Ajker Patrika

ওয়াজ মাহফিলের আয়োজকদের যা করতে হবে

ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়। এখানে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজকদের প্রতি কিছু পরামর্শমূলক প্রস্তাব দিয়েছেন খ্যাতিমান ইসলামি আলোচক ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ

শায়খ আহমাদুল্লাহ
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ২৬
ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি
ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি

ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্য

ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্য হওয়া চাই কোরআন-হাদিসের আলোকে এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে সর্বসাধারণের কাছে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা, সামাজিক অসংগতি এবং ত্রুটিবিচ্যুতি জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে দূর করার প্রয়াস চালানো, নীতিনৈতিকতায় সমৃদ্ধ দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করা এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এর বিপরীতে অন্য কোনো পার্থিব স্বার্থ যেন আয়োজনের সঙ্গে জড়িত না থাকে, তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

ওয়াজের উত্তম সময়

ওয়াজ মাহফিলের জন্য আদর্শ সময় হওয়া উচিত বাদ আসর থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। তারপর মাহফিলস্থলে এশার সালাত আদায়ের মাধ্যমে মাহফিল সমাপ্ত হলে সেটা হবে সব দিক থেকে সুন্নাহসম্মত ও যথার্থ। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে যাওয়া পছন্দ করতেন এবং এশার পর আলাপচারিতা অপছন্দ করতেন। তাহাজ্জুদ ও ফজরের সালাত আদায়ের জন্য রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা রাখে।

প্রশাসনের অনুমোদন ও স্বচ্ছতা

ওয়াজ মাহফিলের লক্ষ্যই যেখানে নৈতিকতার দীক্ষা দেওয়া, সেখানে মাহফিল করতে গিয়ে যেন কোনো প্রকার অসততা বা অনৈতিকতার আশ্রয় নেওয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা অবশ্যকর্তব্য। স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতি বা অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলে তা নিয়েই মাহফিল আয়োজন করা সুশৃঙ্খল মাহফিলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। গোঁজামিল করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মাহফিল করার চেষ্টা ইসলাম অনুমোদন করে না।

বিদ্যুৎ ও মাইকের ব্যবহার

অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা মোটেও ঠিক হবে না। নিজস্ব ব্যবস্থা না থাকলে প্রয়োজনে আশপাশের কোনো বাসা কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে নিরাপত্তা ও ধারণক্ষমতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি ও বিল পরিশোধ সাপেক্ষে বিদ্যুৎ নেওয়া যেতে পারে। তেমনিভাবে মাহফিলের মাইক অনেক বেশি দূর-দূরান্ত পর্যন্ত স্থাপন করার কারণে যদি অন্য ধর্মের মানুষের বিরক্তি কিংবা কোনো রোগী বা কারও কষ্টের কারণ হয়, তাহলে তা কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। কারণ কাউকে ওয়াজ শুনতে বাধ্য করা কিংবা সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত করা ও কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ।

আলোচক কেমন হবেন

শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি, মানুষের কল্যাণ ও দায়িত্ববোধ থেকে ওয়াজ করতে চান এবং কোরআন-হাদিসের পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন, বিনম্রভাবে সুন্দর ও শুদ্ধ ভাষায় আলোচনা ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন—এমন দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ আলেমদেরই দাওয়াত দেওয়া উচিত। ওয়াজের নামে বিভিন্ন শ্রেণি ও গোষ্ঠীর অযাচিত সমালোচনা, দৃষ্টিকটু আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি করা, অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি, বানোয়াট-ভিত্তিহীন উক্তি ও মন্তব্য মাহফিলের গাম্ভীর্য এবং সৌন্দর্য বিনষ্ট করে। আলোচনা হওয়া উচিত গঠনমূলক এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ে।

প্রশ্নোত্তর পর্ব ও কুইজ

ওয়াজ মাহফিলে শুধু বক্তা বক্তব্য দিলেন আর শ্রোতারা শুনলেন বা সায় দিলেন, এতে শ্রোতাদের অংশগ্রহণ পুরোপুরি নিশ্চিত হয় না। সে জন্য আলোচনা শেষে শ্রোতাদের মনের জিজ্ঞাসাগুলো তুলে আনতে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকলে মাহফিল অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়। অবশ্য প্রশ্নগুলো আগে থেকে সংগ্রহ করে উত্তরদাতা দেখে প্রস্তুতি নিয়ে নিলে সেটা হবে অনেক বেশি অর্থবহ ও নির্ভুল। আর সবশেষে শ্রোতারা কতটা শিখতে বা জানতে পারলেন, সেটা পরখ করার জন্য উপস্থাপিত বক্তব্য থেকে শ্রোতাদের প্রশ্ন করে সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে।

মাহফিল চলাকালীন করণীয়

মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষা ও আগত শ্রোতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আয়োজকদের দায়িত্ব। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। ওয়াজ মাহফিলে যেন ইসলামের সুমহান দাওয়াতের আবহ থাকে এবং তা যেন প্রদর্শনপ্রিয়তা, লৌকিকতা ও এ-জাতীয় কোনো মন্দ কাজের প্ল্যাটফর্ম না হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিংবা গাড়ি থামিয়ে ডোনেশন কালেকশন করা অপমানজনক ও বিরক্তিকর কাজ, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাসম্ভব হালাল উপার্জনকারীদের ডোনেশন নেওয়া উচিত।

মাহফিলের প্রচারনীতি

মাহফিলের প্রচারণার জন্য তৈরি করা ব্যানার-পোস্টার ইত্যাদির ভাষা যেন শুদ্ধ ও নির্ভুল হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। পোস্টার বা ব্যানারে কোনো আলোচকের পরিচয়-পদবি লিখতে গিয়ে ভুল ও অতিরঞ্জন করা চরম অন্যায়। উপস্থাপনার সময় কোনো আলোচকের পরিচয় উল্লেখ করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি ও অত্যুক্তি করা বেমানান। মাহফিলের আলোচনার অডিও-ভিডিও ধারণ করা এবং তা অনলাইনে প্রচার করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। এ কাজটি আয়োজকদের তত্ত্বাবধানে এবং বক্তার পূর্ণ সম্মতি নিয়ে করা আবশ্যক। অন্য কাউকে অনুমতি দিলেও তা প্রকাশের আগে পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। যারা বিভিন্ন মাহফিলের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউব-ফেসবুকে দর্শক বাড়ানোর জন্য দৃষ্টিকটু, মিথ্যা ও আপত্তিকর থাম্বনেইল কিংবা শিরোনাম দেয়, কোনো অবস্থাতেই তাদের রেকর্ডের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।

আলোচকদের সম্মানী

আলোচকদের উচিত, দ্বীন প্রচারের মানসিকতা নিয়ে ওয়াজ করা। ওয়াজকে যদি অন্য দশটা পেশার মতো একটা পেশা বানানো হয়, তাহলে সেই ওয়াজ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের খুব বেশি উপকার হবে না। তবে যেসব দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে প্রায় পুরো সময় সে কাজে আত্মনিয়োগ করতে হয় এবং দ্বীনের জন্য তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সেসব কাজ করে পারিশ্রমিক নেওয়াকে বিশ্বের প্রায় সব ইসলামিক স্কলারই জায়েজ মনে করেন। তাই আয়োজকদের উচিত, আলোচকের গাড়িভাড়া, পথখরচ এবং অন্যান্য খরচের পাশাপাশি সম্মানজনক হাদিয়া পেশ করা। তবে এ বিষয়ে দর-কষাকষি করা ও চড়া মূল্য হাঁকানো কখনোই প্রকৃত আলেমের কাজ হতে পারে না।

হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতা

মাহফিল উপলক্ষে উত্তোলন করা আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি খুবই জরুরি। অনেক সময় আয়োজকেরা মাহফিলের জন্য বিস্তর টাকা তুলে আলোচকদের যৎসামান্য হাদিয়া দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বণ্টন করে নেন, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে মাহফিলের কথা বলে টাকা তুলে মাহফিলে কম খরচ করে সেটা দিয়ে অন্য কোনো কল্যাণমূলক কাজ করেন—এগুলো গর্হিত কাজ। তবে সবকিছু যথাযথভাবে সম্পন্ন করার পরও যদি টাকা উদ্বৃত্ত থাকে, তাহলে দানকারীদের মৌন সম্মতি বিবেচনায় তা কোনো ভালো কাজে ব্যয় করা যাবে।

ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্য হওয়া চাই কোরআন-হাদিসের আলোকে এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে সর্বসাধারণের কাছে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা, সামাজিক অসংগতি এবং ত্রুটিবিচ্যুতি জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে দূর করার প্রয়াস চালানো, নীতিনৈতিকতায় সমৃদ্ধ দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করা এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এর বিপরীতে অন্য কোনো পার্থিব স্বার্থ যেন আয়োজনের সঙ্গে জড়িত না থাকে, তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

ওয়াজের উত্তম সময়

ওয়াজ মাহফিলের জন্য আদর্শ সময় হওয়া উচিত বাদ আসর থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। তারপর মাহফিলস্থলে এশার সালাত আদায়ের মাধ্যমে মাহফিল সমাপ্ত হলে সেটা হবে সব দিক থেকে সুন্নাহসম্মত ও যথার্থ। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে যাওয়া পছন্দ করতেন এবং এশার পর আলাপচারিতা অপছন্দ করতেন। তাহাজ্জুদ ও ফজরের সালাত আদায়ের জন্য রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা রাখে।

প্রশাসনের অনুমোদন ও স্বচ্ছতা

ওয়াজ মাহফিলের লক্ষ্যই যেখানে নৈতিকতার দীক্ষা দেওয়া, সেখানে মাহফিল করতে গিয়ে যেন কোনো প্রকার অসততা বা অনৈতিকতার আশ্রয় নেওয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা অবশ্যকর্তব্য। স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতি বা অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলে তা নিয়েই মাহফিল আয়োজন করা সুশৃঙ্খল মাহফিলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। গোঁজামিল করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মাহফিল করার চেষ্টা ইসলাম অনুমোদন করে না।

বিদ্যুৎ ও মাইকের ব্যবহার

অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা মোটেও ঠিক হবে না। নিজস্ব ব্যবস্থা না থাকলে প্রয়োজনে আশপাশের কোনো বাসা কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে নিরাপত্তা ও ধারণক্ষমতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি ও বিল পরিশোধ সাপেক্ষে বিদ্যুৎ নেওয়া যেতে পারে। তেমনিভাবে মাহফিলের মাইক অনেক বেশি দূর-দূরান্ত পর্যন্ত স্থাপন করার কারণে যদি অন্য ধর্মের মানুষের বিরক্তি কিংবা কোনো রোগী বা কারও কষ্টের কারণ হয়, তাহলে তা কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। কারণ কাউকে ওয়াজ শুনতে বাধ্য করা কিংবা সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত করা ও কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ।

আলোচক কেমন হবেন

শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি, মানুষের কল্যাণ ও দায়িত্ববোধ থেকে ওয়াজ করতে চান এবং কোরআন-হাদিসের পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন, বিনম্রভাবে সুন্দর ও শুদ্ধ ভাষায় আলোচনা ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন—এমন দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ আলেমদেরই দাওয়াত দেওয়া উচিত। ওয়াজের নামে বিভিন্ন শ্রেণি ও গোষ্ঠীর অযাচিত সমালোচনা, দৃষ্টিকটু আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি করা, অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি, বানোয়াট-ভিত্তিহীন উক্তি ও মন্তব্য মাহফিলের গাম্ভীর্য এবং সৌন্দর্য বিনষ্ট করে। আলোচনা হওয়া উচিত গঠনমূলক এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ে।

প্রশ্নোত্তর পর্ব ও কুইজ

ওয়াজ মাহফিলে শুধু বক্তা বক্তব্য দিলেন আর শ্রোতারা শুনলেন বা সায় দিলেন, এতে শ্রোতাদের অংশগ্রহণ পুরোপুরি নিশ্চিত হয় না। সে জন্য আলোচনা শেষে শ্রোতাদের মনের জিজ্ঞাসাগুলো তুলে আনতে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকলে মাহফিল অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়। অবশ্য প্রশ্নগুলো আগে থেকে সংগ্রহ করে উত্তরদাতা দেখে প্রস্তুতি নিয়ে নিলে সেটা হবে অনেক বেশি অর্থবহ ও নির্ভুল। আর সবশেষে শ্রোতারা কতটা শিখতে বা জানতে পারলেন, সেটা পরখ করার জন্য উপস্থাপিত বক্তব্য থেকে শ্রোতাদের প্রশ্ন করে সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে।

মাহফিল চলাকালীন করণীয়

মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষা ও আগত শ্রোতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আয়োজকদের দায়িত্ব। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। ওয়াজ মাহফিলে যেন ইসলামের সুমহান দাওয়াতের আবহ থাকে এবং তা যেন প্রদর্শনপ্রিয়তা, লৌকিকতা ও এ-জাতীয় কোনো মন্দ কাজের প্ল্যাটফর্ম না হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিংবা গাড়ি থামিয়ে ডোনেশন কালেকশন করা অপমানজনক ও বিরক্তিকর কাজ, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাসম্ভব হালাল উপার্জনকারীদের ডোনেশন নেওয়া উচিত।

মাহফিলের প্রচারনীতি

মাহফিলের প্রচারণার জন্য তৈরি করা ব্যানার-পোস্টার ইত্যাদির ভাষা যেন শুদ্ধ ও নির্ভুল হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। পোস্টার বা ব্যানারে কোনো আলোচকের পরিচয়-পদবি লিখতে গিয়ে ভুল ও অতিরঞ্জন করা চরম অন্যায়। উপস্থাপনার সময় কোনো আলোচকের পরিচয় উল্লেখ করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি ও অত্যুক্তি করা বেমানান। মাহফিলের আলোচনার অডিও-ভিডিও ধারণ করা এবং তা অনলাইনে প্রচার করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। এ কাজটি আয়োজকদের তত্ত্বাবধানে এবং বক্তার পূর্ণ সম্মতি নিয়ে করা আবশ্যক। অন্য কাউকে অনুমতি দিলেও তা প্রকাশের আগে পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। যারা বিভিন্ন মাহফিলের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউব-ফেসবুকে দর্শক বাড়ানোর জন্য দৃষ্টিকটু, মিথ্যা ও আপত্তিকর থাম্বনেইল কিংবা শিরোনাম দেয়, কোনো অবস্থাতেই তাদের রেকর্ডের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।

আলোচকদের সম্মানী

আলোচকদের উচিত, দ্বীন প্রচারের মানসিকতা নিয়ে ওয়াজ করা। ওয়াজকে যদি অন্য দশটা পেশার মতো একটা পেশা বানানো হয়, তাহলে সেই ওয়াজ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের খুব বেশি উপকার হবে না। তবে যেসব দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে প্রায় পুরো সময় সে কাজে আত্মনিয়োগ করতে হয় এবং দ্বীনের জন্য তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সেসব কাজ করে পারিশ্রমিক নেওয়াকে বিশ্বের প্রায় সব ইসলামিক স্কলারই জায়েজ মনে করেন। তাই আয়োজকদের উচিত, আলোচকের গাড়িভাড়া, পথখরচ এবং অন্যান্য খরচের পাশাপাশি সম্মানজনক হাদিয়া পেশ করা। তবে এ বিষয়ে দর-কষাকষি করা ও চড়া মূল্য হাঁকানো কখনোই প্রকৃত আলেমের কাজ হতে পারে না।

হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতা

মাহফিল উপলক্ষে উত্তোলন করা আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি খুবই জরুরি। অনেক সময় আয়োজকেরা মাহফিলের জন্য বিস্তর টাকা তুলে আলোচকদের যৎসামান্য হাদিয়া দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বণ্টন করে নেন, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে মাহফিলের কথা বলে টাকা তুলে মাহফিলে কম খরচ করে সেটা দিয়ে অন্য কোনো কল্যাণমূলক কাজ করেন—এগুলো গর্হিত কাজ। তবে সবকিছু যথাযথভাবে সম্পন্ন করার পরও যদি টাকা উদ্বৃত্ত থাকে, তাহলে দানকারীদের মৌন সম্মতি বিবেচনায় তা কোনো ভালো কাজে ব্যয় করা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ১০ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৯ মিনিট
ফজর০৫: ২০ মিনিট০৬: ৩৯ মিনিট
জোহর১২: ০২ মিনিট০৩: ৪৫ মিনিট
আসর০৩: ৪৬ মিনিট০৫: ২১ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৩ মিনিট০৬: ৪২ মিনিট
এশা০৬: ৪৩ মিনিট০৫: ১৯ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত