কারবালা
মুফতি আবুল ফাতাহ কাসেমী

কারবালা ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রান্তর, যেখানে ৬১ হিজরির মহররম মাসের ১০ তারিখে নবীনন্দিনী হজরত ফাতেমা (রা.)-এর আদরের দুলাল ইমাম হুসাইন (রা.) অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। কারবালার ঘটনা ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এ ট্র্যাজেডির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে যে ক্ষত হয়েছে, তা যুগ যুগ ধরে নবীপ্রেমিক মুসলিমদের কাঁদিয়ে যাচ্ছে।
কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাস হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল। আর এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল ইয়াজিদকে খলিফা নিযুক্ত করার মাধ্যমে। হজরত মুআবিয়া (রা.) তাঁর জীবনের শেষ সময়ে তিনি পরবর্তী খলিফা কাকে নিযুক্ত করবেন এ বিষয়ে তৎকালীন বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িনদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কিছু সাহাবির পরামর্শ ছিল তাঁর পুত্র ইয়াজিদের দিকে, আবার আবদুল্লাহ ইবনে উমর, আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর, সাইয়েদুনা ইমাম হুসাইন, আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর প্রমুখের মতো প্রাজ্ঞ সাহাবিদের মত ছিল ভিন্ন। এ দুই পরামর্শের মধ্যে হজরত মুআবিয়া প্রথমটি গ্রহণ করেন। তবে ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ-বিষয়ক নিয়মে তিনি বিপরীত মতের সাহাবিদের সঙ্গে নরম ও ইনসাফ কায়েম করার আদেশও দেন। এবং মৃত্যুর পূর্বে হজরত মুআবিয়া (রা.) এ বিষয়ে তাঁর ছেলে ইয়াজিদকে বিশেষ অসিয়তও করে যান।
৬০ হিজরিতে হজরত মুআবিয়া (রা.) ইন্তেকাল করলে ইয়াজিদ শাসনভার গ্রহণ করে। এরপর সে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে উয়াইসের মাধ্যমে সবার কাছে নিয়ম অনুযায়ী বাইয়াতের নির্দেশ দেয়। অপর দিকে আগে থেকেই কুফার গভর্নর ছিলেন নুমান ইবনে বাশির। মুআবিয়ার ইন্তেকালের পর কুফার জনগণ তার আনুগত্য থেকে বিরত থেকে হজরত হুসাইনের আনুগত্য করা ও তাঁর অধীনে চলার জন্য বিভিন্ন চিঠির মাধ্যমে তাঁকে কুফায় আসার আমন্ত্রণ জানান। কুফায় যাওয়ার বিষয়ে হুসাইন (রা.) তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে আলাপ করলে আবদুল্লাহ ইবনে উমরসহ অনেকেই তাঁকে কুফায় না যাওয়ার পরামর্শ দেন। কেননা ইতিপূর্বে তাঁর বাবা হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদাতের পেছনে কুফাবাসীর হাত ছিল। কুফার লোকজন ওয়াদা রক্ষা করে না। তাঁর ভাইকেও আহত করেছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসও হজরত হুসাইনকে কুফায় সফর করতে নিষেধ করেন। তাঁর ভাই মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়াও তাঁকে নিষেধ করেছিলেন।
কিন্তু হজরত হুসাইন (রা.) ইজতিহাদ করে মনে করলেন ইয়াজিদ খলিফা হওয়ার উপযুক্ত নয়, তাই তিনি কুফার লোকজনের কথার ওপর ভরসা করে কুফায় যাওয়ার মনস্থ করেন। এ সময় কুফার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য তিনি তাঁর চাচাতো ভাই ও ভগ্নিপতি মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফায় প্রেরণ করেন। মুসলিম ইবনে আকিল কুফায় গেলে প্রায় ১২ হাজার কুফার বাসিন্দা তাঁর হাতে বাইয়াত হন এবং ইমাম হুসাইনকে (রা.) আসার জন্য তাঁর কাছে আবেদন করেন। পরে মুসলিম ইবনে আকিল চিঠি পাঠালে হজরত হুসাইন কুফায় রওনা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন।
শামের বাদশাহ ইয়াজিদ ইবনে মুআবিয়া দেখল, নুমান ইবনে বাশির কুফায় আসা মুসলিম ইবনে আকিলের প্রতি তেমন কঠোর না। তাই তাকে বরখাস্ত করে বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে কুফা ও বসরা উভয় এলাকায় গভর্নর বানায়। এরপর ইয়াজিদের পক্ষ থেকে মুসলিম ইবনে আকিলকে দ্রুত পাকড়াও করার নির্দেশ দেওয়া হয়। উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ খোঁজখবর নিয়ে মুসলিম ইবনে আকিলকে পেয়ে শহীদ করে।
এদিকে হজরত হুসাইন (রা.) ৬০ হিজরিতে হজের এক দিন আগে কাফেলাসহ কুফার উদ্দেশে রওনা করেন। তিনি কাদেসিয়া নামক স্থানে এলে মুসলিম ইবনে আকিলের শাহাদাতের খবর শুনিয়ে হুর ইবনে ইয়াজিদ তামিমি তাঁকে কুফায় যেতে বারণ করেন। কিন্তু সে কাফেলায় থাকা মুসলিমের ভাই হজরত হুসাইনকে (রা.) মক্কায় ফিরে যেতে নিরুৎসাহিত করেন। এ ছাড়া তিনিও আত্মসম্মানের কারণে আগের সিদ্ধান্তে বহাল থাকেন। কাফেলায় তখন ৪৫ জন অশ্বারোহী এবং ১০০-র মতো পায়দল সফরকারী ছিলেন। রওনা হতে হতে ইতিমধ্যে তিনি ইরাকের ফুরাত নদীর কারবালা প্রান্তরে এসে পৌঁছান। এখানে ইয়াজিদ বাহিনীর পক্ষে ছিলেন আমর ইবনে সাদ। উভয়ে সামনাসামনি হলে এবং হজরত হুসাইন (রা.)-এর বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললে তিনি আমর ইবনে সাদের সামনে তিনটি প্রস্তাব রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো যুদ্ধ করতে আসিনি, এমনকি ক্ষমতা দখলও আমার উদ্দেশ্য নয়। তোমরা আমাকে ডেকেছ বলে আমি এসেছি। এখন তোমরা কুফাবাসীরাই তোমাদের বাইয়াত পরিত্যাগ করছ। তাহলে আমাদের যেতে দাও, আমরা মদিনায় ফিরে যাই অথবা সীমান্তে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। অন্যথায় ইয়াজিদের কাছে গিয়ে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করি।’ কিন্তু হজরত হুসাইন (রা.)-কে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দেয় উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ। ঘৃণাভরে এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন ইমাম হুসাইন (রা.)।
মহররমের ১০ তারিখে সকাল থেকে উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের নেতৃত্বে প্রায় ৪ হাজার ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন (রা.)-এর ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে। ইমাম হুসাইন (রা.) সঙ্গীদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন। এ লড়াইয়ে একমাত্র ছেলে হজরত জয়নুল আবেদিন (রহ.) ছাড়া পরিবারের শিশু, কিশোর, নারীসহ সবাই একে একে শাহাদাতবরণ করেন। শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত নির্মম ও নির্দয়ভাবে ইমাম হুসাইন (রা.)-কে শহীদ করা হয়। সীমার নামক এক পাপিষ্ঠ নবীজির আদরের ফুল, হজরত ফাতেমার আদরের দুলাল, জান্নাতের যুবকদের সরদার হজরত হুসাইন (রা.)-এর মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ ছিল ইতিহাসের নির্মম এক অধ্যায়।
ইয়াজিদের এ ক্ষমতা বেশি দিন টিকে থাকেনি। মাত্র চার বছরের মধ্যে ইয়াজিদের মৃত্যু হয়। এর কয়েক দিনের মধ্যে মৃত্যু হয় তার পুত্রের। কারবালার এ মর্মান্তিক হত্যায় জড়িত প্রতিটি ব্যক্তি কয়েক বছরের মধ্যেই মুখতার সাকাফির বাহিনীর হাতে লজ্জাজনকভাবে নিহত হয়। এরপর ইয়াজিদের বংশের কেউ শাসনক্ষমতা লাভ করেনি। হজরত হুসাইন (রা.) আজও সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক হয়ে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়রাজ্যে বেঁচে আছেন। প্রতিটি মুমিন বিশ্বাস করে—কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা.)-এর প্রাণ বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সেদিন বিজয় হয়েছিল সত্যের, বিজয় হয়েছিল ইমানের।
তথ্যসূত্র: ওয়াকেয়া কারবালা আওর উসকা পসে মানজর, সিরাতে হাসনাইন শারিফাইন
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাসেম নানুতবী ঢাকা; খতিব, আয়েশা মসজিদ রামপুরা, ঢাকা।

কারবালা ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রান্তর, যেখানে ৬১ হিজরির মহররম মাসের ১০ তারিখে নবীনন্দিনী হজরত ফাতেমা (রা.)-এর আদরের দুলাল ইমাম হুসাইন (রা.) অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। কারবালার ঘটনা ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এ ট্র্যাজেডির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে যে ক্ষত হয়েছে, তা যুগ যুগ ধরে নবীপ্রেমিক মুসলিমদের কাঁদিয়ে যাচ্ছে।
কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাস হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল। আর এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল ইয়াজিদকে খলিফা নিযুক্ত করার মাধ্যমে। হজরত মুআবিয়া (রা.) তাঁর জীবনের শেষ সময়ে তিনি পরবর্তী খলিফা কাকে নিযুক্ত করবেন এ বিষয়ে তৎকালীন বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িনদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কিছু সাহাবির পরামর্শ ছিল তাঁর পুত্র ইয়াজিদের দিকে, আবার আবদুল্লাহ ইবনে উমর, আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর, সাইয়েদুনা ইমাম হুসাইন, আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর প্রমুখের মতো প্রাজ্ঞ সাহাবিদের মত ছিল ভিন্ন। এ দুই পরামর্শের মধ্যে হজরত মুআবিয়া প্রথমটি গ্রহণ করেন। তবে ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ-বিষয়ক নিয়মে তিনি বিপরীত মতের সাহাবিদের সঙ্গে নরম ও ইনসাফ কায়েম করার আদেশও দেন। এবং মৃত্যুর পূর্বে হজরত মুআবিয়া (রা.) এ বিষয়ে তাঁর ছেলে ইয়াজিদকে বিশেষ অসিয়তও করে যান।
৬০ হিজরিতে হজরত মুআবিয়া (রা.) ইন্তেকাল করলে ইয়াজিদ শাসনভার গ্রহণ করে। এরপর সে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে উয়াইসের মাধ্যমে সবার কাছে নিয়ম অনুযায়ী বাইয়াতের নির্দেশ দেয়। অপর দিকে আগে থেকেই কুফার গভর্নর ছিলেন নুমান ইবনে বাশির। মুআবিয়ার ইন্তেকালের পর কুফার জনগণ তার আনুগত্য থেকে বিরত থেকে হজরত হুসাইনের আনুগত্য করা ও তাঁর অধীনে চলার জন্য বিভিন্ন চিঠির মাধ্যমে তাঁকে কুফায় আসার আমন্ত্রণ জানান। কুফায় যাওয়ার বিষয়ে হুসাইন (রা.) তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে আলাপ করলে আবদুল্লাহ ইবনে উমরসহ অনেকেই তাঁকে কুফায় না যাওয়ার পরামর্শ দেন। কেননা ইতিপূর্বে তাঁর বাবা হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদাতের পেছনে কুফাবাসীর হাত ছিল। কুফার লোকজন ওয়াদা রক্ষা করে না। তাঁর ভাইকেও আহত করেছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসও হজরত হুসাইনকে কুফায় সফর করতে নিষেধ করেন। তাঁর ভাই মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়াও তাঁকে নিষেধ করেছিলেন।
কিন্তু হজরত হুসাইন (রা.) ইজতিহাদ করে মনে করলেন ইয়াজিদ খলিফা হওয়ার উপযুক্ত নয়, তাই তিনি কুফার লোকজনের কথার ওপর ভরসা করে কুফায় যাওয়ার মনস্থ করেন। এ সময় কুফার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য তিনি তাঁর চাচাতো ভাই ও ভগ্নিপতি মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফায় প্রেরণ করেন। মুসলিম ইবনে আকিল কুফায় গেলে প্রায় ১২ হাজার কুফার বাসিন্দা তাঁর হাতে বাইয়াত হন এবং ইমাম হুসাইনকে (রা.) আসার জন্য তাঁর কাছে আবেদন করেন। পরে মুসলিম ইবনে আকিল চিঠি পাঠালে হজরত হুসাইন কুফায় রওনা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন।
শামের বাদশাহ ইয়াজিদ ইবনে মুআবিয়া দেখল, নুমান ইবনে বাশির কুফায় আসা মুসলিম ইবনে আকিলের প্রতি তেমন কঠোর না। তাই তাকে বরখাস্ত করে বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে কুফা ও বসরা উভয় এলাকায় গভর্নর বানায়। এরপর ইয়াজিদের পক্ষ থেকে মুসলিম ইবনে আকিলকে দ্রুত পাকড়াও করার নির্দেশ দেওয়া হয়। উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ খোঁজখবর নিয়ে মুসলিম ইবনে আকিলকে পেয়ে শহীদ করে।
এদিকে হজরত হুসাইন (রা.) ৬০ হিজরিতে হজের এক দিন আগে কাফেলাসহ কুফার উদ্দেশে রওনা করেন। তিনি কাদেসিয়া নামক স্থানে এলে মুসলিম ইবনে আকিলের শাহাদাতের খবর শুনিয়ে হুর ইবনে ইয়াজিদ তামিমি তাঁকে কুফায় যেতে বারণ করেন। কিন্তু সে কাফেলায় থাকা মুসলিমের ভাই হজরত হুসাইনকে (রা.) মক্কায় ফিরে যেতে নিরুৎসাহিত করেন। এ ছাড়া তিনিও আত্মসম্মানের কারণে আগের সিদ্ধান্তে বহাল থাকেন। কাফেলায় তখন ৪৫ জন অশ্বারোহী এবং ১০০-র মতো পায়দল সফরকারী ছিলেন। রওনা হতে হতে ইতিমধ্যে তিনি ইরাকের ফুরাত নদীর কারবালা প্রান্তরে এসে পৌঁছান। এখানে ইয়াজিদ বাহিনীর পক্ষে ছিলেন আমর ইবনে সাদ। উভয়ে সামনাসামনি হলে এবং হজরত হুসাইন (রা.)-এর বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললে তিনি আমর ইবনে সাদের সামনে তিনটি প্রস্তাব রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো যুদ্ধ করতে আসিনি, এমনকি ক্ষমতা দখলও আমার উদ্দেশ্য নয়। তোমরা আমাকে ডেকেছ বলে আমি এসেছি। এখন তোমরা কুফাবাসীরাই তোমাদের বাইয়াত পরিত্যাগ করছ। তাহলে আমাদের যেতে দাও, আমরা মদিনায় ফিরে যাই অথবা সীমান্তে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। অন্যথায় ইয়াজিদের কাছে গিয়ে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করি।’ কিন্তু হজরত হুসাইন (রা.)-কে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দেয় উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ। ঘৃণাভরে এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন ইমাম হুসাইন (রা.)।
মহররমের ১০ তারিখে সকাল থেকে উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের নেতৃত্বে প্রায় ৪ হাজার ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন (রা.)-এর ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে। ইমাম হুসাইন (রা.) সঙ্গীদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন। এ লড়াইয়ে একমাত্র ছেলে হজরত জয়নুল আবেদিন (রহ.) ছাড়া পরিবারের শিশু, কিশোর, নারীসহ সবাই একে একে শাহাদাতবরণ করেন। শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত নির্মম ও নির্দয়ভাবে ইমাম হুসাইন (রা.)-কে শহীদ করা হয়। সীমার নামক এক পাপিষ্ঠ নবীজির আদরের ফুল, হজরত ফাতেমার আদরের দুলাল, জান্নাতের যুবকদের সরদার হজরত হুসাইন (রা.)-এর মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ ছিল ইতিহাসের নির্মম এক অধ্যায়।
ইয়াজিদের এ ক্ষমতা বেশি দিন টিকে থাকেনি। মাত্র চার বছরের মধ্যে ইয়াজিদের মৃত্যু হয়। এর কয়েক দিনের মধ্যে মৃত্যু হয় তার পুত্রের। কারবালার এ মর্মান্তিক হত্যায় জড়িত প্রতিটি ব্যক্তি কয়েক বছরের মধ্যেই মুখতার সাকাফির বাহিনীর হাতে লজ্জাজনকভাবে নিহত হয়। এরপর ইয়াজিদের বংশের কেউ শাসনক্ষমতা লাভ করেনি। হজরত হুসাইন (রা.) আজও সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক হয়ে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়রাজ্যে বেঁচে আছেন। প্রতিটি মুমিন বিশ্বাস করে—কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা.)-এর প্রাণ বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সেদিন বিজয় হয়েছিল সত্যের, বিজয় হয়েছিল ইমানের।
তথ্যসূত্র: ওয়াকেয়া কারবালা আওর উসকা পসে মানজর, সিরাতে হাসনাইন শারিফাইন
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাসেম নানুতবী ঢাকা; খতিব, আয়েশা মসজিদ রামপুরা, ঢাকা।
কারবালা
মুফতি আবুল ফাতাহ কাসেমী

কারবালা ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রান্তর, যেখানে ৬১ হিজরির মহররম মাসের ১০ তারিখে নবীনন্দিনী হজরত ফাতেমা (রা.)-এর আদরের দুলাল ইমাম হুসাইন (রা.) অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। কারবালার ঘটনা ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এ ট্র্যাজেডির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে যে ক্ষত হয়েছে, তা যুগ যুগ ধরে নবীপ্রেমিক মুসলিমদের কাঁদিয়ে যাচ্ছে।
কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাস হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল। আর এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল ইয়াজিদকে খলিফা নিযুক্ত করার মাধ্যমে। হজরত মুআবিয়া (রা.) তাঁর জীবনের শেষ সময়ে তিনি পরবর্তী খলিফা কাকে নিযুক্ত করবেন এ বিষয়ে তৎকালীন বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িনদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কিছু সাহাবির পরামর্শ ছিল তাঁর পুত্র ইয়াজিদের দিকে, আবার আবদুল্লাহ ইবনে উমর, আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর, সাইয়েদুনা ইমাম হুসাইন, আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর প্রমুখের মতো প্রাজ্ঞ সাহাবিদের মত ছিল ভিন্ন। এ দুই পরামর্শের মধ্যে হজরত মুআবিয়া প্রথমটি গ্রহণ করেন। তবে ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ-বিষয়ক নিয়মে তিনি বিপরীত মতের সাহাবিদের সঙ্গে নরম ও ইনসাফ কায়েম করার আদেশও দেন। এবং মৃত্যুর পূর্বে হজরত মুআবিয়া (রা.) এ বিষয়ে তাঁর ছেলে ইয়াজিদকে বিশেষ অসিয়তও করে যান।
৬০ হিজরিতে হজরত মুআবিয়া (রা.) ইন্তেকাল করলে ইয়াজিদ শাসনভার গ্রহণ করে। এরপর সে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে উয়াইসের মাধ্যমে সবার কাছে নিয়ম অনুযায়ী বাইয়াতের নির্দেশ দেয়। অপর দিকে আগে থেকেই কুফার গভর্নর ছিলেন নুমান ইবনে বাশির। মুআবিয়ার ইন্তেকালের পর কুফার জনগণ তার আনুগত্য থেকে বিরত থেকে হজরত হুসাইনের আনুগত্য করা ও তাঁর অধীনে চলার জন্য বিভিন্ন চিঠির মাধ্যমে তাঁকে কুফায় আসার আমন্ত্রণ জানান। কুফায় যাওয়ার বিষয়ে হুসাইন (রা.) তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে আলাপ করলে আবদুল্লাহ ইবনে উমরসহ অনেকেই তাঁকে কুফায় না যাওয়ার পরামর্শ দেন। কেননা ইতিপূর্বে তাঁর বাবা হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদাতের পেছনে কুফাবাসীর হাত ছিল। কুফার লোকজন ওয়াদা রক্ষা করে না। তাঁর ভাইকেও আহত করেছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসও হজরত হুসাইনকে কুফায় সফর করতে নিষেধ করেন। তাঁর ভাই মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়াও তাঁকে নিষেধ করেছিলেন।
কিন্তু হজরত হুসাইন (রা.) ইজতিহাদ করে মনে করলেন ইয়াজিদ খলিফা হওয়ার উপযুক্ত নয়, তাই তিনি কুফার লোকজনের কথার ওপর ভরসা করে কুফায় যাওয়ার মনস্থ করেন। এ সময় কুফার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য তিনি তাঁর চাচাতো ভাই ও ভগ্নিপতি মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফায় প্রেরণ করেন। মুসলিম ইবনে আকিল কুফায় গেলে প্রায় ১২ হাজার কুফার বাসিন্দা তাঁর হাতে বাইয়াত হন এবং ইমাম হুসাইনকে (রা.) আসার জন্য তাঁর কাছে আবেদন করেন। পরে মুসলিম ইবনে আকিল চিঠি পাঠালে হজরত হুসাইন কুফায় রওনা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন।
শামের বাদশাহ ইয়াজিদ ইবনে মুআবিয়া দেখল, নুমান ইবনে বাশির কুফায় আসা মুসলিম ইবনে আকিলের প্রতি তেমন কঠোর না। তাই তাকে বরখাস্ত করে বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে কুফা ও বসরা উভয় এলাকায় গভর্নর বানায়। এরপর ইয়াজিদের পক্ষ থেকে মুসলিম ইবনে আকিলকে দ্রুত পাকড়াও করার নির্দেশ দেওয়া হয়। উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ খোঁজখবর নিয়ে মুসলিম ইবনে আকিলকে পেয়ে শহীদ করে।
এদিকে হজরত হুসাইন (রা.) ৬০ হিজরিতে হজের এক দিন আগে কাফেলাসহ কুফার উদ্দেশে রওনা করেন। তিনি কাদেসিয়া নামক স্থানে এলে মুসলিম ইবনে আকিলের শাহাদাতের খবর শুনিয়ে হুর ইবনে ইয়াজিদ তামিমি তাঁকে কুফায় যেতে বারণ করেন। কিন্তু সে কাফেলায় থাকা মুসলিমের ভাই হজরত হুসাইনকে (রা.) মক্কায় ফিরে যেতে নিরুৎসাহিত করেন। এ ছাড়া তিনিও আত্মসম্মানের কারণে আগের সিদ্ধান্তে বহাল থাকেন। কাফেলায় তখন ৪৫ জন অশ্বারোহী এবং ১০০-র মতো পায়দল সফরকারী ছিলেন। রওনা হতে হতে ইতিমধ্যে তিনি ইরাকের ফুরাত নদীর কারবালা প্রান্তরে এসে পৌঁছান। এখানে ইয়াজিদ বাহিনীর পক্ষে ছিলেন আমর ইবনে সাদ। উভয়ে সামনাসামনি হলে এবং হজরত হুসাইন (রা.)-এর বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললে তিনি আমর ইবনে সাদের সামনে তিনটি প্রস্তাব রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো যুদ্ধ করতে আসিনি, এমনকি ক্ষমতা দখলও আমার উদ্দেশ্য নয়। তোমরা আমাকে ডেকেছ বলে আমি এসেছি। এখন তোমরা কুফাবাসীরাই তোমাদের বাইয়াত পরিত্যাগ করছ। তাহলে আমাদের যেতে দাও, আমরা মদিনায় ফিরে যাই অথবা সীমান্তে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। অন্যথায় ইয়াজিদের কাছে গিয়ে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করি।’ কিন্তু হজরত হুসাইন (রা.)-কে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দেয় উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ। ঘৃণাভরে এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন ইমাম হুসাইন (রা.)।
মহররমের ১০ তারিখে সকাল থেকে উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের নেতৃত্বে প্রায় ৪ হাজার ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন (রা.)-এর ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে। ইমাম হুসাইন (রা.) সঙ্গীদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন। এ লড়াইয়ে একমাত্র ছেলে হজরত জয়নুল আবেদিন (রহ.) ছাড়া পরিবারের শিশু, কিশোর, নারীসহ সবাই একে একে শাহাদাতবরণ করেন। শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত নির্মম ও নির্দয়ভাবে ইমাম হুসাইন (রা.)-কে শহীদ করা হয়। সীমার নামক এক পাপিষ্ঠ নবীজির আদরের ফুল, হজরত ফাতেমার আদরের দুলাল, জান্নাতের যুবকদের সরদার হজরত হুসাইন (রা.)-এর মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ ছিল ইতিহাসের নির্মম এক অধ্যায়।
ইয়াজিদের এ ক্ষমতা বেশি দিন টিকে থাকেনি। মাত্র চার বছরের মধ্যে ইয়াজিদের মৃত্যু হয়। এর কয়েক দিনের মধ্যে মৃত্যু হয় তার পুত্রের। কারবালার এ মর্মান্তিক হত্যায় জড়িত প্রতিটি ব্যক্তি কয়েক বছরের মধ্যেই মুখতার সাকাফির বাহিনীর হাতে লজ্জাজনকভাবে নিহত হয়। এরপর ইয়াজিদের বংশের কেউ শাসনক্ষমতা লাভ করেনি। হজরত হুসাইন (রা.) আজও সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক হয়ে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়রাজ্যে বেঁচে আছেন। প্রতিটি মুমিন বিশ্বাস করে—কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা.)-এর প্রাণ বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সেদিন বিজয় হয়েছিল সত্যের, বিজয় হয়েছিল ইমানের।
তথ্যসূত্র: ওয়াকেয়া কারবালা আওর উসকা পসে মানজর, সিরাতে হাসনাইন শারিফাইন
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাসেম নানুতবী ঢাকা; খতিব, আয়েশা মসজিদ রামপুরা, ঢাকা।

কারবালা ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রান্তর, যেখানে ৬১ হিজরির মহররম মাসের ১০ তারিখে নবীনন্দিনী হজরত ফাতেমা (রা.)-এর আদরের দুলাল ইমাম হুসাইন (রা.) অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। কারবালার ঘটনা ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এ ট্র্যাজেডির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে যে ক্ষত হয়েছে, তা যুগ যুগ ধরে নবীপ্রেমিক মুসলিমদের কাঁদিয়ে যাচ্ছে।
কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাস হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল। আর এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল ইয়াজিদকে খলিফা নিযুক্ত করার মাধ্যমে। হজরত মুআবিয়া (রা.) তাঁর জীবনের শেষ সময়ে তিনি পরবর্তী খলিফা কাকে নিযুক্ত করবেন এ বিষয়ে তৎকালীন বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িনদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কিছু সাহাবির পরামর্শ ছিল তাঁর পুত্র ইয়াজিদের দিকে, আবার আবদুল্লাহ ইবনে উমর, আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর, সাইয়েদুনা ইমাম হুসাইন, আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর প্রমুখের মতো প্রাজ্ঞ সাহাবিদের মত ছিল ভিন্ন। এ দুই পরামর্শের মধ্যে হজরত মুআবিয়া প্রথমটি গ্রহণ করেন। তবে ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ-বিষয়ক নিয়মে তিনি বিপরীত মতের সাহাবিদের সঙ্গে নরম ও ইনসাফ কায়েম করার আদেশও দেন। এবং মৃত্যুর পূর্বে হজরত মুআবিয়া (রা.) এ বিষয়ে তাঁর ছেলে ইয়াজিদকে বিশেষ অসিয়তও করে যান।
৬০ হিজরিতে হজরত মুআবিয়া (রা.) ইন্তেকাল করলে ইয়াজিদ শাসনভার গ্রহণ করে। এরপর সে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে উয়াইসের মাধ্যমে সবার কাছে নিয়ম অনুযায়ী বাইয়াতের নির্দেশ দেয়। অপর দিকে আগে থেকেই কুফার গভর্নর ছিলেন নুমান ইবনে বাশির। মুআবিয়ার ইন্তেকালের পর কুফার জনগণ তার আনুগত্য থেকে বিরত থেকে হজরত হুসাইনের আনুগত্য করা ও তাঁর অধীনে চলার জন্য বিভিন্ন চিঠির মাধ্যমে তাঁকে কুফায় আসার আমন্ত্রণ জানান। কুফায় যাওয়ার বিষয়ে হুসাইন (রা.) তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে আলাপ করলে আবদুল্লাহ ইবনে উমরসহ অনেকেই তাঁকে কুফায় না যাওয়ার পরামর্শ দেন। কেননা ইতিপূর্বে তাঁর বাবা হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদাতের পেছনে কুফাবাসীর হাত ছিল। কুফার লোকজন ওয়াদা রক্ষা করে না। তাঁর ভাইকেও আহত করেছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসও হজরত হুসাইনকে কুফায় সফর করতে নিষেধ করেন। তাঁর ভাই মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়াও তাঁকে নিষেধ করেছিলেন।
কিন্তু হজরত হুসাইন (রা.) ইজতিহাদ করে মনে করলেন ইয়াজিদ খলিফা হওয়ার উপযুক্ত নয়, তাই তিনি কুফার লোকজনের কথার ওপর ভরসা করে কুফায় যাওয়ার মনস্থ করেন। এ সময় কুফার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য তিনি তাঁর চাচাতো ভাই ও ভগ্নিপতি মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফায় প্রেরণ করেন। মুসলিম ইবনে আকিল কুফায় গেলে প্রায় ১২ হাজার কুফার বাসিন্দা তাঁর হাতে বাইয়াত হন এবং ইমাম হুসাইনকে (রা.) আসার জন্য তাঁর কাছে আবেদন করেন। পরে মুসলিম ইবনে আকিল চিঠি পাঠালে হজরত হুসাইন কুফায় রওনা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন।
শামের বাদশাহ ইয়াজিদ ইবনে মুআবিয়া দেখল, নুমান ইবনে বাশির কুফায় আসা মুসলিম ইবনে আকিলের প্রতি তেমন কঠোর না। তাই তাকে বরখাস্ত করে বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে কুফা ও বসরা উভয় এলাকায় গভর্নর বানায়। এরপর ইয়াজিদের পক্ষ থেকে মুসলিম ইবনে আকিলকে দ্রুত পাকড়াও করার নির্দেশ দেওয়া হয়। উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ খোঁজখবর নিয়ে মুসলিম ইবনে আকিলকে পেয়ে শহীদ করে।
এদিকে হজরত হুসাইন (রা.) ৬০ হিজরিতে হজের এক দিন আগে কাফেলাসহ কুফার উদ্দেশে রওনা করেন। তিনি কাদেসিয়া নামক স্থানে এলে মুসলিম ইবনে আকিলের শাহাদাতের খবর শুনিয়ে হুর ইবনে ইয়াজিদ তামিমি তাঁকে কুফায় যেতে বারণ করেন। কিন্তু সে কাফেলায় থাকা মুসলিমের ভাই হজরত হুসাইনকে (রা.) মক্কায় ফিরে যেতে নিরুৎসাহিত করেন। এ ছাড়া তিনিও আত্মসম্মানের কারণে আগের সিদ্ধান্তে বহাল থাকেন। কাফেলায় তখন ৪৫ জন অশ্বারোহী এবং ১০০-র মতো পায়দল সফরকারী ছিলেন। রওনা হতে হতে ইতিমধ্যে তিনি ইরাকের ফুরাত নদীর কারবালা প্রান্তরে এসে পৌঁছান। এখানে ইয়াজিদ বাহিনীর পক্ষে ছিলেন আমর ইবনে সাদ। উভয়ে সামনাসামনি হলে এবং হজরত হুসাইন (রা.)-এর বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললে তিনি আমর ইবনে সাদের সামনে তিনটি প্রস্তাব রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো যুদ্ধ করতে আসিনি, এমনকি ক্ষমতা দখলও আমার উদ্দেশ্য নয়। তোমরা আমাকে ডেকেছ বলে আমি এসেছি। এখন তোমরা কুফাবাসীরাই তোমাদের বাইয়াত পরিত্যাগ করছ। তাহলে আমাদের যেতে দাও, আমরা মদিনায় ফিরে যাই অথবা সীমান্তে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। অন্যথায় ইয়াজিদের কাছে গিয়ে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করি।’ কিন্তু হজরত হুসাইন (রা.)-কে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দেয় উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ। ঘৃণাভরে এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন ইমাম হুসাইন (রা.)।
মহররমের ১০ তারিখে সকাল থেকে উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের নেতৃত্বে প্রায় ৪ হাজার ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন (রা.)-এর ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে। ইমাম হুসাইন (রা.) সঙ্গীদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন। এ লড়াইয়ে একমাত্র ছেলে হজরত জয়নুল আবেদিন (রহ.) ছাড়া পরিবারের শিশু, কিশোর, নারীসহ সবাই একে একে শাহাদাতবরণ করেন। শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত নির্মম ও নির্দয়ভাবে ইমাম হুসাইন (রা.)-কে শহীদ করা হয়। সীমার নামক এক পাপিষ্ঠ নবীজির আদরের ফুল, হজরত ফাতেমার আদরের দুলাল, জান্নাতের যুবকদের সরদার হজরত হুসাইন (রা.)-এর মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ ছিল ইতিহাসের নির্মম এক অধ্যায়।
ইয়াজিদের এ ক্ষমতা বেশি দিন টিকে থাকেনি। মাত্র চার বছরের মধ্যে ইয়াজিদের মৃত্যু হয়। এর কয়েক দিনের মধ্যে মৃত্যু হয় তার পুত্রের। কারবালার এ মর্মান্তিক হত্যায় জড়িত প্রতিটি ব্যক্তি কয়েক বছরের মধ্যেই মুখতার সাকাফির বাহিনীর হাতে লজ্জাজনকভাবে নিহত হয়। এরপর ইয়াজিদের বংশের কেউ শাসনক্ষমতা লাভ করেনি। হজরত হুসাইন (রা.) আজও সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক হয়ে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়রাজ্যে বেঁচে আছেন। প্রতিটি মুমিন বিশ্বাস করে—কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা.)-এর প্রাণ বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সেদিন বিজয় হয়েছিল সত্যের, বিজয় হয়েছিল ইমানের।
তথ্যসূত্র: ওয়াকেয়া কারবালা আওর উসকা পসে মানজর, সিরাতে হাসনাইন শারিফাইন
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাসেম নানুতবী ঢাকা; খতিব, আয়েশা মসজিদ রামপুরা, ঢাকা।

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৫ ঘণ্টা আগে
শীতকালে ঠান্ডার কারণে অনেকে অজু করতে অলসতা করেন অথবা তাড়াহুড়ো করে অজুর অঙ্গগুলো ঠিকমতো না ভিজিয়েই ইবাদতে লিপ্ত হন। অথচ অজুর কোনো অংশ শুকনো থাকলে নামাজ ও ইবাদত কবুল হয় না। শীতের এ প্রতিকূল সময়ে ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন...
৬ ঘণ্টা আগে
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
১ দিন আগে
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।
প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১২ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ০৬ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৫: ১৭ মিনিট |
| ফজর | ০৫: ১৮ মিনিট | ০৬: ৩৮ মিনিট |
| জোহর | ১২: ০০ মিনিট | ০৩: ৪৩ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৪৪ মিনিট | ০৫: ১৯ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ২১ মিনিট | ০৬: ৩৯ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৪০ মিনিট | ০৫: ১৭ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।
প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১২ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ০৬ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৫: ১৭ মিনিট |
| ফজর | ০৫: ১৮ মিনিট | ০৬: ৩৮ মিনিট |
| জোহর | ১২: ০০ মিনিট | ০৩: ৪৩ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৪৪ মিনিট | ০৫: ১৯ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ২১ মিনিট | ০৬: ৩৯ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৪০ মিনিট | ০৫: ১৭ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

কারবালা ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রান্তর, যেখানে ৬১ হিজরির মহররম মাসের ১০ তারিখে নবীনন্দিনী হজরত ফাতেমা (রা.)-এর আদরের দুলাল ইমাম হুসাইন (রা.) অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। কারবালার ঘটনা ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এ ট্র্যাজেডির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে যে ক্ষত হয়েছে...
০৪ জুলাই ২০২৫
শীতকালে ঠান্ডার কারণে অনেকে অজু করতে অলসতা করেন অথবা তাড়াহুড়ো করে অজুর অঙ্গগুলো ঠিকমতো না ভিজিয়েই ইবাদতে লিপ্ত হন। অথচ অজুর কোনো অংশ শুকনো থাকলে নামাজ ও ইবাদত কবুল হয় না। শীতের এ প্রতিকূল সময়ে ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন...
৬ ঘণ্টা আগে
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
১ দিন আগে
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

শীতকালে ঠান্ডার কারণে অনেকে অজু করতে অলসতা করেন অথবা তাড়াহুড়ো করে অজুর অঙ্গগুলো ঠিকমতো না ভিজিয়েই ইবাদতে লিপ্ত হন। অথচ অজুর কোনো অংশ শুকনো থাকলে নামাজ ও ইবাদত কবুল হয় না। শীতের এ প্রতিকূল সময়ে ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি:
শীতের কাপড়ের কারণে অনেকে হাতা ঠিকমতো না গুটিয়েই হাত ধুয়ে নেন, ফলে কনুই শুকনো থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মনে রাখতে হবে, কনুই বা পায়ের টাখনুর কোনো অংশ সামান্য শুকনো থাকলেও অজু হবে না। (সহিহ্ মুসলিম: ২৪৬)
তাড়াহুড়ো করে অজু করতে গিয়ে অনেকে পায়ের গোড়ালি ঠিকমতো ভেজান না। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আগুনের কঠিন শাস্তি সেই গোড়ালিগুলোর জন্য (যা অজুর সময় শুকনো থাকে)! তোমরা খুব ভালোভাবে অজু করো।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৪১)
ঠান্ডার ভয়ে অনেকে প্রস্রাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে আগের অজু দিয়ে নামাজ পড়ার চেষ্টা করেন। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতেও অপছন্দের। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘খাবারের উপস্থিতিতে এবং মল-মূত্রের বেগ চেপে রাখা অবস্থায় কোনো নামাজ নেই।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৫৬০)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো মুমিনের জন্য মল-মূত্রের বেগ নিয়ে নামাজ পড়া বৈধ নয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৯১)
শীতের কষ্টকে উপেক্ষা করে যথাযথভাবে অজু সম্পন্ন করা মুমিনের ইমানি দৃঢ়তার পরিচয়। তাই আমাদের উচিত, তাড়াহুড়ো না করে অজুর প্রতিটি অঙ্গ ভালোভাবে ধৌত করা এবং পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের পর আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান হওয়া।

শীতকালে ঠান্ডার কারণে অনেকে অজু করতে অলসতা করেন অথবা তাড়াহুড়ো করে অজুর অঙ্গগুলো ঠিকমতো না ভিজিয়েই ইবাদতে লিপ্ত হন। অথচ অজুর কোনো অংশ শুকনো থাকলে নামাজ ও ইবাদত কবুল হয় না। শীতের এ প্রতিকূল সময়ে ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি:
শীতের কাপড়ের কারণে অনেকে হাতা ঠিকমতো না গুটিয়েই হাত ধুয়ে নেন, ফলে কনুই শুকনো থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মনে রাখতে হবে, কনুই বা পায়ের টাখনুর কোনো অংশ সামান্য শুকনো থাকলেও অজু হবে না। (সহিহ্ মুসলিম: ২৪৬)
তাড়াহুড়ো করে অজু করতে গিয়ে অনেকে পায়ের গোড়ালি ঠিকমতো ভেজান না। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আগুনের কঠিন শাস্তি সেই গোড়ালিগুলোর জন্য (যা অজুর সময় শুকনো থাকে)! তোমরা খুব ভালোভাবে অজু করো।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৪১)
ঠান্ডার ভয়ে অনেকে প্রস্রাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে আগের অজু দিয়ে নামাজ পড়ার চেষ্টা করেন। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতেও অপছন্দের। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘খাবারের উপস্থিতিতে এবং মল-মূত্রের বেগ চেপে রাখা অবস্থায় কোনো নামাজ নেই।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৫৬০)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো মুমিনের জন্য মল-মূত্রের বেগ নিয়ে নামাজ পড়া বৈধ নয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৯১)
শীতের কষ্টকে উপেক্ষা করে যথাযথভাবে অজু সম্পন্ন করা মুমিনের ইমানি দৃঢ়তার পরিচয়। তাই আমাদের উচিত, তাড়াহুড়ো না করে অজুর প্রতিটি অঙ্গ ভালোভাবে ধৌত করা এবং পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের পর আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান হওয়া।

কারবালা ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রান্তর, যেখানে ৬১ হিজরির মহররম মাসের ১০ তারিখে নবীনন্দিনী হজরত ফাতেমা (রা.)-এর আদরের দুলাল ইমাম হুসাইন (রা.) অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। কারবালার ঘটনা ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এ ট্র্যাজেডির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে যে ক্ষত হয়েছে...
০৪ জুলাই ২০২৫
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৫ ঘণ্টা আগে
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
১ দিন আগে
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান। সংবাদমাধ্যম দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন এ তথ্য জানিয়েছে।
কে এই শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস
মসজিদুল হারামের এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস বিশ্ব মুসলিমের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও কারি। তিনি শায়খ আস-সুদাইস নামে ব্যাপক পরিচিত। আবেগঘন ও হৃদয়স্পর্শী কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তাঁর তিলাওয়াত শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৬০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের আল-কাসিম প্রদেশের আনাজা গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছেন। শৈশব থেকেই ইসলামি শিক্ষায় মনোযোগী ছিলেন। আল-মুছানা বিন হারিস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাঁর পড়াশোনা শুরু হয়। সেখানেই মাত্র ১২ বছর বয়সে কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন তিনি।
১৯৭৯ সালে রিয়াদের সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউশন থেকে স্নাতক শেষ করেন এবং রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহ বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামি মূলনীতিতে মাস্টার্স এবং উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক শরিয়ায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৮৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। ওই বছরের জুলাই মাসে মসজিদুল হারামে প্রথমবার খুতবা প্রদান করেন। এরপর থেকে অনেকবার তারাবির নামাজে ইমামতি করেছেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইসকে ২০১২ সালে দুই পবিত্র মসজিদ (মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি) বিষয়ক জেনারেল প্রেসিডেন্সির প্রেসিডেন্ট করা হয়। ২০১৬ সালে তাঁকে আবারও এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর নেতৃত্বে এই দুই পবিত্র স্থান ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ উন্নতি হয়েছে।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস টানা চার দশকের বেশি সময় কাবার ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৩ সালে তিনি কাবার ইমাম হিসেবে ৪০ বছর পূর্ণ করেছেন।
অন্যদিকে, মসজিদে নববির এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি।
কে এই শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান
তাঁর পুরো নাম আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান বিন সুলাইমান আল-বুআইজান আত-তামিমি। তিনি মসজিদে নববির সম্মানিত ইমাম ও খতিব এবং মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদের একজন শিক্ষক। ১৪৩৪ হিজরির ৪ জিলহজ রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে তিনি মসজিদে নববির অফিশিয়াল ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন।
তিনি ১৪২২ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদ থেকে স্নাতক (বিএ) ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক শেষ করার পর ১৪২২ হিজরি থেকে ১৪২৯ হিজরি পর্যন্ত তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৪২৬ হিজরিতে তিনি ‘উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট’ (মাজহাদুল আলি লিল কাজা)-এর ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর তিনি কিং সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আল-খারজ প্রদেশের ‘কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ’-এ লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৪৩৪ হিজরিতে মসজিদে নববির ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় স্থানান্তরিত হন। অতঃপর ১৪৩৭ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট থেকে ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগে ‘মুমতাজ’ (এক্সিলেন্ট) গ্রেডসহ ডক্টরেট (পিএইচডি) ডিগ্রি লাভ করেন।
শায়খ আল-বুআইজান ইমাম আসিমের কিরাত অনুযায়ী হাফস রেওয়ায়েতে (শাতোবিইয়াহ্ পদ্ধতিতে) কোরআন তিলাওয়াতের বিশেষ সনদ বা ‘ইজাজাহ্’ লাভ করেছেন। তিনি এই ইজাজাহ্ গ্রহণ করেছেন ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরাত শাস্ত্রের অধ্যাপক শায়খ প্রফেসর ড. ইবরাহিম বিন সাইদ আদ-দোসারির কাছ থেকে। এ ছাড়াও তিনি কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সের বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য মরহুম শায়খ আবদুল হাকিম বিন আবদুস সালাম খাতিরের কাছ থেকেও ইজাজাহ্প্রাপ্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত ও পবিত্র স্থান। এই দুই মসজিদে নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক (ওয়াক্ত) নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক ওয়াক্ত নামাজ এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজের সমান এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে এক (ওয়াক্ত) নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ৪/১১)
অন্য হাদিসে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার এ মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম। (সহিহ্ বুখারি: ১১৯০, সহিহ্ মুসলিম: ১৩৯৪)

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান। সংবাদমাধ্যম দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন এ তথ্য জানিয়েছে।
কে এই শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস
মসজিদুল হারামের এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস বিশ্ব মুসলিমের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও কারি। তিনি শায়খ আস-সুদাইস নামে ব্যাপক পরিচিত। আবেগঘন ও হৃদয়স্পর্শী কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তাঁর তিলাওয়াত শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৬০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের আল-কাসিম প্রদেশের আনাজা গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছেন। শৈশব থেকেই ইসলামি শিক্ষায় মনোযোগী ছিলেন। আল-মুছানা বিন হারিস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাঁর পড়াশোনা শুরু হয়। সেখানেই মাত্র ১২ বছর বয়সে কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন তিনি।
১৯৭৯ সালে রিয়াদের সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউশন থেকে স্নাতক শেষ করেন এবং রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহ বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামি মূলনীতিতে মাস্টার্স এবং উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক শরিয়ায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৮৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। ওই বছরের জুলাই মাসে মসজিদুল হারামে প্রথমবার খুতবা প্রদান করেন। এরপর থেকে অনেকবার তারাবির নামাজে ইমামতি করেছেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইসকে ২০১২ সালে দুই পবিত্র মসজিদ (মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি) বিষয়ক জেনারেল প্রেসিডেন্সির প্রেসিডেন্ট করা হয়। ২০১৬ সালে তাঁকে আবারও এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর নেতৃত্বে এই দুই পবিত্র স্থান ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ উন্নতি হয়েছে।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস টানা চার দশকের বেশি সময় কাবার ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৩ সালে তিনি কাবার ইমাম হিসেবে ৪০ বছর পূর্ণ করেছেন।
অন্যদিকে, মসজিদে নববির এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি।
কে এই শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান
তাঁর পুরো নাম আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান বিন সুলাইমান আল-বুআইজান আত-তামিমি। তিনি মসজিদে নববির সম্মানিত ইমাম ও খতিব এবং মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদের একজন শিক্ষক। ১৪৩৪ হিজরির ৪ জিলহজ রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে তিনি মসজিদে নববির অফিশিয়াল ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন।
তিনি ১৪২২ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদ থেকে স্নাতক (বিএ) ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক শেষ করার পর ১৪২২ হিজরি থেকে ১৪২৯ হিজরি পর্যন্ত তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৪২৬ হিজরিতে তিনি ‘উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট’ (মাজহাদুল আলি লিল কাজা)-এর ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর তিনি কিং সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আল-খারজ প্রদেশের ‘কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ’-এ লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৪৩৪ হিজরিতে মসজিদে নববির ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় স্থানান্তরিত হন। অতঃপর ১৪৩৭ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট থেকে ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগে ‘মুমতাজ’ (এক্সিলেন্ট) গ্রেডসহ ডক্টরেট (পিএইচডি) ডিগ্রি লাভ করেন।
শায়খ আল-বুআইজান ইমাম আসিমের কিরাত অনুযায়ী হাফস রেওয়ায়েতে (শাতোবিইয়াহ্ পদ্ধতিতে) কোরআন তিলাওয়াতের বিশেষ সনদ বা ‘ইজাজাহ্’ লাভ করেছেন। তিনি এই ইজাজাহ্ গ্রহণ করেছেন ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরাত শাস্ত্রের অধ্যাপক শায়খ প্রফেসর ড. ইবরাহিম বিন সাইদ আদ-দোসারির কাছ থেকে। এ ছাড়াও তিনি কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সের বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য মরহুম শায়খ আবদুল হাকিম বিন আবদুস সালাম খাতিরের কাছ থেকেও ইজাজাহ্প্রাপ্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত ও পবিত্র স্থান। এই দুই মসজিদে নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক (ওয়াক্ত) নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক ওয়াক্ত নামাজ এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজের সমান এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে এক (ওয়াক্ত) নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ৪/১১)
অন্য হাদিসে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার এ মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম। (সহিহ্ বুখারি: ১১৯০, সহিহ্ মুসলিম: ১৩৯৪)

কারবালা ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রান্তর, যেখানে ৬১ হিজরির মহররম মাসের ১০ তারিখে নবীনন্দিনী হজরত ফাতেমা (রা.)-এর আদরের দুলাল ইমাম হুসাইন (রা.) অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। কারবালার ঘটনা ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এ ট্র্যাজেডির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে যে ক্ষত হয়েছে...
০৪ জুলাই ২০২৫
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৫ ঘণ্টা আগে
শীতকালে ঠান্ডার কারণে অনেকে অজু করতে অলসতা করেন অথবা তাড়াহুড়ো করে অজুর অঙ্গগুলো ঠিকমতো না ভিজিয়েই ইবাদতে লিপ্ত হন। অথচ অজুর কোনো অংশ শুকনো থাকলে নামাজ ও ইবাদত কবুল হয় না। শীতের এ প্রতিকূল সময়ে ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন...
৬ ঘণ্টা আগে
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
১ দিন আগেমুফতি এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ

সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে। আধ্যাত্মিক পরিভাষায় এই রজব যেন আমলের বসন্ত; যে বসন্তের স্নিগ্ধ হাওয়ায় মুমিন হৃদয় হয়ে ওঠে সবুজ ও সজীব। জান্নাতি খুশবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা মুমিনের মন দুলতে থাকে রবের একান্ত প্রেমে। রজব যেন দিগন্তের আকাশে ভেসে বেড়ানো রহমতের মেঘমালা, যা আল্লাহর তৃষ্ণার্ত বান্দার হৃদয়কে মহান প্রভুর করুণার সুশীতল ছায়ায় পরম মমতায় ঢেকে দেয়। এভাবে প্রতিটি মুমিন হৃদয়ে রজব মাস হয়ে ওঠে ইবাদত ও আনুগত্যের এক অনন্য ঋতু।
রজব মাসের মাহাত্ম্য
রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য। এর প্রধান কারণ হলো, এই মাসকে মহান আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় রাসুল (সা.) বিশেষভাবে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত যে চারটি মাসের কথা উল্লেখ করেছেন, রজব তার মধ্যে অন্যতম। ইরশাদ হয়েছে—‘নিশ্চয় আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারোটি। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত কোরো না।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)
হাদিস শরিফেও এই সম্মানিত মাসগুলোর বিবরণ চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন—‘বছর হচ্ছে বারো মাস। এর মধ্যে চার মাস হারাম বা নিষিদ্ধ। তিনটি ধারাবাহিক: জিলকদ, জিলহজ ও মহররম; আর অন্যটি হলো (মুদার গোত্রের) রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী সময়ে অবস্থিত।’ (সহিহ বুখারি: ৪৬৬২, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৯)
রজব: রমজানের প্রস্তুতির সুবর্ণ সময়
রজব মাস থেকেই মূলত আমাদের কাঙ্ক্ষিত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হওয়া উচিত। কেননা রজবের পরেই আসবে শাবান, আর এই দুই মাসের প্রহরগুলো গড়ালেই শুরু হবে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস—রমজান। রমজানের সেই সুকঠিন ও মহান সাধনার গুরুত্ব বিবেচনা করে দুই মাস আগে রজব থেকেই এর মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা হাদিসে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। তাই তো রজব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াটি পাঠ করতেন—‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাৎ: ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত জীবিত রাখুন (রমজানে পৌঁছিয়ে দিন)।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬)
রমজানের পূর্ণ বরকত পেতে হলে প্রয়োজন শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সুপরিকল্পিত প্রস্তুতি। রমজানে যেহেতু ইবাদত, আহার ও নিদ্রার সময়সূচিতে আমূল পরিবর্তন আসে, তাই আমাদের উচিত এ রজব মাস থেকেই নফল রোজা রাখার মাধ্যমে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলা। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন শাবান মাসে, আর এর প্রস্তুতি শুরু হতো রজব থেকে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘রজব মাস এলে আমরা নবীজি (সা.)-এর বিশেষ আমল ও ইবাদত দেখে তা অনুভব করতে পারতাম।’ (সহিহ মুসলিম: ১৪৪৩)
তিলাওয়াত ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন
কেবল রোজা নয়, বরং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও এর চর্চায় মনোযোগী হওয়া রজব মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কোরআন তিলাওয়াত শেখা, অশুদ্ধি সংশোধন করা, নামাজের প্রয়োজনীয় সুরা-কিরাত এবং দোয়া-দরুদগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করা এ সময়ে অত্যন্ত জরুরি। এতে করে রমজানের পবিত্র দিনগুলোতে আমল করা অনেক সহজ ও সাবলীল হয়ে ওঠে। বিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থগুলোতে এসেছে যে এই সম্মানিত মাসগুলোর বিশেষত্ব হলো—এতে অধিক ইবাদত ও নেক আমলের অনুশীলন করলে বছরের বাকি মাসগুলোতেও ইবাদতের প্রতি একনিষ্ঠতা বজায় রাখা সহজ হয়ে যায়। (আহকামুল কোরআন: খণ্ড ২, পৃ. ১১১)
সতর্কতা ও বিশেষ আমল
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে আইয়ামে বিজ (চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) এবং প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের নফল রোজা ব্যতীত রজব মাসে আলাদাভাবে বিশেষ কোনো তারিখ বা দিনে সুনির্দিষ্ট রোজার আমল নেই। তবে রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আমরা যেকোনো নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত নফল রোজা রাখতে পারি। যেহেতু রজব ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত, তাই এ সময়ে সম্পাদিত নেক আমলের বিপরীতে মহান আল্লাহর কাছে অধিক সওয়াবের আশা করা যায়। মুস্তাহাব আমল হিসেবে এই হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখার সপক্ষে নবীজি (সা.)-এর একটি হাদিস পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সম্মানিত মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা ভঙ্গও কোরো (অর্থাৎ বিরতি দিয়ে দিয়ে নফল রোজা রাখো)।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪২৪)
হাদিসের বর্ণনায় রজবের আরও একটি শ্রেষ্ঠ আমলের কথা এসেছে—তা হলো দোয়া। রাসুল (সা.)-এর ভাষ্য অনুযায়ী ‘দোয়া হলো ইবাদতের মগজ’। তাই আমলের এই বসন্তলগ্নে আমাদের উচিত অধিক পরিমাণে কায়মনোবাক্যে প্রভুর দরবারে রোনাজারি করা।
লেখক: খতিব, সোনার বাংলা জামে মসজিদ, কুষ্টিয়া

সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে। আধ্যাত্মিক পরিভাষায় এই রজব যেন আমলের বসন্ত; যে বসন্তের স্নিগ্ধ হাওয়ায় মুমিন হৃদয় হয়ে ওঠে সবুজ ও সজীব। জান্নাতি খুশবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা মুমিনের মন দুলতে থাকে রবের একান্ত প্রেমে। রজব যেন দিগন্তের আকাশে ভেসে বেড়ানো রহমতের মেঘমালা, যা আল্লাহর তৃষ্ণার্ত বান্দার হৃদয়কে মহান প্রভুর করুণার সুশীতল ছায়ায় পরম মমতায় ঢেকে দেয়। এভাবে প্রতিটি মুমিন হৃদয়ে রজব মাস হয়ে ওঠে ইবাদত ও আনুগত্যের এক অনন্য ঋতু।
রজব মাসের মাহাত্ম্য
রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য। এর প্রধান কারণ হলো, এই মাসকে মহান আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় রাসুল (সা.) বিশেষভাবে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত যে চারটি মাসের কথা উল্লেখ করেছেন, রজব তার মধ্যে অন্যতম। ইরশাদ হয়েছে—‘নিশ্চয় আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারোটি। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত কোরো না।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)
হাদিস শরিফেও এই সম্মানিত মাসগুলোর বিবরণ চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন—‘বছর হচ্ছে বারো মাস। এর মধ্যে চার মাস হারাম বা নিষিদ্ধ। তিনটি ধারাবাহিক: জিলকদ, জিলহজ ও মহররম; আর অন্যটি হলো (মুদার গোত্রের) রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী সময়ে অবস্থিত।’ (সহিহ বুখারি: ৪৬৬২, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৯)
রজব: রমজানের প্রস্তুতির সুবর্ণ সময়
রজব মাস থেকেই মূলত আমাদের কাঙ্ক্ষিত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হওয়া উচিত। কেননা রজবের পরেই আসবে শাবান, আর এই দুই মাসের প্রহরগুলো গড়ালেই শুরু হবে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস—রমজান। রমজানের সেই সুকঠিন ও মহান সাধনার গুরুত্ব বিবেচনা করে দুই মাস আগে রজব থেকেই এর মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা হাদিসে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। তাই তো রজব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াটি পাঠ করতেন—‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাৎ: ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত জীবিত রাখুন (রমজানে পৌঁছিয়ে দিন)।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬)
রমজানের পূর্ণ বরকত পেতে হলে প্রয়োজন শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সুপরিকল্পিত প্রস্তুতি। রমজানে যেহেতু ইবাদত, আহার ও নিদ্রার সময়সূচিতে আমূল পরিবর্তন আসে, তাই আমাদের উচিত এ রজব মাস থেকেই নফল রোজা রাখার মাধ্যমে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলা। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন শাবান মাসে, আর এর প্রস্তুতি শুরু হতো রজব থেকে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘রজব মাস এলে আমরা নবীজি (সা.)-এর বিশেষ আমল ও ইবাদত দেখে তা অনুভব করতে পারতাম।’ (সহিহ মুসলিম: ১৪৪৩)
তিলাওয়াত ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন
কেবল রোজা নয়, বরং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও এর চর্চায় মনোযোগী হওয়া রজব মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কোরআন তিলাওয়াত শেখা, অশুদ্ধি সংশোধন করা, নামাজের প্রয়োজনীয় সুরা-কিরাত এবং দোয়া-দরুদগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করা এ সময়ে অত্যন্ত জরুরি। এতে করে রমজানের পবিত্র দিনগুলোতে আমল করা অনেক সহজ ও সাবলীল হয়ে ওঠে। বিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থগুলোতে এসেছে যে এই সম্মানিত মাসগুলোর বিশেষত্ব হলো—এতে অধিক ইবাদত ও নেক আমলের অনুশীলন করলে বছরের বাকি মাসগুলোতেও ইবাদতের প্রতি একনিষ্ঠতা বজায় রাখা সহজ হয়ে যায়। (আহকামুল কোরআন: খণ্ড ২, পৃ. ১১১)
সতর্কতা ও বিশেষ আমল
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে আইয়ামে বিজ (চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) এবং প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের নফল রোজা ব্যতীত রজব মাসে আলাদাভাবে বিশেষ কোনো তারিখ বা দিনে সুনির্দিষ্ট রোজার আমল নেই। তবে রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আমরা যেকোনো নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত নফল রোজা রাখতে পারি। যেহেতু রজব ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত, তাই এ সময়ে সম্পাদিত নেক আমলের বিপরীতে মহান আল্লাহর কাছে অধিক সওয়াবের আশা করা যায়। মুস্তাহাব আমল হিসেবে এই হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখার সপক্ষে নবীজি (সা.)-এর একটি হাদিস পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সম্মানিত মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা ভঙ্গও কোরো (অর্থাৎ বিরতি দিয়ে দিয়ে নফল রোজা রাখো)।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪২৪)
হাদিসের বর্ণনায় রজবের আরও একটি শ্রেষ্ঠ আমলের কথা এসেছে—তা হলো দোয়া। রাসুল (সা.)-এর ভাষ্য অনুযায়ী ‘দোয়া হলো ইবাদতের মগজ’। তাই আমলের এই বসন্তলগ্নে আমাদের উচিত অধিক পরিমাণে কায়মনোবাক্যে প্রভুর দরবারে রোনাজারি করা।
লেখক: খতিব, সোনার বাংলা জামে মসজিদ, কুষ্টিয়া

কারবালা ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রান্তর, যেখানে ৬১ হিজরির মহররম মাসের ১০ তারিখে নবীনন্দিনী হজরত ফাতেমা (রা.)-এর আদরের দুলাল ইমাম হুসাইন (রা.) অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। কারবালার ঘটনা ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এ ট্র্যাজেডির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে যে ক্ষত হয়েছে...
০৪ জুলাই ২০২৫
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৫ ঘণ্টা আগে
শীতকালে ঠান্ডার কারণে অনেকে অজু করতে অলসতা করেন অথবা তাড়াহুড়ো করে অজুর অঙ্গগুলো ঠিকমতো না ভিজিয়েই ইবাদতে লিপ্ত হন। অথচ অজুর কোনো অংশ শুকনো থাকলে নামাজ ও ইবাদত কবুল হয় না। শীতের এ প্রতিকূল সময়ে ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন...
৬ ঘণ্টা আগে
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
১ দিন আগে