Ajker Patrika

অধ্যাদেশ অনুমোদন: রঙিন ব্যালটে হবে গণভোট

  • আজ-কালের মধ্যে অধ্যাদেশ জারির আশা আইন উপদেষ্টার।
  • সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল একই সঙ্গে ঘোষণা হবে।
  • সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হবে সাদাকালো, গণভোটের রঙিন।
  • গণভোটের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচার শুরু হবে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ফাইল ছবি
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ফাইল ছবি

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর আইনি বৈধতা দিতে গণভোট করার জন্য প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে ‘গণভোট অধ্যাদেশ, ২০২৫’ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতির বিষয়গুলো তুলে ধরেন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দিন এই গণভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিলও একই সঙ্গে ঘোষণা করা হবে। সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হবে আগের মতো সাদাকালো, গণভোটের ব্যালট হবে রঙিন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুসারে জুলাই সনদে বর্ণিত সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের মতামত বা সম্মতি জানার জন্য গণভোট অনুষ্ঠানে গণভোট অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আজ-কালের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি হবে।’ তিনি জানান, অধ্যাদেশ অনুযায়ী গণভোটে একটি প্রশ্ন থাকবে। সেখানে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ বক্স থাকবে। যাঁরা সম্মতি জানাবেন তাঁরা ‘হ্যাঁ’ এবং যাঁরা সম্মতি জানবেন না, তাঁরা ‘না’ ভোট দেবেন। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের উল্লেখিত চারটি প্রস্তাবের জন্য এই ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট হবে।

অধ্যাদেশের বিধানগুলো তুলে ধরে অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা ভোটকেন্দ্রই হবে গণভোটের ভোটকেন্দ্র। সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণকারী সব কর্মকর্তা গণভোটেরও ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ভোট গ্রহণের সময়ও হবে এক। ভোটাররা যাতে বিভ্রান্ত না হন, সে জন্য গণভোটের ব্যালট রঙিন হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত সিলমোহর গণভোটেও ব্যবহার হবে।

জাতীয় সংসদের মতো গণভোটেও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়া যাবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ভোট গণনা, ফলাফল ঘোষণাসহ অন্য বিষয়গুলোও জাতীয় নির্বাচনের যে বিধান রয়েছে, গণভোটে তা প্রযোজ্য হবে। কোনো কারণে কোনো কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত হলে নির্বাচন কমিশন (গণভোটের ক্ষেত্রে) যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন, অন্যান্য ভোটকেন্দ্রের ফলাফল দিয়ে গণভোটের ফলাফল নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, তখনই শুধু কমিশন ওই সব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের নির্দেশ দেবে। কমিশন যদি মনে করে, যেসব কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি, তা বিবেচনা না করলেও গণভোটের ফলাফল নির্ধারণ করা যায়, তাহলে ওই সব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দরকার পড়বে না।

গণভোট অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় বিধি, নির্দেশনা ও পরিপত্র প্রণয়ন করতে পারবে বলে অধ্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে।

নোট অব ডিসেন্টের (আপত্তি) বিষয়গুলো গণভোটে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারেরও কিছুটা ভূমিকার বিষয় রয়েছে। জনগণের সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় রয়েছে। উচ্চকক্ষের বিষয়টি অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য আমরা অসহনীয় কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দল বা অন্যরা যে যার মতো করে ব্যাখ্যা করেন। তবে আমরা আমাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতিটি শব্দের মধ্যে স্পষ্ট করা হয়েছে। কে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার।’

গণভোটে যে ৪টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা বিবেচনা করে ভোট দেবেন। এ ক্ষেত্রে অধিকতর সম্মত হলে ‘হ্যাঁ’ দেবেন, অধিকতর অসম্মত হলে ‘না’ দেবেন।

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে ইসির সচিব আখতার আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁরা কেন্দ্রভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত শুরু করেছেন। আশা করছেন ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করতে পারবেন। নির্বাচনী সব সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে জড়ো করে উপজেলা পর্যায়ে পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে।

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করতে ভোটকেন্দ্র বা বুথ বাড়ানোর প্রয়োজন হবে কি না, তা পর্যালোচনা করতে ২৯ নভেম্বর মক (মহড়া) ভোটের আয়োজন করা হবে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘ওই মক ভোটে কতটুকু সময় প্রয়োজন হবে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এ ক্ষেত্রে আমাদের ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে, না বুথ বাড়াতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

একই দিনে গণভোট ও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এবার আমাদের চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়। তবে আমরা দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর যে উৎসাহ দেখছি, তাতে আমরা চ্যালেঞ্জটি ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারব বলে আশা করি।’

চারটি প্রশ্নে গণভোটে জনগণ বিভ্রান্ত হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, গণভোটের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এটি শুরু হবে। নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সরকারের তরফ থেকেও এটি করা হবে। প্রত্যেক মানুষ যেন বুঝতে পারেন, সেই মাত্রায় প্রচারণা চালানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যাঁদের নিরক্ষর ভোটার বলছেন, তাঁরাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন। তাঁদের পলিটিক্যাল জাজমেন্ট আমার-আপনার চেয়েও অনেকাংশে বেশি। তাঁরা যাতে প্রশ্নটি (গণভোট) বোঝেন, সে জন্য তিন মাসব্যাপী প্রচার করব।’

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ থাকলেও আশা করি, আমরা একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোট করতে পারব।’

পোস্টাল ভোটের বিষয়ে ইসির সচিব জানান, পোস্টাল ভোটের জন্য প্রবাসীদের নিবন্ধন কার্যক্রমে আশাব্যঞ্জক সাড়া মিলছে। দেশের ক্ষেত্রে আরও একটু পরে এটি শুরু করা হবে।

এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ৮০১ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা জানান, ‘আশা করি, এই সংখ্যা কয়েক লাখে ছাড়িয়ে যাবে।’ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভারতে থাকা নেতা-কর্মীদের বিষয়ে ইঙ্গিত করে এক গণমাধ্যমকর্মী জানতে চান, ভারতে প্রবাসীরা ভোট দেবেন কি না? এ প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি ভারতে প্রবাসী কয়েকজনের ব্যাপারে হয়তো জানতে চাচ্ছেন। এটা নির্বাচন কমিশন দেখবে। আমার মনে হয় না, তাঁরা ভোট দিতে নিবন্ধিত হবেন।’

একই বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে ইসির সচিব বলেন, অ্যাপটা সর্বজনীন। এখানে যাঁদের সুযোগ আছে, তাঁরা আবেদন করবেন। তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র ‘লকড’ আছে। যাঁদের পরিচয়পত্র ‘লকড’, তাঁদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাড়ে চার বছর বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাবে দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। অথচ যে জেনারেটরের অভাবে উৎপাদন চালু করা যাচ্ছে না সেটি প্রতিস্থাপনে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় নতুন জেনারেটর ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুনরায় উৎপাদনে যেতে অন্তত আরও এক থেকে দেড় বছর লাগবে। এতে কেন্দ্রটির লোকসানের অঙ্ক আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

বিপিডিবি সূত্র জানায়, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্রটির গড় উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৫ মেগাওয়াট। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে উৎপাদন হয় প্রায় ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ, যা মাসে দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি ৪৪ লাখ ইউনিট। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ৫ টাকা ৪০ পয়সা। বিপরীতে বিদ্যুতের বর্তমান বিক্রয়মূল্য আবাসিক খাতে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা, ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ টাকা ৭৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিক খাতে ১৩ টাকা ১ পয়সা। সব মিলিয়ে গড় বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় প্রতি ইউনিট ১০ টাকা ৭৭ পয়সা। ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে কেন্দ্রটির গড় লাভ হয় ৫ টাকা ৩৩ পয়সা। এই হিসাবে কেন্দ্রটি চালু থাকলে মাসে বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে লাভ হতো প্রায় ৫৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে গত সাড়ে চার বছরে বিপুল এই সম্ভাব্য আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সংশ্লিষ্ট হিসাব অনুযায়ী, এ সময় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি উৎপাদন শুরু করে। প্রায় ১৩ বছর নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জেনারেটর ও অন্যান্য যন্ত্রাংশে গুরুতর ত্রুটি দেখা দেয়। একপর্যায়ে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রাথমিক মেরামতের পর উৎপাদনে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ২০২৩ সালের আগস্টে কেন্দ্রটির জেনারেটর আগুনে পুড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা মত দেন, জেনারেটর ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আর মেরামতযোগ্য নয়। নতুন যন্ত্রপাতি ছাড়া কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব নয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৯১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার একটি প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ কেনা হলেও জেনারেটর সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় সেগুলো এখনো স্থাপন করা যায়নি।

শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রধান প্রকৌশলী গোলাম হায়দার তালুকদার জানান, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২১০০তম সভায় নতুন জেনারেটর কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন আরোপিত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর), ২০২৫ অনুসরণ করে জেনারেটর ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জেনারেটর কেনায় বিলম্ব ও দীর্ঘদিন প্ল্যান্ট বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের আগস্টে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরপরই জেনারেটর মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে জার্মানির সিমেন্সের বিশেষজ্ঞ দল আসতে দেরি হয়। পরবর্তীকালে তারা মত দেয়, জেনারেটরটি আর মেরামতযোগ্য নয়। এরপর বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে নতুন জেনারেটর কেনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পিপিআর-২০২৫ কার্যকর হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। এতে অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগছে।’

কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিডিউলভিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে টারবাইন, কম্প্রেসার ও কম্বাশন চেম্বারের মেজর ওভারহোলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ ইতিমধ্যে কেন্দ্রের ভান্ডারে মজুত রয়েছে। তবে জেনারেটর সমস্যার কারণে টারবাইন অংশের ওভারহোলিং শেষ করা সম্ভব হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নতুন জেনারেটর কিনতে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। তবে জেনারেটর স্থাপন শেষে পুনরায় উৎপাদনে গেলে কেন্দ্রটি থেকে আগের মতোই বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।

১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্র বন্ধের প্রভাব ২২৫ মেগাওয়াট প্ল্যান্টেও বিপিডিবির অধীনে চট্টগ্রামে মোট সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্র কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহায় অবস্থিত, যার দুটি ১৫০ ও ৬০ মেগাওয়াটের পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং একটি ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্ট। এর মধ্যে ৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এবং ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ আছে গত সাড়ে চার বছর ধরে। বর্তমানে শুধু কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দীর্ঘদিন ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় পার্শ্ববর্তী ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপরও চাপ বেড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওভারহোলিং প্রয়োজন হলেও বিদ্যুতের চাহিদার কারণে গত পাঁচ বছর কেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে হয়েছে। ফলে ওভারহোলিং করা সম্ভব হয়নি।

বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট এড়াতে ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের ওভারহোলিং নিশ্চিত করতে হলে ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি দ্রুত উৎপাদনে আনা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৩৪
আজ শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক চিঠি পাঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক চিঠি পাঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা

ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে পদ থেকে ইস্তফা চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আজ শনিবার তিনি ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক অব্যাহতিপত্র পাঠিয়েছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ইস্তফাপত্রটি আগামীকাল রোববার সকালে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

ওই চিঠিতে অ্যাটর্নি জেনারেল লিখেছেন, যথাবিহিত সম্মানপূর্বক আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি বিগত ০৮ আগষ্ট ২০২৪ ইং তারিখ থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে কর্মরত আছি। বর্তমানে আমি ব্যক্তিগত কারণে উক্ত পদে দায়িত্ব পালনে অপারগ।

বিধায় আমাকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদ হতে অব্যাহতি প্রদানে মহোদয়ের মর্জি হয়।

গত ৫ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে ভোট করবেন। সেদিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আমি ভোট করব। আমি নমিনেশন ওখানে চেয়েছি। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আছি এখনো। আমার অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছেড়ে গিয়ে আমি ভোট করব। যখন সময় আসবে, তখন করব।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান দেশের ১৭তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে এ পদে নিয়োগ দেন। তিনি বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুমোদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানাল বিএনটিটিপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও শক্তিশালী করতে অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শনিবার বিএনটিটিপি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, দীর্ঘ এক যুগ পর নেওয়া এই পদক্ষেপ দেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার করবে এবং কিশোর-তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ই-সিগারেট, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ নতুন প্রজন্মের তামাক ও নিকোটিন পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি যুগান্তকারী, সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

অনুমোদিত অধ্যাদেশে সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানসহ সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার পরিসর ৭৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, নিকোটিন পাউচসহ নতুন পণ্যকে তামাকজাত দ্রব্যের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তগুলোকে ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ বলে উল্লেখ করেছে বিএনটিটিপি।

তবে প্রস্তাবিত খসড়া থেকে খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধকরণ এবং তামাক বিক্রেতাদের লাইসেন্সিং বা নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার বিধান বাদ দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুচরা শলাকা বিক্রির কারণে শিশু-কিশোর ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে তামাক সহজলভ্য হয়ে থাকছে, যা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

বিএনটিটিপির মতে, তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি, অবৈধ বাণিজ্য এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে তামাক বিক্রি রোধে বিক্রেতা নিবন্ধন ও খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধকরণ দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। সরকার এ বিষয়ে পরিপূরক আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য ব্যয়, পরিবেশগত ক্ষতি ও উৎপাদনশীলতা হ্রাসের কারণে বছরে প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে।

এ প্রেক্ষাপটে সরকার গৃহীত তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ শক্তিশালী ও তামাকমুক্ত ভবিষ্যতের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করে এই আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সংবাদমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় বিএনটিটিপি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর শপথ কাল

বাসস, ঢাকা  
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ফাইল ছবি
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ফাইল ছবি

দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে আগামীকাল রোববার শপথ নেবেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

বিষয়টি আজ বাসসকে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘কাল (রোববার) সকাল ১০টায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন।’

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ২৩ ডিসেম্বরে আইন সচিব লিয়াকত আলী মোল্লার সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

১৯৮৫ সালে জুবায়ের রহমান চৌধুরী জজ কোর্টে এবং ১৯৮৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট তিনি অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পর হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হন জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

২০২৪ সালের ১২ আগস্ট তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

জুবায়ের রহমান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ও এলএলএম করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত