যাডিশনাল আইজিপি মনিরুল ইসলাম, ঢাকার ডিআইজি নুরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, অ্যাডিশনাল এসপি কাফি, ওসি মাজহার, ওসি ফরমান, ওসি অপূর্ব হাসানসহ আরও বেশ কিছু কর্মকর্তা ছিল। তাদের কারও কারও সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকার কারণে এসব পুলিশ কর্মকর্তা চেইন অব কমান্ড মানত না। কিন্তু আমি চাইতাম যে, তারা পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুক। প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে মূলত দুটি গ্রুপ ছিল। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং অন্য গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল তৎকালীন এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলাম। তাঁরা চাইতেন তাঁদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।’

জবানবন্দিতে র‍্যাব নিয়ে যা বললেন সাবেক আইজিপি

চৌধুরী মামুন বলেন, ‘র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় আমি জানতে পারি যে, র‍্যাবের হেডকোয়ার্টার কর্তৃক পরিচালিত উত্তরাস্থ র‍্যাব-১-এর কমপাউন্ডের ভেতরে টিএফআই সেল (টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেল) নামে একটি বন্দিশালা ছিল। অন্যান্য র‍্যাব ইউনিটের অধীনে আরও অনেকগুলো বন্দিশালা ছিল। এসব বন্দিশালায় রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী ও সরকারের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের আটক রেখে নির্যাতন করা হতো। যা একটি কালচারে পরিণত হয়েছিল। অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যার মতো কাজগুলো র‍্যাবের এডিজি ও র‍্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালকেরা সমন্বয় করতেন। র‍্যাব কর্তৃক কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে আনা, আটক রাখা কিংবা হত্যা করার নির্দেশনাগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসত বলে শুনেছি। নির্দেশনাগুলো প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের মাধ্যমে আসত বলে জানতে পারি। এ নির্দেশনাগুলো চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে সরাসরি এডিজি (অপস) ও র‍্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের (র‍্যাব ইন্ট) পরিচালকদের কাছে পাঠানো হতো।’

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আমি র‍্যাবের ডিজি হিসেবে যোগদানের সময় আমার পূর্ববর্তী র‍্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ আমাকে জানান যে, টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমান বন্দী আছে। আমি যোগদানের পরে র‍্যাব ইন্টের ডাইরেক্টর লেফটেনেন্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেমও আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। র‍্যাবের এডিজি (অপস) ও র‍্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ (র‍্যাব ইন্ট) সাধারণত সেনাবাহিনীর অফিসার থেকে নিয়োগ করা হতো। টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমানের বন্দী থাকার বিষয়টি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের নিকট একাধিকবার উপস্থাপন করি এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে চাই। তিনি আমাকে পরে জানাবেন বলেন। কিন্তু পরে তিনি আর কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। আমি র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে আসার সময় পরবর্তী মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেনকে ব্যারিস্টার আরমানের সম্পর্কে অবহিত করি।’

সাবেক আইজিপি আরও বলেন, ‘র‍্যাব কর্মকর্তাদের মধ্যে অ্যাডিশনাল এসপি আলেপ উদ্দিন ও এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী নামের দুজন অফিসারকে আমি চিনতাম, যারা বন্দীদের অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার মতো কাজে বিশেষ পারদর্শী ছিল। আলেপ উদ্দিন প্রথমে নারায়ণগঞ্জে ছিল। পরে তাকে র‍্যাব ইন্টেলে পদায়ন করা হয়। আমি র‍্যাব ডিজির দায়িত্ব পালনের সময় র‍্যাবের ডাইরেক্টর ইন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, লে. কর্নেল খাইরুল ইসলাম ও লে. কর্নেল মশিউর রহমান। এ ছাড়া এডিজি (অপস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কর্নেল তোফায়েল, কর্নেল আজাদ ও কর্নেল কামরুল। আমার দায়িত্ব পালনকালে যদিও আমি র‍্যাব কর্তৃক মানুষকে বিনা বিচারে আটক, নির্যাতন ও কাউকে কাউকে ক্রসফায়ারে হত্যা করার মতো বিষয়গুলো জানতাম। কিন্তু আমি কোনো তদন্ত করিনি বা এগুলোর ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্তগুলো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আসত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড মানা হতো না।’

জুলাই আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড

চৌধুরী মামুন বলেন, ‘গত বছর জুলাই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন হয়। এরপর ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির সরকারি বাসায় কোর কমিটির মিটিং হতো। সেখানে আমাদের আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হতো। কোর কমিটিতে আমিসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) টিপু সুলতান, অতিরিক্ত সচিব রেজা মোস্তফা, এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, র‍্যাব ডিজি ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসারের ডিজি মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক, এনটিএমসির প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ডিজিএফআইয়ের প্রধান ও এনএসআই প্রধানেরা উপস্থিত থাকতেন।’

সাবেক আইজিপি বলেন, ‘কোর কমিটির একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়। ডিজিএফআই ওই প্রস্তাব দেয়। আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমি রাজি হই। ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিএফআই ও ডিবি তাদের আটক করে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসে। তাদের ডিবি হেফাজতে এনে আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাদের আত্মীয়স্বজনকেও ডিবিতে নিয়ে এসে চাপ দেওয়া হয়। সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়। এ ব্যাপারে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ডিবিপ্রধান হারুনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘‘জিন’’ বলে ডাকতেন। কারণ, সে সরকারের নির্দেশনা পালনে পারদর্শী ছিল। আন্দোলনের একপর্যায়ে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নজরদারি, তাদের অবস্থান নির্ণয় ও গুলি করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হয়। হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। যার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন র‍্যাবের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ। পরে আন্দোলন দমনে সরাসরি লেথাল উইপন ব্যবহার করে এবং আন্দোলনপ্রবণ এলাকাগুলো ভাগ করে ব্লকরেইড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

মামুন বলেন, ‘১৮ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাকে ফোন করে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে সরাসরি লেথাল উইপন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে উপস্থিত ছিলাম এবং আমার সামনে অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় জোয়ার্দার উপস্থিত ছিলেন। আমি প্রলয় জোয়ার্দারকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানালে তিনি রুম থেকে বের হয়ে ডিএমপি কমিশনারসহ সারা দেশে এই নির্দেশনা পৌঁছে দেন। ওই দিন থেকে লেথাল উইপন ব্যবহার করা শুরু হয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তাঁর অধীনস্ত কর্মকর্তাদের লেথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। লেথাল উইপন ব্যবহারের বিষয়ে অতি উৎসাহী ছিলেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল, যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে হবে।’

চৌধুরী মামুন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মির্জা আযম, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন প্রধানমন্ত্রীকে মারণাস্ত্র ব্যবহারে প্ররোচিত করতেন। সারা দেশে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করলে ১৫ জুলাই ওবায়দুল কাদের, নানক মন্তব্য করেন যে, আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগ ও যুবলীগই যথেষ্ট। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ড্রোন, হেলিকপ্টার ও লেথাল উইপন ব্যবহার করে আন্দোলনরত অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে আহত ও নিহত করা হয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্যাডার বাহিনী ছাড়াও আন্দোলন দমনে সরকারকে উৎসাহিত করে আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও ব্যবসায়ীরা।’

শেখ হাসিনার পদত্যাগ যেভাবে

চৌধুরী মামুন বলেন, ‘৪ আগস্ট বেলা ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নিরাপত্তা সমন্বয় কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তিন বাহিনীর প্রধান, এসবির প্রধান, ডিজিএফআইয়ের প্রধান, এনএসআইয়ের প্রধানসহ মোট ২৭ জন। আমি নিজেও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। ওই বৈঠকে আন্দোলন দমন ও নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরিস্থিতির রিপোর্ট পেশ করছিল। ইতিমধ্যে চারদিকে পরিবেশ-পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় বৈঠকটি মুলতবি করা হয়। ওই দিন রাতের বেলায় আমাদের আবার গণভবনে ডাকা হয়। সেখানে আমি, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র‍্যাবের ডিজি ও লে. জেনারেল মুজিব উপস্থিত ছিলাম। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। ডিজিএফআইয়ের প্রধান ও এসবির প্রধান মনিরুল বাইরে অপেক্ষমাণ ছিলেন। বৈঠকে ৫ আগস্ট আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ‘‘মার্চ টু ঢাকা’’ কর্মসূচি ঠেকানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবে। এরপর আমরা আর্মির অপারেশন কন্ট্রোল রুমে যাই। সেখানে আমি, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র‍্যাবের ডিজি, লে. জেনারেল মুজিব, ডিজিএফআইয়ের প্রধান ও এসবির প্রধান মনিরুল এবং ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত ছিলাম। সেখানে ঢাকা শহরের প্রবেশমুখগুলোতে ফোর্স মোতায়েন করে কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’

সাবেক আইজিপি বলেন, ‘৪ আগস্ট মিটিং শেষে রাত সাড়ে ১২টায় আমরা আর্মির অপারেশন কন্ট্রোল রুম থেকে চলে আসি। ৫ তারিখ সকালে আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আমার দপ্তরে যাই। ইতিমধ্যে উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও বিভিন্ন পথ দিয়ে স্রোতের মতো ছাত্র-জনতা ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে শুরু করে। দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টার দিকে জানতে পারি, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তিনি কোথায় যাবেন, তা আমরা জানতাম না। এরপর বিকেলবেলা আর্মির হেলিকপ্টার এসে আমাদের পুলিশ হেডাকোয়ার্টার্স থেকে প্রথমে তেজগাঁও বিমানবন্দরের হেলিপ্যাডে এবং সেখান থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অফিসার্স মেসে নিয়ে যায়। হেলিকপ্টারে আমার সঙ্গে এসবির প্রধান মনিরুল, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও ডিআইজি আমেনা ছিলেন। পরের শিফটে অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয়, অ্যাডিশনাল আইজি লুৎফুল কবিরসহ অন্যদের সেখানে নেওয়া হয়। ৬ তারিখ আইজিপি হিসেবে আমার নিয়োগ চুক্তি বাতিল করা হয়। ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানকালে ৩ সেপ্টেম্বর আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

চৌধুরী মামুনের ক্ষমাপ্রার্থনা

চৌধুরী মামুন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সরকারের আদেশে আন্দোলনকারীদের ওপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে তাদের আহত ও নিহত করায় আমি পুলিশপ্রধান হিসেবে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাসহ ব্যাপক নৃশংসতার জন্য আমি অপরাধবোধে ও বিবেকের তাড়নায় অ্যাপ্রুভার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ট্রাইব্যুনালে এসে স্বজন হারানো ব্যক্তিদের কান্না, আহাজারি, চিকিৎসা প্রদানে বাধা দেওয়া-সংক্রান্ত ডাক্তার ও ভিকটিমদের বক্তব্য, ভিডিওতে নৃশংসতাগুলো দেখে অ্যাপ্রুভার হওয়ার সিদ্ধান্ত আরও যৌক্তিক মনে হয়েছে। বিশেষ করে, হত্যা করার পর লাশগুলো একত্র করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার বীভৎসতা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে।’

মামুন আরও বলেন, ‘আমি সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। পুলিশের চাকরি খুবই ট্রিকি। সব সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। চাকরি জীবনে আমার বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি সব সময় যথেষ্ট মানবিকতা ও সচেতনার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। চাকরিজীবনের শেষপর্যায়ে এসে এত বড় গণহত্যা আমার দায়িত্বকালে সংঘটিত হয়েছে, তার দায় আমি স্বীকার করছি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়। আমি গণহত্যার শিকার প্রতিটি পরিবার, আহত ব্যক্তিবর্গ, দেশবাসী ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’ এ সময় তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দিবেন। আমার এই সত্য ও পূর্ণাঙ্গ বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদ্‌ঘাটন হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরও হায়াত দান করেন, বাকি জীবন কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরতের ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৯
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ভারত এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাঁকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে এক দিনে, সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কী আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এ রকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারেক সাহেব কখন আসবেন, এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্র্যাফট নিয়ে। সে ক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে।’

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি, সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এ ছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সব ক্ষেত্রে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবার রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এ ছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে শুরু হওয়া সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর দু’টি মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ও ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ নেতারা এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে’ রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। রোববার থেকে সব শ্রেণির তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) চলবে।

এদিকে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের ‘হয়রানিমূলক’ বদলি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার তিনজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে নিজ জেলার বাইরে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। এসব বদলিকে তাঁরা ‘হয়রানিমূলক বদলি’ বলে মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, ‘রেওয়াজ না থাকলেও নিজ জেলার বাইরে হয়রানি করতে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে।’

যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এসব বদলির আদেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ জানিয়েছেন, তাঁকে নোয়াখালী সদর উপজেলার কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেক আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি জানিয়েছেন, তিনিসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অন্তত ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রথমে শোকজ ও পরে বদলি করা হলো। এটি হয়রানিমূলক বদলি, আমাদের শাস্তি দিয়েছে কারণ আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই করেছি। কিন্তু অনেক শিক্ষক যাঁরা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না তবুও তাঁরা বদলি হয়েছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ অনুসারীরা সরকারের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন। সোমবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কিছু স্কুলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা তা বর্জন করে কর্মবিরতি চালিয়ে যান।

কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। পরে ১১ তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

গত ৮ নভেম্বর শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে সেদিন বিকেলে তাঁরা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। সেসময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকেরা পরদিন থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন।

পরে ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা, যেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে সরকারে আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও এনজিও-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।

সেদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন, অন্যটি এনজিও-সংক্রান্ত আইন। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে এই আইনগুলো পাস করার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে; যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন পাস করা সমীচীন হবে না। আমরা মনে করি, উপরোক্ত বিষয়ে আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রণয়ন করা সঠিক হবে। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য।’

বিএনপির আপত্তি আমলে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যের পুলিশ কমিশন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়।

বৈঠক শেষে এ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

উপদেষ্টা জানান, পুলিশ কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছাড়াও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন—এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরত হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন।

পুলিশকে জনবান্ধব করতে করণীয় সম্পর্কে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ যাতে সংবেদনশীল হয়, সে জন্য তাদের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার—সেগুলোও চিহ্নিত করবে কমিশন।

কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে—পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটি ব্রিজ (সেতু) করে দেওয়ার জন্যই এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।

আরপিও সংশোধন করে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না এবং পোস্টাল ব্যালটের ভোটগুলো গণনা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্যালটে যেখানে একটা সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে গণনা করা হবে না। যদি সিল না দেয়, তাহলে গণনা করা হবে না। যখন পোস্টাল ভোট দেওয়া হয়, তখন একটা ডিক্লারেশন স্বাক্ষর করা হবে। ওই ডিক্লারেশনে যদি স্বাক্ষর না থাকে, তাহলে গণনা করা হবে না। আর আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই সময়ে যে ব্যালটগুলো এসে পৌঁছাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে—সেগুলো একইভাবে গণনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত