
অভূতপূর্ব রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। তিন দিনের মাথায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও সরকার এখনো ধাতস্থ হয়নি। বিভিন্ন খাতে সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্য, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এই সরকার। প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, সংস্কার ও বছরের শেষ নাগাদ কিংবা আগামী বছরের প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়ার কোনো ঘাটতি নেই। গত ২৯ ডিসেম্বর (২০২৪) ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বাংলায় সাক্ষাৎকারটি নেন পত্রিকাটির সম্পাদক নূরুল কবীর। তাঁর সম্মতিক্রমে সাক্ষাৎকারটি আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

নূরুল কবীর: আপনার চার মাস হলো প্রায়। এই চার মাস আর আগের চার মাসের মধ্যে কোন পর্বটা আপনার ভালো লাগে বা কোনটা খারাপ?
মুহাম্মদ ইউনূস: খারাপ কোনোটাই না। খারাপটা বলব না, কিন্তু ভিন্ন। আগেরটা ছিল আমার নিজস্ব জগৎ। সারা জীবন ধরে যা যা করে এসেছি, সেটার মধ্যেই ছিলাম। নিজস্ব আয়োজন, নিজস্ব চিন্তা। তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। সেটা আমার মতো করে ট্যাকল করেছি। আমি আমার মতো করে চলেছি। সেটা একেবারে আমার নিজস্ব জগৎ। এটা একবারে ভিন্ন জগৎ। এটা আমার নিজস্ব জগৎ না। এই জগতে আমি কোনো দিন ছিলাম না; থাকার কোনো আগ্রহও ছিল না। এটার ডান-বাম আমার জানা নেই। অনেকটা হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে চলার মতো অবস্থা। কিন্তু এটারও একটা চ্যালেঞ্জ আছে।
আমাকে তারা আহ্বান জানিয়েছে। প্রথমে একটু সংকোচ করছিলাম যে এতে যাওয়া ঠিক হবে না, যেহেতু আমি এ জগতের মানুষ নই। কিন্তু তারা আমাকে বোঝাতে পেরেছে যে, এই পরিস্থিতিতে আপনার আসা দরকার। শেষ পর্যন্ত আমি রাজি হয়েছি যে, এইভাবে তোমরা প্রাণ দিয়েছ, তোমরা রক্ত দিয়েছ। আমার জন্য না হয় একটু চ্যালেঞ্জিং হলোই। কাজেই আমি রাজি হলাম। এটা ভিন্ন জগৎ। এই ভিন্ন জগতের মধ্যে এখন চলছি। দেখা যাক কত দূর যেতে পারি।
নূরুল কবীর: কিন্তু আগস্টের ৮ তারিখে এই জগৎটা যদি শুরু না হতো আপনার জন্য, পেছনের (আগের) যে চার মাস, আপনার মনে হয় তত দিনে জেলে থাকার কথা ছিল।
মুহাম্মদ ইউনূস: হয়তো, আমি তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কোন কোন দেশে যাব, যাতে বাংলাদেশে ফিরে যেতে না হয়। আমি এক উপলক্ষে আরেক দেশে ছিলাম। সেখানে বসে ভাবছি, এখন ফিরে যাওয়া ঠিক হবে কি না। কারণ, যাওয়ার সময় উত্তেজনা দেখে গেছি, কারফিউ দেখে গেছি। কারফিউর ভেতর দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে; উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।
নূরুল কবীর: তার মানে, আপনি কারফিউ ভঙ্গ করেছিলেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি কারফিউ ভঙ্গ করে গেলাম, তা না হলে তো যেতে পারতাম না। ভাগ্যিস, কেউ ধরেনি পথে। অত কড়াকড়ি কারফিউ ছিল না। ওই অবস্থা তো দেখে গেছি এবং এটা ক্রমাগতভাবে দেখেছি পত্রপত্রিকায়, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভয়ংকর রকম কাজ হচ্ছে। কাজেই ক্রমাগতভাবে ফিডব্যাকটা পাচ্ছিলাম। তার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে গেল, একবারে অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। কিন্তু এর মধ্যে বুঝি নাই যে এর মধ্যে আমাকে জড়িত হতে হবে। আমাদের এর মধ্যে একটা ভূমিকা পালন করতে হবে। কাজেই চার মাস এভাবেই গেছে আমার।

নূরুল কবীর: আপনি ৮ আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পরে আপনার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের যে আইনগত অভিযোগ ছিল, সেগুলো কোর্ট থেকে একের পর এক উঠে যায়। আপনার পজিশনের ভারে কিংবা প্রভাবে এ ঘটনা ঘটেছে—লোকেদের এ রকম ভাবনার সুযোগ আছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি বলব, এটা আমি সরকারে থাকি বা দেশে থাকি, না থাকি—এগুলো এমনি চলে যেত। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আমাদের যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন আদালতে, আমাদের যে উকিলরা আছেন, তাঁরা এটা বোঝাতে পারতেন যে এটার কোনো ভিত্তি নেই। এটার কোনো তথ্য নাই, কিছুই নাই। এগুলো খুবই ঠুনকো জিনিস ছিল। কাজেই এটা আমার জানা-অজানার কোনো বিষয় নয়। যেহেতু এটা বিচারের বিষয়, বিচারেই চলে যেত। আমি থাকলেও যেত, না থাকলেও যেত। ঘটনার চক্রে আমি ছিলাম।
নূরুল কবীর: কিন্তু লোকেরা যে বিচারব্যবস্থার ওপর তৎকালীন এক্সিকিউটিভের, রাষ্ট্রের প্রভাবের কথা বলছিল বা বলাবলি আছে এখনো, তাহলে কি আপনি মনে করেন, উনারা ক্ষমতায় থাকলেও কোর্ট ওইভাবে ব্যবহার করত, মানে ন্যাচারাল পদ্ধতিতে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আগের যারা ছিল তারা তো করে নাই। করে নাই বলেই তো আমি আদালতের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। যারা এসেছে, তারা বিচার চাচ্ছে, বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে।
নূরুল কবীর: সেভাবেই যদি চলত, তাহলে তো আপনি জেলে যাওয়ার একটা...
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই। আমি তো জেলে যাওয়ার পথেই ছিলাম। [আদালতে] আসা-যাওয়ার পথে প্রতিবারই মনে হচ্ছে, এবারই বোধ হয় জেলে যেতে হবে। মাঝে মাঝে প্রস্তুতি নিয়ে গেছি যে হয়তো ফেরা না-ও হতে পারে এবার। আমার সহযোগী যাঁরা আছেন, তাঁরা তাঁদের আত্মীয়স্বজনকে বলে গেছেন তাঁদের জন্য। আমি বলেছি, আমার কিছু করার নাই, যেমন আছে হবে। আমি আমার ফ্যামিলিকেও এ রকম প্রস্তুত করে যাইনি। বলি যে, রেখে দিলে রেখে দেবে, নিয়ে গেলে নিয়ে যাবে। আমি খুব সহজভাবে দেখছিলাম যে, এটা নিয়তির খেলা। এটা যেভাবে হবার হবে। এটাতে প্রস্তুতি নিয়ে আমার কোনো কাজ নাই যে জেলে থাকলে এই করতে হবে, করব। এটা যখন কপালে আছে, এটা আমাকে করে যেতে হবে।
নূরুল কবীর: আপনি এইমাত্র বললেন যে, এটা একটা ভিন্ন জগৎ এবং এইভাবে জড়িয়ে পড়তে হবে; এ রকম একটা রাজনৈতিক দায়িত্ব রাষ্ট্র পরিচালনায়, সেটা আপনি চিন্তা করেননি।
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: আপনি ২০০৭ সালে যখন একটা পার্টি করতে গিয়েছিলেন, সেই সময় তো এটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবেই চিন্তা করেছিলেন। সেখানে যদি আপনি কনটিনিউ করতেন, আপনাকে তো রাজনৈতিক দায়িত্বই গ্রহণ করতে হতো।
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটার কারণ ছিল যে এখানে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না তখন, সবাই আমার বন্ধুবান্ধব সহযোগী, পরিচিত। সবাই বলছে, আপনি কিছু একটা করেন; পেছনে লেগে রইল...আপনি ছাড়া পারবে না কেউ, এই যা যা বলে আরকি আশপাশের লোকজন। এতে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে শেষে বললাম যে ঠিক আছে আমি করব এইটা। পথে আসতে-যেতে সাংবাদিকেরা ধরল। তখন আমি বলেছি, হ্যাঁ, আমি করব। এই দিয়ে শুরু হলো। তখন বেশির ভাগ সময় আমি আসা-যাওয়া করছিলাম বিভিন্ন জায়গায়, উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিলাম, চিটাগাং যাচ্ছিলাম। প্রতিবার এয়ারপোর্টে এই কথাবার্তা হচ্ছিল। আর কোথাও না। তখন একসময় ধরল যে তাহলে কী নাম দেবেন? আমি (বললাম) যে নাম ঠিক করি নাই। নাম ঠিক করলে আপনাদের জানাব। তখন বলল, নাম ঠিক না করে কীভাবে যান? তখন অবশ্য একটা নাম দিলাম, নাগরিক শক্তি। তারপর বুঝলাম যে এটা বেশ এগিয়ে যাচ্ছে জিনিসটা। তারপর সবাইরে বললাম যে এটার [ওপর] মতামত নাও। মতামত নেওয়ার ব্যাপারটি হলো, কোনো রকম এটা থেকে দূরে সরা যায় কি না, তার চেষ্টা। নাম হলো, মতামত হলো। তারপর আমি দেখলাম যে ঢুকে যাচ্ছি এর ভেতরে। যখন দশ সপ্তাহ হলো প্রায়, তখন বললাম যে না ভাই, আমি কোনো রাজনৈতিক দল করছি না, কিচ্ছু না। কাজেই আমার মাথার ভেতরে একদিন এই রাজনীতির মধ্য দিয়ে গিয়ে ক্ষমতায় যাব, এ রকম কোনো পরিকল্পনা ছিল না, এটা দীর্ঘমেয়াদি জিনিস।
নূরুল কবীর: কিন্তু রাজনৈতিক দল তো শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত...
মুহাম্মদ ইউনূস: ছিল। কিন্তু তখন আমি তো আসলে রাজনৈতিক দল করতে চাচ্ছিলাম না। ঠেকা দেবার জন্য এগুলো বলে যাচ্ছিলাম। শেষে মনে করলাম যে, এটা বেশ গভীরে চলে যাচ্ছে। তখন একদম পরিষ্কার বলে দিলাম। তখন সবাই হতবাক হয়ে গেছে। তখন আমার বন্ধুবান্ধব বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিলেন।
নূরুল কবীর: আপনি কি আলাপ করেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে?
মুহাম্মদ ইউনূস: কিচ্ছু করিনি। সে জন্য আরও হতবাক হলো। বলে যে আপনি কিছু বললেন না আমাদের! আমরা আপনার পেছনে ঘুরলাম এত দিন ধরে।
নূরুল কবীর: মনঃক্ষুণ্ন হবার কথা...
মুহাম্মদ ইউনূস: খুবই মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে তারা।
নূরুল কবীর: তারা এখন কি আনন্দে আছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: তারা কাছে আসে না। বলে আবার কোন দিকে নিয়ে যায় আমাদের।
নূরুল কবীর: ওই নাগরিক শক্তির সঙ্গে ছাত্রদের যে নাগরিক কমিটি, তার কোনো চিন্তা বা ভাবনার সম্পর্ক আছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: নাগরিক শব্দটা কমন আছে এটা দেখতেছি। আমার সঙ্গে তো আর কোনো আলোচনা হয় নাই, তারা কোথা থেকে শব্দ পেল না পেল।
নূরুল কবীর: এই শব্দটা যেকোনো লোক ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আপনার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করে নাই তারা?
মুহাম্মদ ইউনূস: পরামর্শ করে নাই।
নূরুল কবীর: আপনি প্রায়ই বলেন, কয়েকবারই বলেছেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে যে ছাত্ররা আপনাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে, তাদের ম্যান্ডেটের কারণে। ছাত্রসমাজ হিসেবে ৫ আগস্ট যে পরিমাণ তারা সমন্বিত ছিল, সংগঠিত এবং একাকার ছিল, এইটা যদি বিভক্ত হয়ে যায় তাদের উদ্দেশ্য সাধিত হয়ে যাওয়ার পর, এই অর্থে যে ইমিডিয়েট উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতন। তার পতনের পরে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বিভিন্ন রাজনীতি আছে। তারা যদি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে কিংবা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাত ঘটে, তখন আপনার ম্যান্ডেটটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা হলো অন্তর্বর্তী সরকার। আমি সেই সরকারের একটা অংশ। ওইটা হলো রাজনীতি। এই সরকারে আমি কত দিন আছি না আছি, সেটা একটা ব্যাপার। ওরা কী করছে, রাজনীতির কী ফল দাঁড়াবে, সেটা ভিন্ন জিনিস। এটা একজন নাগরিক হিসেবে ওরা চিন্তা করতে পারে যে কী হবে না হবে। কিন্তু সরকার হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি; যতটুকু আমার সাধ্যে কুলায়।

নূরুল কবীর: আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ওটা সংঘবদ্ধ ছাত্রসমাজের ম্যান্ডেট ছিল। সেই সংঘবদ্ধতাটা যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে...
মুহাম্মদ ইউনূস: দুর্বল হয়ে যাবে।
নূরুল কবীর: দুর্বল হয়ে যাবে?
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই দুর্বল হবে।
নূরুল কবীর: এ রকম সম্ভাবনা আপনি দেখেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় সম্ভাবনা তো থাকে। একটা দুর্বল হবে আরেকটা সবল হবে। এই টুকরা এই টুকরার সঙ্গে মিলবে। নানা রকম ঘটনা তো ঘটে।
নূরুল কবীর: অন্যান্য টুকরার কথা বলছেন। ধরুন, আমরা যাঁরা বাইরে থেকে দেখি, ওই অভ্যুত্থানে বিজয়ী ছাত্রনেতৃত্ব আপনাকে আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সেইটাকে সমর্থন করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা পাওয়ার কনটেন্ডার, তারা আপনাকে সহযোগিতা ও সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাহলে আপনি যখন প্রায়ই বলেন, ছাত্ররা আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছে, তখন আপনার কি মনে হয় যে অন্য দুইটা সেক্টর যারা সংগঠিত, নানানভাবে, তারা মনঃক্ষুণ্ন হতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: হতে পারে। কিন্তু বাস্তব তো তাই। আমাকে তো ডেকে এনেছে ছাত্ররা। কাজেই আমি সেভাবেই বলেছি, ছাত্ররা আমাকে নিয়োগ করেছে। এখন সবাই মিলে এটা সমর্থন করেছি আমরা। সেটা হলো বৃহত্তর একটা জিনিস। কিন্তু ইমিডিয়েট ছিল যে আমার সঙ্গে কথাটা হচ্ছে ছাত্রদের সঙ্গে। যাদের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নাই, জীবনে দেখিনি তাদেরকে, তাদের সঙ্গে আমার পরিচয়...সেভাবে আমি কথাটা জানিয়েছি। আমার বাস্তবটা জানিয়েছি। কাউকে মনঃক্ষুণ্ন করার জন্য, কাউকে আঘাত দেওয়ার জন্য এরা দেয় নাই, ওরা দিছে, ও রকম কিছু না।
নূরুল কবীর: না মানে, পাওয়ার ব্লক থাকে তো...
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই।
নূরুল কবীর: এই তিনটাই আপনার জন্য, দেশের মানুষের জন্য আপনার সরকারের অস্তিত্ব চলমান থাকার জন্য, জরুরি আমাদের মনে হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই, অবশ্যই।

নূরুল কবীর: আপনার এই যে প্রধান উপদেষ্টা পদের নাম, মানে নোমেনক্লেচার অব দি পজিশন, এইটা আপনি অ্যাগ্রি করলেন কেন? আপনি কাকে উপদেশ দেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: ওগুলো আমার মাথায় আসে নাই। নামটা কি উপদেষ্টা হলো না কী হলো। দায়িত্ব নিতে বলেছে, আমি দায়িত্ব নিয়েছি।
নূরুল কবীর: উপদেষ্টা হলো একটা পজিশন। উপদেষ্টা মানেই আপনি কাউকে উপদেশ দেন।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি এগুলোর ব্যাখ্যার মধ্যে যাই নাই। বলেছে, আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে এই সরকারের। আমি দায়িত্ব নিয়েছি। নামটা কী দিল না দিল, কোথা থেকে আসল...
নূরুল কবীর: একবারও মনে হয়েছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এগুলো বড় মনে হয়নি। কারণ, বলেছে যে এই ধরনের পরিস্থিতিতে এই ধরনের নামই হয়। কাজেই আমার চ্যালেঞ্জ করার কিছু নাই।
নূরুল কবীর: দুইটা ভিন্ন। একজন চিফ থাকে। চিফকে অন্যরা উপদেশ দেয়। তাহলে আপনি উপদেশদাতাদের মধ্যে প্রধান। কিন্তু কাকে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা চিন্তা করি নাই।
নূরুল কবীর: আপনি যে মন্ত্রিপরিষদ (উপদেষ্টা পরিষদ) তৈরি করলেন ছাত্রদের আহ্বানে, অন্যদের সমর্থনে, সেইখানে কি আপনার মন্ত্রিপরিষদ গঠনে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ছিল?
মুহাম্মদ ইউনূস: পরিপূর্ণ বলব না, এটা তো তাৎক্ষণিকভাবে হয়েছে। এটা এমন কিছু না যে চিন্তাভাবনা করে করা হয়েছে। কাজেই আমাকে যতটুকু বলা হয়েছে, আমি সেটা করেছি। অন্য কারা কী করল, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি।
নূরুল কবীর: পরামর্শগুলো কি এসব সেক্টর থেকে এসেছে আপনার কাছে বা কোনো রেকমেন্ডেশন সেটা আর্মি থেকে বা রাজনৈতিক দলের মধ্য থেকে?
মুহাম্মদ ইউনূস: না না না। ওই রকমভাবে কিছু আসে নাই। বলছে যে এরা এরা আছে। আপনি কারে কারে নেবেন। শপথ গ্রহণ করতে হবে আগামীকাল বা সেদিনেই, এ রকম অবস্থা। আমি তাৎক্ষণিকভাবে আমার পরিচিত যা নাম ছিল, সেগুলো দিয়েছি।
নূরুল কবীর: আপনার কাছে এই খবর নিশ্চয়ই আছে বা আপনার এজেন্সিগুলো এই খবর কি দেয় যে আপনার সরকারের যাঁরা সদস্য, তাঁদেরকে অন্তত দুটো ক্যাটাগরিতে জেনারেলি ভাগ করা যায়। এক পক্ষের ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে এনজিওস। সেখানে আপনার ব্যাপারে একটা সমালোচনা আছে যে চিটাগংয়ের লোক বেশি। কারণ, আপনার বাড়ি চিটাগং? আরেক পক্ষ হচ্ছে, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই থেকে অনেকে অনেক দূরে ছিলেন। এই তাঁদের কারণে এখন ঠিক স্টেটক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এই কথাগুলো কি আপনার কানে আসে?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় বলাবলি করে, সবাই বলছে। কাজেই এখানে না আসার কোনো কারণ নাই। এ জন্য বিব্রত হবারও কোনো কারণ নাই। সেভাবেই হয়েছে। নানা জায়গা থেকে আমরা এসেছি। আমারও তো কোনো অভিজ্ঞতা নাই। কাজেই ওদের দোষ দেব কী করে। আমাকে দেশ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার তো বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা নাই। আমি তো কোনো দিন এ ধরনের কাজে ছিলাম না। আমি যদি পারি, ওরাও পারবে, এটাই আমার ভরসা ছিল।
নূরুল কবীর: তাঁদের পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার কেমন...
মুহাম্মদ ইউনূস: নিজের পারফরম্যান্স নিয়েই আমার সন্দেহ। ওদের পারফরম্যান্স নিয়ে কী জিজ্ঞেস করব।
নূরুল কবীর: কিন্তু আপনারটা তো অন্যরা বলবে...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি বলব; আমি দেখছি তো।
নূরুল কবীর: আপনি কি আপনার পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। বলছি যে আমার তো সেই কোয়ালিটি নাই, করার জন্য যেটুকু দরকার ওটুকু নাই। যদিও সাধ্যমতো করি, যদি লেগে যায় তো ভালো। না হলে আমাদের কপাল খারাপ।

নূরুল কবীর: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে পরিমাণ সমঝোতা এবং যোগাযোগ থাকা দরকার বলে পত্রপত্রিকা বা অন্যান্য যাদেরকে আমরা বলতে শুনি, সেই পরিমাণ সমঝোতা এবং যোগাযোগ আপনার আছে বলে মনে হয়? আমাদের কাছে মনে হয়, কিছুটা দূরত্ব আছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমার কাছে মনে হয়, অবিশ্বাস্য রকম সমঝোতা-আত্মীয়তা-ঘনিষ্ঠতা আছে। এটা আমার কাছে অবাক লাগে। কাগজপত্রে দেখি তাঁরা একজনের বিরুদ্ধে একজন কটু কথা বলে। যখন সামনে আসে, সবাই কী আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেন! আমার কাছে অবাক লাগে এগুলো! মনে বড় সাহস লাগে। যখনই কথা বলি, ব্যক্তি হিসেবে যখন রাজনৈতিক দলের কারও সঙ্গে কথা বলি, অন্যরা কেউ নাই, একা সে। কিন্তু তার সঙ্গে যখন কথা বলি, কী রকম সমর্থন নিয়ে কথা বলে! আমি অভিভূত হয়ে যাই যে এত সমর্থন থাকা সত্ত্বেও এই দেশ চলছে না কেন! এর মধ্যে মাঝে মাঝে আবার কাগজপত্রে এ রকম কথাবার্তা [প্রকাশ] হয় কেন? এই দু রকম কেন?
নূরুল কবীর: কেন এমন হয় বলে আপনার মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় মনে হয়, এর একটা হলো রাজনৈতিক কথা। কিছু অঙ্গভঙ্গি আছে, যেগুলো রাজনীতিতে চালু হয়ে গেছে। এভাবে কথা না বললে রাজনৈতিক নেতা বলে মনে হয় না। ওভাবে, ওই শব্দে কথা বলতে হয়; ওই সুরে কথা বলতে হয়। টেলিভিশনে গেলে ওই কণ্ঠে কথা বলতে হয়। কিন্তু যেইমাত্র ব্যক্তি হিসেবে কথাবার্তা বলেন, তখন বলার ভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজেই সেটার আন্তরিকতা এবং সেটার ঘনিষ্ঠতা আমাকে অভিভূত করে। প্রতিবারই আমাকে অভিভূত করে।
নূরুল কবীর: একটা অন্য কথায় আসি। আপনার সরকার সেপ্টেম্বর মাসে সম্ভবত অক্টোবরে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাঁরা এই গণতন্ত্রের আন্দোলন এবং অভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেবেন। পরবর্তীকালে জুলাই ফাউন্ডেশন হলো। সেখান থেকেও কথা এসেছিল যে আহতদের এক লাখ টাকা করে এবং পাঁচ লাখ টাকা করে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তরুণ-তরুণী, ধনী-গরিব ও মধ্যবিত্তনির্বিশেষে তাঁদেরকে দেওয়া হবে। আপনি নিশ্চয়ই সচেতন আছেন যে, সেই প্রতিশ্রুতি পালিত হয় নাই এখনো। এটা কেন? ইতিমধ্যে আপনারা হাজার কোটি টাকা করে বিভিন্ন ব্যাংকে দিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় এক্সচেকার থেকে লুটপাটের কারণে যে সমস্ত ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের। কিন্তু যারা এই ব্যবস্থাকে বদলাল, তাদেরটা প্রায়োরিটিতে আসল না কেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: প্রায়োরিটিতে ছিল বলেই এত কথা ঘোষণা হলো। প্রায়োরিটিতে ছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায়নি। এগুলো হলো আদেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা। কীভাবে টাকা কার কাছ থেকে কোথায় যাবে? কীভাবে বিতরণ হবে? এগুলো নিয়ে। দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। যত টাকা লাগে তাদের, এই কমিটমেন্ট আছে এবং তাদের আমরা জীবৎকালে যত সমর্থন দরকার, যত পয়সাকড়ি দরকার, সবকিছুর জন্য কমিটমেন্ট আছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই; টাকারও কোনো অভাব নাই।
নূরুল কবীর: কত দিন লাগতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এখন আমার আগাম বলতে ভয় ভয় লাগে। যে কথা বলি, ওটায় পারি না তো শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাতে।
নূরুল কবীর: আপনার কথায় আন্তরিকতা তো মানুষ বিশ্বাস করে। আপনার অনুমান? অন্তত এটা তো খুবই একটা ইমিডিয়েট এবং প্রায়োরিটির মধ্যে থাকার কথা।
মুহাম্মদ ইউনূস: নিশ্চয়ই।
নূরুল কবীর: এটা কি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে হচ্ছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। কার হাত দিয়ে কীভাবে যাবে, কার কাছ থেকে কোথায় যাবে, এগুলো নিয়ে গোলমাল হচ্ছে। আর কিছু না।
নূরুল কবীর: তাতে আমলাতন্ত্রের কিছু হচ্ছে না। কিন্তু সরকার, আপনার সরকারের বদনাম হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা আমাদের সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা। আমি ব্যুরোক্রেসিকে (আমলাতন্ত্র) দোষ দেব না। তাদেরও নিয়মকানুন আছে। আমরা হয়তো সেই নিয়মকানুন বুঝি না বলে কানেকশনটা ঠিকমতো করতে পারি নাই।
নূরুল কবীর: আপনার জন্য কোনো টাইমলাইন বলা কি কঠিন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি আবার মাস, দিন একটা দিয়ে আবার বিব্রত হতে চাচ্ছি না আরকি।
নূরুল কবীর: সাম্প্রতিককালে আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করছেন, আমরাও লক্ষ করছি যে সরকারের যে গণতান্ত্রিক সংস্কারের কর্মসূচি এবং নির্বাচন—এই দুটিকে পরিপূরক না ভেবে একটা সাংঘর্ষিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে আলাপ-আলোচনার মধ্যে। এটা কি আপনাকে চিন্তিত করে?
মুহাম্মদ ইউনূস: না, এখনো সাংঘর্ষিক তো যায় নাই। আমরা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছিলাম, একটা ফর্মুলা দিয়েছিলাম, একটা প্রক্রিয়া তৈরি করেছিলাম। এটা কাজে লাগে কি না জানি না। প্রক্রিয়াটা হলো যে, কতগুলো কমিশন বসিয়ে দিয়েছি। প্রতিটা সাবজেক্টের ওপরে কমিশন বসিয়ে দিয়েছি। এ রকম ১৫টা কমিশন হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৬টা কমিশন প্রথম ঘোষণা করেছিলাম। ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। তারা ৯০ দিনে শেষ করতে পারে নাই। বলছে যে এক সপ্তাহ দেরি হতে পারে। সেটার কারণে আমাদের আয়োজন করতেও সময় লেগেছে। ঘোষণা করেছি, তাকে বসার জায়গা দিতে পারি নাই। কোথায় কে কার সঙ্গে পরিচয়, এসব করতে সময় লেগেছে। তারা ৯০ দিন পায় নাই সেই হিসাবে। কাজেই যদি ৭ তারিখে তারা দিয়ে দেয়, তাহলে জানুয়ারি ৭ তারিখের মধ্যে আমরা সেই ৬টা কমিশনের রিপোর্ট পাব। ওইখানে যাবতীয় সংস্কারসংক্রান্ত বিষয় দেওয়া থাকবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়েছে। তাহলে সংস্কারের রূপরেখাটা আমরা পেলাম। ইতিমধ্যে মতবিনিময় হয়েছে, তার মধ্যে কোনোটা টিকেছে, কোনোটা টিকে নাই। কমিশন মনে করেছে, যেটা এইগুলোই হলো আমাদের সারমর্ম। এগুলো পেয়ে গেলে তখন নিয়ে আসব বৃহত্তর সংলাপের জন্য। একটা সংলাপ সেদিন হয়েও গেল। যদিও কোনো রিপোর্ট আসেনি তবু প্রাথমিকভাবে একটা সংলাপ হলো। সবাইকে নিয়ে আলাপ করা—কোনটা পছন্দ, কোনটা অপছন্দ, কীভাবে অগ্রসর হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই বিষয়ভিত্তিক একটা বড় রকমের কনসেনসাস বিল্ডিং প্রসেস, যেটার জন্য আবার আলাদা একটা কমিশন ঘোষণা করলাম সেদিন। সেটা হলো এই ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের দিয়ে একটা কমিশন। আমি নিজে এটার চেয়ারম্যান হলাম এবং প্রফেসর আলী রীয়াজকে সহসভাপতি করলাম যে আমরা মিলে এটা একটা কনসেনসাস ডেভেলপ করার চেষ্টা করব। এই কনসেনসাসের প্রক্রিয়াটা আমাদের ঠিক করতে হবে। সমাজের কোন কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে কীভাবে আদান-প্রদান হবে, তাতে একটা সর্বমতসম্মত একটা কিছু বের করা যায় কি না। সবকিছুতে একমত না হলেও অন্তত কিছু বিষয়ে আশা করি একমত হওয়া যাবে। তখন সেটা হবে আমাদের সংস্কার। যেহেতু একমত হয়ে গেছে, তাহলে এটা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়ে যাবে— এইভাবে আমরা চিন্তা করছি।
নূরুল কবীর: এটা আবার কি মধ্য জানুয়ারিতে শুরু হতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আশা করছি। ডেফিনেটলি।
নূরুল কবীর: অর্থাৎ আপনার সরকারের নিজস্ব কোনো সংস্কার কর্মসূচি নাই...
মুহাম্মদ ইউনূস: এই তো এটাই আমাদের।
নূরুল কবীর: কিন্তু এটা তো বাইরে থেকে আসল...
মুহাম্মদ ইউনূস: বাইরে থেকে নিয়েই তো আমাদের হলো। এটা এভাবে একজনের মাথা থেকে তো আসবে না। ১০ জনের মাথা থেকে এসে নির্যাস হয়ে এটা আসল। তারপরও আবার সবার সঙ্গে আমি [কথা] বলছি।
নূরুল কবীর: আপনার ক্যাবিনেটে আপনাদের কি কোনো নিজস্ব চিন্তাভাবনা, কোনো সেক্টরে...?
মুহাম্মদ ইউনূস: আছে। কিন্তু সেটা কমিশনকে গিয়ে বলতে হবে। কারণ, মতামত সংগ্রহ করার দায়িত্ব হলো কমিশনের।
নূরুল কবীর: কিন্তু সরকারের নিজেদের কোনো নিজস্ব...
মুহাম্মদ ইউনূস: নিজস্ব কোনো প্রোগ্রাম নাই। আমরা তো রাজনৈতিক দল না যে আমাদের একটা নিজস্ব থাকবে। আমাদের একেকজনের একেক মত। একেকজন একেক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সেটা নিয়ে তো আমাদের কোনো অসুবিধা নাই।
নূরুল কবীর: এগুলো নিয়ে অনেক ভিন্নমত কি আপনার সরকারের মধ্যে...
মুহাম্মদ ইউনূস: এখনো তো দেখি নাই। সামনে আসলে দেখা যাবে, যখন তর্ক-বিতর্ক শুরু হবে—না, এটা আমরা মানি না।
নূরুল কবীর: আর আপনি এটা অনুমান করছেন...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি অনুমান করছি। কারণ, সব সময় সবাই যে একমত হবে, সে রকম তো কথা নেই। যেমন ধরেন, সেদিন সংলাপের জন্য আমাকে একটা বক্তৃতা দিতে বলেছিল। সেখানে বললাম যে সমঝোতা কীভাবে হবে। এটা একটা প্রক্রিয়া। বলতে গিয়ে বললাম, ধরুন, আমি মনে করি, ১৭ বছর বয়সে ভোটার হওয়া উচিত এবং আপনি সেটা ভিন্নমত পোষণ করেন। তাহলে আলাপ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, আপনার মতই টিকে গেল। আমারটা হলো না। আমি মেনে নেব সেটা। লোকে মনে করল যে, ১৭ বছর—এটা সরকার থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি তো ভাই এ রকম বলি নাই। আমি বললাম যে ধরুন, ১৭ বছর বয়স থেকে (ভোটার) হওয়া ভালো। এটা একটা মত।
নূরুল কবীর: সিদ্ধান্ত নয়...
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা সিদ্ধান্ত নয়। উদাহরণ হিসেবে এটা। তাহলে এটার সমঝোতাটা কীভাবে হবে? আপনাদের সবার মত এক রকম, আমার মত এক রকম। শেষ পর্যন্ত সবার মত যেদিকে, আমি সেদিকে যোগ দেব। সেটি হলো কনসেনসাস, সেটি হলো ঐকমত্য। এইভাবে আমরা অগ্রসর হতে চাই। সেটা অনেকে ভুল বোঝে। মনে করে যে সরকার থেকে ১৭ বছর লাগিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি বললাম যে না ভাই এ রকম তো বলি নাই আমি।
নূরুল কবীর: এ বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা নাই...
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে, আমরা লক্ষ করছি, তরুণদের একটি অংশ, যাঁরা নতুন একটা রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছেন, তরুণেরা যাঁরা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে তাঁরা সময় নিতে চায় নির্বাচনের জন্য। রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে যে সংস্কার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নির্বাচনপ্রক্রিয়াটা এগিয়ে আনা দরকার। কিন্তু তাঁদের কথাবার্তার মধ্যে সাম্প্রতিককালে পাবলিক ডিবেটের মধ্যে একধরনের তিক্ততাও তৈরি হয়েছে। আপনার নজরে এসেছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: খুব ভালো করে নজর এসেছে।
নূরুল কবীর: সেটা একটা দুশ্চিন্তার ব্যাপার নয় কি?
মুহাম্মদ ইউনূস: মোটেই না। ওই যে বললাম বাইরে এক রকম, ভেতরে আরেক রকম।
নূরুল কবীর: আচ্ছা, সে কারণে? তাঁরা শেষ পর্যন্ত একমত হয়ে যাবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: একমত হয়ে যাবে।
নূরুল কবীর: তরুণেরা মনে করেন, যাঁদের সম্পর্কে যেটা বলা আছে বা আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয় যে তাঁরা দলটা করবেন, দলের পরে কনস্টিটিউয়েন্সিগুলো বিল্ডআপ করবে, লোকগুলো তৈরি করবে, এই কারণে তার সময় দরকার। আর ঠিক সংস্কারটা মাথায় আছে। নিশ্চয়ই তাঁরা সংস্কার চান। এই মুহূর্তে ক্ষমতার রাজনীতিতে তাঁরা প্রায়োরিটি দিচ্ছেন, তাঁদের নিজস্ব সংগঠন তৈরি করে নির্বাচন করা। এ কারণেই অন্যরা মনে করে যে, শুধু অন্য একটা গ্রুপকে সময় দেওয়ার জন্য নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তা আপনি সেটার মধ্যে কোনো সমস্যা দেখছেন না।
মুহাম্মদ ইউনূস: সে জন্য ঘোষণা দিয়ে দিলাম। কতগুলো তারিখ দিয়ে দিলাম, যাতে এই সন্দেহ না থাকে। কারণ, যত কিছু টানতে চান না কেন, আমি তো ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি। হয় এখানে হবে, না হয় ওইখানে। দুটো তারিখ দিয়ে দিয়েছি।
নূরুল কবীর: কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তারপরও বলছে যে আরও সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে।
মুহাম্মদ ইউনূস: এর ভেতরে তারিখ চাচ্ছে; বাড়াতে চাচ্ছে না। এর ভেতরে তারিখ চাচ্ছে, কোন তারিখে করবেন। আমি বললাম যে, ওই প্রসেসটা অগ্রসর হতে আমরা দেখব। এটা তো আপনাকে বাদ দিয়ে দিলাম, এর বাইরে আমরা যাচ্ছি না, এইটা হলে এই পর্যন্ত, ওইটা হলে এই পর্যন্ত, এইভাবে আছে। কাজেই ওটা যে উনারা বুঝতেছে না তা (নয়), বোঝেন। তবু কথাটা বারে বারে বলছে যে, ইন কেইস আমরা এটা অতিক্রম করতে চাই।
নূরুল কবীর: তাহলে আপনাদেরকে চাপের মুখে রাখতে চান।
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা আমাদের জন্য ভালো।
নূরুল কবীর: যাদেরকে চাপের মুখে রাখতে চায়, তারা আবার এটা ঠিকই বোঝে...
মুহাম্মদ ইউনূস: বুঝব তো বটেই।
নূরুল কবীর: দে আর প্লেয়িং টু দ্য গ্যালারিজ...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরাও চাই যে চাপের মধ্যে থাকি। কারণ, আমাদের ভেতরেও তো নানা মত থাকতে পারে।
নূরুল কবীর: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
মুহাম্মদ ইউনূস: সে জন্যই একটা বাঁধ দিয়ে দেওয়া হলো। এই পর্যন্তই, এর ভেতর থেকে আমাদের যা কিছু করতে হবে। এমন না যে কেউ বলে—না, পাঁচ বছর লাগবে। এটা সংস্কার করতে ভালো লাগছে না— এমন যেন বলতে না পারে। যে যা কিছু করতে হয় এর মধ্যে হতে হবে। এই সংস্কারের জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, এই দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপেই করতে হবে, আরও ছয় মাস বাড়াতে হবে, বললাম যে না এর ভেতরেই সবকিছু করতে হবে। কাজেই এই যে একটা বাঁধ দেওয়াটা, এটা খুব দরকারি জিনিস আমাদের জন্য। এর মধ্যে আমরা যেন সবকিছু সম্পন্ন করতে পারি।
নূরুল কবীর: আপনার মন্ত্রিপরিষদের তরুণ সদস্যদের কেউ কেউ এসব ব্যাপারে পাবলিক স্টেটমেন্ট করার পর অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন এবং সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একটা অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে—এ রকম কিছু স্টেটমেন্ট এসেছে। আপনি কি পরিষদ সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: ক্রমাগত আলাপ হয় এবং সেটার জন্য আমাদের একটা প্রক্রিয়াও আছে, যাতে করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা আলাপ করি।
নূরুল কবীর: পরিষদ সদস্যদের পাবলিক স্টেটমেন্টের জন্য যে ভুল-বোঝাবুঝি...
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়। সাংবাদিকদের সামনে গিয়ে কী বলতে কী বলে ফেলে, আমাদের তো অভ্যাস নাই। কাজেই একটু গোলমাল হয়ে যায়। পরে আবার বলে যে না আমি ওইভাবে বলি নাই, আমার বলা এভাবে ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে ঐকমত্যের কোনো অভাব নেই। আমরা যেগুলো বলছি, সেগুলো সম্বন্ধে আমরা একমতেই আছি। এটার মধ্যে কোনো অসুবিধা নেই।
নূরুল কবীর: আপনার সর্বশেষ বক্তৃতায় দুটো পোলাইট অ্যাডমিশন ছিল, আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে ও দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে। সরকার যে পরিমাণ আশা করেছে, সেই পরিমাণ সাফল্য আসে নাই, সেটাও বেশ কয়েক দিন হয়ে গেল। এগুলোর জন্য বিশেষভাবে আপনারা নতুন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন বা চিন্তা করছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় তো চেষ্টা করি। এটা তো আজকের সমস্যা না। এটা বরাবরেরই সমস্যা।
নূরুল কবীর: কোনো স্পেসিফিক স্টেপস, দ্রব্যমূল্যের জন্য...
মুহাম্মদ ইউনূস: একটা হলো আইনশৃঙ্খলা, আরেকটা হলো বাজারমূল্য (দ্রব্যমূল্য)। বাজারমূল্যের জন্য যত রকমের বুদ্ধি আছে, সবকিছু আমরা করেছি, আমাদের বুদ্ধিতে যত দূর কুলিয়েছে।
নূরুল কবীর: যেমন কী কী...
মুহাম্মদ ইউনূস: যেমন প্রতিদিনের খবর। কোন বাজারে কত টাকা উঠল, কত টাকা কমল, বাজারভিত্তিক। এমন না যে সারা বাংলাদেশের...অমুক বাজারে কত, অমুক বাজারে...তার মধ্যে রকমফের হয়। কেন রকমফের হচ্ছে। একসঙ্গে কেন এক বাজারে পড়ছে, আরেক বাজারে উঠতেছে, সেটা দেখা।
নূরুল কবীর: সেটা তো অ্যানালাইসিস হিসেবে ভালো। কিন্তু অ্যানালাইসিসের যে রেজাল্ট, সেইটার জন্য আপনারা অ্যাকশন কী নিয়েছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: অ্যাকশনের জন্য হলো যে, যেগুলো মাথায় বুদ্ধি আছে, সেগুলো প্রয়োগ করা। যেমন ট্রাক দিয়ে দেওয়া যে ট্রাকে মাল আসুক। বিআরটিসির কাছে ট্রাক আছে। ট্রাক নিয়ে আসি। ট্রাক দিয়ে মাল আসতে থাকুক। কোথায় কোথায় বাজারে এগুলো উঠছে। সেখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। এই যে চাঁদাবাজির বিষয় আছে। চাঁদাবাজিটা কমানো যায় কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। যা আপনারা দেখতেছেন, একই জিনিস আমাদের কাছে।
নূরুল কবীর: উত্তর বাংলায় যে ফুলকপির দাম দুই টাকা, ঢাকার বাজারে ৪০ টাকা। বরাবরই পুলিশ থেকে শুরু করে মিডিয়া সব সময় বলেছে যে, পথে পথে যে চাঁদাবাজি হয়, তাতে খরচটা বেড়ে যায়। এটা আপনার সরকারও জানে। কিন্তু নতুন করে একদল চলে যাওয়ার পর আরেক দল চাঁদাবাজদের দেখতে পাচ্ছি। তাদের কেউ গ্রেপ্তার হয় নাই এই অপরাধে। তার মানে কী?
মুহাম্মদ ইউনূস: গ্রেপ্তার হইছে কি না আমি জানি না। কিন্তু এটার সমাধান হয়নি।
নূরুল কবীর: কিন্তু গ্রেপ্তার হচ্ছে না। ডিটার করার [থামানোর] জন্য সরকারের পদক্ষেপ থাকলে এটা তো চলবার কোনো কারণ নাই। এগুলো সাধারণত রাজনৈতিক দলের যারা সংগঠিত শক্তি, তারাই করে। আপনারা কি রাজনৈতিক দলগুলোকে অসন্তুষ্ট করতে চান না?
মুহাম্মদ ইউনূস: আইনের ক্ষেত্রে...দল অসন্তুষ্ট হলে, সারা দেশ অসন্তুষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নূরুল কবীর: আমরা এই বিষয়ে এই ধরনের অপরাধের জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাউকে গ্রেপ্তার হতে দেখি নাই। এটা আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা হয়তো ধরতে পারছি না তাদেরকে এখনো জুতমতো।
নূরুল কবীর: এটা কি বিশ্বাসযোগ্য হবে, প্রকাশ্য রাস্তার মধ্যে বাজারের মধ্যে বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি। সবাই দেখতে পাচ্ছে স্যার। সরকার দেখতে পাচ্ছে না কেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সরকারের চোখ অত পরিষ্কার না আরকি।
নূরুল কবীর: পত্রপত্রিকার রিপোর্টগুলো আরও বাড়লে কি আরেকটু পরিষ্কার হবে বলে মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: যত বলা যায়, তত ভালো হবে, একটু সতর্ক হবে সবাই।
নূরুল কবীর: আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমার কোনো প্রশ্ন আছে, আমি বড় স্যারের সঙ্গে কথা বলব।...উনি বলছেন, যে সিন্ডিকেটগুলো আছে সরকারের জানার কথা। তারা কোথায় স্টক করে, সেগুলো রেইড করলেই পারে। নাগরিক হিসেবে বা আমার স্ত্রীর এই প্রশ্নের আপনার কী উত্তর?
মুহাম্মদ ইউনূস: উত্তর হলো, যে সিন্ডিকেটে এই মাল আনা-নেওয়া করে, আমরা চেষ্টা করছি যে বাইরে যারা আছে, সিন্ডিকেটের বাইরে, তাদেরকে কী কী সুবিধা দিলে তারা এই ব্যবসায় আসত। ব্যবসা যে আমরা দুজনে মিলে ঠিক করলাম যে আমরা মাল আনব, আমরা বিক্রি করব। এটাকে কোন আইনে আপনি...
নূরুল কবীর: তারা যখন আর্টিফিশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করে তখন...
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটা যদি মাল গুদামে রেখে দেয়, বাজারে বিক্রি না করে, তখন গিয়ে ধরতে পারেন।
নূরুল কবীর: আপনার সরকার কি এগুলো খেয়াল করেছে, গুদামে...লক্ষ করেছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: ওই যে বললাম, সবকিছু খেয়াল করে। ওই যে তথ্য সংগ্রহ করা দামের কথা বললাম, স্টকের কথা বললাম। কে কোথায় এলসি খুলতেছে, সেই রিপোর্ট আমাদের কাছে আসে। কোন মাল খালাস হচ্ছে, কোন দিন কোথায় স্টক হচ্ছে, সেগুলো সংগ্রহ করা এবং তদারক করা যে মাল কি ওই গুদামে রয়ে গেছে, না ছেড়ে দিচ্ছে।
নূরুল কবীর: আপনারা কোনো অসংগতি দেখতে পাচ্ছেন না?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা এগুলো করছি বলেই তারা তাড়াতাড়ি এগুলো ছাড়ার চেষ্টা করে, এই গুদাম থেকে আরেক গুদামে নিয়ে যায় হয়তো। বাজারে দিচ্ছে না, চালাকির কাজ।
নূরুল কবীর: এই চালাকিটার জন্য তো কোটি কোটি গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: বহু বহু গরিব মানুষ, সবাই।
নূরুল কবীর: মানেটা হচ্ছে যে এই ব্যবধান থাকবার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
মুহাম্মদ ইউনূস: ঠিক।
নূরুল কবীর: এবং সেইটা প্রধানত সরকারের দেখবার বিষয়।
মুহাম্মদ ইউনূস: ডেফিনেটলি।
নূরুল কবীর: মানুষের অভিযোগ হচ্ছে, সরকার এটা ইন ফ্যাক্ট দেখছে না। আপনি সেটা ফিল করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি ফিল করি, ডেফিনিটলি।
নূরুল কবীর: এই সরকারের বিরুদ্ধে...রাষ্ট্র তো কিছু প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজনে কঠোর হয়। আপনাদের বিরুদ্ধে সুশীলতার অভিযোগ আছে, কঠোর হচ্ছেন না।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা আমাদের সাধ্যমতো কঠোর হয়ে...হয়তো যে কঠোর মানুষের মনে আছে, অত দূর হতে পারছি না। কিন্তু আমরা যে এত দিন যত কঠোর হইনি, অত কঠোর এখন হতে চাচ্ছি।
নূরুল কবীর: আমরা একটু অন্যদিকে যাই। এটা আমরা সবাই জানি, এখানে যে বাংলাদেশে এত বড় একটা রাজনৈতিক রক্তাক্ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কিছু আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সেটাকে আমাদের পাশের দেশ ভারত একধরনের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং নানান কথা বলছে। এটা আমরা ঠিক জাতীয়তাবাদী চৈতন্য থেকে নয়, দেশকে ভালোবাসি বলে নয়, তথ্য বিকৃতি হিসেবে নানান জায়গা থেকে এগুলো মিডিয়া, এটা সাধ্যমতো বলছে। কিন্তু সেটার একটা হচ্ছে মিডিয়ার লড়াই। আরেকটা হচ্ছে যে, বস্তুত ফাংশনাল ডিপ্লোমেসিতে আপনার এই কদিনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে একটা সুষ্ঠু ওয়ার্কিং রিলেশন তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে কি আমরা এগোতে পেরেছি?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা বরাবর চেষ্টা করছি ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পর্ক [গড়ে] তোলা এবং তাদের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরার। প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে আলাপ হলো, উনিই ফোন করেছিলেন, তখন উনি অভিযোগ করলেন যে এখানে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে ইত্যাদি। আমি বললাম যে, এটা অতিরঞ্জিত কতগুলো সংবাদ আপনার কাছে যাচ্ছে। কাজেই এটা আপনি বিশ্বাস করেন না। যদি আপনি প্রকৃত তথ্য জানতে চান, আপনি আপনাদের সাংবাদিকদের পাঠান। এখানে আসুক। তাঁরা দেখুক। দেখে রিপোর্ট করুক। কাজেই আমাদের তথ্যগুলো যদি আস্থায় আনতে না চান, তাহলে এটি প্রকৃত পরিস্থিতি। পরে অনেকে এসেছিলেন। ভারতীয় সাংবাদিক এখানে এসেছেন। তাঁরা রিপোর্ট করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে করে অতিরঞ্জন থেকে বাঁচা যায়। কিন্তু কিছু সংবাদ আছে, এগুলো কোনো অতিরঞ্জনের বিষয় না। এটা একেবারে গাঁজাখোরি কতগুলো কথা নিয়ে যাচ্ছে। সেটা তারে সামনে দেখায়ে দিলেও হবে না। তো সে রকম তারা চলছে, নানা রকম আজগুবি সংবাদ দিচ্ছে। পরে যখন তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয়...এবার তাঁদের পররাষ্ট্রসচিব যখন আসলেন, তখন বললাম যে এ রকম কেন হচ্ছে? তো বলল যে, ওটা আমাদের রাষ্ট্রের সরকারের বিষয় নয়। সরকার এটার মধ্যে জড়িত না। এগুলো মিডিয়ার বিষয়। এগুলো আমাদের আওতার বাইরে। কাজেই সরকার এটা থেকে দূরে চলে গেল। সেটা আমাদের জন্য একটা বড় অ্যাচিভমেন্ট। এত দিন সরকার এটার মধ্যে জড়িত ছিল বলে অনেকটা প্রকাশ করছিল। এখন সর্বপ্রথম (বলা হলো) এটা আমাদের না। আমরাও চেষ্টা করছি, আমাদের তথ্যগুলো তাদের কাছে দেওয়ার জন্য। এখন মনে হয় ইন্টারন্যাশনাল কাভারেজ ইত্যাদির কারণে অত বেশি জুত করতে পারছে না। দিচ্ছে, এখনো খবর দিচ্ছে উল্টাপাল্টা খবর দিচ্ছে। কিন্তু জুত করতে পারছে না। যেহেতু আন্তর্জাতিক সাংবাদিকেরা রিপোর্ট করছেন। আগে বলছিল যে এটা ইসলামিস্ট একটা অভ্যুত্থান হয়েছে, এটা তালেবানদের হাতে চলে গেছে ইত্যাদি। এখন পত্রপত্রিকায় ইন্টারন্যাশনাল কাগজপত্রে যখন আসছে, ওখানেও তারা সুবিধা করতে পারছে না ওরকম বলে। কিছু কাগজে দেখাল, এখানে ক্যাবিনেটের মধ্যে কারা কারা আছে? তাঁদের যে পরিচিতি দিল, কেউ বিশ্বাস করবে না যে এটা ইসলামিস্টদের গোষ্ঠীর। কাজেই ওগুলো ফেলেও দিতে পারছে না। কাজেই যতই তারা করুক না কেন, এই ধরনের যে প্রোপাগান্ডা যেগুলো ছিল, প্রচারণা যেটা ছিল, সেটা আগের থেকে অনেক কমেছে। তাতে সব রকমের প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে—এটা বলব না। এ[ক]টা প্রচারণা আছেই।
নূরুল কবীর: ভারত রাষ্ট্রের দিক থেকে কোনো হোস্টাইলিটি টের পান আপনি?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। আমাদের তো রাষ্ট্রীয় দিক থেকে কোনো হোস্টাইলিটি নাই অন্তত। এই যে বললাম তারা পরিষ্কারভাবে বলল যে এটার সঙ্গে আমাদের [ভারত সরকারের] কিছু না। আমাদের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক। আমাদের [ভারত সরকারের] বক্তব্যের মধ্যে এগুলা নাই। আমরা বলেছি যে আমাদের সম্পর্ক খুব গভীর সম্পর্ক হতে হবে এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হতে হবে। এখন মেঘ জমেছে, মেঘটা কাটিয়ে উঠতে হবে। এটা বলছে, মেঘটা কাটানোর জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে, উভয় পক্ষে। সেটা আমরা চেষ্টা করি।
নূরুল কবীর: মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হওয়ার জন্য আপনার সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনবার একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অফিশিয়ালি চিঠি দিয়েছেন আপনারা। আপনার ধারণা, একটা রিজনেবল টাইম বলে আর কত দিনের মধ্যে উত্তর আশা করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমার কোনো ধারণা নেই, এগুলোর কত দিন সময় লাগবে।
নূরুল কবীর: আপনার ফরেন মিনিস্ট্রি নিশ্চয়ই আপনাকে...
মুহাম্মদ ইউনূস: না, এখনো জিজ্ঞেস করিনি, কত দিন লাগবে। আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এখন দেখব, তারা কী জবাব দেয়? তারা জবাব দিচ্ছে কি না, এটা ফলোআপ করব। ডেফিনেটলি একটা গতি নেবে এটা।
নূরুল কবীর: অনুমান, কত দিন পরে আপনারা আবার চিঠি দেবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা একটা সময়ের ব্যাপার। মাসখানেক বলেন। আমরা ফলোআপ করব। দেখেন কী কী হয়।
নূরুল কবীর: আমরা আরেকটু পশ্চিমে যাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনেক ভালো সম্পর্ক। এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যাবিনেটে ইন্ডিয়ান বর্ন সাতজন মন্ত্রী আছেন বলে শোনা যায়। আপনার সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্ক ভালো বলে মানুষ মনে করে। তাঁদের এই সম্পর্ক কি আমাদের দেশে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে কোনো ক্ষতির কারণ হবে বলে আপনি আশঙ্কা করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: হতে পারে; কারণ, এত ঘনিষ্ঠতা থাকলে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যদি ওইখানে ক্ষমতায় থাকে, তার একটা প্রভাব তো হতেই পারে। এবং ইতিমধ্যে তার প্রভাবের কিছু নমুনাও আমরা দেখেছি। কাজেই আমরা দেখছি, এটা কোন দিকে যায়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেই যে সে ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এমনও কোনো কথা নাই। সে হয়তো আমাদের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পারে। আমরা দেখছি, সেগুলো কীভাবে আমরা বার করতে পারি যে কারা কারা আমাদের দিকে সহানুভূতিশীল হবে। কীভাবে আমরা তাদের সহানুভূতিটা পেতে পারি। নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে গড়ে তোলা যায়। পুরোনো সরকারের সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল; ভালো সম্পর্ক ছিল। নতুন সরকারের সঙ্গে আমরা একই রকম ভালো সম্পর্ক করার জন্য চেষ্টা করব।
নূরুল কবীর: ইতিমধ্যেই কি কাজকর্ম এই ব্যাপারে শুরু হয়েছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা নিয়ম। আমাদের করতে হয়। যখন নতুন সরকার আসে, তার সঙ্গে একটা যোগাযোগ স্থাপন করা যেগুলো ডিপ্লোমেটিক পর্যায়ে হয়। গিয়ে আলাপ-সালাপ করে। ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলের বাইরে হয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের খাতিরে। ওইখানে যাঁরা হোয়াইট হাউসে আছেন, তাঁদের সঙ্গে যাঁদের যোগাযোগ আছে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। কীভাবে করতে হবে? নানাভাবে হয়। বিভিন্ন চ্যানেলে যোগাযোগগুলো করতে হয়।
নূরুল কবীর: আপনি ইতিমধ্যে সার্কের একটা ইফেকটিভ রিভাইভালের কথা প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশের তরফ থেকে। তাতে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: অন্য দেশের যাঁরা আছেন, তাঁরাও চান সার্কের অন্যান্য দেশের মধ্যে...কিন্তু ভারত এটাতে খুব সাড়া দিচ্ছে না। তারা ব্যাখ্যা করে যে আমাদের [ভারত] সমস্যা হলো পাকিস্তানকে নিয়ে। তো আমি যেটা ব্যাখ্যা করি যে একটা দেশের সঙ্গে সমস্যা হলেই পুরো জিনিসটা বিকল হয়ে যাবে, এটা তো ঠিক হবে না। আমরা চেষ্টা করি, ওইটাও সমাধান হোক। অথবা ওই সমস্যাকে পৃথকভাবে দেখে বাকি সব সম্পর্ককে আমরা গড়ে তুলি। এখনো এটার কোনো...
নূরুল কবীর: রেসপন্স?
মুহাম্মদ ইউনূস: রেসপন্স...
নূরুল কবীর: দেখা যায় না?
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যেটা আমার দেশের মানুষ জানতে চায়। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর টাকা আওয়ামী লীগ আমলে পাচার হয়েছে। আপনি তার জন্য একটা কমিশনের মতো করেছেন। এই টাকাপয়সা ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতির ইঙ্গিত কি পাচ্ছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: একসাথে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়ে গেলে আমরা নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করতে পারব। এ রকম একটা আইন আছে। আইনের মাধ্যমে এটা করব। সব টাকা হয়তো ফেরত আসবে না। কিছু টাকা ফেরত আসবে যদি আমরা সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো পাই। সে প্রচেষ্টাগুলো হচ্ছে।
নূরুল কবীর: সাক্ষ্যপ্রমাণের ব্যাপারে কাজকর্ম চলছে...
মুহাম্মদ ইউনূস: একদম। খুব ডেডিকেটেড একটা আলাদা ইউনিট আছে, তাদের কাজই হলো এগুলো উদ্ধার করা। এটা প্রথম থেকে শুরু হয়েছে। যেহেতু আমরা জানি, যে রকম টাকা গেছে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে গেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে ধরাটা একটু সহজ হবে হয়তো। যেগুলো স্যুটকেস ভরে নিয়ে গেছে, মুশকিল আছে সেগুলো ধরা। কিন্তু এগুলো তো চ্যানেলের ব্যাপার। যারা এক্সপার্টস আছে, যারা এই কাজগুলো করে, তারাও বলতেছে, হ্যাঁ, এটা সম্ভব। কিন্তু সম্ভব বলে কত দিন আমরা বসে থাকব, এটাই হলো বিষয় আরকি। এটার আইনগত বিষয় আছে। কী সাক্ষ্যপ্রমাণ? তারা কী চায়? কীভাবে এটা আইডেনটিফাই হবে? কার কাছে গেল? আইন ভঙ্গ করে গেল? কিছু কিছু আশা মাঝে মাঝে পাই যে এটা হবে। এখনো চূড়ান্ত কিছু পাইনি।
নূরুল কবীর: মানে, আমাদের আশা করবার কারণ আছে...
মুহাম্মদ ইউনূস: আশা করার কারণ আছে। অবশ্যই কারণ আছে।
নূরুল কবীর: কী রকম সময় লাগবে বলে আপনার ধারণা?
মুহাম্মদ ইউনূস: তাদের কথা তো কিছু বুঝতে পারি না। এটার যে একটা স্ট্যান্ডলাইন আছে, এর মধ্যে গিয়ে এটা শেষ হবে, এটা এখনো বুঝি নাই যে এটা কত দিন লাগতে পারে। আমি একটা আন্দাজে বলে দিতে পারি আপনাকে। কিন্তু আমার মনে হয় না, সেটা বলা ঠিক হবে।
নূরুল কবীর: সামনের নির্বাচনের পরে এই যে এ রকম দায়িত্ব শেষ করবার পরে পরবর্তীকালে কী করার প্ল্যান আপনার?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি তো বরাবরই বলছি যে আমি যে [এখানে, এটা] সাময়িক বিষয় ছিল। আমি এই দায়িত্ব পালন করে আমার পুরোনো আনন্দের জগতে ফিরে যাব।
নূরুল কবীর: এই অভিজ্ঞতার ওপর কোনো বই লেখার পরিকল্পনা আছে আপনার?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। এ রকম চিন্তা করিনি। আপনি বইয়ের কথা মনে করিয়ে দিলেন! আমি দিন কাটানো নিয়ে ব্যস্ত আছি।
নূরুল কবীর: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেবার জন্য।
মুহাম্মদ ইউনূস: অসংখ্য ধন্যবাদ।
নূরুল কবীর: আপনার চার মাস হলো প্রায়। এই চার মাস আর আগের চার মাসের মধ্যে কোন পর্বটা আপনার ভালো লাগে বা কোনটা খারাপ?
মুহাম্মদ ইউনূস: খারাপ কোনোটাই না। খারাপটা বলব না, কিন্তু ভিন্ন। আগেরটা ছিল আমার নিজস্ব জগৎ। সারা জীবন ধরে যা যা করে এসেছি, সেটার মধ্যেই ছিলাম। নিজস্ব আয়োজন, নিজস্ব চিন্তা। তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। সেটা আমার মতো করে ট্যাকল করেছি। আমি আমার মতো করে চলেছি। সেটা একেবারে আমার নিজস্ব জগৎ। এটা একবারে ভিন্ন জগৎ। এটা আমার নিজস্ব জগৎ না। এই জগতে আমি কোনো দিন ছিলাম না; থাকার কোনো আগ্রহও ছিল না। এটার ডান-বাম আমার জানা নেই। অনেকটা হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে চলার মতো অবস্থা। কিন্তু এটারও একটা চ্যালেঞ্জ আছে।
আমাকে তারা আহ্বান জানিয়েছে। প্রথমে একটু সংকোচ করছিলাম যে এতে যাওয়া ঠিক হবে না, যেহেতু আমি এ জগতের মানুষ নই। কিন্তু তারা আমাকে বোঝাতে পেরেছে যে, এই পরিস্থিতিতে আপনার আসা দরকার। শেষ পর্যন্ত আমি রাজি হয়েছি যে, এইভাবে তোমরা প্রাণ দিয়েছ, তোমরা রক্ত দিয়েছ। আমার জন্য না হয় একটু চ্যালেঞ্জিং হলোই। কাজেই আমি রাজি হলাম। এটা ভিন্ন জগৎ। এই ভিন্ন জগতের মধ্যে এখন চলছি। দেখা যাক কত দূর যেতে পারি।
নূরুল কবীর: কিন্তু আগস্টের ৮ তারিখে এই জগৎটা যদি শুরু না হতো আপনার জন্য, পেছনের (আগের) যে চার মাস, আপনার মনে হয় তত দিনে জেলে থাকার কথা ছিল।
মুহাম্মদ ইউনূস: হয়তো, আমি তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কোন কোন দেশে যাব, যাতে বাংলাদেশে ফিরে যেতে না হয়। আমি এক উপলক্ষে আরেক দেশে ছিলাম। সেখানে বসে ভাবছি, এখন ফিরে যাওয়া ঠিক হবে কি না। কারণ, যাওয়ার সময় উত্তেজনা দেখে গেছি, কারফিউ দেখে গেছি। কারফিউর ভেতর দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে; উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।
নূরুল কবীর: তার মানে, আপনি কারফিউ ভঙ্গ করেছিলেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি কারফিউ ভঙ্গ করে গেলাম, তা না হলে তো যেতে পারতাম না। ভাগ্যিস, কেউ ধরেনি পথে। অত কড়াকড়ি কারফিউ ছিল না। ওই অবস্থা তো দেখে গেছি এবং এটা ক্রমাগতভাবে দেখেছি পত্রপত্রিকায়, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভয়ংকর রকম কাজ হচ্ছে। কাজেই ক্রমাগতভাবে ফিডব্যাকটা পাচ্ছিলাম। তার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে গেল, একবারে অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। কিন্তু এর মধ্যে বুঝি নাই যে এর মধ্যে আমাকে জড়িত হতে হবে। আমাদের এর মধ্যে একটা ভূমিকা পালন করতে হবে। কাজেই চার মাস এভাবেই গেছে আমার।

নূরুল কবীর: আপনি ৮ আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পরে আপনার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের যে আইনগত অভিযোগ ছিল, সেগুলো কোর্ট থেকে একের পর এক উঠে যায়। আপনার পজিশনের ভারে কিংবা প্রভাবে এ ঘটনা ঘটেছে—লোকেদের এ রকম ভাবনার সুযোগ আছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি বলব, এটা আমি সরকারে থাকি বা দেশে থাকি, না থাকি—এগুলো এমনি চলে যেত। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আমাদের যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন আদালতে, আমাদের যে উকিলরা আছেন, তাঁরা এটা বোঝাতে পারতেন যে এটার কোনো ভিত্তি নেই। এটার কোনো তথ্য নাই, কিছুই নাই। এগুলো খুবই ঠুনকো জিনিস ছিল। কাজেই এটা আমার জানা-অজানার কোনো বিষয় নয়। যেহেতু এটা বিচারের বিষয়, বিচারেই চলে যেত। আমি থাকলেও যেত, না থাকলেও যেত। ঘটনার চক্রে আমি ছিলাম।
নূরুল কবীর: কিন্তু লোকেরা যে বিচারব্যবস্থার ওপর তৎকালীন এক্সিকিউটিভের, রাষ্ট্রের প্রভাবের কথা বলছিল বা বলাবলি আছে এখনো, তাহলে কি আপনি মনে করেন, উনারা ক্ষমতায় থাকলেও কোর্ট ওইভাবে ব্যবহার করত, মানে ন্যাচারাল পদ্ধতিতে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আগের যারা ছিল তারা তো করে নাই। করে নাই বলেই তো আমি আদালতের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। যারা এসেছে, তারা বিচার চাচ্ছে, বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে।
নূরুল কবীর: সেভাবেই যদি চলত, তাহলে তো আপনি জেলে যাওয়ার একটা...
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই। আমি তো জেলে যাওয়ার পথেই ছিলাম। [আদালতে] আসা-যাওয়ার পথে প্রতিবারই মনে হচ্ছে, এবারই বোধ হয় জেলে যেতে হবে। মাঝে মাঝে প্রস্তুতি নিয়ে গেছি যে হয়তো ফেরা না-ও হতে পারে এবার। আমার সহযোগী যাঁরা আছেন, তাঁরা তাঁদের আত্মীয়স্বজনকে বলে গেছেন তাঁদের জন্য। আমি বলেছি, আমার কিছু করার নাই, যেমন আছে হবে। আমি আমার ফ্যামিলিকেও এ রকম প্রস্তুত করে যাইনি। বলি যে, রেখে দিলে রেখে দেবে, নিয়ে গেলে নিয়ে যাবে। আমি খুব সহজভাবে দেখছিলাম যে, এটা নিয়তির খেলা। এটা যেভাবে হবার হবে। এটাতে প্রস্তুতি নিয়ে আমার কোনো কাজ নাই যে জেলে থাকলে এই করতে হবে, করব। এটা যখন কপালে আছে, এটা আমাকে করে যেতে হবে।
নূরুল কবীর: আপনি এইমাত্র বললেন যে, এটা একটা ভিন্ন জগৎ এবং এইভাবে জড়িয়ে পড়তে হবে; এ রকম একটা রাজনৈতিক দায়িত্ব রাষ্ট্র পরিচালনায়, সেটা আপনি চিন্তা করেননি।
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: আপনি ২০০৭ সালে যখন একটা পার্টি করতে গিয়েছিলেন, সেই সময় তো এটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবেই চিন্তা করেছিলেন। সেখানে যদি আপনি কনটিনিউ করতেন, আপনাকে তো রাজনৈতিক দায়িত্বই গ্রহণ করতে হতো।
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটার কারণ ছিল যে এখানে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না তখন, সবাই আমার বন্ধুবান্ধব সহযোগী, পরিচিত। সবাই বলছে, আপনি কিছু একটা করেন; পেছনে লেগে রইল...আপনি ছাড়া পারবে না কেউ, এই যা যা বলে আরকি আশপাশের লোকজন। এতে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে শেষে বললাম যে ঠিক আছে আমি করব এইটা। পথে আসতে-যেতে সাংবাদিকেরা ধরল। তখন আমি বলেছি, হ্যাঁ, আমি করব। এই দিয়ে শুরু হলো। তখন বেশির ভাগ সময় আমি আসা-যাওয়া করছিলাম বিভিন্ন জায়গায়, উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিলাম, চিটাগাং যাচ্ছিলাম। প্রতিবার এয়ারপোর্টে এই কথাবার্তা হচ্ছিল। আর কোথাও না। তখন একসময় ধরল যে তাহলে কী নাম দেবেন? আমি (বললাম) যে নাম ঠিক করি নাই। নাম ঠিক করলে আপনাদের জানাব। তখন বলল, নাম ঠিক না করে কীভাবে যান? তখন অবশ্য একটা নাম দিলাম, নাগরিক শক্তি। তারপর বুঝলাম যে এটা বেশ এগিয়ে যাচ্ছে জিনিসটা। তারপর সবাইরে বললাম যে এটার [ওপর] মতামত নাও। মতামত নেওয়ার ব্যাপারটি হলো, কোনো রকম এটা থেকে দূরে সরা যায় কি না, তার চেষ্টা। নাম হলো, মতামত হলো। তারপর আমি দেখলাম যে ঢুকে যাচ্ছি এর ভেতরে। যখন দশ সপ্তাহ হলো প্রায়, তখন বললাম যে না ভাই, আমি কোনো রাজনৈতিক দল করছি না, কিচ্ছু না। কাজেই আমার মাথার ভেতরে একদিন এই রাজনীতির মধ্য দিয়ে গিয়ে ক্ষমতায় যাব, এ রকম কোনো পরিকল্পনা ছিল না, এটা দীর্ঘমেয়াদি জিনিস।
নূরুল কবীর: কিন্তু রাজনৈতিক দল তো শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত...
মুহাম্মদ ইউনূস: ছিল। কিন্তু তখন আমি তো আসলে রাজনৈতিক দল করতে চাচ্ছিলাম না। ঠেকা দেবার জন্য এগুলো বলে যাচ্ছিলাম। শেষে মনে করলাম যে, এটা বেশ গভীরে চলে যাচ্ছে। তখন একদম পরিষ্কার বলে দিলাম। তখন সবাই হতবাক হয়ে গেছে। তখন আমার বন্ধুবান্ধব বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিলেন।
নূরুল কবীর: আপনি কি আলাপ করেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে?
মুহাম্মদ ইউনূস: কিচ্ছু করিনি। সে জন্য আরও হতবাক হলো। বলে যে আপনি কিছু বললেন না আমাদের! আমরা আপনার পেছনে ঘুরলাম এত দিন ধরে।
নূরুল কবীর: মনঃক্ষুণ্ন হবার কথা...
মুহাম্মদ ইউনূস: খুবই মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে তারা।
নূরুল কবীর: তারা এখন কি আনন্দে আছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: তারা কাছে আসে না। বলে আবার কোন দিকে নিয়ে যায় আমাদের।
নূরুল কবীর: ওই নাগরিক শক্তির সঙ্গে ছাত্রদের যে নাগরিক কমিটি, তার কোনো চিন্তা বা ভাবনার সম্পর্ক আছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: নাগরিক শব্দটা কমন আছে এটা দেখতেছি। আমার সঙ্গে তো আর কোনো আলোচনা হয় নাই, তারা কোথা থেকে শব্দ পেল না পেল।
নূরুল কবীর: এই শব্দটা যেকোনো লোক ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আপনার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করে নাই তারা?
মুহাম্মদ ইউনূস: পরামর্শ করে নাই।
নূরুল কবীর: আপনি প্রায়ই বলেন, কয়েকবারই বলেছেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে যে ছাত্ররা আপনাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে, তাদের ম্যান্ডেটের কারণে। ছাত্রসমাজ হিসেবে ৫ আগস্ট যে পরিমাণ তারা সমন্বিত ছিল, সংগঠিত এবং একাকার ছিল, এইটা যদি বিভক্ত হয়ে যায় তাদের উদ্দেশ্য সাধিত হয়ে যাওয়ার পর, এই অর্থে যে ইমিডিয়েট উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতন। তার পতনের পরে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বিভিন্ন রাজনীতি আছে। তারা যদি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে কিংবা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাত ঘটে, তখন আপনার ম্যান্ডেটটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা হলো অন্তর্বর্তী সরকার। আমি সেই সরকারের একটা অংশ। ওইটা হলো রাজনীতি। এই সরকারে আমি কত দিন আছি না আছি, সেটা একটা ব্যাপার। ওরা কী করছে, রাজনীতির কী ফল দাঁড়াবে, সেটা ভিন্ন জিনিস। এটা একজন নাগরিক হিসেবে ওরা চিন্তা করতে পারে যে কী হবে না হবে। কিন্তু সরকার হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি; যতটুকু আমার সাধ্যে কুলায়।

নূরুল কবীর: আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ওটা সংঘবদ্ধ ছাত্রসমাজের ম্যান্ডেট ছিল। সেই সংঘবদ্ধতাটা যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে...
মুহাম্মদ ইউনূস: দুর্বল হয়ে যাবে।
নূরুল কবীর: দুর্বল হয়ে যাবে?
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই দুর্বল হবে।
নূরুল কবীর: এ রকম সম্ভাবনা আপনি দেখেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় সম্ভাবনা তো থাকে। একটা দুর্বল হবে আরেকটা সবল হবে। এই টুকরা এই টুকরার সঙ্গে মিলবে। নানা রকম ঘটনা তো ঘটে।
নূরুল কবীর: অন্যান্য টুকরার কথা বলছেন। ধরুন, আমরা যাঁরা বাইরে থেকে দেখি, ওই অভ্যুত্থানে বিজয়ী ছাত্রনেতৃত্ব আপনাকে আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সেইটাকে সমর্থন করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা পাওয়ার কনটেন্ডার, তারা আপনাকে সহযোগিতা ও সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাহলে আপনি যখন প্রায়ই বলেন, ছাত্ররা আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছে, তখন আপনার কি মনে হয় যে অন্য দুইটা সেক্টর যারা সংগঠিত, নানানভাবে, তারা মনঃক্ষুণ্ন হতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: হতে পারে। কিন্তু বাস্তব তো তাই। আমাকে তো ডেকে এনেছে ছাত্ররা। কাজেই আমি সেভাবেই বলেছি, ছাত্ররা আমাকে নিয়োগ করেছে। এখন সবাই মিলে এটা সমর্থন করেছি আমরা। সেটা হলো বৃহত্তর একটা জিনিস। কিন্তু ইমিডিয়েট ছিল যে আমার সঙ্গে কথাটা হচ্ছে ছাত্রদের সঙ্গে। যাদের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নাই, জীবনে দেখিনি তাদেরকে, তাদের সঙ্গে আমার পরিচয়...সেভাবে আমি কথাটা জানিয়েছি। আমার বাস্তবটা জানিয়েছি। কাউকে মনঃক্ষুণ্ন করার জন্য, কাউকে আঘাত দেওয়ার জন্য এরা দেয় নাই, ওরা দিছে, ও রকম কিছু না।
নূরুল কবীর: না মানে, পাওয়ার ব্লক থাকে তো...
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই।
নূরুল কবীর: এই তিনটাই আপনার জন্য, দেশের মানুষের জন্য আপনার সরকারের অস্তিত্ব চলমান থাকার জন্য, জরুরি আমাদের মনে হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই, অবশ্যই।

নূরুল কবীর: আপনার এই যে প্রধান উপদেষ্টা পদের নাম, মানে নোমেনক্লেচার অব দি পজিশন, এইটা আপনি অ্যাগ্রি করলেন কেন? আপনি কাকে উপদেশ দেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: ওগুলো আমার মাথায় আসে নাই। নামটা কি উপদেষ্টা হলো না কী হলো। দায়িত্ব নিতে বলেছে, আমি দায়িত্ব নিয়েছি।
নূরুল কবীর: উপদেষ্টা হলো একটা পজিশন। উপদেষ্টা মানেই আপনি কাউকে উপদেশ দেন।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি এগুলোর ব্যাখ্যার মধ্যে যাই নাই। বলেছে, আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে এই সরকারের। আমি দায়িত্ব নিয়েছি। নামটা কী দিল না দিল, কোথা থেকে আসল...
নূরুল কবীর: একবারও মনে হয়েছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এগুলো বড় মনে হয়নি। কারণ, বলেছে যে এই ধরনের পরিস্থিতিতে এই ধরনের নামই হয়। কাজেই আমার চ্যালেঞ্জ করার কিছু নাই।
নূরুল কবীর: দুইটা ভিন্ন। একজন চিফ থাকে। চিফকে অন্যরা উপদেশ দেয়। তাহলে আপনি উপদেশদাতাদের মধ্যে প্রধান। কিন্তু কাকে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা চিন্তা করি নাই।
নূরুল কবীর: আপনি যে মন্ত্রিপরিষদ (উপদেষ্টা পরিষদ) তৈরি করলেন ছাত্রদের আহ্বানে, অন্যদের সমর্থনে, সেইখানে কি আপনার মন্ত্রিপরিষদ গঠনে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ছিল?
মুহাম্মদ ইউনূস: পরিপূর্ণ বলব না, এটা তো তাৎক্ষণিকভাবে হয়েছে। এটা এমন কিছু না যে চিন্তাভাবনা করে করা হয়েছে। কাজেই আমাকে যতটুকু বলা হয়েছে, আমি সেটা করেছি। অন্য কারা কী করল, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি।
নূরুল কবীর: পরামর্শগুলো কি এসব সেক্টর থেকে এসেছে আপনার কাছে বা কোনো রেকমেন্ডেশন সেটা আর্মি থেকে বা রাজনৈতিক দলের মধ্য থেকে?
মুহাম্মদ ইউনূস: না না না। ওই রকমভাবে কিছু আসে নাই। বলছে যে এরা এরা আছে। আপনি কারে কারে নেবেন। শপথ গ্রহণ করতে হবে আগামীকাল বা সেদিনেই, এ রকম অবস্থা। আমি তাৎক্ষণিকভাবে আমার পরিচিত যা নাম ছিল, সেগুলো দিয়েছি।
নূরুল কবীর: আপনার কাছে এই খবর নিশ্চয়ই আছে বা আপনার এজেন্সিগুলো এই খবর কি দেয় যে আপনার সরকারের যাঁরা সদস্য, তাঁদেরকে অন্তত দুটো ক্যাটাগরিতে জেনারেলি ভাগ করা যায়। এক পক্ষের ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে এনজিওস। সেখানে আপনার ব্যাপারে একটা সমালোচনা আছে যে চিটাগংয়ের লোক বেশি। কারণ, আপনার বাড়ি চিটাগং? আরেক পক্ষ হচ্ছে, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই থেকে অনেকে অনেক দূরে ছিলেন। এই তাঁদের কারণে এখন ঠিক স্টেটক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এই কথাগুলো কি আপনার কানে আসে?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় বলাবলি করে, সবাই বলছে। কাজেই এখানে না আসার কোনো কারণ নাই। এ জন্য বিব্রত হবারও কোনো কারণ নাই। সেভাবেই হয়েছে। নানা জায়গা থেকে আমরা এসেছি। আমারও তো কোনো অভিজ্ঞতা নাই। কাজেই ওদের দোষ দেব কী করে। আমাকে দেশ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার তো বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা নাই। আমি তো কোনো দিন এ ধরনের কাজে ছিলাম না। আমি যদি পারি, ওরাও পারবে, এটাই আমার ভরসা ছিল।
নূরুল কবীর: তাঁদের পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার কেমন...
মুহাম্মদ ইউনূস: নিজের পারফরম্যান্স নিয়েই আমার সন্দেহ। ওদের পারফরম্যান্স নিয়ে কী জিজ্ঞেস করব।
নূরুল কবীর: কিন্তু আপনারটা তো অন্যরা বলবে...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি বলব; আমি দেখছি তো।
নূরুল কবীর: আপনি কি আপনার পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। বলছি যে আমার তো সেই কোয়ালিটি নাই, করার জন্য যেটুকু দরকার ওটুকু নাই। যদিও সাধ্যমতো করি, যদি লেগে যায় তো ভালো। না হলে আমাদের কপাল খারাপ।

নূরুল কবীর: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে পরিমাণ সমঝোতা এবং যোগাযোগ থাকা দরকার বলে পত্রপত্রিকা বা অন্যান্য যাদেরকে আমরা বলতে শুনি, সেই পরিমাণ সমঝোতা এবং যোগাযোগ আপনার আছে বলে মনে হয়? আমাদের কাছে মনে হয়, কিছুটা দূরত্ব আছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমার কাছে মনে হয়, অবিশ্বাস্য রকম সমঝোতা-আত্মীয়তা-ঘনিষ্ঠতা আছে। এটা আমার কাছে অবাক লাগে। কাগজপত্রে দেখি তাঁরা একজনের বিরুদ্ধে একজন কটু কথা বলে। যখন সামনে আসে, সবাই কী আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেন! আমার কাছে অবাক লাগে এগুলো! মনে বড় সাহস লাগে। যখনই কথা বলি, ব্যক্তি হিসেবে যখন রাজনৈতিক দলের কারও সঙ্গে কথা বলি, অন্যরা কেউ নাই, একা সে। কিন্তু তার সঙ্গে যখন কথা বলি, কী রকম সমর্থন নিয়ে কথা বলে! আমি অভিভূত হয়ে যাই যে এত সমর্থন থাকা সত্ত্বেও এই দেশ চলছে না কেন! এর মধ্যে মাঝে মাঝে আবার কাগজপত্রে এ রকম কথাবার্তা [প্রকাশ] হয় কেন? এই দু রকম কেন?
নূরুল কবীর: কেন এমন হয় বলে আপনার মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় মনে হয়, এর একটা হলো রাজনৈতিক কথা। কিছু অঙ্গভঙ্গি আছে, যেগুলো রাজনীতিতে চালু হয়ে গেছে। এভাবে কথা না বললে রাজনৈতিক নেতা বলে মনে হয় না। ওভাবে, ওই শব্দে কথা বলতে হয়; ওই সুরে কথা বলতে হয়। টেলিভিশনে গেলে ওই কণ্ঠে কথা বলতে হয়। কিন্তু যেইমাত্র ব্যক্তি হিসেবে কথাবার্তা বলেন, তখন বলার ভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজেই সেটার আন্তরিকতা এবং সেটার ঘনিষ্ঠতা আমাকে অভিভূত করে। প্রতিবারই আমাকে অভিভূত করে।
নূরুল কবীর: একটা অন্য কথায় আসি। আপনার সরকার সেপ্টেম্বর মাসে সম্ভবত অক্টোবরে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাঁরা এই গণতন্ত্রের আন্দোলন এবং অভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেবেন। পরবর্তীকালে জুলাই ফাউন্ডেশন হলো। সেখান থেকেও কথা এসেছিল যে আহতদের এক লাখ টাকা করে এবং পাঁচ লাখ টাকা করে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তরুণ-তরুণী, ধনী-গরিব ও মধ্যবিত্তনির্বিশেষে তাঁদেরকে দেওয়া হবে। আপনি নিশ্চয়ই সচেতন আছেন যে, সেই প্রতিশ্রুতি পালিত হয় নাই এখনো। এটা কেন? ইতিমধ্যে আপনারা হাজার কোটি টাকা করে বিভিন্ন ব্যাংকে দিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় এক্সচেকার থেকে লুটপাটের কারণে যে সমস্ত ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের। কিন্তু যারা এই ব্যবস্থাকে বদলাল, তাদেরটা প্রায়োরিটিতে আসল না কেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: প্রায়োরিটিতে ছিল বলেই এত কথা ঘোষণা হলো। প্রায়োরিটিতে ছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায়নি। এগুলো হলো আদেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা। কীভাবে টাকা কার কাছ থেকে কোথায় যাবে? কীভাবে বিতরণ হবে? এগুলো নিয়ে। দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। যত টাকা লাগে তাদের, এই কমিটমেন্ট আছে এবং তাদের আমরা জীবৎকালে যত সমর্থন দরকার, যত পয়সাকড়ি দরকার, সবকিছুর জন্য কমিটমেন্ট আছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই; টাকারও কোনো অভাব নাই।
নূরুল কবীর: কত দিন লাগতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এখন আমার আগাম বলতে ভয় ভয় লাগে। যে কথা বলি, ওটায় পারি না তো শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাতে।
নূরুল কবীর: আপনার কথায় আন্তরিকতা তো মানুষ বিশ্বাস করে। আপনার অনুমান? অন্তত এটা তো খুবই একটা ইমিডিয়েট এবং প্রায়োরিটির মধ্যে থাকার কথা।
মুহাম্মদ ইউনূস: নিশ্চয়ই।
নূরুল কবীর: এটা কি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে হচ্ছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। কার হাত দিয়ে কীভাবে যাবে, কার কাছ থেকে কোথায় যাবে, এগুলো নিয়ে গোলমাল হচ্ছে। আর কিছু না।
নূরুল কবীর: তাতে আমলাতন্ত্রের কিছু হচ্ছে না। কিন্তু সরকার, আপনার সরকারের বদনাম হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা আমাদের সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা। আমি ব্যুরোক্রেসিকে (আমলাতন্ত্র) দোষ দেব না। তাদেরও নিয়মকানুন আছে। আমরা হয়তো সেই নিয়মকানুন বুঝি না বলে কানেকশনটা ঠিকমতো করতে পারি নাই।
নূরুল কবীর: আপনার জন্য কোনো টাইমলাইন বলা কি কঠিন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি আবার মাস, দিন একটা দিয়ে আবার বিব্রত হতে চাচ্ছি না আরকি।
নূরুল কবীর: সাম্প্রতিককালে আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করছেন, আমরাও লক্ষ করছি যে সরকারের যে গণতান্ত্রিক সংস্কারের কর্মসূচি এবং নির্বাচন—এই দুটিকে পরিপূরক না ভেবে একটা সাংঘর্ষিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে আলাপ-আলোচনার মধ্যে। এটা কি আপনাকে চিন্তিত করে?
মুহাম্মদ ইউনূস: না, এখনো সাংঘর্ষিক তো যায় নাই। আমরা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছিলাম, একটা ফর্মুলা দিয়েছিলাম, একটা প্রক্রিয়া তৈরি করেছিলাম। এটা কাজে লাগে কি না জানি না। প্রক্রিয়াটা হলো যে, কতগুলো কমিশন বসিয়ে দিয়েছি। প্রতিটা সাবজেক্টের ওপরে কমিশন বসিয়ে দিয়েছি। এ রকম ১৫টা কমিশন হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৬টা কমিশন প্রথম ঘোষণা করেছিলাম। ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। তারা ৯০ দিনে শেষ করতে পারে নাই। বলছে যে এক সপ্তাহ দেরি হতে পারে। সেটার কারণে আমাদের আয়োজন করতেও সময় লেগেছে। ঘোষণা করেছি, তাকে বসার জায়গা দিতে পারি নাই। কোথায় কে কার সঙ্গে পরিচয়, এসব করতে সময় লেগেছে। তারা ৯০ দিন পায় নাই সেই হিসাবে। কাজেই যদি ৭ তারিখে তারা দিয়ে দেয়, তাহলে জানুয়ারি ৭ তারিখের মধ্যে আমরা সেই ৬টা কমিশনের রিপোর্ট পাব। ওইখানে যাবতীয় সংস্কারসংক্রান্ত বিষয় দেওয়া থাকবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়েছে। তাহলে সংস্কারের রূপরেখাটা আমরা পেলাম। ইতিমধ্যে মতবিনিময় হয়েছে, তার মধ্যে কোনোটা টিকেছে, কোনোটা টিকে নাই। কমিশন মনে করেছে, যেটা এইগুলোই হলো আমাদের সারমর্ম। এগুলো পেয়ে গেলে তখন নিয়ে আসব বৃহত্তর সংলাপের জন্য। একটা সংলাপ সেদিন হয়েও গেল। যদিও কোনো রিপোর্ট আসেনি তবু প্রাথমিকভাবে একটা সংলাপ হলো। সবাইকে নিয়ে আলাপ করা—কোনটা পছন্দ, কোনটা অপছন্দ, কীভাবে অগ্রসর হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই বিষয়ভিত্তিক একটা বড় রকমের কনসেনসাস বিল্ডিং প্রসেস, যেটার জন্য আবার আলাদা একটা কমিশন ঘোষণা করলাম সেদিন। সেটা হলো এই ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের দিয়ে একটা কমিশন। আমি নিজে এটার চেয়ারম্যান হলাম এবং প্রফেসর আলী রীয়াজকে সহসভাপতি করলাম যে আমরা মিলে এটা একটা কনসেনসাস ডেভেলপ করার চেষ্টা করব। এই কনসেনসাসের প্রক্রিয়াটা আমাদের ঠিক করতে হবে। সমাজের কোন কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে কীভাবে আদান-প্রদান হবে, তাতে একটা সর্বমতসম্মত একটা কিছু বের করা যায় কি না। সবকিছুতে একমত না হলেও অন্তত কিছু বিষয়ে আশা করি একমত হওয়া যাবে। তখন সেটা হবে আমাদের সংস্কার। যেহেতু একমত হয়ে গেছে, তাহলে এটা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়ে যাবে— এইভাবে আমরা চিন্তা করছি।
নূরুল কবীর: এটা আবার কি মধ্য জানুয়ারিতে শুরু হতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আশা করছি। ডেফিনেটলি।
নূরুল কবীর: অর্থাৎ আপনার সরকারের নিজস্ব কোনো সংস্কার কর্মসূচি নাই...
মুহাম্মদ ইউনূস: এই তো এটাই আমাদের।
নূরুল কবীর: কিন্তু এটা তো বাইরে থেকে আসল...
মুহাম্মদ ইউনূস: বাইরে থেকে নিয়েই তো আমাদের হলো। এটা এভাবে একজনের মাথা থেকে তো আসবে না। ১০ জনের মাথা থেকে এসে নির্যাস হয়ে এটা আসল। তারপরও আবার সবার সঙ্গে আমি [কথা] বলছি।
নূরুল কবীর: আপনার ক্যাবিনেটে আপনাদের কি কোনো নিজস্ব চিন্তাভাবনা, কোনো সেক্টরে...?
মুহাম্মদ ইউনূস: আছে। কিন্তু সেটা কমিশনকে গিয়ে বলতে হবে। কারণ, মতামত সংগ্রহ করার দায়িত্ব হলো কমিশনের।
নূরুল কবীর: কিন্তু সরকারের নিজেদের কোনো নিজস্ব...
মুহাম্মদ ইউনূস: নিজস্ব কোনো প্রোগ্রাম নাই। আমরা তো রাজনৈতিক দল না যে আমাদের একটা নিজস্ব থাকবে। আমাদের একেকজনের একেক মত। একেকজন একেক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সেটা নিয়ে তো আমাদের কোনো অসুবিধা নাই।
নূরুল কবীর: এগুলো নিয়ে অনেক ভিন্নমত কি আপনার সরকারের মধ্যে...
মুহাম্মদ ইউনূস: এখনো তো দেখি নাই। সামনে আসলে দেখা যাবে, যখন তর্ক-বিতর্ক শুরু হবে—না, এটা আমরা মানি না।
নূরুল কবীর: আর আপনি এটা অনুমান করছেন...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি অনুমান করছি। কারণ, সব সময় সবাই যে একমত হবে, সে রকম তো কথা নেই। যেমন ধরেন, সেদিন সংলাপের জন্য আমাকে একটা বক্তৃতা দিতে বলেছিল। সেখানে বললাম যে সমঝোতা কীভাবে হবে। এটা একটা প্রক্রিয়া। বলতে গিয়ে বললাম, ধরুন, আমি মনে করি, ১৭ বছর বয়সে ভোটার হওয়া উচিত এবং আপনি সেটা ভিন্নমত পোষণ করেন। তাহলে আলাপ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, আপনার মতই টিকে গেল। আমারটা হলো না। আমি মেনে নেব সেটা। লোকে মনে করল যে, ১৭ বছর—এটা সরকার থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি তো ভাই এ রকম বলি নাই। আমি বললাম যে ধরুন, ১৭ বছর বয়স থেকে (ভোটার) হওয়া ভালো। এটা একটা মত।
নূরুল কবীর: সিদ্ধান্ত নয়...
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা সিদ্ধান্ত নয়। উদাহরণ হিসেবে এটা। তাহলে এটার সমঝোতাটা কীভাবে হবে? আপনাদের সবার মত এক রকম, আমার মত এক রকম। শেষ পর্যন্ত সবার মত যেদিকে, আমি সেদিকে যোগ দেব। সেটি হলো কনসেনসাস, সেটি হলো ঐকমত্য। এইভাবে আমরা অগ্রসর হতে চাই। সেটা অনেকে ভুল বোঝে। মনে করে যে সরকার থেকে ১৭ বছর লাগিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি বললাম যে না ভাই এ রকম তো বলি নাই আমি।
নূরুল কবীর: এ বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা নাই...
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে, আমরা লক্ষ করছি, তরুণদের একটি অংশ, যাঁরা নতুন একটা রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছেন, তরুণেরা যাঁরা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে তাঁরা সময় নিতে চায় নির্বাচনের জন্য। রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে যে সংস্কার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নির্বাচনপ্রক্রিয়াটা এগিয়ে আনা দরকার। কিন্তু তাঁদের কথাবার্তার মধ্যে সাম্প্রতিককালে পাবলিক ডিবেটের মধ্যে একধরনের তিক্ততাও তৈরি হয়েছে। আপনার নজরে এসেছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: খুব ভালো করে নজর এসেছে।
নূরুল কবীর: সেটা একটা দুশ্চিন্তার ব্যাপার নয় কি?
মুহাম্মদ ইউনূস: মোটেই না। ওই যে বললাম বাইরে এক রকম, ভেতরে আরেক রকম।
নূরুল কবীর: আচ্ছা, সে কারণে? তাঁরা শেষ পর্যন্ত একমত হয়ে যাবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: একমত হয়ে যাবে।
নূরুল কবীর: তরুণেরা মনে করেন, যাঁদের সম্পর্কে যেটা বলা আছে বা আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয় যে তাঁরা দলটা করবেন, দলের পরে কনস্টিটিউয়েন্সিগুলো বিল্ডআপ করবে, লোকগুলো তৈরি করবে, এই কারণে তার সময় দরকার। আর ঠিক সংস্কারটা মাথায় আছে। নিশ্চয়ই তাঁরা সংস্কার চান। এই মুহূর্তে ক্ষমতার রাজনীতিতে তাঁরা প্রায়োরিটি দিচ্ছেন, তাঁদের নিজস্ব সংগঠন তৈরি করে নির্বাচন করা। এ কারণেই অন্যরা মনে করে যে, শুধু অন্য একটা গ্রুপকে সময় দেওয়ার জন্য নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তা আপনি সেটার মধ্যে কোনো সমস্যা দেখছেন না।
মুহাম্মদ ইউনূস: সে জন্য ঘোষণা দিয়ে দিলাম। কতগুলো তারিখ দিয়ে দিলাম, যাতে এই সন্দেহ না থাকে। কারণ, যত কিছু টানতে চান না কেন, আমি তো ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি। হয় এখানে হবে, না হয় ওইখানে। দুটো তারিখ দিয়ে দিয়েছি।
নূরুল কবীর: কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তারপরও বলছে যে আরও সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে।
মুহাম্মদ ইউনূস: এর ভেতরে তারিখ চাচ্ছে; বাড়াতে চাচ্ছে না। এর ভেতরে তারিখ চাচ্ছে, কোন তারিখে করবেন। আমি বললাম যে, ওই প্রসেসটা অগ্রসর হতে আমরা দেখব। এটা তো আপনাকে বাদ দিয়ে দিলাম, এর বাইরে আমরা যাচ্ছি না, এইটা হলে এই পর্যন্ত, ওইটা হলে এই পর্যন্ত, এইভাবে আছে। কাজেই ওটা যে উনারা বুঝতেছে না তা (নয়), বোঝেন। তবু কথাটা বারে বারে বলছে যে, ইন কেইস আমরা এটা অতিক্রম করতে চাই।
নূরুল কবীর: তাহলে আপনাদেরকে চাপের মুখে রাখতে চান।
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা আমাদের জন্য ভালো।
নূরুল কবীর: যাদেরকে চাপের মুখে রাখতে চায়, তারা আবার এটা ঠিকই বোঝে...
মুহাম্মদ ইউনূস: বুঝব তো বটেই।
নূরুল কবীর: দে আর প্লেয়িং টু দ্য গ্যালারিজ...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরাও চাই যে চাপের মধ্যে থাকি। কারণ, আমাদের ভেতরেও তো নানা মত থাকতে পারে।
নূরুল কবীর: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
মুহাম্মদ ইউনূস: সে জন্যই একটা বাঁধ দিয়ে দেওয়া হলো। এই পর্যন্তই, এর ভেতর থেকে আমাদের যা কিছু করতে হবে। এমন না যে কেউ বলে—না, পাঁচ বছর লাগবে। এটা সংস্কার করতে ভালো লাগছে না— এমন যেন বলতে না পারে। যে যা কিছু করতে হয় এর মধ্যে হতে হবে। এই সংস্কারের জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, এই দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপেই করতে হবে, আরও ছয় মাস বাড়াতে হবে, বললাম যে না এর ভেতরেই সবকিছু করতে হবে। কাজেই এই যে একটা বাঁধ দেওয়াটা, এটা খুব দরকারি জিনিস আমাদের জন্য। এর মধ্যে আমরা যেন সবকিছু সম্পন্ন করতে পারি।
নূরুল কবীর: আপনার মন্ত্রিপরিষদের তরুণ সদস্যদের কেউ কেউ এসব ব্যাপারে পাবলিক স্টেটমেন্ট করার পর অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন এবং সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একটা অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে—এ রকম কিছু স্টেটমেন্ট এসেছে। আপনি কি পরিষদ সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: ক্রমাগত আলাপ হয় এবং সেটার জন্য আমাদের একটা প্রক্রিয়াও আছে, যাতে করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা আলাপ করি।
নূরুল কবীর: পরিষদ সদস্যদের পাবলিক স্টেটমেন্টের জন্য যে ভুল-বোঝাবুঝি...
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়। সাংবাদিকদের সামনে গিয়ে কী বলতে কী বলে ফেলে, আমাদের তো অভ্যাস নাই। কাজেই একটু গোলমাল হয়ে যায়। পরে আবার বলে যে না আমি ওইভাবে বলি নাই, আমার বলা এভাবে ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে ঐকমত্যের কোনো অভাব নেই। আমরা যেগুলো বলছি, সেগুলো সম্বন্ধে আমরা একমতেই আছি। এটার মধ্যে কোনো অসুবিধা নেই।
নূরুল কবীর: আপনার সর্বশেষ বক্তৃতায় দুটো পোলাইট অ্যাডমিশন ছিল, আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে ও দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে। সরকার যে পরিমাণ আশা করেছে, সেই পরিমাণ সাফল্য আসে নাই, সেটাও বেশ কয়েক দিন হয়ে গেল। এগুলোর জন্য বিশেষভাবে আপনারা নতুন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন বা চিন্তা করছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় তো চেষ্টা করি। এটা তো আজকের সমস্যা না। এটা বরাবরেরই সমস্যা।
নূরুল কবীর: কোনো স্পেসিফিক স্টেপস, দ্রব্যমূল্যের জন্য...
মুহাম্মদ ইউনূস: একটা হলো আইনশৃঙ্খলা, আরেকটা হলো বাজারমূল্য (দ্রব্যমূল্য)। বাজারমূল্যের জন্য যত রকমের বুদ্ধি আছে, সবকিছু আমরা করেছি, আমাদের বুদ্ধিতে যত দূর কুলিয়েছে।
নূরুল কবীর: যেমন কী কী...
মুহাম্মদ ইউনূস: যেমন প্রতিদিনের খবর। কোন বাজারে কত টাকা উঠল, কত টাকা কমল, বাজারভিত্তিক। এমন না যে সারা বাংলাদেশের...অমুক বাজারে কত, অমুক বাজারে...তার মধ্যে রকমফের হয়। কেন রকমফের হচ্ছে। একসঙ্গে কেন এক বাজারে পড়ছে, আরেক বাজারে উঠতেছে, সেটা দেখা।
নূরুল কবীর: সেটা তো অ্যানালাইসিস হিসেবে ভালো। কিন্তু অ্যানালাইসিসের যে রেজাল্ট, সেইটার জন্য আপনারা অ্যাকশন কী নিয়েছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: অ্যাকশনের জন্য হলো যে, যেগুলো মাথায় বুদ্ধি আছে, সেগুলো প্রয়োগ করা। যেমন ট্রাক দিয়ে দেওয়া যে ট্রাকে মাল আসুক। বিআরটিসির কাছে ট্রাক আছে। ট্রাক নিয়ে আসি। ট্রাক দিয়ে মাল আসতে থাকুক। কোথায় কোথায় বাজারে এগুলো উঠছে। সেখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। এই যে চাঁদাবাজির বিষয় আছে। চাঁদাবাজিটা কমানো যায় কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। যা আপনারা দেখতেছেন, একই জিনিস আমাদের কাছে।
নূরুল কবীর: উত্তর বাংলায় যে ফুলকপির দাম দুই টাকা, ঢাকার বাজারে ৪০ টাকা। বরাবরই পুলিশ থেকে শুরু করে মিডিয়া সব সময় বলেছে যে, পথে পথে যে চাঁদাবাজি হয়, তাতে খরচটা বেড়ে যায়। এটা আপনার সরকারও জানে। কিন্তু নতুন করে একদল চলে যাওয়ার পর আরেক দল চাঁদাবাজদের দেখতে পাচ্ছি। তাদের কেউ গ্রেপ্তার হয় নাই এই অপরাধে। তার মানে কী?
মুহাম্মদ ইউনূস: গ্রেপ্তার হইছে কি না আমি জানি না। কিন্তু এটার সমাধান হয়নি।
নূরুল কবীর: কিন্তু গ্রেপ্তার হচ্ছে না। ডিটার করার [থামানোর] জন্য সরকারের পদক্ষেপ থাকলে এটা তো চলবার কোনো কারণ নাই। এগুলো সাধারণত রাজনৈতিক দলের যারা সংগঠিত শক্তি, তারাই করে। আপনারা কি রাজনৈতিক দলগুলোকে অসন্তুষ্ট করতে চান না?
মুহাম্মদ ইউনূস: আইনের ক্ষেত্রে...দল অসন্তুষ্ট হলে, সারা দেশ অসন্তুষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নূরুল কবীর: আমরা এই বিষয়ে এই ধরনের অপরাধের জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাউকে গ্রেপ্তার হতে দেখি নাই। এটা আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা হয়তো ধরতে পারছি না তাদেরকে এখনো জুতমতো।
নূরুল কবীর: এটা কি বিশ্বাসযোগ্য হবে, প্রকাশ্য রাস্তার মধ্যে বাজারের মধ্যে বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি। সবাই দেখতে পাচ্ছে স্যার। সরকার দেখতে পাচ্ছে না কেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সরকারের চোখ অত পরিষ্কার না আরকি।
নূরুল কবীর: পত্রপত্রিকার রিপোর্টগুলো আরও বাড়লে কি আরেকটু পরিষ্কার হবে বলে মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: যত বলা যায়, তত ভালো হবে, একটু সতর্ক হবে সবাই।
নূরুল কবীর: আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমার কোনো প্রশ্ন আছে, আমি বড় স্যারের সঙ্গে কথা বলব।...উনি বলছেন, যে সিন্ডিকেটগুলো আছে সরকারের জানার কথা। তারা কোথায় স্টক করে, সেগুলো রেইড করলেই পারে। নাগরিক হিসেবে বা আমার স্ত্রীর এই প্রশ্নের আপনার কী উত্তর?
মুহাম্মদ ইউনূস: উত্তর হলো, যে সিন্ডিকেটে এই মাল আনা-নেওয়া করে, আমরা চেষ্টা করছি যে বাইরে যারা আছে, সিন্ডিকেটের বাইরে, তাদেরকে কী কী সুবিধা দিলে তারা এই ব্যবসায় আসত। ব্যবসা যে আমরা দুজনে মিলে ঠিক করলাম যে আমরা মাল আনব, আমরা বিক্রি করব। এটাকে কোন আইনে আপনি...
নূরুল কবীর: তারা যখন আর্টিফিশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করে তখন...
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটা যদি মাল গুদামে রেখে দেয়, বাজারে বিক্রি না করে, তখন গিয়ে ধরতে পারেন।
নূরুল কবীর: আপনার সরকার কি এগুলো খেয়াল করেছে, গুদামে...লক্ষ করেছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: ওই যে বললাম, সবকিছু খেয়াল করে। ওই যে তথ্য সংগ্রহ করা দামের কথা বললাম, স্টকের কথা বললাম। কে কোথায় এলসি খুলতেছে, সেই রিপোর্ট আমাদের কাছে আসে। কোন মাল খালাস হচ্ছে, কোন দিন কোথায় স্টক হচ্ছে, সেগুলো সংগ্রহ করা এবং তদারক করা যে মাল কি ওই গুদামে রয়ে গেছে, না ছেড়ে দিচ্ছে।
নূরুল কবীর: আপনারা কোনো অসংগতি দেখতে পাচ্ছেন না?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা এগুলো করছি বলেই তারা তাড়াতাড়ি এগুলো ছাড়ার চেষ্টা করে, এই গুদাম থেকে আরেক গুদামে নিয়ে যায় হয়তো। বাজারে দিচ্ছে না, চালাকির কাজ।
নূরুল কবীর: এই চালাকিটার জন্য তো কোটি কোটি গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: বহু বহু গরিব মানুষ, সবাই।
নূরুল কবীর: মানেটা হচ্ছে যে এই ব্যবধান থাকবার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
মুহাম্মদ ইউনূস: ঠিক।
নূরুল কবীর: এবং সেইটা প্রধানত সরকারের দেখবার বিষয়।
মুহাম্মদ ইউনূস: ডেফিনেটলি।
নূরুল কবীর: মানুষের অভিযোগ হচ্ছে, সরকার এটা ইন ফ্যাক্ট দেখছে না। আপনি সেটা ফিল করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি ফিল করি, ডেফিনিটলি।
নূরুল কবীর: এই সরকারের বিরুদ্ধে...রাষ্ট্র তো কিছু প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজনে কঠোর হয়। আপনাদের বিরুদ্ধে সুশীলতার অভিযোগ আছে, কঠোর হচ্ছেন না।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা আমাদের সাধ্যমতো কঠোর হয়ে...হয়তো যে কঠোর মানুষের মনে আছে, অত দূর হতে পারছি না। কিন্তু আমরা যে এত দিন যত কঠোর হইনি, অত কঠোর এখন হতে চাচ্ছি।
নূরুল কবীর: আমরা একটু অন্যদিকে যাই। এটা আমরা সবাই জানি, এখানে যে বাংলাদেশে এত বড় একটা রাজনৈতিক রক্তাক্ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কিছু আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সেটাকে আমাদের পাশের দেশ ভারত একধরনের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং নানান কথা বলছে। এটা আমরা ঠিক জাতীয়তাবাদী চৈতন্য থেকে নয়, দেশকে ভালোবাসি বলে নয়, তথ্য বিকৃতি হিসেবে নানান জায়গা থেকে এগুলো মিডিয়া, এটা সাধ্যমতো বলছে। কিন্তু সেটার একটা হচ্ছে মিডিয়ার লড়াই। আরেকটা হচ্ছে যে, বস্তুত ফাংশনাল ডিপ্লোমেসিতে আপনার এই কদিনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে একটা সুষ্ঠু ওয়ার্কিং রিলেশন তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে কি আমরা এগোতে পেরেছি?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা বরাবর চেষ্টা করছি ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পর্ক [গড়ে] তোলা এবং তাদের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরার। প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে আলাপ হলো, উনিই ফোন করেছিলেন, তখন উনি অভিযোগ করলেন যে এখানে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে ইত্যাদি। আমি বললাম যে, এটা অতিরঞ্জিত কতগুলো সংবাদ আপনার কাছে যাচ্ছে। কাজেই এটা আপনি বিশ্বাস করেন না। যদি আপনি প্রকৃত তথ্য জানতে চান, আপনি আপনাদের সাংবাদিকদের পাঠান। এখানে আসুক। তাঁরা দেখুক। দেখে রিপোর্ট করুক। কাজেই আমাদের তথ্যগুলো যদি আস্থায় আনতে না চান, তাহলে এটি প্রকৃত পরিস্থিতি। পরে অনেকে এসেছিলেন। ভারতীয় সাংবাদিক এখানে এসেছেন। তাঁরা রিপোর্ট করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে করে অতিরঞ্জন থেকে বাঁচা যায়। কিন্তু কিছু সংবাদ আছে, এগুলো কোনো অতিরঞ্জনের বিষয় না। এটা একেবারে গাঁজাখোরি কতগুলো কথা নিয়ে যাচ্ছে। সেটা তারে সামনে দেখায়ে দিলেও হবে না। তো সে রকম তারা চলছে, নানা রকম আজগুবি সংবাদ দিচ্ছে। পরে যখন তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয়...এবার তাঁদের পররাষ্ট্রসচিব যখন আসলেন, তখন বললাম যে এ রকম কেন হচ্ছে? তো বলল যে, ওটা আমাদের রাষ্ট্রের সরকারের বিষয় নয়। সরকার এটার মধ্যে জড়িত না। এগুলো মিডিয়ার বিষয়। এগুলো আমাদের আওতার বাইরে। কাজেই সরকার এটা থেকে দূরে চলে গেল। সেটা আমাদের জন্য একটা বড় অ্যাচিভমেন্ট। এত দিন সরকার এটার মধ্যে জড়িত ছিল বলে অনেকটা প্রকাশ করছিল। এখন সর্বপ্রথম (বলা হলো) এটা আমাদের না। আমরাও চেষ্টা করছি, আমাদের তথ্যগুলো তাদের কাছে দেওয়ার জন্য। এখন মনে হয় ইন্টারন্যাশনাল কাভারেজ ইত্যাদির কারণে অত বেশি জুত করতে পারছে না। দিচ্ছে, এখনো খবর দিচ্ছে উল্টাপাল্টা খবর দিচ্ছে। কিন্তু জুত করতে পারছে না। যেহেতু আন্তর্জাতিক সাংবাদিকেরা রিপোর্ট করছেন। আগে বলছিল যে এটা ইসলামিস্ট একটা অভ্যুত্থান হয়েছে, এটা তালেবানদের হাতে চলে গেছে ইত্যাদি। এখন পত্রপত্রিকায় ইন্টারন্যাশনাল কাগজপত্রে যখন আসছে, ওখানেও তারা সুবিধা করতে পারছে না ওরকম বলে। কিছু কাগজে দেখাল, এখানে ক্যাবিনেটের মধ্যে কারা কারা আছে? তাঁদের যে পরিচিতি দিল, কেউ বিশ্বাস করবে না যে এটা ইসলামিস্টদের গোষ্ঠীর। কাজেই ওগুলো ফেলেও দিতে পারছে না। কাজেই যতই তারা করুক না কেন, এই ধরনের যে প্রোপাগান্ডা যেগুলো ছিল, প্রচারণা যেটা ছিল, সেটা আগের থেকে অনেক কমেছে। তাতে সব রকমের প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে—এটা বলব না। এ[ক]টা প্রচারণা আছেই।
নূরুল কবীর: ভারত রাষ্ট্রের দিক থেকে কোনো হোস্টাইলিটি টের পান আপনি?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। আমাদের তো রাষ্ট্রীয় দিক থেকে কোনো হোস্টাইলিটি নাই অন্তত। এই যে বললাম তারা পরিষ্কারভাবে বলল যে এটার সঙ্গে আমাদের [ভারত সরকারের] কিছু না। আমাদের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক। আমাদের [ভারত সরকারের] বক্তব্যের মধ্যে এগুলা নাই। আমরা বলেছি যে আমাদের সম্পর্ক খুব গভীর সম্পর্ক হতে হবে এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হতে হবে। এখন মেঘ জমেছে, মেঘটা কাটিয়ে উঠতে হবে। এটা বলছে, মেঘটা কাটানোর জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে, উভয় পক্ষে। সেটা আমরা চেষ্টা করি।
নূরুল কবীর: মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হওয়ার জন্য আপনার সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনবার একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অফিশিয়ালি চিঠি দিয়েছেন আপনারা। আপনার ধারণা, একটা রিজনেবল টাইম বলে আর কত দিনের মধ্যে উত্তর আশা করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমার কোনো ধারণা নেই, এগুলোর কত দিন সময় লাগবে।
নূরুল কবীর: আপনার ফরেন মিনিস্ট্রি নিশ্চয়ই আপনাকে...
মুহাম্মদ ইউনূস: না, এখনো জিজ্ঞেস করিনি, কত দিন লাগবে। আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এখন দেখব, তারা কী জবাব দেয়? তারা জবাব দিচ্ছে কি না, এটা ফলোআপ করব। ডেফিনেটলি একটা গতি নেবে এটা।
নূরুল কবীর: অনুমান, কত দিন পরে আপনারা আবার চিঠি দেবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা একটা সময়ের ব্যাপার। মাসখানেক বলেন। আমরা ফলোআপ করব। দেখেন কী কী হয়।
নূরুল কবীর: আমরা আরেকটু পশ্চিমে যাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনেক ভালো সম্পর্ক। এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যাবিনেটে ইন্ডিয়ান বর্ন সাতজন মন্ত্রী আছেন বলে শোনা যায়। আপনার সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্ক ভালো বলে মানুষ মনে করে। তাঁদের এই সম্পর্ক কি আমাদের দেশে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে কোনো ক্ষতির কারণ হবে বলে আপনি আশঙ্কা করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: হতে পারে; কারণ, এত ঘনিষ্ঠতা থাকলে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যদি ওইখানে ক্ষমতায় থাকে, তার একটা প্রভাব তো হতেই পারে। এবং ইতিমধ্যে তার প্রভাবের কিছু নমুনাও আমরা দেখেছি। কাজেই আমরা দেখছি, এটা কোন দিকে যায়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেই যে সে ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এমনও কোনো কথা নাই। সে হয়তো আমাদের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পারে। আমরা দেখছি, সেগুলো কীভাবে আমরা বার করতে পারি যে কারা কারা আমাদের দিকে সহানুভূতিশীল হবে। কীভাবে আমরা তাদের সহানুভূতিটা পেতে পারি। নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে গড়ে তোলা যায়। পুরোনো সরকারের সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল; ভালো সম্পর্ক ছিল। নতুন সরকারের সঙ্গে আমরা একই রকম ভালো সম্পর্ক করার জন্য চেষ্টা করব।
নূরুল কবীর: ইতিমধ্যেই কি কাজকর্ম এই ব্যাপারে শুরু হয়েছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা নিয়ম। আমাদের করতে হয়। যখন নতুন সরকার আসে, তার সঙ্গে একটা যোগাযোগ স্থাপন করা যেগুলো ডিপ্লোমেটিক পর্যায়ে হয়। গিয়ে আলাপ-সালাপ করে। ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলের বাইরে হয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের খাতিরে। ওইখানে যাঁরা হোয়াইট হাউসে আছেন, তাঁদের সঙ্গে যাঁদের যোগাযোগ আছে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। কীভাবে করতে হবে? নানাভাবে হয়। বিভিন্ন চ্যানেলে যোগাযোগগুলো করতে হয়।
নূরুল কবীর: আপনি ইতিমধ্যে সার্কের একটা ইফেকটিভ রিভাইভালের কথা প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশের তরফ থেকে। তাতে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: অন্য দেশের যাঁরা আছেন, তাঁরাও চান সার্কের অন্যান্য দেশের মধ্যে...কিন্তু ভারত এটাতে খুব সাড়া দিচ্ছে না। তারা ব্যাখ্যা করে যে আমাদের [ভারত] সমস্যা হলো পাকিস্তানকে নিয়ে। তো আমি যেটা ব্যাখ্যা করি যে একটা দেশের সঙ্গে সমস্যা হলেই পুরো জিনিসটা বিকল হয়ে যাবে, এটা তো ঠিক হবে না। আমরা চেষ্টা করি, ওইটাও সমাধান হোক। অথবা ওই সমস্যাকে পৃথকভাবে দেখে বাকি সব সম্পর্ককে আমরা গড়ে তুলি। এখনো এটার কোনো...
নূরুল কবীর: রেসপন্স?
মুহাম্মদ ইউনূস: রেসপন্স...
নূরুল কবীর: দেখা যায় না?
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যেটা আমার দেশের মানুষ জানতে চায়। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর টাকা আওয়ামী লীগ আমলে পাচার হয়েছে। আপনি তার জন্য একটা কমিশনের মতো করেছেন। এই টাকাপয়সা ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতির ইঙ্গিত কি পাচ্ছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: একসাথে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়ে গেলে আমরা নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করতে পারব। এ রকম একটা আইন আছে। আইনের মাধ্যমে এটা করব। সব টাকা হয়তো ফেরত আসবে না। কিছু টাকা ফেরত আসবে যদি আমরা সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো পাই। সে প্রচেষ্টাগুলো হচ্ছে।
নূরুল কবীর: সাক্ষ্যপ্রমাণের ব্যাপারে কাজকর্ম চলছে...
মুহাম্মদ ইউনূস: একদম। খুব ডেডিকেটেড একটা আলাদা ইউনিট আছে, তাদের কাজই হলো এগুলো উদ্ধার করা। এটা প্রথম থেকে শুরু হয়েছে। যেহেতু আমরা জানি, যে রকম টাকা গেছে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে গেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে ধরাটা একটু সহজ হবে হয়তো। যেগুলো স্যুটকেস ভরে নিয়ে গেছে, মুশকিল আছে সেগুলো ধরা। কিন্তু এগুলো তো চ্যানেলের ব্যাপার। যারা এক্সপার্টস আছে, যারা এই কাজগুলো করে, তারাও বলতেছে, হ্যাঁ, এটা সম্ভব। কিন্তু সম্ভব বলে কত দিন আমরা বসে থাকব, এটাই হলো বিষয় আরকি। এটার আইনগত বিষয় আছে। কী সাক্ষ্যপ্রমাণ? তারা কী চায়? কীভাবে এটা আইডেনটিফাই হবে? কার কাছে গেল? আইন ভঙ্গ করে গেল? কিছু কিছু আশা মাঝে মাঝে পাই যে এটা হবে। এখনো চূড়ান্ত কিছু পাইনি।
নূরুল কবীর: মানে, আমাদের আশা করবার কারণ আছে...
মুহাম্মদ ইউনূস: আশা করার কারণ আছে। অবশ্যই কারণ আছে।
নূরুল কবীর: কী রকম সময় লাগবে বলে আপনার ধারণা?
মুহাম্মদ ইউনূস: তাদের কথা তো কিছু বুঝতে পারি না। এটার যে একটা স্ট্যান্ডলাইন আছে, এর মধ্যে গিয়ে এটা শেষ হবে, এটা এখনো বুঝি নাই যে এটা কত দিন লাগতে পারে। আমি একটা আন্দাজে বলে দিতে পারি আপনাকে। কিন্তু আমার মনে হয় না, সেটা বলা ঠিক হবে।
নূরুল কবীর: সামনের নির্বাচনের পরে এই যে এ রকম দায়িত্ব শেষ করবার পরে পরবর্তীকালে কী করার প্ল্যান আপনার?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি তো বরাবরই বলছি যে আমি যে [এখানে, এটা] সাময়িক বিষয় ছিল। আমি এই দায়িত্ব পালন করে আমার পুরোনো আনন্দের জগতে ফিরে যাব।
নূরুল কবীর: এই অভিজ্ঞতার ওপর কোনো বই লেখার পরিকল্পনা আছে আপনার?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। এ রকম চিন্তা করিনি। আপনি বইয়ের কথা মনে করিয়ে দিলেন! আমি দিন কাটানো নিয়ে ব্যস্ত আছি।
নূরুল কবীর: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেবার জন্য।
মুহাম্মদ ইউনূস: অসংখ্য ধন্যবাদ।

অভূতপূর্ব রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। তিন দিনের মাথায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও সরকার এখনো ধাতস্থ হয়নি। বিভিন্ন খাতে সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্য, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এই সরকার। প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, সংস্কার ও বছরের শেষ নাগাদ কিংবা আগামী বছরের প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়ার কোনো ঘাটতি নেই। গত ২৯ ডিসেম্বর (২০২৪) ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বাংলায় সাক্ষাৎকারটি নেন পত্রিকাটির সম্পাদক নূরুল কবীর। তাঁর সম্মতিক্রমে সাক্ষাৎকারটি আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

নূরুল কবীর: আপনার চার মাস হলো প্রায়। এই চার মাস আর আগের চার মাসের মধ্যে কোন পর্বটা আপনার ভালো লাগে বা কোনটা খারাপ?
মুহাম্মদ ইউনূস: খারাপ কোনোটাই না। খারাপটা বলব না, কিন্তু ভিন্ন। আগেরটা ছিল আমার নিজস্ব জগৎ। সারা জীবন ধরে যা যা করে এসেছি, সেটার মধ্যেই ছিলাম। নিজস্ব আয়োজন, নিজস্ব চিন্তা। তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। সেটা আমার মতো করে ট্যাকল করেছি। আমি আমার মতো করে চলেছি। সেটা একেবারে আমার নিজস্ব জগৎ। এটা একবারে ভিন্ন জগৎ। এটা আমার নিজস্ব জগৎ না। এই জগতে আমি কোনো দিন ছিলাম না; থাকার কোনো আগ্রহও ছিল না। এটার ডান-বাম আমার জানা নেই। অনেকটা হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে চলার মতো অবস্থা। কিন্তু এটারও একটা চ্যালেঞ্জ আছে।
আমাকে তারা আহ্বান জানিয়েছে। প্রথমে একটু সংকোচ করছিলাম যে এতে যাওয়া ঠিক হবে না, যেহেতু আমি এ জগতের মানুষ নই। কিন্তু তারা আমাকে বোঝাতে পেরেছে যে, এই পরিস্থিতিতে আপনার আসা দরকার। শেষ পর্যন্ত আমি রাজি হয়েছি যে, এইভাবে তোমরা প্রাণ দিয়েছ, তোমরা রক্ত দিয়েছ। আমার জন্য না হয় একটু চ্যালেঞ্জিং হলোই। কাজেই আমি রাজি হলাম। এটা ভিন্ন জগৎ। এই ভিন্ন জগতের মধ্যে এখন চলছি। দেখা যাক কত দূর যেতে পারি।
নূরুল কবীর: কিন্তু আগস্টের ৮ তারিখে এই জগৎটা যদি শুরু না হতো আপনার জন্য, পেছনের (আগের) যে চার মাস, আপনার মনে হয় তত দিনে জেলে থাকার কথা ছিল।
মুহাম্মদ ইউনূস: হয়তো, আমি তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কোন কোন দেশে যাব, যাতে বাংলাদেশে ফিরে যেতে না হয়। আমি এক উপলক্ষে আরেক দেশে ছিলাম। সেখানে বসে ভাবছি, এখন ফিরে যাওয়া ঠিক হবে কি না। কারণ, যাওয়ার সময় উত্তেজনা দেখে গেছি, কারফিউ দেখে গেছি। কারফিউর ভেতর দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে; উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।
নূরুল কবীর: তার মানে, আপনি কারফিউ ভঙ্গ করেছিলেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি কারফিউ ভঙ্গ করে গেলাম, তা না হলে তো যেতে পারতাম না। ভাগ্যিস, কেউ ধরেনি পথে। অত কড়াকড়ি কারফিউ ছিল না। ওই অবস্থা তো দেখে গেছি এবং এটা ক্রমাগতভাবে দেখেছি পত্রপত্রিকায়, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভয়ংকর রকম কাজ হচ্ছে। কাজেই ক্রমাগতভাবে ফিডব্যাকটা পাচ্ছিলাম। তার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে গেল, একবারে অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। কিন্তু এর মধ্যে বুঝি নাই যে এর মধ্যে আমাকে জড়িত হতে হবে। আমাদের এর মধ্যে একটা ভূমিকা পালন করতে হবে। কাজেই চার মাস এভাবেই গেছে আমার।

নূরুল কবীর: আপনি ৮ আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পরে আপনার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের যে আইনগত অভিযোগ ছিল, সেগুলো কোর্ট থেকে একের পর এক উঠে যায়। আপনার পজিশনের ভারে কিংবা প্রভাবে এ ঘটনা ঘটেছে—লোকেদের এ রকম ভাবনার সুযোগ আছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি বলব, এটা আমি সরকারে থাকি বা দেশে থাকি, না থাকি—এগুলো এমনি চলে যেত। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আমাদের যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন আদালতে, আমাদের যে উকিলরা আছেন, তাঁরা এটা বোঝাতে পারতেন যে এটার কোনো ভিত্তি নেই। এটার কোনো তথ্য নাই, কিছুই নাই। এগুলো খুবই ঠুনকো জিনিস ছিল। কাজেই এটা আমার জানা-অজানার কোনো বিষয় নয়। যেহেতু এটা বিচারের বিষয়, বিচারেই চলে যেত। আমি থাকলেও যেত, না থাকলেও যেত। ঘটনার চক্রে আমি ছিলাম।
নূরুল কবীর: কিন্তু লোকেরা যে বিচারব্যবস্থার ওপর তৎকালীন এক্সিকিউটিভের, রাষ্ট্রের প্রভাবের কথা বলছিল বা বলাবলি আছে এখনো, তাহলে কি আপনি মনে করেন, উনারা ক্ষমতায় থাকলেও কোর্ট ওইভাবে ব্যবহার করত, মানে ন্যাচারাল পদ্ধতিতে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আগের যারা ছিল তারা তো করে নাই। করে নাই বলেই তো আমি আদালতের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। যারা এসেছে, তারা বিচার চাচ্ছে, বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে।
নূরুল কবীর: সেভাবেই যদি চলত, তাহলে তো আপনি জেলে যাওয়ার একটা...
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই। আমি তো জেলে যাওয়ার পথেই ছিলাম। [আদালতে] আসা-যাওয়ার পথে প্রতিবারই মনে হচ্ছে, এবারই বোধ হয় জেলে যেতে হবে। মাঝে মাঝে প্রস্তুতি নিয়ে গেছি যে হয়তো ফেরা না-ও হতে পারে এবার। আমার সহযোগী যাঁরা আছেন, তাঁরা তাঁদের আত্মীয়স্বজনকে বলে গেছেন তাঁদের জন্য। আমি বলেছি, আমার কিছু করার নাই, যেমন আছে হবে। আমি আমার ফ্যামিলিকেও এ রকম প্রস্তুত করে যাইনি। বলি যে, রেখে দিলে রেখে দেবে, নিয়ে গেলে নিয়ে যাবে। আমি খুব সহজভাবে দেখছিলাম যে, এটা নিয়তির খেলা। এটা যেভাবে হবার হবে। এটাতে প্রস্তুতি নিয়ে আমার কোনো কাজ নাই যে জেলে থাকলে এই করতে হবে, করব। এটা যখন কপালে আছে, এটা আমাকে করে যেতে হবে।
নূরুল কবীর: আপনি এইমাত্র বললেন যে, এটা একটা ভিন্ন জগৎ এবং এইভাবে জড়িয়ে পড়তে হবে; এ রকম একটা রাজনৈতিক দায়িত্ব রাষ্ট্র পরিচালনায়, সেটা আপনি চিন্তা করেননি।
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: আপনি ২০০৭ সালে যখন একটা পার্টি করতে গিয়েছিলেন, সেই সময় তো এটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবেই চিন্তা করেছিলেন। সেখানে যদি আপনি কনটিনিউ করতেন, আপনাকে তো রাজনৈতিক দায়িত্বই গ্রহণ করতে হতো।
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটার কারণ ছিল যে এখানে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না তখন, সবাই আমার বন্ধুবান্ধব সহযোগী, পরিচিত। সবাই বলছে, আপনি কিছু একটা করেন; পেছনে লেগে রইল...আপনি ছাড়া পারবে না কেউ, এই যা যা বলে আরকি আশপাশের লোকজন। এতে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে শেষে বললাম যে ঠিক আছে আমি করব এইটা। পথে আসতে-যেতে সাংবাদিকেরা ধরল। তখন আমি বলেছি, হ্যাঁ, আমি করব। এই দিয়ে শুরু হলো। তখন বেশির ভাগ সময় আমি আসা-যাওয়া করছিলাম বিভিন্ন জায়গায়, উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিলাম, চিটাগাং যাচ্ছিলাম। প্রতিবার এয়ারপোর্টে এই কথাবার্তা হচ্ছিল। আর কোথাও না। তখন একসময় ধরল যে তাহলে কী নাম দেবেন? আমি (বললাম) যে নাম ঠিক করি নাই। নাম ঠিক করলে আপনাদের জানাব। তখন বলল, নাম ঠিক না করে কীভাবে যান? তখন অবশ্য একটা নাম দিলাম, নাগরিক শক্তি। তারপর বুঝলাম যে এটা বেশ এগিয়ে যাচ্ছে জিনিসটা। তারপর সবাইরে বললাম যে এটার [ওপর] মতামত নাও। মতামত নেওয়ার ব্যাপারটি হলো, কোনো রকম এটা থেকে দূরে সরা যায় কি না, তার চেষ্টা। নাম হলো, মতামত হলো। তারপর আমি দেখলাম যে ঢুকে যাচ্ছি এর ভেতরে। যখন দশ সপ্তাহ হলো প্রায়, তখন বললাম যে না ভাই, আমি কোনো রাজনৈতিক দল করছি না, কিচ্ছু না। কাজেই আমার মাথার ভেতরে একদিন এই রাজনীতির মধ্য দিয়ে গিয়ে ক্ষমতায় যাব, এ রকম কোনো পরিকল্পনা ছিল না, এটা দীর্ঘমেয়াদি জিনিস।
নূরুল কবীর: কিন্তু রাজনৈতিক দল তো শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত...
মুহাম্মদ ইউনূস: ছিল। কিন্তু তখন আমি তো আসলে রাজনৈতিক দল করতে চাচ্ছিলাম না। ঠেকা দেবার জন্য এগুলো বলে যাচ্ছিলাম। শেষে মনে করলাম যে, এটা বেশ গভীরে চলে যাচ্ছে। তখন একদম পরিষ্কার বলে দিলাম। তখন সবাই হতবাক হয়ে গেছে। তখন আমার বন্ধুবান্ধব বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিলেন।
নূরুল কবীর: আপনি কি আলাপ করেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে?
মুহাম্মদ ইউনূস: কিচ্ছু করিনি। সে জন্য আরও হতবাক হলো। বলে যে আপনি কিছু বললেন না আমাদের! আমরা আপনার পেছনে ঘুরলাম এত দিন ধরে।
নূরুল কবীর: মনঃক্ষুণ্ন হবার কথা...
মুহাম্মদ ইউনূস: খুবই মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে তারা।
নূরুল কবীর: তারা এখন কি আনন্দে আছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: তারা কাছে আসে না। বলে আবার কোন দিকে নিয়ে যায় আমাদের।
নূরুল কবীর: ওই নাগরিক শক্তির সঙ্গে ছাত্রদের যে নাগরিক কমিটি, তার কোনো চিন্তা বা ভাবনার সম্পর্ক আছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: নাগরিক শব্দটা কমন আছে এটা দেখতেছি। আমার সঙ্গে তো আর কোনো আলোচনা হয় নাই, তারা কোথা থেকে শব্দ পেল না পেল।
নূরুল কবীর: এই শব্দটা যেকোনো লোক ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আপনার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করে নাই তারা?
মুহাম্মদ ইউনূস: পরামর্শ করে নাই।
নূরুল কবীর: আপনি প্রায়ই বলেন, কয়েকবারই বলেছেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে যে ছাত্ররা আপনাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে, তাদের ম্যান্ডেটের কারণে। ছাত্রসমাজ হিসেবে ৫ আগস্ট যে পরিমাণ তারা সমন্বিত ছিল, সংগঠিত এবং একাকার ছিল, এইটা যদি বিভক্ত হয়ে যায় তাদের উদ্দেশ্য সাধিত হয়ে যাওয়ার পর, এই অর্থে যে ইমিডিয়েট উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতন। তার পতনের পরে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বিভিন্ন রাজনীতি আছে। তারা যদি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে কিংবা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাত ঘটে, তখন আপনার ম্যান্ডেটটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা হলো অন্তর্বর্তী সরকার। আমি সেই সরকারের একটা অংশ। ওইটা হলো রাজনীতি। এই সরকারে আমি কত দিন আছি না আছি, সেটা একটা ব্যাপার। ওরা কী করছে, রাজনীতির কী ফল দাঁড়াবে, সেটা ভিন্ন জিনিস। এটা একজন নাগরিক হিসেবে ওরা চিন্তা করতে পারে যে কী হবে না হবে। কিন্তু সরকার হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি; যতটুকু আমার সাধ্যে কুলায়।

নূরুল কবীর: আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ওটা সংঘবদ্ধ ছাত্রসমাজের ম্যান্ডেট ছিল। সেই সংঘবদ্ধতাটা যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে...
মুহাম্মদ ইউনূস: দুর্বল হয়ে যাবে।
নূরুল কবীর: দুর্বল হয়ে যাবে?
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই দুর্বল হবে।
নূরুল কবীর: এ রকম সম্ভাবনা আপনি দেখেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় সম্ভাবনা তো থাকে। একটা দুর্বল হবে আরেকটা সবল হবে। এই টুকরা এই টুকরার সঙ্গে মিলবে। নানা রকম ঘটনা তো ঘটে।
নূরুল কবীর: অন্যান্য টুকরার কথা বলছেন। ধরুন, আমরা যাঁরা বাইরে থেকে দেখি, ওই অভ্যুত্থানে বিজয়ী ছাত্রনেতৃত্ব আপনাকে আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সেইটাকে সমর্থন করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা পাওয়ার কনটেন্ডার, তারা আপনাকে সহযোগিতা ও সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাহলে আপনি যখন প্রায়ই বলেন, ছাত্ররা আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছে, তখন আপনার কি মনে হয় যে অন্য দুইটা সেক্টর যারা সংগঠিত, নানানভাবে, তারা মনঃক্ষুণ্ন হতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: হতে পারে। কিন্তু বাস্তব তো তাই। আমাকে তো ডেকে এনেছে ছাত্ররা। কাজেই আমি সেভাবেই বলেছি, ছাত্ররা আমাকে নিয়োগ করেছে। এখন সবাই মিলে এটা সমর্থন করেছি আমরা। সেটা হলো বৃহত্তর একটা জিনিস। কিন্তু ইমিডিয়েট ছিল যে আমার সঙ্গে কথাটা হচ্ছে ছাত্রদের সঙ্গে। যাদের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নাই, জীবনে দেখিনি তাদেরকে, তাদের সঙ্গে আমার পরিচয়...সেভাবে আমি কথাটা জানিয়েছি। আমার বাস্তবটা জানিয়েছি। কাউকে মনঃক্ষুণ্ন করার জন্য, কাউকে আঘাত দেওয়ার জন্য এরা দেয় নাই, ওরা দিছে, ও রকম কিছু না।
নূরুল কবীর: না মানে, পাওয়ার ব্লক থাকে তো...
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই।
নূরুল কবীর: এই তিনটাই আপনার জন্য, দেশের মানুষের জন্য আপনার সরকারের অস্তিত্ব চলমান থাকার জন্য, জরুরি আমাদের মনে হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই, অবশ্যই।

নূরুল কবীর: আপনার এই যে প্রধান উপদেষ্টা পদের নাম, মানে নোমেনক্লেচার অব দি পজিশন, এইটা আপনি অ্যাগ্রি করলেন কেন? আপনি কাকে উপদেশ দেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: ওগুলো আমার মাথায় আসে নাই। নামটা কি উপদেষ্টা হলো না কী হলো। দায়িত্ব নিতে বলেছে, আমি দায়িত্ব নিয়েছি।
নূরুল কবীর: উপদেষ্টা হলো একটা পজিশন। উপদেষ্টা মানেই আপনি কাউকে উপদেশ দেন।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি এগুলোর ব্যাখ্যার মধ্যে যাই নাই। বলেছে, আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে এই সরকারের। আমি দায়িত্ব নিয়েছি। নামটা কী দিল না দিল, কোথা থেকে আসল...
নূরুল কবীর: একবারও মনে হয়েছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এগুলো বড় মনে হয়নি। কারণ, বলেছে যে এই ধরনের পরিস্থিতিতে এই ধরনের নামই হয়। কাজেই আমার চ্যালেঞ্জ করার কিছু নাই।
নূরুল কবীর: দুইটা ভিন্ন। একজন চিফ থাকে। চিফকে অন্যরা উপদেশ দেয়। তাহলে আপনি উপদেশদাতাদের মধ্যে প্রধান। কিন্তু কাকে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা চিন্তা করি নাই।
নূরুল কবীর: আপনি যে মন্ত্রিপরিষদ (উপদেষ্টা পরিষদ) তৈরি করলেন ছাত্রদের আহ্বানে, অন্যদের সমর্থনে, সেইখানে কি আপনার মন্ত্রিপরিষদ গঠনে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ছিল?
মুহাম্মদ ইউনূস: পরিপূর্ণ বলব না, এটা তো তাৎক্ষণিকভাবে হয়েছে। এটা এমন কিছু না যে চিন্তাভাবনা করে করা হয়েছে। কাজেই আমাকে যতটুকু বলা হয়েছে, আমি সেটা করেছি। অন্য কারা কী করল, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি।
নূরুল কবীর: পরামর্শগুলো কি এসব সেক্টর থেকে এসেছে আপনার কাছে বা কোনো রেকমেন্ডেশন সেটা আর্মি থেকে বা রাজনৈতিক দলের মধ্য থেকে?
মুহাম্মদ ইউনূস: না না না। ওই রকমভাবে কিছু আসে নাই। বলছে যে এরা এরা আছে। আপনি কারে কারে নেবেন। শপথ গ্রহণ করতে হবে আগামীকাল বা সেদিনেই, এ রকম অবস্থা। আমি তাৎক্ষণিকভাবে আমার পরিচিত যা নাম ছিল, সেগুলো দিয়েছি।
নূরুল কবীর: আপনার কাছে এই খবর নিশ্চয়ই আছে বা আপনার এজেন্সিগুলো এই খবর কি দেয় যে আপনার সরকারের যাঁরা সদস্য, তাঁদেরকে অন্তত দুটো ক্যাটাগরিতে জেনারেলি ভাগ করা যায়। এক পক্ষের ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে এনজিওস। সেখানে আপনার ব্যাপারে একটা সমালোচনা আছে যে চিটাগংয়ের লোক বেশি। কারণ, আপনার বাড়ি চিটাগং? আরেক পক্ষ হচ্ছে, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই থেকে অনেকে অনেক দূরে ছিলেন। এই তাঁদের কারণে এখন ঠিক স্টেটক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এই কথাগুলো কি আপনার কানে আসে?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় বলাবলি করে, সবাই বলছে। কাজেই এখানে না আসার কোনো কারণ নাই। এ জন্য বিব্রত হবারও কোনো কারণ নাই। সেভাবেই হয়েছে। নানা জায়গা থেকে আমরা এসেছি। আমারও তো কোনো অভিজ্ঞতা নাই। কাজেই ওদের দোষ দেব কী করে। আমাকে দেশ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার তো বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা নাই। আমি তো কোনো দিন এ ধরনের কাজে ছিলাম না। আমি যদি পারি, ওরাও পারবে, এটাই আমার ভরসা ছিল।
নূরুল কবীর: তাঁদের পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার কেমন...
মুহাম্মদ ইউনূস: নিজের পারফরম্যান্স নিয়েই আমার সন্দেহ। ওদের পারফরম্যান্স নিয়ে কী জিজ্ঞেস করব।
নূরুল কবীর: কিন্তু আপনারটা তো অন্যরা বলবে...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি বলব; আমি দেখছি তো।
নূরুল কবীর: আপনি কি আপনার পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। বলছি যে আমার তো সেই কোয়ালিটি নাই, করার জন্য যেটুকু দরকার ওটুকু নাই। যদিও সাধ্যমতো করি, যদি লেগে যায় তো ভালো। না হলে আমাদের কপাল খারাপ।

নূরুল কবীর: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে পরিমাণ সমঝোতা এবং যোগাযোগ থাকা দরকার বলে পত্রপত্রিকা বা অন্যান্য যাদেরকে আমরা বলতে শুনি, সেই পরিমাণ সমঝোতা এবং যোগাযোগ আপনার আছে বলে মনে হয়? আমাদের কাছে মনে হয়, কিছুটা দূরত্ব আছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমার কাছে মনে হয়, অবিশ্বাস্য রকম সমঝোতা-আত্মীয়তা-ঘনিষ্ঠতা আছে। এটা আমার কাছে অবাক লাগে। কাগজপত্রে দেখি তাঁরা একজনের বিরুদ্ধে একজন কটু কথা বলে। যখন সামনে আসে, সবাই কী আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেন! আমার কাছে অবাক লাগে এগুলো! মনে বড় সাহস লাগে। যখনই কথা বলি, ব্যক্তি হিসেবে যখন রাজনৈতিক দলের কারও সঙ্গে কথা বলি, অন্যরা কেউ নাই, একা সে। কিন্তু তার সঙ্গে যখন কথা বলি, কী রকম সমর্থন নিয়ে কথা বলে! আমি অভিভূত হয়ে যাই যে এত সমর্থন থাকা সত্ত্বেও এই দেশ চলছে না কেন! এর মধ্যে মাঝে মাঝে আবার কাগজপত্রে এ রকম কথাবার্তা [প্রকাশ] হয় কেন? এই দু রকম কেন?
নূরুল কবীর: কেন এমন হয় বলে আপনার মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় মনে হয়, এর একটা হলো রাজনৈতিক কথা। কিছু অঙ্গভঙ্গি আছে, যেগুলো রাজনীতিতে চালু হয়ে গেছে। এভাবে কথা না বললে রাজনৈতিক নেতা বলে মনে হয় না। ওভাবে, ওই শব্দে কথা বলতে হয়; ওই সুরে কথা বলতে হয়। টেলিভিশনে গেলে ওই কণ্ঠে কথা বলতে হয়। কিন্তু যেইমাত্র ব্যক্তি হিসেবে কথাবার্তা বলেন, তখন বলার ভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজেই সেটার আন্তরিকতা এবং সেটার ঘনিষ্ঠতা আমাকে অভিভূত করে। প্রতিবারই আমাকে অভিভূত করে।
নূরুল কবীর: একটা অন্য কথায় আসি। আপনার সরকার সেপ্টেম্বর মাসে সম্ভবত অক্টোবরে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাঁরা এই গণতন্ত্রের আন্দোলন এবং অভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেবেন। পরবর্তীকালে জুলাই ফাউন্ডেশন হলো। সেখান থেকেও কথা এসেছিল যে আহতদের এক লাখ টাকা করে এবং পাঁচ লাখ টাকা করে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তরুণ-তরুণী, ধনী-গরিব ও মধ্যবিত্তনির্বিশেষে তাঁদেরকে দেওয়া হবে। আপনি নিশ্চয়ই সচেতন আছেন যে, সেই প্রতিশ্রুতি পালিত হয় নাই এখনো। এটা কেন? ইতিমধ্যে আপনারা হাজার কোটি টাকা করে বিভিন্ন ব্যাংকে দিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় এক্সচেকার থেকে লুটপাটের কারণে যে সমস্ত ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের। কিন্তু যারা এই ব্যবস্থাকে বদলাল, তাদেরটা প্রায়োরিটিতে আসল না কেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: প্রায়োরিটিতে ছিল বলেই এত কথা ঘোষণা হলো। প্রায়োরিটিতে ছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায়নি। এগুলো হলো আদেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা। কীভাবে টাকা কার কাছ থেকে কোথায় যাবে? কীভাবে বিতরণ হবে? এগুলো নিয়ে। দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। যত টাকা লাগে তাদের, এই কমিটমেন্ট আছে এবং তাদের আমরা জীবৎকালে যত সমর্থন দরকার, যত পয়সাকড়ি দরকার, সবকিছুর জন্য কমিটমেন্ট আছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই; টাকারও কোনো অভাব নাই।
নূরুল কবীর: কত দিন লাগতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এখন আমার আগাম বলতে ভয় ভয় লাগে। যে কথা বলি, ওটায় পারি না তো শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাতে।
নূরুল কবীর: আপনার কথায় আন্তরিকতা তো মানুষ বিশ্বাস করে। আপনার অনুমান? অন্তত এটা তো খুবই একটা ইমিডিয়েট এবং প্রায়োরিটির মধ্যে থাকার কথা।
মুহাম্মদ ইউনূস: নিশ্চয়ই।
নূরুল কবীর: এটা কি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে হচ্ছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। কার হাত দিয়ে কীভাবে যাবে, কার কাছ থেকে কোথায় যাবে, এগুলো নিয়ে গোলমাল হচ্ছে। আর কিছু না।
নূরুল কবীর: তাতে আমলাতন্ত্রের কিছু হচ্ছে না। কিন্তু সরকার, আপনার সরকারের বদনাম হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা আমাদের সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা। আমি ব্যুরোক্রেসিকে (আমলাতন্ত্র) দোষ দেব না। তাদেরও নিয়মকানুন আছে। আমরা হয়তো সেই নিয়মকানুন বুঝি না বলে কানেকশনটা ঠিকমতো করতে পারি নাই।
নূরুল কবীর: আপনার জন্য কোনো টাইমলাইন বলা কি কঠিন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি আবার মাস, দিন একটা দিয়ে আবার বিব্রত হতে চাচ্ছি না আরকি।
নূরুল কবীর: সাম্প্রতিককালে আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করছেন, আমরাও লক্ষ করছি যে সরকারের যে গণতান্ত্রিক সংস্কারের কর্মসূচি এবং নির্বাচন—এই দুটিকে পরিপূরক না ভেবে একটা সাংঘর্ষিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে আলাপ-আলোচনার মধ্যে। এটা কি আপনাকে চিন্তিত করে?
মুহাম্মদ ইউনূস: না, এখনো সাংঘর্ষিক তো যায় নাই। আমরা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছিলাম, একটা ফর্মুলা দিয়েছিলাম, একটা প্রক্রিয়া তৈরি করেছিলাম। এটা কাজে লাগে কি না জানি না। প্রক্রিয়াটা হলো যে, কতগুলো কমিশন বসিয়ে দিয়েছি। প্রতিটা সাবজেক্টের ওপরে কমিশন বসিয়ে দিয়েছি। এ রকম ১৫টা কমিশন হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৬টা কমিশন প্রথম ঘোষণা করেছিলাম। ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। তারা ৯০ দিনে শেষ করতে পারে নাই। বলছে যে এক সপ্তাহ দেরি হতে পারে। সেটার কারণে আমাদের আয়োজন করতেও সময় লেগেছে। ঘোষণা করেছি, তাকে বসার জায়গা দিতে পারি নাই। কোথায় কে কার সঙ্গে পরিচয়, এসব করতে সময় লেগেছে। তারা ৯০ দিন পায় নাই সেই হিসাবে। কাজেই যদি ৭ তারিখে তারা দিয়ে দেয়, তাহলে জানুয়ারি ৭ তারিখের মধ্যে আমরা সেই ৬টা কমিশনের রিপোর্ট পাব। ওইখানে যাবতীয় সংস্কারসংক্রান্ত বিষয় দেওয়া থাকবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়েছে। তাহলে সংস্কারের রূপরেখাটা আমরা পেলাম। ইতিমধ্যে মতবিনিময় হয়েছে, তার মধ্যে কোনোটা টিকেছে, কোনোটা টিকে নাই। কমিশন মনে করেছে, যেটা এইগুলোই হলো আমাদের সারমর্ম। এগুলো পেয়ে গেলে তখন নিয়ে আসব বৃহত্তর সংলাপের জন্য। একটা সংলাপ সেদিন হয়েও গেল। যদিও কোনো রিপোর্ট আসেনি তবু প্রাথমিকভাবে একটা সংলাপ হলো। সবাইকে নিয়ে আলাপ করা—কোনটা পছন্দ, কোনটা অপছন্দ, কীভাবে অগ্রসর হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই বিষয়ভিত্তিক একটা বড় রকমের কনসেনসাস বিল্ডিং প্রসেস, যেটার জন্য আবার আলাদা একটা কমিশন ঘোষণা করলাম সেদিন। সেটা হলো এই ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের দিয়ে একটা কমিশন। আমি নিজে এটার চেয়ারম্যান হলাম এবং প্রফেসর আলী রীয়াজকে সহসভাপতি করলাম যে আমরা মিলে এটা একটা কনসেনসাস ডেভেলপ করার চেষ্টা করব। এই কনসেনসাসের প্রক্রিয়াটা আমাদের ঠিক করতে হবে। সমাজের কোন কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে কীভাবে আদান-প্রদান হবে, তাতে একটা সর্বমতসম্মত একটা কিছু বের করা যায় কি না। সবকিছুতে একমত না হলেও অন্তত কিছু বিষয়ে আশা করি একমত হওয়া যাবে। তখন সেটা হবে আমাদের সংস্কার। যেহেতু একমত হয়ে গেছে, তাহলে এটা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়ে যাবে— এইভাবে আমরা চিন্তা করছি।
নূরুল কবীর: এটা আবার কি মধ্য জানুয়ারিতে শুরু হতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আশা করছি। ডেফিনেটলি।
নূরুল কবীর: অর্থাৎ আপনার সরকারের নিজস্ব কোনো সংস্কার কর্মসূচি নাই...
মুহাম্মদ ইউনূস: এই তো এটাই আমাদের।
নূরুল কবীর: কিন্তু এটা তো বাইরে থেকে আসল...
মুহাম্মদ ইউনূস: বাইরে থেকে নিয়েই তো আমাদের হলো। এটা এভাবে একজনের মাথা থেকে তো আসবে না। ১০ জনের মাথা থেকে এসে নির্যাস হয়ে এটা আসল। তারপরও আবার সবার সঙ্গে আমি [কথা] বলছি।
নূরুল কবীর: আপনার ক্যাবিনেটে আপনাদের কি কোনো নিজস্ব চিন্তাভাবনা, কোনো সেক্টরে...?
মুহাম্মদ ইউনূস: আছে। কিন্তু সেটা কমিশনকে গিয়ে বলতে হবে। কারণ, মতামত সংগ্রহ করার দায়িত্ব হলো কমিশনের।
নূরুল কবীর: কিন্তু সরকারের নিজেদের কোনো নিজস্ব...
মুহাম্মদ ইউনূস: নিজস্ব কোনো প্রোগ্রাম নাই। আমরা তো রাজনৈতিক দল না যে আমাদের একটা নিজস্ব থাকবে। আমাদের একেকজনের একেক মত। একেকজন একেক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সেটা নিয়ে তো আমাদের কোনো অসুবিধা নাই।
নূরুল কবীর: এগুলো নিয়ে অনেক ভিন্নমত কি আপনার সরকারের মধ্যে...
মুহাম্মদ ইউনূস: এখনো তো দেখি নাই। সামনে আসলে দেখা যাবে, যখন তর্ক-বিতর্ক শুরু হবে—না, এটা আমরা মানি না।
নূরুল কবীর: আর আপনি এটা অনুমান করছেন...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি অনুমান করছি। কারণ, সব সময় সবাই যে একমত হবে, সে রকম তো কথা নেই। যেমন ধরেন, সেদিন সংলাপের জন্য আমাকে একটা বক্তৃতা দিতে বলেছিল। সেখানে বললাম যে সমঝোতা কীভাবে হবে। এটা একটা প্রক্রিয়া। বলতে গিয়ে বললাম, ধরুন, আমি মনে করি, ১৭ বছর বয়সে ভোটার হওয়া উচিত এবং আপনি সেটা ভিন্নমত পোষণ করেন। তাহলে আলাপ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, আপনার মতই টিকে গেল। আমারটা হলো না। আমি মেনে নেব সেটা। লোকে মনে করল যে, ১৭ বছর—এটা সরকার থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি তো ভাই এ রকম বলি নাই। আমি বললাম যে ধরুন, ১৭ বছর বয়স থেকে (ভোটার) হওয়া ভালো। এটা একটা মত।
নূরুল কবীর: সিদ্ধান্ত নয়...
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা সিদ্ধান্ত নয়। উদাহরণ হিসেবে এটা। তাহলে এটার সমঝোতাটা কীভাবে হবে? আপনাদের সবার মত এক রকম, আমার মত এক রকম। শেষ পর্যন্ত সবার মত যেদিকে, আমি সেদিকে যোগ দেব। সেটি হলো কনসেনসাস, সেটি হলো ঐকমত্য। এইভাবে আমরা অগ্রসর হতে চাই। সেটা অনেকে ভুল বোঝে। মনে করে যে সরকার থেকে ১৭ বছর লাগিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি বললাম যে না ভাই এ রকম তো বলি নাই আমি।
নূরুল কবীর: এ বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা নাই...
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে, আমরা লক্ষ করছি, তরুণদের একটি অংশ, যাঁরা নতুন একটা রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছেন, তরুণেরা যাঁরা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে তাঁরা সময় নিতে চায় নির্বাচনের জন্য। রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে যে সংস্কার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নির্বাচনপ্রক্রিয়াটা এগিয়ে আনা দরকার। কিন্তু তাঁদের কথাবার্তার মধ্যে সাম্প্রতিককালে পাবলিক ডিবেটের মধ্যে একধরনের তিক্ততাও তৈরি হয়েছে। আপনার নজরে এসেছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: খুব ভালো করে নজর এসেছে।
নূরুল কবীর: সেটা একটা দুশ্চিন্তার ব্যাপার নয় কি?
মুহাম্মদ ইউনূস: মোটেই না। ওই যে বললাম বাইরে এক রকম, ভেতরে আরেক রকম।
নূরুল কবীর: আচ্ছা, সে কারণে? তাঁরা শেষ পর্যন্ত একমত হয়ে যাবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: একমত হয়ে যাবে।
নূরুল কবীর: তরুণেরা মনে করেন, যাঁদের সম্পর্কে যেটা বলা আছে বা আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয় যে তাঁরা দলটা করবেন, দলের পরে কনস্টিটিউয়েন্সিগুলো বিল্ডআপ করবে, লোকগুলো তৈরি করবে, এই কারণে তার সময় দরকার। আর ঠিক সংস্কারটা মাথায় আছে। নিশ্চয়ই তাঁরা সংস্কার চান। এই মুহূর্তে ক্ষমতার রাজনীতিতে তাঁরা প্রায়োরিটি দিচ্ছেন, তাঁদের নিজস্ব সংগঠন তৈরি করে নির্বাচন করা। এ কারণেই অন্যরা মনে করে যে, শুধু অন্য একটা গ্রুপকে সময় দেওয়ার জন্য নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তা আপনি সেটার মধ্যে কোনো সমস্যা দেখছেন না।
মুহাম্মদ ইউনূস: সে জন্য ঘোষণা দিয়ে দিলাম। কতগুলো তারিখ দিয়ে দিলাম, যাতে এই সন্দেহ না থাকে। কারণ, যত কিছু টানতে চান না কেন, আমি তো ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি। হয় এখানে হবে, না হয় ওইখানে। দুটো তারিখ দিয়ে দিয়েছি।
নূরুল কবীর: কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তারপরও বলছে যে আরও সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে।
মুহাম্মদ ইউনূস: এর ভেতরে তারিখ চাচ্ছে; বাড়াতে চাচ্ছে না। এর ভেতরে তারিখ চাচ্ছে, কোন তারিখে করবেন। আমি বললাম যে, ওই প্রসেসটা অগ্রসর হতে আমরা দেখব। এটা তো আপনাকে বাদ দিয়ে দিলাম, এর বাইরে আমরা যাচ্ছি না, এইটা হলে এই পর্যন্ত, ওইটা হলে এই পর্যন্ত, এইভাবে আছে। কাজেই ওটা যে উনারা বুঝতেছে না তা (নয়), বোঝেন। তবু কথাটা বারে বারে বলছে যে, ইন কেইস আমরা এটা অতিক্রম করতে চাই।
নূরুল কবীর: তাহলে আপনাদেরকে চাপের মুখে রাখতে চান।
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা আমাদের জন্য ভালো।
নূরুল কবীর: যাদেরকে চাপের মুখে রাখতে চায়, তারা আবার এটা ঠিকই বোঝে...
মুহাম্মদ ইউনূস: বুঝব তো বটেই।
নূরুল কবীর: দে আর প্লেয়িং টু দ্য গ্যালারিজ...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরাও চাই যে চাপের মধ্যে থাকি। কারণ, আমাদের ভেতরেও তো নানা মত থাকতে পারে।
নূরুল কবীর: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
মুহাম্মদ ইউনূস: সে জন্যই একটা বাঁধ দিয়ে দেওয়া হলো। এই পর্যন্তই, এর ভেতর থেকে আমাদের যা কিছু করতে হবে। এমন না যে কেউ বলে—না, পাঁচ বছর লাগবে। এটা সংস্কার করতে ভালো লাগছে না— এমন যেন বলতে না পারে। যে যা কিছু করতে হয় এর মধ্যে হতে হবে। এই সংস্কারের জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, এই দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপেই করতে হবে, আরও ছয় মাস বাড়াতে হবে, বললাম যে না এর ভেতরেই সবকিছু করতে হবে। কাজেই এই যে একটা বাঁধ দেওয়াটা, এটা খুব দরকারি জিনিস আমাদের জন্য। এর মধ্যে আমরা যেন সবকিছু সম্পন্ন করতে পারি।
নূরুল কবীর: আপনার মন্ত্রিপরিষদের তরুণ সদস্যদের কেউ কেউ এসব ব্যাপারে পাবলিক স্টেটমেন্ট করার পর অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন এবং সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একটা অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে—এ রকম কিছু স্টেটমেন্ট এসেছে। আপনি কি পরিষদ সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: ক্রমাগত আলাপ হয় এবং সেটার জন্য আমাদের একটা প্রক্রিয়াও আছে, যাতে করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা আলাপ করি।
নূরুল কবীর: পরিষদ সদস্যদের পাবলিক স্টেটমেন্টের জন্য যে ভুল-বোঝাবুঝি...
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়। সাংবাদিকদের সামনে গিয়ে কী বলতে কী বলে ফেলে, আমাদের তো অভ্যাস নাই। কাজেই একটু গোলমাল হয়ে যায়। পরে আবার বলে যে না আমি ওইভাবে বলি নাই, আমার বলা এভাবে ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে ঐকমত্যের কোনো অভাব নেই। আমরা যেগুলো বলছি, সেগুলো সম্বন্ধে আমরা একমতেই আছি। এটার মধ্যে কোনো অসুবিধা নেই।
নূরুল কবীর: আপনার সর্বশেষ বক্তৃতায় দুটো পোলাইট অ্যাডমিশন ছিল, আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে ও দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে। সরকার যে পরিমাণ আশা করেছে, সেই পরিমাণ সাফল্য আসে নাই, সেটাও বেশ কয়েক দিন হয়ে গেল। এগুলোর জন্য বিশেষভাবে আপনারা নতুন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন বা চিন্তা করছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় তো চেষ্টা করি। এটা তো আজকের সমস্যা না। এটা বরাবরেরই সমস্যা।
নূরুল কবীর: কোনো স্পেসিফিক স্টেপস, দ্রব্যমূল্যের জন্য...
মুহাম্মদ ইউনূস: একটা হলো আইনশৃঙ্খলা, আরেকটা হলো বাজারমূল্য (দ্রব্যমূল্য)। বাজারমূল্যের জন্য যত রকমের বুদ্ধি আছে, সবকিছু আমরা করেছি, আমাদের বুদ্ধিতে যত দূর কুলিয়েছে।
নূরুল কবীর: যেমন কী কী...
মুহাম্মদ ইউনূস: যেমন প্রতিদিনের খবর। কোন বাজারে কত টাকা উঠল, কত টাকা কমল, বাজারভিত্তিক। এমন না যে সারা বাংলাদেশের...অমুক বাজারে কত, অমুক বাজারে...তার মধ্যে রকমফের হয়। কেন রকমফের হচ্ছে। একসঙ্গে কেন এক বাজারে পড়ছে, আরেক বাজারে উঠতেছে, সেটা দেখা।
নূরুল কবীর: সেটা তো অ্যানালাইসিস হিসেবে ভালো। কিন্তু অ্যানালাইসিসের যে রেজাল্ট, সেইটার জন্য আপনারা অ্যাকশন কী নিয়েছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: অ্যাকশনের জন্য হলো যে, যেগুলো মাথায় বুদ্ধি আছে, সেগুলো প্রয়োগ করা। যেমন ট্রাক দিয়ে দেওয়া যে ট্রাকে মাল আসুক। বিআরটিসির কাছে ট্রাক আছে। ট্রাক নিয়ে আসি। ট্রাক দিয়ে মাল আসতে থাকুক। কোথায় কোথায় বাজারে এগুলো উঠছে। সেখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। এই যে চাঁদাবাজির বিষয় আছে। চাঁদাবাজিটা কমানো যায় কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। যা আপনারা দেখতেছেন, একই জিনিস আমাদের কাছে।
নূরুল কবীর: উত্তর বাংলায় যে ফুলকপির দাম দুই টাকা, ঢাকার বাজারে ৪০ টাকা। বরাবরই পুলিশ থেকে শুরু করে মিডিয়া সব সময় বলেছে যে, পথে পথে যে চাঁদাবাজি হয়, তাতে খরচটা বেড়ে যায়। এটা আপনার সরকারও জানে। কিন্তু নতুন করে একদল চলে যাওয়ার পর আরেক দল চাঁদাবাজদের দেখতে পাচ্ছি। তাদের কেউ গ্রেপ্তার হয় নাই এই অপরাধে। তার মানে কী?
মুহাম্মদ ইউনূস: গ্রেপ্তার হইছে কি না আমি জানি না। কিন্তু এটার সমাধান হয়নি।
নূরুল কবীর: কিন্তু গ্রেপ্তার হচ্ছে না। ডিটার করার [থামানোর] জন্য সরকারের পদক্ষেপ থাকলে এটা তো চলবার কোনো কারণ নাই। এগুলো সাধারণত রাজনৈতিক দলের যারা সংগঠিত শক্তি, তারাই করে। আপনারা কি রাজনৈতিক দলগুলোকে অসন্তুষ্ট করতে চান না?
মুহাম্মদ ইউনূস: আইনের ক্ষেত্রে...দল অসন্তুষ্ট হলে, সারা দেশ অসন্তুষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নূরুল কবীর: আমরা এই বিষয়ে এই ধরনের অপরাধের জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাউকে গ্রেপ্তার হতে দেখি নাই। এটা আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা হয়তো ধরতে পারছি না তাদেরকে এখনো জুতমতো।
নূরুল কবীর: এটা কি বিশ্বাসযোগ্য হবে, প্রকাশ্য রাস্তার মধ্যে বাজারের মধ্যে বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি। সবাই দেখতে পাচ্ছে স্যার। সরকার দেখতে পাচ্ছে না কেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সরকারের চোখ অত পরিষ্কার না আরকি।
নূরুল কবীর: পত্রপত্রিকার রিপোর্টগুলো আরও বাড়লে কি আরেকটু পরিষ্কার হবে বলে মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: যত বলা যায়, তত ভালো হবে, একটু সতর্ক হবে সবাই।
নূরুল কবীর: আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমার কোনো প্রশ্ন আছে, আমি বড় স্যারের সঙ্গে কথা বলব।...উনি বলছেন, যে সিন্ডিকেটগুলো আছে সরকারের জানার কথা। তারা কোথায় স্টক করে, সেগুলো রেইড করলেই পারে। নাগরিক হিসেবে বা আমার স্ত্রীর এই প্রশ্নের আপনার কী উত্তর?
মুহাম্মদ ইউনূস: উত্তর হলো, যে সিন্ডিকেটে এই মাল আনা-নেওয়া করে, আমরা চেষ্টা করছি যে বাইরে যারা আছে, সিন্ডিকেটের বাইরে, তাদেরকে কী কী সুবিধা দিলে তারা এই ব্যবসায় আসত। ব্যবসা যে আমরা দুজনে মিলে ঠিক করলাম যে আমরা মাল আনব, আমরা বিক্রি করব। এটাকে কোন আইনে আপনি...
নূরুল কবীর: তারা যখন আর্টিফিশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করে তখন...
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটা যদি মাল গুদামে রেখে দেয়, বাজারে বিক্রি না করে, তখন গিয়ে ধরতে পারেন।
নূরুল কবীর: আপনার সরকার কি এগুলো খেয়াল করেছে, গুদামে...লক্ষ করেছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: ওই যে বললাম, সবকিছু খেয়াল করে। ওই যে তথ্য সংগ্রহ করা দামের কথা বললাম, স্টকের কথা বললাম। কে কোথায় এলসি খুলতেছে, সেই রিপোর্ট আমাদের কাছে আসে। কোন মাল খালাস হচ্ছে, কোন দিন কোথায় স্টক হচ্ছে, সেগুলো সংগ্রহ করা এবং তদারক করা যে মাল কি ওই গুদামে রয়ে গেছে, না ছেড়ে দিচ্ছে।
নূরুল কবীর: আপনারা কোনো অসংগতি দেখতে পাচ্ছেন না?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা এগুলো করছি বলেই তারা তাড়াতাড়ি এগুলো ছাড়ার চেষ্টা করে, এই গুদাম থেকে আরেক গুদামে নিয়ে যায় হয়তো। বাজারে দিচ্ছে না, চালাকির কাজ।
নূরুল কবীর: এই চালাকিটার জন্য তো কোটি কোটি গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: বহু বহু গরিব মানুষ, সবাই।
নূরুল কবীর: মানেটা হচ্ছে যে এই ব্যবধান থাকবার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
মুহাম্মদ ইউনূস: ঠিক।
নূরুল কবীর: এবং সেইটা প্রধানত সরকারের দেখবার বিষয়।
মুহাম্মদ ইউনূস: ডেফিনেটলি।
নূরুল কবীর: মানুষের অভিযোগ হচ্ছে, সরকার এটা ইন ফ্যাক্ট দেখছে না। আপনি সেটা ফিল করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি ফিল করি, ডেফিনিটলি।
নূরুল কবীর: এই সরকারের বিরুদ্ধে...রাষ্ট্র তো কিছু প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজনে কঠোর হয়। আপনাদের বিরুদ্ধে সুশীলতার অভিযোগ আছে, কঠোর হচ্ছেন না।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা আমাদের সাধ্যমতো কঠোর হয়ে...হয়তো যে কঠোর মানুষের মনে আছে, অত দূর হতে পারছি না। কিন্তু আমরা যে এত দিন যত কঠোর হইনি, অত কঠোর এখন হতে চাচ্ছি।
নূরুল কবীর: আমরা একটু অন্যদিকে যাই। এটা আমরা সবাই জানি, এখানে যে বাংলাদেশে এত বড় একটা রাজনৈতিক রক্তাক্ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কিছু আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সেটাকে আমাদের পাশের দেশ ভারত একধরনের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং নানান কথা বলছে। এটা আমরা ঠিক জাতীয়তাবাদী চৈতন্য থেকে নয়, দেশকে ভালোবাসি বলে নয়, তথ্য বিকৃতি হিসেবে নানান জায়গা থেকে এগুলো মিডিয়া, এটা সাধ্যমতো বলছে। কিন্তু সেটার একটা হচ্ছে মিডিয়ার লড়াই। আরেকটা হচ্ছে যে, বস্তুত ফাংশনাল ডিপ্লোমেসিতে আপনার এই কদিনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে একটা সুষ্ঠু ওয়ার্কিং রিলেশন তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে কি আমরা এগোতে পেরেছি?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা বরাবর চেষ্টা করছি ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পর্ক [গড়ে] তোলা এবং তাদের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরার। প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে আলাপ হলো, উনিই ফোন করেছিলেন, তখন উনি অভিযোগ করলেন যে এখানে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে ইত্যাদি। আমি বললাম যে, এটা অতিরঞ্জিত কতগুলো সংবাদ আপনার কাছে যাচ্ছে। কাজেই এটা আপনি বিশ্বাস করেন না। যদি আপনি প্রকৃত তথ্য জানতে চান, আপনি আপনাদের সাংবাদিকদের পাঠান। এখানে আসুক। তাঁরা দেখুক। দেখে রিপোর্ট করুক। কাজেই আমাদের তথ্যগুলো যদি আস্থায় আনতে না চান, তাহলে এটি প্রকৃত পরিস্থিতি। পরে অনেকে এসেছিলেন। ভারতীয় সাংবাদিক এখানে এসেছেন। তাঁরা রিপোর্ট করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে করে অতিরঞ্জন থেকে বাঁচা যায়। কিন্তু কিছু সংবাদ আছে, এগুলো কোনো অতিরঞ্জনের বিষয় না। এটা একেবারে গাঁজাখোরি কতগুলো কথা নিয়ে যাচ্ছে। সেটা তারে সামনে দেখায়ে দিলেও হবে না। তো সে রকম তারা চলছে, নানা রকম আজগুবি সংবাদ দিচ্ছে। পরে যখন তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয়...এবার তাঁদের পররাষ্ট্রসচিব যখন আসলেন, তখন বললাম যে এ রকম কেন হচ্ছে? তো বলল যে, ওটা আমাদের রাষ্ট্রের সরকারের বিষয় নয়। সরকার এটার মধ্যে জড়িত না। এগুলো মিডিয়ার বিষয়। এগুলো আমাদের আওতার বাইরে। কাজেই সরকার এটা থেকে দূরে চলে গেল। সেটা আমাদের জন্য একটা বড় অ্যাচিভমেন্ট। এত দিন সরকার এটার মধ্যে জড়িত ছিল বলে অনেকটা প্রকাশ করছিল। এখন সর্বপ্রথম (বলা হলো) এটা আমাদের না। আমরাও চেষ্টা করছি, আমাদের তথ্যগুলো তাদের কাছে দেওয়ার জন্য। এখন মনে হয় ইন্টারন্যাশনাল কাভারেজ ইত্যাদির কারণে অত বেশি জুত করতে পারছে না। দিচ্ছে, এখনো খবর দিচ্ছে উল্টাপাল্টা খবর দিচ্ছে। কিন্তু জুত করতে পারছে না। যেহেতু আন্তর্জাতিক সাংবাদিকেরা রিপোর্ট করছেন। আগে বলছিল যে এটা ইসলামিস্ট একটা অভ্যুত্থান হয়েছে, এটা তালেবানদের হাতে চলে গেছে ইত্যাদি। এখন পত্রপত্রিকায় ইন্টারন্যাশনাল কাগজপত্রে যখন আসছে, ওখানেও তারা সুবিধা করতে পারছে না ওরকম বলে। কিছু কাগজে দেখাল, এখানে ক্যাবিনেটের মধ্যে কারা কারা আছে? তাঁদের যে পরিচিতি দিল, কেউ বিশ্বাস করবে না যে এটা ইসলামিস্টদের গোষ্ঠীর। কাজেই ওগুলো ফেলেও দিতে পারছে না। কাজেই যতই তারা করুক না কেন, এই ধরনের যে প্রোপাগান্ডা যেগুলো ছিল, প্রচারণা যেটা ছিল, সেটা আগের থেকে অনেক কমেছে। তাতে সব রকমের প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে—এটা বলব না। এ[ক]টা প্রচারণা আছেই।
নূরুল কবীর: ভারত রাষ্ট্রের দিক থেকে কোনো হোস্টাইলিটি টের পান আপনি?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। আমাদের তো রাষ্ট্রীয় দিক থেকে কোনো হোস্টাইলিটি নাই অন্তত। এই যে বললাম তারা পরিষ্কারভাবে বলল যে এটার সঙ্গে আমাদের [ভারত সরকারের] কিছু না। আমাদের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক। আমাদের [ভারত সরকারের] বক্তব্যের মধ্যে এগুলা নাই। আমরা বলেছি যে আমাদের সম্পর্ক খুব গভীর সম্পর্ক হতে হবে এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হতে হবে। এখন মেঘ জমেছে, মেঘটা কাটিয়ে উঠতে হবে। এটা বলছে, মেঘটা কাটানোর জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে, উভয় পক্ষে। সেটা আমরা চেষ্টা করি।
নূরুল কবীর: মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হওয়ার জন্য আপনার সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনবার একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অফিশিয়ালি চিঠি দিয়েছেন আপনারা। আপনার ধারণা, একটা রিজনেবল টাইম বলে আর কত দিনের মধ্যে উত্তর আশা করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমার কোনো ধারণা নেই, এগুলোর কত দিন সময় লাগবে।
নূরুল কবীর: আপনার ফরেন মিনিস্ট্রি নিশ্চয়ই আপনাকে...
মুহাম্মদ ইউনূস: না, এখনো জিজ্ঞেস করিনি, কত দিন লাগবে। আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এখন দেখব, তারা কী জবাব দেয়? তারা জবাব দিচ্ছে কি না, এটা ফলোআপ করব। ডেফিনেটলি একটা গতি নেবে এটা।
নূরুল কবীর: অনুমান, কত দিন পরে আপনারা আবার চিঠি দেবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা একটা সময়ের ব্যাপার। মাসখানেক বলেন। আমরা ফলোআপ করব। দেখেন কী কী হয়।
নূরুল কবীর: আমরা আরেকটু পশ্চিমে যাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনেক ভালো সম্পর্ক। এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যাবিনেটে ইন্ডিয়ান বর্ন সাতজন মন্ত্রী আছেন বলে শোনা যায়। আপনার সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্ক ভালো বলে মানুষ মনে করে। তাঁদের এই সম্পর্ক কি আমাদের দেশে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে কোনো ক্ষতির কারণ হবে বলে আপনি আশঙ্কা করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: হতে পারে; কারণ, এত ঘনিষ্ঠতা থাকলে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যদি ওইখানে ক্ষমতায় থাকে, তার একটা প্রভাব তো হতেই পারে। এবং ইতিমধ্যে তার প্রভাবের কিছু নমুনাও আমরা দেখেছি। কাজেই আমরা দেখছি, এটা কোন দিকে যায়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেই যে সে ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এমনও কোনো কথা নাই। সে হয়তো আমাদের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পারে। আমরা দেখছি, সেগুলো কীভাবে আমরা বার করতে পারি যে কারা কারা আমাদের দিকে সহানুভূতিশীল হবে। কীভাবে আমরা তাদের সহানুভূতিটা পেতে পারি। নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে গড়ে তোলা যায়। পুরোনো সরকারের সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল; ভালো সম্পর্ক ছিল। নতুন সরকারের সঙ্গে আমরা একই রকম ভালো সম্পর্ক করার জন্য চেষ্টা করব।
নূরুল কবীর: ইতিমধ্যেই কি কাজকর্ম এই ব্যাপারে শুরু হয়েছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা নিয়ম। আমাদের করতে হয়। যখন নতুন সরকার আসে, তার সঙ্গে একটা যোগাযোগ স্থাপন করা যেগুলো ডিপ্লোমেটিক পর্যায়ে হয়। গিয়ে আলাপ-সালাপ করে। ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলের বাইরে হয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের খাতিরে। ওইখানে যাঁরা হোয়াইট হাউসে আছেন, তাঁদের সঙ্গে যাঁদের যোগাযোগ আছে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। কীভাবে করতে হবে? নানাভাবে হয়। বিভিন্ন চ্যানেলে যোগাযোগগুলো করতে হয়।
নূরুল কবীর: আপনি ইতিমধ্যে সার্কের একটা ইফেকটিভ রিভাইভালের কথা প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশের তরফ থেকে। তাতে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: অন্য দেশের যাঁরা আছেন, তাঁরাও চান সার্কের অন্যান্য দেশের মধ্যে...কিন্তু ভারত এটাতে খুব সাড়া দিচ্ছে না। তারা ব্যাখ্যা করে যে আমাদের [ভারত] সমস্যা হলো পাকিস্তানকে নিয়ে। তো আমি যেটা ব্যাখ্যা করি যে একটা দেশের সঙ্গে সমস্যা হলেই পুরো জিনিসটা বিকল হয়ে যাবে, এটা তো ঠিক হবে না। আমরা চেষ্টা করি, ওইটাও সমাধান হোক। অথবা ওই সমস্যাকে পৃথকভাবে দেখে বাকি সব সম্পর্ককে আমরা গড়ে তুলি। এখনো এটার কোনো...
নূরুল কবীর: রেসপন্স?
মুহাম্মদ ইউনূস: রেসপন্স...
নূরুল কবীর: দেখা যায় না?
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যেটা আমার দেশের মানুষ জানতে চায়। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর টাকা আওয়ামী লীগ আমলে পাচার হয়েছে। আপনি তার জন্য একটা কমিশনের মতো করেছেন। এই টাকাপয়সা ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতির ইঙ্গিত কি পাচ্ছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: একসাথে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়ে গেলে আমরা নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করতে পারব। এ রকম একটা আইন আছে। আইনের মাধ্যমে এটা করব। সব টাকা হয়তো ফেরত আসবে না। কিছু টাকা ফেরত আসবে যদি আমরা সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো পাই। সে প্রচেষ্টাগুলো হচ্ছে।
নূরুল কবীর: সাক্ষ্যপ্রমাণের ব্যাপারে কাজকর্ম চলছে...
মুহাম্মদ ইউনূস: একদম। খুব ডেডিকেটেড একটা আলাদা ইউনিট আছে, তাদের কাজই হলো এগুলো উদ্ধার করা। এটা প্রথম থেকে শুরু হয়েছে। যেহেতু আমরা জানি, যে রকম টাকা গেছে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে গেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে ধরাটা একটু সহজ হবে হয়তো। যেগুলো স্যুটকেস ভরে নিয়ে গেছে, মুশকিল আছে সেগুলো ধরা। কিন্তু এগুলো তো চ্যানেলের ব্যাপার। যারা এক্সপার্টস আছে, যারা এই কাজগুলো করে, তারাও বলতেছে, হ্যাঁ, এটা সম্ভব। কিন্তু সম্ভব বলে কত দিন আমরা বসে থাকব, এটাই হলো বিষয় আরকি। এটার আইনগত বিষয় আছে। কী সাক্ষ্যপ্রমাণ? তারা কী চায়? কীভাবে এটা আইডেনটিফাই হবে? কার কাছে গেল? আইন ভঙ্গ করে গেল? কিছু কিছু আশা মাঝে মাঝে পাই যে এটা হবে। এখনো চূড়ান্ত কিছু পাইনি।
নূরুল কবীর: মানে, আমাদের আশা করবার কারণ আছে...
মুহাম্মদ ইউনূস: আশা করার কারণ আছে। অবশ্যই কারণ আছে।
নূরুল কবীর: কী রকম সময় লাগবে বলে আপনার ধারণা?
মুহাম্মদ ইউনূস: তাদের কথা তো কিছু বুঝতে পারি না। এটার যে একটা স্ট্যান্ডলাইন আছে, এর মধ্যে গিয়ে এটা শেষ হবে, এটা এখনো বুঝি নাই যে এটা কত দিন লাগতে পারে। আমি একটা আন্দাজে বলে দিতে পারি আপনাকে। কিন্তু আমার মনে হয় না, সেটা বলা ঠিক হবে।
নূরুল কবীর: সামনের নির্বাচনের পরে এই যে এ রকম দায়িত্ব শেষ করবার পরে পরবর্তীকালে কী করার প্ল্যান আপনার?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি তো বরাবরই বলছি যে আমি যে [এখানে, এটা] সাময়িক বিষয় ছিল। আমি এই দায়িত্ব পালন করে আমার পুরোনো আনন্দের জগতে ফিরে যাব।
নূরুল কবীর: এই অভিজ্ঞতার ওপর কোনো বই লেখার পরিকল্পনা আছে আপনার?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। এ রকম চিন্তা করিনি। আপনি বইয়ের কথা মনে করিয়ে দিলেন! আমি দিন কাটানো নিয়ে ব্যস্ত আছি।
নূরুল কবীর: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেবার জন্য।
মুহাম্মদ ইউনূস: অসংখ্য ধন্যবাদ।
নূরুল কবীর: আপনার চার মাস হলো প্রায়। এই চার মাস আর আগের চার মাসের মধ্যে কোন পর্বটা আপনার ভালো লাগে বা কোনটা খারাপ?
মুহাম্মদ ইউনূস: খারাপ কোনোটাই না। খারাপটা বলব না, কিন্তু ভিন্ন। আগেরটা ছিল আমার নিজস্ব জগৎ। সারা জীবন ধরে যা যা করে এসেছি, সেটার মধ্যেই ছিলাম। নিজস্ব আয়োজন, নিজস্ব চিন্তা। তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। সেটা আমার মতো করে ট্যাকল করেছি। আমি আমার মতো করে চলেছি। সেটা একেবারে আমার নিজস্ব জগৎ। এটা একবারে ভিন্ন জগৎ। এটা আমার নিজস্ব জগৎ না। এই জগতে আমি কোনো দিন ছিলাম না; থাকার কোনো আগ্রহও ছিল না। এটার ডান-বাম আমার জানা নেই। অনেকটা হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে চলার মতো অবস্থা। কিন্তু এটারও একটা চ্যালেঞ্জ আছে।
আমাকে তারা আহ্বান জানিয়েছে। প্রথমে একটু সংকোচ করছিলাম যে এতে যাওয়া ঠিক হবে না, যেহেতু আমি এ জগতের মানুষ নই। কিন্তু তারা আমাকে বোঝাতে পেরেছে যে, এই পরিস্থিতিতে আপনার আসা দরকার। শেষ পর্যন্ত আমি রাজি হয়েছি যে, এইভাবে তোমরা প্রাণ দিয়েছ, তোমরা রক্ত দিয়েছ। আমার জন্য না হয় একটু চ্যালেঞ্জিং হলোই। কাজেই আমি রাজি হলাম। এটা ভিন্ন জগৎ। এই ভিন্ন জগতের মধ্যে এখন চলছি। দেখা যাক কত দূর যেতে পারি।
নূরুল কবীর: কিন্তু আগস্টের ৮ তারিখে এই জগৎটা যদি শুরু না হতো আপনার জন্য, পেছনের (আগের) যে চার মাস, আপনার মনে হয় তত দিনে জেলে থাকার কথা ছিল।
মুহাম্মদ ইউনূস: হয়তো, আমি তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কোন কোন দেশে যাব, যাতে বাংলাদেশে ফিরে যেতে না হয়। আমি এক উপলক্ষে আরেক দেশে ছিলাম। সেখানে বসে ভাবছি, এখন ফিরে যাওয়া ঠিক হবে কি না। কারণ, যাওয়ার সময় উত্তেজনা দেখে গেছি, কারফিউ দেখে গেছি। কারফিউর ভেতর দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে; উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।
নূরুল কবীর: তার মানে, আপনি কারফিউ ভঙ্গ করেছিলেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি কারফিউ ভঙ্গ করে গেলাম, তা না হলে তো যেতে পারতাম না। ভাগ্যিস, কেউ ধরেনি পথে। অত কড়াকড়ি কারফিউ ছিল না। ওই অবস্থা তো দেখে গেছি এবং এটা ক্রমাগতভাবে দেখেছি পত্রপত্রিকায়, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভয়ংকর রকম কাজ হচ্ছে। কাজেই ক্রমাগতভাবে ফিডব্যাকটা পাচ্ছিলাম। তার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে গেল, একবারে অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। কিন্তু এর মধ্যে বুঝি নাই যে এর মধ্যে আমাকে জড়িত হতে হবে। আমাদের এর মধ্যে একটা ভূমিকা পালন করতে হবে। কাজেই চার মাস এভাবেই গেছে আমার।

নূরুল কবীর: আপনি ৮ আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পরে আপনার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের যে আইনগত অভিযোগ ছিল, সেগুলো কোর্ট থেকে একের পর এক উঠে যায়। আপনার পজিশনের ভারে কিংবা প্রভাবে এ ঘটনা ঘটেছে—লোকেদের এ রকম ভাবনার সুযোগ আছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি বলব, এটা আমি সরকারে থাকি বা দেশে থাকি, না থাকি—এগুলো এমনি চলে যেত। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আমাদের যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন আদালতে, আমাদের যে উকিলরা আছেন, তাঁরা এটা বোঝাতে পারতেন যে এটার কোনো ভিত্তি নেই। এটার কোনো তথ্য নাই, কিছুই নাই। এগুলো খুবই ঠুনকো জিনিস ছিল। কাজেই এটা আমার জানা-অজানার কোনো বিষয় নয়। যেহেতু এটা বিচারের বিষয়, বিচারেই চলে যেত। আমি থাকলেও যেত, না থাকলেও যেত। ঘটনার চক্রে আমি ছিলাম।
নূরুল কবীর: কিন্তু লোকেরা যে বিচারব্যবস্থার ওপর তৎকালীন এক্সিকিউটিভের, রাষ্ট্রের প্রভাবের কথা বলছিল বা বলাবলি আছে এখনো, তাহলে কি আপনি মনে করেন, উনারা ক্ষমতায় থাকলেও কোর্ট ওইভাবে ব্যবহার করত, মানে ন্যাচারাল পদ্ধতিতে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আগের যারা ছিল তারা তো করে নাই। করে নাই বলেই তো আমি আদালতের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। যারা এসেছে, তারা বিচার চাচ্ছে, বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে।
নূরুল কবীর: সেভাবেই যদি চলত, তাহলে তো আপনি জেলে যাওয়ার একটা...
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই। আমি তো জেলে যাওয়ার পথেই ছিলাম। [আদালতে] আসা-যাওয়ার পথে প্রতিবারই মনে হচ্ছে, এবারই বোধ হয় জেলে যেতে হবে। মাঝে মাঝে প্রস্তুতি নিয়ে গেছি যে হয়তো ফেরা না-ও হতে পারে এবার। আমার সহযোগী যাঁরা আছেন, তাঁরা তাঁদের আত্মীয়স্বজনকে বলে গেছেন তাঁদের জন্য। আমি বলেছি, আমার কিছু করার নাই, যেমন আছে হবে। আমি আমার ফ্যামিলিকেও এ রকম প্রস্তুত করে যাইনি। বলি যে, রেখে দিলে রেখে দেবে, নিয়ে গেলে নিয়ে যাবে। আমি খুব সহজভাবে দেখছিলাম যে, এটা নিয়তির খেলা। এটা যেভাবে হবার হবে। এটাতে প্রস্তুতি নিয়ে আমার কোনো কাজ নাই যে জেলে থাকলে এই করতে হবে, করব। এটা যখন কপালে আছে, এটা আমাকে করে যেতে হবে।
নূরুল কবীর: আপনি এইমাত্র বললেন যে, এটা একটা ভিন্ন জগৎ এবং এইভাবে জড়িয়ে পড়তে হবে; এ রকম একটা রাজনৈতিক দায়িত্ব রাষ্ট্র পরিচালনায়, সেটা আপনি চিন্তা করেননি।
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: আপনি ২০০৭ সালে যখন একটা পার্টি করতে গিয়েছিলেন, সেই সময় তো এটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবেই চিন্তা করেছিলেন। সেখানে যদি আপনি কনটিনিউ করতেন, আপনাকে তো রাজনৈতিক দায়িত্বই গ্রহণ করতে হতো।
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটার কারণ ছিল যে এখানে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না তখন, সবাই আমার বন্ধুবান্ধব সহযোগী, পরিচিত। সবাই বলছে, আপনি কিছু একটা করেন; পেছনে লেগে রইল...আপনি ছাড়া পারবে না কেউ, এই যা যা বলে আরকি আশপাশের লোকজন। এতে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে শেষে বললাম যে ঠিক আছে আমি করব এইটা। পথে আসতে-যেতে সাংবাদিকেরা ধরল। তখন আমি বলেছি, হ্যাঁ, আমি করব। এই দিয়ে শুরু হলো। তখন বেশির ভাগ সময় আমি আসা-যাওয়া করছিলাম বিভিন্ন জায়গায়, উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিলাম, চিটাগাং যাচ্ছিলাম। প্রতিবার এয়ারপোর্টে এই কথাবার্তা হচ্ছিল। আর কোথাও না। তখন একসময় ধরল যে তাহলে কী নাম দেবেন? আমি (বললাম) যে নাম ঠিক করি নাই। নাম ঠিক করলে আপনাদের জানাব। তখন বলল, নাম ঠিক না করে কীভাবে যান? তখন অবশ্য একটা নাম দিলাম, নাগরিক শক্তি। তারপর বুঝলাম যে এটা বেশ এগিয়ে যাচ্ছে জিনিসটা। তারপর সবাইরে বললাম যে এটার [ওপর] মতামত নাও। মতামত নেওয়ার ব্যাপারটি হলো, কোনো রকম এটা থেকে দূরে সরা যায় কি না, তার চেষ্টা। নাম হলো, মতামত হলো। তারপর আমি দেখলাম যে ঢুকে যাচ্ছি এর ভেতরে। যখন দশ সপ্তাহ হলো প্রায়, তখন বললাম যে না ভাই, আমি কোনো রাজনৈতিক দল করছি না, কিচ্ছু না। কাজেই আমার মাথার ভেতরে একদিন এই রাজনীতির মধ্য দিয়ে গিয়ে ক্ষমতায় যাব, এ রকম কোনো পরিকল্পনা ছিল না, এটা দীর্ঘমেয়াদি জিনিস।
নূরুল কবীর: কিন্তু রাজনৈতিক দল তো শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত...
মুহাম্মদ ইউনূস: ছিল। কিন্তু তখন আমি তো আসলে রাজনৈতিক দল করতে চাচ্ছিলাম না। ঠেকা দেবার জন্য এগুলো বলে যাচ্ছিলাম। শেষে মনে করলাম যে, এটা বেশ গভীরে চলে যাচ্ছে। তখন একদম পরিষ্কার বলে দিলাম। তখন সবাই হতবাক হয়ে গেছে। তখন আমার বন্ধুবান্ধব বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিলেন।
নূরুল কবীর: আপনি কি আলাপ করেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে?
মুহাম্মদ ইউনূস: কিচ্ছু করিনি। সে জন্য আরও হতবাক হলো। বলে যে আপনি কিছু বললেন না আমাদের! আমরা আপনার পেছনে ঘুরলাম এত দিন ধরে।
নূরুল কবীর: মনঃক্ষুণ্ন হবার কথা...
মুহাম্মদ ইউনূস: খুবই মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে তারা।
নূরুল কবীর: তারা এখন কি আনন্দে আছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: তারা কাছে আসে না। বলে আবার কোন দিকে নিয়ে যায় আমাদের।
নূরুল কবীর: ওই নাগরিক শক্তির সঙ্গে ছাত্রদের যে নাগরিক কমিটি, তার কোনো চিন্তা বা ভাবনার সম্পর্ক আছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: নাগরিক শব্দটা কমন আছে এটা দেখতেছি। আমার সঙ্গে তো আর কোনো আলোচনা হয় নাই, তারা কোথা থেকে শব্দ পেল না পেল।
নূরুল কবীর: এই শব্দটা যেকোনো লোক ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আপনার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করে নাই তারা?
মুহাম্মদ ইউনূস: পরামর্শ করে নাই।
নূরুল কবীর: আপনি প্রায়ই বলেন, কয়েকবারই বলেছেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে যে ছাত্ররা আপনাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে, তাদের ম্যান্ডেটের কারণে। ছাত্রসমাজ হিসেবে ৫ আগস্ট যে পরিমাণ তারা সমন্বিত ছিল, সংগঠিত এবং একাকার ছিল, এইটা যদি বিভক্ত হয়ে যায় তাদের উদ্দেশ্য সাধিত হয়ে যাওয়ার পর, এই অর্থে যে ইমিডিয়েট উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতন। তার পতনের পরে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বিভিন্ন রাজনীতি আছে। তারা যদি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে কিংবা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাত ঘটে, তখন আপনার ম্যান্ডেটটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা হলো অন্তর্বর্তী সরকার। আমি সেই সরকারের একটা অংশ। ওইটা হলো রাজনীতি। এই সরকারে আমি কত দিন আছি না আছি, সেটা একটা ব্যাপার। ওরা কী করছে, রাজনীতির কী ফল দাঁড়াবে, সেটা ভিন্ন জিনিস। এটা একজন নাগরিক হিসেবে ওরা চিন্তা করতে পারে যে কী হবে না হবে। কিন্তু সরকার হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি; যতটুকু আমার সাধ্যে কুলায়।

নূরুল কবীর: আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ওটা সংঘবদ্ধ ছাত্রসমাজের ম্যান্ডেট ছিল। সেই সংঘবদ্ধতাটা যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে...
মুহাম্মদ ইউনূস: দুর্বল হয়ে যাবে।
নূরুল কবীর: দুর্বল হয়ে যাবে?
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই দুর্বল হবে।
নূরুল কবীর: এ রকম সম্ভাবনা আপনি দেখেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় সম্ভাবনা তো থাকে। একটা দুর্বল হবে আরেকটা সবল হবে। এই টুকরা এই টুকরার সঙ্গে মিলবে। নানা রকম ঘটনা তো ঘটে।
নূরুল কবীর: অন্যান্য টুকরার কথা বলছেন। ধরুন, আমরা যাঁরা বাইরে থেকে দেখি, ওই অভ্যুত্থানে বিজয়ী ছাত্রনেতৃত্ব আপনাকে আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সেইটাকে সমর্থন করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা পাওয়ার কনটেন্ডার, তারা আপনাকে সহযোগিতা ও সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাহলে আপনি যখন প্রায়ই বলেন, ছাত্ররা আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছে, তখন আপনার কি মনে হয় যে অন্য দুইটা সেক্টর যারা সংগঠিত, নানানভাবে, তারা মনঃক্ষুণ্ন হতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: হতে পারে। কিন্তু বাস্তব তো তাই। আমাকে তো ডেকে এনেছে ছাত্ররা। কাজেই আমি সেভাবেই বলেছি, ছাত্ররা আমাকে নিয়োগ করেছে। এখন সবাই মিলে এটা সমর্থন করেছি আমরা। সেটা হলো বৃহত্তর একটা জিনিস। কিন্তু ইমিডিয়েট ছিল যে আমার সঙ্গে কথাটা হচ্ছে ছাত্রদের সঙ্গে। যাদের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নাই, জীবনে দেখিনি তাদেরকে, তাদের সঙ্গে আমার পরিচয়...সেভাবে আমি কথাটা জানিয়েছি। আমার বাস্তবটা জানিয়েছি। কাউকে মনঃক্ষুণ্ন করার জন্য, কাউকে আঘাত দেওয়ার জন্য এরা দেয় নাই, ওরা দিছে, ও রকম কিছু না।
নূরুল কবীর: না মানে, পাওয়ার ব্লক থাকে তো...
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই।
নূরুল কবীর: এই তিনটাই আপনার জন্য, দেশের মানুষের জন্য আপনার সরকারের অস্তিত্ব চলমান থাকার জন্য, জরুরি আমাদের মনে হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস: অবশ্যই, অবশ্যই।

নূরুল কবীর: আপনার এই যে প্রধান উপদেষ্টা পদের নাম, মানে নোমেনক্লেচার অব দি পজিশন, এইটা আপনি অ্যাগ্রি করলেন কেন? আপনি কাকে উপদেশ দেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: ওগুলো আমার মাথায় আসে নাই। নামটা কি উপদেষ্টা হলো না কী হলো। দায়িত্ব নিতে বলেছে, আমি দায়িত্ব নিয়েছি।
নূরুল কবীর: উপদেষ্টা হলো একটা পজিশন। উপদেষ্টা মানেই আপনি কাউকে উপদেশ দেন।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি এগুলোর ব্যাখ্যার মধ্যে যাই নাই। বলেছে, আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে এই সরকারের। আমি দায়িত্ব নিয়েছি। নামটা কী দিল না দিল, কোথা থেকে আসল...
নূরুল কবীর: একবারও মনে হয়েছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এগুলো বড় মনে হয়নি। কারণ, বলেছে যে এই ধরনের পরিস্থিতিতে এই ধরনের নামই হয়। কাজেই আমার চ্যালেঞ্জ করার কিছু নাই।
নূরুল কবীর: দুইটা ভিন্ন। একজন চিফ থাকে। চিফকে অন্যরা উপদেশ দেয়। তাহলে আপনি উপদেশদাতাদের মধ্যে প্রধান। কিন্তু কাকে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা চিন্তা করি নাই।
নূরুল কবীর: আপনি যে মন্ত্রিপরিষদ (উপদেষ্টা পরিষদ) তৈরি করলেন ছাত্রদের আহ্বানে, অন্যদের সমর্থনে, সেইখানে কি আপনার মন্ত্রিপরিষদ গঠনে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ছিল?
মুহাম্মদ ইউনূস: পরিপূর্ণ বলব না, এটা তো তাৎক্ষণিকভাবে হয়েছে। এটা এমন কিছু না যে চিন্তাভাবনা করে করা হয়েছে। কাজেই আমাকে যতটুকু বলা হয়েছে, আমি সেটা করেছি। অন্য কারা কী করল, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি।
নূরুল কবীর: পরামর্শগুলো কি এসব সেক্টর থেকে এসেছে আপনার কাছে বা কোনো রেকমেন্ডেশন সেটা আর্মি থেকে বা রাজনৈতিক দলের মধ্য থেকে?
মুহাম্মদ ইউনূস: না না না। ওই রকমভাবে কিছু আসে নাই। বলছে যে এরা এরা আছে। আপনি কারে কারে নেবেন। শপথ গ্রহণ করতে হবে আগামীকাল বা সেদিনেই, এ রকম অবস্থা। আমি তাৎক্ষণিকভাবে আমার পরিচিত যা নাম ছিল, সেগুলো দিয়েছি।
নূরুল কবীর: আপনার কাছে এই খবর নিশ্চয়ই আছে বা আপনার এজেন্সিগুলো এই খবর কি দেয় যে আপনার সরকারের যাঁরা সদস্য, তাঁদেরকে অন্তত দুটো ক্যাটাগরিতে জেনারেলি ভাগ করা যায়। এক পক্ষের ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে এনজিওস। সেখানে আপনার ব্যাপারে একটা সমালোচনা আছে যে চিটাগংয়ের লোক বেশি। কারণ, আপনার বাড়ি চিটাগং? আরেক পক্ষ হচ্ছে, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই থেকে অনেকে অনেক দূরে ছিলেন। এই তাঁদের কারণে এখন ঠিক স্টেটক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এই কথাগুলো কি আপনার কানে আসে?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় বলাবলি করে, সবাই বলছে। কাজেই এখানে না আসার কোনো কারণ নাই। এ জন্য বিব্রত হবারও কোনো কারণ নাই। সেভাবেই হয়েছে। নানা জায়গা থেকে আমরা এসেছি। আমারও তো কোনো অভিজ্ঞতা নাই। কাজেই ওদের দোষ দেব কী করে। আমাকে দেশ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার তো বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা নাই। আমি তো কোনো দিন এ ধরনের কাজে ছিলাম না। আমি যদি পারি, ওরাও পারবে, এটাই আমার ভরসা ছিল।
নূরুল কবীর: তাঁদের পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার কেমন...
মুহাম্মদ ইউনূস: নিজের পারফরম্যান্স নিয়েই আমার সন্দেহ। ওদের পারফরম্যান্স নিয়ে কী জিজ্ঞেস করব।
নূরুল কবীর: কিন্তু আপনারটা তো অন্যরা বলবে...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি বলব; আমি দেখছি তো।
নূরুল কবীর: আপনি কি আপনার পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। বলছি যে আমার তো সেই কোয়ালিটি নাই, করার জন্য যেটুকু দরকার ওটুকু নাই। যদিও সাধ্যমতো করি, যদি লেগে যায় তো ভালো। না হলে আমাদের কপাল খারাপ।

নূরুল কবীর: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে পরিমাণ সমঝোতা এবং যোগাযোগ থাকা দরকার বলে পত্রপত্রিকা বা অন্যান্য যাদেরকে আমরা বলতে শুনি, সেই পরিমাণ সমঝোতা এবং যোগাযোগ আপনার আছে বলে মনে হয়? আমাদের কাছে মনে হয়, কিছুটা দূরত্ব আছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমার কাছে মনে হয়, অবিশ্বাস্য রকম সমঝোতা-আত্মীয়তা-ঘনিষ্ঠতা আছে। এটা আমার কাছে অবাক লাগে। কাগজপত্রে দেখি তাঁরা একজনের বিরুদ্ধে একজন কটু কথা বলে। যখন সামনে আসে, সবাই কী আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেন! আমার কাছে অবাক লাগে এগুলো! মনে বড় সাহস লাগে। যখনই কথা বলি, ব্যক্তি হিসেবে যখন রাজনৈতিক দলের কারও সঙ্গে কথা বলি, অন্যরা কেউ নাই, একা সে। কিন্তু তার সঙ্গে যখন কথা বলি, কী রকম সমর্থন নিয়ে কথা বলে! আমি অভিভূত হয়ে যাই যে এত সমর্থন থাকা সত্ত্বেও এই দেশ চলছে না কেন! এর মধ্যে মাঝে মাঝে আবার কাগজপত্রে এ রকম কথাবার্তা [প্রকাশ] হয় কেন? এই দু রকম কেন?
নূরুল কবীর: কেন এমন হয় বলে আপনার মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় মনে হয়, এর একটা হলো রাজনৈতিক কথা। কিছু অঙ্গভঙ্গি আছে, যেগুলো রাজনীতিতে চালু হয়ে গেছে। এভাবে কথা না বললে রাজনৈতিক নেতা বলে মনে হয় না। ওভাবে, ওই শব্দে কথা বলতে হয়; ওই সুরে কথা বলতে হয়। টেলিভিশনে গেলে ওই কণ্ঠে কথা বলতে হয়। কিন্তু যেইমাত্র ব্যক্তি হিসেবে কথাবার্তা বলেন, তখন বলার ভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজেই সেটার আন্তরিকতা এবং সেটার ঘনিষ্ঠতা আমাকে অভিভূত করে। প্রতিবারই আমাকে অভিভূত করে।
নূরুল কবীর: একটা অন্য কথায় আসি। আপনার সরকার সেপ্টেম্বর মাসে সম্ভবত অক্টোবরে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাঁরা এই গণতন্ত্রের আন্দোলন এবং অভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেবেন। পরবর্তীকালে জুলাই ফাউন্ডেশন হলো। সেখান থেকেও কথা এসেছিল যে আহতদের এক লাখ টাকা করে এবং পাঁচ লাখ টাকা করে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তরুণ-তরুণী, ধনী-গরিব ও মধ্যবিত্তনির্বিশেষে তাঁদেরকে দেওয়া হবে। আপনি নিশ্চয়ই সচেতন আছেন যে, সেই প্রতিশ্রুতি পালিত হয় নাই এখনো। এটা কেন? ইতিমধ্যে আপনারা হাজার কোটি টাকা করে বিভিন্ন ব্যাংকে দিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় এক্সচেকার থেকে লুটপাটের কারণে যে সমস্ত ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের। কিন্তু যারা এই ব্যবস্থাকে বদলাল, তাদেরটা প্রায়োরিটিতে আসল না কেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: প্রায়োরিটিতে ছিল বলেই এত কথা ঘোষণা হলো। প্রায়োরিটিতে ছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায়নি। এগুলো হলো আদেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা। কীভাবে টাকা কার কাছ থেকে কোথায় যাবে? কীভাবে বিতরণ হবে? এগুলো নিয়ে। দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। যত টাকা লাগে তাদের, এই কমিটমেন্ট আছে এবং তাদের আমরা জীবৎকালে যত সমর্থন দরকার, যত পয়সাকড়ি দরকার, সবকিছুর জন্য কমিটমেন্ট আছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই; টাকারও কোনো অভাব নাই।
নূরুল কবীর: কত দিন লাগতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এখন আমার আগাম বলতে ভয় ভয় লাগে। যে কথা বলি, ওটায় পারি না তো শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাতে।
নূরুল কবীর: আপনার কথায় আন্তরিকতা তো মানুষ বিশ্বাস করে। আপনার অনুমান? অন্তত এটা তো খুবই একটা ইমিডিয়েট এবং প্রায়োরিটির মধ্যে থাকার কথা।
মুহাম্মদ ইউনূস: নিশ্চয়ই।
নূরুল কবীর: এটা কি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে হচ্ছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। কার হাত দিয়ে কীভাবে যাবে, কার কাছ থেকে কোথায় যাবে, এগুলো নিয়ে গোলমাল হচ্ছে। আর কিছু না।
নূরুল কবীর: তাতে আমলাতন্ত্রের কিছু হচ্ছে না। কিন্তু সরকার, আপনার সরকারের বদনাম হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা আমাদের সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা। আমি ব্যুরোক্রেসিকে (আমলাতন্ত্র) দোষ দেব না। তাদেরও নিয়মকানুন আছে। আমরা হয়তো সেই নিয়মকানুন বুঝি না বলে কানেকশনটা ঠিকমতো করতে পারি নাই।
নূরুল কবীর: আপনার জন্য কোনো টাইমলাইন বলা কি কঠিন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি আবার মাস, দিন একটা দিয়ে আবার বিব্রত হতে চাচ্ছি না আরকি।
নূরুল কবীর: সাম্প্রতিককালে আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করছেন, আমরাও লক্ষ করছি যে সরকারের যে গণতান্ত্রিক সংস্কারের কর্মসূচি এবং নির্বাচন—এই দুটিকে পরিপূরক না ভেবে একটা সাংঘর্ষিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে আলাপ-আলোচনার মধ্যে। এটা কি আপনাকে চিন্তিত করে?
মুহাম্মদ ইউনূস: না, এখনো সাংঘর্ষিক তো যায় নাই। আমরা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছিলাম, একটা ফর্মুলা দিয়েছিলাম, একটা প্রক্রিয়া তৈরি করেছিলাম। এটা কাজে লাগে কি না জানি না। প্রক্রিয়াটা হলো যে, কতগুলো কমিশন বসিয়ে দিয়েছি। প্রতিটা সাবজেক্টের ওপরে কমিশন বসিয়ে দিয়েছি। এ রকম ১৫টা কমিশন হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৬টা কমিশন প্রথম ঘোষণা করেছিলাম। ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। তারা ৯০ দিনে শেষ করতে পারে নাই। বলছে যে এক সপ্তাহ দেরি হতে পারে। সেটার কারণে আমাদের আয়োজন করতেও সময় লেগেছে। ঘোষণা করেছি, তাকে বসার জায়গা দিতে পারি নাই। কোথায় কে কার সঙ্গে পরিচয়, এসব করতে সময় লেগেছে। তারা ৯০ দিন পায় নাই সেই হিসাবে। কাজেই যদি ৭ তারিখে তারা দিয়ে দেয়, তাহলে জানুয়ারি ৭ তারিখের মধ্যে আমরা সেই ৬টা কমিশনের রিপোর্ট পাব। ওইখানে যাবতীয় সংস্কারসংক্রান্ত বিষয় দেওয়া থাকবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়েছে। তাহলে সংস্কারের রূপরেখাটা আমরা পেলাম। ইতিমধ্যে মতবিনিময় হয়েছে, তার মধ্যে কোনোটা টিকেছে, কোনোটা টিকে নাই। কমিশন মনে করেছে, যেটা এইগুলোই হলো আমাদের সারমর্ম। এগুলো পেয়ে গেলে তখন নিয়ে আসব বৃহত্তর সংলাপের জন্য। একটা সংলাপ সেদিন হয়েও গেল। যদিও কোনো রিপোর্ট আসেনি তবু প্রাথমিকভাবে একটা সংলাপ হলো। সবাইকে নিয়ে আলাপ করা—কোনটা পছন্দ, কোনটা অপছন্দ, কীভাবে অগ্রসর হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই বিষয়ভিত্তিক একটা বড় রকমের কনসেনসাস বিল্ডিং প্রসেস, যেটার জন্য আবার আলাদা একটা কমিশন ঘোষণা করলাম সেদিন। সেটা হলো এই ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের দিয়ে একটা কমিশন। আমি নিজে এটার চেয়ারম্যান হলাম এবং প্রফেসর আলী রীয়াজকে সহসভাপতি করলাম যে আমরা মিলে এটা একটা কনসেনসাস ডেভেলপ করার চেষ্টা করব। এই কনসেনসাসের প্রক্রিয়াটা আমাদের ঠিক করতে হবে। সমাজের কোন কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে কীভাবে আদান-প্রদান হবে, তাতে একটা সর্বমতসম্মত একটা কিছু বের করা যায় কি না। সবকিছুতে একমত না হলেও অন্তত কিছু বিষয়ে আশা করি একমত হওয়া যাবে। তখন সেটা হবে আমাদের সংস্কার। যেহেতু একমত হয়ে গেছে, তাহলে এটা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়ে যাবে— এইভাবে আমরা চিন্তা করছি।
নূরুল কবীর: এটা আবার কি মধ্য জানুয়ারিতে শুরু হতে পারে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আশা করছি। ডেফিনেটলি।
নূরুল কবীর: অর্থাৎ আপনার সরকারের নিজস্ব কোনো সংস্কার কর্মসূচি নাই...
মুহাম্মদ ইউনূস: এই তো এটাই আমাদের।
নূরুল কবীর: কিন্তু এটা তো বাইরে থেকে আসল...
মুহাম্মদ ইউনূস: বাইরে থেকে নিয়েই তো আমাদের হলো। এটা এভাবে একজনের মাথা থেকে তো আসবে না। ১০ জনের মাথা থেকে এসে নির্যাস হয়ে এটা আসল। তারপরও আবার সবার সঙ্গে আমি [কথা] বলছি।
নূরুল কবীর: আপনার ক্যাবিনেটে আপনাদের কি কোনো নিজস্ব চিন্তাভাবনা, কোনো সেক্টরে...?
মুহাম্মদ ইউনূস: আছে। কিন্তু সেটা কমিশনকে গিয়ে বলতে হবে। কারণ, মতামত সংগ্রহ করার দায়িত্ব হলো কমিশনের।
নূরুল কবীর: কিন্তু সরকারের নিজেদের কোনো নিজস্ব...
মুহাম্মদ ইউনূস: নিজস্ব কোনো প্রোগ্রাম নাই। আমরা তো রাজনৈতিক দল না যে আমাদের একটা নিজস্ব থাকবে। আমাদের একেকজনের একেক মত। একেকজন একেক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সেটা নিয়ে তো আমাদের কোনো অসুবিধা নাই।
নূরুল কবীর: এগুলো নিয়ে অনেক ভিন্নমত কি আপনার সরকারের মধ্যে...
মুহাম্মদ ইউনূস: এখনো তো দেখি নাই। সামনে আসলে দেখা যাবে, যখন তর্ক-বিতর্ক শুরু হবে—না, এটা আমরা মানি না।
নূরুল কবীর: আর আপনি এটা অনুমান করছেন...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি অনুমান করছি। কারণ, সব সময় সবাই যে একমত হবে, সে রকম তো কথা নেই। যেমন ধরেন, সেদিন সংলাপের জন্য আমাকে একটা বক্তৃতা দিতে বলেছিল। সেখানে বললাম যে সমঝোতা কীভাবে হবে। এটা একটা প্রক্রিয়া। বলতে গিয়ে বললাম, ধরুন, আমি মনে করি, ১৭ বছর বয়সে ভোটার হওয়া উচিত এবং আপনি সেটা ভিন্নমত পোষণ করেন। তাহলে আলাপ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, আপনার মতই টিকে গেল। আমারটা হলো না। আমি মেনে নেব সেটা। লোকে মনে করল যে, ১৭ বছর—এটা সরকার থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি তো ভাই এ রকম বলি নাই। আমি বললাম যে ধরুন, ১৭ বছর বয়স থেকে (ভোটার) হওয়া ভালো। এটা একটা মত।
নূরুল কবীর: সিদ্ধান্ত নয়...
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা সিদ্ধান্ত নয়। উদাহরণ হিসেবে এটা। তাহলে এটার সমঝোতাটা কীভাবে হবে? আপনাদের সবার মত এক রকম, আমার মত এক রকম। শেষ পর্যন্ত সবার মত যেদিকে, আমি সেদিকে যোগ দেব। সেটি হলো কনসেনসাস, সেটি হলো ঐকমত্য। এইভাবে আমরা অগ্রসর হতে চাই। সেটা অনেকে ভুল বোঝে। মনে করে যে সরকার থেকে ১৭ বছর লাগিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি বললাম যে না ভাই এ রকম তো বলি নাই আমি।
নূরুল কবীর: এ বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা নাই...
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে, আমরা লক্ষ করছি, তরুণদের একটি অংশ, যাঁরা নতুন একটা রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছেন, তরুণেরা যাঁরা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে তাঁরা সময় নিতে চায় নির্বাচনের জন্য। রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে যে সংস্কার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নির্বাচনপ্রক্রিয়াটা এগিয়ে আনা দরকার। কিন্তু তাঁদের কথাবার্তার মধ্যে সাম্প্রতিককালে পাবলিক ডিবেটের মধ্যে একধরনের তিক্ততাও তৈরি হয়েছে। আপনার নজরে এসেছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: খুব ভালো করে নজর এসেছে।
নূরুল কবীর: সেটা একটা দুশ্চিন্তার ব্যাপার নয় কি?
মুহাম্মদ ইউনূস: মোটেই না। ওই যে বললাম বাইরে এক রকম, ভেতরে আরেক রকম।
নূরুল কবীর: আচ্ছা, সে কারণে? তাঁরা শেষ পর্যন্ত একমত হয়ে যাবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: একমত হয়ে যাবে।
নূরুল কবীর: তরুণেরা মনে করেন, যাঁদের সম্পর্কে যেটা বলা আছে বা আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয় যে তাঁরা দলটা করবেন, দলের পরে কনস্টিটিউয়েন্সিগুলো বিল্ডআপ করবে, লোকগুলো তৈরি করবে, এই কারণে তার সময় দরকার। আর ঠিক সংস্কারটা মাথায় আছে। নিশ্চয়ই তাঁরা সংস্কার চান। এই মুহূর্তে ক্ষমতার রাজনীতিতে তাঁরা প্রায়োরিটি দিচ্ছেন, তাঁদের নিজস্ব সংগঠন তৈরি করে নির্বাচন করা। এ কারণেই অন্যরা মনে করে যে, শুধু অন্য একটা গ্রুপকে সময় দেওয়ার জন্য নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তা আপনি সেটার মধ্যে কোনো সমস্যা দেখছেন না।
মুহাম্মদ ইউনূস: সে জন্য ঘোষণা দিয়ে দিলাম। কতগুলো তারিখ দিয়ে দিলাম, যাতে এই সন্দেহ না থাকে। কারণ, যত কিছু টানতে চান না কেন, আমি তো ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি। হয় এখানে হবে, না হয় ওইখানে। দুটো তারিখ দিয়ে দিয়েছি।
নূরুল কবীর: কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তারপরও বলছে যে আরও সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে।
মুহাম্মদ ইউনূস: এর ভেতরে তারিখ চাচ্ছে; বাড়াতে চাচ্ছে না। এর ভেতরে তারিখ চাচ্ছে, কোন তারিখে করবেন। আমি বললাম যে, ওই প্রসেসটা অগ্রসর হতে আমরা দেখব। এটা তো আপনাকে বাদ দিয়ে দিলাম, এর বাইরে আমরা যাচ্ছি না, এইটা হলে এই পর্যন্ত, ওইটা হলে এই পর্যন্ত, এইভাবে আছে। কাজেই ওটা যে উনারা বুঝতেছে না তা (নয়), বোঝেন। তবু কথাটা বারে বারে বলছে যে, ইন কেইস আমরা এটা অতিক্রম করতে চাই।
নূরুল কবীর: তাহলে আপনাদেরকে চাপের মুখে রাখতে চান।
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা আমাদের জন্য ভালো।
নূরুল কবীর: যাদেরকে চাপের মুখে রাখতে চায়, তারা আবার এটা ঠিকই বোঝে...
মুহাম্মদ ইউনূস: বুঝব তো বটেই।
নূরুল কবীর: দে আর প্লেয়িং টু দ্য গ্যালারিজ...
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরাও চাই যে চাপের মধ্যে থাকি। কারণ, আমাদের ভেতরেও তো নানা মত থাকতে পারে।
নূরুল কবীর: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
মুহাম্মদ ইউনূস: সে জন্যই একটা বাঁধ দিয়ে দেওয়া হলো। এই পর্যন্তই, এর ভেতর থেকে আমাদের যা কিছু করতে হবে। এমন না যে কেউ বলে—না, পাঁচ বছর লাগবে। এটা সংস্কার করতে ভালো লাগছে না— এমন যেন বলতে না পারে। যে যা কিছু করতে হয় এর মধ্যে হতে হবে। এই সংস্কারের জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, এই দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপেই করতে হবে, আরও ছয় মাস বাড়াতে হবে, বললাম যে না এর ভেতরেই সবকিছু করতে হবে। কাজেই এই যে একটা বাঁধ দেওয়াটা, এটা খুব দরকারি জিনিস আমাদের জন্য। এর মধ্যে আমরা যেন সবকিছু সম্পন্ন করতে পারি।
নূরুল কবীর: আপনার মন্ত্রিপরিষদের তরুণ সদস্যদের কেউ কেউ এসব ব্যাপারে পাবলিক স্টেটমেন্ট করার পর অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন এবং সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একটা অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে—এ রকম কিছু স্টেটমেন্ট এসেছে। আপনি কি পরিষদ সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: ক্রমাগত আলাপ হয় এবং সেটার জন্য আমাদের একটা প্রক্রিয়াও আছে, যাতে করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা আলাপ করি।
নূরুল কবীর: পরিষদ সদস্যদের পাবলিক স্টেটমেন্টের জন্য যে ভুল-বোঝাবুঝি...
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়। সাংবাদিকদের সামনে গিয়ে কী বলতে কী বলে ফেলে, আমাদের তো অভ্যাস নাই। কাজেই একটু গোলমাল হয়ে যায়। পরে আবার বলে যে না আমি ওইভাবে বলি নাই, আমার বলা এভাবে ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে ঐকমত্যের কোনো অভাব নেই। আমরা যেগুলো বলছি, সেগুলো সম্বন্ধে আমরা একমতেই আছি। এটার মধ্যে কোনো অসুবিধা নেই।
নূরুল কবীর: আপনার সর্বশেষ বক্তৃতায় দুটো পোলাইট অ্যাডমিশন ছিল, আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে ও দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে। সরকার যে পরিমাণ আশা করেছে, সেই পরিমাণ সাফল্য আসে নাই, সেটাও বেশ কয়েক দিন হয়ে গেল। এগুলোর জন্য বিশেষভাবে আপনারা নতুন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন বা চিন্তা করছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সব সময় তো চেষ্টা করি। এটা তো আজকের সমস্যা না। এটা বরাবরেরই সমস্যা।
নূরুল কবীর: কোনো স্পেসিফিক স্টেপস, দ্রব্যমূল্যের জন্য...
মুহাম্মদ ইউনূস: একটা হলো আইনশৃঙ্খলা, আরেকটা হলো বাজারমূল্য (দ্রব্যমূল্য)। বাজারমূল্যের জন্য যত রকমের বুদ্ধি আছে, সবকিছু আমরা করেছি, আমাদের বুদ্ধিতে যত দূর কুলিয়েছে।
নূরুল কবীর: যেমন কী কী...
মুহাম্মদ ইউনূস: যেমন প্রতিদিনের খবর। কোন বাজারে কত টাকা উঠল, কত টাকা কমল, বাজারভিত্তিক। এমন না যে সারা বাংলাদেশের...অমুক বাজারে কত, অমুক বাজারে...তার মধ্যে রকমফের হয়। কেন রকমফের হচ্ছে। একসঙ্গে কেন এক বাজারে পড়ছে, আরেক বাজারে উঠতেছে, সেটা দেখা।
নূরুল কবীর: সেটা তো অ্যানালাইসিস হিসেবে ভালো। কিন্তু অ্যানালাইসিসের যে রেজাল্ট, সেইটার জন্য আপনারা অ্যাকশন কী নিয়েছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: অ্যাকশনের জন্য হলো যে, যেগুলো মাথায় বুদ্ধি আছে, সেগুলো প্রয়োগ করা। যেমন ট্রাক দিয়ে দেওয়া যে ট্রাকে মাল আসুক। বিআরটিসির কাছে ট্রাক আছে। ট্রাক নিয়ে আসি। ট্রাক দিয়ে মাল আসতে থাকুক। কোথায় কোথায় বাজারে এগুলো উঠছে। সেখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। এই যে চাঁদাবাজির বিষয় আছে। চাঁদাবাজিটা কমানো যায় কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। যা আপনারা দেখতেছেন, একই জিনিস আমাদের কাছে।
নূরুল কবীর: উত্তর বাংলায় যে ফুলকপির দাম দুই টাকা, ঢাকার বাজারে ৪০ টাকা। বরাবরই পুলিশ থেকে শুরু করে মিডিয়া সব সময় বলেছে যে, পথে পথে যে চাঁদাবাজি হয়, তাতে খরচটা বেড়ে যায়। এটা আপনার সরকারও জানে। কিন্তু নতুন করে একদল চলে যাওয়ার পর আরেক দল চাঁদাবাজদের দেখতে পাচ্ছি। তাদের কেউ গ্রেপ্তার হয় নাই এই অপরাধে। তার মানে কী?
মুহাম্মদ ইউনূস: গ্রেপ্তার হইছে কি না আমি জানি না। কিন্তু এটার সমাধান হয়নি।
নূরুল কবীর: কিন্তু গ্রেপ্তার হচ্ছে না। ডিটার করার [থামানোর] জন্য সরকারের পদক্ষেপ থাকলে এটা তো চলবার কোনো কারণ নাই। এগুলো সাধারণত রাজনৈতিক দলের যারা সংগঠিত শক্তি, তারাই করে। আপনারা কি রাজনৈতিক দলগুলোকে অসন্তুষ্ট করতে চান না?
মুহাম্মদ ইউনূস: আইনের ক্ষেত্রে...দল অসন্তুষ্ট হলে, সারা দেশ অসন্তুষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নূরুল কবীর: আমরা এই বিষয়ে এই ধরনের অপরাধের জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাউকে গ্রেপ্তার হতে দেখি নাই। এটা আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা হয়তো ধরতে পারছি না তাদেরকে এখনো জুতমতো।
নূরুল কবীর: এটা কি বিশ্বাসযোগ্য হবে, প্রকাশ্য রাস্তার মধ্যে বাজারের মধ্যে বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি। সবাই দেখতে পাচ্ছে স্যার। সরকার দেখতে পাচ্ছে না কেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: সরকারের চোখ অত পরিষ্কার না আরকি।
নূরুল কবীর: পত্রপত্রিকার রিপোর্টগুলো আরও বাড়লে কি আরেকটু পরিষ্কার হবে বলে মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: যত বলা যায়, তত ভালো হবে, একটু সতর্ক হবে সবাই।
নূরুল কবীর: আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমার কোনো প্রশ্ন আছে, আমি বড় স্যারের সঙ্গে কথা বলব।...উনি বলছেন, যে সিন্ডিকেটগুলো আছে সরকারের জানার কথা। তারা কোথায় স্টক করে, সেগুলো রেইড করলেই পারে। নাগরিক হিসেবে বা আমার স্ত্রীর এই প্রশ্নের আপনার কী উত্তর?
মুহাম্মদ ইউনূস: উত্তর হলো, যে সিন্ডিকেটে এই মাল আনা-নেওয়া করে, আমরা চেষ্টা করছি যে বাইরে যারা আছে, সিন্ডিকেটের বাইরে, তাদেরকে কী কী সুবিধা দিলে তারা এই ব্যবসায় আসত। ব্যবসা যে আমরা দুজনে মিলে ঠিক করলাম যে আমরা মাল আনব, আমরা বিক্রি করব। এটাকে কোন আইনে আপনি...
নূরুল কবীর: তারা যখন আর্টিফিশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করে তখন...
মুহাম্মদ ইউনূস: সেটা যদি মাল গুদামে রেখে দেয়, বাজারে বিক্রি না করে, তখন গিয়ে ধরতে পারেন।
নূরুল কবীর: আপনার সরকার কি এগুলো খেয়াল করেছে, গুদামে...লক্ষ করেছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: ওই যে বললাম, সবকিছু খেয়াল করে। ওই যে তথ্য সংগ্রহ করা দামের কথা বললাম, স্টকের কথা বললাম। কে কোথায় এলসি খুলতেছে, সেই রিপোর্ট আমাদের কাছে আসে। কোন মাল খালাস হচ্ছে, কোন দিন কোথায় স্টক হচ্ছে, সেগুলো সংগ্রহ করা এবং তদারক করা যে মাল কি ওই গুদামে রয়ে গেছে, না ছেড়ে দিচ্ছে।
নূরুল কবীর: আপনারা কোনো অসংগতি দেখতে পাচ্ছেন না?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা এগুলো করছি বলেই তারা তাড়াতাড়ি এগুলো ছাড়ার চেষ্টা করে, এই গুদাম থেকে আরেক গুদামে নিয়ে যায় হয়তো। বাজারে দিচ্ছে না, চালাকির কাজ।
নূরুল কবীর: এই চালাকিটার জন্য তো কোটি কোটি গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূস: বহু বহু গরিব মানুষ, সবাই।
নূরুল কবীর: মানেটা হচ্ছে যে এই ব্যবধান থাকবার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
মুহাম্মদ ইউনূস: ঠিক।
নূরুল কবীর: এবং সেইটা প্রধানত সরকারের দেখবার বিষয়।
মুহাম্মদ ইউনূস: ডেফিনেটলি।
নূরুল কবীর: মানুষের অভিযোগ হচ্ছে, সরকার এটা ইন ফ্যাক্ট দেখছে না। আপনি সেটা ফিল করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি ফিল করি, ডেফিনিটলি।
নূরুল কবীর: এই সরকারের বিরুদ্ধে...রাষ্ট্র তো কিছু প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজনে কঠোর হয়। আপনাদের বিরুদ্ধে সুশীলতার অভিযোগ আছে, কঠোর হচ্ছেন না।
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা আমাদের সাধ্যমতো কঠোর হয়ে...হয়তো যে কঠোর মানুষের মনে আছে, অত দূর হতে পারছি না। কিন্তু আমরা যে এত দিন যত কঠোর হইনি, অত কঠোর এখন হতে চাচ্ছি।
নূরুল কবীর: আমরা একটু অন্যদিকে যাই। এটা আমরা সবাই জানি, এখানে যে বাংলাদেশে এত বড় একটা রাজনৈতিক রক্তাক্ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কিছু আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সেটাকে আমাদের পাশের দেশ ভারত একধরনের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং নানান কথা বলছে। এটা আমরা ঠিক জাতীয়তাবাদী চৈতন্য থেকে নয়, দেশকে ভালোবাসি বলে নয়, তথ্য বিকৃতি হিসেবে নানান জায়গা থেকে এগুলো মিডিয়া, এটা সাধ্যমতো বলছে। কিন্তু সেটার একটা হচ্ছে মিডিয়ার লড়াই। আরেকটা হচ্ছে যে, বস্তুত ফাংশনাল ডিপ্লোমেসিতে আপনার এই কদিনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে একটা সুষ্ঠু ওয়ার্কিং রিলেশন তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে কি আমরা এগোতে পেরেছি?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমরা বরাবর চেষ্টা করছি ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পর্ক [গড়ে] তোলা এবং তাদের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরার। প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে আলাপ হলো, উনিই ফোন করেছিলেন, তখন উনি অভিযোগ করলেন যে এখানে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে ইত্যাদি। আমি বললাম যে, এটা অতিরঞ্জিত কতগুলো সংবাদ আপনার কাছে যাচ্ছে। কাজেই এটা আপনি বিশ্বাস করেন না। যদি আপনি প্রকৃত তথ্য জানতে চান, আপনি আপনাদের সাংবাদিকদের পাঠান। এখানে আসুক। তাঁরা দেখুক। দেখে রিপোর্ট করুক। কাজেই আমাদের তথ্যগুলো যদি আস্থায় আনতে না চান, তাহলে এটি প্রকৃত পরিস্থিতি। পরে অনেকে এসেছিলেন। ভারতীয় সাংবাদিক এখানে এসেছেন। তাঁরা রিপোর্ট করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে করে অতিরঞ্জন থেকে বাঁচা যায়। কিন্তু কিছু সংবাদ আছে, এগুলো কোনো অতিরঞ্জনের বিষয় না। এটা একেবারে গাঁজাখোরি কতগুলো কথা নিয়ে যাচ্ছে। সেটা তারে সামনে দেখায়ে দিলেও হবে না। তো সে রকম তারা চলছে, নানা রকম আজগুবি সংবাদ দিচ্ছে। পরে যখন তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয়...এবার তাঁদের পররাষ্ট্রসচিব যখন আসলেন, তখন বললাম যে এ রকম কেন হচ্ছে? তো বলল যে, ওটা আমাদের রাষ্ট্রের সরকারের বিষয় নয়। সরকার এটার মধ্যে জড়িত না। এগুলো মিডিয়ার বিষয়। এগুলো আমাদের আওতার বাইরে। কাজেই সরকার এটা থেকে দূরে চলে গেল। সেটা আমাদের জন্য একটা বড় অ্যাচিভমেন্ট। এত দিন সরকার এটার মধ্যে জড়িত ছিল বলে অনেকটা প্রকাশ করছিল। এখন সর্বপ্রথম (বলা হলো) এটা আমাদের না। আমরাও চেষ্টা করছি, আমাদের তথ্যগুলো তাদের কাছে দেওয়ার জন্য। এখন মনে হয় ইন্টারন্যাশনাল কাভারেজ ইত্যাদির কারণে অত বেশি জুত করতে পারছে না। দিচ্ছে, এখনো খবর দিচ্ছে উল্টাপাল্টা খবর দিচ্ছে। কিন্তু জুত করতে পারছে না। যেহেতু আন্তর্জাতিক সাংবাদিকেরা রিপোর্ট করছেন। আগে বলছিল যে এটা ইসলামিস্ট একটা অভ্যুত্থান হয়েছে, এটা তালেবানদের হাতে চলে গেছে ইত্যাদি। এখন পত্রপত্রিকায় ইন্টারন্যাশনাল কাগজপত্রে যখন আসছে, ওখানেও তারা সুবিধা করতে পারছে না ওরকম বলে। কিছু কাগজে দেখাল, এখানে ক্যাবিনেটের মধ্যে কারা কারা আছে? তাঁদের যে পরিচিতি দিল, কেউ বিশ্বাস করবে না যে এটা ইসলামিস্টদের গোষ্ঠীর। কাজেই ওগুলো ফেলেও দিতে পারছে না। কাজেই যতই তারা করুক না কেন, এই ধরনের যে প্রোপাগান্ডা যেগুলো ছিল, প্রচারণা যেটা ছিল, সেটা আগের থেকে অনেক কমেছে। তাতে সব রকমের প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে—এটা বলব না। এ[ক]টা প্রচারণা আছেই।
নূরুল কবীর: ভারত রাষ্ট্রের দিক থেকে কোনো হোস্টাইলিটি টের পান আপনি?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। আমাদের তো রাষ্ট্রীয় দিক থেকে কোনো হোস্টাইলিটি নাই অন্তত। এই যে বললাম তারা পরিষ্কারভাবে বলল যে এটার সঙ্গে আমাদের [ভারত সরকারের] কিছু না। আমাদের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক। আমাদের [ভারত সরকারের] বক্তব্যের মধ্যে এগুলা নাই। আমরা বলেছি যে আমাদের সম্পর্ক খুব গভীর সম্পর্ক হতে হবে এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হতে হবে। এখন মেঘ জমেছে, মেঘটা কাটিয়ে উঠতে হবে। এটা বলছে, মেঘটা কাটানোর জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে, উভয় পক্ষে। সেটা আমরা চেষ্টা করি।
নূরুল কবীর: মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হওয়ার জন্য আপনার সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনবার একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অফিশিয়ালি চিঠি দিয়েছেন আপনারা। আপনার ধারণা, একটা রিজনেবল টাইম বলে আর কত দিনের মধ্যে উত্তর আশা করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমার কোনো ধারণা নেই, এগুলোর কত দিন সময় লাগবে।
নূরুল কবীর: আপনার ফরেন মিনিস্ট্রি নিশ্চয়ই আপনাকে...
মুহাম্মদ ইউনূস: না, এখনো জিজ্ঞেস করিনি, কত দিন লাগবে। আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এখন দেখব, তারা কী জবাব দেয়? তারা জবাব দিচ্ছে কি না, এটা ফলোআপ করব। ডেফিনেটলি একটা গতি নেবে এটা।
নূরুল কবীর: অনুমান, কত দিন পরে আপনারা আবার চিঠি দেবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা একটা সময়ের ব্যাপার। মাসখানেক বলেন। আমরা ফলোআপ করব। দেখেন কী কী হয়।
নূরুল কবীর: আমরা আরেকটু পশ্চিমে যাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনেক ভালো সম্পর্ক। এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যাবিনেটে ইন্ডিয়ান বর্ন সাতজন মন্ত্রী আছেন বলে শোনা যায়। আপনার সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্ক ভালো বলে মানুষ মনে করে। তাঁদের এই সম্পর্ক কি আমাদের দেশে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে কোনো ক্ষতির কারণ হবে বলে আপনি আশঙ্কা করেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: হতে পারে; কারণ, এত ঘনিষ্ঠতা থাকলে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যদি ওইখানে ক্ষমতায় থাকে, তার একটা প্রভাব তো হতেই পারে। এবং ইতিমধ্যে তার প্রভাবের কিছু নমুনাও আমরা দেখেছি। কাজেই আমরা দেখছি, এটা কোন দিকে যায়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেই যে সে ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এমনও কোনো কথা নাই। সে হয়তো আমাদের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পারে। আমরা দেখছি, সেগুলো কীভাবে আমরা বার করতে পারি যে কারা কারা আমাদের দিকে সহানুভূতিশীল হবে। কীভাবে আমরা তাদের সহানুভূতিটা পেতে পারি। নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে গড়ে তোলা যায়। পুরোনো সরকারের সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল; ভালো সম্পর্ক ছিল। নতুন সরকারের সঙ্গে আমরা একই রকম ভালো সম্পর্ক করার জন্য চেষ্টা করব।
নূরুল কবীর: ইতিমধ্যেই কি কাজকর্ম এই ব্যাপারে শুরু হয়েছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা নিয়ম। আমাদের করতে হয়। যখন নতুন সরকার আসে, তার সঙ্গে একটা যোগাযোগ স্থাপন করা যেগুলো ডিপ্লোমেটিক পর্যায়ে হয়। গিয়ে আলাপ-সালাপ করে। ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলের বাইরে হয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের খাতিরে। ওইখানে যাঁরা হোয়াইট হাউসে আছেন, তাঁদের সঙ্গে যাঁদের যোগাযোগ আছে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। কীভাবে করতে হবে? নানাভাবে হয়। বিভিন্ন চ্যানেলে যোগাযোগগুলো করতে হয়।
নূরুল কবীর: আপনি ইতিমধ্যে সার্কের একটা ইফেকটিভ রিভাইভালের কথা প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশের তরফ থেকে। তাতে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হয়?
মুহাম্মদ ইউনূস: অন্য দেশের যাঁরা আছেন, তাঁরাও চান সার্কের অন্যান্য দেশের মধ্যে...কিন্তু ভারত এটাতে খুব সাড়া দিচ্ছে না। তারা ব্যাখ্যা করে যে আমাদের [ভারত] সমস্যা হলো পাকিস্তানকে নিয়ে। তো আমি যেটা ব্যাখ্যা করি যে একটা দেশের সঙ্গে সমস্যা হলেই পুরো জিনিসটা বিকল হয়ে যাবে, এটা তো ঠিক হবে না। আমরা চেষ্টা করি, ওইটাও সমাধান হোক। অথবা ওই সমস্যাকে পৃথকভাবে দেখে বাকি সব সম্পর্ককে আমরা গড়ে তুলি। এখনো এটার কোনো...
নূরুল কবীর: রেসপন্স?
মুহাম্মদ ইউনূস: রেসপন্স...
নূরুল কবীর: দেখা যায় না?
মুহাম্মদ ইউনূস: না।
নূরুল কবীর: আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যেটা আমার দেশের মানুষ জানতে চায়। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর টাকা আওয়ামী লীগ আমলে পাচার হয়েছে। আপনি তার জন্য একটা কমিশনের মতো করেছেন। এই টাকাপয়সা ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতির ইঙ্গিত কি পাচ্ছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: একসাথে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়ে গেলে আমরা নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করতে পারব। এ রকম একটা আইন আছে। আইনের মাধ্যমে এটা করব। সব টাকা হয়তো ফেরত আসবে না। কিছু টাকা ফেরত আসবে যদি আমরা সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো পাই। সে প্রচেষ্টাগুলো হচ্ছে।
নূরুল কবীর: সাক্ষ্যপ্রমাণের ব্যাপারে কাজকর্ম চলছে...
মুহাম্মদ ইউনূস: একদম। খুব ডেডিকেটেড একটা আলাদা ইউনিট আছে, তাদের কাজই হলো এগুলো উদ্ধার করা। এটা প্রথম থেকে শুরু হয়েছে। যেহেতু আমরা জানি, যে রকম টাকা গেছে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে গেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে ধরাটা একটু সহজ হবে হয়তো। যেগুলো স্যুটকেস ভরে নিয়ে গেছে, মুশকিল আছে সেগুলো ধরা। কিন্তু এগুলো তো চ্যানেলের ব্যাপার। যারা এক্সপার্টস আছে, যারা এই কাজগুলো করে, তারাও বলতেছে, হ্যাঁ, এটা সম্ভব। কিন্তু সম্ভব বলে কত দিন আমরা বসে থাকব, এটাই হলো বিষয় আরকি। এটার আইনগত বিষয় আছে। কী সাক্ষ্যপ্রমাণ? তারা কী চায়? কীভাবে এটা আইডেনটিফাই হবে? কার কাছে গেল? আইন ভঙ্গ করে গেল? কিছু কিছু আশা মাঝে মাঝে পাই যে এটা হবে। এখনো চূড়ান্ত কিছু পাইনি।
নূরুল কবীর: মানে, আমাদের আশা করবার কারণ আছে...
মুহাম্মদ ইউনূস: আশা করার কারণ আছে। অবশ্যই কারণ আছে।
নূরুল কবীর: কী রকম সময় লাগবে বলে আপনার ধারণা?
মুহাম্মদ ইউনূস: তাদের কথা তো কিছু বুঝতে পারি না। এটার যে একটা স্ট্যান্ডলাইন আছে, এর মধ্যে গিয়ে এটা শেষ হবে, এটা এখনো বুঝি নাই যে এটা কত দিন লাগতে পারে। আমি একটা আন্দাজে বলে দিতে পারি আপনাকে। কিন্তু আমার মনে হয় না, সেটা বলা ঠিক হবে।
নূরুল কবীর: সামনের নির্বাচনের পরে এই যে এ রকম দায়িত্ব শেষ করবার পরে পরবর্তীকালে কী করার প্ল্যান আপনার?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমি তো বরাবরই বলছি যে আমি যে [এখানে, এটা] সাময়িক বিষয় ছিল। আমি এই দায়িত্ব পালন করে আমার পুরোনো আনন্দের জগতে ফিরে যাব।
নূরুল কবীর: এই অভিজ্ঞতার ওপর কোনো বই লেখার পরিকল্পনা আছে আপনার?
মুহাম্মদ ইউনূস: না। এ রকম চিন্তা করিনি। আপনি বইয়ের কথা মনে করিয়ে দিলেন! আমি দিন কাটানো নিয়ে ব্যস্ত আছি।
নূরুল কবীর: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেবার জন্য।
মুহাম্মদ ইউনূস: অসংখ্য ধন্যবাদ।

নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৭ ঘণ্টা আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান। নাটকটি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেতা।
বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

‘ভাসানে উজান’ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
দস্তয়ভস্কির বিখ্যাত ছোটগল্প দ্য জেন্টেল স্পিরিট অবলম্বনে এই নাটক। দস্তয়ভস্কি মানেই মানুষের অন্তর্লোকের গভীরতম স্তরে প্রবেশ। ভাসানে উজান আমার জন্য শুধুই একটি নাটক নয়, এটি একধরনের আত্মসংলাপ। এই গল্পে ঢুকতে গিয়ে আমাকে বারবার নিজের ভেতরের অচেনা কোণগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ ছাড়া অপূর্বদার নাট্যরূপে সাহিত্যের সৌন্দর্য যেমন অটুট আছে, তেমনি আছে মঞ্চের ভাষা। আর শুভাশীষদার নির্দেশনা ছিল ধ্যানের মতো—নীরব, গভীর এবং সংযত। এই দুজনের সমন্বয় আমাকে অভিনয়ে আরও সংযমী করেছে।
ভাসানে উজানের চরিত্রটি উপস্থাপনে মানসিকভাবে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
এই চরিত্রটি বাহিরের নয়, ভেতরের অভিনয় দাবি করে। এখানে কান্না নেই, চিৎকার নেই—আছে চাপা অপরাধবোধ আর নীরব অনুশোচনা। এই নীরবতাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। আমি মনে করি, আজকের মানুষ ভেতরে ভেতরে খুব একা। ভাসানে উজান সেই একাকিত্বের আয়না। দর্শক যদি নিজের ছায়াটা একটু দেখতে পান, সেটাই আমাদের সাফল্য।
চতুর্থ প্রদর্শনীতে এসে ভাসানে উজান নাটকে কি কোনো পরিবর্তন বা পরিণতি এসেছে?
প্রতিটি প্রদর্শনীতেই নাটকটা একটু একটু করে বদলায়। আমি নিজেও বদলাই। দর্শকের নিশ্বাস, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে নাটকটি আরও পরিণত হয়ে ওঠে।
একক অভিনয়ে দীর্ঘ সময় মঞ্চে থাকতে হয়, সঙ্গ দেওয়ার কেউ থাকে না। এই একাকিত্বকে কীভাবে অনুভব করেন?
একাকিত্ব এখানে শূন্যতা নয়, বরং একধরনের গভীর উপস্থিতি। দর্শক, আলো, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে এক অদৃশ্য সংলাপ তৈরি হয়। সেই সংলাপই আমাকে টেনে নেয় পুরো সময়জুড়ে।
দীর্ঘ দুই দশকের নাট্যচর্চার পরেও কি নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নতুন করে ভয় বা উত্তেজনা কাজ করে?
ভয় না থাকলে অভিনয় মৃত হয়ে যায়। প্রতিটি প্রদর্শনীর আগে আমি নতুন করে ভয় পাই, এই ভয় আমাকে সৎ রাখে, জীবিত রাখে একজন অভিনেতা হিসেবে।
ভবিষ্যতে একক নাটক ও থিয়েটার নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
আমি চাই, থিয়েটার আরও স্থির হোক, আরও গভীর হোক। একক নাটক নিয়ে আরও গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাই, যেখানে অভিনয় হবে আত্মানুসন্ধানের একটি মাধ্যম।
মঞ্চ ও টেলিভিশনের আসন্ন কাজ নিয়ে দর্শকদের জন্য কী বলতে চান?
আমার অভিনীত নাটকগুলোর নিয়মিত প্রদর্শনী চলছে। পাশাপাশি নতুন একটি রেপার্টরি নাটকে যুক্ত হচ্ছি। এ ছাড়া কয়েকটি টেলিভিশন নাটকের কাজও শেষের পথে। নাটকগুলো শিগগির দর্শকদের সামনে আসবে।
‘ভাসানে উজান’ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
দস্তয়ভস্কির বিখ্যাত ছোটগল্প দ্য জেন্টেল স্পিরিট অবলম্বনে এই নাটক। দস্তয়ভস্কি মানেই মানুষের অন্তর্লোকের গভীরতম স্তরে প্রবেশ। ভাসানে উজান আমার জন্য শুধুই একটি নাটক নয়, এটি একধরনের আত্মসংলাপ। এই গল্পে ঢুকতে গিয়ে আমাকে বারবার নিজের ভেতরের অচেনা কোণগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ ছাড়া অপূর্বদার নাট্যরূপে সাহিত্যের সৌন্দর্য যেমন অটুট আছে, তেমনি আছে মঞ্চের ভাষা। আর শুভাশীষদার নির্দেশনা ছিল ধ্যানের মতো—নীরব, গভীর এবং সংযত। এই দুজনের সমন্বয় আমাকে অভিনয়ে আরও সংযমী করেছে।
ভাসানে উজানের চরিত্রটি উপস্থাপনে মানসিকভাবে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
এই চরিত্রটি বাহিরের নয়, ভেতরের অভিনয় দাবি করে। এখানে কান্না নেই, চিৎকার নেই—আছে চাপা অপরাধবোধ আর নীরব অনুশোচনা। এই নীরবতাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। আমি মনে করি, আজকের মানুষ ভেতরে ভেতরে খুব একা। ভাসানে উজান সেই একাকিত্বের আয়না। দর্শক যদি নিজের ছায়াটা একটু দেখতে পান, সেটাই আমাদের সাফল্য।
চতুর্থ প্রদর্শনীতে এসে ভাসানে উজান নাটকে কি কোনো পরিবর্তন বা পরিণতি এসেছে?
প্রতিটি প্রদর্শনীতেই নাটকটা একটু একটু করে বদলায়। আমি নিজেও বদলাই। দর্শকের নিশ্বাস, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে নাটকটি আরও পরিণত হয়ে ওঠে।
একক অভিনয়ে দীর্ঘ সময় মঞ্চে থাকতে হয়, সঙ্গ দেওয়ার কেউ থাকে না। এই একাকিত্বকে কীভাবে অনুভব করেন?
একাকিত্ব এখানে শূন্যতা নয়, বরং একধরনের গভীর উপস্থিতি। দর্শক, আলো, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে এক অদৃশ্য সংলাপ তৈরি হয়। সেই সংলাপই আমাকে টেনে নেয় পুরো সময়জুড়ে।
দীর্ঘ দুই দশকের নাট্যচর্চার পরেও কি নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নতুন করে ভয় বা উত্তেজনা কাজ করে?
ভয় না থাকলে অভিনয় মৃত হয়ে যায়। প্রতিটি প্রদর্শনীর আগে আমি নতুন করে ভয় পাই, এই ভয় আমাকে সৎ রাখে, জীবিত রাখে একজন অভিনেতা হিসেবে।
ভবিষ্যতে একক নাটক ও থিয়েটার নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
আমি চাই, থিয়েটার আরও স্থির হোক, আরও গভীর হোক। একক নাটক নিয়ে আরও গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাই, যেখানে অভিনয় হবে আত্মানুসন্ধানের একটি মাধ্যম।
মঞ্চ ও টেলিভিশনের আসন্ন কাজ নিয়ে দর্শকদের জন্য কী বলতে চান?
আমার অভিনীত নাটকগুলোর নিয়মিত প্রদর্শনী চলছে। পাশাপাশি নতুন একটি রেপার্টরি নাটকে যুক্ত হচ্ছি। এ ছাড়া কয়েকটি টেলিভিশন নাটকের কাজও শেষের পথে। নাটকগুলো শিগগির দর্শকদের সামনে আসবে।

প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, সংস্কার ও বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী বছরের প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়ার কোনো ঘাটতি নেই। গত ২৯ ডিসেম্বর (২০২৪) ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বাং
০৭ জানুয়ারি ২০২৫
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে পর্দার আড়ালের সেই অভিজ্ঞতাগুলোই তুলে ধরেছেন মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল ইসলাম

কীভাবে আপনি সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন?
প্রতিটি স্বপ্নের পেছনে একটি করে গল্প থাকে। আমার সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণারও তেমনি একটি গল্প আছে। সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার আগেও ছোটবেলা থেকে আমার বড় মামাকে দেখেছি, তাঁর কথা বলার স্টাইল ছিল ভীষণ হৃদয়গ্রাহী, যা মানুষকে খুব কাছে টানত। ঠিক তখন থেকেই বড় মামা হয়ে যান আমার সুপার হিরো। আমিও চেষ্টা করতাম তেমন করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তারপর দেখলাম এর সেরা উপায় হলো সংবাদ উপস্থাপক হওয়া। তাঁদের সুন্দর করে কথা বলাটা আমার পছন্দ হতো। সেখান থেকেই মূলত অনুপ্রাণিত হওয়া। তা ছাড়া আমার মরহুম আব্বুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা এবং আমার আম্মুর নীরব সমর্থন আমাকে এ পেশায় আসতে সহযোগিতা করেছে।
শুরুতে সংবাদ উপস্থাপনার প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি কেমন ছিল?
ছোটবেলা থেকেই কবিতা আবৃত্তি করতাম। সেটাও বড় মামার হাত ধরেই। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, তখন থেকেই চিন্তা করতাম এখানে শুদ্ধ উচ্চারণের বিকল্প নেই। তাই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে টিএসসিভিত্তিক একটি আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেখানেও নিউজ প্রেজেন্টেশনের ক্লাস হতো। তারপর শুধু নিউজ প্রেজেন্টেশনের জন্য একটা একাডেমিতে ভর্তি হই। সেখানে ভর্তি ফি ছিল ৭ হাজার টাকা। পুরোটা দেওয়ার সামর্থ্য তখন ছিল না। তাই তাদের বলেছিলাম, ইনশা আল্লাহ একদিন নিউজ প্রেজেন্টার হয়ে আপনাদের এখানে ফ্রি ক্লাস নেব। সেই থেকে মনের মধ্যে ইচ্ছাটাও প্রবল হয়েছিল।
প্রথমবার লাইভ নিউজ উপস্থাপন করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রথমবার একটা অনলাইন টিভিতে নিউজ পড়েছিলাম। তাদেরও অভিষেক হয়েছিল আমাকে দিয়ে। তাই উচ্ছ্বাসটা দু’পক্ষেরই একটু বেশি ছিল। আমি তাদের গ্রুমিং করা প্রেজেন্টারদের মধ্যে প্রথম ছিলাম। নিজেকে প্রথম কোনো পর্দায় দেখে কি যে ভালো লেগেছিল, তা বলার ভাষা নেই।
উপস্থাপনায় ভাষা, উচ্চারণ ও টোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
এ পেশাটা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে একটু আলাদা। এমনকি বাচিক যেকোনো পেশার চেয়েও। যেমন কাস্টমার কেয়ার, কিংবা কল সেন্টার থেকেও। এখানে ভুল উচ্চারণের কোনো মার্সি বা ক্ষমা নেই। তবে এখানে সংবাদের ভিন্নতার কারণে টোনের পরিবর্তন করতে হয়। নিউজের ভিন্ন ভিন্ন আবেদন টোনের ওঠানামায় ফুটিয়ে তুলতে হয়। টোনের ভেরিয়েশনের কারণে দর্শকের কানও প্রশান্তি পায়।
সংবাদ উপস্থাপনায় সময় ব্যবস্থাপনা বা কলাকৌশল কীভাবে পালন করেন?
এখানে সময় ব্যবস্থাপনাটা সবার আগে। প্রতিটি ন্যানো সেকেন্ডের মূল্য এখানে দিতে হয়। নিউজ শুরুর অনেক আগেই একজন প্রেজেন্টারকে স্টেশনে হাজির থাকতে হয়। সবকিছু বুঝে নিতে হয়। নিউজ শুরু হলে তো তাঁকে আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হয় সময় সম্পর্কে। কারণ প্রতিটি টাইমফ্রেম এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
লাইভ সম্প্রচারে হঠাৎ সময় পরিবর্তন হলে কীভাবে সামলান?
লাইভ নিউজে যেকোনো কিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রেজেন্টারদের কানে একটা গোপন টকব্যাক লাগানো থাকে। যার সঙ্গে পিসিআর অর্থাৎ প্রডিউসার কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রডিউসার যেকোনো আপডেট নিউজ টকব্যাকে জানিয়ে দেন। সেটার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। খুব ঠান্ডা মাথায় যেকোনো ব্রেকিং বুঝে তারপর ডেলিভারি দিতে হয়।
উপস্থাপনার সময় ঘড়ি বা প্রম্পটার দেখে কীভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ করেন?
পুরো নিউজটা একটা টাইমফ্রেমে বাঁধা থাকে। বিশেষ কারণ ছাড়া এর বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি নিউজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ থাকে। সেটা বিবেচনা করেই নিউজ পড়ার গতি নির্ধারণ করতে হয়। সময় কন্ট্রোল করার জন্য পিসিআর এবং এমসিআর-মাস্টার কন্ট্রোল রুম সদা তৎপর থাকে। সেভাবেই একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে চলতে হয়।
ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার কৌশল কী?
আত্মবিশ্বাসটা অনেক কিছুর সমন্বিত একটা রূপ। যেকোনো ভালো প্রিপারেশন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এখানে একজন নিউজ প্রেজেন্টারের ভালো প্রিপারেশন অনেক কিছুর সমন্বয়ে হয়ে থাকে। যেমন তাঁর উচ্চারণ, নিউজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা। নিউজ রুম, পিসিআর, এমসিআর, রানডাউন (যেখানে নিউজের ধারাবাহিকতা সাজানো থাকে) সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাঁর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে।
ভুল হয়ে গেলে কীভাবে পরিস্থিতি সামলান?
লাইভ নিউজে ভুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বারবার একই ভুল যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। ভুল হলে দর্শকের কাছে বিনয়ের সঙ্গে সেটি উপস্থাপন করাটাও ভালো প্রেজেন্টারের কাজ। দর্শকের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হয়।
লাইভ নিউজে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এলে আপনার মানসিক কৌশল কেমন থাকে?
লাইভ নিউজে প্রতিটি সেকেন্ডই চ্যালেঞ্জের। যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে মাথা সম্পূর্ণ ঠান্ডা রেখে সামলাতে হয়। মানসিকভাবে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। আমি সব সময় একটা কথা বলি, একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে একটা লোকাল বাসের ড্রাইভারের ভূমিকা পালন করতে হয়। লোকাল বাসের ড্রাইভারকে যেমনিভাবে হরেক রকমের যাত্রীর কথা শুনেও হেলপারের সহযোগিতায় সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে হয়, তেমনি প্রেজেন্টারকেও পিসিআরের শত কথা কানে নিয়েও প্রডিউসারের সঠিক দিকনির্দেশনায় টিভি স্টেশন চালাতে হয়। মনে রাখতে হয়, একজন নিউজ প্রেজেন্টার একটি নিউজ বুলেটিনের লাস্ট গেটওয়ে। তাই তাঁকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়।
দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে আপনি কীভাবে সংবাদ উপস্থাপন করেন?
আমি তো ভাবি, আমি একজন দর্শকের ঘরের লোক। ভাবি নিউজের মাধ্যমে আমি গ্রামের একজন চাষি থেকে শুরু করে দেশের প্রধানের সঙ্গেও নিউজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকি। প্রতিটি সংবাদের আলাদা আবেদন আছে। চেষ্টা করি সেটাকে সেভাবেই উপস্থাপনের। দর্শক যেমন আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করে, তেমনি সেভাবেই তার মনোজগতের কথা চিন্তা করে সংবাদ পরিবেশনের চেষ্টা করি।
সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে আপনি কতটা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন?
শিশু আর পাগল ছাড়া সবারই নিজস্ব মতাদর্শ আছে। এটা যেমন সঠিক, তেমনি সংবাদিকদেরও নিজস্ব মতাদর্শ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাঁকে শতভাগ সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কারণ দর্শক পক্ষপাতদুষ্ট নিউজ প্রেজেন্টার কিংবা সাংবাদিক কাউকেই পছন্দ করেন না। সচেতন দর্শকও চান না তাঁর দলের হয়ে সাংবাদিক কথা বলুক। তিনিও চান সাংবাদিক তাঁর নিউজে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখুক। তাই এসব ব্যাপার মাথায় রেখেই আমাদের চলতে হয়।
যারা ভবিষ্যতে সংবাদ উপস্থাপক হতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। আমার মনে আছে, যখন থেকে সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য মনস্থির করেছি, তখন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও নিউজের লিংক পড়তাম। চেষ্টা করতাম কতটা হৃদয়গ্রাহী করে একটা সংবাদ উপস্থাপন করা যায়। তাই আমার কাছে মনে হয়, সঠিক রাস্তা চিনে লেগে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই। সেটা ভিন্নভাবে হলেও। তবে পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। সেটা কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে।
সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কোন গুণ বা দক্ষতা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন?
সবার আগে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে মনস্থির করা। শখের বসে নয়। আপনাকে কোনো একটি পেশায় টিকে থাকতে হলে সে পেশার উপযোগী যত গুণ আছে, সেগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন নিজের উচ্চারণ ঠিক রাখ, আঞ্চলিকতা পরিহার করা। সর্বোপরি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
কীভাবে আপনি সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন?
প্রতিটি স্বপ্নের পেছনে একটি করে গল্প থাকে। আমার সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণারও তেমনি একটি গল্প আছে। সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার আগেও ছোটবেলা থেকে আমার বড় মামাকে দেখেছি, তাঁর কথা বলার স্টাইল ছিল ভীষণ হৃদয়গ্রাহী, যা মানুষকে খুব কাছে টানত। ঠিক তখন থেকেই বড় মামা হয়ে যান আমার সুপার হিরো। আমিও চেষ্টা করতাম তেমন করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তারপর দেখলাম এর সেরা উপায় হলো সংবাদ উপস্থাপক হওয়া। তাঁদের সুন্দর করে কথা বলাটা আমার পছন্দ হতো। সেখান থেকেই মূলত অনুপ্রাণিত হওয়া। তা ছাড়া আমার মরহুম আব্বুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা এবং আমার আম্মুর নীরব সমর্থন আমাকে এ পেশায় আসতে সহযোগিতা করেছে।
শুরুতে সংবাদ উপস্থাপনার প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি কেমন ছিল?
ছোটবেলা থেকেই কবিতা আবৃত্তি করতাম। সেটাও বড় মামার হাত ধরেই। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, তখন থেকেই চিন্তা করতাম এখানে শুদ্ধ উচ্চারণের বিকল্প নেই। তাই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে টিএসসিভিত্তিক একটি আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেখানেও নিউজ প্রেজেন্টেশনের ক্লাস হতো। তারপর শুধু নিউজ প্রেজেন্টেশনের জন্য একটা একাডেমিতে ভর্তি হই। সেখানে ভর্তি ফি ছিল ৭ হাজার টাকা। পুরোটা দেওয়ার সামর্থ্য তখন ছিল না। তাই তাদের বলেছিলাম, ইনশা আল্লাহ একদিন নিউজ প্রেজেন্টার হয়ে আপনাদের এখানে ফ্রি ক্লাস নেব। সেই থেকে মনের মধ্যে ইচ্ছাটাও প্রবল হয়েছিল।
প্রথমবার লাইভ নিউজ উপস্থাপন করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রথমবার একটা অনলাইন টিভিতে নিউজ পড়েছিলাম। তাদেরও অভিষেক হয়েছিল আমাকে দিয়ে। তাই উচ্ছ্বাসটা দু’পক্ষেরই একটু বেশি ছিল। আমি তাদের গ্রুমিং করা প্রেজেন্টারদের মধ্যে প্রথম ছিলাম। নিজেকে প্রথম কোনো পর্দায় দেখে কি যে ভালো লেগেছিল, তা বলার ভাষা নেই।
উপস্থাপনায় ভাষা, উচ্চারণ ও টোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
এ পেশাটা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে একটু আলাদা। এমনকি বাচিক যেকোনো পেশার চেয়েও। যেমন কাস্টমার কেয়ার, কিংবা কল সেন্টার থেকেও। এখানে ভুল উচ্চারণের কোনো মার্সি বা ক্ষমা নেই। তবে এখানে সংবাদের ভিন্নতার কারণে টোনের পরিবর্তন করতে হয়। নিউজের ভিন্ন ভিন্ন আবেদন টোনের ওঠানামায় ফুটিয়ে তুলতে হয়। টোনের ভেরিয়েশনের কারণে দর্শকের কানও প্রশান্তি পায়।
সংবাদ উপস্থাপনায় সময় ব্যবস্থাপনা বা কলাকৌশল কীভাবে পালন করেন?
এখানে সময় ব্যবস্থাপনাটা সবার আগে। প্রতিটি ন্যানো সেকেন্ডের মূল্য এখানে দিতে হয়। নিউজ শুরুর অনেক আগেই একজন প্রেজেন্টারকে স্টেশনে হাজির থাকতে হয়। সবকিছু বুঝে নিতে হয়। নিউজ শুরু হলে তো তাঁকে আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হয় সময় সম্পর্কে। কারণ প্রতিটি টাইমফ্রেম এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
লাইভ সম্প্রচারে হঠাৎ সময় পরিবর্তন হলে কীভাবে সামলান?
লাইভ নিউজে যেকোনো কিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রেজেন্টারদের কানে একটা গোপন টকব্যাক লাগানো থাকে। যার সঙ্গে পিসিআর অর্থাৎ প্রডিউসার কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রডিউসার যেকোনো আপডেট নিউজ টকব্যাকে জানিয়ে দেন। সেটার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। খুব ঠান্ডা মাথায় যেকোনো ব্রেকিং বুঝে তারপর ডেলিভারি দিতে হয়।
উপস্থাপনার সময় ঘড়ি বা প্রম্পটার দেখে কীভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ করেন?
পুরো নিউজটা একটা টাইমফ্রেমে বাঁধা থাকে। বিশেষ কারণ ছাড়া এর বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি নিউজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ থাকে। সেটা বিবেচনা করেই নিউজ পড়ার গতি নির্ধারণ করতে হয়। সময় কন্ট্রোল করার জন্য পিসিআর এবং এমসিআর-মাস্টার কন্ট্রোল রুম সদা তৎপর থাকে। সেভাবেই একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে চলতে হয়।
ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার কৌশল কী?
আত্মবিশ্বাসটা অনেক কিছুর সমন্বিত একটা রূপ। যেকোনো ভালো প্রিপারেশন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এখানে একজন নিউজ প্রেজেন্টারের ভালো প্রিপারেশন অনেক কিছুর সমন্বয়ে হয়ে থাকে। যেমন তাঁর উচ্চারণ, নিউজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা। নিউজ রুম, পিসিআর, এমসিআর, রানডাউন (যেখানে নিউজের ধারাবাহিকতা সাজানো থাকে) সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাঁর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে।
ভুল হয়ে গেলে কীভাবে পরিস্থিতি সামলান?
লাইভ নিউজে ভুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বারবার একই ভুল যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। ভুল হলে দর্শকের কাছে বিনয়ের সঙ্গে সেটি উপস্থাপন করাটাও ভালো প্রেজেন্টারের কাজ। দর্শকের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হয়।
লাইভ নিউজে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এলে আপনার মানসিক কৌশল কেমন থাকে?
লাইভ নিউজে প্রতিটি সেকেন্ডই চ্যালেঞ্জের। যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে মাথা সম্পূর্ণ ঠান্ডা রেখে সামলাতে হয়। মানসিকভাবে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। আমি সব সময় একটা কথা বলি, একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে একটা লোকাল বাসের ড্রাইভারের ভূমিকা পালন করতে হয়। লোকাল বাসের ড্রাইভারকে যেমনিভাবে হরেক রকমের যাত্রীর কথা শুনেও হেলপারের সহযোগিতায় সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে হয়, তেমনি প্রেজেন্টারকেও পিসিআরের শত কথা কানে নিয়েও প্রডিউসারের সঠিক দিকনির্দেশনায় টিভি স্টেশন চালাতে হয়। মনে রাখতে হয়, একজন নিউজ প্রেজেন্টার একটি নিউজ বুলেটিনের লাস্ট গেটওয়ে। তাই তাঁকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়।
দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে আপনি কীভাবে সংবাদ উপস্থাপন করেন?
আমি তো ভাবি, আমি একজন দর্শকের ঘরের লোক। ভাবি নিউজের মাধ্যমে আমি গ্রামের একজন চাষি থেকে শুরু করে দেশের প্রধানের সঙ্গেও নিউজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকি। প্রতিটি সংবাদের আলাদা আবেদন আছে। চেষ্টা করি সেটাকে সেভাবেই উপস্থাপনের। দর্শক যেমন আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করে, তেমনি সেভাবেই তার মনোজগতের কথা চিন্তা করে সংবাদ পরিবেশনের চেষ্টা করি।
সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে আপনি কতটা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন?
শিশু আর পাগল ছাড়া সবারই নিজস্ব মতাদর্শ আছে। এটা যেমন সঠিক, তেমনি সংবাদিকদেরও নিজস্ব মতাদর্শ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাঁকে শতভাগ সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কারণ দর্শক পক্ষপাতদুষ্ট নিউজ প্রেজেন্টার কিংবা সাংবাদিক কাউকেই পছন্দ করেন না। সচেতন দর্শকও চান না তাঁর দলের হয়ে সাংবাদিক কথা বলুক। তিনিও চান সাংবাদিক তাঁর নিউজে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখুক। তাই এসব ব্যাপার মাথায় রেখেই আমাদের চলতে হয়।
যারা ভবিষ্যতে সংবাদ উপস্থাপক হতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। আমার মনে আছে, যখন থেকে সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য মনস্থির করেছি, তখন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও নিউজের লিংক পড়তাম। চেষ্টা করতাম কতটা হৃদয়গ্রাহী করে একটা সংবাদ উপস্থাপন করা যায়। তাই আমার কাছে মনে হয়, সঠিক রাস্তা চিনে লেগে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই। সেটা ভিন্নভাবে হলেও। তবে পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। সেটা কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে।
সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কোন গুণ বা দক্ষতা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন?
সবার আগে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে মনস্থির করা। শখের বসে নয়। আপনাকে কোনো একটি পেশায় টিকে থাকতে হলে সে পেশার উপযোগী যত গুণ আছে, সেগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন নিজের উচ্চারণ ঠিক রাখ, আঞ্চলিকতা পরিহার করা। সর্বোপরি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, সংস্কার ও বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী বছরের প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়ার কোনো ঘাটতি নেই। গত ২৯ ডিসেম্বর (২০২৪) ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বাং
০৭ জানুয়ারি ২০২৫
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৭ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’। আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশে প্যানোরামা বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে বর্ষণ অভিনীত দুটি সিনেমা। ইমতিয়াজ বর্ষণের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাব আহমেদ।
শিহাব আহমেদ

দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে ওয়েব ফিল্ম অমীমাংসিত। কেমন লাগছে?
আমরা অভিনয়শিল্পীরা কাজ করি দর্শকের জন্য। সেই কাজটা অনেক দিন আটকে থাকা অবশ্যই কষ্টের। অবশেষে ওয়েব ফিল্মটি দর্শক দেখতে পারবেন, এটাই সবচেয়ে ভালো লাগার। সিনেমাটিতে রহস্যের গন্ধ রয়েছে। রহস্যজনকভাবে কে বা কারা খুন করেছে, এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এটি বানিয়েছেন রায়হান রাফী। ভিজ্যুয়াল লুকেও দর্শক নতুনত্ব পাবেন।
ওটিটি কনটেন্ট হওয়ার পরেও গত বছর তৎকালীন সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল সিনেমাটি। অনেকেই বলছেন এটি নির্মিত হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আপনিও কি মনে করেন এই কারণেই এটি আটকে দেওয়া হয়েছিল?
একদম তাই। সবাই যেটা ধারণা করেছে, সেই কারণেই সিনেমাটি এত দিন আটকে ছিল। তৎকালীন সেন্সর বোর্ড গল্পটি সেনসেটিভ ভেবে সিনেমাটি আটকে দিয়েছিল। মুক্তির আগে এর বেশি এখন বলতে চাই না।
এটা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক আলোচনা। দর্শকেরও আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন?
প্রতিটি কাজই শিল্পী ও নির্মাতাদের একধরনের প্রেশার ক্রিয়েট করে। আমি নিজেও যেকোনো কাজ মুক্তির আগে চাপ অনুভব করি। দর্শক কীভাবে নেবেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। আমরা তো আসলে দর্শকদের ভালো লাগার জন্য, তাঁদের বিনোদন দেওয়ার জন্য কাজ করি। দর্শকের সন্তুষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। অভিনেতা হিসেবে সব সময় আশা রাখি আমার কাজটি যেন দর্শকের ভালো লাগে, গুণে মানে যেন সবার মনঃপূত হয়।
ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহেও আপনার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সেই সিনেমা নিয়ে কিছু বলুন।
‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’ নামের সিনেমাটি বানিয়েছেন আহমেদ হাসান সানি। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন, এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের গল্প নিয়ে সিনেমা। আমাদের দেশের রাজনীতির হালচাল দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফুটে উঠেছে রাজনীতি নিয়ে মানুষের ভাবনা। আমাদের দেশে অনেক রেস্টুরেন্ট বা আড্ডার স্থানে লেখা থাকে এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ বা করা যাবে না। আমি মনে করি, এটা মিস কনসেপ্ট। রাজনৈতিক আলাপ প্রতিটি জায়গায় হওয়া উচিত। কারণ, আমরা কেউ রাজনীতির বাইরে নই। প্রতিটি মানুষ রাজনীতির অংশ। সেটা সচেতনভাবে হোক কিংবা অসচেতনভাবে। যারা সচেতন, তারা একটু দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সক্রিয় থাকে। কিন্তু যারা রাজনৈতিকভাবে অসচেতন বা কেয়ারলেস, তাদেরও একটা ভূমিকা থাকে।
এটা আহমেদ হাসান সানির প্রথম সিনেমা। নির্মাতা হিসেবে কেমন লাগল তাঁকে?
এর আগে আহমেদ হাসান সানির নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। তবে নির্মাতা হিসেবে আগে থেকেই তাঁকে চিনি। উনি একজন আধুনিক নির্মাতা, তাঁর ভাবনাও আধুনিক। ছোটখাটো বিষয়েও সমান খেয়াল রাখেন তিনি। চিত্রনাট্য, অ্যাক্টিং, সেট—সব ব্যাপারেই তিনি খুঁতখুঁতে। এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি সিনেমাটি দেখার সময় দর্শক তাঁর যত্নের ছাপ দেখতে পাবেন। আমি বিশ্বাস করি, ওনার কাছ থেকে ভালো মানের আরও কাজ পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি ছাড়পত্র পেয়েছে আপনার আরেক সিনেমা ‘যাপিত জীবন’। সেই সিনেমার গল্প কী নিয়ে?
এটি একটি পিরিয়ডিকাল সিনেমা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গল্প। এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, রোকেয়া প্রাচী, আশনা হাবিব ভাবনা প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি এবং যাপিত জীবন সিনেমা দুটি ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে প্রদর্শিত হবে। কেমন অনুভূতি?
২০২০ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার কোনো না কোনো সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এটা আমার জন্য আনন্দের ও গর্বের। এ বছর দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে। শুনছি দুটি সিনেমাই ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে। এটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ভিন্ন সময়ে সিনেমা দুটি মুক্তি পেলে ভালো হতো।
সিনেমা মুক্তি নিয়ে এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন নির্মাতাদের?
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি নিয়ে নির্মাতার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ওনারা সিনেমার মুক্তি ও প্রমোশন নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার কথা আমাকে জানিয়েছেন। যাপিত জীবন নিয়ে আমি অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তাই কথা হয়নি।
‘রবি ইন ঢাকা’ নামের সিনেমার শুটিং করছেন। এ সিনেমাটি নিয়ে বলুন।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই সিনেমার শুটিং শিডিউল আছে। এরপর একটা বিরতি নিয়ে শুরু হবে পরের লটের শুটিং। এই সিনেমার গল্পটিও সমকালীন। নতুন প্রজন্মের কথা আছে। আসলে আমরা যেই সময়েই বসবাস করি না কেন, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। এই শহরে অনেক মানুষ দেখি যাদের দূর থেকে দেখলে মনে হয় সুখে আছে। কিন্তু আসলে তাদের ভেতরে অনেক কষ্ট। নানা ধরনের কষ্টের মাঝেও আমরা এই শহরে আনন্দ খুঁজে বেড়াই। এমন একটা গল্প নিয়েই রবি ইন ঢাকা। গল্পে মিস্ট্রি আছে, সাসপেন্সও আছে। পরিচালনা করছেন রাজীব সালেহীন।
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে ওয়েব ফিল্ম অমীমাংসিত। কেমন লাগছে?
আমরা অভিনয়শিল্পীরা কাজ করি দর্শকের জন্য। সেই কাজটা অনেক দিন আটকে থাকা অবশ্যই কষ্টের। অবশেষে ওয়েব ফিল্মটি দর্শক দেখতে পারবেন, এটাই সবচেয়ে ভালো লাগার। সিনেমাটিতে রহস্যের গন্ধ রয়েছে। রহস্যজনকভাবে কে বা কারা খুন করেছে, এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এটি বানিয়েছেন রায়হান রাফী। ভিজ্যুয়াল লুকেও দর্শক নতুনত্ব পাবেন।
ওটিটি কনটেন্ট হওয়ার পরেও গত বছর তৎকালীন সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল সিনেমাটি। অনেকেই বলছেন এটি নির্মিত হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আপনিও কি মনে করেন এই কারণেই এটি আটকে দেওয়া হয়েছিল?
একদম তাই। সবাই যেটা ধারণা করেছে, সেই কারণেই সিনেমাটি এত দিন আটকে ছিল। তৎকালীন সেন্সর বোর্ড গল্পটি সেনসেটিভ ভেবে সিনেমাটি আটকে দিয়েছিল। মুক্তির আগে এর বেশি এখন বলতে চাই না।
এটা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক আলোচনা। দর্শকেরও আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন?
প্রতিটি কাজই শিল্পী ও নির্মাতাদের একধরনের প্রেশার ক্রিয়েট করে। আমি নিজেও যেকোনো কাজ মুক্তির আগে চাপ অনুভব করি। দর্শক কীভাবে নেবেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। আমরা তো আসলে দর্শকদের ভালো লাগার জন্য, তাঁদের বিনোদন দেওয়ার জন্য কাজ করি। দর্শকের সন্তুষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। অভিনেতা হিসেবে সব সময় আশা রাখি আমার কাজটি যেন দর্শকের ভালো লাগে, গুণে মানে যেন সবার মনঃপূত হয়।
ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহেও আপনার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সেই সিনেমা নিয়ে কিছু বলুন।
‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’ নামের সিনেমাটি বানিয়েছেন আহমেদ হাসান সানি। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন, এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের গল্প নিয়ে সিনেমা। আমাদের দেশের রাজনীতির হালচাল দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফুটে উঠেছে রাজনীতি নিয়ে মানুষের ভাবনা। আমাদের দেশে অনেক রেস্টুরেন্ট বা আড্ডার স্থানে লেখা থাকে এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ বা করা যাবে না। আমি মনে করি, এটা মিস কনসেপ্ট। রাজনৈতিক আলাপ প্রতিটি জায়গায় হওয়া উচিত। কারণ, আমরা কেউ রাজনীতির বাইরে নই। প্রতিটি মানুষ রাজনীতির অংশ। সেটা সচেতনভাবে হোক কিংবা অসচেতনভাবে। যারা সচেতন, তারা একটু দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সক্রিয় থাকে। কিন্তু যারা রাজনৈতিকভাবে অসচেতন বা কেয়ারলেস, তাদেরও একটা ভূমিকা থাকে।
এটা আহমেদ হাসান সানির প্রথম সিনেমা। নির্মাতা হিসেবে কেমন লাগল তাঁকে?
এর আগে আহমেদ হাসান সানির নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। তবে নির্মাতা হিসেবে আগে থেকেই তাঁকে চিনি। উনি একজন আধুনিক নির্মাতা, তাঁর ভাবনাও আধুনিক। ছোটখাটো বিষয়েও সমান খেয়াল রাখেন তিনি। চিত্রনাট্য, অ্যাক্টিং, সেট—সব ব্যাপারেই তিনি খুঁতখুঁতে। এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি সিনেমাটি দেখার সময় দর্শক তাঁর যত্নের ছাপ দেখতে পাবেন। আমি বিশ্বাস করি, ওনার কাছ থেকে ভালো মানের আরও কাজ পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি ছাড়পত্র পেয়েছে আপনার আরেক সিনেমা ‘যাপিত জীবন’। সেই সিনেমার গল্প কী নিয়ে?
এটি একটি পিরিয়ডিকাল সিনেমা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গল্প। এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, রোকেয়া প্রাচী, আশনা হাবিব ভাবনা প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি এবং যাপিত জীবন সিনেমা দুটি ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে প্রদর্শিত হবে। কেমন অনুভূতি?
২০২০ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার কোনো না কোনো সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এটা আমার জন্য আনন্দের ও গর্বের। এ বছর দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে। শুনছি দুটি সিনেমাই ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে। এটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ভিন্ন সময়ে সিনেমা দুটি মুক্তি পেলে ভালো হতো।
সিনেমা মুক্তি নিয়ে এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন নির্মাতাদের?
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি নিয়ে নির্মাতার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ওনারা সিনেমার মুক্তি ও প্রমোশন নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার কথা আমাকে জানিয়েছেন। যাপিত জীবন নিয়ে আমি অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তাই কথা হয়নি।
‘রবি ইন ঢাকা’ নামের সিনেমার শুটিং করছেন। এ সিনেমাটি নিয়ে বলুন।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই সিনেমার শুটিং শিডিউল আছে। এরপর একটা বিরতি নিয়ে শুরু হবে পরের লটের শুটিং। এই সিনেমার গল্পটিও সমকালীন। নতুন প্রজন্মের কথা আছে। আসলে আমরা যেই সময়েই বসবাস করি না কেন, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। এই শহরে অনেক মানুষ দেখি যাদের দূর থেকে দেখলে মনে হয় সুখে আছে। কিন্তু আসলে তাদের ভেতরে অনেক কষ্ট। নানা ধরনের কষ্টের মাঝেও আমরা এই শহরে আনন্দ খুঁজে বেড়াই। এমন একটা গল্প নিয়েই রবি ইন ঢাকা। গল্পে মিস্ট্রি আছে, সাসপেন্সও আছে। পরিচালনা করছেন রাজীব সালেহীন।

প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, সংস্কার ও বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী বছরের প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়ার কোনো ঘাটতি নেই। গত ২৯ ডিসেম্বর (২০২৪) ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বাং
০৭ জানুয়ারি ২০২৫
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৭ ঘণ্টা আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। নিলয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নিজের অসামান্য কৃতিত্বের নেপথ্যের গল্প জানিয়েছেন আজকের পত্রিকাকে। তার কথাগুলো শুনেছেন ইলিয়াস শান্ত।
ইলিয়াস শান্ত

গত ২৭ অক্টোবর আইইউটির ৩৭ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি এতে অংশ নিয়েছেন। আপনার বিভাগ ও ফলাফল সম্পর্কে বলুন।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে আমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। প্রথম সেমিস্টারে একটি কোর্সে এ+ পাইনি। তাই সেই সেমিস্টারে আমার জিপিএ ছিল ৩.৯৭। তবে এরপরের সাতটি সেমিস্টারেই আমি ধারাবাহিকভাবে ৪.০০ পেয়েছি।
দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর আমার সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৯৮। তৃতীয় সেমিস্টারের পর হয় ৩.৯৯। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমিস্টারে ৪ ধরে রাখতে পারলেও সিজিপিএ তখনও ৩.৯৯ ছিল। শেষ পর্যন্ত সপ্তম সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর সিজিপিএ অবশেষে ৪–এ পৌঁছায়। তখন সত্যিই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। এরপর শেষ বা অষ্টম সেমিস্টারেও একই পারফরম্যান্স ধরে রাখার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ সেটাও সম্ভব হয়। ফলে আমি সিজিপিএ ৪ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পেরেছি।
এমন সাফল্যের কৃতিত্ব কাকে দিতে চান?
সবার আগে আমি আমার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ জানাচ্ছি। তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে। প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এরপর আমার শিক্ষকদের কথা, যাদের দিকনির্দেশনা ও আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে প্রতিটি ধাপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর আমার বন্ধুদের কথাও বলতে হবে। এই চার বছরের যাত্রায় আমার বন্ধুরা সবসময় পাশে থেকেছে–কখনো সহায়তায়, কখনো বা মোটিভেশনে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা আর আমার প্রচেষ্টায় এ জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
আপনার বড় বোনের কথা শুনেছি। তাঁর অবদান কতটুকু?
হ্যাঁ, আমার দুজন বড় বোন আছেন। একজন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। অন্যজন আইইউটির ছাত্রী ছিলেন। তিনি আইইউটির ১৭ তম ব্যাচের বিজনেস টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি আমাকে বোঝাতেন নিয়মিত উপস্থিতি বজায় রাখা, কুইজ ও মিডটার্মের মতো মূল্যায়নগুলো গুরুত্ব সহকারে দেওয়া কতটা জরুরি। এগুলোই আসলে একটি ভালো ফলের ভিত্তি তৈরি করেছে। তার দেওয়া পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আমার পুরো চার বছরের যাত্রায় দারুণভাবে কাজে দিয়েছে।
স্বর্ণপদক পাওয়ার খবরে আপনার বাবা–মা কী বলেছিলেন?
তারা উভয়েই খুব খুশি হয়েছিলেন। তাঁদের মুখে আনন্দের হাসিটা দেখে মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তের জন্যই হয়তো তারা এত বছর ধরে পরিশ্রম আর ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন। আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। জীবনে তিনি সবসময় নিয়ম, অধ্যবসায় আর সততার মূল্য শিখিয়েছেন। আর মা একজন গৃহিণী। মা আমাদের পরিবারের মূল শক্তি। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাদেরকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন। সবসময় পাশে থেকেছেন, কখনো ক্লান্ত হননি।
এমন অসামান্য ফলাফল অর্জনে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন, পড়ালেখার ধরন কেমন ছিল?
প্রথম থেকেই আমি জানতাম সিএসই এমন একটি বিষয়, যেখানে ধারাবাহিক পরিশ্রম ও মনোযোগ ছাড়া ভালো ফল করা সম্ভব নয়। যেহেতু ভর্তি হওয়ার আগে আমার কোডিং নিয়ে তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমি নিজের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা শুরু করেছি। ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিকগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছি। আর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি।
আমার পড়ালেখার ধরনটা ছিল বেশ দলভিত্তিক। আমি সবসময় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতাম। এতে করে অনেক কঠিন বিষয় সহজে বোঝা যেত। আর কাউকে কোনো বিষয় বুঝিয়ে বলতে গিয়ে নিজের বোঝাটাও আরও মজবুত হতো। এই সহযোগিতামূলক পরিবেশটাই আসলে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। এ ছাড়া আমি ক্লাসের উপস্থিতি, কুইজ ও মিডটার্ম পরীক্ষাগুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ এগুলোই মূলত চূড়ান্ত ফলে বড় ভূমিকা রাখে। সিনিয়র ভাইদের তৈরি করা নোটগুলোও অনেক সময় কাজে দিয়েছে, বিশেষ করে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে। সবশেষে, প্রতিটি প্রজেক্টও আমি সমান গুরুত্ব দিয়ে করতাম। যেন শুধু নম্বরের জন্য নয়, শেখার জন্যও কাজটা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়ে আপনি এখন গ্র্যাজুয়েট। আপনি ওআইসি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে এমন ফল করতে পারতেন, তাদের প্রস্তুতির কোন কোন জায়গায় ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়?
আসলে প্রত্যেকের পড়ার ধরনটা আলাদা হয়। এখানে যে ধরন একজনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর, সেটা অন্য কারও জন্য নাও হতে পারে। তাই একেবারে নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন যে, কে কীভাবে পড়লে এমন ফল করতে পারতেন। তবুও আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কয়েকটা জিনিস নিয়মিতভাবে মেনে চললে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে আগে, ক্লাসের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপর কুইজ আর মিডটার্ম। অনেকে এগুলোকে হালকাভাবে নেন। আমি মনে করি ফলাফলে এগুলোই আসলে মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়। যদি আগে থেকেই কুইজ ও মিডটার্মে ভালো করা যায়, তাহলে ফাইনাল পরীক্ষার সময় চাপ অনেকটাই কমে যায়। আমার গ্রুপ স্টাডির কথা তো আগেই বলেছি। গ্রুপ স্টাডি শেখার পরিবেশটাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। কেউ নির্দিষ্ট কোনো বিষয় না বুঝলে অন্য সেটা কেউ বুঝিয়ে দিতে পারছে। এতে পারস্পরিকভাবে সবারই উপকার হয়।
আপনার শৈশব, মাধ্যমিক–উচ্চ মাধ্যমিক ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।
আমাদের পারিবারিক শেকড় বরিশালে। তবে আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে ফরিদপুরে। সেখানে আমি সানরাইজ স্কুলে পড়ালেখা করেছি। পরে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসি। উত্তরায় আসার পর আমি ক্লাস ৩–৫ শ্রেণি পর্যন্ত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে পড়েছি। এরপর ৬–৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। পরবর্তীতে আমি আবার মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি। এখানে আমার কলেজ জীবনের সুন্দর দুইটি বছর কেটেছে।
ছোটবেলায় আপনার কি হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
ছোটবেলায় আকাশে প্লেন উড়তে দেখলেই মনে হতো, ‘ইশ! একদিন যদি আমিও এমন করে উড়তে পারতাম!’ তখন পাইলট হওয়ার স্বপ্নটাই ছিল সবচেয়ে বড়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আর বাস্তবতা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করার পর সেই স্বপ্নটা বদলে গেছে। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়। এখন আমার স্বপ্ন একটু অন্যরকম।
পরবর্তী লক্ষ্য কী, কেমন জব অফার পাচ্ছেন?
এখন আমার মূল লক্ষ্য হলো আইইউটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা। এজন্যই আমি নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছি। যাতে ক্লাসে পড়ানো এবং গবেষণার কাজ–দুটোই ভালোভাবে করতে পারি। একইসঙ্গে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাই। শেখা আর শেখানোর এই প্রক্রিয়াটার ভেতরেই আমি এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। দূরদৃষ্টি হিসেবে আমার আরও বড় লক্ষ্য হলো–ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে পিএইচডি করা। আমি গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় জানা ও শেখার সুযোগকে আরও প্রসারিত করতে চাই। আমার বিশ্বাস, এই প্রচেষ্টা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে দেবে।
আইইউটিতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদানে আগ্রহীদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়?
আমার জানা মতে, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: একাডেমিক রেজাল্ট, অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পূর্ববর্তী ফলাফল। এছাড়া গবেষণার অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
দেশের বাস্তবতায় সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ কেমন?
বর্তমান বাজারে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরি সুযোগ খুবই প্রশস্ত। তবে এতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমি বলবো, প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে চাকরি পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আমার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে গেছেন। এটা আইইউটির ঐতিহ্য। আইইউটি শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই চাকরির অফার পাওয়ার বেশ নজির আছে। এটা ভালো একাডেমিক পরিবেশ, যুগোপযোগী সিলেবাস এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি এন্ট্রি লেভেলের চাকরির জন্যেও আইইউটি গ্র্যাজুয়েটদের ভালো বেতন অফার করে থাকে।
উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি আইইউটিকে কেন বেছে নিয়েছিলেন?
কলেজ লাইফ শুরুর আগে আমার স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। তবে তখনো নির্দিষ্ট করে ভাবিনি কোন বিষয়ে পড়বো। এইচএসসির পর আইইউটিতে পরীক্ষা দিয়ে সিএসই বিভাগে চান্স পাই। এরপর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায়ও সাফল্য আসে। সেখানে পেয়েছিলাম ইইই বিভাগ। কিন্তু ততদিন বুয়েটের ক্লাস শুরু করতে করতে আইইউটিতে আমার প্রথম সেমিস্টারের বেশিরভাগ সময় পার যায়। ওই সময়টায় আমি উপলব্ধি করি, কম্পিউটার সায়েন্সের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি এতে ভালোও করছি। আইইউটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো দীর্ঘ সেশনজট নেই। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি সম্পন্ন করা যায়। একাডেমিক জীবনটা অনেক বেশি সুসংগঠিত থাকে। সবমিলিয়ে আমি বুঝতে পারি, একটি বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং একটি অনুকূল একাডেমিক পরিবেশই সর্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুয়েটের ইইই–এর পরিবর্তে আইইউটির সিএসইতে স্থির হয়ে যাই।
স্নাতকের পুরো জার্নিতে পড়ালেখার পাশাপাশি আপনি আর কি কি করেছিলেন?
পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখেছি। মাঝে মাঝে ফুটবল, ক্যারমের মতো খেলা খেলেছি। এছাড়া কম্পিউটারে গেমও খেলেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু সময় টিউশনি করেছি। যা নিজের ধারণাকে পরিষ্কার করতে এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হয়েছে।
সিএসই নিয়ে পড়তে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?
নিজেকে শুধুমাত্র একাডেমিক সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রথম থেকেই নিজের মধ্যে বাড়তি শেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। কোড ফোর্স, হ্যাকার র্যাঙ্ক–এর মতো প্ল্যাটফর্মের কনটেস্টে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। এ ছাড়া কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে মনোযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি যুক্তির গভীরতাও শাণিত হবে। ইউটিউবেও পছন্দের বিষয়গুলোর অসংখ্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, চাকরির ক্ষেত্রে যে স্কিলগুলো সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে, তা অনেক সময় একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে কিছুটা আলাদা। একাডেমিক প্রোজেক্টগুলোও কখনই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এগুলো যতটা সম্ভব ভালোভাবে করতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে সেগুলোই সিভিতে স্থান করবে এবং দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকার জন্যেও শুভকামনা রইলো।
গত ২৭ অক্টোবর আইইউটির ৩৭ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি এতে অংশ নিয়েছেন। আপনার বিভাগ ও ফলাফল সম্পর্কে বলুন।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে আমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। প্রথম সেমিস্টারে একটি কোর্সে এ+ পাইনি। তাই সেই সেমিস্টারে আমার জিপিএ ছিল ৩.৯৭। তবে এরপরের সাতটি সেমিস্টারেই আমি ধারাবাহিকভাবে ৪.০০ পেয়েছি।
দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর আমার সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৯৮। তৃতীয় সেমিস্টারের পর হয় ৩.৯৯। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমিস্টারে ৪ ধরে রাখতে পারলেও সিজিপিএ তখনও ৩.৯৯ ছিল। শেষ পর্যন্ত সপ্তম সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর সিজিপিএ অবশেষে ৪–এ পৌঁছায়। তখন সত্যিই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। এরপর শেষ বা অষ্টম সেমিস্টারেও একই পারফরম্যান্স ধরে রাখার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ সেটাও সম্ভব হয়। ফলে আমি সিজিপিএ ৪ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পেরেছি।
এমন সাফল্যের কৃতিত্ব কাকে দিতে চান?
সবার আগে আমি আমার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ জানাচ্ছি। তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে। প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এরপর আমার শিক্ষকদের কথা, যাদের দিকনির্দেশনা ও আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে প্রতিটি ধাপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর আমার বন্ধুদের কথাও বলতে হবে। এই চার বছরের যাত্রায় আমার বন্ধুরা সবসময় পাশে থেকেছে–কখনো সহায়তায়, কখনো বা মোটিভেশনে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা আর আমার প্রচেষ্টায় এ জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
আপনার বড় বোনের কথা শুনেছি। তাঁর অবদান কতটুকু?
হ্যাঁ, আমার দুজন বড় বোন আছেন। একজন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। অন্যজন আইইউটির ছাত্রী ছিলেন। তিনি আইইউটির ১৭ তম ব্যাচের বিজনেস টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি আমাকে বোঝাতেন নিয়মিত উপস্থিতি বজায় রাখা, কুইজ ও মিডটার্মের মতো মূল্যায়নগুলো গুরুত্ব সহকারে দেওয়া কতটা জরুরি। এগুলোই আসলে একটি ভালো ফলের ভিত্তি তৈরি করেছে। তার দেওয়া পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আমার পুরো চার বছরের যাত্রায় দারুণভাবে কাজে দিয়েছে।
স্বর্ণপদক পাওয়ার খবরে আপনার বাবা–মা কী বলেছিলেন?
তারা উভয়েই খুব খুশি হয়েছিলেন। তাঁদের মুখে আনন্দের হাসিটা দেখে মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তের জন্যই হয়তো তারা এত বছর ধরে পরিশ্রম আর ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন। আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। জীবনে তিনি সবসময় নিয়ম, অধ্যবসায় আর সততার মূল্য শিখিয়েছেন। আর মা একজন গৃহিণী। মা আমাদের পরিবারের মূল শক্তি। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাদেরকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন। সবসময় পাশে থেকেছেন, কখনো ক্লান্ত হননি।
এমন অসামান্য ফলাফল অর্জনে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন, পড়ালেখার ধরন কেমন ছিল?
প্রথম থেকেই আমি জানতাম সিএসই এমন একটি বিষয়, যেখানে ধারাবাহিক পরিশ্রম ও মনোযোগ ছাড়া ভালো ফল করা সম্ভব নয়। যেহেতু ভর্তি হওয়ার আগে আমার কোডিং নিয়ে তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমি নিজের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা শুরু করেছি। ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিকগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছি। আর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি।
আমার পড়ালেখার ধরনটা ছিল বেশ দলভিত্তিক। আমি সবসময় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতাম। এতে করে অনেক কঠিন বিষয় সহজে বোঝা যেত। আর কাউকে কোনো বিষয় বুঝিয়ে বলতে গিয়ে নিজের বোঝাটাও আরও মজবুত হতো। এই সহযোগিতামূলক পরিবেশটাই আসলে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। এ ছাড়া আমি ক্লাসের উপস্থিতি, কুইজ ও মিডটার্ম পরীক্ষাগুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ এগুলোই মূলত চূড়ান্ত ফলে বড় ভূমিকা রাখে। সিনিয়র ভাইদের তৈরি করা নোটগুলোও অনেক সময় কাজে দিয়েছে, বিশেষ করে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে। সবশেষে, প্রতিটি প্রজেক্টও আমি সমান গুরুত্ব দিয়ে করতাম। যেন শুধু নম্বরের জন্য নয়, শেখার জন্যও কাজটা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়ে আপনি এখন গ্র্যাজুয়েট। আপনি ওআইসি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে এমন ফল করতে পারতেন, তাদের প্রস্তুতির কোন কোন জায়গায় ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়?
আসলে প্রত্যেকের পড়ার ধরনটা আলাদা হয়। এখানে যে ধরন একজনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর, সেটা অন্য কারও জন্য নাও হতে পারে। তাই একেবারে নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন যে, কে কীভাবে পড়লে এমন ফল করতে পারতেন। তবুও আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কয়েকটা জিনিস নিয়মিতভাবে মেনে চললে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে আগে, ক্লাসের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপর কুইজ আর মিডটার্ম। অনেকে এগুলোকে হালকাভাবে নেন। আমি মনে করি ফলাফলে এগুলোই আসলে মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়। যদি আগে থেকেই কুইজ ও মিডটার্মে ভালো করা যায়, তাহলে ফাইনাল পরীক্ষার সময় চাপ অনেকটাই কমে যায়। আমার গ্রুপ স্টাডির কথা তো আগেই বলেছি। গ্রুপ স্টাডি শেখার পরিবেশটাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। কেউ নির্দিষ্ট কোনো বিষয় না বুঝলে অন্য সেটা কেউ বুঝিয়ে দিতে পারছে। এতে পারস্পরিকভাবে সবারই উপকার হয়।
আপনার শৈশব, মাধ্যমিক–উচ্চ মাধ্যমিক ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।
আমাদের পারিবারিক শেকড় বরিশালে। তবে আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে ফরিদপুরে। সেখানে আমি সানরাইজ স্কুলে পড়ালেখা করেছি। পরে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসি। উত্তরায় আসার পর আমি ক্লাস ৩–৫ শ্রেণি পর্যন্ত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে পড়েছি। এরপর ৬–৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। পরবর্তীতে আমি আবার মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি। এখানে আমার কলেজ জীবনের সুন্দর দুইটি বছর কেটেছে।
ছোটবেলায় আপনার কি হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
ছোটবেলায় আকাশে প্লেন উড়তে দেখলেই মনে হতো, ‘ইশ! একদিন যদি আমিও এমন করে উড়তে পারতাম!’ তখন পাইলট হওয়ার স্বপ্নটাই ছিল সবচেয়ে বড়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আর বাস্তবতা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করার পর সেই স্বপ্নটা বদলে গেছে। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়। এখন আমার স্বপ্ন একটু অন্যরকম।
পরবর্তী লক্ষ্য কী, কেমন জব অফার পাচ্ছেন?
এখন আমার মূল লক্ষ্য হলো আইইউটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা। এজন্যই আমি নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছি। যাতে ক্লাসে পড়ানো এবং গবেষণার কাজ–দুটোই ভালোভাবে করতে পারি। একইসঙ্গে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাই। শেখা আর শেখানোর এই প্রক্রিয়াটার ভেতরেই আমি এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। দূরদৃষ্টি হিসেবে আমার আরও বড় লক্ষ্য হলো–ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে পিএইচডি করা। আমি গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় জানা ও শেখার সুযোগকে আরও প্রসারিত করতে চাই। আমার বিশ্বাস, এই প্রচেষ্টা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে দেবে।
আইইউটিতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদানে আগ্রহীদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়?
আমার জানা মতে, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: একাডেমিক রেজাল্ট, অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পূর্ববর্তী ফলাফল। এছাড়া গবেষণার অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
দেশের বাস্তবতায় সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ কেমন?
বর্তমান বাজারে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরি সুযোগ খুবই প্রশস্ত। তবে এতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমি বলবো, প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে চাকরি পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আমার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে গেছেন। এটা আইইউটির ঐতিহ্য। আইইউটি শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই চাকরির অফার পাওয়ার বেশ নজির আছে। এটা ভালো একাডেমিক পরিবেশ, যুগোপযোগী সিলেবাস এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি এন্ট্রি লেভেলের চাকরির জন্যেও আইইউটি গ্র্যাজুয়েটদের ভালো বেতন অফার করে থাকে।
উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি আইইউটিকে কেন বেছে নিয়েছিলেন?
কলেজ লাইফ শুরুর আগে আমার স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। তবে তখনো নির্দিষ্ট করে ভাবিনি কোন বিষয়ে পড়বো। এইচএসসির পর আইইউটিতে পরীক্ষা দিয়ে সিএসই বিভাগে চান্স পাই। এরপর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায়ও সাফল্য আসে। সেখানে পেয়েছিলাম ইইই বিভাগ। কিন্তু ততদিন বুয়েটের ক্লাস শুরু করতে করতে আইইউটিতে আমার প্রথম সেমিস্টারের বেশিরভাগ সময় পার যায়। ওই সময়টায় আমি উপলব্ধি করি, কম্পিউটার সায়েন্সের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি এতে ভালোও করছি। আইইউটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো দীর্ঘ সেশনজট নেই। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি সম্পন্ন করা যায়। একাডেমিক জীবনটা অনেক বেশি সুসংগঠিত থাকে। সবমিলিয়ে আমি বুঝতে পারি, একটি বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং একটি অনুকূল একাডেমিক পরিবেশই সর্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুয়েটের ইইই–এর পরিবর্তে আইইউটির সিএসইতে স্থির হয়ে যাই।
স্নাতকের পুরো জার্নিতে পড়ালেখার পাশাপাশি আপনি আর কি কি করেছিলেন?
পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখেছি। মাঝে মাঝে ফুটবল, ক্যারমের মতো খেলা খেলেছি। এছাড়া কম্পিউটারে গেমও খেলেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু সময় টিউশনি করেছি। যা নিজের ধারণাকে পরিষ্কার করতে এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হয়েছে।
সিএসই নিয়ে পড়তে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?
নিজেকে শুধুমাত্র একাডেমিক সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রথম থেকেই নিজের মধ্যে বাড়তি শেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। কোড ফোর্স, হ্যাকার র্যাঙ্ক–এর মতো প্ল্যাটফর্মের কনটেস্টে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। এ ছাড়া কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে মনোযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি যুক্তির গভীরতাও শাণিত হবে। ইউটিউবেও পছন্দের বিষয়গুলোর অসংখ্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, চাকরির ক্ষেত্রে যে স্কিলগুলো সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে, তা অনেক সময় একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে কিছুটা আলাদা। একাডেমিক প্রোজেক্টগুলোও কখনই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এগুলো যতটা সম্ভব ভালোভাবে করতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে সেগুলোই সিভিতে স্থান করবে এবং দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকার জন্যেও শুভকামনা রইলো।

প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, সংস্কার ও বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী বছরের প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়ার কোনো ঘাটতি নেই। গত ২৯ ডিসেম্বর (২০২৪) ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বাং
০৭ জানুয়ারি ২০২৫
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৭ ঘণ্টা আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫