Ajker Patrika

বিশ্ববাসীর সমর্থন হারাতে পারে ইসরায়েল, সতর্ক করলেন ওবামা

আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০: ১৮
বিশ্ববাসীর সমর্থন হারাতে পারে ইসরায়েল, সতর্ক করলেন ওবামা

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলা নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। চলমান এ সংঘাত নিয়ে গতকাল সোমবার তিনি ব্লগ সাইট মিডিয়ামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।

নিবন্ধে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকারের’ প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ওবামা। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা উপেক্ষা করার বিষয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছেন।

লেখাটি অবশ্য গাজায় ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের নেওয়া অবস্থানের বাইরে তেমন ভিন্ন কিছু নয়। তবে এতে কিছু স্বাতন্ত্র্য দেখা গেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলার কৌশল ও তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্টো বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে ওবামা সতর্ক করেছেন।

বারাক ওবামা লিখেছেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে সমর্থন করলেও হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল এই লড়াই কীভাবে করবে—সে ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। এই সংঘাতকে চলতে দেওয়ার মানে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশাকে উপেক্ষা করা। গাজা হোক বা পশ্চিম তীর—সেটি অন্যায্য।’ 

তাঁর ভাষায়, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের পেছনের মূল কারণও তুলে ধরেছেন ওবামা। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের অব্যাহতভাবে বাস্তুচ্যুত করা।

এ বিষয়ে বারাক ওবামা বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিরোধপূর্ণ এক ভূখণ্ডে বসবাস করে আসছে। ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের সময় তাঁদের অনেকে কেবল জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতই হননি, দিনের পর দিন তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে ইসরায়েল সরকারের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল।

ওবামার মতে, দুটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ফিলিস্তিনি নেতাদের প্রচেষ্টাতেও কমতি লক্ষ করা গেছে। এত কিছুর পরেও পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েল সরকারের নির্দিষ্ট কিছু নীতির বিরোধিতা করে ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

ইসরায়েল ২০১৪ সালে যখন অবরুদ্ধ গাজায় স্থল অভিযান চালায়, তখন ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ওই সময় তিনি একইভাবে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকারের’ প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। অবশ্য একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতিরও আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই সময় ওবামার অবস্থানকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র পেতে ইসরায়েল নানা কৌশল অবলম্বন করলে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়।

৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর প্রতিশোধ নিতে গাজায় বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। পাশাপাশি সেখানে বসবাসরত ২২ লাখের বেশি মানুষের বিদ্যুৎ, পানি ও খাবার প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে বিবৃতি দিয়েছে।

ওবামা বলেন, এমন কর্মকাণ্ড ইসরায়েলের প্রতি ফিলিস্তিনিদের ক্ষুব্ধ মনোভাব পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম ধরে আরও তীব্র করবে। একই সঙ্গে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েল বিশ্ববাসীর সমর্থনও হারাবে বলে সতর্ক করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ওবামা বলেছেন, ‘এই অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহের দিকে বিশ্ব নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। মানবিক ক্ষয়ক্ষতি উপেক্ষা করা হয়—এমন যেকোনো ইসরায়েলি সামরিক কৌশল শেষ পর্যন্ত হিতে বিপরীত হতে পারে।’

নাইন-ইলেভেন হামলার প্রসঙ্গ টেনে ওয়াশিংটনের মতো একই ধরনের ভুল না করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

মূলত নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পরই মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক যুদ্ধে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শেষ পর্যন্ত কোনো বিজয় ছাড়াই ঘরে ফিরতে হয়েছে মার্কিন সেনাদের।

ওবামা বলেন, ‘যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার সময় আমেরিকা নিজেও মাঝেমধ্যে আমাদের সমুন্নত মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। নাইন-ইলেভেনের পর আল-কায়েদার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে নেওয়া পদক্ষেপের সময় যুক্তরাষ্ট্র এমনকি আমাদের মিত্রদের উপদেশও কানে তুলতে আগ্রহী ছিল না।’

সব শেষে, বহু মানুষ মারাত্মক দুর্ভোগের ভেতর রয়েছে এবং মানুষের ক্ষোভের মাত্রা বোধগম্যভাবে ক্রমেই বাড়ছে—এমন একটি অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সবাইকে সেরা মূল্যবোধ প্রদর্শনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।

এর অর্থ হলো, সক্রিয়ভাবে ইহুদি-বিদ্বেষের সমস্ত রূপের বিরুদ্ধে সর্বত্র বিরোধিতা করা। এর অর্থ হলো, ইসরায়েলি জনগণ যে ভয়ানক ট্র্যাজেডির ভেতর দিয়ে গেছে, তা প্রশমন করার প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান, সেই সঙ্গে নৈতিকভাবে দেউলিয়া অবস্থান নেওয়া—যেকোনো কারণ নিরপরাধ মানুষদের ইচ্ছাকৃত হত্যার ন্যায্যতা দিতে পারে—এমন অবস্থানের বিরোধিতা করা।

এর অর্থ হলো, মুসলিমবিদ্বেষী, আরববিদ্বেষী বা ফিলিস্তিনবিদ্বেষী মনোভাব প্রত্যাখ্যান করা। এর অর্থ হলো, হামাস বা অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সমস্ত ফিলিস্তিনিকে গুলিয়ে না ফেলা। এর অর্থ, গাজার জনগণের প্রতি অমানবিক ভাষা ব্যবহারকে প্রতিহত করা, গাজা বা পশ্চিম তীরে  ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগকে অপ্রাসঙ্গিক বা অযৌক্তিক বলে ছোট না করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গ্রিনল্যান্ড ‘আমাদের পেতেই হবে’, ‘অভিযান’ চালাতে দূত পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ডেনমার্কের সাথে নতুন করে বিবাদে জড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিশাল এই সুমেরু দ্বীপটি দখলের ইচ্ছা তিনি আগেও প্রকাশ করেছিলেন, আর এবার সেখানে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়ে সেই বিতর্ককে আবার উসকে দিলেন।

লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রিকে এই নতুন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাতীয় সুরক্ষার’ জন্য গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন এবং ‘এটি আমাদের পেতেই হবে।’ ডেনমার্কের অধীনে থাকা এই আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে ল্যান্ড্রি ‘অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন’ বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন।

ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ কোপেনহেগেন জানিয়েছে, তারা ‘ব্যাখ্যার’ জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করবে। গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ ‘নিজেদেরই নির্ধারণ করতে হবে’ এবং এর ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

গভর্নর ল্যান্ড্রি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার এই ‘স্বেচ্ছাসেবী পদে’ সেবা করা তাঁর জন্য সম্মানের। গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকেই ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের ব্যাপারে তাঁর দীর্ঘদিনের আগ্রহ পুনরুজ্জীবিত করেছেন। দ্বীপটির কৌশলগত অবস্থান এবং খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যের কথা তিনি বারবার বলে আসছেন।

দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সামরিক শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনাও তিনি উড়িয়ে দেননি। ট্রাম্পের এমন অবস্থানে স্তম্ভিত ডেনমার্ক। ন্যাটো মিত্র হিসেবে ওয়াশিংটনের সাথে ডেনমার্কের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এটি সমাধান করতে হবে। খনিজ সম্পদের জন্য নয়, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রিনল্যান্ড আমাদের প্রয়োজন।’ সাগরের নিকটবর্তী অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার জাহাজগুলোকে সম্ভাব্য হুমকি হিসেবেও তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

প্রায় ৫৭ হাজার মানুষের বসতি গ্রিনল্যান্ডে ১৯৭৯ সাল থেকে ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যদিও প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি এখনো ডেনমার্কের হাতে। অধিকাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী ডেনমার্ক থেকে চূড়ান্ত স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও, জনমত জরিপ বলছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার ঘোর বিরোধী।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্ক লোকে রাসমুসেন ল্যান্ড্রির নিয়োগকে ‘গভীর হতাশাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং মার্কিন সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার জন্য ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছেন। ড্যানিশ সম্প্রচার মাধ্যম টিভি২-কে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ডেনমার্ক, ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ এবং গ্রিনল্যান্ড নিয়ে আমাদের এই রাজত্ব টিকে আছে, ততক্ষণ আমরা আঞ্চলিক অখণ্ডতা ক্ষুণ্ণকারী কোনো পদক্ষেপ মেনে নিতে পারি না।’

গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেন্স-ফ্রেডেরিক নিলসেন জানিয়েছেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, ‘বিশেষ দূত নিয়োগের ফলে আমাদের জন্য কিছুই বদলে যাচ্ছে না। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করি। গ্রিনল্যান্ড কেবল গ্রিনল্যান্ডবাসীর জন্য, আর এর আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে।’

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়ন এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডের জনগণের সাথে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে।’ এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ল্যান্ড্রি বোঝেন যে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড কতটা অপরিহার্য’ এবং তিনি মার্কিন স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

এই নিয়োগের তাৎপর্য দুটি জায়গায়—প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিয়েছে যে গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্ক থেকে আলাদা; এবং দ্বিতীয়ত, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত দূতের দাবি যে তিনি দ্বীপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে সাহায্য করবেন। বিশেষ দূত সাধারণত অনানুষ্ঠানিক নিয়োগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক কূটনীতিকদের মতো তাঁদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। এই নিয়োগ এটিই প্রমাণ করে যে, গ্রিনল্যান্ড দখলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ট্রাম্পের মনে এখনো অটুট রয়েছে।

ভেনেজুয়েলার প্রতি তাঁর সামরিক ও তাত্ত্বিক আগ্রাসনের মতো এটিও ইঙ্গিত দেয় যে, ট্রাম্প তাঁর সাম্প্রতিক জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে উল্লিখিত ‘পশ্চিম গোলার্ধের’ ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। তিনি চান পুরো আমেরিকা জুড়ে তাঁর এই প্রভাব বলয় বিস্তৃত হোক। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে গ্রিনল্যান্ড কেনার চেষ্টা করেছিলেন। ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড উভয় সরকারই ২০১৯ সালের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।’

ল্যান্ড্রি আগেও গ্রিনল্যান্ড নিয়ে তাঁর মতামত দিয়েছিলেন। গত জানুয়ারিতে নিজের ব্যক্তিগত এক্স অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প একদম ঠিক বলেছেন! আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হয়। তাদের জন্য দারুণ হবে, আমাদের জন্যও দারুণ হবে! চলুন এটা করে ফেলি!’

সামরিক বাহিনীতে কাজ করা এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ল্যান্ড্রি ২০২৩ সালে গভর্নর নির্বাচিত হওয়ার আগে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য এবং লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর এই নতুন দায়িত্ব গভর্নর হিসেবে তাঁর কর্তব্যে কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না।

মেরু অঞ্চলে যখন কৌশলগত প্রতিযোগিতা বাড়ছে, ঠিক তখনই এই নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হলো। বরফ গলার ফলে সেখানে নতুন নৌপথ উন্মোচিত হচ্ছে এবং মূল্যবান খনিজ সম্পদে প্রবেশের সুযোগ বাড়ছে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মাঝে সুমেরু অঞ্চলে গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর নিরাপত্তা পরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিরা ডেনমার্ক দখল করলে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে হানা দেয় এবং সামরিক ও রেডিও স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে ঘাঁটি গড়ে তোলে। সেই সময় থেকেই গ্রিনল্যান্ডে মার্কিন ঘাঁটি টিকে আছে। গত মার্চে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গ্রিনল্যান্ডের সেই ঘাঁটি পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘একটি চুক্তিতে আসার’ আহ্বান জানান। ১৯৫৩ সালে বন্ধ করে দেওয়ার পর ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালে গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুক-এ মার্কিন কনস্যুলেট পুনরায় চালু করা হয়। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এবং কানাডারও গ্রিনল্যান্ডে অনারারি কনস্যুলেট রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন করে শতাধিক আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে চীন: পেন্টাগন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৫
চীনের তৈরি ডিএফ–৩১ সিরিজের একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
চীনের তৈরি ডিএফ–৩১ সিরিজের একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

চীন সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি সাইলোতে (সাধারণত সাইলো বলতে অস্ত্র বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করার জায়গাকে বোঝানো হয়)। ১০০ টিরও বেশি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) মোতায়েন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের এক খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং ক্রমবর্ধমান সামরিকভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠছে এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনার বিষয়ে দেশটির কোনো আগ্রহ নেই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শিকাগোভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টসের মতে, অন্য যেকোনো পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তুলনায় চীন তাদের অস্ত্রভান্ডার দ্রুত সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করছে। তবে বেইজিং সামরিক শক্তি বৃদ্ধির এই প্রতিবেদনগুলোকে ‘চীনকে কলঙ্কিত’ করার ও দেশটির ‘মানহানি’ করার লক্ষ্যে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পারেন। তবে রয়টার্সের দেখা পেন্টাগনের ওই খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং এতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ বা আরও ব্যাপক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনার বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি না।’

বিশেষ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গোলিয়া সীমান্তের কাছে চীনের নতুন সাইলো ক্ষেত্রগুলোতে তারা সম্ভবত ১০০ টিরও বেশি সলিড-ফুয়েল চালিত ডিএফ–৩১ আইসিবিএম মোতায়েন করেছে। পেন্টাগন এর আগে এই সাইলো ক্ষেত্রগুলোর অস্তিত্বের কথা জানালেও সেখানে কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা এই প্রথম জানাল। পেন্টাগন অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, চীন একটি ‘প্রতিরক্ষামূলক পারমাণবিক কৌশল বজায় রেখেছে, পারমাণবিক শক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম স্তরে রেখেছে এবং পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধ রাখার অঙ্গীকার মেনে চলছে।’

পেন্টাগনের খসড়া প্রতিবেদনে নতুন বসানো এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে, আইনপ্রণেতাদের কাছে পাঠানোর আগে এই প্রতিবেদনে পরিবর্তন আসতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে চীনের পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুত ছিল ৬০০-এর কোঠায়, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় ‘উৎপাদনের মন্থর গতি’ নির্দেশ করে। তবে চীনের পারমাণবিক সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির ১ হাজারেরও বেশি ওয়ারহেড থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন অবশ্য দাবি করেছে, তারা ‘আত্মরক্ষার পারমাণবিক কৌশল এবং প্রথমে ব্যবহার না করার নীতি’ মেনে চলে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চান—যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করুক, তবে তা কী আকারে হবে তা স্পষ্ট নয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির পরিবর্তে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির চেষ্টা করেছিলেন।

পেন্টাগনের এই বিস্তৃত প্রতিবেদনে চীনের সামরিক প্রস্তুতির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘চীন আশা করছে ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ তারা তাইওয়ানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে।’ তাইওয়ানকে নিজ ভূখণ্ড বলে দাবি করা চীন কখনোই এই দ্বীপটিকে ‘পুনরেকত্রীকরণ’ করতে শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং তাইওয়ান দখলের জন্য ‘পাশবিক শক্তি’ ব্যবহারের সামরিক বিকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে একটি বিকল্প হতে পারে চীন থেকে ১ থেকে ২ হাজার নটিক্যাল মাইল দূরে আঘাত হানা। এতে আরও বলা হয়, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণে এই ধরনের হামলা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতিকে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ এবং বিঘ্নিত করতে পারে।’

২০১০ সালের ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাসেরও কম সময় আগে এই প্রতিবেদনটি এল। এটিই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি, যা উভয় পক্ষকে ১ হাজার ৫৫০ টির বেশি কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং ৭০০টি ডেলিভারি সিস্টেম মোতায়েনে সীমাবদ্ধ রাখে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং বাইডেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়েছিলেন, তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এর আর কোনো আনুষ্ঠানিক মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই।

অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন, এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তা ত্রিপক্ষীয় পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দিতে পারে। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে কাজ করা সংস্থা আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিম্বল বলেন, ‘অধিক পারমাণবিক অস্ত্র এবং কূটনীতির অনুপস্থিতি চীন, রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র—কাউকেই নিরাপদ করবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজায় ৭৩ দিনে ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের শিকার ৪১১ ফিলিস্তিনি, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ৮৭৫ বার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৫
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু

ফিলিস্তিনি অবরুদ্ধ ছিটমহল গাজায় ইসরায়েল গত ৭৩ দিনে অন্তত ৮৭৫ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এই সময়ের মধ্যে দেশটি অন্তত ৪১১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গাজার সরকারি জনসংযোগ বিভাগের বরাতে লেবানিজ সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিনের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

গাজা সরকারি জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ৭৩ দিন ধরে ক্রমাগত এবং পরিকল্পিতভাবে তা লঙ্ঘন করে চলেছে। তাদের এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং চুক্তির মানবিক প্রটোকলকে চরমভাবে অবজ্ঞা করছে।

সোমবার এক বিবৃতিতে দপ্তর জানায়, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো ‘ইসরায়েল’-এর পক্ষ থেকে মোট ৮৭৫টি লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে সামরিক নাগরিকদের ওপর সরাসরি গুলির ঘটনা ২৬৫টি, আবাসিক এলাকায় সামরিক যানের অনুপ্রবেশ ৪৯টি, ফিলিস্তিনি ও তাদের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে ৪২১টি গোলাবর্ষণ ও হামলার ঘটনা এবং বেসামরিক ভবন ও স্থাপনা ধ্বংস ও গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ১৫০টি।

বিবৃতি অনুযায়ী, এসব যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় ৪১১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ হাজার ১১২ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া ৪৫ জনকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে মানবিক সহায়তার বিষয়ে জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, সহায়তা প্রবেশের ক্ষেত্রে ইসরায়েল প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্ধারিত ৪৩ হাজার ৮০০টি ট্রাকের বদলে ওই সময়ে গাজায় মাত্র ১৭ হাজার ৮১৯টি সহায়তার ট্রাক প্রবেশ করতে পেরেছে, যা মোট প্রতিশ্রুতির মাত্র ৪১ শতাংশ।

জ্বালানি সরবরাহেও মারাত্মক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী ৩ হাজার ৬৫০টি ট্রাক আসার কথা থাকলেও এসেছে মাত্র ৩৯৪টি, যা মাত্র ১০ শতাংশ। এর ফলে হাসপাতাল, বেকারি, পানি শোধনাগার এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

জনসংযোগ বিভাগ আরও সতর্ক করেছে, তাঁবু ও ভ্রাম্যমাণ ঘর (মোবাইল হোম) প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় আশ্রয় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। সাম্প্রতিক শীতকালীন ঝোড়ো হাওয়ায় এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ৪৬টি ঘর ধসে পড়েছে এবং ভেতরে আশ্রয় নেওয়া ১৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

এ ছাড়া, বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে প্রচণ্ড ঠান্ডায় দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি তাঁবু ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, যার ফলে প্রায় ১৫ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ কোনো প্রকার সুরক্ষা ছাড়াই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিশেষ করে সামনে যখন হাড়কাঁপানো ঠান্ডার সময় তথা ‘চল্লিশ দিনের’ সময় ঘনিয়ে আসছে, তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, এই চলমান লঙ্ঘনগুলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির সঙ্গে এক বিপজ্জনক প্রতারণা। তারা ইসরায়েলকে অবদমন, অনাহার এবং জবরদস্তির নীতি চাপিয়ে দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে। একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কথা থাকলেও এই মানবিক বিপর্যয়ের সময় যে পরিমাণ প্রাণহানি এবং পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, তার জন্য ইসরায়েলকেই সম্পূর্ণ দায়ী করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিজ নামে ২ ‘সর্ববৃহৎ ব্যাটলশিপ’ নির্মাণ করছেন ট্রাম্প, সব মিলিয়ে ২৫টির পরিকল্পনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১১
মার–এ–লাগোর সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্যরা। ছবি: এএফপি
মার–এ–লাগোর সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্যরা। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য তিনি এক নতুন শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ বা ‘ব্যাটলশিপ’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। অতি শক্তিশালী অস্ত্রে সজ্জিত এই জাহাজগুলোর নাম রাখা হবে তাঁর নিজের নামেই। মূলত মার্কিন নৌবাহিনীকে ঢেলে সাজানোর যে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা তিনি নিয়েছেন, তার নাম দিয়েছেন ‘গোল্ডেন ফ্লিট।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ক্লাস ইউএসএস ডিফায়েন্ট—নামের এই বিশেষ যুদ্ধজাহাজগুলোর নির্মাণকাজ খুব দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে। ট্রাম্প বুক ফুলিয়ে দাবি করেছেন, আগামী আড়াই বছরের মধ্যে এই রণতরিগুলো সাগরে দাপিয়ে বেড়ানোর জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ঘোষণার পেছনে রয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীকে এক বিশাল আকৃতি দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা। সেখানে যেমন থাকবে মনুষ্যচালিত বিশাল সব যুদ্ধজাহাজ, তেমনি থাকবে চালকহীন ছোট ছোট নৌযানও। এই বহরে যুক্ত হবে বড় আকারের ক্ষেপণাস্ত্রবাহী রণতরি এবং ছোট গতির নৌকা।

মার্কিন সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বেশ কিছুদিন ধরে একটা সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন। তাঁদের দুশ্চিন্তা চীন। জাহাজ নির্মাণের সক্ষমতা এবং মোট উৎপাদনের হিসাবে আমেরিকা এখন চীনের চেয়ে বেশখানিকটা পিছিয়ে পড়েছে। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো গলফ ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প যখন এই নতুন পরিকল্পনার কথা বলছিলেন, তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং নৌবাহিনী সচিব জন ফেলান। সোমবারের সেই সভায় ট্রাম্প জানান, প্রাথমিকভাবে তিনি দুটি ব্যাটলশিপ তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন। তবে তাঁর আসল লক্ষ্য হলো, এমন অন্তত ২৫টি জাহাজ নির্মাণ করা।

নিজের পরিকল্পনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এই জাহাজগুলো হবে ইতিহাসের দ্রুততম এবং দীর্ঘতম। এযাবৎকালের পৃথিবীতে যত ব্যাটলশিপ তৈরি হয়েছে, তার চেয়ে অন্তত ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী হবে এগুলো।’ তিনি আরও জানান, এই দানবীয় জলযানগুলোতে মোতায়েন করা হবে হাইপারসনিক মিসাইল এবং এমন সব মারণাস্ত্র, যা এর আগে কেউ দেখেনি। ট্রাম্পের ভাষায় এগুলো হবে মার্কিন নৌবাহিনীর ‘ফ্ল্যাগশিপ’ বা প্রধান গর্ব।

বক্তব্যের সময় ট্রাম্পের দুই পাশে ঝোলানো ছিল বড় বড় পোস্টার, যেখানে সেই ‘ট্রাম্প ক্লাস’ জাহাজের কাল্পনিক সব ছবি আঁকা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই জাহাজগুলো দেশের মাটিতেই তৈরি হবে। যার ফলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নৌবাহিনী সচিব জন ফেলান একটি মজার তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, ট্রাম্প নিজে থেকে তাঁর কাছে একটি ‘বিশাল ও সুন্দর’ ব্যাটলশিপ তৈরির আবদার করেছিলেন। সেই বহরে আরও থাকবে কয়েক ডজন সহায়ক ও পণ্যবাহী নৌযান।

১৯ ডিসেম্বর মার্কিন নৌবাহিনী আরও একগুচ্ছ নতুন নৌযানের ঘোষণা দিয়েছিল, যেগুলো তৈরি হবে কোস্ট গার্ডের লিজেন্ড-ক্লাস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাটারের আদলে। নৌ অপারেশনপ্রধান ড্যারিল কডল এক ভিডিও বার্তায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, লোহিত সাগর থেকে শুরু করে ক্যারিবীয় অঞ্চল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের যে অপারেশন চলছে, তাতে আমাদের হাতে থাকা ছোট যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ পানির নিচে বা ওপরে ছোট নৌযানের ঘাটতি এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই। ড্যারিল কডল মনে করেন, বড় যুদ্ধজাহাজগুলোকে বড় লড়াইয়ের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হলে ছোটখাটো মোকাবিলায় এই ধরনের গতির জাহাজগুলোর খুব প্রয়োজন।

তবে মুদ্রার উল্টো পিঠও আছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ‘কনস্টেলেশন-ক্লাস ফ্রিগেট’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বারবার কাজ পিছিয়ে যাওয়া আর খরচ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ২০২৪ সালে সেটি বাতিল হয়ে যায়। দেখা গেছে, প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করার পরও মাত্র দুটি জাহাজ পাওয়ার আশা ছিল। এদিকে সমুদ্রের দখল নিয়ে আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরে সারা বিশ্বের জাহাজ নির্মাণের যত অর্ডার এসেছে, তার ৬০ শতাংশের বেশি গেছে চীনের দখলে। চীনের নৌবাহিনী এখন সংখ্যার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম।

জানুয়ারিতে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প তাঁর দেশের জাহাজশিল্পকে টেনে তোলার কথা বলে আসছেন। গত মার্চে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘একসময় আমরা কত জাহাজ বানাতাম! এখন প্রায় বানাই না বললে চলে। কিন্তু আমরা আবার খুব দ্রুত জাহাজ বানানো শুরু করব। দেখবেন, এর প্রভাব হবে বিশাল।’ সেই ধারাবাহিকতায় অক্টোবরে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের সঙ্গে ট্রাম্প একটি চুক্তি করেছেন। আমেরিকা ফিনল্যান্ডের নকশা করা ১১টি আইসব্রেকার বা বরফ কাটার জাহাজ কিনবে, যার সাতটিই তৈরি হবে আমেরিকার মাটিতে ফিনিশ কারিগরি জ্ঞান ব্যবহার করে।

ট্রাম্পের এই যুদ্ধজাহাজ তৈরির ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এল, যখন ভেনেজুয়েলার সঙ্গে উত্তেজনা তুঙ্গে থাকায় ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন নৌ ও বিমান শক্তি বাড়ানো হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের সন্দেহে আমেরিকা বেশ কিছু নৌযানে আক্রমণ শুরু করেছে, যেখানে অন্তত ১০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্প দাবি করেন, এই কড়া পদক্ষেপের ফলে মাদক চোরাচালান বন্ধ হয়েছে এবং হাজার হাজার আমেরিকান নাগরিকের প্রাণ বেঁচেছে। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ এই হামলার আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের সরাসরি আক্রমণ আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের পরিপন্থী হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত