Ajker Patrika

আলোর বাতিঘর মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ চৌধুরী (রহ.)

হেদায়াতুল্লাহ বিন হাবিব, ঢাকা
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, ১৮: ৩৮
মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ চৌধুরী (রহ.)। একজন আদর্শ শিক্ষক। ছাত্র গড়ার কারিগর। ইলম ও আমলের একজন অপূর্ব সমন্বয়ক। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জামেউল উলুম মাদ্রাসার সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল ও শিক্ষাসচিব। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের উল্লেখযোগ্য অনেক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তার প্রায় তিন যুগের অধ্যাপনা। ব্যক্তি জীবনে ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র, সজ্জন ও সম্ভ্রান্ত। সবার মন জয় করে চলার চমৎকার এক গুণ ছিল তাঁর মাঝে। চলতি বছরের গত ১৮ মে (রবিবার) তিনি দুনিয়ার সফর শেষ করে পরপারে পাড়ি জমান।

৫৮ বছর হায়াত পেয়েছিলেন মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ চৌধুরী (রহ.)। অল্প সময়ের বর্ণাঢ্য এক জীবনের অধিকারী ছিলেন তিনি। প্রধানত শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতা করেছেন সৌদি আরব, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের প্রসিদ্ধ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে। বিস্তৃত কর্মজীবনের সুবাদে দেশ-বিদেশে তাঁর অসংখ্য ছাত্র-শিষ্য, ভক্ত ও অনুরাগী ছড়িয়ে আছে। শায়খের ইন্তেকালে সকলের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। কর্মজীবনের ব্যস্ততা ও দূরত্ব-সহ নানাবিধ কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জানাজায় শরিক হতে পারেননি অনেকে। দূর থেকেই প্রিয় শিক্ষকের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেছেন

জন্ম: মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ চৌধুরী (রহ.) ১৯৬৭ সনের ২৭ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার হিয়ালা গ্রামের স্বনামধন্য চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মাওলানা হারুনুর রশীদ চৌধুরী। পারিবারিকভাবে তাঁরা খুবই সম্ভ্রান্ত, ভদ্র ও সুশিক্ষিত ছিলেন।

শিক্ষাদীক্ষা: তিনি প্রথম জীবনে কিছুদিন কিশোরগঞ্জে তাঁর বাবার কাছে থেকে পড়াশোনা করেন। এরপরে হবিগঞ্জ সদরের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রায়ধর মাদ্রাসায় মক্তব বিভাগে ভর্তি হন। তৎকালীন বাংলাদেশে, বিশেষত সিলেট অঞ্চলে এই মাদ্রাসার খুব সুনাম-সুখ্যাতি ছিল। বড় বড় মনীষী আলেম এখানে পড়াশোনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাওলানা তাফাজ্জল হক হবিগঞ্জী, মুফতি তাজুল ইসলাম (আরজাবাদ), মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী প্রমুখ। মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ চৌধুরী (রহ.) একাধারে শরহে জামি পর্যন্ত সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে এখানে পড়াশোনা করেন। এরপর মেশকাত জামাত পর্যন্ত পড়েন বাহুবল কাসিমুল উলুম মাদ্রাসায়। এখান থেকে ১৯৮৮ সনে মেশকাতের পরীক্ষায় ‘দ্বীনি শিক্ষা বোর্ড হবিগঞ্জ’-এ প্রথম স্থান অধিকার করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। সর্বশেষ দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস পড়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটান।

কর্মজীবন: ১৯৮৯ সনে ছাত্র জীবন শেষ হলে ওই বছরই কর্মের ময়দানে নেমে পড়েন। তাঁর কৃতিত্বের কারণে ছাত্র জীবনের ২য় প্রতিষ্ঠান কাসিমুল উলুম বাহুবল মাদ্রাসা থেকে ডাক আসে। উস্তাদদের পরামর্শে এখানে চলে আসেন। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত টানা ১১ বছর মুহাদ্দিস হিসেবে সেখানে কর্মরত থাকেন। এরপরে আল্লামা তাফাজ্জল হক হবিগঞ্জী (রহ.) পরিচালিত জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া উমেদনগর মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগ দেন। সেখানে দুই বছর অধ্যাপনা করে সৌদি আরব পাড়ি জমান। সেখানে ‘হাইয়া আমর বিল মারুফ একাডেমিতে’ ইসলাম প্রচারক ও শিক্ষক হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দেশে ফিরে পুনরায় উমেদনগর মাদ্রাসায় পূর্বের পদে যোগদান করেন। ২০০৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী দারুল আরকাম মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস ও মুফাসসির হিসেবে যুক্ত হোন। পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা মাদ্রাসায়ও হাদিসের পাঠদান করেন।

২০০৭ সালের শুরুতে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জামেউল উলুম মাদ্রাসার নাজেমে তালিমাত বা শিক্ষাসচিব পদ শূন্য হলে একজন চতুর্মুখী জ্ঞান ও গুণের অধিকারী সুযোগ্য লোকের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন তাঁর বাল্যবন্ধু এবং দীর্ঘদিনের সহপাঠী, জামেউল উলুম মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি আবদুল আজিজ কাসেমী তাঁকে ঢাকায় আসার পরামর্শ দেন। এবং জামেউল উলুম কর্তৃপক্ষ উক্ত পদের জন্য তাঁকে উপযুক্ত মনে করে নিয়োগ কনফার্ম করে। ভাইস প্রিন্সিপাল ও নাজেমে তালিমাত হিসেবে রাজধানীতে তাঁর নতুন কর্মজীবনের সূচনা হয়। সেখানে তিনি সহিহ্ বুখারি, সহিহ্ মুসলিম ও হেদায়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিতাবসমূহ পাঠদান করেন।

পারিবারিক জীবন: মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ চৌধুরী (রহ.) দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। বড় ছেলে আদনান ইতালিপ্রবাসী। ছোট ছেলে হাফেজ বোরহান মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। দুই মেয়ের স্বামীরা যোগ্য আলেম এবং কর্মজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত।

গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম: তিনি মূলত একজন শিক্ষাবিদ আলেম ছিলেন। শিক্ষা কেন্দ্রিক তাঁর অনেক গবেষণা ও কর্ম রয়েছে। হবিগঞ্জ দ্বীনি শিক্ষা বোর্ডের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছিলেন দুই বছর। তাঁর উস্তাদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরীর প্রতিষ্ঠিত আল-ফারুক ইসলামি গবেষণা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘদিন। গবেষণার সুবিধার্থে বাড়িতে স্বতন্ত্র পাঠাগার গড়ে তোলেন বড় পরিসরে। এ ছাড়া কর্মস্থল ঢাকাতেও বইপত্রের বিশাল সমাহার ছিল তাঁর।

সামাজিক অবদান: মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ চৌধুরী (রহ.) জীবনভর শিক্ষকতা করেছেন দেশ-বিদেশে। ফলে নিজ এলাকায় থাকা হয়েছে খুব কম সময়। তবু শেকড়ের টানে গ্রামের মানুষদের জন্য কিছু করার চিন্তা সব সময় তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত। সে থেকেই তিনি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হোন। নিজ গ্রামের ‘হিয়ালা তাফসীরুল কোরআন ও ইসলামি সমাজকল্যাণ পরিষদ’র সভাপতি ছিলেন এক যুগেরও অধিক সময়।

রচনাবলি: অধ্যাপনা ও গবেষণার পাশাপাশি মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ চৌধুরী (রহ.) বেশ কিছু কিতাব রচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য–

১. دراسة المكرم على مقدمة مسلم

২. تقليد المذاهب الأربعة

৩. تعريف اثبت الكلام في القرائة خلف الإمام

৪. খোলাসাতুন্নাহু

৫. স্বপ্ন ব্যাখ্যার মূলনীতি

অসুস্থতা: নিভৃতচারী এ শিক্ষাবিদ দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছিলেন নিরবচ্ছিন্ন। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ২০১৯-২০ সালের দিকে হঠাৎ তাঁর শরীরে এক রোগ দেখা দেয়। রোগের ধরন অনেকটা বিরল–মস্তিষ্কের রগগুলো শুকিয়ে রক্তশূন্য হতে থাকে ক্রমেই। এর প্রভাব পড়ে পুরো শরীরে। আগের মতো সবকিছু মনে রাখতে পারেন না। কথা বলতে কষ্ট হয়। শরীরে কাঁপুনি আসে। ধীরে ধীরে হাঁটাচলাও কঠিন হয়ে যায়। এমনকি শরীরে প্যারালাইসিসের প্রভাবও দেখা দেয়। অনেক ধরনের চিকিৎসা নেওয়া হয়, ডাক্তার দেখানো হয়। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয় না। এই মরণব্যাধি মাত্র দুই-তিন বছরে একদম অচলাবস্থায় নিয়ে যায় তাঁকে। অনেক সময় হুইল চেয়ারেও চলতে হতো। বিশাল এক কর্মবীরকে চোখের সামনে এভাবেই স্থবির হতে দেখে সবাই।

প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি: মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ চৌধুরী (রহ.) সর্বদা তাঁর দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। এই সব রোগ-ব্যাধির মাঝেও সকল দায়িত্ব যথাসময়ে পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। যখন থেকে দায়িত্ব আদায়ে ত্রুটি অনুভব করছিলেন, তখন থেকেই মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি নিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রতি সদয় হয়ে দরস ও দায়িত্ব কমিয়ে প্রতিবারই অব্যাহতির অনুরোধ নাকচ করে দিচ্ছিল। শায়খের খেদমতের সুবিধার্থে তাঁর স্ত্রীকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু মাদ্রাসার বেতন ভোগ করে আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে না পারায় তাঁর ভেতরে এক ধরনের পীড়া কাজ করত। তাই সর্বশেষ ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত অব্যাহতি নিয়ে গ্রামে চলে যান।

গ্রামীণ আলো-বাতাস ও প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছুদিন থাকার পরে আগের তুলনায় কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। কিছুটা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। এই সময়ে নিজ উস্তাদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরীর আগ্রহে তাঁর প্রতিষ্ঠিত নূরে মদীনা মাদ্রাসায় কিছুদিন দরস দেন। কিন্তু কিছুদিন পরে ফের শরীর খারাপ করলে এখান থেকেও অব্যাহতি নিয়ে চলে আসেন। এরপর আমৃত্যু বাড়িতেই কাটান তিনি।

ইন্তেকাল: গত ১২ মে তিনি হার্ট অ্যাটাক করলে তাঁকে সিলেট মাউন্ট এডোরা হসপিটালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতালেই রাখা হয়। সেখানেই প্রায় ৬ দিন পরে ১৮ মে সকাল ৭.৪৫ মিনিটে তিনি ইহকালের সফর সমাপ্ত করে পরকালের যাত্রা শুরু করেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শায়খের চিরসজীব হাস্যোজ্জ্বল চেহারা দেখে কবির এই পংক্তিটিই বারবার মনে পড়ছিল–

‘এমন জীবন তুমি করিও গঠন,

মরিলে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন!’

জানাজা: ওই দিনই বাদ আসর জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়। জানাজায় দূর-দুরান্ত থেকে তাঁর ছাত্র, ভক্ত, গুণমুগ্ধরা অংশ নেন। তাঁর সর্বশেষ কর্মস্থল ঢাকা থেকে শতাধিক ছাত্রের এক কাফেলা অংশগ্রহণ করে। কর্মস্থলসমূহের সহকর্মীরাও তাঁকে বিদায় জানাতে আসেন। জানাজার ইমামতি করেন মরহুমের ছোট ছেলে হাফেজ বোরহান চৌধুরী। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে পিতার পাশেই দাফন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জন্ম যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি তার মৃত্যুও পৃথিবীর এক অমোঘ সত্য। জীবনে চলার পথে যত সাফল্য, ব্যস্ততা বা আকাঙ্ক্ষা থাকুক; মৃত্যুর মুহূর্তে সবকিছু থেমে যায়। ইসলাম এই বাস্তবতাকে অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরেছে এবং আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে প্রতিটি প্রাণী একদিন তার প্রভুর কাছে ফিরে যাবে।

মৃত্যু অবধারিত ‎সত্য। তা থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। কোনো বস্তু জীবনের অস্তিত্ব লাভ করলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

কেউ যখন মারা যায়, তার মৃত্যুর খবর শুনলে একটি দোয়া পড়তে হয়, দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে।

দোয়াটি হলো: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’

দোয়ার অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত