Ajker Patrika

মায়ের কবরের ওপর ঘুমায় ৮ বছরের জইন

৮ বছর বয়সী জইন মান্না। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
৮ বছর বয়সী জইন মান্না। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

দুই মাস আগে মায়ের মৃত্যুর পর থেকে প্রতি রাতেই গাজার একটি কবরস্থানে রাত কাটাচ্ছে ৮ বছর বয়সী শিশু জইন মান্না। প্রতিদিন সে তার মায়ের কবরের ওপর শুয়ে ঘুমায়। কারণ মাকে অনুভব করার জন্য এখন এটিই তার একমাত্র উপায়।

আমিরাত-ভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, দুই মাস আগে গাজার নুসিরাত শরণার্থীশিবিরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। এতে শ্বাসের সঙ্গে বিষাক্ত গ্যাস শরীরে প্রবেশ করলে একদিন পরই মারা যান জইনের মা ৩৭ বছর বয়সী সানা মান্না।

মায়ের কবরের ওপর কেন ঘুমাচ্ছ—এই প্রশ্নের জবাবে দ্য ন্যাশনালকে জইন বলেছে, ‘মায়ের জড়িয়ে ধরার কথা আমার খুব মনে পড়ে। তাই আমি তার কবরে ঘুমাতে যাই।’

জইন আরও বলে, ‘যখন আমি মার কবরে ঘুমাই, চুমু খাই, তখন মনে হয়, মা আমার হৃদয়ে প্রবেশ করেছেন।’

যুদ্ধ শুরুর আগে জইনের বাবা ইউসেফ মান্না একজন শেফ ছিলেন। দ্য ন্যাশনালকে তিনি জানিয়েছেন, শুরুর দিকে একবার জইনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাকে তার মায়ের কবরের ওপর আবিষ্কার করা হয়।

ইউসেফ আরও জানান, মায়ের সঙ্গে জইনের খুব ভাব ছিল। মনে হতো যেন, দুটি শরীরের মধ্যে তাদের একটিই আত্মা ছিল।

তবে গাজার অনেক মানুষ জইনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ সে দেইর আল বালাহের কাছাকাছি একটি কবরস্থানে ঘুমায়। এখানে হঠাৎ করে যে কোনো সময় ইসরায়েলের গোলা বর্ষণ হতে পারে। পাশাপাশি সেখানে কিছু হিংস্র কুকুরও রয়েছে।

এদিকে কবরস্থানে ঘুমালেও জইনের মধ্যে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই। তার বিশ্বাস, তার মা তাকে রক্ষা করবেন।

মা-বাবা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে জইন। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
মা-বাবা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে জইন। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

বাবা ইউসেফ জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ছেলেকে কবরস্থানে যেতে বাধা দিতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে একটি ছেলেকে তার মায়ের কাছ থেকে নিয়ে আসতে পারি? আমি তাকে কী আশ্বাস দিয়ে আটকাব? তার মা-ই তার আত্মা।’

ইউসেফ আরও জানান, জইনের মায়ের কিডনিতে সমস্যা ছিল। চার ভাইবোনের মধ্যে জইন ছিল সবচেয়ে ছোট। মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে তার এতটাই দুশ্চিন্তা ছিল যে, বড় হয়ে সে ডাক্তার হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

বাবার ফোনে মায়ের দুটি ছবি সেভ করে রেখেছে জইন। ছবি দুটি সে এমনভাবে ফোনে সেট করেছে যে, ফোনটি লক করা থাকলে মায়ের ভ্রুকুটি করা একটি ছবি দেখা যায়। আর লক খুলে ফেললেই মায়ের একটি হাসি মুখ ভেসে ওঠে স্ক্রিনে।

ফোনটি হাতে নিয়ে জইন প্রায় সময়ই তার মায়ের সঙ্গে কথা বলার ভান করে। লক করা অবস্থায় সে তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে—ভ্রুকুটি করবে না বলছি।

তারপরই ফোনটি আনলক করে জইন এবং তার মা স্ক্রিনে হেসে ওঠেন।

যুদ্ধে নিজেদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেলে জইনের পরিবার গাজার উত্তর দিকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এখন তারা গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত দেইর আল বালাহতে একটি তাঁবুতে বাস করে। তাদের আশ্রয়টি জইনের মায়ের কবরস্থান থেকে আধা কিলোমিটার দূরে।

ইউসেফ জানান, তাঁরা এখন যে তাঁবুটিতে আছেন, সেটি তাঁর চার সন্তান, ভাই এবং চার ভাতিজার জন্য খুব ছোট। তাই তিনিও প্রায় সময়ই বাইরে ঘুমান। শীত পড়তে শুরু হওয়া তাঁদের পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ হতে চলেছে।

ইসরায়েলের হামলায় গাজার শিশুদের ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবরে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৫ হাজারের বেশি শিশু বাবা কিংবা মা কিংবা বাবা-মা উভয়কেই হারিয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৩ হাজার ৪০০ ’র বেশি মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে প্রবেশ করে ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করার পর থেকেই এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’ খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদী বিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’ এবং ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী এবং দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহতদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টার স্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল এবং একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদী মুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এ অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনে এক সন্তান নীতির প্রবক্তার মৃত্যু, শ্রদ্ধার চেয়ে সমালোচনাই বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৬
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

চীনে বিতর্কিত এক সন্তান নীতির প্রবক্তা পেং পেইইউনের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা নিবেদনের বদলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীতিটি ঘিরে তীব্র সমালোচনা দেখা গেছে। গত রোববার বেইজিংয়ে ৯৬তম জন্মদিনের ঠিক আগমুহূর্তে পেংয়ের মৃত্যুতে চীনাদের প্রতিক্রিয়া অনেকটা নেতিবাচক।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে পেং পেইইউনকে নারী ও শিশুবিষয়ক কাজে ‘একজন অসাধারণ নেতা’ হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি।

তবে চীনের জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং ওয়েবসাইট ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ভূমিষ্ঠ হতে না পারা শিশুরা ওপারে নগ্ন দেহে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

এনডিটিভি জানিয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীনে দম্পতিদের কেবল একটি সন্তান নেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা কার্যকর করতে স্থানীয় কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে নারীদের গর্ভপাত ও বন্ধ্যাকরণ করতে বাধ্য করতেন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় বেইজিং এই এক সন্তান নীতি চালু করেছিল।

এর ফলে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ থাকার পর চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে পড়ে এবং গত বছর টানা তৃতীয়বারের মতো জনসংখ্যা পড়তির দিকে ছিল।

ওয়েইবোতে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘যদি এই নীতি অন্তত ১০ বছর আগে শেষ করা হতো, তাহলে চীনের জনসংখ্যা আজ এভাবে ধসে পড়ত না!’

গত বছর চীনের জনসংখ্যা কমে ১৩৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সামনের বছরগুলোতে এই নিম্নগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।

জনসংখ্যার নীতিনির্ধারক হিসেবে পেং জোর দিয়েছিলেন গ্রামীণ এলাকায়। একসময় চীনের গ্রামগুলোতে বড় পরিবার গড়ে তোলা দম্পতিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, যাতে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানেরা তাঁদের দেখাশোনা করতে পারে। এ ছাড়া বংশ রক্ষার জন্য ছেলেসন্তানের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকায় মেয়েশিশুদের অবহেলা, এমনকি কন্যা ভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটত।

ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ওই শিশুগুলো যদি জন্ম নিত, তাহলে আজ তাদের বয়স প্রায় ৪০ হতো—জীবনের সেরা সময়।’

২০১০-এর দশকে এসে পেং প্রকাশ্যে তাঁর অবস্থান বদলান এবং বলেন, এক সন্তান নীতি শিথিল করা উচিত। বর্তমানে বেইজিং কমে যাওয়া জন্মহার বাড়াতে শিশু পরিচর্যা ভর্তুকি, দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও করছাড়ের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে।

জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ায় বিষ্ণুমূর্তি গুঁড়িয়ে দিল থাই সেনারা, ভারতের তীব্র নিন্দা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৫
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট

কম্বোডিয়ায় হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতের জেরে থাই সেনাবাহিনী এটি ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধপূর্ণ এলাকায় সম্প্রতি নির্মিত একটি হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের খবর আমাদের নজরে এসেছে। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতার ঐতিহ্যের অংশ। এই ধরনের কাজ সারা বিশ্বের অনুসারীদের মনে আঘাত দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কম্বোডিয়ার প্রেহ বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা জানান, ২০১৪ সালে নির্মিত মূর্তিটি থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার সীমানায় ছিল। তিনি এই ঘটনাকে প্রাচীন ও পবিত্র স্থাপত্যের ওপর আঘাত হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত জুলাই মাস থেকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি হলেও চলতি মাসে পুনরায় সংঘাত শুরু হয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করে, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পদের বিনাশ রোধ করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত