Ajker Patrika

হামাস–ইসরায়েল আলোচনা চলছে, মধ্যস্থতায় কাতার

আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ০১: ৩৪
হামাস–ইসরায়েল আলোচনা চলছে, মধ্যস্থতায় কাতার

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বন্দী বিনিময়ের আলোচনা চলছে। গত শনিবার আকস্মিক হামলা চালিয়ে নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস। এখন ইসরায়েলে বন্দী ৩৬ জন নারী ও শিশুর বিনিময়ে ইসরায়েলি নারী ও শিশুদের মুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামাস এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্ভাব্য বন্দী বিনিময়সহ মধ্যস্থতার আলোচনায় জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে গত শনিবার রাত থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে, সেটি এখনো চলমান। আলোচনা এখন পর্যন্ত ‘ইতিবাচকভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে’। 

এদিকে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, হামাসের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। তাঁরা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি আছেন। 

হামাস নেতা মুসা আবু মারজুক আল জাজিরাকে ফোনে জানান, যুদ্ধবিরতি বা এ ধরনের কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং যে কোনো রাজনৈতিক সংলাপের জন্য হামাস রাজি। গাজার এই সশস্ত্র গ্রুপটি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি কি না এমন প্রশ্নে মুসা আবু মারজুক এসব কথা বলেন। 

এই হামাস নেতা আরও বলেন, ইসরায়েল থেকে দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন দশজনকে আটক করে এনেছে হামাস। এর মধ্যে রাশিয়া এবং চীনের নাগরিকও রয়েছেন।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল–আনসারি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে সব পক্ষের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করছি। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে, রক্তপাত বন্ধ করা, বন্দীদের মুক্তি দেওয়া এবং নিশ্চিত করা যে, কোনো আঞ্চলিক বিস্তার ছাড়াই সংঘাত যাতে শেষ হয়।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘কোনও আলোচনা চলছে না।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। 

তবে কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনা চলার খবর এলেও উভয় পক্ষের মধ্যেই অগ্রগতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যদিও সূত্র বলছে, কাতারের কর্মকর্তারা দোহা এবং গাজায় অবস্থানরত হামাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। 

গত শনিবার গাজা থেকে আকস্মিকভাবে ইসরায়েল আক্রমণ করলে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে তেল আবিব। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিরোধই করতে পারেনি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর মধ্যে অন্তত ৯০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে হামাস এবং বেশ কয়েকজন জিম্মি নিয়ে গাজায় ফেরত যায় কিছু যোদ্ধা। বেশ কিছু এলাকাও হামাস নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। 

জবাবে গাজায় ব্যাপক বোমা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত ৭ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শতাধিক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। 

সূত্র জানিয়েছে, জিম্মি ইসরায়েলি নারী ও শিশুদের বিনিময়ে হামাস সম্ভাব্য যে ৩৬ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু বন্দীকে মুক্তির প্রস্তাব করছে—তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানায়নি ইসলামপন্থী এই গোষ্ঠী। ইসরায়েলি কারাগার থেকে এই ৩৬ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনার কোনো বিস্তারিত খবর আগে কোথাও আসেনি। 

এ ছাড়া গাজায় ঠিক কত সংখ্যক ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন সে সংখ্যাও অস্পষ্ট। তবে জানা যাচ্ছে, শনিবারের হামলার সময় ইসরায়েল থেকে নারী, শিশু, বয়স্ক এবং সেনাদের জিম্মি করেছে হামাস। 

অতীতে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার সঙ্গে সম্পর্কিত একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, কাতার এবং মিসর হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। লড়াইয়ের যে তীব্রতা তাতে আলোচনার অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

হামাস–নিয়ন্ত্রিত গাজায় ইসরায়েল এই মধ্যে তীব্র প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে। শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, গাজার ২৩ লাখ মানুষের খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধে ইসরায়েলের অবরোধ আরও কঠোর করা হবে। 

মিসরীয় নিরাপত্তা বিভাগের দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মিসর ইসরায়েল এবং হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। এখন লড়াই প্রশমিত করাই তাঁদের লক্ষ্য। সেই সঙ্গে ইসরায়েলি জিম্মিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। 

মিসর এরই মধ্যে ইসরায়েলকে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে পরিস্থিতি শান্ত করার সুযোগ রাখতে হামাসকে বলেছে, ইসরায়েলি বন্দীদের সঙ্গে যেন ভালো ব্যবহার করা হয়। 

তবে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যেভাবে বোমা হামলা তীব্রতর করেছে তাতে এই মধ্যস্থতা কঠিন হয়ে উঠেছে। মিসরীয় সূত্রগুলো এমনটিই বলছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাতারের নেতৃত্বাধীন আলোচনার বিষয়ে একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ‘বন্দী মুক্তির জন্য প্রক্রিয়ার বিষয়ে কোনো চুক্তি এখনো হয়নি।’ 

সম্ভাব্য বন্দী বিনিময়ের বিষয়ে কাতারের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সমন্বয় সম্পর্কে জানতে চাইলে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গত শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি ফোন কলের উল্লেখ করেছে। ওই ফোন কলে উভয়ে ‘ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় রক্ষায়’ সম্মত হয়েছে। 

হামাসের কাছে এ ব্যাপারে মন্তব্য চাইলে রয়টার্সের অনুরোধে তারা সাড়া দেয়নি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। 

ইসরায়েলের সাবেক উপ–জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইরান লারম্যান নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, কোনো ইসরায়েলি জিম্মি বিনিময়ের শর্ত মেনে নেবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখব, তারা কত দিন জিম্মি করে রাখতে পারে। আগামী কয়েক দিন গাজার পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য, ওষুধ থাকবে না। তখন তারা কী করবে?’ 

তবে হামাসের হামলায় হতাহত এবং গাজায় বন্দীদের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও দেখে অস্থির হয়ে পড়ছেন ইসরায়েলি স্বজনেরা। ইসরায়েল সরকার তাঁদের আশ্বস্ত করে বলছে, দ্রুত জিম্মিদের উদ্ধারে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর জোট সরকারের উগ্র ডানপন্থী শরিক দলগুলোর চাপে যতই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলুন না কেন, শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলিদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার চাপ তাঁকে প্রশমিত করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ অতীতের জিম্মি সংকটের অভিজ্ঞতা ইসরায়েলিদের ভালোমতোই স্মরণে রয়েছে। 

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ কাতারের সঙ্গে হামাসের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। কাতারের প্রতিনিধিরা এর আগে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন। 

এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচনার ভেন্যু ছিল দোহা। বলতে গেলে এরপরই কাতার বিশ্বব্যাপী কূটনীতির স্পটলাইটে চলে এসেছে। এই আলোচনায় সফলভাবে বন্দী বিনিময় এবং তহবিল মুক্তির চুক্তি হয়। 

হামাসের মূল ঘাঁটি গাজা। তবে এই সশস্ত্র সংগঠনটির কিছু নেতা কাতারের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও অবস্থান করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল

দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে—অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার কবলেও পড়েছিলেন। তবে সৌভাগ্য এই যে, দুই ঘটনায়ই তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন!

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বন্ডাই বিচে আহত অস্ত্রোভস্কি একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী। রক্তে ভেজা শরীর ও ব্যান্ডেজে মোড়ানো অবস্থায় তিনি অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে এখানে এসেছিলাম। চারদিকে শিশু, বৃদ্ধ, পরিবার—সবাই আনন্দ করছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। চারদিকে গুলির শব্দ, মানুষ দৌড়াচ্ছে, লুকোচ্ছে—পুরো জায়গা জুড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক।’

অস্ত্রোভস্কি জানান, কোন দিক থেকে গুলি আসছিল, তা কেউ বুঝতে পারছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি এক বন্দুকধারী চারদিকে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। শিশুদের মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছি, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের আহত হতে দেখেছি—এটা ছিল এক রক্তাক্ত বিভীষিকা।’

অস্ত্রোভস্কি এটাও জানান, তিনি ১৩ বছর ইসরায়েলে ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। তাঁর ভাষায়, ‘সেই ঘটনার পর আবার এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম। কখনো ভাবিনি অস্ট্রেলিয়ায়, তাও আবার বন্ডাই বিচের মতো জায়গায় এমন কিছু ঘটবে।’

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকা উদ্‌যাপনের সময় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৯ জন। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ‘চানুকাহ বাই দ্য সি’ নামে একটি অনুষ্ঠানের মাঝেই এই হামলা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পবেল প্যারেড এলাকায় একটি গাড়ি থেকে নেমে দুই সশস্ত্র ব্যক্তি এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যেই উৎসবের আনন্দ রূপ নেয় বিভীষিকায়। পর্যটন এলাকা জুড়ে একের পর এক গুলির শব্দ শোনা যায়।

ঘটনাস্থলে বহু মানুষকে আহত অবস্থায় ঘাসের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের একজনকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অপরজন আহত অবস্থায় আটক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৩
বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সশস্ত্র হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন এক পথচারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেই পথচারী হাজারো মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা ওই পথচারী পার্কিং লট থেকে দৌড়ে গিয়ে রাইফেল হাতে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। এরপর তিনি হামলাকারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং সেটি হামলাকারীর দিকেই তাক করেন।

অকস্মাৎ পেছন থেকে জাপটে ধরায় হামলাকারী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পিছু হটেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পথচারীর এমন সাহসী পদক্ষেপে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

যদিও ওই পথচারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তাঁর এই অবিশ্বাস্য সাহসিকতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হিরো (একজন সাধারণ বেসামরিক) হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন। কেউ কেউ সাহসী আর কেউ কেউ...এই ধরনের।’ অন্য একজন বলেছেন, ‘এই অস্ট্রেলিয়ান বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসীদের একজনকে নিরস্ত্র করে অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছেন। হিরো।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স এটিকে তাঁর দেখা ‘সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই লোকটি একজন প্রকৃত হিরো। তিনি নির্ভয়ে হামলাকারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করলেন এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করলেন। আমি নিশ্চিত যে, ওই ব্যক্তির সাহসিকতার জন্যই অনেক মানুষ বেঁচে আছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও হামলার সময় অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নাগরিকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই অস্ট্রেলীয়রা বিপদেও ছুটে গেছেন অন্যদের রক্ষা করতে। তাঁদের সাহসিকতাই অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

উল্লেখ্য, গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত হামলাকারীসহ ১২ জন নিহত বলে জানা গেছে। দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো বন্দুকধারী জড়িত ছিলেন কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তির জন্য ন্যাটোর আশা ছাড়ার ইঙ্গিত দিল ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৬
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে শান্তি আলোচনার পথ সুগম করতে গিয়ে ন্যাটো জোটে যোগদানের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জার্মানির বার্লিনে বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি জানান—ন্যাটো সদস্যপদের বদলে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে সেটিকে একটি সমঝোতা হিসেবে বিবেচনা করতে প্রস্তুত কিয়েভ।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জেলেনস্কি বলেন, শুরু থেকেই ইউক্রেনের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ন্যাটো সদস্যপদ, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর গ্যারান্টি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই পথে সমর্থন না দেওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে। তাঁর ভাষায়—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘আর্টিকেল ফাইভ’-এর মতো প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি এবং ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব নিশ্চয়তা অবশ্যই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হতে হবে।

এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। কারণ দেশটির সংবিধানেই ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে এটি রাশিয়ার যুদ্ধলক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল রুশ বাহিনী। তবে বর্তমানে তারা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের দখলও নিতে চাইছে। তবে মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছাড় না দিতে এখনো অনড় রয়েছে ইউক্রেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার দাবি করে আসছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে হবে এবং সেখানে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা যাবে না।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের চাপের মুখে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বার্লিনে আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রায় চার বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের অবসানে অগ্রগতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন—ইউক্রেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে একটি ২০ দফা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যার শেষ ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, ইউক্রেন সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে না।

ইউরোপীয় মিত্ররা এই সময়টিকে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য একটি ‘সংকটজনক মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছে। একই সঙ্গে রুশ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, তাপ ও পানিসেবা অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানবিক সংকটও গভীর হচ্ছে। জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে ইউক্রেনের জনগণের ওপর সর্বোচ্চ ক্ষতি চাপিয়ে দিতে চাইছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় সংঘটিত এই হামলায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী ডেস্কের নিচে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তবে ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা অন্তত দুই শিক্ষার্থীর কাছে নতুন কিছু ছিল না। এর আগেও তাঁরা স্কুল জীবনে এই ধরনের গোলাগুলির মুখে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সী মিয়া ট্রেটা এবং ২০ বছর বয়সী জোয়ে ওয়েইসম্যান—দুজনেই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে বন্দুক হামলার শিকার হয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা হলো—এই দেশ কীভাবে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে দিল?’

শনিবার কালো পোশাক পরা এক বন্দুকধারী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে গুলি চালানো শুরু করলে ক্যাম্পাসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন হামলাকারী দীর্ঘ সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় শত শত পুলিশ রাতভর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায়।

ওয়েইসম্যান তখন নিজের ডরমিটরিতেই ছিলেন। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তিনি জানতে পারেন ক্যাম্পাসে গুলিবর্ষণ চলছে। প্রথমে ভয় পেলেও সেই আতঙ্ক দ্রুত ক্ষোভে রূপ নেয়। এনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আর কখনো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে না। আট বছর পর আবারও সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’

২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে নিজের মিডল স্কুলের পাশের একটি হাইস্কুলে ভয়াবহ শুটিং প্রত্যক্ষ করেছিলেন ওয়েইসম্যান। ওই ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিল।

অন্যদিকে, মিয়া ট্রেটা ২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সগাস হাইস্কুলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখন ১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করে, যাদের একজন ছিলেন ট্রেটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গুলিতে ট্রেটার পেট গুরুতরভাবে জখম হয়েছিল।

শনিবারের ঘটনার সময় নিজের ডরমিটরিতে পড়াশোনা করছিলেন ট্রেটা। তিনি মূলত যে ভবনে হামলাটি ঘটে সেখানে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ক্লান্ত বোধ করায় শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান—যা কার্যত তার প্রাণ বাঁচায়।

এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘদিনের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যমতে, চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৯টি গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০-এর বেশি।

ট্রেটা ও ওয়েইসম্যান দুজনই বলছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি দ্বিতীয়বার এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমি নিজেকে বোঝাতাম—পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা আর কখনো ঘটবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আর কেউই এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত