Ajker Patrika

হাদিসের গল্প: আল্লাহর ভয়ে সিংহাসন ছেড়ে নির্জনে চলে যান যে বাদশাহ

আসআদ শাহীন 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সহিহ হাদিসে এমন কিছু বিস্ময়কর ঘটনার কথা উল্লেখ রয়েছে, যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এবং শিক্ষণীয়। কেননা ক্ষমতার লোভ বা ইচ্ছে সবারই থাকে, কিন্তু ক্ষমতা পাওয়ার পর তা প্রত্যাখ্যান করা কল্পনাতীত বিষয়। তেমনি এক বাদশাহর গল্প, যিনি ছিলেন এক সময়ের পরাক্রমশালী রাজা—সমৃদ্ধি, ক্ষমতা ও জৌলুসে পরিপূর্ণ যাঁর জীবন। তাঁর সামনে ছিল অসংখ্য অনুচর, ছিল রাজকীয় মহিমা ও বিলাসিতা। কিন্তু এক রাতে, যখন আকাশে চাঁদের আলো নেমে এসেছিল, তিনি চিন্তায় মগ্ন হলেন।

রাজপ্রাসাদের উঁচু মিনারে দাঁড়িয়ে তিনি গভীরভাবে ভাবতে লাগলেন—এ রাজ্য, এই ক্ষমতা, এই আভিজাত্য কি চিরস্থায়ী? তাঁর অন্তর কেঁপে উঠল। তিনি অনুভব করলেন, এ রাজসিক জীবন তাঁকে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তাই তিনি শাসন ও রাজত্ব ছেড়ে এমন এক জায়গায় চলে যান, যেখানে তাঁকে কেউ চেনে না। সেখানে তিনি কেবল আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকেন এবং নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিচে গল্পটি হাদিসের ভাষ্যে উপস্থাপন করা হলো—

হজরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন—বনি ইসরাইলের এক বাদশা, যিনি হজরত মুসা (আ.)–এর পর শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন, এক রাতে বায়তুল মুকাদ্দাসের ছাদে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত সেই রাতে তিনি তাঁর অতীত জীবনের বিভিন্ন ঘটনা স্মরণ করতে লাগলেন। গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে তিনি উপলব্ধি করলেন যে, তাঁর রাজত্ব, ক্ষমতা—এসব কিছুই একদিন বিলীন হয়ে যাবে। তাঁর অন্তর উদ্বেগে কেঁপে উঠল।

অবশেষে, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন—এই জগতের জৌলুস তাঁকে আর আটকে রাখতে পারবে না। এক নির্জন রাতে, কাউকে কিছু না জানিয়ে, তিনি এক রশির সাহায্যে নিচে নেমে এলেন। পরদিন সকালে দেখা গেল, সেই রশিটি মসজিদে ঝুলে আছে, কিন্তু তিনি সেখানে নেই। তিনি চলতে চলতে সমুদ্রের তীরে এসে পৌঁছালেন। সেখানে দেখলেন, একদল শ্রমিক ইট বানানোর কাজে ব্যস্ত। তিনি তাঁদের কাছে জানতে চাইলেন, তাঁরা কীভাবে উপার্জন করেন। শ্রমিকেরা তাঁকে তাঁদের পরিশ্রমের বিনিময়ে পাওয়া মজুরির কথা জানালে, তিনি তাঁদের দলে যোগ দিলেন।

নিজের হাতে পরিশ্রম করতে লাগলেন, কষ্টার্জিত উপার্জন দিয়ে আহার করতেন এবং বাকি অংশ দান করে দিতেন। যখন নামাজের সময় হতো, তিনি ইবাদতে মগ্ন হয়ে যেতেন। একসময় শ্রমিকেরা এই ব্যতিক্রমী মানুষটির কথা তাঁদের মহাজনের কাছে জানালেন। মহাজন বিস্মিত হলেন—এই সাধারণ জীর্ণশীর্ণ শ্রমিক আসলে কে? তিনি তাঁকে ডেকে পাঠালেন। কিন্তু তিনবার পাঠানো হলেও, তিনি যেতে অস্বীকৃতি জানালেন।

অবশেষে, মহাজন নিজেই তাঁকে দেখতে এলেন। বাদশাহ যখন দেখলেন যে, কেউ তাঁকে খুঁজতে এসেছে, তখন তিনি পালিয়ে গেলেন। কিন্তু মহাজন তাঁর পিছু নিলেন এবং অবশেষে তাঁকে ধরে ফেললেন। তিনি বললেন, ‘একটু দাঁড়ান, আমি শুধু আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’

বাদশাহ থামলেন এবং ধীরে ধীরে নিজের কাহিনি বলতে লাগলেন, ‘আমি একসময়ের বাদশা ছিলাম, কিন্তু এক রাতে আমি উপলব্ধি করলাম, এই রাজ্য, এই ক্ষমতা—এসব কিছুই ক্ষণস্থায়ী। এগুলো আমাকে আমার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আমি বুঝতে পারলাম, আমার আসল কর্তব্য হলো, আমার রবের ইবাদত করা। তাই আমি সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছি, যেন কেবল আল্লাহর জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পারি।’

মহাজন বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘আপনি যদি সব ছেড়ে আল্লাহর পথে আসতে পারেন, তবে আমি কেন পারব না?’ তিনিও বাহন থেকে নেমে এলেন এবং বাদশাহকে অনুসরণ করলেন। এরপর তাঁরা দুজন একসঙ্গে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়ে গেলেন। তাঁরা আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করলেন, ‘হে আমাদের রব, আমাদের মৃত্যু যেন এক সঙ্গেই হয়।’

অবশেষে, তাঁদের দোয়া কবুল হলো। তাঁরা একসঙ্গে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন এবং তাঁদের কবর মিসরের রুমাইলা নামক স্থানে পাশাপাশি রয়েছে।

হজরত আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘যদি আমি মিসরের রুমাইলায় থাকতাম, তাহলে রাসুলুল্লাহ (সা.) যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী আমি তাঁদের কবর তোমাদের দেখিয়ে দিতে পারতাম।’ (আল বাহরুজ জাখখার,৪ / ২৬৭, হাদিস: ৩৬৮৯, আল মুজামুল কাবির, ১০ / ২১৬, হাদিস: ১০৩৭০)

গল্প থেকে শিক্ষা

চিন্তা ও গভীর মননশীলতার উপকারিতা, যা মানুষকে সঠিক উপলব্ধি ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এটি সর্বোত্তম ফল ও কল্যাণকর পরিণতি এনে দেয়, যেমনটি এই দুই ব্যক্তি চিন্তা ও বিবেচনার মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন।

দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্তি ও পরকালের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাহাত্ম্য। আল্লাহর কাছে যে অনন্ত পুরস্কার রয়েছে, তা কখনো ক্ষয়প্রাপ্ত হবে না, বরং স্থায়ী ও চিরকালীন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে যা কিছু আছে, তা ফুরিয়ে যাবে; আর আল্লাহর কাছে যা আছে, তা চিরস্থায়ী।’ (সুরা নাহল: ৯৬)

এটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও অবধারিত সত্য। কেননা কোরআন-হাদিসে বারবার দুনিয়ার মোহমুক্তির প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং দুনিয়াকে তুচ্ছ মনে করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও তাঁর কথা, আচরণ ও কর্মের মাধ্যমে মানুষকে দুনিয়াবিমুখতার শিক্ষা দিয়েছেন।

পরকালীন সফলতার জন্য পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করা কোনোভাবেই দুনিয়াবিমুখতার (জুহদ) পরিপন্থী নয়। বরং দুনিয়াবিমুখতার বিরোধী হলো, বিলাসিতায় মত্ত হওয়া, ভোগবিলাসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়া, পরিপূর্ণ স্বাচ্ছন্দ্য খোঁজা, দামি পোশাক-পরিচ্ছদ ও বাহন নিয়ে অতিরিক্ত আসক্ত হওয়া। এ দুই ব্যক্তি দুনিয়াবিমুখতা অবলম্বন করেছিলেন—তাঁরা কেবল প্রয়োজনীয় আহারের জন্য পরিশ্রম করতেন, কিন্তু ভোগবিলাসের পথে নিজেদের জড়াননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ১০ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৯ মিনিট
ফজর০৫: ২০ মিনিট০৬: ৩৯ মিনিট
জোহর১২: ০২ মিনিট০৩: ৪৫ মিনিট
আসর০৩: ৪৬ মিনিট০৫: ২১ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৩ মিনিট০৬: ৪২ মিনিট
এশা০৬: ৪৩ মিনিট০৫: ১৯ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত