Ajker Patrika

দাগি আসামিকে ভালোবেসে চাকরি হারানো সাংবাদিক

জাহাঙ্গীর আলম
দাগি আসামিকে ভালোবেসে চাকরি হারানো সাংবাদিক

ক্রিস্টি স্মিথ, ব্লুমবার্গের তুখোড় সাংবাদিক। বড় ধরনের একটি আর্থিক কেলেঙ্কারির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে গিয়ে নিজেই বাঁধিয়ে ফেলেন আরেক কেলেঙ্কারি! 

অথচ সাধাসিধে স্মার্ট, সাধারণত মুখে মেকআপ এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করেন এবং একজন বিশ্বস্ত প্রেমিকা, স্ত্রী, পুরোদস্তুর সংসারী ক্রিস্টি স্মিথ এমন একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারেন—সেটি এমনকি খোদ তাঁর স্বামীও কখনো কল্পনা করেননি। অথচ পাঁচটি বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর তাঁরা বিয়ে করেছিলেন। স্বামী একটি বিনিয়োগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তা। বেশ সুখের সংসারই ছিল তাঁদের। স্মিথ নিজেই তাঁর দাম্পত্য জীবনকে বর্ণনা করেছেন এভাবে—ব্রুকলিনে আমাদের একটা নিখুঁত ছোট্ট জীবন ছিল।

একদিন হঠাৎ করেই যেন সবকিছু চুকেবুকে ফেললেন স্মিথ। 

২০১৮ সালের জুলাই মাসে ঘটনার শুরু। এর পর নয় মাসের মধ্যে চাকরি ছেড়ে দেন স্মিথ। শান্তির নীড় থেকে চিরদিনের মতো বেরিয়ে পড়েন। দ্রুতই পাঁচ বছরের প্রেমিককে ডিভোর্স দিয়ে ফেলেন। 

স্মিথের গোছানো জীবনটাকে ওলটপালট করে দিয়েছিলেন এক দাগি আসামি। তিনি পত্রিকার হয়ে ঘটনাটি কভার করছিলেন। 

স্মিথের জীবনজুড়ে এখন মার্টিন শ্রেলি। সংবাদমাধ্যমে তিনি ‘ফার্মা ব্রো’ নামেই কুখ্যাত। এইচআইভি/এইডসের একটি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম রাতারাতি ৫ হাজার গুণ বাড়িয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া উ তাং ক্ল্যানের একক অ্যালবাম ২০ লাখ ডলারে কিনে আলোচনায় এসেছিলেন শ্রেলি। ২০১৭ সালে প্রতারণার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। এখন সাত বছরের জেল খাটছেন। 

এক দাগি আসামির জন্য স্বামী, সংসার, পেশা—সব জলাঞ্জলি দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন স্মিথ। তিনি বলেছেন, তাঁর সঙ্গে আলাপে–আলাপে আমি আসলে খরগোশের গর্তে পড়ে গেলাম। 

তবে কোনো অনুশোচনা নেই স্মিথের। ‘আমি এখানে খুশি। আমার মনে হয়, একটা উদ্দেশ্যে জীবন আমাকে এখানে এনেছে’, বলেন স্মিথ। 

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শ্রেলির সঙ্গে প্রথম দেখা হয় স্মিথের। এই সাক্ষাৎকার নিয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন ছিলেন যে সারা সকালে কিছু মুখে দেননি। এর এক মাস আগে হেজ ফান্ড নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে শ্রেলির বিরুদ্ধে। তবে তিনি তাঁর অভ্যাসমতো সাংবাদিকদের নিয়মিত ঠাট্টা বিদ্রূপ করে যাচ্ছিলেন। 

মিসৌরিতে কানসাস সিটির শহরতলিতে বেড়ে উঠেছেন স্মিথ। সাংবাদিকতা বিশেষ করে রিপোর্টিংয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ কৈশোর থেকেই। এই দুর্দমনীয় আগ্রহ থেকে অন্তর্মুখী, লাজুক স্মিথ একদিন মুখরা হয়ে ওঠেন। 

তিনি চরম একগুঁয়ে ছিলেন। অনুপযুক্তভাবে ইউনিফর্ম পরার জন্য জরিমানার বিষয় নিয়ে স্কুলে ঝামেলা পাকিয়েছিলেন। বাবা–মা তাঁকে ভাইদের গির্জায় নিয়ে যেতে বললে নিশ্চিতভাবে তিনি নিয়ে যেতেন ম্যাকডোনাল্ডসে। স্মিথের ভাই মাইকেল স্মিথ এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন। 

মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়েছেন স্মিথ। ২০০৮ সালে নিউইয়র্কে যাওয়ার আগে দুটি ছোট সংবাদপত্রে কাজ করেছিলেন। একটি আইন বিষয়ক সংবাদ সংস্থায় কাজ করার পর, তিনি ২০১২ সালে ব্রুকলিন ফেডারেল আদালতে ব্লুমবার্গ নিউজের জন্য কভার করা শুরু করেন। এ পত্রিকায় দ্রুতই কর্তৃপক্ষের নজরে চলে আসেন তিনি। বহু বছর বহু তথ্যবহুল সাড়া জাগানো প্রতিবেদন করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনও খুব ভালো চলছিল। ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের প্রেমিককে বিয়ে করেন। 

২০১৫ সালের গোড়ার দিকে, স্মিথ একটি সোর্স থেকে জানতে পেরেছিলেন শ্রেলি পুঁজিবাজার আইন লঙ্ঘনের জন্য কেন্দ্র সরকারের তদন্তাধীন। এই ব্যক্তি সম্পর্কে স্মিথের তখনো কোনো ধারণা ছিল না। তবে তথ্যটি জানার পরই তাঁকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন। জানতে পারেন, একজন চৌকস, স্বশিক্ষিত তরুণ নির্বাহী তিনি। বয়স যখন কুড়ির কোটাতে, তখনই তিনি হেজ ফান্ডের ব্যবসা শুরু করেন। এর পর ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি রেট্রোফিন এবং ট্যুরিং কিনে নেন। 

স্মিথ যখন শ্রেলিকে প্রথম ফোন করেছিলেন, তখন তাঁর প্রত্যাশা ছিল ‘কোনো মন্তব্য নেই’ ধরনের চিরাচরিত জবাবই পাবেন। কিন্তু তাঁকে অবাক করে দিয়েছিলেন শ্রেলি। 

ব্লুমবার্গের তুখোড় সাংবাদিক ক্রিস্টি স্মিথ মার্টিন শ্রেলির খবর কভার করতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যান

এই খবর প্রকাশের পর শ্রেলি রাতারাতি খলনায়কে পরিণত হয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমগুলো তাঁকে নানা অপমানজনক বিশেষণ দিতে শুরু করে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পও বাদ যাননি। কিন্তু শ্রেলি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সবাইকে মুখোমুখি বিতর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। 

এর পর থেকে এ ঘটনার সঙ্গে লেগে ছিলেন স্মিথ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তিনি শ্রেলির গ্রেপ্তারের খবর ব্রেক করেন। 

পরে শ্রেলি ছাড়া পেয়েছিলেন। হেজ ফান্ডের পাওনা পরিশোধও করেন। এর মধ্যে শ্রেলির সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা হতো স্মিথের। তাঁর প্রতি স্মিথের মুগ্ধতা বাড়ছিল। এক সময় মুখোমুখি বসে আলাপেরও সুযোগ হয় তাঁদের। স্মিথের পরিকল্পনা ছিল শ্রেলিকে নিয়ে একটি প্রোফাইল রিপোর্ট করবেন তিনি। 

এই উদ্দেশ্য সফল করতেই নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়। শ্রেলিও একজন আলবেনীয় অভিবাসীর সন্তান হিসেবে তাঁর শৈশব–কৈশোর নিয়ে খোলামেলা আলাপ শুরু করেন। এভাবে একে অপরের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলাপে ঢুকে যান তাঁরা। এমনকি শ্রেলি তাঁর কাছে থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরামর্শও চাইতেন। এভাবেই যেন আত্মহত্যার আয়োজন করে যাচ্ছিলেন স্মিথ। 

তবে তথ্য দেওয়া নিয়ে শ্রেলির ইঁদুর–বিড়াল খেলা চলতে থাকে। ২০১৬ সালের শরতে স্মিথ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মর্যাদাপূর্ণ নাইট-ব্যাগহট জার্নালিজম ফেলোশিপ শুরু করেন। বসন্তে, তিনি একটি অ্যাসাইনমেন্টের জন্য শ্রেলি সম্পর্কে লিখেছিলেন। কীভাবে তিনি সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা রাখেন, সেটিই বর্ণনা করেছিলেন সেখানে। 

স্মিথের অধ্যাপক মাইকেল শাপিরো বলেছিলেন, কীভাবে তিনি (শ্রেলি) সফলভাবে তাঁকে নিজের পক্ষে টেনে নিয়েছেন, সেটিই স্মিথ চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছিলেন। শাপিরোর উদ্বেগের বিষয়টি ছিল, শ্রেলি স্মিথকে টোপ দিচ্ছেন। এই যে এভাবে তাঁর অন্দরে ঢুকতে দেওয়ার জন্য চিরকাল কৃতজ্ঞতা পাশে বাধিত করার পথে টানছেন তিনি। আর এটা যখন ঘটে যাবে, তখন একজন রিপোর্টার হিসেবে এটি আপনার জন্য একটা জটিল অসুবিধার ব্যাপার হবে। শাপিরো বলেন, স্মিথ তাঁর লেখাটি শ্রেলিকে দেখিয়েছিলেন। সেটি পড়ে শ্রেলি বলেন, তোমার তো বই লিখে ফেলা উচিত। সেটা শ্রেলির জীবনী বা আত্মজীবনী হতে পারে। শাপিরোর ধারণা, সাংবাদিক–সোর্স সম্পর্ক তত দিনে মাখামাখি হয়ে গেছে। স্মিথকে তিনি জীবনী লেখার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, যিনি এভাবে বিভ্রান্ত করতে পারেন, তাঁর জীবনী না লিখতে। স্মিথকে বলেন, তুমি তোমার জীবনটা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছ। 

স্মিথও অবশ্য আত্মসমর্পণই করেছেন। তাঁর কথায়, আমি মনে হয়, একজন মাস্টার ম্যানিপুলেটরের (জাত জাদুকর) খপ্পরে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলাম। 

তবে স্মিথের আত্মবিশ্বাস, তিনি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পাকা। তিনি ছোটবেলা থেকেই বই লিখতে চেয়েছিলেন। সেই সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন তখনো। এটাই ছিল সেই শখ পূরণের মোক্ষম সুযোগ! তত দিনে তিনি একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি শুরু করে দিয়েছিলেন। 

২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একটি স্টুডেন্ট ক্লাবে বইয়ের জন্য কথা বলার আমন্ত্রণ পান শ্রেলি। সেখানে তিনি স্মিথকেও আমন্ত্রণ জানান। তাঁদের দামি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। একজন ডিন এগিয়ে এসে করমর্দন করেন। স্মিথের দিকে ইঙ্গিত করে ভূয়সী প্রশংসা করেন শ্রেলি। সব ছাত্র–ছাত্রী শ্রেলির সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। তাঁকে খুব উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছিল। এর মধ্যে শ্রেলি একটু বিরতি নিয়ে বাথরুমে যান। তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে আসেন স্মিথ। স্মিথ বলেন, তখন নিজেকে তাঁর একজন জনপ্রিয় রাজনীতিকের স্ত্রী বলে মনে হচ্ছিল। 

শ্রেলির মামলা তখনো চলছিল। কিন্তু তখনো সাংবাদিক, আইনজীবী, বিচারক, কংগ্রেস কাউকেই তাচ্ছিল্য করতে ছাড়ছিলেন না। একসময় বিচারক আদালত চত্বরে তাঁর কথা বলা বারণ করে দেন। শ্রেলি নাকি আদালতে হাজিরা দিয়ে বাড়িতে গিয়ে দরজায় খিল দিয়ে কাঁদতেন। এ খবর শুনে স্মিথের খুব মায়া হতো। তিনি বলেন, শ্রেলি সবাইকে নিয়ে ট্রল করতেন। কারণ, ভেতরে-ভেতরে মানুষটা খুব উদ্বিগ্ন এবং একা বোধ করতেন। 

২০১৭ সালের আগস্টে শ্রেলি তিন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। তত দিনে স্মিথও তাঁর সঙ্গে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। তাঁদের মাখামাখি আর গোপন থাকেনি। শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। স্বামী তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, খারাপ লোকটি তাঁকে ব্যবহার করছে। তিনি তাঁর সাংবাদিকতার সুনামকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। 

 

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রেলি হিলারি ক্লিনটনের একটি চুলের দাম ৫ হাজার ডলার ঘোষণা করে অনলাইনে একটি অফার দেন। হিলারি তাঁর ওষুধের দাম বৃদ্ধির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। বিষয়টি বিচারক ভালোভাবে নেননি। তাঁর জেল হয়। এর মধ্যে বই লেখার জন্য অফিস থেকে নেওয়া ছুটি শেষ হয়ে যায় স্মিথের। কারাগারে শ্রেলির অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তিনি। পাগলের মতো অস্থির হয়ে পড়েন। বন্ধুদের পাঠিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। স্মিথ নিজেই বলেছেন, রাতে ঘুমাতে পারছিলেন না। সাংবাদিক এবং সোর্সের মধ্যে সম্পর্ক কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকছে—এ নিয়েও ভেতরে খুব তোলপাড় চলছিল। ফলে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছিল তাঁর। 

ব্লুমবার্গের একজন মুখপাত্র জানান, তাঁরা শ্রেলির সঙ্গে স্মিথের সম্পর্কের কথা জানতেন না। জানলে ওই বিট থেকে তাঁকে সরানো হতো। 

এইচআইভি/এইডসের একটি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম রাতারাতি ৫ হাজার গুণ বাড়িয়ে মার্টিন শ্রেলি

স্মিথ বারবার শ্রেলিকে বলতে থাকেন, তাঁকে যেন কারাগারে দেখা করতে দেওয়া হয়। নভেম্বরে একটা তারিখ দেন শ্রেলি। ৩০ ডলার খরচ করে শ্রেলির জন্য স্ন্যাকস কিনে কারাগারে দেখা করতে যান স্মিথ। দেখামাত্র তাঁরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন তাঁরা। ঘণ্টাব্যাপী আলাপ করেন। অথচ ওই সময় স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সমস্যা নিয়ে প্রথম কাউন্সেলিংয়ের দিন ছিল স্মিথের। নির্ধারিত সময়ের ৫২ মিনিট পর সেখানে হাজির হয়েছিলেন তিনি। 

তত দিনে স্মিথও বুঝে ফেলেন ব্লুমবার্গের জন্য শ্রেলিকে কভার করার মতো অবস্থায় তিনি আর নেই। কারণ, তিনি নিজেই ততক্ষণে এই গল্পের অংশ হয়ে উঠেছেন। বিট পরিবর্তন করতে থাকেন স্মিথ। ওদিকে প্রকাশক শ্রেলিকে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপনের প্রস্তাব দেয়। স্মিথ তেমন বই লিখতে অস্বীকার করেন। 

এর আগে আদালতে শ্রেলি এবং স্মিথের ই–মেইল ও মেসেজ আদান প্রদানের তথ্য উপস্থাপন করা হয়ে গেছে। এ নিয়ে স্মিথকে ভয়ানক বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। প্রসিকিউটররা এর জন্য শ্রেলিকে ৫ বছরের সাজা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। পরে আদালত এই কর্মকাণ্ডের দায়ে সাজার সঙ্গে আরও দুই বছর যোগ করে সাত বছর কারাদণ্ড দেয়। 

সিনেমার স্বত্ব বা বই লেখার চিন্তা বাদ দিয়ে ২০১৮ সালের মার্চে শ্রেলির সাজা প্রদানের ঘটনার ওপর নজর দেন স্মিথ। এটি তাঁর গবেষণার অংশ ছিল। 

স্মিথের ভাষায়, তিনি শ্রেলির একটা বিশ্বাসযোগ্য গল্প তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। সেখানে অর্ধসত্য কিছু ছিল না। তিনি সেসব কোম্পানি সম্পর্কে বলতে চেয়েছিলেন, যেগুলো শ্রেলি নিজ হাতে তৈরি করেছেন। বাইরের যে খলনায়ক ব্যক্তিত্ব, সেটি তাঁর মুখোশ। আমি বাকি গল্পটা বলার চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু পারিনি। 

২০১৮ সালের গ্রীষ্মে স্মিথের সম্পাদক তাঁকে ব্লুমবার্গের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ডেকে পাঠান। তাঁর জন্য সেখানে অপেক্ষা করছিলেন সম্পাদক ও মানবসম্পদ বিভাগের একজন প্রতিনিধি। অবশ্য আগেই শ্রেলি সম্পর্কে তাঁর বিভিন্ন টুইটের ব্যাপারে অফিস থেকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি শোনেননি। 

এখন তাঁকে বলা হয়, শ্রেলি সম্পর্কে তাঁর আচরণ পক্ষপাতদুষ্ট এবং অপেশাদার। স্মিথ পরিস্থিতি সহজেই আঁচ করে ফেলেন এবং সম্পাদককে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে ভবন থেকে বেরিয়ে যান। 

সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি স্মিথের দাম্পত্য সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে। শেষ পর্যন্ত তিনি বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও স্মিথ নিয়মিত কারাগারে শ্রেলিকে দেখতে যেতেন। তাঁরা পিকাসো, দর্শন, প্রিয় পোষা কুকুর, বিড়াল থেকে শুরু করে দুনিয়ার হাজারো বিষয়ে কলকল করে আলাপ করে যেতেন। 

ব্লুমবার্গ ছাড়ার পরপরই স্মিথ আবার শ্রেলিকে ঘনঘন দেখতে যেতেন। তিনি প্রকাশক ও ব্লুমবার্গ কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারণ, তাঁরা তাঁকে গল্পটি বলার সুযোগ দেয়নি। আলাপে আলাপে একদিন স্মিথ নিজেই শ্রেলিকে তাঁর ভালো লাগার কথা বলে ফেলেন। শ্রেলিও না করেননি। 

পুরো ঘটনায় স্মিথের বাবা–মা হতবাক হলেও মেয়ে যখন শ্রেলির বিষয়ে বলে, তখন স্মিথের সুখী মুখ দেখে তাঁরাও শান্তি পেয়েছেন। 

স্মিথ আবার সাংবাদিকতা শুরু করেছেন। তাঁর বস শ্রেলির সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানেন। কোভিড নিরাপত্তা প্রটোকলের কারণে বেশির ভাগ কারাগারে দর্শনার্থী নেওয়া হচ্ছে না। স্মিথ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শ্রেলিকে দেখেননি। স্মিথের কাছে এখন স্মৃতি বলতে তাঁদের দুজনের একটি মাত্র ছবি। সেটি তিনি বিছানার পাশেই রেখেছেন। শ্রেলির মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছেন। হয়তো জ্যোৎস্নাস্নাত রাতগুলোতে চোখ ভিজে ওঠে তাঁর। 

স্মিথ–শ্রেলির গল্প হয়তো এখানেই শেষ। কিন্তু সাংবাদিক এবং সোর্সের মধ্যকার সম্পর্কের সীমা, আর সাংবাদিকতার নৈতিকতা নিয়ে বিতর্কটা হয়তো আরও বহুদিন আলোড়িত করবে। স্মিথের অপরাধ হয়তো আইনের আওতায় ব্যাখ্যা করা মুশকিল। কিন্তু সামাজিক মূল্যবোধ আর পেশাগত নৈতিকতার দণ্ড তো তাঁদের ছেড়ে কথা বলছে না!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোপালগঞ্জ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন

দুই উপদেষ্টার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েও দেশে আসতে পারেননি সাকিব

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নববর্ষের ভাষণে তাইওয়ানকে ফের চীনের সঙ্গে একীভূত করার অঙ্গীকার করলেন সি চিন পিং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ছবি: এপির সৌজন্যে
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ছবি: এপির সৌজন্যে

ইংরেজি নববর্ষের (২০২৬) প্রাক্কালে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পুনরায় একীভূত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বেইজিং থেকে প্রচারিত ভাষণে সি বলেছেন, মাতৃভূমির পুনর্মিলন সময়ের দাবি এবং এটি একটি অপ্রতিরোধ্য ধারা, যা কেউ থামাতে পারবে না।

তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের বিশাল সামরিক মহড়া ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ শেষ হওয়ার মাত্র এক দিন পর সি চিন পিংয়ের এই কড়া বার্তা এল। উল্লেখ্য, চীন তাইওয়ানকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে তা দখলের হুমকি দিয়ে আসছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সি চিন পিংয়ের ভাষণের আগে গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার তাইওয়ান ঘিরে নজিরবিহীন সামরিক মহড়া চালায় চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধের অনুকরণে এই মহড়া চালায় পিএলএ। এতে চীনা নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্ট গার্ড অংশ নেয়।

এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৯টি যুদ্ধবিমান এই মহড়ায় অংশ নেয়। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, তাইওয়ানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক রেকর্ড ১১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রতিবাদেই বেইজিং এই কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় বেইজিংয়ে দেওয়া ভাষণে সি বলেন, চীন ‘খোলা বাহুতে বিশ্বকে আলিঙ্গন করছে’। তিনি এ বছর বেইজিংয়ে আয়োজিত কয়েকটি বহুপক্ষীয় সম্মেলনের কথাও তুলে ধরেন। এর মধ্যে আগস্টে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন সামিটের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানসহ বিশ্বনেতারা অংশ নেন। সম্মেলনটি বেইজিংয়ের কাছের বন্দরনগরী তিয়েনচিনে অনুষ্ঠিত হয়।

সির ভাষণের সময় চীনের রাষ্ট্রীয় টিভিতে গত সেপ্টেম্বরের বিশাল সামরিক প্যারেডের দৃশ্য দেখানো হয়, যেখানে সি চিন পিংয়ের পাশে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা এই জোটকে ‘অ্যাক্সিস অব আপহিভ্যাল’ বা অস্থিরতার অক্ষ হিসেবে অভিহিত করছেন।

ভাষণে সি চিন পিং ‘তাইওয়ান রেট্রোসেশন ডে’ বা তাইওয়ান প্রত্যাবর্তন (২৫ অক্টোবর) দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরেন। ১৯৪৫ সালের এই দিনেই তাইওয়ানে জাপানি ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হয়। তবে চীন এখন এ দিনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিংতে।

সির ভাষণে চীনের উচ্চপ্রযুক্তি খাতে অগ্রগতির কথাও তুলে ধরা হয়। তিনি কিকবক্সিং রোবট এবং মে মাসে উৎক্ষেপণ করা ধূমকেতু অনুসন্ধান মিশন ‘তিয়ানওয়েন-২’-এর কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি ভিডিও গেম ব্ল্যাক মিথ: উকং এবং অ্যানিমেটেড সিনেমা ‘নে ঝা ২’-এর সাফল্যের কথা উল্লেখ করে চীনা সংস্কৃতির জয়গান করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোপালগঞ্জ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন

দুই উপদেষ্টার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েও দেশে আসতে পারেননি সাকিব

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের বাঁ হাতে নতুন কালশিটে দাগ, ফের আলোচনায় প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২৪ ডিসেম্বর ফ্লোরিডার পাম বিচে অবস্থিত মার-এ-লাগোতে ‘সান্তা ট্র্যাকার ফোন কল’ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
গত ২৪ ডিসেম্বর ফ্লোরিডার পাম বিচে অবস্থিত মার-এ-লাগোতে ‘সান্তা ট্র্যাকার ফোন কল’ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাম হাতে কালশিটে বা কালচে দাগ দেখা দেওয়ায় তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। শপথ নেওয়ার এক বছরের মাথায় ও ৮০ বছরে পা দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে প্রেসিডেন্টের এই শারীরিক পরিবর্তনগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

কয়েক মাস ধরে ট্রাম্পের ডান হাতে কালশিটে দাগ দেখা গেলেও সম্প্রতি বেশ কিছু অনুষ্ঠানে তাঁর বাম হাতের পেছনেও একই ধরনের দাগ লক্ষ করা গেছে। হোয়াইট হাউস এর আগে ডান হাতের দাগের কারণ হিসেবে ‘অতিরিক্ত করমর্দন’ ও নিয়মিত ‘অ্যাসপিরিন’ সেবনের কথা বলেছিল। তবে এই নতুন দাগ হোয়াইট হাউসের আগের ব্যাখ্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, নতুন এই দাগ নিয়ে তাৎক্ষণিক উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তাঁদের মতে, এটি বয়সজনিত সাধারণ একটি অবস্থা হতে পারে। তবে তাঁরা সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্প তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে অনিচ্ছুক থাকায় বিষয়টি নিয়ে যে নজরদারি চলছে, তা আরও বাড়তে পারে।

নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফাইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের জেনারেল ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জেফ্রি লিন্ডার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, তাঁরা কৌতূহলের এই চক্রটাকেই আরও উসকে দিচ্ছেন। তিনি সব সময় মানুষের সামনে যান, তাঁর একটা ভাবমূর্তি আছে। এমন ছোট বিষয়ও সেই ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। বিষয়টি তাঁর জন্য সংবেদনশীল। কারণ, তিনি প্রায়ই নিজের কর্মশক্তি ও উদ্যমের কথা বলেন।

গত বছরের নির্বাচনের আগে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স ও মানসিক-শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ উসকে দিয়েছিলেন। ৮৩ বছর বয়সী বাইডেনকে তিনি এখনো তুলনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায়ই বলেন, ‘আপনি কি মনে করেন, বাইডেন এটা করতে পারতেন?’

তবে তুলনামূলকভাবে ব্যস্ত সূচি বজায় রাখলেও ট্রাম্প নিজেও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রশ্ন এড়াতে পারেননি। গ্রীষ্মকালে তাঁর পা ফুলে যাওয়ার ছবি প্রকাশের পর হোয়াইট হাউস জানায়, ট্রাম্প ‘ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি’ নামে একধরনের শিরার রোগে আক্রান্ত। এটি সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।

চলতি সপ্তাহে ট্রাম্পের বাঁ হাতের দাগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হোয়াইট হাউস নতুন কোনো ব্যাখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জনগণের মানুষ। তিনি প্রতিদিন ইতিহাসের যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি মানুষের সঙ্গে দেখা করেন ও হাত মেলান।

কিন্তু একাধিক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ সিএনএনকে বলেছেন, ট্রাম্প যেহেতু ডানহাতি, তাই বাঁ হাতের দাগ কেবল হাত মেলানোর কারণেই হয়েছে—এমন সম্ভাবনা কম। তবে হ্যাঁ, বয়স ও অ্যাসপিরিন সেবনের কারণে এমন দাগ দেখা দিতে পারে।

জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির দীর্ঘদিনের চিকিৎসক জোনাথন রাইনার বলেন, কখনো কখনো সামান্য আঘাত বা কোথাও ধাক্কা লাগলেও এমন দাগ হতে পারে।

রাইনার জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পকে কখনো পরীক্ষা করেননি। তবে তিনি বলেন, অ্যাসপিরিনের চেয়ে শক্তিশালী ওষুধ সেবনকারীদের মধ্যেও এমন দাগ দেখা যায়। এতে প্রশ্ন উঠেছে—ট্রাম্প কি তাঁর সব ওষুধের তথ্য প্রকাশ করেছেন?

রাইনার অবশ্য বলেছেন, এমন ওষুধ সেবন করা খুবই সাধারণ এবং এটি বড় কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি অফিসে থাকাকালে বাইডেনের ‘ইলিকুইস’ নামে রক্ত পাতলা করার ওষুধ ব্যবহারের তথ্য প্রকাশের কথা উল্লেখ করেন।

রাইনার বলেন, এখন প্রশ্নটা চিকিৎসার চেয়ে স্বচ্ছতা নিয়ে বেশি। হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের ওষুধসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব না দিয়ে স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত নজরদারির সমালোচনাই বেশি করে।

এদিকে হোয়াইট হাউসে ফেরার আগে থেকে ট্রাম্পের ডান হাতে কালশিটে দাগ ছিল। তিনি সেটি ভারী মেকআপ বা ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢাকতে শুরু করলে এবং ক্যামেরা থেকে আড়াল করতে অন্য হাত ব্যবহার করলে বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে।

ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি রোগের তথ্য জানানোর সময়ই হোয়াইট হাউস ডান হাতের দাগের প্রসঙ্গ তোলে। সে সময় তাঁর চিকিৎসকের চিঠিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তিনি সব দিক থেকে সুস্থ আছেন।

গত এপ্রিলে করা শারীরিক পরীক্ষার পর অক্টোবরে হঠাৎ আবার ওয়াল্টার রিড হাসপাতালে যান ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস তখন এটিকে ‘রুটিন’ পরীক্ষা বললেও পরে ট্রাম্প নিজেই জানান, তাঁর এমআরআই করা হয়েছিল। শুরুতে তিনি বলেন, ফলাফল ‘ভালো’, তবে কোন অংশের স্ক্যান হয়েছে—তা তিনি জানেন না বলে জানান। এই অস্পষ্টতায় নতুন করে প্রশ্ন ওঠে।

কয়েক সপ্তাহ পর ট্রাম্পের চিকিৎসক শন বারবাবেলা জানান, তাঁর হৃদ্‌যন্ত্র ও পেটের অংশের ইমেজিং করা হয়েছে এবং ফলাফল ‘সম্পূর্ণ স্বাভাবিক’। তিনি বলেন, এই বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে এমন পরীক্ষা উপকারী।

তবে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক রাইনার তখন বলেন, এ ধরনের পরীক্ষা সাধারণ নিয়ম নয় এবং এটি সম্ভবত কোনো চিকিৎসাজনিত উদ্বেগ থেকেই করা হয়েছে। কিন্তু হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন।

গত মাসে ওভাল অফিসের এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে কিছু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পড়তে দেখা যায়। কিন্তু এমন দাবি নাকচ করে হোয়াইট হাউস একে ‘ভিত্তিহীন গল্প’ বলে উড়িয়ে দেয়। পরে এটি নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদন ছাপা হলে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তবে চলতি মাসে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে তাঁকে আবারও তন্দ্রাচ্ছন্ন দেখা যায়।

এখন বাঁ হাতের দাগের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেনশিয়াল ইতিহাসবিদ টিমোথি নাফতালি বলেন, প্রেসিডেন্ট তরুণ নন। যখন শক্তির ভাবমূর্তি অতিরিক্তভাবে তুলে ধরা হয়, তখন সামান্য দুর্বলতাও বড় হয়ে ধরা দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোপালগঞ্জ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন

দুই উপদেষ্টার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েও দেশে আসতে পারেননি সাকিব

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দক্ষিণ আফ্রিকায় ঐতিহ্যবাহী গণখতনা, সংক্রমণ ও পানিশূন্যতায় মৃত্যু ৪১

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ আফ্রিকায় সাবালক হওয়ার ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানগুলো অত্যন্ত গোপনীয়। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ আফ্রিকায় সাবালক হওয়ার ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানগুলো অত্যন্ত গোপনীয়। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ আফ্রিকায় সাবালক হওয়ার ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব (খতনা) পালন করতে গিয়ে গত দুই মাসে অন্তত ৪১ জন তরুণের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দেশটির সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী ভেলেনকোসিনি হ্লাবিসা এ তথ্য জানিয়েছেন। মৃত তরুণদের অধিকাংশই খতনাপরবর্তী সংক্রমণ ও ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার কারণে প্রাণ হারিয়েছে বলে জানা গেছে।

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার খোসা, এনদেবেলে, সোথো ও ভেন্ডা সম্প্রদায়ের কিশোর ও তরুণেরা ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবে অংশ নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার শিশু আইন (২০০৫) অনুযায়ী, সাধারণত ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের খতনা করানো হয়। এর নিচে খতনা করানো দেশটিতে আইনত নিষিদ্ধ।

মন্ত্রী ভেলেনকোসিনি হ্লাবিসা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, ৪১ তরুণের মৃত্যুর পেছনে স্কুলগুলোর চরম অবহেলা ও অভিভাবকদের অসচেতনতাই দায়ী। তিনি জানান, যেসব স্কুলে খতনার অনুষ্ঠান হয়, তারা অনেক সময় তরুণদের পানি পান করতে বাধা দেয়। তাদের ধারণা, পানি না খেলে ক্ষত দ্রুত শুকাবে। কিন্তু অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতার কারণে এটি মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার আইন অনুযায়ী, যেসব স্কুলে খতনা করানো হয়, তাদের নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশটিতে প্রচুর অবৈধ স্কুল গড়ে উঠেছে, যেখানে ১৬ বছরের নিচেও খতনা করানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর অধিকাংশ মৃত্যু এসব অনিবন্ধিত স্কুলেই ঘটেছে। এ ছাড়া অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর পর আর কোনো খোঁজ নেন না বা স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা-ও তদারকি করেন না।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেপ প্রদেশকে এই মৃত্যুর ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে ২১ জন তরুণ মারা গেছে। এ ছাড়া ফ্রি স্টেট প্রদেশে ১৩ জন এবং অন্যান্য এলাকায় আরও সাতজনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।

মন্ত্রী ভেলেনকোসিনি হ্লাবিসা আরও জানান, অবৈধ স্কুলগুলোতে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। সংক্রমণের শিকার হয়ে আরও প্রায় ২০০ জন তরুণ বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

আফ্রিকান সংস্কৃতিতে ছেলেদের ঘর থেকে দূরে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ, দায়িত্ব ও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো অস্ত্রোপচার ছাড়াই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে খতনা। উৎসব শেষে তরুণেরা যখন বাড়ি ফেরে, তখন বড় ধরনের উদ্‌যাপন করা হয়। তবে প্রতিবছরই এই ‘ম্যানহুড’ বা পুরুষত্ব প্রমাণের পরীক্ষায় শত শত তরুণ পঙ্গুত্ববরণ করে কিংবা প্রাণ হারায়।

তবে দেশটির সরকার এবার ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সব অংশীদারকে নিয়ে একটি জাতীয় সম্মেলন ডাকা হবে, যাতে এই উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভবিষ্যতে মৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোপালগঞ্জ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন

দুই উপদেষ্টার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েও দেশে আসতে পারেননি সাকিব

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রিটেনের রানি ক্যামিলাও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্রিটেনের রানি ক্যামিলা। ফাইল ছবি
ব্রিটেনের রানি ক্যামিলা। ফাইল ছবি

ব্রিটেনের রানি ক্যামিলা কিশোর বয়সে ট্রেনে এক ব্যক্তির হামলার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বলেছেন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ওই হামলার ঘটনা তাঁকে তীব্র ক্ষোভে ভরিয়ে দিয়েছিল।

আজ বুধবার নারী নির্যাতন বিষয়ে প্রচারিত এক আলোচনায় ক্যামিলা বলেন, ‘আমি যখন কিশোরী ছিলাম, তখন ট্রেনে আমার ওপর হামলা হয়েছিল। সেই সময় আমি ভীষণ রেগে গিয়েছিলাম। এটা এখনো মনে আছে। আমি তখন বই পড়ছিলাম। হঠাৎ এই ছেলেটি বা বলা ভালো লোকটি আমার ওপর হামলা করে। আমি তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিলাম।’

রাজা তৃতীয় চার্লসের স্ত্রী জানান, যিনি তাঁর ওপর হামলা করেছিলেন, তাঁকে তিনি চিনতেন না।

৭৮ বছর বয়সী ক্যামিলা দীর্ঘদিন ধরে যৌন ও পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে কাজ করা বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা ও উদ্যোগের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন এবং ভুক্তভোগীদের সহায়তায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।

এই হামলার ঘটনা প্রথম প্রকাশ পায় গত সেপ্টেম্বরে, যখন রাজপরিবার নিয়ে লেখা একটি বই দ্য টাইমস পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়। তবে এর আগে বাকিংহাম প্যালেস থেকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

বিবিসিকে ক্যামিলা বলেন, ‘আমি ট্রেন থেকে নামার পর আমার মা আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “তোমার চুল এমন এলোমেলো কেন? আর তোমার কোটের বোতাম কোথায়?’”

ক্যামিলা বলেন, ‘ঘটনাটি আমাকে ভীষণ ক্ষুব্ধ করেছিল। সেই অনুভূতি বহু বছর ধরে মনের ভেতর কোথাও রয়ে গেছে।’

ওই বইয়ে বলা হয়, ঘটনাটি ঘটে লন্ডনের প্যাডিংটন স্টেশনের দিকে যাওয়া একটি ট্রেনে। তখন ক্যামিলার বয়স ছিল প্রায় ১৬ বা ১৭ বছর। জুতা খুলে হামলাকারীর যৌনাঙ্গে আঘাত করেছিলেন তিনি।

বইটিতে বলা হয়, প্যাডিংটন স্টেশনে পৌঁছানোর পর তিনি এক কর্মকর্তাকে হামলাকারীকে দেখিয়ে দেন এবং পরে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সাক্ষাৎকারে ক্যামিলা এসব বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করেননি।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোপালগঞ্জ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন

দুই উপদেষ্টার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েও দেশে আসতে পারেননি সাকিব

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত