Ajker Patrika

ইউক্রেনের পর এবার পাকিস্তানের খনিজে নজর যুক্তরাষ্ট্রের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১: ৪০
বিশ্বের বৃহত্তম খেওরা সল্ট মাইন। এটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ঝিলাম শহরে অবস্থিত। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের বৃহত্তম খেওরা সল্ট মাইন। এটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ঝিলাম শহরে অবস্থিত। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েই ইউক্রেনের বিরল খনিজের ওপর নজর দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি একটি চুক্তিরও দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল ওয়াশিংটন ও কিয়েভ। যদিও নানা কারণে সেই চুক্তি এখনো হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র কেবল ইউক্রেনের খনিজে নজর দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, এবার দেশটি নজর দিয়েছে পাকিস্তানের বিরল খনিজেও।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এরিক মেয়ার গত সপ্তাহে ইসলামাবাদ সফরে আসেন। সেখানে তিনি একটি খনিজ বিনিয়োগ ফোরামে যোগ দেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে এক বৈঠকে মেয়ার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো পাকিস্তানের অব্যবহৃত খনিজ সম্পদে বিনিয়োগে আগ্রহী।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক ব্যাপক আগ্রহের প্রতিফলন। আলোচনার ঠিক দুই দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে এক ফোনালাপে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ নিয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা বলেন।

এই আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসেও দেখা যাচ্ছে। কংগ্রেসের পাকিস্তান ককাসের সহসভাপতি রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা জ্যাক বার্গম্যান সম্প্রতি খনিজকে অংশীদারত্বের ‘মূল খাত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বার্গম্যান গত সপ্তাহান্তে ইসলামাবাদ সফর করেন। ২০২৩ সালের পর এটি ছিল পাকিস্তানে প্রথম কোনো কংগ্রেস প্রতিনিধিদলের সফর।

পাকিস্তানের খনিজ ভান্ডারে তামা ও সোনার বিশাল মজুত ছাড়াও লিথিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রয়েছে। ধারণা করা হয়, এই খনিজ সম্পদ ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমাইলের বেশি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটি যুক্তরাজ্যের আয়তনের দ্বিগুণেরও বেশি।

ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে তাদের খনিজ সম্পদের বিপুল পরিমাণ মজুতের কথা বলে আসছে। বর্তমানে এর আর্থিক মূল্য ৮ ট্রিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করা হয়। কিন্তু পাকিস্তান দীর্ঘকাল ধরে আগ্রহী বিনিয়োগকারী খুঁজে পেতে হিমশিম খেয়েছে। তাই ট্রাম্প প্রশাসনের এই আগ্রহকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান খনিজ সহযোগিতার সম্ভাবনাকে বেশি করে দেখা ঠিক হবে না। গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি এ ধরনের অংশীদারত্বকে বিপজ্জনক জুয়ায় পরিণত করেছে।

২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসার পর দুই দেশের সম্পর্কে যখন অংশীদারত্বের ভিত্তি খোঁজা হচ্ছিল, তখন খনিজকে নতুন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে দেখা যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ খনিজ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের জোরালো আগ্রহ সুবিদিত। চীন সম্প্রতি বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পাকিস্তানকে সুযোগ হিসেবে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রকে বাড়তি প্রেরণা জোগাচ্ছে।

অন্যদিকে, পাকিস্তান হয়তো তাদের খনিজ সম্পদকে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার সুযোগ হিসেবে দেখছে। শাহবাজ শরিফ বলেছেন, খনিজ বিনিয়োগ পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক আর্থিক নির্ভরতা কমাতে এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

তবে নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। খনি কোম্পানিগুলো প্রায়শই ঝুঁকিপূর্ণ ভূখণ্ডে কাজ করে, তাই উচ্চ ঝুঁকি গ্রহণে তারা অভ্যস্ত। কিন্তু পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্ভাব্য খনি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশটিতে ৫২১টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় এটি ৭০ শতাংশ বেশি।

৫২১টি হামলার ৯৫ শতাংশের বেশি হয়েছে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে। সরকারি তথ্য অনুসারে, পাকিস্তানের বেশির ভাগ খনিজ সম্পদ এই দুটি প্রদেশেই অবস্থিত। ২০২৫ সালেও এই প্রবণতা অব্যাহত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে ৫৪টি সন্ত্রাসী হামলার খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৫৩টিই ছিল এই দুই প্রদেশে।

বিচ্ছিন্নতাবাদী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) পাকিস্তানের অন্যতম শক্তিশালী সহিংস গোষ্ঠী। ২০২৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিএলএ এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ ঘোষিত বেলুচ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলার সংখ্যা ১১৯ শতাংশ বেড়েছে।

সাধারণভাবে বলতে গেলে, গত কয়েক দশকে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন এবং বড় অবকাঠামো প্রকল্প স্থানীয় সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সম্পদের শোষণ নিয়ে ক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরে বিএলএ হামলার অন্যতম কারণ।

ফলে, খনিজ বিনিয়োগকারীরা বারুদের স্তূপের মধ্যে পা রাখতে যাচ্ছেন, যদি তাঁরা দেশটিতে বিনিয়োগ করেন। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান খনিজ বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা উদ্বেগ পর্যাপ্তভাবে সমাধান করতে পারেনি, যদিও চীনের অবকাঠামো প্রকল্পগুলোকে রক্ষা করার জন্য হাজার হাজার নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য যেসব দেশের খনিজ বিনিয়োগকারীরা পাকিস্তানে সুযোগ খুঁজছেন, তারা হয়তো তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আনার জন্য চাপ দিতে পারেন। এটি পাকিস্তানে অবৈধ। তবে ইসলামাবাদ যদি এতে রাজি হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে উঠবে।

পাকিস্তানে খনিজ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবকাঠামো ও জ্বালানির সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শাহবাজ শরিফ বিনিয়োগকারীদের দেশেই খনিজ প্রক্রিয়াকরণের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তানে কর্মরত কানাডাভিত্তিক ব্যারিক গোল্ডের কর্মকর্তারা বলছেন দেশটিতে পর্যাপ্ত সস্তা ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নেই। (ব্যারিক গোল্ড বেলুচিস্তানে সোনা ও তামার খনি উন্নয়নে পাকিস্তানের সঙ্গে অংশীদারত্ব করছে।)

পাকিস্তান দীর্ঘকাল ধরে তথাকথিত রিসোর্স কার্স বা সম্পদের অভিশাপের একটি উদাহরণ হয়ে আছে। বিপুল খনিজ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দেশটি অর্থনৈতিকভাবে সংগ্রাম করছে। নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং অন্যান্য বাধা বিবেচনা করলে, এই অবস্থা থেকে খুব শিগগিরই বেরিয়ে আসা কঠিন হবে।

তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতেও বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করে।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপি শাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালায় এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেয়। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপি শাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তর চেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিসমাসের প্রার্থনায় পুতিনের মৃত্যু চাইলেন জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।

পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’

তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’

একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।

দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত