Ajker Patrika

পিৎজার দাম ১৫ হাজার টাকা

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পিৎজাকে শুধু ইতালির খাবার বললে কমতি থেকে যায়। দেশটির ঐতিহ্যের অংশ এই খাবার। পুরো বিশ্বে পিৎজার রেসিপি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে এর উপাদান ও স্বাদেও বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে। তাই বলে যে পরিবর্তন কানাডীয় শেফ স্যাম পানাপুলোস এনেছেন, সেটি মানতে পারেনি ইতালিয়ানরা।

ঘটনার একটু বিবরণ টানা যাক। ১৯৬০ সালের দিকে স্যাম পানাপুলোস এবং তাঁর ভাই ঐতিহ্যবাহী পিৎজায় এক নতুন উপাদান যোগ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পিৎজার উপাদানের সঙ্গে যুক্ত হলো প্যাকেটজাত আনারস। এর নাম রাখা হয় হাওয়াইয়ান পিৎজা। মাসখানেকের মধ্যে এটি বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়ে গেল। প্যানোপোলাসের দাবি, তিনিই প্রথম ফল দিয়ে পিৎজা বানাতে শুরু করেন যা ১৯৬০ সালের পর কানাডায় বিখ্যাত হয়ে ওঠে।

প্যানোপোলাস এবং তাঁর ভাই কানাডার টরোন্টো থেকে দু শ নব্বই কিলোমিটার দূরে ওন্টারিওতে স্যাটেলাইট রেস্টুরেন্ট নামে একটি রেস্টুরেন্ট খুলেছিলেন। সেখানেই চাইনিজ ডিস এবং ব্রেকফাস্টের সঙ্গে এই পিৎজাও পরিবেশন করতে শুরু করেন তাঁরা। এই উদ্ভাবন যেমন ছিল চমকপ্রদ তেমনি বিতর্কিত। কিন্তু এত দিনে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় হাওয়াইয়ান পিৎজা বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে।

ইতালিয়ানদের মতে, আনারস কখনো পিৎজার অংশ হতে পারে না। শুধু ইতালিয়ানরা নয়, ইতালির পরে যেসব দেশে পিৎজা বহু বছর ধরে জনপ্রিয়, তাদের বেশির ভাগই এই আনারস পিৎজার বিরুদ্ধে। ইদানীং এই বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় এনেছে ইংল্যান্ডের নরউইচ শহরের লুপা পিৎজা।

আনারস পিৎজার দাম ১০০ পাউন্ড বা প্রায় ১৫ হাজার টাকা
যুক্তরাজ্যের নরউইচ শহরের লুপা পিৎজা তাদের মেন্যুতে যোগ করেছে আনারস পিৎজা। এর মূল্য ১০০ পাউন্ড বা প্রায় ১৫ হাজার টাকা। তবে এটি কিন্তু বিক্রির উদ্দেশে তৈরি নয়। আনারস পিৎজার বিতর্ককে আরও চাঙা করতে এমন অদ্ভুত কাজ করেছেন লুপা পিৎজার হেড শেফ কুইন জিয়ানোরান। এ ছাড়া এটি মূলত তাঁদের রেস্তোরাঁর প্রচারণার অংশ। তাঁরা চান, মানুষ যেন এটি নিয়ে আলোচনা করে এবং তাদের মেন্যুতে এই পিৎজার উপস্থিতি নিয়ে কৌতূহলী হয়। এখন পর্যন্ত এই আলোচিত আনারস পিৎজা কেউ অর্ডার করে চেখে দেখেনি। তবে অনলাইনে এর প্রতিক্রিয়া ছিল অভাবনীয়। লুপা পিৎজা জানায়, তারা স্থানীয় সংবাদপত্র ‘নরউইচ ইভনিং নিউজ’-এ একটি জরিপের ইতিবাচক ফলাফলের কারণে আনারস পিৎজা তাদের মেন্যুতে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এই জরিপে মেন্যুতে আনারস পিৎজা রাখার পক্ষে ভোট পড়েছিল ৬২ শতাংশ।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আনারস পিৎজা নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন আইসল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট
আনারস পিৎজার ঘোর বিরোধিতা করেন আইসল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট গুওনি জোহানেসন। তাঁর মতে, আইসল্যান্ড থেকে আনারস পিৎজা নিষিদ্ধ করা উচিত। এ সংবাদ দেশটির গণমাধ্যমে আসার পর বেশ আলোচনা এবং বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে নিজের ভুল বুঝতে পেরে তিনি মন্তব্য করেন, খাবার সবার ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। এটি নিষিদ্ধের ক্ষমতা তাঁর নেই।

আনারস পিৎজার পক্ষে এক ইতালিয়ান শেফ
এটি শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কারণ এই আনারস পিৎজার বিরুদ্ধে পুরো ইতালি। আর সে দেশেরই এক শেফ আছেন এর পক্ষে! কিন্তু এমনটাই হয়েছে। ইতালির বিখ্যাত পিৎজা মেকার এবং পিৎজা সরবিল্লো রেস্তোরাঁর মালিক গিনো সরবিল্লো তাঁর মেন্যুতে আনারস পিৎজা যোগ করে নতুন বিতর্কের জন্ম দেন। কিন্তু এসবের দিকে নজর না দিয়ে সরবিল্লো জানান, এটি খাবারের প্রতি পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করা। তাঁর এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল প্রথাগত খাবারের প্রতি মানুষের পক্ষপাতিত্ব এবং সামাজিক মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইতালিতে পিৎজা জাতীয় ঐতিহ্য এবং নির্দিষ্ট রেসিপির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল দীর্ঘকাল। আর আনারস পিৎজা মূলত কানাডার উদ্ভাবন। সরবিল্লো তাঁর মেন্যুতে আনারস পিৎজা যোগ করলেও ইতালীয় বিশেষত্ব রাখার চেষ্টা করেছেন।

পিৎজা প্রেমীদের কাছে আনারস পিৎজা কোনো স্বাভাবিক খাবার নয়। কারণ এটি কেবল একটি খাবার নয়, এর সঙ্গে আবেগ ও ঐতিহ্য জড়িত। কেউ এটি ভালোবেসে খায়, আবার কেউ হয়তো পছন্দই করে না। তবে এটি নিঃসন্দেহে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী খাবারের তালিকায় চিরস্থায়ী চিহ্ন রেখে গেছে।

সূত্র: সিএনএন ট্রাভেল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতের দিনে ঘরে মায়াবী সুগন্ধ আর পরিচ্ছন্নতার সহজ পাঠ

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ০৭
প্রাচীন রোমান উৎসব ‘স্যাটারনালিয়া’র সময় কমলার খোসা ও দারুচিনি পোড়ানো হতো। ছবি: পেক্সেলস
প্রাচীন রোমান উৎসব ‘স্যাটারনালিয়া’র সময় কমলার খোসা ও দারুচিনি পোড়ানো হতো। ছবি: পেক্সেলস

ঘরকে পরিপাটি রাখার জন্য বেশ কিছু বিষয়ের ওপরে নজর থাকতে হয়। ধুলা মোছা থেকে শুরু করে জায়গা বুঝে আসবাব রাখা পর্যন্ত সবকিছু। এর সঙ্গে একটি বিশেষ দিকে খেয়াল রাখতে হয়, তা হলো ঘরের বাতাসে যেন কোনো দুর্গন্ধ না থাকে। আর সে জন্য অনেকে ব্যবহার করেন বিভিন্ন স্প্রে। আবার কেউ কেউ প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরের বাতাসে একটা সুবাতাস নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এটি শুধু সেই ঘরে উপস্থিত মানুষকে আরাম দেয় এমন না। বিষয়টি সরাসরি রোগব্যাধি ও জীবাণুর থাকা না থাকার সঙ্গেও সম্পর্কিত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসের একটি প্রাচীন ধারণা থেকে এই বিষয়ে একটা বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যায়। আর সেই ধারণাকে বলা হয় মিয়াজমা তত্ত্ব।

মিয়াজমা তত্ত্ব কী

মিয়াজমা তত্ত্ব অনুযায়ী বিশ্বাস করা হতো যে রোগব্যাধি কোনো জীবাণু থেকে নয়, বরং পচা বা দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস থেকে ছড়ায়। এই তত্ত্ব ১৯০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রচলিত ছিল।’ মিয়াজমা’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে। যার অর্থ দূষণ বা কলুষতা। তখনকার মানুষ বিশ্বাস করত যে পচা জৈব পদার্থ, আবর্জনা বা মৃত প্রাণীর পচা গন্ধ থেকে এক ধরনের বিষাক্ত কুয়াশা বা বাতাস তৈরি হয়। এই খারাপ বাতাস বা দুর্গন্ধ যখন মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে, তখন সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। যেহেতু বিশ্বাস করা হতো যে দুর্গন্ধই রোগ ছড়ায়, তাই মানুষ এর প্রতিকার হিসেবে কিছু ব্যবস্থা নিত। এর জন্য সুগন্ধির ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ভেন্টিলেশনের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করা হয়।

উপাদান ও প্রাচীন বিশ্বাস

প্রাচীন রোমান উৎসব ‘স্যাটারনালিয়া’র সময় কমলার খোসা ও দারুচিনি পোড়ানো হতো। মূল্যবান ফল কমলা ছিল সমৃদ্ধির প্রতীক, আর এর সুগন্ধ ঘরের দুর্গন্ধ ঢেকে দিত দ্রুত। শীতের দিনে ঘরের পরিবেশ আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর করতে আপনিও এই প্রাচীন পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। এর জন্য একটি পাত্রে অর্ধেক পানি নিন। তাতে পাতলা করে কাটা কমলালেবু বা লেবু এবং দু-টুকরো দারুচিনি দিন। ২০ মিনিট মাঝারি আঁচে ফুটিয়ে শেষে কয়েক ফোঁটা ভ্যানিলা ওয়েল মিশিয়ে দিন। এই সুগন্ধ আপনার ঘরের পর্দা ও বিছানায় মিশে গিয়ে এক অদ্ভুত উষ্ণতা ছড়িয়ে দেবে। দারুচিনি এবং কমলার তেলের অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য বাতাসের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এটি হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে বর্তমানের এক সেতুবন্ধ তৈরি করবে। এ ছাড়া মিষ্টি ও মসলাযুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য ভ্যানিলা, ক্যারামেল এবং মধুর মিশ্রণে তৈরি করে নিতে পারেন সুগন্ধি যা শীতকালে অসম্ভব জনপ্রিয়। এটি কেবল উষ্ণতাই দেয় না, মনে এক ধরনের স্বস্তি আনে।

শীতে মানুষ ঘরের দরজা-জানালা বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখে। আর সেখান থেকেই ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে পারে অস্বস্তি। ছবি: পেক্সেলস
শীতে মানুষ ঘরের দরজা-জানালা বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখে। আর সেখান থেকেই ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে পারে অস্বস্তি। ছবি: পেক্সেলস

অস্বস্তিকর গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে

অতীতের ইউরোপে তীব্র শীত থেকে বাঁচতে ঘরের ভেতরে গবাদিপশু রাখা হতো। এতে পশুদের শরীরের তাপে ঘর গরম থাকত ঠিকই, কিন্তু বদ্ধ পরিবেশে তীব্র দুর্গন্ধ তৈরি হতো। তৎকালে চিকিৎসাবিদ্যা মিয়াজমা তত্ত্ব অনুযায়ী বিশ্বাস করা হতো যে এই দুর্গন্ধই হলো সব রোগের মূল কারণ। তাই বাতাসকে ‘শুদ্ধ’ করতে সুগন্ধি ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। ইউরোপিয়ানদের মতো শীত না পড়লেও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বেশ শীতের প্রকোপ খেয়াল করা যায়। এই শীতে মানুষ ঘরের দরজা-জানালা বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখে। আর সেখান থেকেই ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে পারে অস্বস্তি। ঘরে মেহমান আসার আগে যদি বিস্কুট বা কেক তৈরি করেন, তবে সেই মিষ্টি সুগন্ধ পুরো বাড়িতে আভিজাত্যের ছোঁয়া দেবে। এমনই কিছু টিপস থেকে ২০২৬ সালে আপনার প্রিয় ঘরটিকে সব সময় ফ্রেশ রাখতে পারেন।

আর্দ্রতা বা ময়শ্চার নিয়ন্ত্রণ করুন

ঘরের দুর্গন্ধের প্রধান কারণ হলো আর্দ্রতা। ভেজা তোয়ালে ভালোমতো শুকিয়ে ভাঁজ করুন। ডিশ স্পঞ্জ প্রতি এক-দুই সপ্তাহে বদলে ফেলুন। বাথরুমে কার্পেট বা ম্যাট এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো আর্দ্রতা ধরে রাখে। কার্পেট, সোফার কুশন বা পর্দা দুর্গন্ধের ম্যাগনেট হিসেবে কাজ করে। কার্পেটে বেকিং পাউডার ছিটিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে ভ্যাকিউম করুন। এটি গভীর থেকে দুর্গন্ধ শুষে নেবে। বছরে অন্তত একবার কার্পেট ও সোফা স্টিম ক্লিন করান।

ঘরকে সতেজ রাখতে জেসমিন, রোজ বা ল্যাভেন্ডার গাছ রাখতে পারেন। ছবি: পেক্সেলস
ঘরকে সতেজ রাখতে জেসমিন, রোজ বা ল্যাভেন্ডার গাছ রাখতে পারেন। ছবি: পেক্সেলস

ডাস্টবিন ও পোষা প্রাণীর দিকে খেয়াল রাখুন

বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে তাদের ডাস্টবিন বা লিটার বক্সের গন্ধে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। তাই নিয়মিত ডাস্টবিনের ভেতরটা ঢাকনাসহ পরিষ্কার করুন। গন্ধ শুষে নিতে বালতির নিচে কিছুটা ‘কিটি লিটার’ বা বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিতে পারেন। বড় বিনের বদলে ছোট ডাস্টবিন ব্যবহার করুন যাতে প্রতিদিন ময়লা ফেলতে আপনি বাধ্য হন।

ফ্রিজ পরিষ্কারের ম্যাজিক

মাসে অন্তত একবার ফ্রিজের সবকিছু চেক করুন। মেয়াদোত্তীর্ণ সস বা পুরোনো বেঁচে যাওয়া খাবার ফেলে দিন। ফ্রিজের ভেতরটা পরিষ্কার করতে ভিনেগার ও গরম জলের মিশ্রণ ব্যবহার করুন। ফ্রিজের পেছনে একটি তুলার বলে ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্ট ভিজিয়ে রেখে দিন, এতে চমৎকার সুগন্ধ ছড়াবে।

বাতাস চলাচলের সুযোগ দিন

সবচেয়ে সহজ উপায় হলো জানালা খুলে দেওয়া। শীতের কারণে এখন অনেকেই ঘরের জানালা বন্ধ রাখেন। কিন্তু এতে ঘরের মধ্যে একধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়। রান্নার গন্ধ বা ঘরের ভ্যাপসা ভাব কাটাতে জানালা খুলে দিলে ক্রস-ব্রিজ তৈরি হয়, যা নিমেষেই মন ভালো করে দেয়।

গাছ ও ফুলের ব্যবহার

ঘরকে সতেজ রাখতে জেসমিন, রোজ বা ল্যাভেন্ডার গাছ রাখতে পারেন। জানালার পাশে পুদিনা বা রোজমেরি গাছ থাকলে ঘর এমনিতেই ফ্রেশ থাকে।

ড্রেন ও টয়লেট পরিষ্কার

সিঙ্ক বা শাওয়ারের ড্রেনে জমে থাকা চুল বা সাবানের ময়লা থেকে দুর্গন্ধ আসে। মাসে অন্তত দুবার ভিনেগার ও বেকিং সোডা দিয়ে ড্রেন পরিষ্কার করুন। টয়লেটের শুধু প্যান নয়, ট্যাঙ্কের ভেতরের ময়লাও স্ক্রাব করে পরিষ্কার রাখুন।

সূত্র: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ, বিজনেস ইনসাইডার, রিয়্যাল সিম্পিল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১০ মিনিটের ধ্যানে কমাতে পারে মানসিক চাপ

ফিচার ডেস্ক
ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

বর্তমান জীবনে মানসিক চাপ প্রায় সবার নিত্যসঙ্গী। কাজের চাপ, দ্রুত যোগাযোগ, পারিবারিক দায়িত্ব এবং সারাক্ষণ মোবাইল ও স্ক্রিনের সঙ্গে থাকা। সব মিলিয়ে আমরা অনেক সময় নিজের জন্য এক মুহূর্তও থামতে পারি না। এর ফল হিসেবে দেখা দেয় অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, মনোযোগের অভাব এবং ঘুমের সমস্যা। এই অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন অল্প সময় ধ্যান করলেই মানসিক চাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

ধ্যান কী এবং কেন এটি সহজ

অনেকেই মনে করেন ধ্যান মানে কঠিন কিছু। বিশেষ ভঙ্গিতে বসতে হয় বা জটিল নিয়ম মেনে চলতে হয়। আসলে বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। ধ্যান খুবই সহজ একটি মানসিক অনুশীলন। ধ্যান বলতে মূলত নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং বর্তমান মুহূর্তে নিজেকে স্থির রাখাকেই বোঝায়। এই সময় কোনো কিছু জোর করে ভাবার দরকার নেই, আবার সব চিন্তা বন্ধ করার চেষ্টাও করতে হয় না। শুধু শান্তভাবে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার দিকে মন দিলেই ধ্যান শুরু হয়ে যায়। ধ্যান করতে কোনো যন্ত্রপাতি লাগে না, বিশেষ পোশাকের প্রয়োজন হয় না এবং এর জন্য আলাদা কোনো খরচও নেই। বয়স, জায়গা বা সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ব্যস্ত জীবনের মাঝেও কয়েক মিনিট সময় বের করে নেওয়া সম্ভব বলেই ধ্যান আজকের দিনে মানসিক চাপ কমানোর একটি সহজ ও কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

কীভাবে উপকার পাওয়া যায়

অনেকে ভাবেন ধ্যান করতে হলে অনেক সময় দরকার। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত অল্প সময়ই সবচেয়ে কাজে দেয়। ২০২৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করে। ধ্যান আমাদের জীবনের গতি একটু কমিয়ে দেয়। এতে আমরা শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পাই, চিন্তাগুলো পরিষ্কার করতে পারি এবং মানসিকভাবে নতুন শক্তি ফিরে পাই। এই ছোট বিরতিই মস্তিষ্ককে চাপ সামলাতে সাহায্য করে।

ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

সকালে ধ্যান করলে কেন বেশি লাভ

দিনের শুরুটা যেমন হয়, অনেক সময় পুরো দিনটাই তেমন কাটে। সকালে মাত্র ১০ মিনিট ধ্যান করলে মন শান্ত থাকে এবং অকারণ দুশ্চিন্তা কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধ্যানের সময় সচেতনভাবে শ্বাস নেওয়ার ফলে শরীরের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমে। এর প্রভাব সারা দিন থাকে। নিয়মিত সকালে ধ্যান করলে ধীরে ধীরে শান্ত থাকা মানুষের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়।

ধ্যান ও মনোযোগের সম্পর্ক

বর্তমানে অনেকে মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যায় ভোগেন। পড়াশোনা বা কাজে বসলে মন স্থির থাকে না, অল্প সময়ের মধ্যেই চিন্তা অন্যদিকে চলে যায়। নানা দুশ্চিন্তা আর কাজের চাপের কারণে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ধ্যান করলে মস্তিষ্কের মনোযোগ ধরে রাখা, চিন্তাভাবনা করা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার অংশ সক্রিয় হয়। এর ফলে বিভ্রান্তি কমে, মাথার ভেতরের অগোছালো চিন্তাগুলো ধীরে ধীরে দূর হতে থাকে। ধ্যানের অভ্যাস গড়ে উঠলে কাজে মন বসানো সহজ হয়, দীর্ঘ সময় একাগ্রতা বজায় থাকে এবং কাজের মান ও দক্ষতা দুটোই বাড়ে।

ধ্যান শুরু করবেন কীভাবে

ধ্যান শুরু করতে কোনো বিশেষ জ্ঞান বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। আরাম করে বসে বা শুয়ে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার দিকে মন দিলেই যথেষ্ট। মনে অন্য চিন্তা এলে বিরক্ত না হয়ে আবার শ্বাসের দিকে মন ফেরাতে হয়। প্রতিদিন নিয়ম করে মাত্র ১০ মিনিট সময় দিলেই ধীরে ধীরে এর সুফল বোঝা যায়।

ধ্যান কোনো জাদু নয়, আবার জটিল কিছুই নয়। ব্যস্ত জীবনের মাঝেও প্রতিদিন নিজের জন্য ১০ মিনিট সময় বের করে নেওয়াই হতে পারে মানসিক চাপ কমানো, মন শান্ত রাখা এবং সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনে ফেরার একটি সহজ উপায়।

সূত্র: হেলথশট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বর্ষবরণের পানীয় হোক স্ট্রবেরি লেমোনেড

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২০
ছবি: মরিয়ম হোসেন নূপুর।
ছবি: মরিয়ম হোসেন নূপুর।

নতুন বছর বরণ করার সময় চলে এসেছে। রাত ১২টার ঘণ্টা জানান দেবে ২০২৬-এর আগমন। বছরের প্রথম দিনে জম্পেশ খাওয়াদাওয়া তো হবেই। এসব খাবারের পাশাপাশি রাখতে পারেন স্ট্রবেরি দিয়ে তৈরি লাল পানীয়। আপনাদের জন্য স্ট্রবেরি লেমোনেডের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী মরিয়ম হোসেন নূপুর

উপকরণ

স্ট্রবেরি ২টি, পানি ১/৪ কাপ, লেবুর রস ২ চা চামচ, সোডা ওয়াটার ৩/৪ কাপ, সুগার সিরাপ ২ চা চামচ, পুদিনা পাতা ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি

স্ট্রবেরি পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিতে হবে। একটি গ্লাসে পুদিনা পাতা দিয়ে একটু থেঁত করে নিয়ে এরপর এতে লেবুর রস, ছেঁকে রাখা স্ট্রবেরি জুস এবং সুগার সিরাপ মিশিয়ে নিতে হবে। পরিবেশনের আগে সোডা ওয়াটার মিশিয়ে নিতে হবে। সবশেষে লেবুর টুকরা এবং বরফ দিয়ে পরিবেশন করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেনাকাটার আসক্তি দূর করবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক
ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

কেনাকাটা করতে সবাই ভালোবাসে। নতুন জামা, দরকারি জিনিস বা পছন্দের কিছু কিনলে মন ভালো হয়, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন কেউ প্রয়োজন না থাকলেও বা টাকা নেই জেনেও বারবার কেনাকাটা করতে থাকে, তখন সেটি আর শখ থাকে না। তখন সেটি কেনাকাটার আসক্তিতে পরিণত হয়।

এই সমস্যা মানুষ বুঝতে পারে। কেনাকাটা করা ঠিক হচ্ছে না জেনেও নিজেকে থামাতে পারে না। ধীরে ধীরে এতে আর্থিক চাপ, ঋণ আর মানসিক অশান্তি বাড়তে থাকে।

কেনাকাটার আসক্তি আসলে কী?

কিছু কিনলে হঠাৎ আনন্দ অনুভব করেন অনেকে। সেই আনন্দ আবার পেতে বারবার কেনাকাটা করা একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়। কেউ নির্দিষ্ট জিনিসে আসক্ত হয় যেমন জামাকাপড়, গয়না, মোবাইল বা প্রসাধনী। আবার কেউ যা চোখে পড়ে তাই কিনে ফেলে। যেমন খাবার, অপ্রয়োজনীয় জিনিস, এমনকি জমি বা শেয়ারও।

অনেক সময় মানসিক চাপ, দুঃখ, একাকিত্ব বা রাগ থেকে মুক্তি পেতেই মানুষ কেনাকাটার দিকে ঝোঁকে। কিন্তু কেনাকাটার আনন্দটা খুব অল্প সময়ের হয়। পরে আফসোস হয় এবং ঋণের বোঝা বাড়ে।

ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

কী কী লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন?

  • কেনাকাটার আসক্তি অনেক সময় গোপন থাকে। বাইরে থেকে বোঝা নাও যেতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে—
  • প্রায়ই কেনাকাটার চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে
  • মন খারাপ বা চাপের সময় বাজারে ঢুকে পড়া
  • প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও জিনিস কেনা
  • কেনা জিনিস ব্যবহার না করেই পড়ে থাকা
  • ক্রেডিট কার্ডের সীমা বারবার শেষ হয়ে যাওয়া
  • পুরোনো ঋণ শোধ না করেই নতুন কার্ড নেওয়া
  • কেনাকাটার পর অল্প সময় খুব আনন্দ পাওয়া
  • পরে অনুশোচনা হওয়া, কিন্তু আবার একই কাজ করা
  • টাকা বা কেনাকাটার কথা লুকানো, মিথ্যা বলা
  • বারবার চেষ্টা করেও কেনাকাটা কমাতে না পারা

এই লক্ষণগুলো দীর্ঘদিন চললে সেটি গুরুতর সমস্যায় রূপ নিতে পারে।

ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

এর সমাধান কী?

কেনাকাটা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। কারণ, জীবনের জন্য কেনাকাটা দরকার। তাই সমাধান হলো নিয়ন্ত্রণ শেখা।

  • অনেক ক্ষেত্রে শুরুতে—
  • কার্ড বা নগদ টাকার ব্যবহার সীমিত করা
  • পরিবারের কাউকে সাময়িকভাবে টাকা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া

খুব কাজে আসে কাউন্সেলিং বা আচরণগত থেরাপি।

থেরাপির মাধ্যমে মানুষ শেখে—

  • হঠাৎ কেনাকাটার ইচ্ছা কীভাবে থামাতে হয়
  • কোন পরিস্থিতিতে কেনাকাটা করতে মন চায় তা চিনতে
  • কেনাকাটার বদলে চাপ সামলানোর নতুন উপায়
  • সমস্যার পেছনে লুকানো মানসিক কষ্ট বুঝতে

সহায়তা কোথায় পাওয়া যায়?

অনেক দেশে এবং অনলাইনে কেনাকাটার নেশা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন ধরনের সহায়তা ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি মানুষকে আয়-ব্যয়ের হিসাব করা, বাজেট তৈরি করা এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়। পাশাপাশি পুনরুদ্ধার প্রোগ্রাম রয়েছে, যেখানে একই সমস্যায় ভোগা মানুষ একে অপরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। এতে একাকিত্ব কমে এবং মানসিক সাহস পাওয়া যায়। আর যদি ঋণের পরিমাণ খুব বেশি হয়ে যায়, তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে ঋণ পরামর্শক সংস্থা বা অভিজ্ঞ আর্থিক পরামর্শকের সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে।

ভবিষ্যৎ কী?

যদি সময়মতো সাহায্য নেওয়া যায়, তাহলে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব। মাঝেমধ্যে আবার পুরোনো অভ্যাস ফিরে আসতে পারে, এটা স্বাভাবিক। তবে সঠিক সহায়তা থাকলে আবার নিয়ন্ত্রণে ফেরা যায়।

কেনাকাটার আসক্তি ধীরে ধীরে মানুষকে ঋণ, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের দিকে নিয়ে যায়। শুরুতে বিষয়টি তেমন গুরুতর মনে না হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। তবে সচেতনতা, পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তা এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিলে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে এসে আবার সুস্থ, নিয়ন্ত্রিত ও শান্ত জীবনে ফিরে আসা সম্ভব।

সূত্র: হেলথলাইন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত