Ajker Patrika

ইমরান খানের আরও ১৪ বছরের কারাদণ্ড, স্ত্রী বুশরার ৭ বছর

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২২: ৩৬
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে নতুন করে কারাদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তানি আদালত। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে নতুন করে কারাদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তানি আদালত। ছবি: সংগৃহীত

আল-কাদির ট্রাস্ট মামলা তথা ১৯ কোটি পাউন্ড দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। আজ শুক্রবার পাকিস্তানের ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদের একটি দায়রা আদালত এই রায় দেয়। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দায়রা আদালতের বিচারক নাসির জাভেদ রানা পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া তাদের ওপর বড় অঙ্কের জরিমানাও আরোপ করা হয়েছে।

আদালতের রায় অনুসারে, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে ১০ লাখ পাকিস্তানি রুপি এবং তাঁর স্ত্রীকে ৫ লাখ রুপি জরিমানা দিতে হবে। জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে, ইমরান খানকে আরও ছয় মাস এবং বুশরা বিবিকে তিন মাস অতিরিক্ত কারাগারে থাকতে হবে।

ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) প্রসিকিউটর জেনারেল সরদার মুজাফফর আব্বাসির নেতৃত্বে একটি দল আদিয়ালা জেলে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে এই রায় ঘোষণা শোনার জন্য উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী বুশরা বিবি, ব্যারিস্টার গহার আলী খান, শোয়েব শাহিন, সালমান আকরাম রাজাসহ অন্যান্য আইনজীবীরা।

রায় ঘোষণার পর বুশরা বিবিকে আটক করা হয়। সূত্র জানায়, আদিয়ালা জেলে তাঁর থাকার কক্ষ আগেই প্রস্তুত করা হয়েছিল। তাঁকে এবং এরই মধ্যে কারাগারে থাকা ইমরান খানকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই আসামিকে রায়ের সত্যায়িত কপি সরবরাহ করা হয়েছে, যাতে তারা চাইলে আপিল করতে পারেন।

রায়ের ভিত্তিতে ইমরান খান ‘দুর্নীতি’ এবং ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’—এর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, বুশরা বিবি ‘অবৈধ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের’ জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আদালত আল-কাদির ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইমরান খানকে ১৯৯৯ সালের জাতীয় জবাবদিহি অধ্যাদেশের ৯ (ক) (২) (৪) (৬) ধারা অনুযায়ী এবং বুশরা বিবিকে একই অধ্যাদেশের ৯ (ক) (১২) ধারা অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ১৪৮ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়েছে, বুশরার ভূমিকা দুর্নীতির ঘটনায় সহায়তা ও প্ররোচনায় সীমাবদ্ধ ছিল, যা তার শাস্তি কমানোর জন্য বিবেচিত হয়েছে।

রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার অভিযোগপত্রে উপস্থাপিত প্রমাণগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও সংগতিপূর্ণ ছিল। তবে, আসামিপক্ষ প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের অযোগ্য প্রমাণ করতে বা কোনো যৌক্তিক সন্দেহ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুই আসামি দণ্ডবিধির ২৬৫-ক ধারা অনুযায়ী আবেদন করেছিলেন, যা আদালত খারিজ করে দিয়েছে।

আদালত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে তাদের মামলা প্রমাণ করতে পেরেছে এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি বহাল রাখা হয়েছে।

আল-কাদির ট্রাস্ট মামলা কী

আল-কাদির ট্রাস্ট মামলাটি সাধারণত ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মামলা নামে পরিচিত। ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং আরও কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) থেকে পাকিস্তান সরকারের কাছে পাঠানো প্রায় ৫০ বিলিয়ন রুপি আল-কাদির ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ফান্ডে সমন্বয় করেছিলেন।

এই অর্থটি মূলত এক প্রভাবশালী আবাসন ব্যবসায়ীর জব্দকৃত সম্পদ সম্পর্কিত। এই সম্পদ পিটিআই সরকারের শাসনামলে এনসিএ বাজেয়াপ্ত করেছিল। সে সময় ব্রিটিশ ক্রাইম এজেন্সি জানিয়েছিল, এই অর্থ পাকিস্তান সরকারের কাছে পাঠানো হবে, তবে এটি একটি নাগরিক মামলা এবং এর মাধ্যমে কোনো অপরাধের প্রমাণ মেলে না।

তবে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) এই বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করে। ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ইমরান এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এনএবি জানায়, ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এনসিএর সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি অনুমোদন করেন, যার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

এতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এই অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হবে। কিন্তু এর কয়েক সপ্তাহ পরেই আল-কাদির ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, এই কালো টাকার বৈধতা প্রদানে আইনি সুরক্ষা দিতে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল এই ট্রাস্ট।

পিটিআই নেতা জুলফি বুখারি, বাবর আওয়ান, তৎকালীন ফার্স্ট লেডি বুশরা এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফারাহ গোগিকে ট্রাস্টের সদস্য করা হয়। এনএবি আরও অভিযোগ করে, বুখারি চুক্তি অনুমোদনের কয়েক মাস পর ৪৫৮ কানাল জমি পেয়েছিলেন। পরে এই জমি ট্রাস্টে স্থানান্তরিত হয়। এই জমি বর্তমানে ইমরান, বুশরা ও ফারাহের নামে নিবন্ধিত।

মামলার তদন্ত শুরু হলে ২০২৩ সালের ৯ মে ইমরানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই প্রথমবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর পিটিআই সমর্থকদের দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, যেখানে সামরিক ও সরকারি স্থাপনা আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

তবে কয়েক দিন পর ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ইমরানের জামিন মঞ্জুর করে এবং সুপ্রিম কোর্ট তাঁর গ্রেপ্তারকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেন। যাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী পারভেজ খট্টক ও জুবাইদা জলাল, প্রধান সচিব আজম খান এবং আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা।

পারভেজ খট্টক সাক্ষ্যে জানান, তখনকার জবাবদিহি উপদেষ্টা মির্জা শাহজাদ আকবর মন্ত্রিসভায় একটি সিল করা নথি উপস্থাপন করেন, যা পাকিস্তান সরকার ও এনসিএর মধ্যে অপরাধমূলক অর্থ ফেরত দেওয়ার একটি চুক্তি ছিল। আজম খান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। জুবাইদা জলাল জানান, মন্ত্রিসভাকে ‘অপরাধমূলক অর্থের’ ব্যবসায়ীর কাছে স্থানান্তরের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

মামলায় অন্য ছয় অভিযুক্ত জুলফি বুখারি, ফারাহ গোগি, মির্জা শাহজাদ আকবর এবং জিয়া-উল-মুস্তফা নাসিমকে পলাতক ঘোষণা করা হয়। আদালত তাদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দেয়।

ইমরান আদালতে ১৬ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দেন, তবে আদালত তাদের তলব করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় চারজন বিচারক পরিবর্তন হয়, যার মধ্যে ছিলেন বিচারপতি মোহাম্মদ বশির, বিচারপতি নাসির জাভেদ রানা, বিচারপতি মোহাম্মদ আলী ওয়ারাইচ এবং বিচারপতি রানা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আশপাশে ১৫ হাজার সেনা, ‘কোয়ারেন্টিন’ আরোপের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

হোয়াইট হাউস মার্কিন সামরিক বাহিনীকে আগামী অন্তত ২ মাস ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর ‘কোয়ারেন্টিন’ বা অবরোধ আরোপের দিকেই প্রায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করার নির্দেশ দিয়েছে। রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন বর্তমানে কারাকাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সামরিক শক্তির চেয়ে অর্থনৈতিক পথকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

গতকাল বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সামরিক পথ এখনো খোলা আছে সত্যি, তবে হোয়াইট হাউসের লক্ষ্য অর্জনে আপাতত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে।’

ভেনেজুয়েলা নিয়ে নিজের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জনসমক্ষে কিছুটা অস্পষ্টতার রাখলেও, গোপনে তিনি নিকোলাস মাদুরোকে দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে রয়টার্স খবর প্রকাশ করেছে। গত সোমবার ট্রাম্প বলেন, মাদুরোর জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপগুলো মাদুরোর ওপর প্রবল চাপ তৈরি করেছে। আমাদের বিশ্বাস, জানুয়ারির শেষ নাগাদ ভেনেজুয়েলা এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, যদি না তারা আমেরিকার কাছে নতি স্বীকার করে বড় কোনো আপস করতে রাজি হয়।’

ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার করছে। গত কয়েক মাস ধরে তাঁর প্রশাসন দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা এবং মাদক বহনকারী হিসেবে অভিযুক্ত নৌকাগুলোর ওপর বোমা হামলা চালাচ্ছে। অনেক দেশই এই আক্রমণকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।

এ ছাড়া, ট্রাম্প প্রায়ই স্থলের মাদক অবকাঠামোতে বোমা হামলার হুমকি দিয়েছেন এবং কারাকাস অভিমুখে সিআইএ-র গোপন তৎপরতার অনুমোদন দিয়েছেন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত মার্কিন কোস্টগার্ড ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল বোঝাই দুটি ট্যাংকার জব্দ করেছে।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তার এই মন্তব্য এমন সময়ে এল যখন রয়টার্স খবর দিয়েছে যে, কোস্টগার্ড ‘বেলা-১’ নামে একটি খালি ও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজ জব্দের জন্য অতিরিক্ত বাহিনীর অপেক্ষায় রয়েছে। গত রোববার তারা প্রথম এটি আটকের চেষ্টা করেছিল।

মঙ্গলবার জাতিসংঘে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল মনকাডা বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা কোনো হুমকি নয়। আসল হুমকি হলো মার্কিন সরকার।’

এদিকে, পেন্টাগন ক্যারিবীয় অঞ্চলে ১৫ হাজারেরও বেশি সৈন্যের এক বিশাল সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি বিমানবাহী রণতরী, ১১টি যুদ্ধজাহাজ এবং এক ডজনেরও বেশি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। এই সম্পদের অনেকগুলো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সহায়ক হলেও, যুদ্ধবিমানের মতো কিছু সরঞ্জাম এই কাজের জন্য খুব একটা উপযুক্ত নয়।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে জানিয়েছে, তারা মাদুরোকে সম্পদহীন করার জন্য ‘সর্বোচ্চ সীমা’ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তা কার্যকর করবে। চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় আসা-যাওয়া করা সমস্ত নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত তেল ট্যাংকারের ওপর ‘অবরোধ’ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তবে হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তার মুখে এখন ‘কোয়ারেন্টিন’ শব্দের ব্যবহার ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল সংকটের স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি সংঘাত এড়াতে এই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। কেনেডির তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট ম্যাকনামারা ২০০২ সালে বলেছিলেন, ‘আমরা একে কোয়ারেন্টিন বলেছিলাম কারণ ‘ব্লকেড’ বা অবরোধ একটি যুদ্ধের শব্দ।’

বুধবার জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এই অবরোধের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের শক্তি প্রয়োগকে ‘অবৈধ সশস্ত্র আগ্রাসন’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে বাসে আগুন, জীবন্ত দগ্ধ হয়ে ৯ জনের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আগুন ধরে যাওয়া বাস। ছবি: সংগৃহীত
আগুন ধরে যাওয়া বাস। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কর্ণাটকের চিত্রদুর্গ জেলায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৯ জন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে ৪৮ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি ট্রাকের ধাক্কায় একটি বেসরকারি স্লিপার বাসে আগুন ধরে গেলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। বাসটি বেঙ্গালুরু থেকে শিমোগা যাচ্ছিল।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ডিভাইডার টপকে বাসটিকে সজোরে ধাক্কা মারে। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘বৃহস্পতিবার ভোরে একটি লরি ডিভাইডার পার হয়ে বাসটিকে ধাক্কা দেয়। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, লরিটি বাসের তেলের ট্যাংকে আঘাত করেছিল, যার ফলে জ্বালানি ছড়িয়ে পড়ে আগুন ধরে যায়। কয়েকজন যাত্রী কোনোমতে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হলেও এখন পর্যন্ত আটজন যাত্রী এবং ট্রাকচালকের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।’

সেই ভয়াবহ মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে আদিত্য নামের এক যাত্রী বলেন, ‘চারপাশে শুধু মানুষের আর্তনাদ। দুর্ঘটনার পর আমি পড়ে গিয়েছিলাম এবং দেখি চারদিকে আগুন। দরজা খোলা যাচ্ছিল না। আমরা জানালার কাচ ভেঙে পালানোর চেষ্টা করি...মানুষ একে অপরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তা কঠিন হয়ে পড়ে।’

এই দুর্ঘটনার জেরে তুমকুর রোডে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গোকর্ণগামী এক নারী পর্যটক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমাদের সামনে একটি বাসে আগুন লেগেছে। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আমরা আটকে আছি, যা পরিষ্কার হতে আরও ঘণ্টা দু-এক সময় লাগতে পারে।’

এর আগে নভেম্বরেও তেলেঙ্গানাতেও একই ধরনের এক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। হায়দরাবাদ-বিজাপুর মহাসড়কে পাথরবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়। তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন নিগমের সেই বাসটিতে প্রায় ৭০ জন যাত্রী ছিলেন। ট্রাকের ওপর থাকা পাথর বাসের ভেতরে পড়ে যাওয়ায় অনেক যাত্রী চাপা পড়ে মারা যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তে দুই দেশের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ এলাকায় ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে ভারত। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে একটি ‘অসম্মানজনক কাজ’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট দুই দেশকেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসার আহ্বান জানিয়েছে।

কম্বোডিয়ার প্রিয়া বিহার প্রদেশের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থাই সামরিক বাহিনী একটি এক্সকাভেটর ব্যবহার করে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটি সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার আন সেস এলাকায় অবস্থিত ছিল।

প্রিয়া বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বৌদ্ধ ও হিন্দু অনুসারীদের কাছে পূজনীয় প্রাচীন মন্দির ও মূর্তি ধ্বংসের এই ঘটনা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।’ তবে থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সীমান্ত বিরোধের জের ধরে এ ধরনের কাজ অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘ভূখণ্ড নিয়ে দাবি যাই থাকুক না কেন, এ ধরনের অসম্মানজনক কাজ বিশ্বজুড়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়।’

ভারত আবারও উভয় পক্ষকে শান্তি বজায় রাখতে এবং জানমাল ও ঐতিহ্যের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সংলাপ ও কূটনীতির পথে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ঔপনিবেশিক আমলের সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের শুরু। গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের লড়াইয়ে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

বুধবার থেকে উভয় দেশের সামরিক কর্মকর্তারা আবারও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।

বিষ্ণু মূর্তি ধ্বংসের এই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল আশা করছে, সংঘাতের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান হবে। হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই বড়দিনের আনন্দ খুঁজছে ক্ষুদ্র খ্রিষ্টান সম্প্রদায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৭
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে

গাজা উপত্যকায় দুই বছর ধরে চলা ধ্বংসলীলা আর লাশের মিছিলের মাঝেও বড়দিনের আনন্দ ফিরে পাওয়ার এক বিষাদময় চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানকার ক্ষুদ্র খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। একটি নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি দিলেও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি আর বাস্তুচ্যুত মানুষের হাহাকার অনেক ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে।

৭৬ বছর বয়সী আত্তাল্লাহ তরাজি সম্প্রতি বড়দিনের উপহার হিসেবে এক জোড়া মোজা আর স্কার্ফ পেয়েছেন। গাজার কনকনে শীত থেকে বাঁচতে এগুলোই এখন তাঁর বড় সম্বল। গির্জার অন্য সদস্যদের সঙ্গে তরাজি যখন গাইলেন—‘খ্রিষ্টের জন্ম হয়েছে, হালেলুইয়া’ (একটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ প্রভুর প্রশংসা), তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বিভীষিকা ঢাকা পড়েছিল বিশ্বাসের সুরে।

গাজার সেন্ট্রাল সিটি এলাকার ‘হলি ফ্যামিলি চার্চ’ কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেওয়া তরাজি বলেন, ‘আমরা এই পবিত্র মুহূর্তে যুদ্ধ, বিপদ আর বোমাবর্ষণের কথা ভুলে যেতে চাই। খ্রিষ্টের জন্মের আনন্দ আমাদের সব তিক্ততাকে ছাপিয়ে যাক।’

তবে সবার জন্য উৎসবের অনুভূতি এক নয়। শাদি আবু দাউদের জন্য এবারের বড়দিনটি অত্যন্ত কষ্টের। গত জুলাই মাসে এই ক্যাথলিক চার্চ কম্পাউন্ডেই ইসরায়েলি হামলায় তাঁর মা নিহত হন ও ছেলে আহত হয়। ইসরায়েল একে ‘দুর্ঘটনা’ বলে দুঃখ প্রকাশ করলেও স্বজন হারানোর ক্ষত এখনো দগদগে। আবু দাউদ বলেন, জখম এখনো কাঁচা। এখানে কোনো উৎসব নেই, আমরা এখনো ‘না যুদ্ধ না শান্তি’র এক অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে বাস করছি।

গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা এখন নগণ্য। যুদ্ধের কারণে অনেক পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ২৩ বছর বয়সী ওয়াফা ইমাদ এলসায়েঘ জানান, বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়রা না থাকায় আগের মতো আমেজ নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে সাজসজ্জা করছি ঠিকই, কিন্তু যাদের সঙ্গে সব আনন্দ ভাগ করে নিতাম, তারা আজ গাজায় নেই। এই পরিবেশ আগের মতো করে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’

৩৫ বছর বয়সী মা এলিনোর আমাশ তাঁর সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে ঘরে বড়দিনের গাছ (ক্রিসমাস ট্রি) সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানেরা কিছু চকলেট আর মিষ্টি পেয়ে বোমার ভয় ছাড়া শ্বাস নিতে পারছে। কিন্তু তাঁবুগুলোতে বসবাসকারী মানুষের কষ্ট দেখে চোখে জল আসে।’

গাজার খ্রিষ্টানরা মনে করেন, তাঁরা সংখ্যায় যত কম হোক না কেন, এটি এই ভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের এক অটল সাক্ষ্য। আত্তাল্লাহ তরাজি প্রার্থনা করেন যেন তাঁর জাতি শান্তি ও স্বাধীনতা পায়। তিনি বিশ্বাস করেন, এই পরিস্থিতির চেয়েও বড়দিনের আনন্দ এবং তাঁদের বিশ্বাস অনেক বেশি শক্তিশালী।

গত অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর গাজায় হামলার তীব্রতা কমলেও মাঝেমধ্যে প্রাণঘাতী আঘাত আসছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।

অতিবৃষ্টিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবুগুলো তলিয়ে গেছে, যা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত