Ajker Patrika

গাজায় সাংবাদিকদের তাঁবুতে হামলা, নিহত আরও অর্ধশত, হামাসের রকেট হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিহত ফিলিস্তিনি শিশুকে জড়িয়ে ধরে স্বজনদের আহাজারি। ছবি: এএফপি
নিহত ফিলিস্তিনি শিশুকে জড়িয়ে ধরে স্বজনদের আহাজারি। ছবি: এএফপি

গাজায় ইসরায়েলি নারকীয়তা চলছেই। গতকাল রোববার একদিনে নিহত হয়েছে প্রায় ৫০ জন। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটির বেসামরিকদের বাড়িঘর লক্ষ্য করে নিয়মিত হামলা চালানো হয়। এবার সরাসরি গণমাধ্যমকর্মীদের তাঁবুতে হামলা চালাল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ।

ফিলিস্তিনি স্থানীয় গণমাধ্যম কুদ্স নিউজ নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, আজ সোমবার খান ইউনিসের আল নাসের হাসপাতালের কাছে সাংবাদিকদের তাঁবু লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। হামলায় জালেমি আল ফাকাওয়ি নামের এক সাংবাদিকসহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত আরেক ব্যক্তির নাম ইউসুফ আল খাজানদার। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭ গণমাধ্যমকর্মী।

কুদ্স নিউজের তথ্যমতে, এ হামলায় আহমেদ মনসুর নামের এক গণমাধ্যমকর্মী সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছেন। তিনি তাঁবুর ভেতর থাকা অবস্থায় সেটিতে আগুন ধরে যায়। গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন তিনি। তবে, হতাহতরা কোন গণমাধ্যমের কর্মী, তা এখনো জানা যায়নি।

এ ছাড়া গাজার বিভিন্ন স্থানে বেসামরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলিরা। দেইর আল বালা’য় একটি আবাসিক ভবনকে লক্ষ্য করে চালানো বোমা হামলায় একই পরিবারের কয়েকজন নিহত হয়েছে। হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি।

এদিকে আবারও আল আকসা হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। হাসপাতালের আশপাশে অস্থায়ী তাঁবুতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে। দেইর আল বালাহরও পাঁচটি এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

এসব অব্যাহত হামলার জবাবে চুপ করে নেই ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গতকাল রোববার ইসরায়েলি দুই শহর লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েলের সংবাদপত্র হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশকেলন ও গান ইয়াভনি শহরে রকেটের ধ্বংসাবশেষ পড়তে দেখা গেছে। এতে বেশ কিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত তিনজন।

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, গাজা থেকে ইসরায়েলের শহর লক্ষ্য করে ছোড়া ১০টি রকেট শনাক্ত করে সেগুলোর বেশির ভাগই প্রতিহত করেছে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুটি সমস্যা সমাধান হলেই ইউক্রেন যুদ্ধ শেষের চুক্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারলেও ইউক্রেনে ব্যর্থ হচ্ছেন মূলত অঞ্চলটিতে তাঁর প্রভাব বলয়ের ব্যর্থতার কারণে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারলেও ইউক্রেনে ব্যর্থ হচ্ছেন মূলত অঞ্চলটিতে তাঁর প্রভাব বলয়ের ব্যর্থতার কারণে। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন বিষয়ক দূত জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি চুক্তি ‘সত্যিই খুব কাছাকাছি।’ শুধু দুটি প্রধান সমস্যার সমাধান বাকি। তবে ক্রেমলিন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রস্তাবে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

নিজেকে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে স্মরণীয় করে রাখতে চাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের এই মারাত্মক সংঘাত থামানো তাঁর প্রেসিডেন্সির সময়কালের অন্যতম অধরা বিদেশনীতির লক্ষ্য হয়ে রয়েছে।

রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী আর ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে দনবাস (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত) অঞ্চলে আট বছর ধরে চলা লড়াইয়ের পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে। ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলগ আগামী জানুয়ারিতে পদত্যাগ করতে চলেছেন। তিনি গতকাল রোববার রিগান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোরামে বলেছেন, সংঘাত মেটানোর প্রচেষ্টা ‘শেষ ১০ মিটারের’ মধ্যে আছে, যা সব সময়ই সবচেয়ে কঠিন।

কেলগ জানিয়েছেন, যে দুটি প্রধান সমস্যা এখনও অমীমাংসিত রয়েছে—তার মধ্যে একটি হলো ভূখণ্ড। মূলত দনবাসের ভবিষ্যৎ। অন্যটি হলো—ইউরোপের বৃহত্তম জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ, যা এখন রাশিয়ার দখলে।

ক্যালিফোর্নিয়ার সিমি ভ্যালিতে রোনাল্ড রেগান প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরি ও জাদুঘরে কেলগ বলেন, ‘আমরা যদি এই দুটি সমস্যার সমাধান করতে পারি, তবে আমার মনে হয় বাকি সবকিছুই বেশ ভালোভাবে মিটে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি।’ কেলগ জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা সত্যি, সত্যি খুব কাছাকাছি।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত সপ্তাহে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে ক্রেমলিনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বৈঠকের পুতিনের প্রধান বিদেশনীতি বিষয়ক সহকারী ইউরি উশাকভ জানিয়েছিলেন যে ‘ভূখণ্ডগত সমস্যা’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ক্রেমলিনের ভাষায় এর মানে হলো, রাশিয়া পুরো দনবাসের ওপর তাদের দাবি জানাচ্ছে। যদিও ইউক্রেন এখনও ওই অঞ্চলের অন্তত ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রায় সব দেশই দনবাসকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়াটা বেআইনি হবে এবং এর ফলে রাশিয়া ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম পেয়ে যাবে।

রুশ সংবাদমাধ্যম রোববার উশাকভের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইউক্রেন সংক্রান্ত ‘নথিপত্রগুলোতে আমেরিকাকে গুরুতর, আমি বলব, মৌল পরিবর্তন’ আনতে হবে। মস্কো ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন চাইছে, সে ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। জেলেনস্কি শনিবার জানিয়েছেন, উইটকফ এবং কুশনারের সঙ্গে তার দীর্ঘ ও ফোনালাপ হয়েছে। ক্রেমলিন বলেছে, তারা আশা করছে সম্ভাব্য চুক্তিটির খসড়া তৈরির প্রধান কাজটি কুশনার করবেন।

ভিয়েতনাম, পানামা ও ইরাকে দায়িত্ব পালন করা সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেলগ বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রাণহানি ও আহতের মাত্রা ‘ভয়াবহ’ এবং আঞ্চলিক যুদ্ধের দিক থেকে দেখলে এটি নজিরবিহীন। কেলগ বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয় পক্ষে সম্মিলিতভাবে ২০ লাখের বেশি হতাহত হয়েছে। রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই তাদের ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য হিসাব প্রকাশ করে না।

রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে আছে ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়া, সমগ্র লুহানস্ক, দোনেৎস্কের ৮০ শতাংশের বেশি, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং খারকিভ, সুমি, মিকোলাইভ ও নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ।

গত মাসে ফাঁস হওয়া ২৮টি মার্কিন শান্তি প্রস্তাবের একটি খসড়া ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। তাদের দাবি—ন্যাটো, ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ওপর বিধিনিষেধের মতো মস্কোর প্রধান দাবিগুলোর কাছে এটি নতি স্বীকার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভয়াবহ সংঘাতের পর কম্বোডিয়া সীমান্তে থাইল্যান্ডের বিমান হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৮
থাইল্যান্ড সীমান্তে পাহার দিচ্ছে দুই কম্বোডিয়ান সেনা। ছবি: এএফপি
থাইল্যান্ড সীমান্তে পাহার দিচ্ছে দুই কম্বোডিয়ান সেনা। ছবি: এএফপি

কম্বোডিয়ার সঙ্গে বিতর্কিত সীমান্তে রয়্যাল থাই আর্মি বিমান হামলা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। থাই সামরিক বাহিনী কম্বোডিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে তাদের সৈন্যদের ওপর গুলি চালানো এবং অন্তত একজনকে হত্যার অভিযোগ এনেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে থাই সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল উইন্থাই সুভারি জানিয়েছেন, উবোন রাতচাথানি প্রদেশের নাম ইয়েন জেলার চং বক এলাকায় প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর থাই সেনাবাহিনী বিমান মোতায়েন করেছে। সুভারি আরও বলেছেন, থাই আর্মি ‘সীমান্ত এলাকার বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে দ্রুত সমর্থন জোগাচ্ছে।’

কম্বোডিয়াও এই হামলার খবর নিশ্চিত করেছে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে থাই বাহিনী প্রিয়া বিহার ও ওদ্দার মিয়ানচে সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোতে কম্বোডিয়ার সৈন্যদের ওপর হামলা চালায়। তবে তিনি এ-ও যোগ করেছেন যে, কম্বোডিয়া পাল্টা কোনো আঘাত হানেনি।

জুলাই মাসে পাঁচ দিনের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়েছিল, কিন্তু এই হামলা হলো দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সহিংসতার সর্বশেষ উত্তেজনা। ওই সংঘর্ষের সময়ে কমপক্ষে ৪৮ জন নিহত হয়েছিলেন এবং আনুমানিক ৩ লাখ মানুষ সাময়িকভাবে স্থানচ্যুত হন; এই সময় দুই প্রতিবেশী রকেট এবং ভারী আর্টিলারি বিনিময় করেছিল।

যে যুদ্ধবিরতির ফলে সংঘাতের অবসান হয়েছিল, সেটি সম্পন্ন করেছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত অক্টোবরে কুয়ালালামপুরে দুই দেশের মধ্যে এক সম্প্রসারিত শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তবে উত্তেজনা এখনো বজায় আছে।

গত মাসে এক ভূমি মাইন বিস্ফোরণে থাই আর্মির এক সৈন্য আহত হওয়ার পর, থাইল্যান্ড জানিয়েছিল যে—তারা কম্বোডিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন বন্ধ করছে। যদিও নম পেন স্থলমাইন বিস্ফোরণের দায় অস্বীকার করে বলেছে, ডিভাইসটি ছিল পুরোনো সংঘাতের ধ্বংসাবশেষ।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তাদের ৮১৭ কিলোমিটার (৫০৮ মাইল) স্থল সীমান্তের অচিহ্নিত স্থানগুলোতে সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে আছে। এই সীমান্তের প্রথম মানচিত্র ১৯০৭ সালে তৈরি করেছিল ফ্রান্স, যখন কম্বোডিয়া তাদের উপনিবেশ ছিল।

শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের দাবিগুলো মীমাংসা করার চেষ্টা সত্ত্বেও, মাঝে মাঝে চাপা উত্তেজনা স্ফুলিঙ্গের মতো ছিটকে বের হয় এবং তা সংঘর্ষে রূপান্তরিত হয়, যেমন ২০১১ সালের এক সপ্তাহব্যাপী আর্টিলারি বিনিময়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাওয়াইয়ে মাউন্ট কিলাউয়াতে অগ্ন্যুৎপাত, লাভার ফোয়ারা তৈরি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কিলাউয়া আগ্নেয়গিরিতে ব্যাপক উদগীরণ শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
কিলাউয়া আগ্নেয়গিরিতে ব্যাপক উদগীরণ শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কিলাউয়ায় ব্যাপক অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটেছে। আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে এত বেশি লাভা উদগীরণ হচ্ছে যে, নিচের দিকে এক ধরনের ফোয়ারার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জাপানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে বা মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা–ইউএসজিএস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপে অবস্থিত মাউন্ট কিলাউয়া আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে, যার ফলে লাভা ফোয়ারা তৈরি হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সংস্থাটি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় গত শনিবার সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটের দিকে দুটি জ্বালামুখ উন্মুক্ত হয়। এর আগে, আরেকটি ফাটল থেকে একটি লাভার প্রবাহ তৈরি হয়েছিল। সংস্থাটি বলছে, আগ্নেয়গিরিতে একই সঙ্গে তিনটি সক্রিয় লাভা ফোয়ারা থাকা অত্যন্ত বিরল। কিছু লাভা প্রায় ৩৭০ মিটার উঁচু পর্যন্ত উড়েছিল বলে জানা গেছে।

সংস্থাটি বিস্তৃত এলাকার বাসিন্দাদের সালফার ডাইঅক্সাইড এবং অন্যান্য গ্যাসের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে সতর্ক করছে, যা শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে।

কিলাউয়া বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হিসেবে পরিচিত। এই অগ্ন্যুৎপাতগুলি এমন একটি এলাকায় হচ্ছে যা ২০০৭ সাল থেকে সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ।

মাউন্ট কিলাউয়া (Mount Kilauea) হলো বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, যা যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ ‘বিগ আইল্যান্ড’-এর দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত। এটি বৃহত্তর মানা লোয়া আগ্নেয়গিরির ঢালের উপর অবস্থিত একটি আগ্নেয়গিরি। হাওয়াইয়ান ভাষায় ‘কিলাউয়া’ শব্দের অর্থ হলো ‘উগরে দেওয়া’ বা ‘প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে পড়া,’ যা এর ঘন ঘন লাভা নিঃসরণের প্রকৃতির দিকে ইঙ্গিত করে। এই ধরনের আগ্নেয়গিরিগুলি ধীরে ধীরে লাভা প্রবাহের মাধ্যমে তৈরি হয়, যার ফলে তাদের ঢালগুলি কম খাড়া ও বিস্তৃত হয়। কিলাউয়ার পৃষ্ঠের প্রায় ৯০ শতাংশই গত ১,১০০ বছরের মধ্যে জমা হওয়া লাভা প্রবাহ দ্বারা গঠিত, যা এর চরম সক্রিয়তা প্রমাণ করে।

আধুনিক সময়ে কিলাউয়ার সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী অগ্ন্যুৎপাতের পর্ব ছিল ১৯৮৩ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত, যা পৃথিবীর দীর্ঘতম নথিভুক্ত অগ্ন্যুৎপাতের মধ্যে অন্যতম। এই দীর্ঘ সময়ে বিপুল পরিমাণ লাভা নির্গত হয়েছিল। যদিও কিলাউয়ার অগ্ন্যুৎপাত সাধারণত কম বিস্ফোরক প্রকৃতির হয়, তবে ১৭৯০ সালে একটি ভয়াবহ বাষ্প বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যাতে ৪০০-এরও বেশি মানুষ মারা যায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম মারাত্মক অগ্ন্যুৎপাত। ঐতিহ্যগতভাবে, স্থানীয় হাওয়াইয়ানরা কিলাউয়াকে অগ্নির দেবী পেলেহোনুয়ামেয়ার আবাস বলে মনে করে। বলা হয়, তিনি কিলাউয়ার শীর্ষ ক্যালডেরার অভ্যন্তরের হালেমাউমাউ গহ্বরে বাস করেন।

কিলাউয়ার সক্রিয়তা বর্তমানে খণ্ডকালীন বা এপিসোডিক। অগ্ন্যুৎপাতের পর্বগুলি কয়েক দিনের বিরতি দিয়ে পৃথক করা যেতে পারে এবং অগ্ন্যুৎপাতের সময়কাল কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্বল্প হতে পারে। সাম্প্রতিক অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস একটি প্রধান ঝুঁকি, যা শ্বাসযন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। অগ্ন্যুৎপাতের কারণে এবং অবকাঠামোগত মেরামতের জন্য হাওয়াই ভলকানোস ন্যাশনাল পার্কের কিছু অংশ বা ট্রেইল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্বের দিকে বড় অগ্রগতি: আন্তর্জাতিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ইসরায়েল–হামাসের মতভেদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু

ইসরায়েলের গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল ও হামাস। তবে, অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর (আইএসএফ) ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে মতভেদ ঘনীভূত হচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছেও হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম রোববার বলেছেন, মার্কিন খসড়ায় যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন এবং আইএসএফের ভূমিকার বিষয় তার ‘বিশদ ব্যাখ্যা’ প্রয়োজন। তিনি জানান, চলমান যুদ্ধবিরতির সময় অস্ত্র ‘বিরতি বা সংবরণ’ নিয়ে আলোচনা করতে তার গোষ্ঠী প্রস্তুত। তবে তিনি বলেন, হামাস আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী হামাসের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার দায়িত্ব পাবে, এটি মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি (জাতিসংঘ) বাহিনীকে সীমান্তের কাছাকাছি থাকতে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি তদারকি করতে, লঙ্ঘন সম্পর্কে রিপোর্ট করতে, যেকোনো ধরনের উত্তেজনা রোধ করতে স্বাগত জানাচ্ছি’। তবে তিনি যোগ করেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বাহিনীটির ‘কোনো ধরনের ম্যান্ডেট’ থাকাকে হামাস মেনে নেবে না।

বাসেম নাঈমের এই মন্তব্যের আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল দিনের শুরুতে বলেছিলেন, তিনি মাসের শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনার একটি নতুন পর্বে প্রবেশ নিয়ে আলোচনা করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করবেন। তিনি বলেন, বৈঠকের মূল লক্ষ্য হবে গাজায় হামাসের শাসন শেষ করা এবং ছিটমহলটিতে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানানো পরিকল্পনাটির প্রতি তাদের ‘প্রতিশ্রুতি’ পূরণ নিশ্চিত করা।

ইসরায়েল সফররত জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্তসের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের একটি দ্বিতীয় ধাপ রয়েছে, যা কোনো অংশেই কম কঠিন নয়, আর তা হলো হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজার সামরিকীকরণ দূর করা।’

হামাসের অস্ত্র ত্যাগ বা সংরক্ষণ করার মন্তব্য ইসরায়েলের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের দাবি পূরণ করবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। হামাস কর্মকর্তা বলেছেন যে, গোষ্ঠীটি তার ‘প্রতিরোধের অধিকার’ রাখে এবং অস্ত্র ত্যাগ একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দিকে পরিচালিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ঘটতে পারে, যেখানে সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি পাঁচ থেকে দশ বছর স্থায়ী হতে পারে।

গাজার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-প্রণীত পরিকল্পনাটি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার পথ খোলা রেখেছে, কিন্তু নেতানিয়াহু এটিকে দীর্ঘকাল ধরে প্রত্যাখ্যান করে আসছেন, এই জোর দিয়ে যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র তৈরি করা হামাসকে পুরস্কৃত করবে।

ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনাটি স্থিতিশীলতা বাহিনী প্রতিষ্ঠা এবং একটি আন্তর্জাতিক ‘শান্তি পরিষদের’ অধীনে পরিচালিত একটি টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি সরকার গঠনের মতো পরিকল্পনাগুলির জন্য একটি সাধারণ পথ নির্দেশ করে, তবে এতে কোনো সুনির্দিষ্ট বিবরণ বা সময়সূচি দেওয়া হয়নি।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন যে তারা আগামী বছরের শুরুতে ‘মাঠে সৈন্য’ প্রত্যাশা করছেন, তবে ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলি সৈন্য পাঠাতে রাজি হলেও, বাহিনীটি গঠনের কোনো রোডম্যাপ নেই এবং এর সঠিক বিন্যাস, কমান্ড কাঠামো এবং দায়িত্বগুলি সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।

নেতানিয়াহুকে পরিকল্পনাটির অস্পষ্টতা স্বীকার করতে দেখা যায়। তিনি রোববার বলেন, ‘সময়রেখা কী হবে? কী কী বাহিনী আসছে? আমাদের কি আন্তর্জাতিক বাহিনী থাকবে? না থাকলে বিকল্প কী? এই সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হচ্ছে।’

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ, যা হামাস শেষ ইসরায়েলি বন্দীকে (৭ অক্টোবরের হামলায় নিহত একজন পুলিশ) ফিরিয়ে দিলেই কার্যকর হবে, তা ‘আরও কঠিন’ হবে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, পরিকল্পনার প্রথম ধাপটিও চ্যালেঞ্জিং প্রমাণিত হয়েছে, কারণ যুদ্ধবিরতি চলাকালীনও ইসরায়েল গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে, এতে ৩৭৫ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদিকে, ইসরায়েল হামাসকে বন্দী প্রত্যাবর্তনে দেরি করার অভিযোগ করেছে।

পরিকল্পনার প্রাথমিক পদক্ষেপে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তথাকথিত হলুদ রেখার পিছনে নিজেদের অবস্থানে সরে আসে, যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অঞ্চলটির ৫৩ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রবিবার বলেছে যে এই সীমানা রেখাটি একটি ‘নতুন সীমান্ত।’

ইসরায়েলি সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির বলেন, ‘গাজা স্ট্রিপের বিস্তৃত অংশে আমাদের অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং আমরা সেই প্রতিরক্ষা রেখাগুলিতে থাকব। হলুদ রেখাটি একটি নতুন সীমান্ত রেখা, যা আমাদের সম্প্রদায়গুলির জন্য একটি সামনের রক্ষণাত্মক রেখা এবং অপারেশনাল কার্যকলাপের একটি রেখা হিসাবে কাজ করছে।’

শনিবার দোহা ফোরামে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল–থানি সতর্ক করে দেন যে যুদ্ধবিরতিটি একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে’ রয়েছে এবং স্থায়ী চুক্তির দিকে দ্রুত অগ্রসর না হলে তা ভেঙে যেতে পারে।

তিনি বলেন যে সত্যিকারের যুদ্ধবিরতি ‘ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার’ এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য পুনরুদ্ধারকৃত স্থিতিশীলতা ও চলাচলের স্বাধীনতা ছাড়া ‘সম্পূর্ণ হতে পারে না’, যা পরিকল্পনার প্রথম ধাপের অধীনে এখনও ঘটেনি। তিনি তার মন্তব্যে হলুদ রেখার কোনো উল্লেখ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত