Ajker Patrika

‘মৃত্যুর মাঝে জীবন খুঁজছে গাজাবাসী’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায়ই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায়ই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ গাজার আল-নাসের হাসপাতালে নিজ ছেলে আহমেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আসমাহান শাআত। শোকে, হতবাক হয়ে তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে আসে হৃদয়বিদারক কান্না। চারপাশে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে তাঁর আর্তনাদ।

২৩ বছর বয়সী মৃত ছেলের মুখ, হাত আর পায়ে চুমু খেতে খেতে বিলাপ করতে থাকেন আসমাহান। তাঁর ৬ সন্তান আর আত্মীয়রা তাঁকে থামানোর চেষ্টা করলেও তিনি কাউকে কাছে ভিড়তে দেননি। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে আমার কাছে থাকতে দাও। আহমেদ আবার কথা বলবে। সে আমাকে বলেছিল, “মা, আমি মরব না। আমি রাফার সাহায্য কেন্দ্র থেকে তোমার জন্য কিছু নিয়ে আসব”।’

আল-মাওয়াসিতে নিজেদের শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে খাবারের খোঁজে বেরিয়েছিল আহমেদ। সে আর ফিরে আসেনি। আহমেদের সঙ্গে ছিল তাঁর চাচাতো ভাই মাজেন শাআত। মাজেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত রাফার সাহায্য বিতরণকেন্দ্রের কাছে ভিড়ের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালালে আহমেদের পেটে গুলি লাগে। সেদিন আরও অনেকেই নিহত ও আহত হয়।

গাজার সরকারি জনসংযোগ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে জিএইচএফ-এর সাহায্য বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। যে কেন্দ্রগুলো মানুষের জন্য জীবন রক্ষাকারী হওয়ার কথা ছিল, সেগুলোই এখন মৃত্যুকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘ কর্মকর্তারা এই বিতরণ পদ্ধতিকে সামরিকীকৃত, বিপজ্জনক এবং বেআইনি বলে সমালোচনা করেছেন। শুক্রবার ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সেনারা বলেছেন, তাদের নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এমনকি কোনো ধরনের হুমকি না থাকলেও।

শোকাহত আসমাহানের ক্রোধে ফেটে পড়া স্বাভাবিক। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘খাবার আনতে গিয়ে কি কারও মরার কথা? এই বিশ্ব কোথায়, যারা নিজেদের মুক্ত বলে দাবি করে? আমাদের এই যন্ত্রণা আর কত দিন চলবে?’ ইসরায়েলের অবরোধ আর টানা ২১ মাসের বোমাবর্ষণ ও বাস্তুচ্যুতির ফলে গাজার ২০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। মার্চের ২ তারিখ থেকে ইসরায়েল সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে, যার ফলে খুব অল্প পরিমাণ সাহায্যই ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে।

আর-নাসের হাসপাতালের মর্গে যেখানে আহমেদের মরদেহ পড়ে ছিল, তার পাশেই স্বামী খলিল আল-খতিবের মরদেহ জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ২৫ বছরের শিরিন। দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও নেই তাঁর। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলতে থাকেন, ‘খলিল, উঠো। তোমার ছেলে উবাইদা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি সকালে বলেছিলাম, ‘‘তোমার বাবা, একটু পরেই ফিরে আসবে। ” আমাদের খাবার লাগবে না, আমরা তোমাকে চাই (খলিল)।’

খলিলও আল-মাওয়াসি থেকে খাবারের খোঁজে বেরিয়েছিলেন। তাঁর শ্বশুর ইউসুফ আল-রুমাইলাত বলেন, খলিল খুব সাবধানে চলাফেরা করত। তিনি কখনো ভাবেননি যে, তাঁকেও লক্ষ্যবস্তু বানানো হবে। ইউসুফ বলেন, ‘সে খুব সহজ-সরল মানুষ ছিল। সবকিছুই যখন প্রাণঘাতী হয়ে গেছে, তখন সে নিরাপত্তার জন্য ভয় পেত। এই অবস্থায় সে তাঁর সন্তানদের জন্য কিছুই জোগাড় করতে পারত না। তার পাঁচ বছরের ছেলে উবাইদা যখন খাবার বা চাল চাইত, তখন সে কিছু দিতে পারত না। যুদ্ধ শুরুর কদিন পরই জন্ম নেওয়া ছোট সন্তানের জন্য দুধ জোগাড় করাও তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।’

তীব্র ক্ষোভ নিয়ে ইউসুফ বলেন, ‘ওরা আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে। একজন পুরুষের জন্য সবচেয়ে কষ্টের হলো নিজের পরিবারের জন্য কিছু করতে না পারা। এখন এসব সাহায্য কেন্দ্র মৃত্যুকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এটা কোনো সাহায্য নয়, এটা গণহত্যা।’ তিনি বলেন, ‘নতুন এই মানবিক সহায়তার পদ্ধতির ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই। আমরা এই রক্তমাখা সাহায্য চাই না। আমাদের আগের মতো জাতিসংঘের মাধ্যমে সাহায্য চাই। অন্তত সেসময় খাবার আনতে গিয়ে মরতে হতো না।’

ইসরায়েলের সমন্বয়ে চালু হওয়া জিএইচএফ প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ গাজায় খাবার পাঠানোর কথা থাকলেও এসব সহায়তা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর মাধ্যমে যায় না। ইসরায়েল বারবার ইউএনআরডব্লিউএর বিরুদ্ধে হামাসের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ তুললেও এর পক্ষে এখনো সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সমালোচকদের মতে, এই পদ্ধতির কারণে পর্যাপ্ত নজরদারি ও নিরাপত্তার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ইসরায়েল বলছে, তারা শুধু ‘হুমকির’ জবাব দিচ্ছে ও সাহায্যের পথ উন্মুক্ত রেখেছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও বিভিন্ন প্রতিবেদনে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র উঠে আসছে। রাফাহ থেকে বাস্তুচ্যুত মুস্তাফা নাবিল আবু ঈদ (৩১) ও তাঁর বন্ধু আবদুল্লাহ আবু ঘালি (৩৯) কিছু চাল, ডাল আর পাস্তা নিয়ে সাহায্য কেন্দ্র থেকে ফিরছিলেন।

মুস্তাফা পুরো বিষয়টিকে বর্ণনা করেন ‘মৃত্যুর যাত্রা’ বলে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয় ওই এলাকায়। তারপর অপেক্ষা করি—কখনো কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা—কখন ট্যাংক সরবে। ট্যাংক সরলেই খোলা ময়দান পেরিয়ে দৌড় দিই। জানি না খাবার নিয়ে ফিরতে পারব, না গুলিতে মরব।’

তাঁকে সবাই জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে কেন যান? মুস্তাফার উত্তর, ‘আর কোনো উপায় নেই। তাঁবুতে থাকলে মারা যাব ক্ষুধায়, রোগে, বোমায়। বাইরে গেলে মরতে পারি, আবার হয়তো বাচ্চাদের জন্য কিছু নিয়ে ফিরতেও পারি।’ মুস্তাফার পাঁচ সন্তান। বড় মেয়ে সাবার বয়স ১০। সবচেয়ে ছোট, যমজ দুই মেয়ে হুর আর নূরের বয়স তিন বছর। তিনি বলেন, ‘তারা ক্ষুধায় কাঁদে। এটা সহ্য করতে পারি না। আমরা মৃত্যুর মাঝখানে জীবন খুঁজছি।’

সাহায্য সংস্থাগুলো আগেই সতর্ক করেছে, গাজার কিছু এলাকায় ইতিমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। জুন মাসে প্রকাশিত আইপিসি-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো গাজায় তীব্র খাদ্য সংকট চলছে এবং ১০ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহারের মুখে। অনেক শিশু অপুষ্টি আর পানিশূন্যতায় মারা যাচ্ছে। ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম সীমিত হয়ে যাওয়া এবং জিএইচএফ-এর অনিরাপদ ও অপ্রতুল সহায়তা মানুষকে খাবারের জন্য জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

গত ২৭ মে থেকে চালু হওয়া মার্কিন-ইসরায়েলি উদ্যোগের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৯ জন নিখোঁজ বা নিহত বলে জানিয়েছে গাজার সরকার। এদের কেউ কেউ হয়তো বেওয়ারিশ কবরে শুয়ে আছেন কিংবা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন।

মানবাধিকার আইনজীবী ও সংগঠনগুলোর মতে, সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এমন হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে সংঘাতরত পক্ষগুলোর বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং নির্বিচারে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কার্যালয় জুনে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিক, সাহায্যকর্মী বা সাহায্য বিতরণকেন্দ্রকে লক্ষ্য করে হামলা করা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ কিন্তু শাআত বা খতিব পরিবারের মতো মানুষের জন্য এসব আইনি সংজ্ঞার খুব একটা মূল্য নেই। আসমাহান শুধু একটা আশা নিয়ে বেঁচে আছেন—তাঁর ছেলে আহমেদের নাম যেন হারিয়ে না যায়।

আসমাহান আরও বলেন, ‘ও শুধু আমাদের খাবার দিতে চেয়েছিল। ও কোনো ভুল করেনি। ওদের হাতে ওকে এমনভাবে মেরে ফেলা হলো যেন তার জীবনের কোনো মূল্যই নেই। দুনিয়াকে বলো, আমরা শুধু সংখ্যা নই। আমরা মানুষ, আর আমরা ক্ষুধায় মরছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৭
অরুণাচলকে চীনের মূল স্বার্থ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি
অরুণাচলকে চীনের মূল স্বার্থ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি

মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে অরুণাচল প্রদেশের ওপর চীনের দাবিকে তাদের ‘কোর ইন্টারেস্ট’ বা মূল স্বার্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই স্বার্থগুলোর বিষয়ে চীন কোনো ধরনের আলোচনা বা আপস করতে রাজি নয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের নেতৃত্ব তাদের ‘মূল স্বার্থে’র পরিধি আরও বাড়িয়ে এখন তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগরের সার্বভৌমত্ব ও সামুদ্রিক বিরোধ, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ২০৪৯ সালের মধ্যে ‘চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণের’ জন্য চীন ও এই বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর একীকরণ একটি ‘স্বাভাবিক আবশ্যকতা।’ এই ‘পুনর্জাগরণ’ সম্পন্ন হলে চীন বিশ্বমঞ্চে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং এমন এক ‘বিশ্বমানের’ সামরিক বাহিনী গড়ে তুলবে, যা যেকোনো যুদ্ধে ‘লড়তে ও জিততে’ সক্ষম হবে। একই সঙ্গে এই বাহিনী বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ অত্যন্ত ‘দৃঢ়ভাবে রক্ষা’ করবে।

নথিতে চীনের পুনর্জাগরণের জন্য তিনটি মূল স্বার্থের কথা বলা হয়েছে, যেখানে কোনো সমঝোতার সুযোগ নেই। এর মধ্যে রয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসার এবং চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক দাবির প্রতিরক্ষা ও সম্প্রসারণ।

মূল্যায়নে আরও দেখা গেছে, সিপিসি তাদের শাসনের প্রতি যেকোনো অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক হুমকি বা সমালোচনার বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। বিশেষ করে চীনা স্বার্থ রক্ষায় তারা ব্যর্থ হচ্ছে, এমন কোনো সমালোচনা তারা সহ্য করে না।

ভারত-চীন সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিবেদনে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের দুই দিন আগে ভারত সরকার চীনের সঙ্গে এলএসির অমীমাংসিত স্থানগুলো থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার চুক্তির কথা ঘোষণা করে।

এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের মাসিক আলোচনার পথ উন্মুক্ত হয়। যেখানে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সরাসরি বিমান চলাচল, ভিসা সুবিধা সহজীকরণ এবং শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

যদিও চীন এলএসিতে উত্তেজনা কমিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চায়, যার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ভারত-মার্কিন সম্পর্ক যেন আরও গভীর হতে না পারে। তবে প্রতিবেদনটিতে এ-ও বলা হয়েছে, ভারত সম্ভবত চীনের কাজ ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান থাকবে। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অন্যান্য অস্বস্তিকর বিষয়গুলো দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতিকে সীমিত করে রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে পেন্টাগনের এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান ছড়িয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা দাবি করেছে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়টি ব্যবহার করে বেইজিং ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছে—পেন্টাগনের এমন দাবি ভিত্তিহীন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘পেন্টাগনের এই প্রতিবেদন চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে বিকৃত করেছে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। মূলত নিজেদের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখতেই যুক্তরাষ্ট্র এমন অজুহাত খুঁজছে।’ চীন এই প্রতিবেদনের তীব্র বিরোধিতা করছে বলে তিনি জানান।

পৃথকভাবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাংও এই প্রতিবেদনের নিন্দা জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে পাকিস্তান ও চীনের প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ গবেষণার সহযোগিতা এবং সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনার যে উল্লেখ রয়েছে, ঝাং সেটিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর ধরে এসব মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তারা চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে এবং আমাদের সামরিক বাহিনীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডকে কলঙ্কিত করছে।’

ঝাং আরও বলেন, প্রতিবেদনটি ভূরাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে ‘চীনা সামরিক হুমকি’র বিষয়টি বাড়িয়ে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এই ধরনের মিথ্যা বয়ান এবং উসকানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে লিন জিয়ান জানান, বেইজিং দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ শক্তিশালী করতে, পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে এবং মতপার্থক্য সঠিকভাবে পরিচালনা করে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।’

এলএসি প্রসঙ্গে লিন স্পষ্ট করে বলেন, ‘সীমান্ত সমস্যা চীন ও ভারতের নিজস্ব বিষয়। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি মোটের ওপর স্থিতিশীল এবং দুই দেশের যোগাযোগের পথও খোলা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো দেশের ভিত্তিহীন মন্তব্য চীন মেনে নেবে না।’

২০২৫ সালের জন্য প্রকাশিত এই বার্ষিক প্রতিবেদনে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ আরও বলেছে, চীন সম্ভবত পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে অতিরিক্ত সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেখানে বেইজিং সামরিক সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র ক্রিপ্টোমাইনিংয়ে কাজে লাগাতে চান ট্রাম্প: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৭
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনে অবস্থিত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র ক্রিপ্টোমাইনিংয়ে কাজে লাগাতে চান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি দেশটির অর্থনীতিকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম কমারস্যান্তের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

রুশ সংবাদমাধ্যম কমারস্যান্তের বরাতে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, জাপোরোজিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (জেডএনপিপি) প্রস্তাবিত অংশীদারিত্ব ব্যবহার করে ওয়াশিংটন সেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং কার্যক্রম চালাতে আগ্রহী।

২০২২ সাল থেকে কেন্দ্রটি সম্পূর্ণভাবে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এবং খবর পাওয়া গেছে যে, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন শান্তির জন্য প্রস্তাবিত ২৮ দফার রোডম্যাপে স্থান পেয়েছে।

বাণিজ্য বিষয়ক দৈনিক কমারস্যান্ত বৃহস্পতিবার জানায়, পুতিন বলেছেন যে—চলমান রুশ-মার্কিন আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূতরা মস্কোর সাথে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ভাগ করে নিতে এবং ওয়াশিংটনের অংশ ব্যবহার করে ক্রিপ্টো মাইনিং করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

তিনি আরও জানিয়েছেন, এই কেন্দ্র থেকে আবারও ইউক্রেনকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার একটি মার্কিন প্রস্তাবও মস্কো বিবেচনা করছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, পুতিনের বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিভ সম্প্রতি মিয়ামি থেকে ফেরার পর, ‘শাটল ডিপ্লোম্যাসি—shuttle diplomacy’—এর সর্বশেষ ধাপে ওয়াশিংটনের দেওয়া একটি পাল্টা প্রস্তাব বর্তমানে রাশিয়া বিশ্লেষণ করছে।

এর এক দিন আগে ভ্লাদিমির জেলেনস্কি তাঁর নিজস্ব একটি খসড়া পরিকল্পনা উন্মোচন করেন, যেখানে তিনি রাশিয়ার দখলে থাকা এই পারমাণবিক কেন্দ্রটি ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৫০/৫০ ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন।

ইউক্রেনীয় নেতা মস্কোর কাছ থেকে আঞ্চলিক ছাড় দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন, যদিও বর্তমানে যুদ্ধের সামনের সারিতে রুশ বাহিনী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তিনি ইউক্রেনের জন্য ৮ লাখ সৈন্যের একটি শান্তিকালীন সেনাবাহিনী রাখা এবং ওয়াশিংটন, ন্যাটো ও ইউরোপীয় মিত্রদের কাছ থেকে ন্যাটোর ‘আর্টিকেল-৫’ এর মতো নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছেন।

মস্কো দাবি করে আসছে যে, ইউক্রেন এবং তার পশ্চিম ইউরোপীয় পৃষ্ঠপোষকরা এমন সব শর্ত যোগ করছে, যা রাশিয়ার জন্য গ্রহণ করা একেবারেই অসম্ভব এবং এর মাধ্যমে তারা মার্কিন শান্তি প্রচেষ্টাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

ক্রেমলিনের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং জ্যেষ্ঠ রুশ আলোচক ইউরি উশাকভ এই সপ্তাহের শুরুর দিকে বলেছিলেন, তারা যেসব ধারা অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছে তা ‘নথিগুলোর উন্নতি ঘটায়নি কিংবা দীর্ঘমেয়াদী শান্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাও তৈরি করেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৩
গ্রেপ্তার তুষার ও শুভম। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার তুষার ও শুভম। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের গুরগাঁওয়ে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। মাত্র ছয় মাসের পরিচয়ের ভিত্তিতে এক যুবক বিয়ের প্রস্তাব দেয় এক বিবাহিত তরুণীকে। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে গুলি করেন সেই যুবক। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গুরুগাঁওয়ের একটি ক্লাবের ভেতরে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২৫ বছর বয়সী এক নারীকে গুলি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ২০ ডিসেম্বর ভোরের দিকে এমজি রোডে।

পুলিশ জানিয়েছে, গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক নারী আহত হওয়ার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় পায়। গুরুতর আহত হওয়ায় শুরুতে তিনি জবানবন্দি দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না।

দিল্লির নাজাফগড়ের বাসিন্দা ওই নারীর স্বামী অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে যে, তাঁর স্ত্রী কল্পনা (২৫) গুরুগ্রামের একটি ক্লাবে কাজ করতেন এবং তাঁকে দিল্লির সঙ্গম বিহারের বাসিন্দা তুষার গুলি করেছেন।

অভিযোগে ওই স্বামী জানান, তাঁর স্ত্রী ১৯ ডিসেম্বর কাজে গিয়েছিলেন এবং রাত ১টার দিকে তাঁকে ফোন করে জানান, তাঁকে গুলি করা হয়েছে। অভিযোগকারী আরও যোগ করেন, ‘প্রায় এক মাস আগে তুষার আমাদের বাড়িতে এসেছিল, আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করেছিল এবং চলে গিয়েছিল।’

এই অভিযোগের ভিত্তিতে সেক্টর ২৯ থানায় একটি এফআইআর (FIR) দায়ের করা হয়। তদন্ত চলাকালীন, ক্রাইম ইউনিটের একটি দল উত্তর প্রদেশের বারাউত থেকে দুই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলো তুষার ওরফে জন্টি (২৫) এবং তার বন্ধু শুভম ওরফে জনি (২৪)। দুজনেই দিল্লির সঙ্গম বিহারের বাসিন্দা।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, তুষার স্বীকার করেছেন যে প্রায় ছয় মাস আগে ওই নারীর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয় এবং তিনি তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ওই নারী বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেন।

পুলিশের অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯ ডিসেম্বর রাতে তুষার তাঁর বন্ধু শুভমকে নিয়ে ওই ক্লাবে যান এবং আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনি ওই নারীকে গুলি করেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার আরও তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২২
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, মার্কিন বাহিনী উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএল (আইএসআইএস) যোদ্ধাদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘আজ রাতে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে আমার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় আইএসআইএস সন্ত্রাসী আবর্জনার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী এবং প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।’

ট্রাম্প বলেন, আইএসআইএল যোদ্ধারা ‘প্রাথমিকভাবে নির্দোষ খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যা বহু বছর এমনকি শতাব্দীর মধ্যেও দেখা যায়নি!’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি এর আগে এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম যে তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে; তবে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে এবং আজ রাতে সেটাই হয়েছে।’

আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা আফ্রিকা কমান্ড (AFRICOM) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, এই বিমান হামলাটি ‘নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে’ চালানো হয়েছে এবং এতে ‘একাধিক আইএসআইএস সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বিস্তারিত কোনো তথ্য না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘নাইজেরীয় সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ। সামনে আরও আসবে।

এক বিবৃতিতে আফ্রিকম জানিয়েছে, এই হামলাটি নাইজেরিয়ার সবতো রাজ্যে সংঘটিত হয়েছে, যা মূলত নাইজেরিয়ার সোকোতো রাজ্যকে নির্দেশ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, নাইজেরিয়ার সবতো নামে কোনো রাজ্য নেই।

নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান নির্যাতনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প পেন্টাগনকে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা শুরু করার নির্দেশ দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর এই মার্কিন সামরিক পদক্ষেপটি এল।

নাইজেরিয়া সরকার এর আগে ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা বলেছিল, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দেশের মুসলিম এবং খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই লক্ষ্যবস্তু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি একটি জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে না এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করে।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ শুক্রবার সকালে এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষ ‘সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থার মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাঠামোগত নিরাপত্তা সহযোগিতায় নিয়োজিত রয়েছে।’ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ‘এর ফলে উত্তর-পশ্চিমে বিমান হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নিখুঁতভাবে আঘাত করা সম্ভব হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত