Ajker Patrika

সুন্দরবনের জার্নাল

সুদীপ্ত সালাম
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৮: ৪২
সুন্দরবনের জার্নাল

রূপসা নদী থেকে কখন পশুর নদীতে উঠলাম, বুঝতে পারিনি। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমাদের লঞ্চটি একটি ঘোলা পানির উত্তাল নদীর মাঝ দিয়ে ধীর গতিতে চলছে। জিজ্ঞাসা করে জানলাম এটিই পশুর নদী। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যাকে বলেছেন ‘পশোর’ নদী। এই নদীতে পড়ে সুন্দরবনের আভাস পাওয়া যায়। পাড়গুলোতে সুন্দরবনের গোলপাতা গাছ জন্মেছে। পার্থক্য, এখানে অতটা ঘন নয় এবং একটু দূরেই গ্রাম ও ফসলি জমিগুলো স্পষ্ট।

‘সুন্দরবনে সাত বৎসর’ বইয়ে বিভূতিভূষণ লিখছেন, ‘সামনে বিস্তৃত পশোর নদী, ওপারের সবুজ গোলগাছ ও হেঁতাল ঝোপের সারি। অস্পষ্ট দেখাইতেছে দূরের তটরেখা। নদীর বুকে রৌদ্র চিকচিক করিতেছে।’ আর আমার ধারণা ছিল পশুর শুধু নামেই নদী, আদতে একটি খাল। বিশালদেহী নদীর মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আমি লজ্জাই পেলাম।

এটিই আমার প্রথম সুন্দরবন ভ্রমণ। পেশাগত কাজে আগে খুলনা ও বাগেরহাট আসা হয়েছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় এসেছিলাম বাগেরহাটের শরণখোলা পর্যন্ত। সুন্দরবনে এখনই হয়তো আসা হতো না যদি ‘ফেমাস ট্যুরস বিডি’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানজির হোসেন রুবেল জোর আমন্ত্রণ না করতেন। যে লঞ্চের কথা বলছিলাম, তার নাম ‘এমভি দ্য ভেসপার’। সকালে (১৪ জানুয়ারি, ২০২২) রূপসার সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে ভেড়ানো ছিল। আমি ট্রেন থেকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা স্টেশনে নামি। সেখান থেকে রিকশায় করে পৌঁছাই জেলখানা ঘাটে। ঘাট থেকে একটি ট্রলার আমাকেসহ প্রায় জনা পঞ্চাশেক পর্যটককে নিয়ে আসে লঞ্চটির কাছে। তিনতলা লঞ্চটির একদম নিচতলায় ইঞ্জিন, জেনারেটর ও রান্নাঘর। দ্বিতীয় তলায় অতিথিদের রুম এবং তৃতীয় তলায় হলরুম; এখানকার লোকজন বলে ‘লাউঞ্জ’। লাউঞ্জেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। আমার রুমটি দ্বিতীয়তলার সামনের দিকে। সেখান থেকে বাইরের দৃশ্য দারুণ দেখায়। আমাদের দুই রাত, তিন দিনের সফর। এই কয়েকটা দিন এই লঞ্চে করেই জলে ভেসে বেড়াব আমরা।

সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ

লঞ্চের মৃদু ঘড়ঘড় শব্দ, নদী কাটার ঝিরঝির শব্দ ও হিমেল বাতাস, মনটা আনমনে করে দেয়। কী এক স্বর্গীয় ভালো লাগা ভর করে শরীরে। শুধু চেয়ে থাকতে মন চায় যত দূর চোখ যায়। কোথাও ইটপাথরের বড় বড় দালান নেই, যানজটের বালাই নেই, তীব্র হর্নের ডামাডোল নেই—নেই দম বন্ধ করা ধোঁয়া। বুঁদ হয়েছিলাম অন্য এক দুনিয়ায়। মন ভালো করা চলচ্চিত্রে হুট করেই ঢুকে পড়ল একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য। মনটা খারাপ হয়ে গেল।

পশুর নদীর পাড়েই দানবের মতো দাঁড়িয়ে আছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। নদীর পাড়ে কি এক ভয়াবহ কাণ্ড ঘটছে—তা বুঝতে বিজ্ঞানী বা পরিবেশবিদ হতে হয় না। ওখানে গেলেই বোঝা যায়। শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন—সুন্দরবনের কাছে একাধিক সিমেন্ট ও তরল গ্যাস তৈরির কারখানাও তো রয়েছে। যা হোক, বেলা দেড়টার দিকে আমাদের লঞ্চটি এসে থামল মোংলা সমুদ্রবন্দর এলাকায়। আমরা দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম। ভাত, মুরগি, মাছ, পালং শাক, আলুর ভর্তা ও ডাল। খাবার সবই লঞ্চে রান্না হয়। খুবই সুস্বাদু, বাড়ির খাবারের মতো। বিশেষ করে কোরাল মাছের স্বাদ মুখে লেগে রইল অনেকক্ষণ। এই মাছ স্থানীয়দের কাছে ভেটকি বলে পরিচিত। মংলা এলাকায় নানা পণ্যের জাহাজ। এখানে রাতদিন বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলে। জাহাজ আসছে, যাচ্ছে।

দুপুরের খাওয়া শেষে হাতে এক কাপ চা নিয়ে লঞ্চের এদিক-ওদিক হাঁটছি। দেখলাম লঞ্চের পেছনের দিকে এক কোণে বসে এক নারী আমাদের নোংরা করা বাসনকোসন পরিষ্কার করছেন। তাঁকে দেখতে আমার মায়ের মতো। বয়সও একই, পঞ্চান্নর কাছাকাছি। তাঁর গল্পটা শুনতে তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তাঁর নাম তাসলিমা বেগম। তিনি মূলত লঞ্চের বাবুর্চির সহকারী। তরিতরকারি ও মাছ-মাংস কাটা এবং থালা-বাসন ধোয়া তাঁর কাজ। তাসলিমা বেগমও আমাদের সঙ্গে এই লঞ্চে তিন দিন থাকবেন। শুনে অবাক হলাম, এই তিন দিনের অমানবিক পরিশ্রমের বিনিময়ে তিনি পাবেন মাত্র ১ হাজার টাকা! ‘টাকা এত কম, কিছু বলেন না?’ জানতে চাইলাম। বললেন, লাভ নেই। বেশি দাবি করলে বাবুর্চি তাঁকে বাদ দিয়ে দেবেন। খুলনার তাসলিমা বেগমের একমাত্র ছেলের বাগেরহাটে একটি দোকান ছিল। তখন তাঁদের অবস্থা বেশ ভালোই। করোনাকালে লোকসান ও দেনার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। ছেলে এখন রিকশাভ্যান চালায়। আমি তাসলিমা বেগমকে কিছু টাকা দিলাম। টাকাটা পেয়ে তাঁর চোখ ছলছল করে উঠলেও মুখে আনন্দের ঝিলিক স্পষ্ট। বললেন, ‘বাবা, আল্লাহ আপনার ভালো করুক।’

ছিটা কটকা বা ছোট কটকা খাল

বেলা ৪টার দিকে আমরা চলে এলাম হাড়বাড়িয়া ইকো টুরিজম কেন্দ্রে। লঞ্চ থেকে আমরা উঠে পড়লাম লঞ্চের সঙ্গে থাকা ট্রলারটিতে। আমাদের নামতে দেখে দুজন নারী নৌকা বেয়ে আমাদের কাছে ছুটে এলেন। তাঁরা ডাব বিক্রি করেন, আমরা যদি কিনি। সেই মোংলার একটি গ্রামে দুই বোন দিলারা ও হাজেরার বসবাস। প্রতিদিন সেখান থেকে ডাব এনে এখানকার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বিক্রি করেন।

ছোট্ট নৌকাটির বইঠা বড় বোন দিলারার হাতে। তাঁর বয়স পঞ্চাশের ঘরে। আর হাজেরার বয়স হবে চল্লিশের মতো। ডাবের দাম ঢাকা থেকেও বেশি। তবুও আমরা কয়েকজন ডাব কিনলাম। ট্রলারে করে ইকোপার্কের ঘাটে যেতে মিনিট পাঁচেকের মতো লাগে। এটি বনের একটি ক্ষুদ্র অংশ। প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসে এখানে। এখানে-সেখানে পড়ে আছে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া বর্জ্য।

বনের এই অংশটিকে ঘিরে একটি কাঠের দীর্ঘ সেতু করা হয়েছে। সেই সেতু ধরে হাঁটতে হাঁটতে পুরো এলাকা চক্কর দেওয়া যায়। যেখান থেকে শুরু, সেখানেই শেষ। এখানে বাঘের দেখা মেলা প্রায় অসম্ভব; অর্থাৎ, এলাকাটি নিরাপদ। তবে একাধিক প্রজাতির বানর ও চিত্রা হরিণ অহরহ চোখে পড়বে। এই পার্কেই প্রথমবার বন্য হরিণের ছবি তুললাম। সাড়ে ৫টা নাগাদ আমরা আবার ট্রলারে ফিরে এলাম। শীতকালে সূর্য তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে, জাগেও অনেক বেলা করে। বিস্তীর্ণ সবুজ বন নিজেকে সঁপে দিল অন্ধকারের হাতে। সারা দিন যে বন দেখার জন্য মানুষের এত আগ্রহ—অন্ধকার নামলেই সেই বন থেকে সবাই পালাতে চায়। রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বাতাসের গতি ও শীতলতা। ভারী বাতাসের ছোঁয়ায় মনটাও কোনো কারণ ছাড়াই ভারী হয়ে যায়। ‘ভেসপার’ চলছে অন্ধকার ও শ্যালা নদী কেটে কেটে।

সাগর মোহনায় জোয়ার-ভাটা এবং নোনা ও মিষ্টি পানির প্রবাহ ম্যানগ্রোভ বা উপকূলীয় বন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। কারণ, পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলে উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় নদী যেখানে সাগরে মেশে, সাগর মোহনার যে অংশে ধীরে ধীরে পলি জমে, সেখানেই ম্যানগ্রোভ বনের সৃষ্টি হয়। সুন্দরবন তেমনি একটি বন। এর বয়স তিন থেকে চার হাজার বছর। ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর, ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইউনেসকোর সভায় দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি স্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তার মধ্যে সুন্দরবন একটি। ঘোষণার ক্ষেত্রে ঐতিহ্য, বৈশিষ্ট্য, সৌন্দর্য, অবদান ও পৃথিবীর স্বাভাবিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা ইত্যাদি শর্ত বিবেচনা করা হয়। একই দিনে ইউনেসকো সুন্দরবনের তিনটি অভয়ারণ্যকে ‘৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য’ এলাকা ঘোষণা করে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের ১৬০টি দেশের ১ হাজার ৯৭০টি প্রাকৃতিক জলাভূমি ‌‘রামসার এলাকা’ হিসেবে ঘোষিত। এই তালিকাতেও আছে সুন্দরবনের নাম। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ এই বিশেষ এলাকাগুলোর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ইরানের রামসার শহরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় একে ‘রামসার চুক্তি’ বলা হয়। সেই চুক্তি বাস্তবায়নে আমরা কতটা কাজ করছি, তা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন ওঠে।

উত্তাল পশুর নদী

আমাদের সঙ্গে আছেন ফরেস্ট গার্ড আলী হোসেন। ১৯৯৮ সাল থেকে সুন্দরবন এলাকায় কর্মরত। তাঁর সঙ্গে আলাপ হলো। তিনি জানালেন, এখন পর্যন্ত ১০-১২বার তিনি বাঘ দেখেছেন। একবার হয়েছেন মুখোমুখি। ১৯৯৮ সালের ঘটনা। তিনি মাত্র এসেছেন আন্ধারমানিক ক্যাম্পে। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। একে একে সবার অন্য ক্যাম্পে বদলি হয়ে যায়, রইলেন শুধু তিনিই। পুরো ক্যাম্পে তিনি ও তাঁর বাবুর্চি। বনের মাঝখানে গা ছমছমে পরিবেশে তাঁদের ক্যাম্প। ক্যাম্প বলতে বাঁশ ও কাঠের তৈরি দু-তিনটি ঘর। ক্যাম্পের ভিতটা মাটি থেকে অনেকটা উঁচুতে। এক সন্ধ্যায় ক্যাম্পের পাটাতনে নিরস্ত্র আলী হোসেন বসে আছেন। বাবুর্চিও নেই। তিনি শুনতে পেলেন পাটাতনের নিচে শব্দ হচ্ছে। ভাবলেন বন্য শূকর। তিনি মুখে শব্দ করলেন, যাতে শূকরটি পালিয়ে যায়। একটু পর পাটাতনের নিচ থেকে বের হলো একটি পূর্ণবয়স্ক বেঙ্গল টাইগার!

বাঘটি ঘুরে আলী হোসেনের মুখোমুখি দাঁড়াল। আলী হোসেনের গলা শুকিয়ে কাঠ, মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না, বিস্ফোরিত তাঁর চোখ। কী করবেন বুঝতে পারছেন না। বাঘটি দাঁড়িয়ে ঘড়ঘড় শব্দ করছে। সে বুঝে নিতে চাইছে তার শিকারটি অসহায় কিনা। আলী হোসেন বুঝলেন, এভাবে বসে থাকলে মরতে হবে। তিনি তাঁর সামনে থাকা টেবিলটি টেনে ঢালের মতো করে নিজের সামনে ধরলেন। বাঘটা গর্জন করে জানিয়ে দিল, কাজটি তার পছন্দ হয়নি। আলী হোসেনের মাথায় একটি বুদ্ধি খেলে গেল। তিনি শুনেছেন, বিকট শব্দে বাঘ ভয় পায়। তিনি সময় নষ্ট না করে টেবিলটিতে শরীরের সব শক্তি দিয়ে চাপড় মারতে লাগলেন। জোরে! আরও জোরে! এটাই বাঁচার শেষ চেষ্টা।

আলীর ভাগ্য ভালো; বাঘ সত্যিই ভয় পায়। ধীরে ধীরে বাঘটি ফিরে গেল। বাঘটি বনে মিলিয়ে যেতেই আলী হোসেন এক দৌড়ে নিজের ঘরে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। পরে রেঞ্জ অফিসে গিয়ে আলী হোসেন জানিয়ে দিলেন, তিনি আর একা আন্ধারমানিক ক্যাম্পে থাকবেন না। তাঁকে রেঞ্জ অফিসেই রেখে দেওয়া হয়। গল্প শেষে আলী হোসেন বললেন, ‘ভাইজান, আমি এক মাস বাঘের ভয় থেইকা বাইর হইতে পারি নাই। একা বনে হাঁটলেই মনে হইতো আমার পিছনে বুঝি সেই বাঘটা আসতাছে।’ আরও বললেন, ‘খাঁচার বাঘ আর বনের বাঘ এক না। আমি জানি কারে কয় ছাড়া বাঘ।’

হাড়বাড়িয়া থেকে কটকা যেতে প্রায় সাত ঘণ্টা সময় লাগে। আমাদের লঞ্চ স্রোতের বিপরীতে যাচ্ছে খুব ধীর গতিতে, সতর্কতার সঙ্গে। আমাদের সঙ্গে আছে সুন্দরবন। শ্যালা নদীর দুপাশে সুন্দরবন। বন যেন গার্ড অব অনার দিয়ে পর্যটক বোঝাই লঞ্চগুলোকে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে। শীতের রাতে অদ্ভুত এক রূপে হাজির হয় সুন্দরবন। মাথার উপরে অবারিত ধূসর আকাশ। সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে থোকা থোকা মেঘ। যেন আকাশ ফেটে চৌচির। মেঘের আড়ালে চাঁদ। আড়ালে থেকেও আলো বিলিয়ে যাচ্ছে। এই গভীর রাতে ওই আলোই তো ভরসা। বিভূতিভূষণের বর্ণনা, ‘ছোট খাল, দুই ধারে গোলপাতার জঙ্গল নত হইয়া জল স্পর্শ করিয়াছে। জোনাকি-জ্বলা অন্ধকার রাত্রে এই নিবিড় বনভূমির শোভা এমনভাবে কখনো দেখি নাই।’ আমিও দেখিনি।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির

জম্পেশ নৈশভোজ শেষে ঘুমাতে গেলাম। প্রথম রাতেই বুঝলাম এই মনোরম রুমটির একটি বিপরীত দিকও রয়েছে। যখন নোঙর ফেলা হয়, তখন সমস্যাটা টের পাওয়া যায়। নোঙর ওঠানো-নামানোর যন্ত্রটা আমার রুমঘেঁষা। নোঙর নামানোর সময় ভয়ংকর দীর্ঘ শব্দ হয়, আর সে সময় যদি আপনি ঘুমে থাকেন, তাহলে আপনার মতো দুর্ভাগা আর একটিও নেই। ভোর তিনটায় আমি বিকট আওয়াজে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠলাম।

লঞ্চ কটকা খালে নোঙর ফেলেছে। নোঙর ফেলার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলেও বিছানা ছাড়লাম সাড়ে ৫টার দিকে। তখনো ঘোর অন্ধকার। আকাশে মেঘ নেই। তবে চাঁদটি আকাশের শিরোমণি হয়ে নির্ঘুম দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের এখন গন্তব্য জামতলা সমুদ্রসৈকত। সাড়ে ৬টার দিকে আমরা ট্রলারে করে রওনা হলাম। কটকা থেকে আমাদের ট্রলার গিয়ে পড়ল জামতলা খালে। ভোরের কুয়াশার জন্য সূর্যের আলো সুবিধা করতে পারছে না। ১৫ মিনিটের মধ্যে আমরা একটি ঘাটে নামলাম। সেখান থেকে শুরু হলো আমাদের হাঁটা। কখনো উন্মুক্ত প্রান্তর, কখনো ঘন বন। এদিকটায় অনেক বেশি টাইগার ফার্ন। বাংলাদেশে ২৫০ প্রজাতির ফার্ন হয়। এর বেশির ভাগই জন্মে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায়। সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকায় টাইগার ফার্ন (Acrosticum aureum) বেশি দেখা যায়।

এই ফার্নের পাতার রঙের সঙ্গে বেঙ্গল টাইগারের গায়ের রঙের মিল রয়েছে। অনেক সময় শিকারের জন্য এই ফার্নের আড়ালে বাঘ ওত পেতে থাকে। আমার চোখ ঘুরেফিরে ওই ফার্নের ঝোপের দিকে চলে যায়। ভদ্রলোক চুপ করে বসে নেই তো! আমরা হেঁটে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জামতলা সমুদ্রসৈকতে পৌঁছালাম। সৈকতের এদিকটায় প্রচুর সুন্দরী গাছ। এখানে সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের চিহ্ন। একটি কথা বলে রাখি, আমরা এখন যেদিকেই যাচ্ছি চিত্রা হরিণ চোখে পড়ে। সুতরাং এই হরিণ ও বানর দেখা ডালভাত হয়ে গেছে।

আমরা যখন জামতলা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছালাম, তখনো সূর্য কুয়াশার কবলে। সৈকতটি খুব দীর্ঘ নয়। এখানকার সমুদ্রের পানি নদীর পানির মতো ঘোলা। সমুদ্রে কেউ নামে না। তবু সমুদ্র তো সমুদ্রই, বড় বড় ঢেউ আছে—আছে গর্জনও। কক্সবাজার বা অন্যান্য সমুদ্র সৈকতে দাঁড়ালে দূরে যেমন জাহাজ বা নৌকা দেখা যায়—এই সৈকত থেকে তেমন কিছু চোখে পড়ল না। এখানকার বালিও ধূসর। এই সৈকতে আপনি যদি একা দাঁড়িয়ে থাকেন, মনে হবে আপনিই প্রথম সৈকতটি আবিষ্কার করলেন। কারণ মানবসভ্যতার কোনো উপকরণ ত্রিসীমানায় নেই। এদিক থেকে এই সৈকতটি ভিন্ন। দুঃখজনক হলো, এখানে সেখানে বর্জ্য পড়ে আছে। দর্শনার্থীরা যাওয়ার সময় খাবারের মোড়ক ও প্লাস্টিক বোতল ফেলে রেখে যায়। সমুদ্রও নানা বর্জ্য উগরে দেয় সৈকতে। এসব পরিষ্কার করার লোক আছে বলে মনে হয়নি।

ডিমের চর থেকে সূর্যাস্ত

একই দিন, অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে গেলাম টাইগার টিলায়। ঘন বনের মধ্য দিয়ে আমরা কয়েক ঘণ্টা হাঁটলাম। একটু পরপরই হরিণের পাল দেখা যায়। এই এলাকায় প্রচুর সুন্দরী, পশুর, কেওড়া, গেওয়া, কাঁকড়া, ধুন্দুল, ওরা ও বাইন গাছ। এদের অনেকের শুলো হয়। এই শুলো লম্বায় ছয় ইঞ্চি থেকে দেড় মিটার হয়ে থাকে। মাটি ভেদ করে এই শুলোগুলো কাঁটার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। শুলোর জন্য হাঁটা মুশকিল। এই এলাকার প্রায় পুরোটাই শুলো দিয়ে ছাওয়া। টিলা বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এগুলো ঢিবিও না। একটু উঁচু স্থান। এমন কয়েকটা তথাকথিত টিলা পেলাম। এই টিলাগুলোতে নাকি বাঘ বিশ্রাম নেয়। টিলাগুলোতে পুরোনো অবকাঠামোর চিহ্ন স্পষ্ট, আর টিলা এবং এর আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মৃৎপাত্রের অসংখ্য টুকরো। বিভিন্ন প্রতিবেদনে এগুলোকে সুন্দরবনে প্রাচীন মানববসতির নিদর্শন বলে দাবি করা হয়েছে। আমার কাছে মৃৎপাত্রের টুকরোগুলোকে প্রাচীন মনে হয়নি। আরও কিছু দূর গিয়ে আমরা দাঁড়ালাম আরেকটি ধ্বংসস্তূপের সামনে। এটি নাকি কয়েক শ বছরের পুরোনো একটি লবণ কারখানার নিদর্শন। আমি এবারও সম্মত হতে পারলাম না। যা হোক, একাধিক হরিণের পাল, কথিত প্রত্নকেন্দ্র ও শুলোর গালিচা দেখা শেষে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লঞ্চে ফিরে এলাম।

কটকা নামে খাল হলেও অনেক নদীর চেয়েও বড়। সাড়ে ১২টার দিকে আমাদের লঞ্চটি সেই কটকা থেকে ছিটা কটকা বা ছোট কটকা খাল ধরে চলা শুরু করল। সবার আশা, এবার কুমির দেখা যাবে। আমার এই পুরো ভ্রমণের এই অংশটুকু বিশিষ্ট।

খাল ধরে চলতে গিয়ে সুন্দরবনের এক অনন্য রূপ দেখা গেল। খালগুলোকে সুন্দরবনের ধমনি বলা যায়। গাঙ্গেয় মোহনায় কয়েক শ দ্বীপাঞ্চল নিয়ে সুন্দরবনের পরিবার। তার আয়তন এখন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এখানে নদী-নালা ও খাল-বিলই দখল করে আছে ৩ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা। সুন্দরবনের অধিকাংশ পেয়েছে বাংলাদেশ—৬ হাজার ২৪ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে জলভাগ ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার। আমরা এখন লঞ্চ নিয়ে যে খাল ধরে যাচ্ছি, তা স্বাভাবিকভাবেই ওই জলভাগের অংশ। এলাকাজুড়ে ভীষণ নীরবতা। কখনো কখনো সেই নীরবতাকে ভাঙে পাখির ডাক। খাল বলেই হয়তো আমাদের লঞ্চটিও খুব ধীর গতিতে চলছে, ফলে শব্দও কম। খালের ঘোলা পানিতে গাছের ছায়া পড়ায় পানির রং সবুজ বলে ভ্রম হয়। সরু খাল ধরে লঞ্চ কখনো ডানে, কখনো বাঁয় যাচ্ছে। অনেক সময় বড় গাছ ঘেঁষে চলতে হচ্ছে লঞ্চটিকে। এদিকটায় নানা প্রজাতির মাছরাঙা বেশি দেখা যায়। ছিটা কটকা থেকে কচিখালী খালে ওঠার একটু আগে কুমিরের দেখা মিলল। একঝলক। খালপাড়ে বসে ছিল একটি কুমির ছানা। লম্বায় মাত্র দেড় হাত হবে। লঞ্চ কাছে আসতেই দ্রুত পানিতে নেমে উধাও হয়ে গেল। ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটল যে, আমরা দু-একজন ছাড়া কেউ তা দেখার সুযোগ পেল না। যারা দেখতে পেল না—তাদের সে কী আফসোস! বলা হয়ে থাকে, সুন্দরবনে প্রধানত পাঁচটি প্রাণী দেখার আছে—বাঘ, হরিণ, বানর, শূকর ও কুমির। আমার চারটি দেখা হয়ে গেছে। বাঘ দেখতে পাব সে আশা আমার নেই। বেলা দেড়টার দিকে আমাদের ‘ভেসপার’ কচিখালী খালে উঠল।

ডিমের চরে হরিণের পাললঞ্চ ছুটছে কচিখালী অফিস পার্কের দিকে। সেখানে অনেক হাঁটতে হবে, আমরা দুপুরের খাওয়ার পাট চুকিয়ে ফেললাম। কচিখালী অফিস পার্কে পৌঁছাতে বেলা ২টা ৪০ বেজে গেল। পার্কের নামে সরকারি যত স্থাপনা আছে, সেগুলো এই বনাঞ্চলে একেবারেই বেমানান। এখানেও যত্রতত্রভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ভবন—দেখতে বিকট। 

একজনকে দেখলাম মসজিদের উন্নয়নের জন্য সাহায্য সংগ্রহ করছেন। তানজির হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে আমাদের দলটি এসব ফেলে উন্মুক্ত প্রান্তরের দিকে এগিয়ে গেল। তবে এবার সব পর্যটক এই দলে নেই। অর্ধেকই আরাম করতে লঞ্চে রয়ে গেছে। যা হোক, যত দূর চোখ যায় আধমরা কোমরসমান ঘাস (ছন) আর ছোট ছোট বুনোফুলের গাছ দেখা যায়। মাঝে মাঝে আতঙ্ক জাগানো টাইগার ফার্ন এবং দু-একট বড় গাছও রয়েছে। তবে এই খোলা প্রান্তরেরও সীমানা রয়েছে। এর সীমানা প্রাচীর ঘন বন। কিছু দূর হাঁটতেই বুঝলাম আমরা এখানে কেন এসেছি। অদূরেই অসংখ্য চিত্রা হরিণ ঘুরে বেড়াচ্ছে! সবাই দাঁড়িয়ে পড়লাম। নীরবে দেখতে লাগলাম সোনার হরিণের পাল। আমি ছবি তোলার কথা ভুলেই গেলাম। ক্যামেরা নিয়ে পড়লে এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা হবে না। আমরা যেমন হরিণ দেখছি, হরিণও কিন্তু একদল মানুষ দেখছে। সুতরাং হরিণগুলো ঘন বনের ভিতরে ঢুকে পড়ছে। এই পুরো এলাকা সাফারি পার্কের মতো—আফ্রিকায় যেমন দেখা যায়। হরিণ দেখা শেষে একটি গ্রুপ ফটো তুলে আমরা লঞ্চের দিকে পা বাড়ালাম।

টাইগার ফার্নএবার ফিরতি পথ ধরবে আমাদের লঞ্চ—যেদিক থেকে এসেছিলাম সেদিকে। ফেরার পথে দেখা হবে ডিমের চর ও করমজল। এখানে বলে রাখি, এই পুরো দলে আমারই কোনো উপদল ছিল না। আমি ঢাকা থেকে একাই এসেছিলাম। কিন্তু প্রথম দিনই আমার একটি দল তৈরি হয়। আমার এই দলে আছে এক তরুণ, এক শিশু আর দুই কিশোর—মাসুম, প্রত্যয়, প্রান্ত ও মাহী। ওরা থাকাতে আমার ভ্রমণটি আরও বেশি উপভোগ্য হয়েছে। এবার আসি ‘ডিমের চর’ প্রসঙ্গে। বেলা সোয়া ৪টার দিকে ডিমের চরে পা রাখলাম। এই চরের এই অদ্ভুত নামের কারণ কী? জানলাম, চরটি ডিম্বাকৃতির। তবে এর আরেকটি নামও রয়েছে—‘চর বিচ্ছু’।

এই চরের দক্ষিণ দিকে পক্ষীর চর। পাড় থেকেই বোঝা যায় চরটি গোল। ডিমের চরের চতুর্দিকে অথই পানি। এটি আসলে নদী ও সমুদ্রে ঘেরা একটি দ্বীপ। পাড় থেকে ওপরের দিকে উঠতেই চোখে পড়বে এখানে-সেখানে নানা ধরনের আবর্জনা পড়ে আছে। সাগর ও নদীতে ভেসে আসা আবর্জনার শেষ গন্তব্য এই চর। আর আবর্জনার স্তূপ আরও উঁচু করতে অনেক অসচেতন পর্যটক তো আছেই। এটিকে আবর্জনার চর বললেও ভুল হতো না। আবর্জনার কথা বাদ দিলে চরটি চমৎকার।

বিভূতিভূষণের ভাষায় বলতে হয়, ‘পিছনে বহিত অনন্ত নীল সাগর, মাথার উপরে মেঘভারাক্রান্ত নভঃস্থল—যেন কোন নূতন দেশের নূতন জীবনের সন্ধান পাইলাম এতদিনে। সমস্ত টাকাকড়ির স্বপ্ন যাহার নিকট তুচ্ছ হইয়া যায়।’

গোলপাতা গাছের পাতা গোল নয়সত্যিই তাই, মনে হবে এই নির্জন দ্বীপে যদি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া যেত! বালির গায়ে বসে যাওয়া সর্পিল পথ ধরে চরের ভেতরের দিকে (পূর্বদিক) এগিয়ে যাই। কিছু দূর গিয়ে আমরা থমকে গেলাম। একটু দূরেই ছনের বনে অগণিত চিত্রা হরিণ চরে বেড়াচ্ছে। আমাদের উপস্থিতি তারা টের পেল; কিন্তু পালাল না। হয়তো সংখ্যায় অনেক বেশি হওয়ায়—সাহসও বেশি। ছনবনের পরেই ঘন বন। আমাদের সুন্দরবনের ডাঙার ৭০ শতাংশ ঘন গাছপালায় ছাওয়া। বাকি ৩০ শতাংশ ঘাসে আবৃত, চর এলাকা, সমুদ্রসৈকত, বালি ও কাদাময় প্রান্তর।

আলো পড়ে যাচ্ছে বনের দিকে যাওয়া আর ঠিক হবে না। একটু পর হরিণের ডাক শুনতে পেলাম। একটানা ডেকে যাচ্ছে। আমাদের বলা হলো, সম্ভবত হরিণের পালের কাছাকাছি বাঘ রয়েছে। সূর্যাস্ত দেখতে আমরা আবার পাড়ের দিকে চলে এলাম। এখানে যখন নেমেছিলাম, তখন পানিতে সূর্যের প্রতিবিম্ব দেখে মনে হয়েছিল পানিতে আগুন জ্বলছে। আর এখন মনে হচ্ছে পানি তরল সোনায় পরিণত হয়েছে। যেন কেউ কোথাও নেই, আছে শুধু সূর্য ও তার জাদুর প্রতিবিম্ব। অন্ধকার বাড়ছে সূর্যও লাল হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশার কারণে কিনা জানি না—সূর্য কিন্তু ডুবল না। পানিতে গা ডোবানোর আগেই নীরবে ধূসর আকাশে মিলিয়ে গেল। ঝপ করে নামল অন্ধকার। সূর্যাস্ত দেখতে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, খেয়ালই করিনি আমার পেছনে দুটো বন্য শূকর! আমার ভাগ্য ভালো তারা খাবারের খোঁজে ব্যস্ত ছিল। আমি ট্রলারের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম।

জামতলা সমুদ্রসৈকতলঞ্চটি চলছে তো চলছেই। কী নিপুণভাবে নদী ও খাল পাড়ি দিচ্ছে নির্বিঘ্ন। কখনো গতি বাড়ছে, কখনো কমছে। কী রাত কী দিন—ভেসপার ভেসে চলেছে। আসলে তা চলে না—একজন তাকে চালায়। আর যিনি অবিরাম এটি চালিয়ে যাচ্ছেন, তিনি হলেন আবদুর রাজ্জাক। তৃতীয় তলার সামনের অংশে তাঁর অবস্থান। বয়স ত্রিশ। এই তরুণের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়। ভেসপার নিয়ন্ত্রণ করতে করতে আমাকে বললেন, তাঁকে কেউ বলে সারেং, কেউ বলে সুকানি, কেউ মাস্টার বলে। অনেকে নাকি ক্যাপ্টেন ও পাইলটও বলে।

শেষের লাইনটি বলে নিজেই হেসে ফেললেন রাজ্জাক। জানলাম, তিনি এখানে আছেন চার বছর ধরে। তার আগে কার্গো বোট চালাতেন, ঘুরতে হতো এক জেলা থেকে আরেক জেলা। তবে খুলনা এসে তিনি খুশি। জানতে চাইলাম, সুন্দরবন ভালো লাগে এ জন্য কাজটা করেন কিনা। উত্তর দিলেন, ‘এই কাজ ছাড়া কিছু জানি না, তাই এটাই করি।’ রাজ্জাকদের সাপ্তাহিক ছুটি নেই। তিনি একাই। লঞ্চেই থাকা-খাওয়া। পর্যটন স্পট বন্ধ থাকলে অথবা ব্যক্তিগত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফরিদপুরে থাকা তাঁর পরিবারের কাছে ফেরা হয় না—দিনের পর দিন।

গাছ থেকে পাতা ছিঁড়ে খাচ্ছে হরিণসুন্দরবনে এটিই শেষ রাত। তাই রাতের খাবারের মেনুতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হলো। মাছ ও মুরগির বারবিকিউ। কয়েকজন গান করলেন, নাচলেন—অনেক মজা হলো। আজ দ্বিতীয়বারের মতো দূর থেকে রাতের সুন্দরবন দেখা হলো। সুন্দরবন দেবীর ঘুম যেন ভেঙে না যায়, সে জন্যই কি রাজ্জাক যতটা সম্ভব নীরবতা বজায় রেখে লঞ্চ চালাচ্ছেন? সুন্দরবনের রাত দেখে বিভূতিভূষণ লিখেছিলেন, ‘আবার আকাশে নক্ষত্র উঠিল। মাথার উপর অগণিত নক্ষত্রখচিত আকাশ, নিচে অনন্ত সমুদ্র—মরণের আগে কী রূপই অনন্ত আমার চোখের সামনে খুলিয়া দিলেন! মরিব বটে কিন্তু কাহাকে বলিয়া যাইব যে কী দেখিয়া মরিলাম!’ যদিও এখন কুয়াশার কারণে খুব বেশি তারা আকাশে নেই। রাতের বাতাস বেশিক্ষণ সহ্য করা কঠিন। আমি আমার রুমে চলে এলাম। রুম থেকেও শোনা যাচ্ছে, লাউঞ্জে কেউ একজন গান ধরেছেন, ‘আমি কেমন করে পত্র লিখিরে বন্ধু/ গ্রাম পোস্টাফিস নাই জানা/ তোমায় আমি হলেম অচেনা...’ এই অচীন-অবর্ণনীয় নীরবতা কি মানুষের ভেতরের নীরবতাকেও উসকে দেয়? আর তখন পশুর নদীর মতোই কি ছলকে ওঠে সেই নীরবতা? আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। রাত একটার দিকে চাঁদপাই এলাকায় নোঙর ফেলল ভেসপার।

শুলো আবৃত নদীপাড়খুলনার দক্ষিণে দুবলার চরের কাছে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে রূপসা নদী—যার একটি শাখা সমুদ্রে নেমেছে। অন্য শাখাটি সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদী মংলা খালের সঙ্গে যুক্ত। এর পর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে শিবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পশুর নামে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। পশুর ভীষণ গভীর ও খরস্রোতা। সেই নদীকে আমি দুর্বল ভেবেছিলাম! সে জন্যই কিনা জানি না—আজ নিজের সক্ষমতা দেখাচ্ছে পশুর। সমুদ্রের মতো তার গর্জন, বিশাল বিশাল ঢেউ, তীব্র তার স্রোত। তার আজ পশুর মতো বল। আচ্ছা নামটি পশুর কেন হলো? পশুর নামের গাছ থেকে? সুন্দরবনে প্রচুর পশুর গাছ জন্মে। বিভূতিভূষণ ‘সুন্দরবনে সাত বৎসর’ নামের কিশোর উপন্যাসে এই পশুরকেই কি ভুলে ‘পশোর’ বলেছেন? নাকি মূল নাম পশোরই? পশোরের অর্থই-বা কী? যা হোক, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ট্রলারে উঠে পড়লাম, গন্তব্য—করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র।

সুন্দরবনের বানরটালমাটাল অবস্থায় ট্রলার ১০ মিনিটের মধ্যেই বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রে পৌঁছে গেল। কুমির দেখার জন্য জায়গাটি আদর্শ। বিভিন্ন চৌবাচ্চায় ছোট-বড় কুমির রয়েছে। একটি পুকুরে ‘রোমিও-জুলিয়েট’ নামে দুটি কুমিরের বসবাস। কেন্দ্রের লোকজন নাম ধরে ডাকলে সাঁতার কেটে দর্শনার্থীদের সামনে হাজির হয় তারা। এটি একটি দেখার মতো দৃশ্য। আরেকটি চৌবাচ্চায় কয়েকটি কচ্ছপকে সাঁতার কেটে বেড়াতে দেখলাম। এই কেন্দ্রে যে প্রাণীগুলো সুখে-শান্তিতে নেই, তা বোঝা যায়। গোটা কেন্দ্রটিই শ্রীহীন, চৌবাচ্চার দেয়াল এবং খাঁচার লোহার জালগুলো ভাঙাচোরা, আর মানুষের উৎপাত তো রয়েছেই। বেলা ১১টার দিকে আমরা ফিরে এলাম।

বাঘ যে দেখা হলো না, তা নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। আমি বাঘ দেখতে আসিনি—এসেছি সুন্দরবনের সঙ্গে পরিচিত হতে। পরিচয় বললাম, কারণ সুন্দরবনকে জানতে, বুঝতে মাসের পর মাস ব্যয় করলেও কম পড়তে পারে। আমরা গত দু-তিন দিনে বনদেবীর এক শতাংশও দর্শন করতে পেরেছি বলে মনে হয় না। ছোটবেলা থেকে যে সুন্দরবনের গল্প শুনছি, যার ছবি দেখি—তাকে সরাসরি একবার দেখার সাধ অন্তত মিটল। আমার এবারের প্রত্যাশা তাই ছিল। সুন্দরবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে না হয় আবার আসব। দুপুরের দিকে আমরা ফিরে এলাম খুলনা সদরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আবুধাবি ভ্রমণের আগে যা জানা জরুরি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
সামান্য প্রস্তুতি ও সচেতনতা থাকলে আবুধাবি ভ্রমণ হয়ে উঠতে পারে স্মরণীয় ও ঝামেলামুক্ত। ছবি: উইকিপিডিয়া
সামান্য প্রস্তুতি ও সচেতনতা থাকলে আবুধাবি ভ্রমণ হয়ে উঠতে পারে স্মরণীয় ও ঝামেলামুক্ত। ছবি: উইকিপিডিয়া

সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধুনিক স্থাপনা ও অতিথিপরায়ণ মানুষের জন্য আবুধাবি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম আকর্ষণীয় শহর হিসেবে পরিচিত। মরুভূমির বিস্তীর্ণ প্রান্তর, নীল সমুদ্র, আধুনিক আকাশচুম্বী ভবন আর প্রাচীন ঐতিহ্যের মেলবন্ধনের কারণে এই শহর পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। এখানকার মানুষজন সাধারণত বন্ধুবৎসল, যা পর্যটকদের অভিজ্ঞতাকে আরও সুন্দর করে তোলে। তবে এই বৈচিত্র্যময় শহরের ভ্রমণ যেন নির্বিঘ্ন ও আনন্দদায়ক হয়, সে জন্য স্থানীয় সংস্কৃতি, সামাজিক আচরণ এবং কিছু নিয়মকানুন সম্পর্কে আগেভাগে ধারণা রাখা জরুরি। সামান্য প্রস্তুতি ও সচেতনতা থাকলে আবুধাবি ভ্রমণ হয়ে উঠতে পারে স্মরণীয় ও ঝামেলামুক্ত।

ভ্রমণ পরিকল্পনা

কমপক্ষে চার দিন সময় রাখুন: সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে বড় রাজ্য হলো আবুধাবি। রাজধানী শহরের আধুনিক জীবনধারার পাশাপাশি এই রাজ্যে রয়েছে বিস্তৃত মরুভূমি, পাহাড়ি অঞ্চল, দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত এবং প্রায় ২০০ ছোট-বড় দ্বীপ। এই বৈচিত্র্যই আবুধাবিকে আলাদা করে তুলেছে। দ্রুত দেখে নেওয়ার চেয়ে সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দেখলেই এখানকার প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। এ জন্য হাতে চার দিন সময় রাখা ভালো। তাতে ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে অনেক কিছু।

বাইরের কাজে উপযোগী পোশাক নিন: এখানে সাইক্লিং, কায়াকিং, মরুভূমি ভ্রমণ বা গলফ খেলার সুযোগ আছে। তাই আরামদায়ক পোশাক, জুতা ও টুপি রাখুন সঙ্গে। নভেম্বর থেকে মার্চে হালকা জ্যাকেট কাজে আসে, আর গ্রীষ্মে সুতি বা লিনেন কাপড় ভালো।

যাতায়াত ব্যবস্থা

ট্যাক্সি অ্যাপ ডাউনলোড করুন: আবুধাবিতে ট্যাক্সি অ্যাপ ব্যবহার করলে সহজে ট্যাক্সি পাওয়া যায়, তীব্র গরমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। সারা দেশে চলাচলের জন্য ‘করিম’ নামের অ্যাপটি বেশ জনপ্রিয়।

ফ্রি শাটল ও বাস: লুভর আবুধাবি, শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফ্রি শাটল বাস চলে। সাধারণ বাসে যাতায়াতের জন্য ‘হাফিলাত স্মার্ট কার্ড’ ব্যবহার করা হয়।

পোশাক ও আচরণ

সম্মানজনক পোশাক পরুন: মিউজিয়াম, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ছোট শহরগুলো ঘুরে দেখার সময় কাঁধ এবং হাঁটু ঢাকা শালীন পোশাক পরা ভদ্রতা ও সম্মানের অংশ হিসেবে ধরা হয়। এতে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখানো হয় এবং অপ্রয়োজনীয় বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানো যায়। ধর্মীয় স্থান, বিশেষ করে মসজিদে প্রবেশের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়েরই ঢিলেঢালা ও সম্পূর্ণ ঢাকা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক। এ সময় নারীদের মাথা ঢাকার জন্য স্কার্ফ ব্যবহার করতে হয়, যা অনেক মসজিদে প্রয়োজনে ধারও দেওয়া হয়।

ছবি তোলার সময় সতর্কতা: আবুধাবিতে মানুষের ছবি তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকা জরুরি। কোনো ব্যক্তির; বিশেষ করে নারী ও শিশুর ছবি তোলার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া কারও ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। তাই ভ্রমণের সময় ছবি তোলার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং স্থানীয় আইন মেনে চলা নিরাপদ ও দায়িত্বশীল আচরণ।

স্থানীয় অভিবাদন জানুন: আবুধাবিতে সাধারণভাবে ইংরেজি প্রচলিত হলেও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার সময় আরবি অভিবাদন তারা বেশি পছন্দ করে। ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে শুভেচ্ছা জানালে স্থানীয়রা সাধারণত খুশি হয় এবং এতে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। একইভাবে কথোপকথনের শেষে বা সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ‘শুকরান’ (ধন্যবাদ) বলা ভালো।

সামাজিক শিষ্টাচার

  • বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে আগে হাত মেলাবেন না।
  • ডান হাত দিয়ে কিছু দেওয়া-নেওয়া করুন।
  • অশালীন অঙ্গভঙ্গি ও গালাগালি আইনত অপরাধ।
  • রমজানে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে সংযত থাকতে হবে।

মদ্যপান ও আচরণ

লাইসেন্সপ্রাপ্ত বার ও হোটেলে অ্যালকোহল পাওয়া যায়, তবে মাতাল আচরণ, উচ্চ স্বরে ঝগড়া বা বিশৃঙ্খলা একেবারেই নিষিদ্ধ। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো কঠোরভাবে দণ্ডনীয়।

নিরাপত্তা ও আইন

আবুধাবি বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ শহর। চুরি-ছিনতাই খুবই বিরল এ শহরে। তবে সমলিঙ্গ সম্পর্ক ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যসংক্রান্ত আইন কঠোর। এ বিষয়ে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে পুলিশের নম্বর ৯৯৯।

আবুধাবি আধুনিক এবং অতিথিপরায়ণ হলেও এখানকার সংস্কৃতি ও আইন মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য সচেতনতা থাকলেই এই শহরের ভ্রমণ হয়ে উঠবে নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্মরণীয়।

সূত্র: লোনলি প্ল্যানেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যেসব বিপজ্জনক খাবার মৃত্যুর কারণ হতে পারে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৫
খাবার সব সময় আনন্দের বিষয় নয়। কিছু কিছু খাবার ঝুঁকির কারণও হতে পারে। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
খাবার সব সময় আনন্দের বিষয় নয়। কিছু কিছু খাবার ঝুঁকির কারণও হতে পারে। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

ভুল প্রস্তুতি, সামান্য অসাবধানতা কিংবা জ্ঞানের অভাব—এগুলো যেকোনো খাবারকে মুহূর্তে পরিণত করতে পারে নীরব ঘাতকে। পৃথিবীজুড়ে এমন অনেক খাবার আছে, যেগুলো দেখতে লোভনীয় হলেও সেগুলোর ভেতরে লুকিয়ে আছে মারাত্মক বিপদ। বিষাক্ত উদ্ভিদ থেকে শুরু করে মারাত্মক বিষ বহনকারী প্রাণী—সবই থাকে এই খাবারগুলোতে। সেগুলো খেলে গুরুতর অসুস্থতা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। আসুন, বিশ্বের এমন কিছু বিপজ্জনক খাবারের দিকে নজর দেওয়া যাক, যেগুলো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক রন্ধনশৈলীর অংশ হলেও সেগুলোর ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা অপরিহার্য।

বীজ, ফল ও সবজি

সাধারণ কিছু ফল ও সবজির ভুল অংশ কিংবা ভুল প্রস্তুতি মারাত্মক হতে পারে। কামরাঙায় নিউরোটক্সিন থাকে, যা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য মারাত্মক হতে পারে। তাদের এটি খেলে মারাত্মক বিভ্রান্তি, খিঁচুনি বা মৃত্যুও ঘটতে পারে। তবে সুস্থ ব্যক্তিরা এটি পরিমিত খেতে পারে।

কামরাঙায় নিউরোটক্সিন থাকে, যা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য মারাত্মক হতে পারে। ছবি: ফ্রিপিক
কামরাঙায় নিউরোটক্সিন থাকে, যা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য মারাত্মক হতে পারে। ছবি: ফ্রিপিক

জ্যামাইকার অ্যাকি নামের একটি ফল কাঁচা অবস্থায় হাইপোগ্লাইসিন এ নামে বিষাক্ত পদার্থ ধারণ করে। এ ফল খেলে বমি হতে পারে। এ ছাড়া এটি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে কোমা বা মৃত্যুও ঘটতে পারে। কাসাভা একটি মূলজাতীয় সবজি। এটিতে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড থাকে, যা ভুলভাবে প্রক্রিয়াকরণ করা হলে সায়ানাইড নির্গত করে। এতে বমি বমি ভাব, বমি বা মৃত্যু হতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্যাংগিয়াম ইড্যুলে নামের বীজে হাইড্রোজেন সায়ানাইড নামক মারাত্মক বিষ থাকে। খাওয়ার আগে অবশ্যই বীজটিকে বিষমুক্ত করার জন্য গাঁজানো বা প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়।

কাঁচা কাজুতে উরুশিওল নামে বিষাক্ত তেল থাকে। এটি না ভেজে বা না সেঁকে খেলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বা শ্বাসযন্ত্রের কষ্ট হতে পারে। কাঁচা বা অপর্যাপ্ত রান্না করা লাল কিডনি বিনসে ফাইটোইমাগ্লুটিনিন নামে একটি টক্সিন থাকে। এভাবে লাল কিডনি বিনস খেলে বমি বমি ভাব, বমি এবং হজমের গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে। এই বিষাক্ত পদার্থ নিষ্ক্রিয় করতে এগুলোকে উচ্চ তাপমাত্রায় পুরোপুরি রান্না করতে হয়।

কাঁচা কাজুতে উরুশিওল নামে বিষাক্ত তেল থাকে। এটি না ভেজে খেলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বা শ্বাসযন্ত্রের কষ্ট হতে পারে। ছবি: উইকিপিডিয়া
কাঁচা কাজুতে উরুশিওল নামে বিষাক্ত তেল থাকে। এটি না ভেজে খেলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বা শ্বাসযন্ত্রের কষ্ট হতে পারে। ছবি: উইকিপিডিয়া

চেরির বীজ এবং অন্যান্য স্টোন ফলের বীজে অ্যামিগডালিন থাকে, যা হজমের সময় সায়ানাইড নির্গত করে। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে সায়ানাইড বিষক্রিয়া হতে পারে। রুবাবের ডাঁটা নিরাপদ হলেও এর পাতায় অক্সালিক অ্যাসিড ও অ্যানথ্রাকুইনোন গ্লাইকোসাইডের মতো বিষাক্ত যৌগ থাকে। এল্ডারবেরিস নামক উদ্ভিদের কাঁচা ফল, পাতা, বাকল এবং মূলে লেকটিন ও সায়ানাইড থাকে, যা বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া ঘটাতে পারে। তবে বীজ এবং বেরিগুলো সঠিকভাবে রান্না করলে সায়ানাইড দূর হয়।

মাশরুম ও মসলা

ডেথ ক্যাপ মাশরুম বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ছত্রাকগুলোর অন্যতম। এতে অ্যামাটক্সিনের মতো শক্তিশালী বিষাক্ত পদার্থ থাকে, যা লিভার ও কিডনি বিকল করে দিতে পারে। জায়ফল বেশি পরিমাণে খেলে মাইরিস্টিসিন নামক যৌগটির কারণে হ্যালুসিনেশন, বমি বমি ভাব এবং খিঁচুনি হতে পারে। এটি অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করলে অঙ্গ ব্যর্থতার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্বের অন্যতম ঝাল মরিচের নাম ড্রাগন’স ব্রেথ। এর ঝালের মাত্রা ২.৪৮ মিলিয়ন স্কোভিল ইউনিট। এটি খাওয়ার ফলে গলা পুড়ে যাওয়া, শ্বাস পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অ্যানাফাইল্যাকটিক শক হতে পারে।

জায়ফল বেশি পরিমাণে খেলে হ্যালুসিনেশন, বমি বমি ভাব, খিঁচুনি এবং কখনো কখনো মৃত্যুর কারণও হতে পারে। ছবি: ইউকিপিডিয়া
জায়ফল বেশি পরিমাণে খেলে হ্যালুসিনেশন, বমি বমি ভাব, খিঁচুনি এবং কখনো কখনো মৃত্যুর কারণও হতে পারে। ছবি: ইউকিপিডিয়া

তৈরি খাবার ও তরল

কাঁচা মধুতে বটুলিজম স্পোর থাকতে পারে, যা এক বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এই স্পোরগুলো নিউরোটক্সিন তৈরি করে, যা শিশুদের পক্ষাঘাত এবং মৃত্যু ঘটাতে পারে। এ ছাড়া পাস্তুরায়ন করা হয়নি; এমন দুধ ও পনিরে সালমোনেলা, লিস্টেরিয়া বা ই. কোলাইয়ের মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। গর্ভবতী, শিশু এবং বয়স্কদের জন্য এটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

কাসু মার্তজু নামক সার্ডিনিয়ার পনিরে ইচ্ছাকৃতভাবে জীবন্ত লার্ভা রাখা হয়। এই লার্ভা হজমের পরেও জীবিত থাকতে পারে এবং অন্ত্রে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ল্যাই নামক ক্ষারযুক্ত পানিতে ভেজানো শুকনো মাছ দিয়ে তৈরি একটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান খাবার লুটফিস্ক। সঠিকভাবে ধুয়ে না ফেললে উচ্চ মাত্রার ল্যাই রাসায়নিক পোড়া বা হজমজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আলফা স্প্রাউটস একটি পুষ্টিকর স্প্রাউট। এটি উষ্ণ ও আর্দ্র পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠার কারণে ই. কোলাই বা সালমোনেলার মতো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে দূষিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

প্রাণী ও মাছ থেকে সৃষ্ট ঝুঁকি

কিছু প্রাণী ও মাছের শরীরে মারাত্মক বিষ লুকিয়ে থাকে। যেমন জাপানের জনপ্রিয় খাবার ফুগু। এতে আছে টেট্রোডোটক্সিনের মতো অত্যন্ত শক্তিশালী একটি নিউরোটক্সিন। দুর্ঘটনাক্রমে বিষক্রিয়ার ঝুঁকি থাকায় শুধু লাইসেন্সপ্রাপ্ত শেফরাই এটি প্রস্তুত করার অনুমতি পান। সিলভার-স্ট্রাইপ ব্লাসোপ পাফারফিশের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এতেও মারাত্মক টেট্রোডোটক্সিন থাকে। ভুলভাবে প্রস্তুত করলে এটি পক্ষাঘাত, শ্বাসযন্ত্রের বিকলতা এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সুশি বা স্টেক টার্টারের মতো কাঁচা মাছ বা মাংস খেলে ই. কোলাই বা সালমোনেলার মতো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা পরজীবীর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ঐতিহ্যবাহী মিসরীয় খাবার ফেসিখ নামের গাঁজানো মাছের পদটি যদি সঠিকভাবে রান্না করা না হয়, তবে এটি বটুলিজম নামক মারাত্মক স্নায়ুতন্ত্রের রোগের কারণ হতে পারে।

ঝিনুক এবং অন্যান্য শেলফিশ ক্ষতিকর শেওলা বহন করতে পারে, সেগুলো প্যারালিটিক শেলফিশ পয়জনিং সৃষ্টি করে। এটি পক্ষাঘাত বা শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতির কারণ হতে পারে। কোরিয়ার একটি খাবারে জীবন্ত অক্টোপাস পরিবেশন করা হয়। এর কাটা শুঁড়গুলো তখনো নড়াচড়া করতে পারে, যা ভালোভাবে চিবিয়ে না খেলে শ্বাসরোধের কারণ হতে পারে। নামিবিয়ার কিছু অঞ্চলে আফ্রিকান বুলফ্রগ নামের একটি ব্যাঙ খাওয়া হয়। তবে এর চামড়া ও অঙ্গে থাকা বিষাক্ত পদার্থ কিডনি ফেইলিওর ঘটাতে পারে, যদি এটি সঠিকভাবে রান্না হয়ে না থাকে।

দূষিত পানি থেকে সংগ্রহ করা ক্ল্যামস হেপাটাইটিস এবং টাইফয়েডের মতো বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া বহন করতে পারে। খাদ্যজনিত অসুস্থতা এড়াতে এটি সঠিকভাবে রান্না করা অপরিহার্য। কিছু সংস্কৃতিতে এটি বিশেষ খাবার হিসেবে খাওয়া হয় বানরের মাথা। এটি ক্রিউটজফেল্ড-জেকব রোগর মতো রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বহন করে, যা একটি মারাত্মক স্নায়ু-অবক্ষয়কারী রোগ।

মূলকথা হলো, খাবার হিসেবে সবই হয়তো কোনো না কোনো সংস্কৃতির স্মারক। নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ সেসব খাবার মজা করেই খায় তাদের প্রজন্মগত অভিজ্ঞতার কারণে। তবে মনে রাখতে হবে, খাবারগুলো সঠিকভাবে রান্না না হলে কিংবা সেসব খাবারে অভ্যস্ত না হলে সেগুলো ঝুঁকির কারণ তো বটেই, মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠতে পারে।

সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাজি ভালোবাসার লাল-সবুজে

নিশাত তামান্না
ছবি সৌজন্য: রঙ বাংলাদেশ
ছবি সৌজন্য: রঙ বাংলাদেশ

বিজয় দিবসে লাল-সবুজের ফ্যাশন এখন দারুণ ট্রেন্ড। পতাকার এই রং ছড়িয়ে থাকে আমাদের মন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজগোজে। তবে হিম হিম শীতে কোন ধরনের লাল-সবুজ পোশাক বেছে নেবেন এবং এর সঙ্গে সাজ কেমন হবে, সেসব নিয়ে অনেকে আছেন দ্বিধায়। তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। দেখে নিতে পারেন এখানে।

পোশাক

বিজয় দিবসের পোশাকের রং লাল-সবুজ। সাধারণত সবুজকে বেছে নেওয়া হয় পোশাকের মূল রং হিসেবে। এরপর শাড়ি হলে পাড়ে, কামিজের সঙ্গে ওড়না, পাঞ্জাবির কলার ও হাত—এসব জায়গায় উজ্জ্বল আভা ছড়ায় লাল রং। এসব নকশায় সাধারণত থাকে দেশীয় আলপনা, বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছাপচিত্র, জাতীয় ফুল কিংবা জাতীয় পাখি, লতাপাতাসহ নানা রকম দেশীয় আবহ। এসব পোশাকের মধ্যে শাড়ি, কুর্তি, সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট, টপ, পাঞ্জাবি বা টি-শার্টই হয়ে উঠবে একখণ্ড ক্যানভাস। তবে ডিসেম্বর মাস মানে গায়ে অল্প হলেও শীতের পোশাক তুলতে হচ্ছে। ফলে বিজয় উৎসবের পোশাকের সঙ্গে ম্যাড়মেড়ে শীতের পোশাক যে একেবারেই মানানসই নয়, তা সবার জানা। রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস বলেন, ‘পোশাক পরার ক্ষেত্রে শীতের হিম আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাই এমন পোশাক বেছে নিতে হবে, যা আরামদায়ক কিন্তু একই সঙ্গে হালকা শীত এড়ানো যায়।’

সৌমিক দাস আরও বলেন, ‘বিজয় দিবসের পোশাকের নকশায় ডিজাইনাররা সুতি কাপড়কেই বেশি প্রাধান্য দেন। পোশাকে মার্জিত ভাব বজায় রাখতে ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, সুই-সুতার কাজ বেশি হয়। লাল-সবুজের শাড়ি, পাঞ্জাবি, কুর্তি, উত্তরীয়সহ নানা রকম পোশাক যেন হালকা শীতও মোকাবিলা করতে পারে, সেভাবে নকশা করা হয়েছে। পাশাপাশি ম্যাচিং করে পরার জন্য চাদরও নকশা করেছে রঙ বাংলাদেশ।’

সৌমিক দাস আরও বলেন, এ ধরনের উৎসবে পরিবারের সবাই মিলে একই পোশাক পরার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখা যায়। তাই পরিবারের সবার জন্য কম্বো সেটও এনেছে এই ব্র‍্যান্ড।

সাজ

এই দিনে ঘোরাঘুরির আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঠিক কেমন করে কাটাতে চাইছেন দিনটি। দল বেঁধে দূরে কোথাও যেতে চাইলে কিংবা কাছাকাছি এদিক-ওদিক ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতে হলে সাজের ধরনেও আসবে ভিন্নতা। সাজ তো কেবল পোশাক নয়, এর সঙ্গে থাকে আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছুর সমন্বয়। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না, চোখের সাজ, মুখের সাজ, চুলের সাজ— বাদ যায় না হাতে বা কাঁধে বহনের ব্যাগটিও। তাই একটু ভেবেচিন্তে পরিকল্পনা করে নিলে সাজ ও ঘোরাঘুরির আনন্দ হবে ঠিকঠাক।

ছবি সৌজন্য: রঙ বাংলাদেশ
ছবি সৌজন্য: রঙ বাংলাদেশ

বিজয় দিবসের দিনটিতে সাজ কেমন হলে ভালো হয়, এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহা। তিনি বলেন, ‘বিজয় দিবসে পোশাকের রং লাল-সবুজ থাকে। কমবেশি সবাই এই রঙেই জড়িয়ে নেন নিজেদের। যেহেতু এটি গৌরবময় দিন, তাই সাজটিও হতে হবে মার্জিত ও স্নিগ্ধ। পাশাপাশি যেহেতু শীত, তাই ত্বক যেন মেকআপের ফলে অতিরিক্ত শুষ্ক না হয়ে ওঠে, সেদিকেও নজর দেওয়া চাই।’

শোভন সাহার মতে, সাজের আগে খেয়াল রাখতে হবে ত্বকের ধরনের বিষয়টি। শুষ্ক, মিশ্র ও স্বাভাবিক—ত্বক এই তিন ধরনের হয়। তবে ত্বক যেমনই হোক না কেন, প্রথমে মুখ পরিষ্কার করে ক্রিম বা ময়শ্চারাইজার দিতে হবে। প্রাইমার ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময় ত্বক সুন্দর দেখাবে।

এদিন সাজের ধরন ভারী না হলেই বরং ভালো। মুখের ত্বকে দাগ, ছোপ লুকিয়ে হালকা করে লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ভালোভাবে ত্বকের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার হালকা ফেস পাউডার দিয়ে তার ওপর পিচ বা গোলাপি ব্লাশন বুলিয়ে নিলেই ত্বকের সাজ পূর্ণ হবে।

চোখের সাজের ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, চোখে গাঢ় করে ওয়াটারপ্রুফ কাজল দিন। পোশাকের রং যেহেতু লাল-সবুজ থাকবে, তাই ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক ব্যবহার না করে ন্যুড কিংবা হালকা রঙের লিপস্টিক পরে নিলে ভালো দেখাবে। তবে শাড়ি পরলে চুলে গুঁজে দেওয়া যেতে পারে তাজা ফুল। সবশেষে ম্যাচিং চুড়ি, গয়না ও টিপ পরলেই সাজ পুরোপুরি সম্পন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

মেষ

আজ আপনার পকেট হঠাৎ করে গরম হতে পারে। জ্যোতিষ বলছে, ‘হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।’ কিন্তু এই অর্থ হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার আশপাশে থাকা ‘নারী বন্ধু’ (বা পুরুষ বন্ধু, লিঙ্গভেদ নেই) আপনাকে কফি, বিরিয়ানি বা নতুন সিরিজের সাবস্ক্রিপশনের জন্য অনুরোধ করতে পারে। সাবধান! এই অর্থ আপনার একার, মহাজাগতিক ঋণের নয়। সারা দিন জনসেবার ইচ্ছা জাগবে, ভালো কথা। কিন্তু তার আগে নিজের বিলগুলো মেটানো জরুরি। ভাগ্য আজ আপনাকে দেখাবে—টাকা উপার্জন করা যতটা সহজ, সেটা ধরে রাখা তার চেয়েও কঠিন! আজকের মন্ত্র হোক: কফি খাব, তবে বিল দেব না।

বৃষ

সকাল থেকে একটা অদ্ভুত মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তি আপনাকে তাড়া করবে। এর কারণ সম্ভবত গভীর রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্টুন দেখা। জ্যোতিষ বলছে, ‘কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু আপনাকে ঠকানোর চেষ্টা করবেন।’ সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুটি আর কেউ নয়—সে হলো আপনার ফ্রিজের ভেতরে রাখা সেই মিষ্টির বাক্স, যেটি আপনাকে ডায়েট ভাঙতে উৎসাহিত করবে। ধ্যানের মাধ্যমে একাগ্রতা আনার চেষ্টা করুন। বস যদি সকালে কাজে ভুল ধরেন, তখন যোগাভ্যাস শুরু করে দিতে পারেন, হয়তো বস ভয় পাবেন। পেটের সমস্যা এড়াতে আজ অতিরিক্ত মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। কিন্তু যদি দেখেন বন্ধু বিরিয়ানি খাওয়াতে চাচ্ছে, তাহলে এই উপদেশ ভুলে যান। মন খারাপ? মনকে বলুন, ‘বিকেলের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে, তার আগে ঘুমাও।’

মিথুন

সকালের দিকে মেজাজ এমন খিটখিটে থাকবে যে, পোষা প্রাণীটাও আপনাকে এড়িয়ে চলবে। তবে চিন্তা নেই, বিকেলের দিকে মুড ফ্রেশ হবে—যদি না কোনো অপ্রত্যাশিত ফোন কল আসে। কর্মক্ষেত্রে সুনাম হতে পারে, যা আপনার অহংবোধকে একধাপ বাড়িয়ে দেবে। আজ কিছু নতুন পোশাক, মোবাইল ফোন ইত্যাদি কেনার যোগ রয়েছে। আপনার সম্মান বৃদ্ধির মূল কারণ হতে পারে নতুন ফোনের ক্যামেরা। তাই নিজেকে প্রমাণ করতে নয়, বরং ভালো সেলফি তোলার জন্য আজ মন দিন। সাবধানে অর্থ ব্যয় করুন। যদি অনলাইনে কোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস চোখে পড়ে, মনে রাখবেন—ওটা কালকেও থাকবে।

কর্কট

আজকের দিনটি আপনার জন্য বেশ ব্যয়বহুল হতে চলেছে। এর মানে এই নয় যে দামি কিছু কিনবেন, বরং মানে হলো—হয়তো অফিসের কলিগদের জন্য চা-কফি কিনে নিজের মাসকাবারি বাজেট শেষ করবেন। বসের কাছে প্রশংসা পাবেন, কারণ আপনি কাজের প্রতি খুবই দায়িত্বশীল। এই দায়িত্বশীলতা আপনাকে আরও বেশি কাজ এনে দেবে, যা ভবিষ্যতে মানসিক ভারসাম্য নষ্টের কারণ হবে। সরকারি কাজে অসুবিধা দেখা দেবে—কারণ সরকারি কাজ সব সময়ই অসুবিধা সৃষ্টি করে। ভদ্র থাকুন, নইলে টাকা শেষ হয়ে গেলে ধার চাওয়ার মুখ থাকবে না।

সিংহ

প্রতিদিনের স্বাভাবিক রুটিন বদলানোর চেষ্টা কেউ একজন করবে। সেই ‘কেউ একজন’ আর কেউ নয়, তিনি হলেন আপনার জীবনসঙ্গী, যিনি আপনাকে দিয়ে ঘরের কাজ করানোর চেষ্টা করবেন। সেদিকে বিশেষ নজর রাখুন। তবে দিনের শেষে রোমান্সের যোগ রয়েছে, যদি আপনি রুটিন বদলের এই চ্যালেঞ্জে হেরে যান এবং বশ্যতা স্বীকার করেন। আজ ব্যবসা বা পেশার জন্য অর্থ সংগ্রহে আপনি সফল হবেন। ঘরের কাজকে প্রেমের খেলা মনে করুন। হারলেও লাভ, জিতলেও!

কন্যা

সারা দিন আপনার কোনো বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। চেষ্টা করলেও, ভেতরের কণ্ঠস্বর আপনাকে মনে করিয়ে দেবে—কত কাজ বাকি আছে। আজ আপনার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা দরকার। সামান্য সর্দি-কাশিকে কঠিন ব্যামো ভেবে সারা দিন গুগল করতে পারেন। অফিসে পদোন্নতির যোগ রয়েছে, তবে এর মানে হলো—আপনার ওপর চাপ আরও বাড়বে। ব্যবসায়ীরা আজ আর্থিক বিষয়ে হতাশ হতে পারেন। সন্তানদের বিষয়ে একটু সতর্ক থাকুন। আজ হয়তো তারা আপনার গোপনে জমানো চকলেট খুঁজে পেতে পারে।

তুলা

ব্যবসায় খুব বেশি লাভ দেখতে পাওয়ার যোগ রয়েছে। এই লাভকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যের আগের থেকে উন্নতি দেখা যাবে। আজকের দিনে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভদ্র থাকবেন এবং মানসিকভাবে ভারসাম্য বজায় রাখবেন। তবে সাবধান, এই ভদ্রতা যেন অতিরিক্ত বিনয়ে রূপ না নেয়। না হলে সবাই আপনাকে দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেবে। অতিরিক্ত লাভের খবর পেয়ে রাতে ঘুম ভাঙতে পারে। চিন্তা করবেন না, এটা শুধু গ্যাস।

বৃশ্চিক

আজকের দিনটি আপনার জন্য ফলপ্রসূ হতে চলেছে। তবে এই ‘ফল’ হয়তো আপনার ই-মেইল ইনবক্সে জমা হওয়া হাজারো নতুন ই-মেইলের স্তূপ! কর্মজীবনের দিক থেকে নতুন সুযোগ পেতে পারেন। এটি হতে পারে—বসের নতুন প্রজেক্ট, যা আপনি একা সামলাবেন। অর্থের দিক থেকে দিনটি শুভ, কারণ আপনি আজ বুদ্ধি করে একটি অপ্রয়োজনীয় অনলাইন শপিং অর্ডার বাতিল করবেন। অর্থের দিক থেকে শুভ, মানে আপনি আজ অন্তত এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন।

ধনু

আপনার জন্য আজ একটি শুভ দিন হতে চলেছে। এতটা শুভ যে, হয়তো সকালে উঠে জুতা পরার সময় মোজা পরতে ভুলে যাবেন। ক্যারিয়ারে লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পনা করুন। দিনের মূল প্ল্যানিং হবে, কীভাবে এই পরিকল্পনাকে আবার পরের দিনের জন্য স্থগিত করা যায়। গাড়ি চালানোর সময় অসতর্কতা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষত যখন আপনি ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের চিন্তায় মগ্ন থাকবেন। আপনার ভাগ্য আজ ভালো, শুধু নিজেকে বেশি সিরিয়াস না নিলেই হলো।

মকর

জ্যোতিষ বলছে, ‘সব জায়গায় ইতিবাচক মনোভাব দেখালে চলবে না।’ সত্যি কথা! আপনার ইতিবাচকতা দেখে অন্যরা ভয় পেতে পারে। রাস্তায় কারও সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। ঝামেলার কারণ—আপনাকে দেখিয়ে কেউ যদি ভুল করে হাসে! বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন, যেমন—সকালের নাশতায় কী খাবেন, পাউরুটি নাকি পরোটা? আপনি মানসিক চাপে ভুগতে পারেন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন। যদি দেখেন কেউ আলু-পেঁয়াজ নিয়ে তর্ক করছে, সেখানে জড়াবেন না।

কুম্ভ

শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রচুর দায়িত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে। এর মানে শুধু একটাই—আপনার ছুটি বাতিল। রাজনৈতিক কোনো কাজ করার আগে খুব ভাবনাচিন্তা করার দরকার আছে। সামনে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ আসবে, কিন্তু আপনি এমন দায়িত্বশীল যে সেই সুযোগ নিতে পারবেন না। যদিও মন চাইবে, ‘যাই হোক, একটু ফাঁকি দেওয়া যাক।’ এই দোটানা মানসিক চাপ বাড়াবে। ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ এলেও, যদি দেখেন বস আপনার দিকে তাকিয়ে হাসছেন, তবে সেই সুযোগ হাতছাড়া করুন।

মীন

আজ সৃজনশীল শক্তিতে পূর্ণ একটি দিন কাটাবেন। আপনার এই সৃজনশীলতা হয়তো কাজে লাগতে পারে—বাড়িতে ভেঙে যাওয়া দামি জিনিসটি মেরামত করার জন্য। অর্থের দিক থেকে ভাগ্যবান প্রমাণিত হতে পারেন। হয়তো পুরোনো কোনো প্যান্টের পকেটে একটি পাঁচশ টাকার নোট খুঁজে পাবেন। কেউ কোনো দায়িত্ব দিলে একেবারেই নেবেন না, কারণ এটা আপনার জন্য একটি ফাঁদ হতে পারে। আজ উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে—কারণ আপনি ওই দায়িত্বটি না নিতে পারার অপরাধবোধে ভুগবেন। দাম্পত্য জীবন শান্ত ও সুখকর থাকবে। কারণ সঙ্গী আজ আপনার সৃজনশীলতা দেখে কথা বলার সাহস পাবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত