Ajker Patrika

রবের সন্তুষ্টি অর্জনে হোক কোরবানি

হুসাইন আহমদ, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ২০: ৫৮
কোরবানির পশুর সঙ্গে খেলায় মেতে উঠেছে এক শিশু। ছবি: সংগৃহীত
কোরবানির পশুর সঙ্গে খেলায় মেতে উঠেছে এক শিশু। ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল আজহা আমাদের সামনে ফজিলতপূর্ণ অনেকগুলো ইবাদতের সুযোগ নিয়ে আসছে। এর মধ্যে বরকতময় ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত হচ্ছে কোরবানি করা। ইসলামে এই কোরবানি করার গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে নবী, আহলে কিতাবদের তুমি আদমের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনা ভালো করে বর্ণনা করো। তারা যখন কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো। কিন্তু অন্যজনের কোরবানি কবুল হলো না। ক্ষিপ্ত হয়ে সে বলল, আমি তোমাকে খুন করব। অপরজন বলল, প্রভু তো শুধু আল্লাহ-সচেতনদের কোরবানিই কবুল করেন। (সুরা মায়েদা: ২৭)

অন্যত্র বলেছেন, ‘হে নবী, ওদের বলুন, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ, আমার সবকিছুই বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তিনি একক ও অদ্বিতীয়। এ আদেশই আমি পেয়েছি। আমি সমর্পিতদের মধ্যে প্রথম। (সুরা আনআম: ১৬২-১৬৩)

এক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ১০ বছর থেকেছেন এবং প্রতি বছর কোরবানি করেছেন। (সুনানে তিরমিজি: ১৫০৭)

অন্যত্র রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোরবানির দিন মানুষ যে কাজ করে তার মধ্যে আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় হচ্ছে রক্ত প্রবাহিত করা। অর্থাৎ কোরবানি করা। (সুনানে তিরমিজি: ১৪৯৩)

অপর এক হাদিসে হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, এতে কি আমাদের জন্য সওয়াব আছে?

তিনি বললেন, কোরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে একটি করে প্রতিদান রয়েছে। সাহাবিগণ আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, পশমওয়ালা পশুদের ব্যাপারে কী হবে? অর্থাৎ এদের পশম তো অনেক বেশি?

তিনি বললেন, পশমওয়ালা পশুদের প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১২৭)

অতঃপর ফজিলতপূর্ণ এই কোরবানির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিশুদ্ধ নিয়ত। এ জন্য যার নিয়ত বিশুদ্ধ ও খালেস হবে না—তার কোরবানিও কবুল হবে না।

কেননা, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়তের ওপরেই নির্ভরশীল। আর প্রতিটি লোক তাই পাবে, যা সে নিয়ত করবে।’

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের সৌন্দর্য ও সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না, বরং তোমাদের অন্তঃকরণ ও কাজের দিকে লক্ষ্য করেন। (সহিহ্ বুখারি: ৫১৪৪, সহিহ্ মুসলিম: ২৫৬৪)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলে দাও, প্রত্যেকেই নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ী কাজ করে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৮৪)

লেখক: মাদরাসা শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক আজ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১১
ছবি: বাসস
ছবি: বাসস

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক বসছে আজ। রোববার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৫টায় (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে ১৪৪৭ হিজরি সনের রজব মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা ও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

বাংলাদেশের আকাশে কোথাও রজব মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা ০২-৪১০৫৩২৯৪, ০২-২২৬৬৪০৫১০ ও ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ টেলিফোন নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতকালে মুমিনের আত্মিক শিক্ষা ও নৈতিক দায়িত্ব

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৫০
শীতকালে মুমিনের আত্মিক শিক্ষা ও নৈতিক দায়িত্ব

শীতকাল কেবল আবহাওয়ার একটি পরিবর্তন নয়, বরং এটি মুমিনের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রশিক্ষণের এক বিশেষ ঋতু। প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমাদের মহান আল্লাহর অসীম মহিমা ও শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পালাবদলে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা নুর: ৪৪)

ইসলামে সুস্থতার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একজন সবল ও সুস্থ মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক উত্তম ও প্রিয়।’ (সহিহ মুসলিম)। শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, তাই মুমিনের উচিত সতর্ক থাকা। পর্যাপ্ত উষ্ণ কাপড় পরিধান করা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, বিশুদ্ধ পানি পান এবং নিয়মিত হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে ইবাদতের উপযোগী রাখা জরুরি।

শীতকালকে মুমিনের ইবাদতের বসন্ত বলা হয়। কেননা এ সময় দিন ছোট হওয়ায় সহজে রোজা রাখা যায় এবং রাত দীর্ঘ হওয়ায় আরামের ঘুম বিসর্জন দিয়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে তাহাজ্জুদ আদায় করা সহজ হয়।

শীতের তীব্রতায় সমাজের অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষগুলো নিদারুণ কষ্টে ভোগে। মুমিনের ইবাদত কেবল নামাজ-রোজায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং আর্তমানবতার সেবাও ইবাদতের অংশ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা যা উপার্জন করো এবং যা আমি তোমাদের জন্য জমিন থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উত্তম বস্তু ব্যয় করো।’ (সুরা বাকারা: ২৬৭)। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষের দুঃখ দূর করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুঃখ দূর করে দেবেন।’ (জামে তিরমিজি)। তাই সাধ্যানুযায়ী শীতবস্ত্র ও খাদ্য দিয়ে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ইমানি দায়িত্ব।

শীতকাল আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা, ধৈর্য, সহমর্মিতা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির শিক্ষা দেয়। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত এই ঋতুকে অবহেলায় না কাটিয়ে ইবাদত, আর্তমানবতার সেবা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সার্থক করে তোলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ০৬ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৪ মিনিট
ফজর০৫: ১৫ মিনিট০৬: ৩৫ মিনিট
জোহর১১: ৫৭ মিনিট০৩: ৪০ মিনিট
আসর০৩: ৪১ মিনিট০৫: ১৫ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৭ মিনিট০৬: ৩৬ মিনিট
এশা০৬: ৩৭ মিনিট০৫: ১৪ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নূরানী বোর্ডের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৯০.৩৬

ইসলাম ডেস্ক 
নূরানী বোর্ডের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৯০.৩৬

নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড বাংলাদেশ (এনটিকিউবি) পরিচালিত তৃতীয় শ্রেণির ১৯তম সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বোর্ডের মোহাম্মদপুরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের শায়খুল কোরআন মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই ফল প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের পরিচালক মাওলানা কালিমুল্লাহ জামিল হুসাইন।

দেশের মোট ১ হাজার ১২টি কেন্দ্রে গত ২৯ নভেম্বর দেশব্যাপী একযোগে এই সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়ে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। এতে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৩ হাজার ৫৩২ এবং পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা কালিমুল্লাহ জামিল হুসাইন বলেন, ‘দেশব্যাপী তরুণ আলেমদের কাছে অনুরোধ করছি, একটি নীরব সাধনায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে হবে। তা হচ্ছে প্রতিটি গ্রামে-পাড়া-মহল্লায় নূরানি মাদ্রাসা, নূরানি স্কুল, নূরানি মক্তব ও ইসলামিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের প্রতিটি সন্তানের কাছে দ্বীন শেখাকে সহজ থেকে সহজতর করতে হবে।’

পরীক্ষা বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব ইসমাইল বেলায়েত হুসাইন বলেন, ‘শিশুরা কাঁচা মাটির মতো। তাদের যেভাবে গড়ে তুলবেন, তারা সেভাবেই গড়ে উঠবে। আমরা দ্বীন ধর্ম ও মাতৃভূমির ভালোবাসায় সন্তানদের গড়ে তুলি। সুনাগরিক ও দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে কাজ করে নূরানী বোর্ড।’

এদিকে অনুষ্ঠানে তরুণদের জন্য ‘শায়খুল কোরআন আল্লামা কারি বেলায়েত হুসাইন (রহ.) স্কলারশিপ’-এরও ঘোষণা দেওয়া হয়। ১০ লাখ টাকা সমমূল্যের এই স্কলারশিপ পাবেন ১০০ তরুণ। মনোনীত ১০০ তরুণ ১০ হাজার টাকা সমমূল্যের নূরানি মুয়াল্লিম প্রশিক্ষণ কোর্সটি বিনা মূল্যে করতে পারবেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আবু বকর, মাওলানা তারেক হুসাইনসহ নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ডের কর্মকর্তা ও দায়িত্বশীলেরা।

প্রসঙ্গত, শায়খুল কোরআন আল্লামা কারি বেলায়েত হুসাইন (রহ.) প্রতিষ্ঠিত এই বোর্ডটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলেও শিশু শিক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে এই ধারার হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সারা দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত