Ajker Patrika

শয়তানের চুল ছিল ঘন বাদামি, চোখ দুটো নীল

পরাগ মাঝি
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০: ০৫
শয়তানের চুল ছিল ঘন বাদামি, চোখ দুটো নীল

রাষ্ট্রশক্তির গহিনে চলে অন্তর্ঘাতের খেলা। সেই খেলায় ভর দিয়ে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠে ভয়ংকর সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক। এই চক্রের পাঁকে পড়ে কেউ খুনি, কেউ ডাকাত, কেউ ধর্ষক ও লুটেরা হয়। মানবতার সেখানে কোনো ঠাঁই নেই, পাগলামিই হয়ে ওঠে মুখ্য। দুনিয়াজুড়ে বেড়ে ওঠা এমন ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আজকের পত্রিকার এই সিরিজ প্রতিবেদন। তবে বলে রাখা ভালো, এটা কোনো মৌলিক রচনা নয়, সংকলনমাত্র। প্রকাশিত হয় প্রতি শুক্রবার দুপুরে, আজ তার চতুর্থ কিস্তি।

১৯৭৬ সালে বাড়ি থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গিয়েছিলেন ক্যাথি ক্লেইনার। জীবনে এমন মধুর সময় তাঁর আর কখনোই আসেনি। বিশেষ করে মায়ের বকুনি আর কড়া শাসন থেকে দূরে এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন তিনি। সারা দিন কোথায় ছিলেন, কী করেছেন, কার সঙ্গে ঘুরেছেন—এসবেরও ছিল না কোনো জবাবদিহি। সংগঠন করতেন বলে থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই একটি সরোরিটি হাউসে। একই সংগঠনের আরও জনা ত্রিশেক ছাত্রী ছিলেন ওই বাড়িতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম প্রেমের উন্মাদনা আর বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-আড্ডায় দেখতে দেখতে কেটে গেল দুই বছর। তার পরই একদিন জীবনের এক কঠিন পরিণতির মুখোমুখি হলেন তিনি।

১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসের সেই দিনটি ছিল শনিবার। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ক্লান্ত ছিলেন ক্যাথি। দুই দিন পরই ছিল ক্যালকুলাস পরীক্ষা। তাই একটু পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু শরীর আর সায় দিল না। সেদিন তাই মাঝরাতের আগেই রুমমেট কারেন শ্যান্ডলারকে নিয়ে লাইট বন্ধ করে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। 

মাঝরাত পেরিয়ে গেলে ঘুমের ঘোরেই কানে বাজে রুমের দরজা খোলার আওয়াজ। চোখ মেলে আলো-আঁধারির মাঝে চশমা ছাড়াই ক্যাথি দেখতে পান একটি মানুষের শরীর। সামনে দাঁড়িয়ে যেন তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছে! এর পরই দেখা গেল একটি হাত উঁচিয়ে ধরেছে অবয়বটি। পরক্ষণেই ক্যাথির মুখের ওপর সজোরে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করল সে। ক্যাথির কাছে এই আঘাতকে একটি চড়ের মতো মনে হলো। যেন কোনো ব্যথাই পেলেন না তিনি। কিন্তু ওক গাছের একটি মোটা ডাল দিয়ে করা ওই আঘাতে ততক্ষণে চুরমার হয়ে গেছে ক্যাথির চোয়াল। গালের একপাশ ছিঁড়ে ঝুলে পড়েছে। 

এর পরই ক্যাথির রুমমেট কারেনের বিছানার দিকে এগিয়ে যায় লোকটি। কারণ ততক্ষণে জেগে উঠেছিলেন কারেন। নির্মমভাবে আঘাত করা হয় তাঁকেও। ক্যাথি তখন চিৎকার করার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজই বের হলো না। কারেনকে আঘাত করে লোকটি যখন দ্বিতীয়বারের মতো ক্যাথির দিকে এগিয়ে এল, তখনই জানালা দিয়ে একটি গাড়ির হেডলাইটের উজ্জ্বল আলো এসে তার মুখের ওপর পড়ল। সরোরিটি হাউসে বসবাস করা এক ছাত্রীকে নামিয়ে দিতে এসেছিল ওই গাড়ি। মুখে আলো এসে পড়ায় ভরকে যায় হামলাকারী এবং রুম থেকে দৌড়ে পালায়। পালানোর সময়ও ওই বাড়ির কয়েক ব্লক দূরে আরেকটি বাড়িতে ঢুকে শেরিল থমাস নামে আরও এক নারীকে গুরুতর জখম করে যায় সে। 

গত ফেব্রুয়ারিতে দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভয়ংকর সেই রাতের স্মৃতিচারণা করেছেন ক্যাথি ক্লেইনার। ছবি: সংগৃহীতআদালতে প্রমাণ হয়েছিল, সেদিনের সেই হামলাকারী আর কেউ নন—আমেরিকার সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডি। ক্যাথি আর কারেন সৌভাগ্যক্রমে তাঁর হাত থেকে বেঁচে গেলেও সেদিন রাতে ওই সরোরিটি হাউসেরই অন্য দুই ছাত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলেন তিনি। তাঁদের একজন মার্গারেট বোম্যান, অন্যজন লিসা লেভি। মূলত ওই বাড়িতে সবার আগে মার্গারেটের রুমেই প্রবেশ করেছিলেন বান্ডি। মার্গারেটকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তিনি যান লিসার রুমে। নির্মমভাবে হত্যা করেন তাঁকেও। শুধু তাই নয়, লিসার নিথর হয়ে যাওয়া দেহটিকে তিনি পাশবিক উপায়ে ধর্ষণও করেন। লিসার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল তাঁর কামড়ের দাগ। আর এই কামড়ের দাগই প্রমাণ করেছিল বান্ডির অপরাধ। ফ্লোরিডার আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। 

কিন্তু ফ্লোরিডার ওই ঘটনা ছিল টেড বান্ডির দ্বারা সংঘটিত সর্বশেষ নৃশংসতাগুলোর একটি। এর আগেই ওয়াশিংটন, ওরেগন, কলোরাডো, ইউটাহসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত সাতটি অঙ্গরাজ্যে আরও অসংখ্য নারীর জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছিলেন এই সুশিক্ষিত, স্মার্ট এবং সুদর্শন যুবক। নিজের জবানিতেই তিনি অন্তত ৩০ জন নারীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছিলেন। যদিও তাঁর শিকারের সংখ্যা ৪০-এর বেশি বলে মনে করেন অনেকে। এসব হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগই সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে। 

১৯৭৮ সালে ফ্লোরিডার সরোরিটি হাউসে নিহত লিসা লেভি ও মার্গারেট বোম্যান। ছবি: সংগৃহীত১৯৭৪ সালের বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে ওয়াশিংটন এবং ওরেগন থেকে যখন একের পর এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ে লাপাত্তা হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এর নেপথ্যের ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছিল রাজ্য দুটির পুলিশ। সেবার এ দুটি রাজ্যে মাত্র ছয় মাসেই ছয়জন নারী অপহৃত হন। ওয়াশিংটনের সিয়াটলে লেক সামামিশ স্টেট পার্ক থেকে একই দিনে প্রকাশ্য দিবালোকে নিখোঁজ হয়ে যান জেনিস অ্যান ও ডেনিস মেরি নামের দুই তরুণী। এ ঘটনা পুরো অঞ্চলে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তবে সেদিনই খুনিকে ধরার জন্য একটি সূত্র পেয়ে যায় পুলিশ। এক নারী এসে দাবি করেন, সুদর্শন এক যুবক তাঁকেও অপহরণ করতে চেয়েছিলেন। সরল বিশ্বাসে তিনি ওই যুবককে সাহায্য করতে গিয়েছিলেন। কারণ যুবকের একটি হাত আর্ম স্লিংয়ে (ব্যথাযুক্ত হাত গলায় ঝুলিয়ে রাখা) বাঁধা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সন্দেহ হলে তিনি যুবকের গাড়ির কাছ থেকে দ্রুত সরে এসেছিলেন। 

টেড বান্ডির কাছ থেকে বেঁচে যাওয়া সেই নারীই পুলিশকে তাঁর চেহারা, বয়স ও শরীরের গড়ন সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, ঘন বাদামি চুলের ওই যুবকের ভক্সওয়াগন টেন বিটল মডেলের গাড়িটিও ছিল বাদামি। আর তাঁর চোখের মণি দুটি ছিল নীল। 

টেড বান্ডির আলোচিত সেই ভক্সওয়াগন টেন বিটল গাড়িটি। ছবি: সংগৃহীতনারীর বর্ণনা শুনে আঁকা একটি ছবি পরে পত্রিকায় প্রকাশ করে সন্দেহভাজন ব্যক্তির সন্ধান চায় পুলিশ। এই ছবি দেখে পুলিশের সঙ্গে অসংখ্য মানুষ যোগাযোগ করেন এবং সন্দেহভাজনদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে তাঁদের মধ্যে অন্তত চারজন ছবিটি দেখে টেড বান্ডির মতো মনে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই চারজনের মধ্যে একজন ছিলেন বান্ডির ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু, একজন তাঁর সহকর্মী এবং একজন শিক্ষক ছাড়াও ছিলেন তাঁর সেই সময়ের প্রেমিকা এলিজাবেথ ক্লোয়েফার! একটি পার্টিতে প্রথম দেখা হয়েছিল তাঁদের। দুবার বিবাহবিচ্ছেদের মুখোমুখি হওয়া এবং এক কন্যাসন্তানের জননী এলিজাবেথ প্রথম দেখাতেই বান্ডির প্রেমে পড়েছিলেন। 

এদিকে চারজন টেড বান্ডির সঙ্গে সন্দেহভাজন ব্যক্তির চেহারার মিল থাকার কথা জানালেও পুলিশ তা শুরুতে উড়িয়ে দেয়। আইনে অধ্যয়নরত, এমন সুদর্শন আর মার্জিত ব্যক্তিত্বের একজন মানুষ, অতীতে যার কোনো অপরাধের রেকর্ডও নেই, তিনি কীভাবে একের পর এক নারীকে খুন করবেন, তা ছিল পুলিশের কল্পনারও অতীত। ১৯৭৮ সালে ফ্লোরিডার আদালতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এমন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বহুবার পার পেয়ে গেছেন বান্ডি। এমনকি তাঁর প্রতি মানুষের এমন মনোভবের সুযোগ নিয়ে দুবার জেল থেকেও পালিয়েছিলেন তিনি। 

২০১৯ সালে নির্মিত ‘এক্সট্রিমলি উইকেড, শকিংলি এভিল অ্যান্ড ভাইল’ সিনেমায় বান্ডি ও তাঁর প্রেমিকা এলিজাবেথকে চিত্রায়িত করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীতসন্দেহভাজন হিসেবে শুরুতে টেড বান্ডির বিষয়টি উড়িয়ে দিলেও পুলিশ ঠিকই তাঁর দিকে নজর রাখতে শুরু করেছিল। একপর্যায়ে ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট তাঁকে ট্রাফিক অমান্যের ফাঁদে ফেলে গ্রেপ্তারও করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর ভক্সওয়াগন টেন বিটল গাড়িটির ভেতরে একটি ধাতব দণ্ড, হ্যান্ডকাফ, রশি, গ্লাভস, মুখোশসহ সন্দেহজনক কিছু জিনিস জব্দ করা হয়। সে যাত্রায় জুতসই প্রমাণের অভাবে খুব দ্রুতই ছাড়া পেয়ে যান বান্ডি। তবে পুলিশের নজর বলে কথা! ফলে খুব ঘন ঘন তাঁকে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয় এবং আদালতে তাঁর হাজিরা দেওয়া একটি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়। 

 ১৯৭৫ সালেই বান্ডিকে ক্যারল ডেরঞ্চ নামে এক নারীকে অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অপহরণের পর বান্ডির হাত থেকে ফসকে গিয়েছিলেন ক্যারল। ফলে এই অপহরণে অবধারিতভাবে দোষী সাব্যস্ত হন বান্ডি। তাঁকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে কলোরাডোর অ্যাসপেন কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯৭৭ সালে কলোরাডোর আরেক তরুণীকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয় তাঁকে। এই মামলায় নিজেই নিজের আইনজীবী হিসেবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন আইনের ছাত্র বান্ডি। এর ফলে তিনি আইনবিষয়ক পড়াশোনার জন্য আদালত চত্বরের লাইব্রেরিতে যাতায়াতের সুযোগ পেতেন। এই সুযোগেই একদিন লাইব্রেরির দোতলার জানালা থেকে লাফ দিয়ে পালান। কিন্তু আট দিনের মাথায় তিনি আবারও ধরা পড়ে যান। 

কলোরাডোর পিটকিন কাউন্টি আদালতের এই ভবন থেকেই লাফ দিয়ে পালিয়েছিলেন টেড বান্ডি। ছবি: সংগৃহীতসেই বছরের ডিসেম্বরে বান্ডি আবারও পালান। এবার অ্যাসপান কারাগারের যে কক্ষে তাঁকে রাখা হয়েছিল, সেই কক্ষের ছাদ কেটে ছোট একটি গর্ত তৈরি করেছিলেন তিনি। আর এই গর্ত দিয়ে সহজে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য শরীরের ১৪ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন। গর্ত দিয়ে বেরিয়ে তিনি জেলারের অফিসকক্ষে ঢুকে পড়েছিলেন। জেলার বাইরে থাকায় সেখানেই কয়েদির পোশাক পাল্টে সাধারণ মানুষের বেশে জেল থেকে বেরিয়ে যান। কেউ তাঁকে সন্দেহও করেনি। এবার আর কোনো ভুল করেননি বান্ডি। যত দ্রুত সম্ভব কলোরাডো ছেড়ে প্রায় ২ হাজার মাইল দূরের অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায় গিয়ে হাজির হন। যথারীতি সেখানেও তিনি দুজন নারীকে হত্যার পাশাপাশি আরও তিনজনকে মারাত্মক আহত করেন। গল্পের শুরুতে বলা ক্যাথি ক্লেইনার ছিলেন তাঁদেরই একজন।

সরোরিটি হাউসে সেদিনের সেই হামলার পর ফ্লোরিডায়ই কিম্বার্লি ডায়ান লিচ নামে ১২ বছর বয়সী এক কিশোরীকেও অপহরণের পর হত্যা করেছিলেন বান্ডি। ফেরারি জীবনে ফ্লোরিডায় কোনো পরিচয়পত্র তৈরির সুযোগ ছিল না তাঁর। ফলে চাকরিও জোটেনি। এ অবস্থায় চুরি আর ছিনতাই করেই দিন কাটছিল তাঁর। চুরি করা একটি গাড়ি বেপরোয়া গতিতে চালাতে গিয়েই ফ্লোরিডার পুলিশের হাতে তিনি ধরা পড়ে যান। তবে পুলিশ তখনো জানত না এটাই আলোচিত ও কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডি। 

বান্ডির হাতে নিহত ১২ বছরের কিম্বার্লি ডায়ান লিচ। ছবি: সংগৃহীতবান্ডির পরিচয় ফাঁস হওয়ার পর ফ্লোরিডার কারাগারে থাকা অবস্থায়ই ওই রাজ্যের তিন নারীকে হত্যা এবং আরও তিনজনের ওপর গুরুতর হামলার অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এবারও নিজের মামলা নিজেই লড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই মামলা মিডিয়ার মাধ্যমে শুধু আমেরিকায় নয়, সারা পৃথিবীতেই আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়। মানুষের আগ্রহের কারণেই মামলাটির শুনানি হয় ক্যামেরার সামনে। অবাক করা বিষয় হলো, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মামলা চলার দিনগুলোতে আদালতকক্ষের ভেতরে বান্ডির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অসংখ্য মানুষ অবস্থান করতেন। বান্ডির এসব সমর্থকের প্রায় সবাই ছিলেন নারী। শুনানির সময় বান্ডি কোনো যুক্তি কিংবা পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করলে ওই নারীরা শিস বাজাতেন, হাততালি দিয়ে তাঁকে সাধুবাদ জানাতেন। নীল চোখে বান্ডি তাঁদের দিকে একনজর তাকিয়ে মুচকি হেসে নিজের আসনে গিয়ে বসতেন। শুনানির সেই দিনগুলোতে আদালতকক্ষে একজন নারীর উপস্থিতি ছিল অবশ্যম্ভাবী। তাঁর নাম ক্যারল অ্যান বোনি। অনেক আগে থেকেই বান্ডির প্রেমে পাগল ছিলেন তিনি। ফ্লোরিডার কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বান্ডিকে বিয়েও করেছিলেন। এমনকি বান্ডির একটি কন্যাসন্তানও তিনি গর্ভে ধারণ করেছিলেন। 

ফ্লোরিডার কারাগারের ভেতরে ক্যারল অ্যান বোনির সঙ্গে একান্ত মুহূর্তে বান্ডি। ছবি: সংগৃহীতআদালতে বান্ডির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার সময় তাঁকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেছিলেন, ‘বৈদ্যুতিক শক দ্বারা আপনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আদেশ দেওয়া হলো। আপনি মারা না যাওয়া পর্যন্ত সেই বিদ্যুৎ আপনার শরীরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবে। নিজের যত্ন নিন, যুবক। আপনাকে আন্তরিকতার সঙ্গেই বলছি; নিজের যত্ন নিন। এই কক্ষে মানবতার যে সম্পূর্ণ অপচয় আমি দেখেছি, তা এই আদালতের জন্য একটি চরম ট্র্যাজেডি। সুন্দর যুবক আপনি। ভালো আইনজীবী হওয়ার কথা ছিল। আপনাকে আমার সামনে প্র্যাকটিস করতে দেখলেই বেশি খুশি হতাম আমি। কিন্তু আপনি অন্য পথে চলে গেলেন, বন্ধু। নিজের যত্ন নিন।’ 

ফ্লোরিডার আদালতে বান্ডির মা-ও উপস্থিত ছিলেন। ছেলে এত বড় অপরাধী কিংবা তাঁর মৃত্যুদণ্ড হবে, তা তিনি ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি। তবু মায়ের মন বলে কথা। রায়ের আগে আদালতকক্ষে তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে ছোটখাটো একটি বক্তব্যও দিয়েছিলেন। 

জীবনের শুরুর দিকে মা ইলিনর লুইস কোয়েলকে নিজের বড় বোন হিসেবে জানতেন বান্ডি। আর নানা-নানিকে ভাবতেন বাবা-মা। কারণ মায়ের অপরিণত বয়সেই তিনি গর্ভে এসেছিলেন। সত্যিকার বাবার পরিচয় কোনো দিনও জানা হয়নি তাঁর। কোয়েল অবশ্য দাবি করতেন, জ্যাক ওর্থিংটন নামে এক নাবিকের সঙ্গে মিলনের ফলেই বান্ডির জন্ম হয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে এই নামে নৌবাহিনীতে কারও অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

আদালতে বান্ডির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করছেন বিচারক। ছবি: সংগৃহীতটেড বান্ডির রহস্যময় সেই জীবনের ইতি ঘটে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার আরও প্রায় এক দশক পর ১৯৮৯ সালে। ফ্লোরিডার কারাগারে বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসিয়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুর আগে বান্ডি বলে গিয়েছিলেন, তাঁর দেহাবশেষ যেন কেসকেড মাউন্টেন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওয়াশিংটন ও ওরেগনজুড়ে বিস্তৃত এই পাহাড়ি বনাঞ্চলেই বান্ডি তাঁর বেশির ভাগ শিকারকে গুম করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।

বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।

একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।

ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?

তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।

সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিসমাসের প্রার্থনায় পুতিনের মৃত্যু চাইলেন জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।

পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’

তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’

একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।

দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত