Ajker Patrika

রূপপুরে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক: কাজ ছাড়াই মেয়াদ শেষ, এখন ব্যয় বাড়ানোর আবদার

  • দুই বছরের মেয়াদ শেষে কাজ হয়েছে মাত্র ০.০১ শতাংশ
  • প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়াতে চায় বিটিসিএল
  • ৩৭৮ কোটির প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৭২৩.৭৮ কোটিতে
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ২২
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফাইল ছবি
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফাইল ছবি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে উচ্চগতির টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনে ৩৭৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালে। দুই বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে সাত মাস আগে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন মেয়াদ ও ব্যয় দুটোই বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার আবদার করছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পটির নাম ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক্সটার্নাল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জাতীয় পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয়তাবিষয়ক ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ও রুশ সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ মার্চ পর্যন্ত। নির্ধারিত ওই মেয়াদ সাত মাস আগে শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ০.০১ শতাংশ। আর এই সময়ে খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ অবস্থায় প্রকল্পের ব্যয় ৩৪৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বা ৯১.০৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭২৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) কাছে। একই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে বিটিসিএল।

পিইসি বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগে উপস্থাপন করেছে। এরপর বিভাগটি থেকেও বিটিসিএলের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে তুলে ধরা হয়। প্রকল্পের সারসংক্ষেপ এখন পরিকল্পনা উপদেষ্টার দপ্তরে রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) রেহানা পারভীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, রূপপুরের মূল প্রকল্পের সহযোগিতার জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। একটা প্রকল্প আরেকটা প্রকল্পের পরিপূরক। তাই সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে এই প্রকল্পটির ব্যয় অনুমোদন করা হচ্ছে।

এদিকে কোনো কাজ না করেই প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির এই প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, প্রকল্পটি নেওয়ার আগে সম্ভাব্যতা সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। তড়িঘড়ি করে প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এখন প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত সময় ও ব্যয় বরাদ্দের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতেই বোঝা যায়, প্রকল্প বাছাইয়ে দুর্বলতা ছিল। এই প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিগত সরকারের সময় অধিকাংশ প্রকল্পই নেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিকভাবে, এ কারণে প্রকল্প নেওয়ার সময় সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক্সটার্নাল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে। কোনো কাজ না করেই এখন তারা সময় ও ব্যয় বাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

তবে বিটিসিএলের প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেছে। প্রস্তাবে তারা বলেছে, প্রকল্পের নেটওয়ার্ক ডিজাইন চূড়ান্তকরণে রাশিয়ার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতা এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক ফি পরিশোধে আরোপিত শর্তগুলো পরিপালন করা সম্ভবপর না হওয়ায় ক্রয়সংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া সম্পাদন সত্ত্বেও চুক্তি করা যায়নি। এ কারণে প্রকল্পের মূল কাজই শুরু হয়নি।

বিটিসিএল ব্যয় বাড়ানোর পেছনে যুক্তি দিয়ে বলেছে, তিনটি এনটিটিএন অপারেটস থেকে আরআরইউ ভিত্তিতে অপটিক্যালস ফাইবার লিজ নেওয়া বাবদ চাহিদাকৃত বাস্তব ব্যয় অনুমোদিত ডিপিপিতে বর্ণিত ব্যয় অপেক্ষা অনেক বেশি। প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবের আরও একটি বড় কারণ দেখানো হয়, চাহিদা, কারিগরি ও সেবাজনিত কারণে টেলিকম সরঞ্জাম ও সিকিউরিটি ইকুইপমেন্টের বিভিন্নতায় ও সংখ্যায় পরিবর্তন এসেছে। এনপিপির জন্য সিকিউরিটি-বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত আরডিপিপিতে সব লেয়ারে নতুন করে সিকিউরিটি যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মূল ডিপিপিতে ছিল না।

এ ছাড়া তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটির অনুমোদন নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত রাশিয়ার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো চুক্তিই করতে পারেনি বিটিসিএল। অন্যদিকে ২০২২ সালে যখন প্রকল্পটি অনুমোদন পায়, তখন ডলারের মূল্য ছিল ৮৪ টাকা, যেটি বর্তমানে ১২০ টাকা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক শফিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নানা কারণে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। রাশিয়ার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতার পাশাপাশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ফি পরিশোধে জুড়ে দেওয়া শর্ত পূরণ করতে না পারায় এই সময় অতিবাহিত হয়েছে। কাজ না হওয়ার যন্ত্রপাতিসহ অনেক কিছুরই দাম রিশিডিউল করতে হচ্ছে। এসব কারণেই ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মির্জা ফখরুলের জন্য মনটা কাল থেকে খুব বিষণ্ন হয়ে আছে: প্রেস সচিব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৬
প্রেস সচিব শফিকুল আলম । ছবি: সংগৃহীত
প্রেস সচিব শফিকুল আলম । ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, ‘গতকাল থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্য আমার মনটা খুব বিষণ্ন হয়ে আছে। অনেক বছর ধরে তিনি আমার অন্যতম রাজনৈতিক আদর্শ। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, তিনি কতটা কষ্ট সহ্য করেছেন। কীভাবে দলের কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঠিক নিজের সন্তান বা নিকটাত্মীয়ের মতো।’

রাজধানীর জিয়া উদ্যানে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে আজ বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দাফন শেষে ফেসবুকে রাত ৮টার দিকে শফিকুল আলম এই পোস্ট দেন।

পোস্টে প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘শহীদ বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর থেকে আমার মনে হচ্ছে তিনি (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) ভীষণ একা হয়ে পড়েছেন। একত্রে এই দুই নেতা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম এক সম্মানিত ও নির্ভরযোগ্য অংশীদারিত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সহমর্মিতা এবং নীরবে ধৈর্য ধরার ক্ষমতার জন্য তাঁরা দুজনেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁরা খুব কমই মেজাজ হারাতেন। অহংকার তাঁদের ছুঁতে পারতো না বললেই চলে। কঠিন সময়ে তাঁরা অত্যন্ত যত্ন এবং সংযমের সাথে জনগণকে পথ দেখিয়েছেন।’

বিএনপির মহাসচিবের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে শফিকুল আলম আরও লেখেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মির্জা ফখরুলের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। তিনি এখন আর সেই চেনা মহাসচিব নেই, যিনি একসময় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চষে বেড়াতেন। খালেদা জিয়া যখন তাঁকে মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেন, তখন তিনি বিএনপির একজন মধ্যম সারির নেতা ছিলেন এবং তাঁর সেন্টার-লেফট আদর্শিক ঝোঁকের জন্য পরিচিত ছিলেন। তবুও সংকটের মুহূর্তে তিনিই সবচেয়ে দক্ষ কাণ্ডারি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। শহীদ বেগম খালেদা জিয়ার পাশে থেকে তিনি দলটিকে সুসংগঠিত ও অটল রেখেছিলেন। কিন্তু জুলাই মাস যখন এলো, তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায় ছিলেন এবং মির্জা ফখরুল নিজেও তাঁর শরীরের শক্তি অনেকটা হারিয়ে ফেলেছেন। এ এক যুগের অবসান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান আর নেই

বাসস, ঢাকা  
মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। ফাইল ছবি
মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। ফাইল ছবি

টাঙ্গাইল-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

আজ বুধবার বেলা ৩টায় রাজধানীর নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু জানান, রাজধানীতে নিজ বাসায় বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের মৃত্যু হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাদ জোহর টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

মাহমুদুল হাসানের মৃত্যুতে টাঙ্গাইলে বিএনপির নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু ও প্রচার সম্পাদক ও টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

শোকবার্তায় তাঁরা বলেন, মাহমুদুল হাসান আজীবন আদর্শ টাঙ্গাইল গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজসেবক, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল মানুষ। শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তাঁর মৃত্যুতে টাঙ্গাইল সদর একজন অভিভাবক হারাল।

সেই সঙ্গে তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

মাহমুদুল হাসান ১৯৩৬ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাকোরকোল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি এরশাদের শাসনামলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক জীবনে ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন এবং ২০১২ সালের উপনির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালে গণপিটুনি বেড়ে দ্বিগুণ: এমএসএফ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
২০২৫ সালে গণপিটুনি বেড়ে দ্বিগুণ: এমএসএফ

সদ্য সমাপ্ত ২০২৫ সালে সারা দেশে অন্তত ৪২৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। ২০২৪ সালে গণপিটুনির ১৬৯টি ঘটনায় নিহত হয়েছিল ১৪৬ জন এবং আহত ছিল ১২৬ জন। আর ২০২৫ সালে গণপিটুনিতে ১৬৬ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৪৬০ জন। ২২০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গণপিটুনির ঘটনায় আহত ৪৬০ জনের মধ্যে ৫৫ জন কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দল আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ সদস্য।

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালে গণপিটুনি বা মব সন্ত্রাস আশঙ্কাজনক বেড়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রশ্নাতীতভাবে এগিয়ে রয়েছে। প্রচলিত আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনির ঘটনাগুলোকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করা হয়। নাগরিকের ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার মূল উৎস এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মব সহিংসতা। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীদের পাওয়ামাত্র গণপিটুনি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার লক্ষণীয় প্রভাব থাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৯৯টি ঘটনায় শিকার হয়েছে ৫ হাজার ৬০৪ জন। তাদের মধ্যে ৮৬ জন নিহত ও ৫ হাজার ৫১৮ জন আহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৫ জন বিএনপি, আটজন আওয়ামী লীগ, তিনজন জামায়াতে ইসলামী এবং ১০ জন বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের সাধারণ নাগরিক, যাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। ২০২৫ সালে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর দুষ্কৃতকারীদের হামলার ১৬৯টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪৭ জন নিহত ও ১৮৭ জন আহত হয়েছেন।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সরকার পতন ও গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ৬৭টি মামলা হয়েছে। মামলায় ৭ হাজার ৭৮০ জনকে সুনির্দিষ্টভাবে আসামি করা হয়েছে এবং ১১ হাজার ১৭৯ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলাগুলোর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ২৯টি মামলা হয়েছে। সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পতন-সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৩ হাজার ৬৯৫ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’—এর আওতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২২ হাজার ২৮৪ জন। গ্রেপ্তার ১১ হাজার ৩১৩ জন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় লোকজন।

এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের কমপক্ষে ১৯টি ঘটনা ঘটেছে। সংঘটিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছেন। এ বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কারা হেফাজতে ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে পালাতে গিয়ে আট যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ৬৪১ জন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হত্যা, হামলা, হুমকি, আইনি হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০২৫ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলাসহ মোট ২৫টি মামলায় ৫৫ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় উপস্থিত হয়ে তাঁর শোকাহত জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জানাজা শেষে প্রধান উপদেষ্টা তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন এবং এই কঠিন সময়ে তাঁর ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করে বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, কূটনৈতিক মহল এবং সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশ নেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত