Ajker Patrika

ভোটের জন্য সৎ ও নিরপেক্ষ ওসি খুঁজছে পুলিশ

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে দায়িত্ব দিতে সৎ, নিরপেক্ষ ও দক্ষ পুলিশ পরিদর্শক খুঁজছে পুলিশ সদর দপ্তর। এই উদ্দেশ্যে দেশের সব পুলিশ ইউনিটপ্রধানকে চিঠি পাঠিয়ে দ্রুত নাম জমা দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ভোটের জন্য স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কর্মকর্তাকে বাছাই করতে গিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কারণ, আগের তিন জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের এবার দায়িত্বে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই বিভিন্ন মহানগরের কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার থানায় ওসি পদায়নের জন্য নতুন ও বিতর্কহীন, দক্ষ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) একই কথা বলেছে। এই নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রস্তুতিও বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি নির্বাচনকালীন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ঠিক রাখতে হবে।

জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচনে মাঠের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, সৎ, নিরপেক্ষ ও দক্ষ সদস্যদের পাঠানো হবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে প্রশিক্ষিত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচনকালীন দায়িত্বের জন্য বাছাই চলছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৬ নভেম্বর পুলিশ সদরের পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট-২ শাখা থেকে সব ইউনিটপ্রধানকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে জাতীয় নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি থানায় যোগ্য ও নিরপেক্ষ ওসি নিয়োগ দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে ইউনিটে কর্মরত সৎ, নিরপেক্ষ ও প্রশাসনিকভাবে দক্ষ পুলিশ পরিদর্শকদের নাম জরুরি ভিত্তিতে সদর দপ্তরে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যুত কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনুষ্ঠিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরা এবার দায়িত্বে থাকবেন না বলে জানিয়েছে সরকার। এই তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদেরও দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের আলাদা তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে সদস্যসংখ্যা ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৮৭ জন। নির্বাচন পরিচালনার জন্য দেড় লাখ সদস্য মাঠে কাজ করবেন। এর মধ্যে ওসি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার ও ডিআইজি পদমর্যাদার বহু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগের নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগ থাকায় তাঁদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সদস্যদের স্থায়ী ঠিকানা, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, নিয়োগের ইতিহাস ও গত ১৫ বছরের পদায়ন রেকর্ড বিশ্লেষণ করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে যাচাই-বাছাই করিয়েও নিরপেক্ষ কর্মকর্তার পর্যাপ্ত সংখ্যা মিলছে না। ফলে আগের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করলেও যাঁরা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত, তাঁদের মধ্য থেকে নতুন করে কর্মকর্তাদের খোঁজ চলছে।

সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক মনে করেন, যোগ্য কর্মকর্তাদের সঠিক পদায়ন ও পুলিশের পেশাদারত্ব বজায় রাখতে পারলেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। পাশাপাশি নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গোপন পক্ষপাতিত্ব থেকে দূরে রাখতে শুরু থেকেই কঠোর নজরদারি রাখা প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ