Ajker Patrika

ট্রাম্পের অধোগতি, বাইডেনের বৃহস্পতি

ইয়াসিন আরাফাত, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৩৬
ট্রাম্পের অধোগতি, বাইডেনের বৃহস্পতি

গত বছরের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে পরিবর্তনের হাওয়া বয়। মার্কিন নির্বাচনে নানা নাটকীয়তার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধোগতি সুনিশ্চিত হয়েছে বটে; তবে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মনে ক্ষমতার শুরুর দিকের স্বস্তি আর নেই। বরং রাশিয়া-চীনে কিছুটা অস্বস্তিতেই আছেন তিনি।

২০২০ সালের শেষের দিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয় নিশ্চিত হওয়া যায়। মার্কিন নির্বাচনে বাইডেনের বিজয়কে নস্যাৎ এবং সে সময় মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন বানচাল করার লক্ষ্যেই গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা চালান ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকেরা। নজিরবিহীন ওই সহিংসতায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ার কারণে ট্রাম্পকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করে ফেসবুক ও টুইটার। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, ট্রাম্প ২০২৩ সাল পর্যন্ত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেন না।

এত হুলুস্থুলের পরও ক্ষমতায় নির্দিষ্ট সময়ের বেশি থাকতে পারেননি ট্রাম্প। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়েন। যাওয়ার আগে বাইডেনের নাম উল্লেখ না করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছি। দেশে নতুন একটি সরকার আসতে চলেছে। নিরাপদ ও সমৃদ্ধ আমেরিকা গড়ার লক্ষ্যে আমি সেই সরকারের সাফল্য কামনা করছি।’

শপথ নিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই অনুষ্ঠানে ছিলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্পট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরদিন অর্থাৎ ২১ জানুয়ারি ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জো বাইডেন। ওই শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেননি ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, ১৮৬৯ সালে অ্যান্ড্রু জনসনের পর থেকে এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর উত্তরসূরির অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদান থেকে বিরত থাকেন।

তবে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। অন্যদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটন এবং সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, লরা বুশ ও হিলারি ক্লিনটন।

প্রথা অনুযায়ী প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমলা হ্যারিস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় হিসেবে এই পদে অধিষ্ঠিত হন কমলা। এরপর শপথ গ্রহণ করেন জো বাইডেন। শপথের পর তুমুল করতালি ও হর্ষধ্বনিতে অভিনন্দন জানানো হয় এ দুজনকে।

শপথ নেওয়ার পর প্রথম দিনেই ট্রাম্পের বিতর্কিত ১৫ পদক্ষেপ ও আদেশ বাতিল করেন জো বাইডেন। এদিন তিনি ১৫টি নির্বাহী আদেশ ও দুটি দাপ্তরিক নথিতে সই করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাইডেন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ট্রাম্পের নীতি পাল্টে দিতে তিনি দেরি করতে রাজি নন। ক্ষমতায় আসার এক মাস না পেরোতেই গত ২০ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফেরান বাইডেন। এই চুক্তি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক-সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেন বাইডেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার বিরোধী ছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার যে প্রক্রিয়া ট্রাম্প শুরু করেছিলেন, তা-ও থামিয়ে দেন বাইডেন।

বাইডেন আমলে চলতি বছরের অন্যতম একটি বড় ঘটনা ছিল আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার। গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার সব মিত্রদেশ সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। শেষ হয় ২০ বছরের যুদ্ধ। এর মধ্যেই ত্বরিতগতিতে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। আফগানিস্তান ছাড়ার আগে রাজধানী কাবুলে বোমা হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়। এসব ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের তোপের মুখে পড়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের কেউ কেউ তো বাইডেনের পদত্যাগও দাবি করে বসেন তখন।

আফগানিস্তান ছাড়ছেন মার্কিন সেনারাআফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারের বিষয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প। সেনা প্রত্যাহারের সমালোচনার জবাবে বাইডেন বলেছিলেন, ট্রাম্পের করা চুক্তি বাস্তবায়ন করতে গিয়েই তাঁকে ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

এদিকে ইরাক থেকেও সেনা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে দেশটি। এমনটি হলে সেখানেও ১৯ বছরের মার্কিন সেনা উপস্থিতির অবসান ঘটবে।

তবে বাইডেন ট্রাম্পের অনেক নীতির বিরোধিতা করলেও চীন ও রাশিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব আগের মতোই আছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে গত মার্চে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও পরে চীনের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়। সেখানে দুই পক্ষই পরস্পরকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করে।

আলাস্কার অ্যাংকোরেজ শহরে এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান। চীনের পক্ষে আলোচনায় যোগ দেন দেশটির পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা ইয়াং জিয়েচি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

আলোচনার শুরুতেই উদ্বোধনী বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিস্টার ব্লিনকেন একদম সোজাসাপ্টা ভাষায় বলেন, ‘চীনের বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র তার গভীর উদ্বেগ এই আলোচনায় আনবে, বিশেষ করে শিনজিয়াং, হংকং, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা এবং মার্কিন মিত্রদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের বিষয়গুলো।’

আর এর জবাবে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই অভিযোগ করেন এই বলে যে, ওয়াশিংটন তার সামরিক পরাক্রম এবং অর্থনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে অন্য দেশকে দমিয়ে রাখতে। এত দিন বাণিজ্য ও উইঘুরদের মানবাধিকার ইস্যুতে বিরোধ থাকলেও এ বছর তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন কর্মকাণ্ড নিয়ে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের বিরোধ আরও তীব্র হয়। এহেন পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে গত ১৬ নভেম্বর ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেন জো বাইডেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত থামাতে নীতিগত সীমারেখা তৈরির প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর বেইজিং থেকে বাইডেনকে ‘পুরোনো বন্ধু’ বলে উষ্ণ সম্বোধন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের বৈঠকতবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বের বদলে বিরোধের আবহই এখন পর্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। সর্বশেষ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর অবৈধ নজরদারির অভিযোগে দেশটির একটি জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ।

এর আগে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের অফিস অব ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল (ওএফএসি) সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মধ্যে চীনের স্টার্ট-আপ সেন্সটাইম গ্রুপের নামও ছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন,  নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ করে তুলবে।

ক্ষমতা নেওয়ার পর চলতি বছরের ১৭ জুন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন কূটনীতিকদের বরাতে জানা যায়, সেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ, সাইবার হামলা, রাশিয়ার জেলবন্দী বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির মুক্তির বিষয়ের পাশাপাশি রাশিয়ায় ‘বন্দী’ আমেরিকানদের বিষয়েও কথা তোলেন। দেড় ঘণ্টার ওই বৈঠকের পর পুতিন বলেন, সেই বৈঠক ছিল পুরোপুরি গঠনমূলক। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনায় সম্মত হয়েছে দুই দেশই। তবে এ নিয়ে কোনো দেশই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেনি।

চীনের মতোই রাশিয়ার সঙ্গে ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ত উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। এবারের ইস্যুটি হলো ইউক্রেন। এ নিয়ে ৮ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক বৈঠক হয়। বৈঠকে পুতিনকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান,  ইউক্রেনে রুশ অভিযানের আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে ‘কড়া অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনইউক্রেন সীমান্তের কাছে ৯০ হাজারেরও বেশি রুশ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশঙ্কা আছে, আগামী বছরের শুরুতেই ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

শেষটা করা যাক ট্রাম্পকে দিয়ে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি আবার অংশ নেবেন। এদিকে ফেসবুক-টুইটার থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর গত অক্টোবরে ট্রুথ সোশ্যাল নামে এবার নতুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালুর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প।

নতুন প্ল্যাটফর্মটি ‘বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে’ বলে মন্তব্য করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বিরোধী মতকে ‘চুপ করিয়ে দিচ্ছে’।

প্রেসিডেন্ট আমলে সংগতি ও অসংগতিপূর্ণ নানা ধরনের কাজ করে সমালোচিত ট্রাম্প চলতি বছর প্রেসিডেন্ট না হয়েও এগুলো বলে মার্কিন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। ট্রাম্পের জন্য আরেকটি খারাপ খবর হলো—এবার ফোর্বস সাময়িকীর ৪০০ মার্কিন ধনীর তালিকায় তিনি নেই। বলা হচ্ছে, মহামারি করোনা শুরু হওয়ার পর তাঁর সম্পদ কমেছে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাবেক হওয়ার পর থেকেই পাদপ্রদীপের আলো থেকে বাধ্য হয়েই সরে যেতে হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন আসায় বিশ্ববাসী কিছুটা স্বস্তি পেলেও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট পুরোপুরি সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। কারণ, সেই চীন-রাশিয়া। নতুন বছরে পুতিন-সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক কেমন থাকে, তা-ই এখন দেখার।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ফোর্বস, এএফপি ও সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৭
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১৭ বছরের সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আপিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) পৃথক দুটি আপিল করেছেন ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি।

আপিল আবেদনে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই সাজা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইমরান খানকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এ ‘পরিকল্পিত’ রায় দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা ইমরান খান ও বুশরা বিবির পক্ষে কিছু যুক্তি উত্থাপন করেছেন।

আইনজীবীদের দাবি, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) কোনো এফআইআর ছাড়াই ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মাত্র দুই দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে চালানো তদন্তের ভিত্তিতে এই মামলা হয়, যা স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী।

আপিল আবেদনে বলা হয়েছে, তোশাখানাসংক্রান্ত এটি চতুর্থ মামলা। একই বিষয়ে বারবার মামলা করা আইনের লঙ্ঘন এবং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে, যাতে ইমরান খানকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।

আইনজীবীদের দাবি, ২০১৮ সালের তোশাখানা নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করেই উপহারগুলো রাখা হয়েছিল। এখানে কোনো ধরনের বিশ্বাসভঙ্গ বা ‘ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ ঘটেনি।

আপিলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তান পেনাল কোড অনুযায়ী ইমরান খান ও বুশরা বিবি এই উপহার নেওয়ার সময় প্রচলিত সংজ্ঞায় ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন না। বিশেষ করে, বুশরা বিবি একজন গৃহিণী হিসেবে কোনো সরকারি পদের দায়িত্বে ছিলেন না।

প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলাটি মূলত ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি দামি বুলগারি জুয়েলারি সেট নিয়ে। প্রায় ৮ কোটি রুপি মূল্যের এই নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুলের সেটটি ইমরান দম্পতি মাত্র ২৯ লাখ রুপি পরিশোধ করে নিজের কাছে রেখেছিলেন।

এই মামলায় পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ তাঁদের প্রত্যেককে প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়। তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। বর্তমানে ইমরান খান ১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। বুশরা বিবিও একই মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত।

ইমরানের দল পিটিআইয়ের দাবি, তোশাখানা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ‘ক্যাঙারু কোর্টে’র মতো রুদ্ধদ্বার কক্ষে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত