Ajker Patrika

সারা দেশে নাশকতা: বাস-ট্রাক-পিকআপে আগুন, বিস্ফোরণ

  • সাভার, ধামরাই, মেরুল বাড্ডা, নারায়ণগঞ্জ, পতেঙ্গায় বাসে আগুন।
  • রাজধানীর ধানমন্ডি, মিরপুর, গাবতলী, মতিঝিল, মৌচাকে ককটেল বিস্ফোরণ।
  • বগুড়া, পটুয়াখালী, মানিকগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকে অগ্নিসংযোগ।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত রোববার রাত থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ নানা জায়গায় একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন যানবাহনে। ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের একাধিক শাখায়। আক্রান্ত হয়েছে গ্রামীণ গ্রুপের অন্য স্থাপনাও। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বিচ্ছিন্নভাবে মিছিল হলেও পুলিশ আসার আগেই সরে যায় বিক্ষোভকারীরা।

রাজধানীর ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, মিরপুর, গাবতলী, মহাখালী, মতিঝিল ও মৌচাকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সকাল ১০টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রমনা কালীমন্দিরের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মিরপুরের মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্সের সামনের সড়কে পদচারী-সেতু থেকে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মৌচাক ফ্লাইওভারের ওপর থেকে মৌচাক ক্রসিংয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় এক রিকশাচালক আহত হয়েছেন। রাত সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা এবি ব্যাংকের সামনে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে একটি মিনি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়।

রোববার রাতে মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের মূল ফটকের সামনে এবং আমতলী মোড় এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। এর আগে রাত ৯টার দিকে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাসার সামনের সড়কে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। রাত ৯টা ৪০ মিনিটে বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ ছাড়া শ্যামপুর ও গাবতলীতেও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ায় রাত ১০টার পর একটি লেগুনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের পানির ট্যাংকের সামনে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।

ঢাকার সাভার ও ধামরাইয়ে রোববার রাতে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে দুই বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম আগুন দেওয়া হয় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি বাসে। রাত ১১টার দিকে আগুন দেওয়া হয় সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় দাঁড় করিয়ে রাখা আরেকটি বাসে। ধামরাই ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ‘ঢুলিভিটায় বাসে অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে আমাদের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠাই। রাত ১১টার দিকে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে বাসের বেশ কিছু অংশ পুড়ে যায়।’ সাভারের বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল ওহাব বলেন, বিরুলিয়ার বটতলা এলাকায় চালক বাস রেখে খেতে গেলে সেটিতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। রোববার রাত দেড়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের সামনে একটি বাসে আগুন লাগানো হয়।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার কাঠগড় এলাকায় রোববার রাতে রাস্তার পাশে থাকা একটি খালি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। মোটরসাইকেলে করে আসা দুজন বাসটিতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গতকাল ভোরে হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট এলাকায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক এবং চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে রেললাইনে আগুন ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধের চেষ্টা করা হয়েছে।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পেট্রল ঢেলে এক জামায়াত কর্মীর পিকআপ ভ্যান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাজারসংলগ্ন উত্তর ফালগুনকরা রাস্তার মাথায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিকআপ ভ্যানটি চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার পশ্চিম ধনমুড়ি গ্রামের জামায়াত কর্মী ফজলুল হক মোল্লার। গতকাল ভোরে মোটরসাইকেল আরোহী দুই দুর্বৃত্ত পেট্রল ঢেলে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপটি পুড়িয়ে দেয়। স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের লোকজন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কাজ করেছে। ফজলুল হক মোল্লা বলেন, ‘ফজরের পর ফেনী থেকে মাছ আনতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আমার জীবিকা অর্জনের একমাত্র সম্বলটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

গতকাল শেখ হাসিনার রায়ের পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। বেলা আড়াইটার দিকে তাঁরা শেখ রাসেল শিশুপার্কের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। ২০ মিনিটের মতো সেখানে অবস্থান করে সড়কে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে পুলিশ আসার আগে তাঁরা পালিয়ে যান। গোপালগঞ্জ সদরের ৭ মার্চ চত্বরের উল্টো দিকে ফসলের মাঠে কয়েকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ আসার খবরে তাঁরা পালিয়ে যান। এ ছাড়া দোলা পেট্রলপাম্পের সামনে ও ডুমদিয়া এলাকায়ও বিক্ষোভ হয়েছে। এর আগে সকালে কাশিয়ানী উপজেলার তিলছড়া বাজার এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাঁরা পালিয়ে যান।

বগুড়ার ধুনটে গ্রামীণ ব্যাংকের গোসাইবাড়ী শাখা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গত রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ভবনের বারান্দায় পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে দ্রুত ব্যাংকের কর্মীরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ব্যাংকের নৈশপ্রহরী শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি বারান্দাতেই ছিলেন। রাত ৩টার দিকে তিনি বারান্দা থেকে বের হওয়ামাত্র আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

পটুয়াখালী ডিবুয়াপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিত্যক্ত গেটে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে কালিকাপুর ইউনিয়নের মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শাখাটি আক্রান্ত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকজন ব্যাংকের সামনে এসে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর পেট্রল ঢেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে ব্যাংকের ভেতরে থাকা কর্মকর্তারা গিয়ে পানি ঢেলে আগুন নেভান।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বারাদিয়া বাজারে রোববার রাতে গ্রামীণ ব্যাংকের সামনের গেটে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় ব্যাংকের কর্মীরা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল গ্রামীণ গ্রুপের দুটি স্থাপনার নামফলক লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ভোর পৌনে ৫টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে কালিয়াকৈরের খাড়াজোড়া এলাকায় গ্রামীণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-২-এর প্রধান ফটকের নামফলকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রধান ফটকের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই দিন ভোর ৫টার দিকে উপজেলার গোয়ালবাথান এলাকায় গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের নামফলকেও পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা।

রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মোহাম্মাদ হাবিব হাসানের ছোট ভাই নাদিম মাহমুদের বাড়ি ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল বিকেলে ১৪ নম্বর সেক্টরের বটতলা এলাকায় অবস্থিত তাঁর পুরোনো ডুপ্লেক্স বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। যদিও ৫ আগস্টের পর থেকে নাদিম মাহমুদ বা তাঁর পরিবারের কেউ বাড়িটিতে থাকেন না। গতকালের ঘটনায় বাড়ির কেয়ারটেকার মো. হৃদয় ও নাদিম মাহমুদের কর্মচারী মো. বিপ্লব আহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাড়ে চার বছর বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাবে দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। অথচ যে জেনারেটরের অভাবে উৎপাদন চালু করা যাচ্ছে না সেটি প্রতিস্থাপনে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় নতুন জেনারেটর ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুনরায় উৎপাদনে যেতে অন্তত আরও এক থেকে দেড় বছর লাগবে। এতে কেন্দ্রটির লোকসানের অঙ্ক আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

বিপিডিবি সূত্র জানায়, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্রটির গড় উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৫ মেগাওয়াট। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে উৎপাদন হয় প্রায় ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ, যা মাসে দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি ৪৪ লাখ ইউনিট। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ৫ টাকা ৪০ পয়সা। বিপরীতে বিদ্যুতের বর্তমান বিক্রয়মূল্য আবাসিক খাতে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা, ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ টাকা ৭৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিক খাতে ১৩ টাকা ১ পয়সা। সব মিলিয়ে গড় বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় প্রতি ইউনিট ১০ টাকা ৭৭ পয়সা। ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে কেন্দ্রটির গড় লাভ হয় ৫ টাকা ৩৩ পয়সা। এই হিসাবে কেন্দ্রটি চালু থাকলে মাসে বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে লাভ হতো প্রায় ৫৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে গত সাড়ে চার বছরে বিপুল এই সম্ভাব্য আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সংশ্লিষ্ট হিসাব অনুযায়ী, এ সময় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি উৎপাদন শুরু করে। প্রায় ১৩ বছর নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জেনারেটর ও অন্যান্য যন্ত্রাংশে গুরুতর ত্রুটি দেখা দেয়। একপর্যায়ে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রাথমিক মেরামতের পর উৎপাদনে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ২০২৩ সালের আগস্টে কেন্দ্রটির জেনারেটর আগুনে পুড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা মত দেন, জেনারেটর ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আর মেরামতযোগ্য নয়। নতুন যন্ত্রপাতি ছাড়া কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব নয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৯১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার একটি প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ কেনা হলেও জেনারেটর সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় সেগুলো এখনো স্থাপন করা যায়নি।

শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রধান প্রকৌশলী গোলাম হায়দার তালুকদার জানান, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২১০০তম সভায় নতুন জেনারেটর কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন আরোপিত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর), ২০২৫ অনুসরণ করে জেনারেটর ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জেনারেটর কেনায় বিলম্ব ও দীর্ঘদিন প্ল্যান্ট বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের আগস্টে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরপরই জেনারেটর মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে জার্মানির সিমেন্সের বিশেষজ্ঞ দল আসতে দেরি হয়। পরবর্তীকালে তারা মত দেয়, জেনারেটরটি আর মেরামতযোগ্য নয়। এরপর বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে নতুন জেনারেটর কেনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পিপিআর-২০২৫ কার্যকর হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। এতে অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগছে।’

কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিডিউলভিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে টারবাইন, কম্প্রেসার ও কম্বাশন চেম্বারের মেজর ওভারহোলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ ইতিমধ্যে কেন্দ্রের ভান্ডারে মজুত রয়েছে। তবে জেনারেটর সমস্যার কারণে টারবাইন অংশের ওভারহোলিং শেষ করা সম্ভব হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নতুন জেনারেটর কিনতে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। তবে জেনারেটর স্থাপন শেষে পুনরায় উৎপাদনে গেলে কেন্দ্রটি থেকে আগের মতোই বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।

১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্র বন্ধের প্রভাব ২২৫ মেগাওয়াট প্ল্যান্টেও বিপিডিবির অধীনে চট্টগ্রামে মোট সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্র কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহায় অবস্থিত, যার দুটি ১৫০ ও ৬০ মেগাওয়াটের পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং একটি ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্ট। এর মধ্যে ৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এবং ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ আছে গত সাড়ে চার বছর ধরে। বর্তমানে শুধু কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দীর্ঘদিন ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় পার্শ্ববর্তী ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপরও চাপ বেড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওভারহোলিং প্রয়োজন হলেও বিদ্যুতের চাহিদার কারণে গত পাঁচ বছর কেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে হয়েছে। ফলে ওভারহোলিং করা সম্ভব হয়নি।

বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট এড়াতে ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের ওভারহোলিং নিশ্চিত করতে হলে ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি দ্রুত উৎপাদনে আনা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৩৪
আজ শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক চিঠি পাঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক চিঠি পাঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা

ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে পদ থেকে ইস্তফা চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আজ শনিবার তিনি ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক অব্যাহতিপত্র পাঠিয়েছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ইস্তফাপত্রটি আগামীকাল রোববার সকালে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

ওই চিঠিতে অ্যাটর্নি জেনারেল লিখেছেন, যথাবিহিত সম্মানপূর্বক আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি বিগত ০৮ আগষ্ট ২০২৪ ইং তারিখ থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে কর্মরত আছি। বর্তমানে আমি ব্যক্তিগত কারণে উক্ত পদে দায়িত্ব পালনে অপারগ।

বিধায় আমাকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদ হতে অব্যাহতি প্রদানে মহোদয়ের মর্জি হয়।

গত ৫ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে ভোট করবেন। সেদিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আমি ভোট করব। আমি নমিনেশন ওখানে চেয়েছি। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আছি এখনো। আমার অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছেড়ে গিয়ে আমি ভোট করব। যখন সময় আসবে, তখন করব।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান দেশের ১৭তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে এ পদে নিয়োগ দেন। তিনি বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুমোদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানাল বিএনটিটিপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও শক্তিশালী করতে অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শনিবার বিএনটিটিপি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, দীর্ঘ এক যুগ পর নেওয়া এই পদক্ষেপ দেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার করবে এবং কিশোর-তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ই-সিগারেট, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ নতুন প্রজন্মের তামাক ও নিকোটিন পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি যুগান্তকারী, সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

অনুমোদিত অধ্যাদেশে সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানসহ সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার পরিসর ৭৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, নিকোটিন পাউচসহ নতুন পণ্যকে তামাকজাত দ্রব্যের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তগুলোকে ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ বলে উল্লেখ করেছে বিএনটিটিপি।

তবে প্রস্তাবিত খসড়া থেকে খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধকরণ এবং তামাক বিক্রেতাদের লাইসেন্সিং বা নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার বিধান বাদ দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুচরা শলাকা বিক্রির কারণে শিশু-কিশোর ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে তামাক সহজলভ্য হয়ে থাকছে, যা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

বিএনটিটিপির মতে, তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি, অবৈধ বাণিজ্য এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে তামাক বিক্রি রোধে বিক্রেতা নিবন্ধন ও খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধকরণ দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। সরকার এ বিষয়ে পরিপূরক আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য ব্যয়, পরিবেশগত ক্ষতি ও উৎপাদনশীলতা হ্রাসের কারণে বছরে প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে।

এ প্রেক্ষাপটে সরকার গৃহীত তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ শক্তিশালী ও তামাকমুক্ত ভবিষ্যতের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করে এই আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সংবাদমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় বিএনটিটিপি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর শপথ কাল

বাসস, ঢাকা  
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ফাইল ছবি
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ফাইল ছবি

দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে আগামীকাল রোববার শপথ নেবেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

বিষয়টি আজ বাসসকে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘কাল (রোববার) সকাল ১০টায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন।’

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ২৩ ডিসেম্বরে আইন সচিব লিয়াকত আলী মোল্লার সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

১৯৮৫ সালে জুবায়ের রহমান চৌধুরী জজ কোর্টে এবং ১৯৮৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট তিনি অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পর হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হন জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

২০২৪ সালের ১২ আগস্ট তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

জুবায়ের রহমান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ও এলএলএম করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত