Ajker Patrika

অন্তর্মুখী সন্তানের বাবা-মায়ের যা জানা জরুরি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
অন্তর্মুখী শিশুদের কাছের মানুষ হয়ে উঠতে প্রয়োজন একটু বেশি ধৈর্য আর ভালোবাসা। ছবি: পেক্সেলস
অন্তর্মুখী শিশুদের কাছের মানুষ হয়ে উঠতে প্রয়োজন একটু বেশি ধৈর্য আর ভালোবাসা। ছবি: পেক্সেলস

আপনার সন্তান সব সময় নিজের মতো থাকতে ভালোবাসে? দীর্ঘ সময় একা থাকতেও তার খারাপ লাগে না? অন্য শিশুদের মতো ভিড়ের মধ্য়ে ছোটাছুটি তার পছন্দ নয়? বারবার প্রশ্ন করে কোনো কিছু জানার চেয়ে নিজেই পর্যবেক্ষণ করে জানতে বেশি আরাম পায়? একটা ‘ছড়া বল’ বললেই ঘরভর্তি লোকের সামনে আবৃত্তি করতে তার অস্বস্তি রয়েছে? বিভিন্ন সময়ই অন্যরা তাকে ‘লাজুক’ বা ‘মিশতে পারে না’ বলে মন্তব্য করে বসে? আপনি কি এমন এক শিশুরই বাবা কিংবা মা? তাহলে এই লেখা আপনার জন্য।

‘শিশু ইনট্রোভার্ট হলে শিশুর নয়, নিজের চোখে আয়না ধরা প্রয়োজন যে, বাবা-মা হিসেবে তাদের কোন কোন আচরণ শিশুটিকে ইনট্রোভার্ট করছে।’ ডা. সানজিদা শাহরিয়া, চিকিৎসক, কাউন্সেলর ও সাইকোথেরাপি প্র‍্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি

অন্তর্মুখী মানেই বোকাসোকা বা নেতিবাচক কিছু নয়

প্রতিটি শিশুর শারীরিক গঠনের মতো আচরণও ভিন্ন। ইনট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী হওয়া কোনো শিশুর অক্ষমতা নয়, এটা সবার আগে শিশুর বাবা-মাকেই বুঝতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা-মা শিশুর বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেন না। ফলে শিশুর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। ‘তোমার বন্ধু এটা করছে, তুমি কেন করতে পারছ না।’—এমন হাজারো তুলনা প্রতিনিয়তই বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে আসে অন্তর্মুখী শিশুটির জন্য। ফলে শিশুটি চুপচাপ থেকে আরও চুপচাপ হয়ে যায়। হ্যাঁ, অন্তর্মুখী শিশুদের বোঝা একটু কঠিন হতে পারে। তবে অসম্ভব নয়। কাছের মানুষ হয়ে উঠতে প্রয়োজন একটু বেশি ধৈর্য আর ভালোবাসা।

চিকিৎসক, কাউন্সেলর ও সাইকোথেরাপি প্র‍্যাকটিশনার ডা. সানজিদা শাহরিয়া বলেন, ‘ইনট্রোভার্ট শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত। কিন্তু শিশু ইনট্রোভার্ট হলেই আমরা মনে করি, পেছনে পড়ে যাবে না তো? বাবা-মা ভয় পেয়ে যান। অনেক সময় দেখা যায়, বাড়িতে অতিথি এলে মাথা নিচু করে লুকিয়ে পড়া অথবা ছড়া বলতে বললে শিশু কথা বলে না; লজ্জা পায়। এসব আচরণ কিন্তু খুবই স্বাভাবিক। এসব নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশপাশের পরিবেশ থেকে শিশু কী বার্তা গ্রহণ করছে এবং সেই বার্তা শিশুর মনোজগৎকে কীভাবে প্রভাবিত করছে, সেটা সময় নিয়ে বাবা-মায়ের বোঝা জরুরি। তার আগেই ‘আমার সন্তান ইনট্রোভার্ট’ বলে ট্যাগ দেওয়াটা সন্তানের জন্য পীড়াদায়ক। প্রত্যেক মানুষের, এমনকি শিশুদেরও চিন্তার প্রক্রিয়া এবং চারপাশের পরিবেশ থেকে প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করার সংবেদনশীলতা ভিন্ন। প্রত্যেকের দেখার চোখ যেহেতু আলাদা, চলতি কথায় যাকে আমরা ইনট্রোভার্ট বলি, হতে পারে শৈশবে তার প্রাথমিক কেয়ারগিভার বা চারপাশের মানুষগুলো তার জন্য যথেষ্ট আবেগীয়ভাবে উপস্থিত ছিলেন না বা ইমোশনালি অ্যাভেইলেবল ছিলেন না।’

বাবা-মা যা করতে পারেন

ধীরে এগোতে দিন

বহির্মুখী হওয়ার জন্য চাপাচাপি করতে যাবেন না। ‘খেলতে যাও, প্রতিযোগিতায় নাম লেখাও, জোরে কথা বলছ না কেন, চুপচাপ বসে থাকো কেন’—এ জাতীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। চাপ দিয়ে কিছু করাতে যাবেন না। তাতে ওর মনে অতিরিক্ত চাপ পড়বে। মন খুলে হুট করে সবার সঙ্গে মিশে যাওয়া ওর স্বভাববিরুদ্ধ। জোর করলে ও নিজেকে হয়তো আরও গুটিয়ে নেবে। অপ্রীতিকর ভয়ও কাজ করতে পারে। ওকে সময় দিন নিজের মতো করে মানিয়ে নেওয়ার।

বহির্মুখী হওয়ার জন্য চাপাচাপি করতে যাবেন না। ছবি: পেক্সেলস
বহির্মুখী হওয়ার জন্য চাপাচাপি করতে যাবেন না। ছবি: পেক্সেলস

শিশুর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে সম্মান করুন

অন্তর্মুখী শিশুদের বাবা-মায়েদের প্রায় সময়ই বলতে শোনা যায়, ‘সবার সঙ্গে না মিশলে লোকে ভালো বলে না, কোথাও গিয়ে টিকতে পারবে না, আনস্মার্টরা এমন হয়’ ইত্যাদি। কিন্তু অভিভাবকদের জেনে রাখা জরুরি, এ ধরনের শিশুরা খুব সংবেদনশীল হয়। আপনি হয়তো সোজাসাপ্টা বলে দিলেন, কিন্তু সে ভেতরে-ভেতরে কষ্ট পাচ্ছে আবার সেটা মুখ ফুটে বলছেও না। যেটার ফল হতে পারে সুদূরপ্রসারী। আপনার সামনে যদি অন্য কেউ এ রকম করে, তাকেও এভাবে বলতে বারণ করুন।

উৎসাহ দিন

গবেষণায় দেখা গেছে, এক্সট্রোভার্টদের তুলনায় ইন্ট্রোভার্টদের মস্তিষ্কের সামনের লোবে রক্তের প্রবাহ বেশি থাকে। মস্তিষ্কের এই অংশ স্মৃতিশক্তি রক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে। এই শিশুরা কল্পনাপ্রবণ হয়। সেই কল্পনাগুলো গল্প, কবিতা বা আঁকার মাধ্যমে তারা অনেক সময় ফুটিয়ে তোলে। সেগুলোতে ওকে আরও উৎসাহ দিন।

কারও সঙ্গে তুলনা করবেন না

আপনার সন্তানের যেন কোনোভাবেই মনে না হয়, বাবা-মা হিসেবে আপনারা ওকে নিয়ে অখুশি। এটা কিন্তু তার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সে নিজেকে আরও গুটিয়ে নিতে পারে। কারণ, কখনো কিছুতে খারাপ লাগলে তা মুখের ওপর বলে দেওয়া এ ধরনের শিশুদের স্বভাববিরুদ্ধ। তাই চেষ্টা করুন শিশুর সঙ্গে এমনভাবে মিশতে, যাতে সে আপনাকে ভরসা করতে পারে। তার আবেগীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

বুলিং ঠেকাতে সীমারেখা নির্ধারণ করুন

এক্সট্রোভার্ট বা বহির্মুখী মানুষদের আমরা যেমন সেলিব্রেট করি, তেমনি ইনট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী একজন মানুষও কিন্তু স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তার আনন্দ, উচ্ছ্বাস প্রকাশের ধরন ও মাধ্যমটা হয়তো আলাদা। ফলে এই মানুষগুলোকে বোকা, মিশতে জানে না—এসব বলে বুলিং করা বন্ধ করতে হবে। সন্তানকে এসব বলে কেউ বুলিই করলে বাবা-মাকেও বুঝিয়ে দিতে হবে যে ওর সম্পর্কে এসব ধারণা ভুল। শিশু মানেই তারা হইচই করে ঘর মাতিয়ে রাখবে, এমন না-ও হতে পারে। প্রত্যেকের নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে। প্রতিটি শিশুই নিজের মতো করে সুন্দর। এই ধরনের শিশুরা হয়তো সবার সঙ্গে মিশতে পারে না। তবে এমনও হতে পারে, তারা অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই সৃজনশীল। বাবা-মায়েদের উচিত, তাদের চাপ না দিয়ে বরং শক্তির জায়গাগুলোকে খুঁজে বের করে উৎসাহ দেওয়া। তাহলে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক, দারোয়ান পুলিশ হেফাজতে

আনিসুলের জাপা ও মঞ্জুর জেপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লিব লিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...