Ajker Patrika

স্বাগত ২০২৪: জানা থেকে হয়তো অজানার পথে

মোজাম্মেল হোসেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১০: ৩৩
স্বাগত ২০২৪: জানা থেকে হয়তো অজানার পথে

বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনে এখন সাংস্কৃতিক আবেদন মুখ্য। বঙ্গাব্দের মাসগুলো ঋতুচক্রের ও কিছুটা কৃষির তত্ত্বতালাশে কাজে লাগাই। আর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষাগত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন-তারিখ ও সময়ের হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হয় খ্রিষ্টাব্দের বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিষ্টাব্দ সর্বজনীন ও আন্তর্জাতিক হয়ে গেলে ক্রিশ্চিয়ান এরার পরিবর্তে কমন এরা বা সাধারণ সাল বলা হয়।

২০২৩ শেষ হয়ে শুরু হলো ২০২৪ সাল। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

নতুন বছরটি কেমন যাবে? একটি বছর শেষে প্রায় সব মানুষের মনে এ প্রশ্নটি আনাগোনা করে। ব্যক্তি ও পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সম্পদ-আপদ, সুযোগ-দুর্যোগ প্রভৃতি ছাপিয়ে অবশ্যই প্রশ্নটি স্পর্শ করে সার্বিক জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন থাকবে, সেই বিন্দুকে।

আমরা এমন একটি বছর অতিক্রম করলাম, যে বছরে কী কী ঘটতে পারে তা একরকম আগেই জানা ছিল। নতুন ঘটনা ঘটেছে খুব কম। আর যে বছরটি শুরু হলো, সেই বছর সম্পর্কে অনিশ্চয়তা ও সংশয় বেশি। স্থির করেই বলা যায়, এ বছরটি হবে অস্থিরতার। নিশ্চিত বলা যায়, বছরটি হবে অনিশ্চয়তার।

একনজর দেখে নেওয়া যাক ২০২৩ কেমন গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে চমকপ্রদ উন্নয়ন অভিযাত্রায় একাধিক মেগা প্রকল্পের সমাপ্তি ও নির্মাণ অগ্রগতিতে বছরটিও নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। আগের বছর পদ্মা সেতু চালুর পরে এই তালিকায় যুক্ত হলো কর্ণফুলী টানেল, এল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়ামের চালান, চালু হলো ঢাকা-কক্সবাজার নতুন রেলপথ, ঢাকা সিটিতে প্রথম মেট্রোরেলের সব স্টেশন চালু হলো, খুলল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং আংশিক উদ্বোধন হলো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের। এগুলো তো আকস্মিক ঘটনা নয়, জানাই ছিল।

উন্নয়নের পাশে নেতিবাচক ঘটনা হলো নিয়ন্ত্রণহীন বাজারদরে সীমিত আয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থা, হঠাৎ হঠাৎ পেঁয়াজ, ডিম, আলু, মুরগি ও গো-মাংসের দামে অযৌক্তিক উল্লম্ফন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উদ্বেগজনক হ্রাস, ডলারের অভাব ও মূল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলায় আমদানি-বাণিজ্যে সংকট, সারা বছরই সংবাদমাধ্যমে নজিরবিহীন দুর্নীতি এবং পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকে স্বাভাবিক লেনদেন বিঘ্নিত হওয়াসহ ব্যাংক প্রশাসনে শৈথিল্য ও বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের খবর ইত্যাদি।

এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণের বিস্তার এবং এই রোগে মৃত্যুতে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বছরটিতে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৭০১ এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৯৪৫ জন। হাসপাতালে ভর্তির সরকারি তথ্যের বাইরে রোগী ও মৃত্যু আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। এবার গ্রামেও ছড়িয়েছে।

বছরজুড়েই চলেছে দেশের বড় দুই দলের একটি বিএনপি ও সমমনা কিছু দলের ডাকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন। অন্যথায় নির্বাচন বর্জন তাদের ধনুর্ভঙ্গ পণ। একই দাবিতে আন্দোলনে ২০১৩-১৪ সালে জনগণের ওপর জোর খাটানোসহ লাগাতার হরতাল-অবরোধের ব্যর্থ কৌশল বাদ দিয়ে এবার বিএনপি শান্তিপূর্ণ গণজমায়েতের মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করার কৌশল নিয়ে অনেক অগ্রগতি সাধন করে। বছরব্যাপী ইউনিয়ন-উপজেলা স্তর থেকে কেন্দ্রে রাজধানী পর্যন্ত কর্মসূচিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের দৃষ্টি আকর্ষণকারী বড় বড় জমায়েত হয়। কিন্তু তারা কর্মী-সমর্থকের বাইরে ব্যাপক জনতা নয়। বাস্তবে প্রতীয়মান হয়, ব্যাপকসংখ্যক দেশবাসী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিতে চায় কিন্তু সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির মতো চরম লক্ষ্যকে সমর্থন করে না এবং সে জন্য বিএনপির ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব নয়। মাঠের এই পাঠ গ্রহণে বিএনপি নেতারা সক্ষম হননি। বছরের শেষভাগে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ বিভিন্ন কৌশল ও পুলিশি শক্তিপ্রয়োগে ভেঙে দিতে সরকারকে খুব বেগ পেতে হয়নি। বিএনপির মূল নেতারা কয়েকজনসহ সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও ঢালাওভাবে দায়ের করা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে পুরতে সরকার সক্ষম হয়েছে।

দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বন্ধনে জড়িত পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলো আমাদের উপর্যুপরি বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচন ও মানবাধিকার প্রতিপালন নিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রশ্ন তুলছে। বিদায়ী বছরটিতে এ বিষয়ে দৃশ্যমান চাপ দিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম প্রভৃতি আইন ও মানবাধিকার ইস্যুতে আগের বছরের ডিসেম্বরে র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরে ২০২৩-এর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নির্বাচন-প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার নীতি ঘোষণা করেছে। দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। পশ্চিমের এই চাপকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, চীন ও বাংলাদেশের আন্তসম্পর্ক, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বাংলাদেশের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়েও দেখা হচ্ছে।

বিদায়ী বছরের এই পটভূমি অতিক্রম করে ২০২৪ শুরুই হতে যাচ্ছে জাতীয় পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জাতীয় সংসদের নির্বাচন দিয়ে। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রম যে সুস্থভাবে অগ্রসর হচ্ছে না, তা আমরা সবাই জানি। প্রকৃত নির্বাচনের জন্য যতগুলো উপাদান আবশ্যক তার প্রায় সবই অনুপস্থিত। রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মসূচির প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশে থাকলেও এই নির্বাচনে নেই। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ তাদের সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ কয়েকটি অনুল্লেখ্য দল নির্বাচনে আছে। একতরফা হওয়ার বিপরীতে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে, নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে শেখ হাসিনার নির্দেশিত ‘ডামি’ প্রার্থী দেওয়ার বিচিত্র কৌশল অনুযায়ী প্রভাবশালী দল আওয়ামী লীগেরই অনেকে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগ ডামির মতো আচরণ না করে সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত হানাহানি, মারামারি হচ্ছে। একদিকে নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের পরিস্থিতিতে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা বাস ও রেলে নাশকতা এবং অন্যদিকে নির্বাচনী হানাহানিতে সাধারণ নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে।

দেশে সরকারি প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের যৌথভাবে আপাত একতরফা নিয়ন্ত্রণ থাকায় এই হ-য-ব-র-ল পরিবেশেও ৭ জানুয়ারির ভোট গ্রহণ হয়ে যাবে, কম ভোট পড়লেও। এটা অনুমান করা যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হবে, তারপর কী? নতুন বছরটা কেমন যাবে? এরূপ একটি অগ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচনের ফলাফল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুধু প্রত্যাখ্যানই করবে না, অবজ্ঞা করবে। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের নৈতিক মনোবল থাকবে না। জনসাধারণ সংসদের প্রতি মনোযোগী ও শ্রদ্ধাশীল হবে না।

সামনের দিনগুলোতে আসছে অর্থনৈতিক সংকট, যা বিদায়ী বছরে আমাদেরও দাঁত দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধজনিত কারণে অর্থনীতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুর সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হওয়া শ্রম অধিকার প্রশ্ন পশ্চিমা দেশগুলোর অসন্তোষের হুমকি তৈরি করেছে, যা থেকে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা পর্যন্ত প্রকাশ করা হচ্ছে।

যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক মোকাবিলা করতে জাতীয় ঐক্য দরকার, সরকারের পদক্ষেপের প্রতি রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন দরকার। ৭ জানুয়ারির মতো নির্বাচন থেকে কোনো সরকার তা আশা করতে পারে না। তাই এই নির্বাচনের রাজনৈতিক সংশোধনের জন্য আবার আলাপ-আলোচনা, সমঝোতার পথেই সমাধান বের করতে হবে। সে পথে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা এ বছরেই উঠতে পারে। অন্যথায় সংঘাতের পথে সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে যাবে। 
 
২০২৩-এর ঘটনাধারা আমাদের অনেকটা পূর্ব-অনুমিত ছিল। জানা ছিল। সেই জানার মধ্য থেকে ২০২৪-এ অনেক অজানার পথে আমরা পা বাড়াচ্ছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যমুনা রেলসেতু: মেয়াদ বাড়ছে, কমছে প্রকল্পের খরচ

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
যমুনা রেলসেতু: মেয়াদ বাড়ছে, কমছে প্রকল্পের খরচ

যমুনা নদীর ওপর নির্মিত ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের যমুনা রেলসেতুতে ট্রেন চলাচল করলেও প্রকল্পের আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি রয়েছে। তাই প্রকল্পের মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের মেয়াদ এই ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। তবে নতুন প্রস্তাবে এই মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে এই প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় ২৬৮ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা কমিয়ে ১৬ হাজার ৫১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, যমুনা রেলসেতুর কাঠামো ও রেললাইন নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হয়। তবে ঠিকাদারের কাজের বিল বকেয়া রয়েছে। সংকেত (সিগন্যালিং) ব্যবস্থার কিছু কাজ এবং নতুন একটি প্যাকেজের আওতায় অবকাঠামো নির্মাণ-কাজ এখনো বাকি।

বিশেষ করে নতুন প্যাকেজের দরপত্র প্রক্রিয়াই শুরু করা যায়নি। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) যমুনা রেলসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে প্রথম সংশোধনীতে সেই মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডে এই প্রকল্পের ব্রিজ লাইটিংয়ের কিছু মালামাল পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মালামাল ঠিকাদার নিজ দায়িত্বে আবার সংগ্রহ করে সরবরাহ করবে। এ ছাড়া ওই অগ্নিকাণ্ডের পর আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স কিছুদিন বন্ধ থাকায় সিগন্যালিং-সংক্রান্ত কিছু মালামাল আমদানিতে বিলম্ব হয়েছে। পরে রুট পরিবর্তন করে এসব মালামাল অন্য বন্দর দিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ কারণে কাজ সম্পন্ন করতে অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় একটি বিশেষ নির্মাণ প্যাকেজের (ডব্লিউডি-৫) অধীনে রেলওয়ে সেতু জাদুঘর, পরিদর্শন বাংলো, ক্যাফেটেরিয়া, অভ্যন্তরীণ সড়ক, মাটি ভরাট ও ড্রেনেজ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৪ কোটি টাকা। তবে ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্যাকেজে পরিবর্তন আনা হয়। সংশোধিত পরিকল্পনায় রেলওয়ে সেতু জাদুঘর বাদ দিয়ে পরিদর্শন বাংলো, অভ্যন্তরীণ সড়ক, ড্রেনেজ এবং সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিবর্তিত এই প্যাকেজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৪ কোটি টাকা। তবে এখনো এই কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। দরপত্রপ্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং নির্মাণকাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় লাগবে।

এদিকে প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ‘সিসিটিভি নজরদারি ব্যবস্থা’ শীর্ষক একটি আলাদা প্যাকেজ যুক্ত করা হয়েছে। এই প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজও বাকি রয়েছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, সার্বিকভাবে যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৯ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব ইতিমধ্যে রেলপথ উপদেষ্টার অনুমোদন পেয়েছে। এখন এটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। প্রকল্পের ভেতর এখনো কিছু ছোটখাটো কাজ বাকি থাকায় চূড়ান্তভাবে কাজ শেষ করতে এই অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন। তিনি বলেন, ডব্লিউডি-৫ প্যাকেজের কাজ শেষ করতে আনুমানিক ছয় মাস লাগতে পারে। তবে এ নিয়ে বড় কোনো জটিলতা নেই। সিগন্যালিংয়ের কাজ আগামী মধ্য জানুয়ারিতে শেষ হবে। বাড়তি সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবে বলে তাঁরা আশাবাদী।

প্রকল্পের ব্যয় কমেছে

প্রকল্পের আওতায় যমুনা রেলসেতুসহ ভায়াডাক্ট, অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট, লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। সয়দাবাদ ও ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন আধুনিকীকরণ, ইয়ার্ড রিমডেলিং, সিগন্যালিং ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সেতু রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিস ও আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে।

মূল ডিপিপিতে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়। তবে দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় ২৬৮ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা কমিয়ে ১৬ হাজার ৫১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই প্রকল্পে ৪ হাজার ৬০৪ দশমিক ৪১ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হয়েছে দেশীয় উৎস থেকে এবং বাকি ১১ হাজার ৯০৮ দশমিক ১১ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা।

১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বহুমুখী সেতু দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুতে ফাটল দেখা দিলে ট্রেনের গতি সীমিত করা হয়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন সরকার।

প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মূল সেতু চালু হওয়ায় বড় অর্জন হয়েছে। তবে সিগন্যালিং, স্টেশন অবকাঠামো ও নিরাপত্তাব্যবস্থার মতো বিষয়গুলো সম্পূর্ণ না হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না। তাই প্রকল্পের মেয়াদ যৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে কাজ শেষ করাই বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত। তবে পরিকল্পিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারা একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে, এটা বন্ধ করা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশে আসবে ওসমান হাদির মরদেহ

বাসস, ঢাকা  
শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি
শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনা হবে।

এনসিপির স্বাস্থ্য সেলের প্রধান ও হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকা ডা. আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে রওনা হয়ে সম্ভাব্য সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবে।’

বাংলাদেশ সময় আজ বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি।

গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগে অংশ নিতে গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে শরিফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করে আততায়ী। এ সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাদির মৃত্যুতে শুক্রবার বিশেষ মোনাজাত ও শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অস্ত্রোপচারের সময় মারা যান ওসমান হাদি: ডা. আহাদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বন্দুকধারীর হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। রাজধানীর পল্টন এলাকায় তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। অস্ত্রোপচারের পর গতকাল তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বন্দুকধারীর হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। রাজধানীর পল্টন এলাকায় তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। অস্ত্রোপচারের পর গতকাল তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের (এনএইচএ) সদস্যসচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

ডা. আহাদ জানান, বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে শরিফ ওসমান হাদির পরিবার অস্ত্রোপচারের জন্য সম্মতি দেয়। পরে তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘অপারেশন শেষ হওয়ার পর আর কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। পরে সরাসরি তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়।’

এদিকে হাদির মরদেহ শুক্রবার সকালে দেশে এসে পৌঁছাবে বলেও জানিয়েছেন ডা. আহাদ।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগে অংশ নিতে গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে শরিফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করে আততায়ী। এ সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাদির মৃত্যুতে শুক্রবার বিশেষ মোনাজাত ও শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির মৃত্যুতে শুক্রবার বিশেষ মোনাজাত, শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৩৫
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভিডিও থেকে নেওয়া
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভিডিও থেকে নেওয়া

শহীদ শরিফ ওসমান হাদির অকাল মৃত্যুতে আগামী শনিবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এই ঘোষণা দেন তিনি।

সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন হাদি। এই উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি সংবাদ নিয়ে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি আর আমাদের মাঝে নেই।’

শরিফ ওসমান হাদির এই অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, তাঁর প্রয়াণ দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিসরে এক অপূরণীয় ক্ষতি।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত স্ত্রী, পরিবারের সদস্যবৃন্দ, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। শহীদ ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে।’

এ সময় হাদির মৃত্যুতে আগামী শনিবার (২০ ডিসেম্বর) এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, শহীদ শরিফ ওসমান হাদির অকাল মৃত্যুতে আগামী শনিবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছি। এই উপলক্ষে শনিবার দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

একই সঙ্গে আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা দেশের প্রতিটি মসজিদে শহীদ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও আয়োজন হবে বিশেষ প্রার্থনার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত