Ajker Patrika

বৃষ্টি, কোরআন ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা

ইজাজুল হক
বৃষ্টি, কোরআন ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা

বৃষ্টি আল্লাহর বিস্ময়কর অনুগ্রহের নাম। বৃষ্টিশূন্য খরার ভেতর দিন যাপন করতে বাধ্য মানুষই কেবল এ কথা হাড়ে হাড়ে অনুভব করতে পারে। দিনের পর দিন সুবিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে তারা; কয়েক ফোঁটা শীতল রহমতের জন্য কায়মনোবাক্যে আকুতি জানায়। এমন মুহূর্তে এক পশলা বৃষ্টি ধূসর-নিষ্প্রাণ মরুর বুকেও জাগিয়ে তোলে প্রাণের ছোঁয়া; দাবানলে পোড়া শস্যখেত এবং উজাড় হওয়া বনে আনে সবুজের সমারোহ।

বৃষ্টির এই জীবন-জাগানো প্রকৃতির সঙ্গে কোরআনের রয়েছে গভীর যোগসূত্র। মানুষের ঘুমন্ত হৃদয় জাগাতে এবং মরচে ধরা নিষ্প্রাণ অন্তর সুশোভিত করতেই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। গুনাহের দাবদাহে ফেটে চৌচির হৃদয়ের জমিতে সবুজ ফসল ফলাতে কোরআনই এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টি।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বিভিন্নভাবে বৃষ্টির প্রসঙ্গ এনেছেন। পৃথিবীর জীবন-চঞ্চলতা ও অস্তিত্ব রক্ষায় এ এক অনিবার্য উপাদান। বৃষ্টি, পানি ও সাগর-নদীর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ একমাত্র আল্লাহরই হাতে। তিনি এই মহা নিয়ামতের কথা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে তোমাদের জীবিকার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফলমূল উৎপন্ন করেন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৩২)

শুধু বৃষ্টিই নয়, সাগর থেকে বৃষ্টি সঞ্চারী মেঘমালা আকাশজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া এবং বর্ষণের পর ফের তা মানুষের কল্যাণে সংরক্ষণ করে রাখার ক্ষমতাও তাঁরই হাতে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আমি বৃষ্টি সঞ্চারী বায়ু পাঠাই। এরপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি আর তোমাদের পান করাই। মূলত তোমরা তা সংরক্ষণ করতে সক্ষম নও।’ (সুরা হিজর: ২২)

ছবি: ফ্রিপিকপৃথিবীতে এমন অনেক বিস্তীর্ণ অঞ্চল রয়েছে, যেখানে প্রাণধারণ অনেকাংশেই অসম্ভব; সবুজ-শ্যামল পৃথিবী আর ভেজা মাটির ঘ্রাণ সেখানে স্বপ্নের চেয়ে বেশি কিছু নয়। তবে সেই ঊষর মরুর বুকে যখন রহমতের বৃষ্টি নেমে আসে, তখন রুক্ষ মাটির কোষে কোষে প্রাণের সঞ্চার হয় এবং মাটি ভেদ করে বেরিয়ে আসে সবুজাভ বৃক্ষ-লতা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যিনি আকাশ থেকে পরিমিত বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এরপর তা দিয়ে আমি মৃত ভূ-ভাগ সঞ্জীবিত করি। এভাবেই তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে।’ (সুরা যুখরুফ: ১১)

পাখির চঞ্চু থেকে পড়ে যাওয়া শস্যদানাটিও একটু বৃষ্টির ছোঁয়া কিংবা হালকা আর্দ্রতা পেলে গাছ হয়ে তরতরিয়ে বেড়ে ওঠে এবং দুহাত ভরে আমাদের শস্য দান করে। যত রকমারি শাকসবজি ও বাহারি ফলফলাদি আমরা খাই, সবই বৃষ্টির দান। আর বৃষ্টি, সে তো মহান আল্লাহর দান! এরশাদ হচ্ছে, ‘আর তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এরপর তা দিয়ে আমি সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি। এরপর তা থেকে সবুজ পাতা গজিয়ে দিই—তা থেকে বের করি ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা। আর খেজুরগাছের মাথি থেকে বের করি ঝুলন্ত থোকা, সৃষ্টি করি আঙুরের বাগান, জয়তুন ও ডালিম—একই রকম, আবার রকমারিও। গাছে যখন ফল আসে এবং তা পাকে, তখন তাতে গভীর দৃষ্টি দাও। এসবে মুমিনদের জন্য রয়েছে অনেক শিক্ষা।’ (সুরা আনআম: ৯৯)

একইভাবে মানুষের অন্তরের বৃষ্টি হলো পবিত্র কোরআন। বৃষ্টি যেমন মাটি নরম করে পৃথিবী সাজায়, কোরআনও মানুষের হৃদয় নরম করে আলোকিত জীবন গড়তে সাহায্য করে। ঘুমন্ত বিবেক, মৃত আত্মা এবং গুনাহ ভরা পাথর-কঠিন মন ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে ওঠে কোরআনের পরশেই। তাই তো বৃষ্টির সঙ্গে মানবহৃদয়কে তুলনা করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘মুমিনদের জন্য কি সময় আসেনি যে আল্লাহর স্মরণ এবং যে সত্য (কোরআন) নাজিল হয়েছে তার মাধ্যমে তাদের হৃদয়গুলো নরম হবে? আর তারা তাদের মতো যেন না হয়, যাদের আগে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, এরপর বহুকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে যায়। তাদের বেশির ভাগই ছিল পাপাচারী। জেনে রেখো, আল্লাহ ভূ-ভাগকে মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন। আমি তোমাদের জন্য আমার নিদর্শনগুলো খুলে বলেছি যেন তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা হাদিদ: ১৬-১৭)

মুমিনের হৃদয়কে জমি এবং কোরআনকে বৃষ্টি হিসেবে কল্পনা করুন। কোরআনের শীতল বৃষ্টি যখন রুক্ষ হৃদয়ের জমিতে পড়ে, তখন তা ইমানের বলে বলীয়ান এবং প্রবল আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এরপর জীবনের অন্তিম লক্ষ্য জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছুটে চলে অবিরাম।

তবে বৃষ্টি যেমন তার ছোঁয়ায় ভিন্ন ভিন্ন জাতের বৃক্ষ উৎপন্ন করে, তেমনি কোরআনও মানুষের হৃদয়কে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে গড়ে তোলে। আপনি দেখবেন, প্রত্যেক বিশ্বাসী মানুষের আলাদা ব্যক্তিত্ব, গুণ, অভিজ্ঞতা, আদর্শ, ভালোবাসা ও ঘৃণার জায়গা রয়েছে। তবে মত-পথের ভিন্নতা সত্ত্বেও মুমিনের গন্তব্য একটিই—জান্নাত। এ যেন সবাই একই বৃষ্টির ফসল!

বিশ্বাসী প্রাণে মতভিন্নতা থাকবেই—এটিই বিশ্বাসের সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা। কে কোন ভালো কাজের মাধ্যমে অনন্ত সাফল্যের অধিকারী হবে, তা আমরা কেউই জানি না। কোনো সৎকাজই পরকালের পরীক্ষায় উতরে যেতে যথেষ্ট নয়—যদি হৃদয়টা আল্লাহর ভয়ে বিগলিত এবং কোরআনের সত্য গ্রহণে উন্মুখ না হয়। হৃদয় যত সজীব, বলিষ্ঠ এবং কোরআনের রঙে রঙিন হবে, তত তা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে সহায়ক হবে।

বৃষ্টির ছোঁয়ায় উৎপন্ন হাজারো রকমের বৃক্ষের সহাবস্থান যেমন আমরা মেনে নিই, তেমনি বিশ্বাসী হৃদয়ের বিচিত্রতাও আমাদের সাদরে গ্রহণ করতে হবে। হাজারো ভিন্ন জাতের বৃক্ষের সমন্বয়ে যেমন সুবিশাল আমাজন বন গড়ে উঠেছে, তেমনি কোটি কোটি জীবন্ত প্রাণের বন্ধনে গড়ে উঠবে শক্তিশালী মানবসমাজ। কারণ নিজের মতের ওপর পুরো পৃথিবী গড়ে তোলা আমাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। তাই আমাদের দায়িত্ব হলো, কোরআনের বৃষ্টিতে আমাদের ও চারপাশের হৃদয়গুলো আর্দ্র করা, মতবৈচিত্র্য মেনে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুসংহতভাবে বসবাস করা এবং সুন্দর-সহিষ্ণু পৃথিবী গড়ে তোলা। 

লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ১০ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৯ মিনিট
ফজর০৫: ২০ মিনিট০৬: ৩৯ মিনিট
জোহর১২: ০২ মিনিট০৩: ৪৫ মিনিট
আসর০৩: ৪৬ মিনিট০৫: ২১ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৩ মিনিট০৬: ৪২ মিনিট
এশা০৬: ৪৩ মিনিট০৫: ১৯ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত