Ajker Patrika

মহানবী (সা.)–এর শেখানো মলমূত্র ত্যাগের আদব

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৫, ১৫: ৪৯
মহানবী (সা.)–এর শেখানো মলমূত্র ত্যাগের আদব

‘এস্তেনজা’ শব্দের অর্থ মুক্তি পাওয়া। মলমূত্র ত্যাগের পর পানি, পাথর, মাটি, কাগজ বা এমন অন্য কোনো বস্তুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘এস্তেনজা’ বলা হয়। পায়খানা-প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যেসব নাপাক বের হয়, তা থেকে পবিত্র হতে এস্তেনজা করা আবশ্যক। 

পাথর, ঢিলা, টিস্যু পেপার ইত্যাদি দিয়ে এস্তেনজা করা বৈধ
পাথর এবং এমন জমাটবদ্ধ শুকনো বস্তু, যা দিয়ে নাপাক দূর করা যায় এবং যা ব্যবহার করা ইসলামে নিষিদ্ধ নয়, তা দিয়ে এস্তেনজা করা যাবে। যেমন— কাগজ, টিস্যু পেপার, ন্যাকড়া, শুকনো কাঠ, মাটির ঢেলা ইত্যাদি।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন এস্তেনজা করতে যায়, তখন সে যেন তিনটি পাথর সঙ্গে নিয়ে যায়, যা দিয়ে সে পবিত্রতা অর্জন করবে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ: ৪০; নাসায়ি: ১ / ১৮; আহমাদ: ৬ / ১০৮-১৩৩) 

অন্য এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা কেউ তিনটির কম পাথর দিয়ে এস্তেনজা করবে না।’ (মুসলিম: ২৬২; নাসায়ি ১ / ১২; তিরমিজি: ১৬) 

এ ক্ষেত্রে তিনটি ব্যবহার করা অনেকেই আবশ্যক বলেছেন, অনেকে বলেন সুন্নত। তবে নাপাক দূর করতে যত দরকার, তত ব্যবহার করা আবশ্যক হওয়ার ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই।

পানি ও টিস্যু পেপার দুটো ব্যবহার করাই উত্তম
এস্তেনজা পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম। পানি ও ঢিলা দুটোই ব্যবহার করে পবিত্রতা অর্জন করা এ ক্ষেত্রে উত্তম। আবার দুটোর মধ্যে পানি ব্যবহার করা উত্তম। মহানবী (সা.) কখনো দুটোই, আবার কখনো যেকোনো একটি ব্যবহার করতেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) টয়লেটে যেতেন, আমি ও আমার বয়সী আরেকটা ছেলে পানির পাত্র ও বর্শার মতো লাঠিসহ তাঁর জন্য পানি নিয়ে যেতাম। এ পানি দিয়ে তিনি শৌচকার্য সারতেন। (বুখারি: ১৫১; মুসলিম: ২৭০-২৭১) 

সাধারণত আরবের মানুষ এস্তেনজায় ঢিলা বা পাথর ব্যবহার করতেন। তবে মদিনার কুফাবাসীরা ঢিলা ও পানি দুটোই ব্যবহার করতেন। তাই পবিত্র কোরআনে কুফাবাসীর প্রশংসা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এখানে কিছু লোক রয়েছে, যারা পবিত্রতা পছন্দ করে।’ (সুরা তওবা: ১০৮)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তারা (কুফাবাসী) পানি দিয়ে এস্তেনজা করে। ফলে আল্লাহ তাদের ব্যাপারে এই আয়াত নাজিল করেন।’ (আবু দাউদ: ৪৪; তিরমিজি: ৩১০০; ইবনে মাজাহ: ৩৫৭) 

শুকনো হাড় ও গোবর ব্যবহার করা যাবে না
এস্তেনজা করার উপাদানটি পবিত্র হতে হবে এবং নিষিদ্ধ বস্তু হতে পারবে না। যেমন— গোবর ও হাড় দিয়ে এস্তেনজা করা যাবে না। কারণ প্রথমটি নাপাক এবং দ্বিতীয়টি নিষিদ্ধ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা গোবর ও হাড় দিয়ে এস্তেনজা করো না। কারণ তা তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।’ (মুসলিম: ৬৮২; তিরমিজি: ১৮; আহমাদ: ১ / ৪৩৬) 

অন্য হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, নবী (সা.) একবার শৌচকাজে যাওয়ার সময় তিনটি পাথর কুড়িয়ে দিতে আমাকে আদেশ দিলেন। আমি দুটি পাথর পেলাম এবং তৃতীয়টি খোঁজাখুঁজি করেও পেলাম না। তাই এক টুকরো শুকনো গোবর নিয়ে তাঁর কাছে গেলাম। তিনি পাথর দুটি নিলেন এবং গোবরটি ফেলে দিয়ে বললেন, ‘এটি অপবিত্র।’ (বুখারি: ১৫৬) 

বায়ুত্যাগ করলে এস্তেনজা করতে হবে না
বায়ুত্যাগ করলে বা ঘুম থেকে জাগলে এস্তেনজা করা জরুরি নয়। তবে নামাজ পড়তে হলে অবশ্যই অজু করতে হবে। কারণ এস্তেনজা নাপাক বস্তু দূর করার জন্য করা হয়। বায়ুত্যাগে কোনো নাপাক বস্তু দৃশ্যমান হয় না। তাই এস্তেনজা করতে হবে না। তবে বায়ুত্যাগ করলে বা ঘুমালে অজু ভেঙে যায়, তাই অজু করতে হবে। (আল-মুগনি: ১ / ২০৬) 

মলমূত্র ত্যাগের আদব
মলমূত্র ত্যাগ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু আদব রয়েছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি তুলে ধরা হলো—

১. মানুষের দৃষ্টির আড়ালে নির্জন স্থানে, যেখান থেকে বাইরে দুর্গন্ধ আসে না— এমন স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করা উচিত। (তিরমিজি: ২০; আবু দাউদ: ২) 

২. নরম ও নিচু স্থান বেছে নেওয়া উচিত, যাতে প্রস্রাবের ছিটা শরীরে না লাগে। (আবু দাউদ: ৩; তিরমিজি: ২০) 

৩. টয়লেটে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া—আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবাইস। অর্থ: হে আল্লাহ, আমি নাপাক ও শয়তানদের থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। (বুখারি, হাদিস: ১৩৯)

৪. বাঁ পায়ের ওপর ভর দিয়ে বসা। এতে মল বের হওয়া সহজ হয়। (বায়হাকি: ৪৬৬; মজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০২০) 

৫. টয়লেটে বাঁ পা দিয়ে প্রবেশ করা এবং ডান পা দিয়ে বের হওয়া। (নাসায়ি: ১১১; আহমাদ: ২৬৩২৬) 

৬. মাথা ঢেকে রাখা। (বায়হাকি: ৪৬৪) 

৭. গর্তে প্রস্রাব না করা। কারণ ভেতরে সাপ পোকামাকড় থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। (আবু দাউদ: ২৭; শরহুস সুন্নাহ: ১ / ৫৬) 

৮. রাস্তা অথবা কবরস্থানে প্রস্রাব–পায়খানা না করা। (মুসলিম: ৩৯৭; আল-ফিকহুল ইসলামি: ১ / ৩০৮-৩০৯) 

৯. মানুষের আশ্রয় নেয় এমন কোনো গাছের ছায়ায় বা ফলবান গাছের নিচে প্রস্রাব–পায়খানা করা নিষেধ। (মুসলিম: ৩৯৭; আবু দাউদ: ২৪; আল-ফিকহুল ইসলামি: ১ / ৩১০) 

১০. প্রস্রাব–পায়খানা করার সময় প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা কিংবা কোরআন তিলাওয়াত ও জিকির করা অনুচিত। (আবু দাউদ: ১৪; মুসলিম: ৫৫৫)

১১. কিবলার দিকে মুখ করে বা পেছনে ফিরে প্রস্রাব-পায়খানা করা মাকরুহ তাহরিমি তথা অতি নিন্দনীয়। (বুখারি: ৩৮০)

১২. চৌবাচ্চা, পানির ট্যাংক বা ছোট আয়তনের বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব-পায়খানা করা মাকরুহ তাহরিমি। (মুসলিম: ৪২৩, শরহুন নববি: ১ / ৪৫৪) 

১৩. বদ্ধ বেশি পানি অথবা প্রবহমান পানিতে প্রস্রাব-পায়খানা করা মাকরুহ তানজিহি। (মুসলিম: ৪২৫, আল-বাহরুর রায়েক: ১ / ৩০১)   

১৪. গোসলের স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করা মাকরুহ। (তিরমিজি: ২১) 

১৫. কূপ, নদী ও চৌবাচ্চার আশপাশে প্রস্রাব-পায়খানা করা মাকরুহ। (আবু দাউদ: ২৪)

১৬. খোলা স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় সতর ঢেকে রাখা উচিত। (মুসলিম: ৫১৭)

১৭. কোনো অপারগতা ছাড়া ডান হাতে এস্তেনজা করা মাকরুহ। (আহমাদ: ২৬৩২৬)

১৮. অপারগতা ছাড়া দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা মাকরুহ। এতে প্রস্রাবের ছিটা গায়ে লাগার আশঙ্কা থাকে। (তিরমিজি: ১২; আহমাদ: ১৯৫৫৫) 

১৯. প্রস্রাব-পায়খানা শেষে বের হওয়ার পর দোয়া পড়া—আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়াফানি। অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমার অস্বস্তি দূর করে স্বস্তি দিয়েছেন।   

২০. এস্তেনজা করার পর মাটিতে হাত মাজবে বা অন্য কোনো কিছু দিয়ে হাত ধুয়ে নেবে। (বুখারি: ২৬৬; মুসলিম: ৩১৭; আবু দাউদ: ৪৫; ইবনে মাজাহ: ৬৭৮; নাসায়ি: ১ / ৪৫)

২১. সন্দেহ দূর করতে প্রস্রাবের পর কাপড় বা লজ্জাস্থানে পানি ছিটানো সুন্নত। (দারেমি: ৭১১; বায়হাকি: ১ / ১৬১) 

২২. আল্লাহর নাম আছে এমন বস্তু নিয়ে টয়লেটে যাওয়া অনুচিত। (সুরা হজ: ৩২; বুখারি: ৫৮৭২; মুসলিম: ২০৯; মাজমু: ২ / ৮৭; মুগনি: ১ / ২২৭)
 
২৩. ঢিলা ধরে জনসম্মুখে হাঁটাহাঁটি-নাচানাচি করা অনুচিত। এ ছাড়া ঢিলা ধরে ৪০ কদম হাঁটার কথা হাদিস থেকে প্রমাণিত নয়। (আহসানুল ফাতওয়া, ১ম খণ্ড)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ১০ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৯ মিনিট
ফজর০৫: ২০ মিনিট০৬: ৩৯ মিনিট
জোহর১২: ০২ মিনিট০৩: ৪৫ মিনিট
আসর০৩: ৪৬ মিনিট০৫: ২১ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৩ মিনিট০৬: ৪২ মিনিট
এশা০৬: ৪৩ মিনিট০৫: ১৯ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত