Ajker Patrika

দাগি আসামিকে ভালোবেসে চাকরি হারানো সাংবাদিক

জাহাঙ্গীর আলম
দাগি আসামিকে ভালোবেসে চাকরি হারানো সাংবাদিক

ক্রিস্টি স্মিথ, ব্লুমবার্গের তুখোড় সাংবাদিক। বড় ধরনের একটি আর্থিক কেলেঙ্কারির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে গিয়ে নিজেই বাঁধিয়ে ফেলেন আরেক কেলেঙ্কারি! 

অথচ সাধাসিধে স্মার্ট, সাধারণত মুখে মেকআপ এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করেন এবং একজন বিশ্বস্ত প্রেমিকা, স্ত্রী, পুরোদস্তুর সংসারী ক্রিস্টি স্মিথ এমন একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারেন—সেটি এমনকি খোদ তাঁর স্বামীও কখনো কল্পনা করেননি। অথচ পাঁচটি বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর তাঁরা বিয়ে করেছিলেন। স্বামী একটি বিনিয়োগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তা। বেশ সুখের সংসারই ছিল তাঁদের। স্মিথ নিজেই তাঁর দাম্পত্য জীবনকে বর্ণনা করেছেন এভাবে—ব্রুকলিনে আমাদের একটা নিখুঁত ছোট্ট জীবন ছিল।

একদিন হঠাৎ করেই যেন সবকিছু চুকেবুকে ফেললেন স্মিথ। 

২০১৮ সালের জুলাই মাসে ঘটনার শুরু। এর পর নয় মাসের মধ্যে চাকরি ছেড়ে দেন স্মিথ। শান্তির নীড় থেকে চিরদিনের মতো বেরিয়ে পড়েন। দ্রুতই পাঁচ বছরের প্রেমিককে ডিভোর্স দিয়ে ফেলেন। 

স্মিথের গোছানো জীবনটাকে ওলটপালট করে দিয়েছিলেন এক দাগি আসামি। তিনি পত্রিকার হয়ে ঘটনাটি কভার করছিলেন। 

স্মিথের জীবনজুড়ে এখন মার্টিন শ্রেলি। সংবাদমাধ্যমে তিনি ‘ফার্মা ব্রো’ নামেই কুখ্যাত। এইচআইভি/এইডসের একটি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম রাতারাতি ৫ হাজার গুণ বাড়িয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া উ তাং ক্ল্যানের একক অ্যালবাম ২০ লাখ ডলারে কিনে আলোচনায় এসেছিলেন শ্রেলি। ২০১৭ সালে প্রতারণার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। এখন সাত বছরের জেল খাটছেন। 

এক দাগি আসামির জন্য স্বামী, সংসার, পেশা—সব জলাঞ্জলি দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন স্মিথ। তিনি বলেছেন, তাঁর সঙ্গে আলাপে–আলাপে আমি আসলে খরগোশের গর্তে পড়ে গেলাম। 

তবে কোনো অনুশোচনা নেই স্মিথের। ‘আমি এখানে খুশি। আমার মনে হয়, একটা উদ্দেশ্যে জীবন আমাকে এখানে এনেছে’, বলেন স্মিথ। 

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শ্রেলির সঙ্গে প্রথম দেখা হয় স্মিথের। এই সাক্ষাৎকার নিয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন ছিলেন যে সারা সকালে কিছু মুখে দেননি। এর এক মাস আগে হেজ ফান্ড নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে শ্রেলির বিরুদ্ধে। তবে তিনি তাঁর অভ্যাসমতো সাংবাদিকদের নিয়মিত ঠাট্টা বিদ্রূপ করে যাচ্ছিলেন। 

মিসৌরিতে কানসাস সিটির শহরতলিতে বেড়ে উঠেছেন স্মিথ। সাংবাদিকতা বিশেষ করে রিপোর্টিংয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ কৈশোর থেকেই। এই দুর্দমনীয় আগ্রহ থেকে অন্তর্মুখী, লাজুক স্মিথ একদিন মুখরা হয়ে ওঠেন। 

তিনি চরম একগুঁয়ে ছিলেন। অনুপযুক্তভাবে ইউনিফর্ম পরার জন্য জরিমানার বিষয় নিয়ে স্কুলে ঝামেলা পাকিয়েছিলেন। বাবা–মা তাঁকে ভাইদের গির্জায় নিয়ে যেতে বললে নিশ্চিতভাবে তিনি নিয়ে যেতেন ম্যাকডোনাল্ডসে। স্মিথের ভাই মাইকেল স্মিথ এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন। 

মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়েছেন স্মিথ। ২০০৮ সালে নিউইয়র্কে যাওয়ার আগে দুটি ছোট সংবাদপত্রে কাজ করেছিলেন। একটি আইন বিষয়ক সংবাদ সংস্থায় কাজ করার পর, তিনি ২০১২ সালে ব্রুকলিন ফেডারেল আদালতে ব্লুমবার্গ নিউজের জন্য কভার করা শুরু করেন। এ পত্রিকায় দ্রুতই কর্তৃপক্ষের নজরে চলে আসেন তিনি। বহু বছর বহু তথ্যবহুল সাড়া জাগানো প্রতিবেদন করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনও খুব ভালো চলছিল। ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের প্রেমিককে বিয়ে করেন। 

২০১৫ সালের গোড়ার দিকে, স্মিথ একটি সোর্স থেকে জানতে পেরেছিলেন শ্রেলি পুঁজিবাজার আইন লঙ্ঘনের জন্য কেন্দ্র সরকারের তদন্তাধীন। এই ব্যক্তি সম্পর্কে স্মিথের তখনো কোনো ধারণা ছিল না। তবে তথ্যটি জানার পরই তাঁকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন। জানতে পারেন, একজন চৌকস, স্বশিক্ষিত তরুণ নির্বাহী তিনি। বয়স যখন কুড়ির কোটাতে, তখনই তিনি হেজ ফান্ডের ব্যবসা শুরু করেন। এর পর ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি রেট্রোফিন এবং ট্যুরিং কিনে নেন। 

স্মিথ যখন শ্রেলিকে প্রথম ফোন করেছিলেন, তখন তাঁর প্রত্যাশা ছিল ‘কোনো মন্তব্য নেই’ ধরনের চিরাচরিত জবাবই পাবেন। কিন্তু তাঁকে অবাক করে দিয়েছিলেন শ্রেলি। 

ব্লুমবার্গের তুখোড় সাংবাদিক ক্রিস্টি স্মিথ মার্টিন শ্রেলির খবর কভার করতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যান

এই খবর প্রকাশের পর শ্রেলি রাতারাতি খলনায়কে পরিণত হয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমগুলো তাঁকে নানা অপমানজনক বিশেষণ দিতে শুরু করে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পও বাদ যাননি। কিন্তু শ্রেলি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সবাইকে মুখোমুখি বিতর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। 

এর পর থেকে এ ঘটনার সঙ্গে লেগে ছিলেন স্মিথ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তিনি শ্রেলির গ্রেপ্তারের খবর ব্রেক করেন। 

পরে শ্রেলি ছাড়া পেয়েছিলেন। হেজ ফান্ডের পাওনা পরিশোধও করেন। এর মধ্যে শ্রেলির সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা হতো স্মিথের। তাঁর প্রতি স্মিথের মুগ্ধতা বাড়ছিল। এক সময় মুখোমুখি বসে আলাপেরও সুযোগ হয় তাঁদের। স্মিথের পরিকল্পনা ছিল শ্রেলিকে নিয়ে একটি প্রোফাইল রিপোর্ট করবেন তিনি। 

এই উদ্দেশ্য সফল করতেই নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়। শ্রেলিও একজন আলবেনীয় অভিবাসীর সন্তান হিসেবে তাঁর শৈশব–কৈশোর নিয়ে খোলামেলা আলাপ শুরু করেন। এভাবে একে অপরের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলাপে ঢুকে যান তাঁরা। এমনকি শ্রেলি তাঁর কাছে থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরামর্শও চাইতেন। এভাবেই যেন আত্মহত্যার আয়োজন করে যাচ্ছিলেন স্মিথ। 

তবে তথ্য দেওয়া নিয়ে শ্রেলির ইঁদুর–বিড়াল খেলা চলতে থাকে। ২০১৬ সালের শরতে স্মিথ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মর্যাদাপূর্ণ নাইট-ব্যাগহট জার্নালিজম ফেলোশিপ শুরু করেন। বসন্তে, তিনি একটি অ্যাসাইনমেন্টের জন্য শ্রেলি সম্পর্কে লিখেছিলেন। কীভাবে তিনি সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা রাখেন, সেটিই বর্ণনা করেছিলেন সেখানে। 

স্মিথের অধ্যাপক মাইকেল শাপিরো বলেছিলেন, কীভাবে তিনি (শ্রেলি) সফলভাবে তাঁকে নিজের পক্ষে টেনে নিয়েছেন, সেটিই স্মিথ চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছিলেন। শাপিরোর উদ্বেগের বিষয়টি ছিল, শ্রেলি স্মিথকে টোপ দিচ্ছেন। এই যে এভাবে তাঁর অন্দরে ঢুকতে দেওয়ার জন্য চিরকাল কৃতজ্ঞতা পাশে বাধিত করার পথে টানছেন তিনি। আর এটা যখন ঘটে যাবে, তখন একজন রিপোর্টার হিসেবে এটি আপনার জন্য একটা জটিল অসুবিধার ব্যাপার হবে। শাপিরো বলেন, স্মিথ তাঁর লেখাটি শ্রেলিকে দেখিয়েছিলেন। সেটি পড়ে শ্রেলি বলেন, তোমার তো বই লিখে ফেলা উচিত। সেটা শ্রেলির জীবনী বা আত্মজীবনী হতে পারে। শাপিরোর ধারণা, সাংবাদিক–সোর্স সম্পর্ক তত দিনে মাখামাখি হয়ে গেছে। স্মিথকে তিনি জীবনী লেখার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, যিনি এভাবে বিভ্রান্ত করতে পারেন, তাঁর জীবনী না লিখতে। স্মিথকে বলেন, তুমি তোমার জীবনটা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছ। 

স্মিথও অবশ্য আত্মসমর্পণই করেছেন। তাঁর কথায়, আমি মনে হয়, একজন মাস্টার ম্যানিপুলেটরের (জাত জাদুকর) খপ্পরে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলাম। 

তবে স্মিথের আত্মবিশ্বাস, তিনি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পাকা। তিনি ছোটবেলা থেকেই বই লিখতে চেয়েছিলেন। সেই সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন তখনো। এটাই ছিল সেই শখ পূরণের মোক্ষম সুযোগ! তত দিনে তিনি একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি শুরু করে দিয়েছিলেন। 

২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একটি স্টুডেন্ট ক্লাবে বইয়ের জন্য কথা বলার আমন্ত্রণ পান শ্রেলি। সেখানে তিনি স্মিথকেও আমন্ত্রণ জানান। তাঁদের দামি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। একজন ডিন এগিয়ে এসে করমর্দন করেন। স্মিথের দিকে ইঙ্গিত করে ভূয়সী প্রশংসা করেন শ্রেলি। সব ছাত্র–ছাত্রী শ্রেলির সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। তাঁকে খুব উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছিল। এর মধ্যে শ্রেলি একটু বিরতি নিয়ে বাথরুমে যান। তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে আসেন স্মিথ। স্মিথ বলেন, তখন নিজেকে তাঁর একজন জনপ্রিয় রাজনীতিকের স্ত্রী বলে মনে হচ্ছিল। 

শ্রেলির মামলা তখনো চলছিল। কিন্তু তখনো সাংবাদিক, আইনজীবী, বিচারক, কংগ্রেস কাউকেই তাচ্ছিল্য করতে ছাড়ছিলেন না। একসময় বিচারক আদালত চত্বরে তাঁর কথা বলা বারণ করে দেন। শ্রেলি নাকি আদালতে হাজিরা দিয়ে বাড়িতে গিয়ে দরজায় খিল দিয়ে কাঁদতেন। এ খবর শুনে স্মিথের খুব মায়া হতো। তিনি বলেন, শ্রেলি সবাইকে নিয়ে ট্রল করতেন। কারণ, ভেতরে-ভেতরে মানুষটা খুব উদ্বিগ্ন এবং একা বোধ করতেন। 

২০১৭ সালের আগস্টে শ্রেলি তিন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। তত দিনে স্মিথও তাঁর সঙ্গে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। তাঁদের মাখামাখি আর গোপন থাকেনি। শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। স্বামী তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, খারাপ লোকটি তাঁকে ব্যবহার করছে। তিনি তাঁর সাংবাদিকতার সুনামকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। 

 

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রেলি হিলারি ক্লিনটনের একটি চুলের দাম ৫ হাজার ডলার ঘোষণা করে অনলাইনে একটি অফার দেন। হিলারি তাঁর ওষুধের দাম বৃদ্ধির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। বিষয়টি বিচারক ভালোভাবে নেননি। তাঁর জেল হয়। এর মধ্যে বই লেখার জন্য অফিস থেকে নেওয়া ছুটি শেষ হয়ে যায় স্মিথের। কারাগারে শ্রেলির অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তিনি। পাগলের মতো অস্থির হয়ে পড়েন। বন্ধুদের পাঠিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। স্মিথ নিজেই বলেছেন, রাতে ঘুমাতে পারছিলেন না। সাংবাদিক এবং সোর্সের মধ্যে সম্পর্ক কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকছে—এ নিয়েও ভেতরে খুব তোলপাড় চলছিল। ফলে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছিল তাঁর। 

ব্লুমবার্গের একজন মুখপাত্র জানান, তাঁরা শ্রেলির সঙ্গে স্মিথের সম্পর্কের কথা জানতেন না। জানলে ওই বিট থেকে তাঁকে সরানো হতো। 

এইচআইভি/এইডসের একটি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম রাতারাতি ৫ হাজার গুণ বাড়িয়ে মার্টিন শ্রেলি

স্মিথ বারবার শ্রেলিকে বলতে থাকেন, তাঁকে যেন কারাগারে দেখা করতে দেওয়া হয়। নভেম্বরে একটা তারিখ দেন শ্রেলি। ৩০ ডলার খরচ করে শ্রেলির জন্য স্ন্যাকস কিনে কারাগারে দেখা করতে যান স্মিথ। দেখামাত্র তাঁরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন তাঁরা। ঘণ্টাব্যাপী আলাপ করেন। অথচ ওই সময় স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সমস্যা নিয়ে প্রথম কাউন্সেলিংয়ের দিন ছিল স্মিথের। নির্ধারিত সময়ের ৫২ মিনিট পর সেখানে হাজির হয়েছিলেন তিনি। 

তত দিনে স্মিথও বুঝে ফেলেন ব্লুমবার্গের জন্য শ্রেলিকে কভার করার মতো অবস্থায় তিনি আর নেই। কারণ, তিনি নিজেই ততক্ষণে এই গল্পের অংশ হয়ে উঠেছেন। বিট পরিবর্তন করতে থাকেন স্মিথ। ওদিকে প্রকাশক শ্রেলিকে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপনের প্রস্তাব দেয়। স্মিথ তেমন বই লিখতে অস্বীকার করেন। 

এর আগে আদালতে শ্রেলি এবং স্মিথের ই–মেইল ও মেসেজ আদান প্রদানের তথ্য উপস্থাপন করা হয়ে গেছে। এ নিয়ে স্মিথকে ভয়ানক বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। প্রসিকিউটররা এর জন্য শ্রেলিকে ৫ বছরের সাজা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। পরে আদালত এই কর্মকাণ্ডের দায়ে সাজার সঙ্গে আরও দুই বছর যোগ করে সাত বছর কারাদণ্ড দেয়। 

সিনেমার স্বত্ব বা বই লেখার চিন্তা বাদ দিয়ে ২০১৮ সালের মার্চে শ্রেলির সাজা প্রদানের ঘটনার ওপর নজর দেন স্মিথ। এটি তাঁর গবেষণার অংশ ছিল। 

স্মিথের ভাষায়, তিনি শ্রেলির একটা বিশ্বাসযোগ্য গল্প তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। সেখানে অর্ধসত্য কিছু ছিল না। তিনি সেসব কোম্পানি সম্পর্কে বলতে চেয়েছিলেন, যেগুলো শ্রেলি নিজ হাতে তৈরি করেছেন। বাইরের যে খলনায়ক ব্যক্তিত্ব, সেটি তাঁর মুখোশ। আমি বাকি গল্পটা বলার চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু পারিনি। 

২০১৮ সালের গ্রীষ্মে স্মিথের সম্পাদক তাঁকে ব্লুমবার্গের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ডেকে পাঠান। তাঁর জন্য সেখানে অপেক্ষা করছিলেন সম্পাদক ও মানবসম্পদ বিভাগের একজন প্রতিনিধি। অবশ্য আগেই শ্রেলি সম্পর্কে তাঁর বিভিন্ন টুইটের ব্যাপারে অফিস থেকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি শোনেননি। 

এখন তাঁকে বলা হয়, শ্রেলি সম্পর্কে তাঁর আচরণ পক্ষপাতদুষ্ট এবং অপেশাদার। স্মিথ পরিস্থিতি সহজেই আঁচ করে ফেলেন এবং সম্পাদককে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে ভবন থেকে বেরিয়ে যান। 

সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি স্মিথের দাম্পত্য সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে। শেষ পর্যন্ত তিনি বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও স্মিথ নিয়মিত কারাগারে শ্রেলিকে দেখতে যেতেন। তাঁরা পিকাসো, দর্শন, প্রিয় পোষা কুকুর, বিড়াল থেকে শুরু করে দুনিয়ার হাজারো বিষয়ে কলকল করে আলাপ করে যেতেন। 

ব্লুমবার্গ ছাড়ার পরপরই স্মিথ আবার শ্রেলিকে ঘনঘন দেখতে যেতেন। তিনি প্রকাশক ও ব্লুমবার্গ কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারণ, তাঁরা তাঁকে গল্পটি বলার সুযোগ দেয়নি। আলাপে আলাপে একদিন স্মিথ নিজেই শ্রেলিকে তাঁর ভালো লাগার কথা বলে ফেলেন। শ্রেলিও না করেননি। 

পুরো ঘটনায় স্মিথের বাবা–মা হতবাক হলেও মেয়ে যখন শ্রেলির বিষয়ে বলে, তখন স্মিথের সুখী মুখ দেখে তাঁরাও শান্তি পেয়েছেন। 

স্মিথ আবার সাংবাদিকতা শুরু করেছেন। তাঁর বস শ্রেলির সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানেন। কোভিড নিরাপত্তা প্রটোকলের কারণে বেশির ভাগ কারাগারে দর্শনার্থী নেওয়া হচ্ছে না। স্মিথ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শ্রেলিকে দেখেননি। স্মিথের কাছে এখন স্মৃতি বলতে তাঁদের দুজনের একটি মাত্র ছবি। সেটি তিনি বিছানার পাশেই রেখেছেন। শ্রেলির মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছেন। হয়তো জ্যোৎস্নাস্নাত রাতগুলোতে চোখ ভিজে ওঠে তাঁর। 

স্মিথ–শ্রেলির গল্প হয়তো এখানেই শেষ। কিন্তু সাংবাদিক এবং সোর্সের মধ্যকার সম্পর্কের সীমা, আর সাংবাদিকতার নৈতিকতা নিয়ে বিতর্কটা হয়তো আরও বহুদিন আলোড়িত করবে। স্মিথের অপরাধ হয়তো আইনের আওতায় ব্যাখ্যা করা মুশকিল। কিন্তু সামাজিক মূল্যবোধ আর পেশাগত নৈতিকতার দণ্ড তো তাঁদের ছেড়ে কথা বলছে না!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পকে তরুণদের ‘রোল মডেল’ বললেন এক সময়ের ঘোর বিরোধী নিকি মিনাজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় রক্ষণশীল সংগঠন টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ আয়োজিত ‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের প্রশংসা করেছেন মার্কিন র‍্যাপ তারকা নিকি মিনাজ। রোববার (২১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে তিনি তরুণ পুরুষদের জন্য ট্রাম্প ও ভ্যান্সকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। মিনাজের এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ‘ফরচুন’ জানিয়েছে, এই সম্মেলনটি প্রয়াত রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্কের স্মরণে আয়োজন করা হয়। মঞ্চে নিকি মিনাজের সাক্ষাৎকার নেন চার্লি কার্কের স্ত্রী ও বর্তমানে টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ-এর নেতৃত্বে থাকা অ্যারিকা কার্ক। আলোচনায় ট্রাম্পের প্রতি নতুন সমর্থনের কথা জানান মিনাজ—যদিও অতীতে তিনি ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতারও নিন্দা জানান।

মিনাজ ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্যাভিন নিউসমকে কটাক্ষ করে ট্রাম্পের দেওয়া ‘নিউ-স্কাম’ নামটি ব্যবহার করেন। বর্তমান প্রশাসনের প্রশংসা করে তিনি বলেন—বর্তমান প্রশাসনে হৃদয় ও আত্মা আছে এবং ট্রাম্প ও ভ্যান্স দুজনই এমন নেতা, যাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ সহজে নিজেদের মিল খুঁজে পায়।

এদিকে মঞ্চে এক অস্বস্তিকর মুহূর্ত তৈরি হয়, যখন ভ্যান্সের রাজনৈতিক দক্ষতার প্রশংসা করতে গিয়ে মিনাজ তাঁকে ‘অ্যাসাসিন’ বলে ফেলেন। কথাটি বলার পরই তিনি থেমে যান এবং পরিস্থিতি কিছুটা বিব্রতকর হয়ে ওঠে। চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় শব্দটি উপস্থিত অনেকের মনে আঘাত দেয়।

সম্প্রতি মিনাজ ট্রাম্পের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান নির্যাতন সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন, যেখানে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়। এ নিয়ে তিনি জাতিসংঘে মার্কিন মিশনে আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনাতেও অংশ নেন।

নিজের পরিবর্তিত অবস্থান নিয়ে মিনাজ বলেন, ‘মত বদলানো দোষের নয়—মনের কথা বলাই এখন সবচেয়ে বড় অপরাধ হয়ে গেছে।’ বিনোদন জগৎ থেকে সমালোচনার প্রসঙ্গে জানান, তিনি এসব নিয়ে ভাবেন না। একসময় ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির তীব্র বিরোধিতা করা এই শিল্পী এখন প্রকাশ্যেই বলছেন, তাঁর মত বদলানো ঠিকই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় দুবার সন্তান প্রসবের ভয়াবহ স্মৃতি হাদিলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

‘এই বিভীষিকা আমি কখনো ভুলতে পারব না’—বলছিলেন হাদিল আল ঘেরবাওয়ি। ২৬ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি নারী গাজা যুদ্ধে চরম ক্ষুধা, ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই দুটি গর্ভধারণ ও দুবার সন্তান জন্ম দিয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর সময় হাদিল সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ হওয়ায় তিনি নিয়মিত ডাক্তার দেখাতেন, আলট্রাসাউন্ড করাতেন এবং ভিটামিন নিতেন। গাজা সিটির পূর্বাংশে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে বসবাস করায় যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিনই তিনি গাজার পশ্চিম অংশে বসবাস করা বাবা-মায়ের বাড়িতে চলে যান। হাদিল ভেবেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি আবার স্বামীর বাড়িতে ফিরে যাবেন। কিন্তু এরপর পরিবারটি অন্তত ১৩ বার বাস্তুচ্যুত হয় এবং স্বামীর বাড়িটিও একদিন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসেই গাজা সিটিতে একটি আবাসিক ভবনে বড় ধরনের হামলার কাছাকাছি অবস্থানে ছিলেন হাদিল। তাঁর কাছে এটিকে একটি ভূমিকম্প মনে হয়েছিল। পরে আশ্রয় নেন আল-শিফা হাসপাতালে। সেখানে অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থীর ভিড় এত বেশি ছিল যে, বাথরুম ব্যবহার করাও প্রায় অসম্ভব ছিল। সেদিনের দৃশ্য আজও তাড়া করে ফেরে হাদিলকে। স্তূপ করে রাখা লাশ, ড্রামে রাখা খণ্ড-বিখণ্ড অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর তীব্র গন্ধ। তিনি বলেন, ‘আমি গর্ভবতী ছিলাম, সহ্য করতে পারিনি।’

অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে—নিরাপত্তার আশায় এবার তিনি ও তাঁর স্বামী খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসকদের কাছে আগেভাগেই সন্তান প্রসবের অনুরোধ করেন। হাদিল যখন সন্তান প্রসব করছিলেন, তখন হাসপাতালটির পাশের ভবনেই হামলা হয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশৃঙ্খল এই পরিস্থিতিতে সন্তান বদলে যাওয়ার আতঙ্কও গ্রাস করেছিল হাদিলকে। তবে আতঙ্কের মধ্যেই শেষ পর্যন্ত তিনি ছেলে জাওয়াদের জন্ম দেন।

নবজাতক নিয়ে হাদিলকে ৩০ জনের সঙ্গে একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছিল। সেই সময়টিতে সেলাইয়ের তীব্র ব্যথার মধ্যেও তিনি কোনো ওষুধ পাননি; রাতের পর রাত চুপচাপ এই ব্যথা সহ্য করেছেন। তাঁর ধারণা, প্রসবের পর তিনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

কয়েক মাস পর তাঁরা একটি তাঁবুতে ওঠেন। বালু, পোকামাকড় আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় একের পর এক নবজাতকের মৃত্যুর খবরে সারাক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকতেন হাদিল। রাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বারবার জেগে উঠতেন। জাওয়াদের বয়স ৯ মাস হলে আবারও গর্ভবতী হন তিনি। হাদিল বলেন, ‘তাঁবুতে থেকে আরেকটি সন্তান—ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলাম।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির খবর কিছুটা আশা জাগিয়েছিল তাঁদের। সেই আশা থেকেই ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু ছয় সপ্তাহ পরই ভেঙে যায় যুদ্ধবিরতি। পেটে সন্তান নিয়ে আবারও পালাতে হয় হাদিলকে। পালানোর পর তাঁদের বাড়িটিও ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধের মধ্যে দ্বিতীয় গর্ভধারণ হাদিলের জন্য ছিল সবচেয়ে কঠিন। এই সন্তান পেটে রাখার ৯ মাসই তাঁর যুদ্ধের মধ্যে কেটেছে। এমনও দিন গেছে, সারা দিন শুধু একটি শসা খেয়ে কাটিয়েছেন। আর কোথাও এক মুঠো খাবার পেলে নিজের ভাগটুকু তিনি ছেলে জাওয়াদকে দিতেন।

দ্বিতীয়বার প্রসবের সময়ও তিনি বাবা-মায়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কারণ ওই বাড়ি থেকে কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নবজাতক সুরক্ষার জন্য ইনকিউবেটর ছিল। এক রাতে প্রসবব্যথা শুরু হলে, লিফট না থাকায় পাঁচ তলা থেকে হেঁটেই নামতে হয় হাদিলকে। পরে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন এবং ওই হাসপাতালে দ্বিতীয় ছেলে ফারেসের জন্ম দেন। জন্মের সময় ফারেসের ওজন ছিল মাত্র ২ কেজি।

এবারে অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই সেলাই দেওয়া হয় হাদিলকে। আর অন্যকে সুযোগ করে দিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিছানা খালি করে তাঁকে চেয়ারে বসে থাকতে হয়। ফারেসের জন্মের পাঁচ ঘণ্টা পর, চরম ক্লান্তি ও ব্যথা নিয়ে তিনি আবার পাঁচ তলা সিঁড়ি বেয়ে বাবা-মায়ের ঘরে ফেরেন। এই যুদ্ধ, তাঁর শরীর ও মনে রেখে গেছে এমন ক্ষত—যা ভুলবার নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আসাদের খালি হয়ে যাওয়া কুখ্যাত কারাগারগুলো ভরে উঠছে আবার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স

বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার মানুষ ভেবেছিল—দেশটির কুখ্যাত কারাগার অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। বিদ্রোহীরা জেলখানার দরজা ভেঙে বন্দীদের মুক্ত করেছিল, পরিবারের লোকেরা ছুটে গিয়েছিল নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই সেই কারাগারগুলো আবার ভরে উঠছে। এবার নতুন সরকারের অধীনেই সিরিয়ায় আবারও ফিরে এসেছে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ।

রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গত এক বছরে অন্তত ৮২৯ জন নিরাপত্তাজনিত কারণে আটক হয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের বড় অংশই কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা আদালতের আদেশ ছাড়াই বন্দী রয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় প্রথম দফার গ্রেপ্তার শুরু হয়েছিল বিদ্রোহীদের বিজয়ের পরপরই। সে সময় মূলত আসাদের আমলের সেনা সদস্য ও কর্মকর্তাদের আটক করা হয়েছিল। পরে শীতের শেষ দিকে উপকূলীয় অঞ্চলে সহিংসতার জের ধরে আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ গ্রেপ্তার হন। বসন্ত ও গ্রীষ্মে দ্রুজ অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলেও ব্যাপক ধরপাকড় চলে। একই সঙ্গে সুন্নি, খ্রিষ্টান ও শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ বা আসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অস্পষ্ট অভিযোগে আটক হন।

রয়টার্স জানিয়েছে, আসাদ আমলের অন্তত ২৮টি কারাগার ও আটক কেন্দ্র আবার সক্রিয় হয়েছে। এগুলোর অনেকগুলোই অতীতে নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল। যদিও বর্তমান সরকার বলছে, অপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনে এসব কেন্দ্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং অনেক বন্দীকে ইতিমধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তারা প্রকাশ করেনি।

সাক্ষাৎকারে সাবেক বন্দী ও স্বজনেরা জানিয়েছেন, আটক কেন্দ্রগুলোতে ভয়াবহ মানবেতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গাদাগাদি করে বন্দী রাখা, খাবার ও চিকিৎসার অভাব, ত্বকের রোগ এবং নিয়মিত মারধরের অভিযোগ রয়েছে। অন্তত ১১ জন বন্দী কারা হেফাজতে মারা গেছেন বলে নথিভুক্ত করেছে রয়টার্স। এদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পরিবার জানতই না—দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তারা বিষয়টি জানতে পারে।

চাঁদাবাজিও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ১৪টি পরিবার জানিয়েছে, স্বজনকে মুক্তির বিনিময়ে ৫০০ থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ৯০ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থ পরিশোধের পরও অনেকেই মুক্তি পাননি।

এদিকে সরকার স্বীকার করেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনের সময় কিছু ‘ফাঁকফোকর’ তৈরি হয়েছে এবং কিছু নিরাপত্তা সদস্য নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। তাদের দাবি, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১৫৯ জন নিরাপত্তা সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ব্যাপক আটক ও গুমের অভিযোগ নতুন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরও আসাদের পতনের পর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্বিচার আটক’-এর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

আসাদের শাসনামলের মতো নির্মম নির্যাতন না হলেও, পুরোনো কারাগার ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন সিরিয়ার নতুন ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে। মানবাধিকারকর্মীদের ভাষায়, ‘শাসক বদলেছে, কিন্তু কারাগারের ছায়া এখনো কাটেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মস্কোতে গাড়িবোমা হামলায় রুশ জেনারেল সারভারভ নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক জেনারেল নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে রুশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বরাতে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফানিল সারভারভ (৫৬)। তিনি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ স্থানীয় সময় সকালে মস্কোর দক্ষিণাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পার্কিং লটে এই বিস্ফোরণ ঘটে। জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। গাড়িটি চালু করার পরপরই সেটির বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত অবস্থায় সারভারভকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, একটি সাদা রঙের গাড়ি বিস্ফোরণে দুমড়েমুচড়ে গেছে এবং সেটির যন্ত্রাংশ উড়ে গিয়ে পাশে থাকা অন্য যানবাহনের ওপর পড়েছে।

রুশ ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে রুশ কর্মকর্তাদের ধারণা, এই হামলার নেপথ্যে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে। তবে ইউক্রেন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, জেনারেল সারভারভের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তা জানানো হয়েছে।

৫৬ বছর বয়সী ফানিল সারভারভ রুশ সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ছিলেন। রুশ গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ফানিল সারভারভ নব্বইয়ের দশক এবং ২০০০ সালের শুরুতে তিনি ওসেটিয়ান-ইঙ্গুশ সংঘাত ও চেচেন যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৫-১৬ সালে সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানেও তিনি নেতৃত্ব দেন।

২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে মস্কোতে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের ওপর বেশ কয়েকটি বড় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র আলেকজান্ডার দুগিনের কন্যা দারিয়া দুগিনা গাড়িবোমা হামলায় নিহত হন।

চলতি বছরের এপ্রিলে জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মোসকালিক ও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল ইগর কিরিলভও একই ধরনের হামলায় প্রাণ হারান।

নীতিগত কারণে ইউক্রেন সাধারণত এ ধরনের হামলার দায় স্বীকার করে না। তবে গত বছর জেনারেল কিরিলভ নিহতের ঘটনায় ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিল বিবিসির একটি সূত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত