Ajker Patrika

পাকিস্তান থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে আফগান শরণার্থীদের, বিপাকে হাজারো পরিবার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তোরখাম সীমান্তে এভাবেই অপেক্ষা করছে আফগান পরিবারগুলো। ছবি: এএফপি
তোরখাম সীমান্তে এভাবেই অপেক্ষা করছে আফগান পরিবারগুলো। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানে বসবাসরত অবৈধ বা নথিহীন আফগান নাগরিকদের দেশত্যাগে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পর বহু আফগান দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ এপ্রিলের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই চলতি মাসে ১৯ হাজার ৫০০ জনের বেশি আফগানকে পাকিস্তান থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এই সময়সীমার আগেই মোট ৮০ হাজারেরও বেশি আফগান পাকিস্তান ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সম্প্রতি, পাকিস্তান তার ভূখণ্ডে বসবাসরত অনথিভুক্ত আফগান ও যাঁদের সাময়িক থাকার অনুমতি ছিল তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জোরদার করেছে। ইসলামাবাদের দাবি, তারা আর এত বিপুলসংখ্যক আফগানকে জায়গা দিতে পারছে না।

তালেবান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন প্রায় ৭০০-৮০০ পরিবারকে পাকিস্তান থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মাসগুলোতে আরও ২০ লাখ মানুষ এভাবে ফিরে আসতে পারেন।

শনিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আফগান কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে কাবুল সফর করেছেন। সেখানে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি আফগানদের গণহারে ফেরত পাঠানো নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।

সীমান্তে নির্বাসিত কিছু আফগান জানিয়েছেন, তাঁরা পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের পরিবার যুদ্ধের কারণে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিল; কিন্তু এখন তাঁদের জোর করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ৩৫ লাখের বেশি আফগান বসবাস করছেন। এর মধ্যে প্রায় ৭ লাখ মানুষ ২০২১ সালে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর এসেছেন। জাতিসংঘের অনুমান, তাদের অর্ধেকের কোনো নথি নেই।

দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধের মধ্যে পাকিস্তান আফগানদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু সরকার বলছে, শরণার্থীদের এই বিপুল সংখ্যা এখন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি এবং জনসেবার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি উভয় পক্ষের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সীমান্তে সংঘর্ষ বেড়েছে। পাকিস্তান এর জন্য আফগানিস্তানে অবস্থিত সন্ত্রাসীদের দায়ী করে, যা তালেবান অস্বীকার করে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার কাবুলে বৈঠকে উভয় পক্ষ ‘পারস্পরিক স্বার্থের সব বিষয়’ নিয়ে আলোচনা করেছে।

পাকিস্তান নথিবিহীন আফগানদের দেশ ছাড়ার সময়সীমা এক মাস বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল নির্ধারণ করেছিল।

তুরখাম সীমান্ত ক্রসিংয়ে কিছু নির্বাসিত আফগান বিবিসিকে বলেছেন, তাঁরা কয়েক দশক আগে আফগানিস্তান ছেড়েছিলেন অথবা কখনোই সেখানে বাস করেননি। সাইয়েদ রহমান নামের পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের এক শরণার্থী বলেন, ‘আমি আমার সারাজীবন পাকিস্তানে কাটিয়েছি। আমি সেখানে বিয়ে করেছি। এখন আমি কী করব?’

তিন মেয়ের বাবা সালেহ তালেবান শাসনের অধীনে তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁর মেয়েরা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি স্কুলে পড়ত। কিন্তু এখন আফগানিস্তানে গেলে তাঁদের পড়ালেখার কী হবে! কারণ সেখানে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ। তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমার সন্তানেরা পড়াশোনা করুক। তাদের স্কুলের বছরগুলো নষ্ট হোক, তা আমি চাই না। সবার শিক্ষার অধিকার রয়েছে।’

আরেকজন ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা কখনো আফগানিস্তান দেখেনি, এমনকি আমিও আর জানি না এটি কেমন। বসতি স্থাপন এবং কাজ খুঁজে পেতে আমাদের এক বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। আমরা অসহায় বোধ করছি।’

সীমান্তে সশস্ত্র পাকিস্তানি ও আফগান প্রহরীদের তত্ত্বাবধানে পুরুষ ও নারীরা পৃথক গেট দিয়ে যান। ফিরে আসা কিছু মানুষ বয়স্ক—একজনকে স্ট্রেচারে এবং আরেকজনকে বিছানায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

সামরিক ট্রাক পরিবারগুলোকে সীমান্ত থেকে অস্থায়ী আশ্রয়ে নিয়ে যায়। দূরবর্তী প্রদেশের বাসিন্দারা সেখানে কয়েক দিন থাকেন, তাঁদের নিজ এলাকায় যাওয়ার পরিবহনের অপেক্ষায়। ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ধুলাবালুর হাত থেকে বাঁচতে পরিবারগুলো ত্রিপলের নিচে জড়ো হয়েছে। সীমিত সংস্থান এবং আশ্রয়ের অভাবে প্রায়ই সেখানে তীব্র তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে।

ক্যাম্পের তালেবান-নিযুক্ত অর্থ কমিটির সদস্য হেদায়েতুল্লাহ ইয়াদ শিনওয়ারি জানান, ফিরে আসা মানুষেরা কাবুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার আফগানি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা) সহায়তা পান।

এই গণনির্বাসন আফগানিস্তানের ভঙ্গুর অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। বর্তমানে আফগানিস্তানের অর্থনীতি চরম সংকটে রয়েছে এবং জনসংখ্যারও প্রায় ৪৫ মিলিয়নে পৌঁছেছে। এ মুহূর্তে পাকিস্তান থেকে ফেরত পাঠানো এত শরণার্থী বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।

তুরখাম ক্রসিংয়ে তালেবানের শরণার্থীবিষয়ক প্রধান বখত জামাল গোহার বলেন, ‘আমরা বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান করেছি; কিন্তু এত বিপুলসংখ্যক মানুষের আগমন স্বাভাবিকভাবেই নতুন সমস্যা অসুবিধা নিয়ে আসে। এই মানুষেরা কয়েক দশক আগে চলে গিয়েছিল এবং তাঁদের সব জিনিসপত্র ফেলে এসেছিল। বিগত ২০ বছরের যুদ্ধে তাঁদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’

প্রায় প্রতিটি পরিবার বিবিসিকে বলেছে, পাকিস্তানি সীমান্তপ্রহরীরা তাঁদের সঙ্গে কী নিয়ে যেতে পারবে, তা সীমিত করেছে। তবে এই অভিযোগের জবাবে চৌধুরী নামের পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পাকিস্তানের এমন কোনো নীতি নেই, যা আফগান শরণার্থীদের তাঁদের গৃহস্থালির জিনিসপত্র সঙ্গে নিতে বাধা দেয়।’

প্রচণ্ড রোদের মধ্যে রাস্তার পাশে বসে থাকা এক ব্যক্তির কথা বলেছেন বিবিসির সাংবাদিক। ওই ব্যক্তি বলেন, তাঁর সন্তানেরা পাকিস্তানে থাকার জন্য কাকুতি-মিনতি করেছিল, কারণ সেখানেই তাদের জন্ম। তাদের অস্থায়ী থাকার অনুমতি ছিল; কিন্তু মার্চ মাসে তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা আর কখনোই ফিরে যাব না। যেভাবে আমাদের সঙ্গে ব্যবহার করা হলো, এরপর আর না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি সফল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট তিনটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বাত্মক নৌ অবরোধ’ ঘোষণার পর থেকে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ড বর্তমানে একটি তেল ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা জাহাজটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই অভিযান নিয়ে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর কেভিন হ্যাসেট আজ জানিয়েছেন, এর আগে জব্দ করা দুটি ট্যাংকার ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ বা কালোবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দেশে তেল সরবরাহ করছিল।

কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, এই আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কেবল কালোবাজারি জাহাজগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক ও তেল ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। একজন তেল ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামীকাল সোমবার এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট ভেসেলগুলোর ওপর অন্তত দুই ডজন সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এসব সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫২
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত