এবার ‘সবচেয়ে চিকন’ ধান উদ্ভাবন করলেন নূর মোহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক,  রাজশাহী
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ০৮
রাজশাহীর কৃষিবিজ্ঞানীখ্যাত নূর মোহাম্মদের উদ্ভাবন করা ‘নূর ধান-২’। সম্প্রতি তানোরে নূর মোহাম্মদের গবেষণা মাঠে। নূরের দাবি, এটি কাটারিভোগের চেয়েও চিকন। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘নূর ধান-২’ নামে খুব সরু বা চিকন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন রাজশাহীর তানোরের কৃষিবিজ্ঞানীখ্যাত নূর মোহাম্মদ। তাঁর দাবি, এটি কাটারিভোগের চেয়েও চিকন। কৃষি বিভাগের স্বীকৃতি পেলে সবচেয়ে চিকন জাতের ধান হবে ‘নূর ধান-২’।

গত সোমবার নূর মোহাম্মদের কৃষি পরিষেবা ফার্মের গবেষণা প্লট থেকে এসব ধান কাটা হয়েছে। মাড়াইয়ের পর দেখা যায়, ফলনও বেশ ভালো।

তানোর সদরের গোল্লাপাড়া মহল্লার নূর মোহাম্মদ উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন কৃষক। কৃষক পর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে কৃষির উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। মূলত খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের অভাবে ধানখেত নষ্ট হতে যাওয়া দেখেই গবেষণায় নেমেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও একাগ্রতার সঙ্গে গবেষণা করে উদ্ভাবন করেছেন আউশ, আমন ও বোরো ধানের প্রায় ২০০ কৌলিক সারি। তাঁর উদ্ভাবিত সারিগুলোর জীবনকাল অন্যান্য জাতের তুলনায় কম, উচ্চফলনশীল, সরু, সুগন্ধিযুক্ত এবং খরাসহিষ্ণু।

নূর মোহাম্মদ যেসব ধানের কৌলিক সারি উদ্ভাবন করেছেন, সেগুলো খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে চাষের উপযোগী। তিনি দেশি জাতের উন্নতি ঘটিয়ে ধানের জীবনকাল কমিয়ে এনেছেন। এতে ফসলে পানির প্রয়োজনীয়তা কম লাগে। ফসল বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। খরাপীড়িত বরেন্দ্র অঞ্চলে কীভাবে কম পানিতে, কম সময়ে ও কম খরচে ধান কেটে ঘরে তোলা যায়, এ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলমান।

নূর মোহাম্মদ কৃষক পর্যায়ে ধানের নতুন নতুন সারি উদ্ভাবন করায় এলাকার কৃষকেরা বিভিন্ন মৌসুমে নতুন নতুন দেশি-বিদেশি উন্নত জাতের ধানের অবস্থা নিজ এলাকায় দেখার সুযোগ পেয়েছেন। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা নূর মোহাম্মদ কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত। কৃষিতে অবদানের জন্য পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও। মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে ৬ থেকে ৮ নভেম্বর কৃষক-গবেষক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে তিনিই একমাত্র এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পান। মালয়েশিয়ার পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (প্যানাপ) আয়োজিত ওই সম্মেলনে নূর মোহাম্মদ বেশ সমাদৃত হন।

দেশে ফিরে এসে আবার মন দেন তাঁর গবেষণা প্লটে। নূর মোহাম্মদ তাঁর ধানের নাম নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে রাখেন। এ ছাড়া কিছু ধানের নাম রাখা হয় এনএমকেপি। এর অর্থ হচ্ছে ‘নূর মোহাম্মদ কৃষি পরিষেবা’। নূর মোহাম্মদ কৃষি পরিষেবা ফার্মের গবেষণা প্লটে এবার ২২টি জাত ও সারি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এর মধ্যে নূর ধান-২ কাটা হয়েছে গত সোমবার। ধান কাটার সময় আঞ্চলিক বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা শামসুদ্দিন মিঞা, সহকারী বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা আবু সাদাত মোহাম্মদ তোয়াব, জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা হুসনা ইয়াসমিন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লা আহম্মেদ, সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নূর মোহাম্মদ জানান, কাটার পর সেদিনই ধান মাড়াই করে দেখা যায়, শুকনা ওজনে হেক্টরপ্রতি ফলন ৫ দশমিক ৮ টন। বিঘাপ্রতি ফলন ১৯ মণ। চালের হিসাবে হেক্টরপ্রতি ফলন হবে ৩ দশমিক ৮৯ টন। নূর ধান-২ পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১২৬ সেমি। গড় কুশির সংখ্যা ১২ দশমিক ৫টি। ছড়ার গড় দৈর্ঘ্য ২৬ সেমি। এক হাজার পুষ্ট দানার ওজন ১৩ দশমিক ৩৩ গ্রাম। জীবনকাল ১২৫ দিন।

এই কৃষিবিজ্ঞানীর ভাষ্য, তাঁর পাঁচটি জাত এখন স্বীকৃতি পাওয়ার মতো। এগুলো হলো এনএমকেপি-১, ২, ৩, ৪ ও ৫। তিনি দেশের প্রচলিত ধানের জাতকে উজ্জীবিত করে এটির কোনোটির জীবনকাল কমিয়েছেন, কোনোটির ফলন বাড়িয়েছেন; আবার খরাসহিষ্ণু জাতের উদ্ভাবন করেছেন। এ ছাড়া আমন মৌসুমের জন্যও তিনি খরাসহিষ্ণু ও স্বল্প জীবনকালের আরও দুটি জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। এর একটির নাম দিয়েছেন এনএমকেপি-৫ ও অন্যটির এনএমকেপি-১০১।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত