Ajker Patrika

ইরানে যেভাবে ব্যর্থ হলো ইসরায়েলের শত কৌশল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৫, ২৩: ০৬
ইসরায়েলি ভূখণ্ডে এক ঘণ্টায় পাঁচ দফা হামলা চালিয়েছে ইরান। ছবি: এএফফি
ইসরায়েলি ভূখণ্ডে এক ঘণ্টায় পাঁচ দফা হামলা চালিয়েছে ইরান। ছবি: এএফফি

ইরানে টানা ১১ দিন বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। এই দাবি আসলেই কি অর্জিত হয়েছিল? প্রশ্ন কিন্তু থেকে যায়।

স্বল্প সময়ের এ যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহু দুটি লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের বিনাশ ও শাসনব্যবস্থার বদল।

ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের মূলোৎপাটন কি আদৌ করতে পেরেছে ইসরায়েল? সম্ভবত না। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের কোনো ক্ষতি হয়নি। অতএব ইসরায়েলের এই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলা যাচ্ছে না।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় শক্তিশালী বাংকার বাস্টার বোমা ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর (এমওপি) ব্যবহার করে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে পেরেছিল ইসরায়েল। তবে এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে এ যুদ্ধে তেমন কোনো সহায়তা দেয়নি। বাংকার বাস্টার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর কতটা ক্ষয়ক্ষতি করেছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন, কারণ, ইরান আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেবে, এ আশা ক্ষীণ।

আর ইরানের শাসনক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে ইসরায়েল যে কৌশল নিয়েছিল, তার পরিণতি হিসেবে যা ভেবে রেখেছিল, বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো।

ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতাদের হত্যা করে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে গণবিক্ষোভ উসকে দিতে চেয়েছিল ইসরায়েল। এই কৌশলের পেছনে ছিল ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস। ইসরায়েল মনে করে, শত্রু রাষ্ট্রকে অস্থির করতে হলে দেশটির শীর্ষ নেতাদের হত্যা করাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কিন্তু ইতিহাস বলছে, এই কৌশল কার্যকর হওয়ার নজির নেই বললেই চলে।

একটা ব্যতিক্রম ছিল, লেবাননে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু। তবে নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পাশাপাশি দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সংকটও এ ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছিল। আর অন্যান্য ঘটনায় ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডগুলো বড় কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইরানে ইসরায়েলের এই কৌশলের ফলে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার বদলে ইরানের জনগণ একত্র হয়েছেন। একসঙ্গে হয়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। এই মৃত্যুগুলো তাঁদের শোককে শক্তিতে পরিণত করেছে। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) শীর্ষ কমান্ডারদের হত্যা করেছে ইসরায়েল। ইরানের রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী শক্তি এবং একই সঙ্গে জনগণের একটি বড় অংশের কাছে ঘৃণিত এই আরজিসি। এরপরও অনেক ইরানিই এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। কারণ, ইরানিরা এ হামলাকে শুধু শাসনব্যবস্থা নয়, বরং গোটা ইরানের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখছে।

শাসনব্যবস্থার ওপর আঘাতের নামে শাসনব্যবস্থার প্রতীক লক্ষ্য করে ইসরায়েল বোমাবর্ষণ করেছিল, সেটি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।

এর একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কুখ্যাত এভিন কারাগারে হামলার কথা। রাজনৈতিক বন্দীদের নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত এই কারাগারে হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল বোঝাতে চেয়েছিল, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের সংগ্রামের সহায়তা করতে চায় তারা। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। এই হামলার পর বন্দীদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ তাঁদের সরিয়ে নিয়েছে অজ্ঞাত জায়গায়।

এ ছাড়া ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে ইরানের প্রতিশ্রুতির প্রতীক ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লক’ লক্ষ্য করে চালানো হামলাও ছিল চরম হতাশাজনক ও ব্যর্থ। অনেকে বলছেন, এই হামলা ইসরায়েলের এক হাস্যকর পদক্ষেপ ছিল।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবিতে ইসরায়েলের হামলাও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা শাসকগোষ্ঠীর প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর প্রচেষ্টা থামাতে চাচ্ছিল। কিন্তু অনেক ইসরায়েলিই বলছেন, এই হামলার মাধ্যমে ইরানিদের উল্টো সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে পাল্টা ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে লক্ষ্য বানানোর।

এত কিছুর পরও ইসরায়েল তার ঘোষিত যুদ্ধলক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ। আরও প্রশ্ন উঠছে, এই হামলা চালিয়ে অন্তত বিশ্বের সমর্থন কি আদায় করতে পেরেছে ইসরায়েল? বা গাজা প্রসঙ্গ আড়ালে ফেলে ‘ন্যায়ের লড়াইকারী’ হিসেবে ভাবমূর্তি গঠনের চেষ্টায় কি সফল হয়েছে? ইসরায়েল যদি এমন দাবি করে, তা সত্যিই অমূলক বলে মনে হবে।

নিঃসন্দেহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের একাধিক গুরুতর নিয়ম লঙ্ঘন বলা যায়। আর তাঁর এ কাজের দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক প্রভাব পড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে ট্রাম্প সরাসরি ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেননি। হামলার পরপরই মার্কিন বোমারু বিমানগুলো ফিরে গেছে দেশে।

আবার এই হামলার আগে-পরে ট্রাম্প বারবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে ইসরায়েলও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এতে বোঝা যায়, ট্রাম্প এই হামলা মূলত নিজের ও উপসাগরীয় মিত্রদের স্বার্থরক্ষার জন্য চালিয়েছিলেন।

বিশ্বের কয়েকজন নেতা তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ও ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার’-এর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস। তবে নেতাদের কেউই ইসরায়েলের কঠোর শর্তগুলোর সমর্থন করেননি, যার মধ্যে আছে—ইরান কোনো অবস্থাতেই ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ হতে পারবে না।

এদিকে বিশ্ব আবার সেই পুরোনো নীতিতে ফিরে গেছে, ‘পারমাণবিক অস্ত্র নয়’। অথচ এই নীতিতে বহু আগেই ইরান সম্মতি জানিয়েছিল।

অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশ্ব এখন ইরানকে ব্যবসার জন্য বৈধ ও গ্রহণযোগ্য অংশীদার হিসেবেই দেখছে। এটি ইসরায়েলের জন্য একটি পরাজয় এবং ইরানের জন্য একটি কূটনৈতিক বিজয়।

ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ ক্ষয়ক্ষতিও গুরুত্বপূর্ণ। এটা সত্য, ইসরায়েল খুব দ্রুত ইরানের আকাশসীমায় আধিপত্য নিয়ে ইচ্ছেমতো হামলা চালিয়েছিল। তবে ইরানও থেমে থাকেনি। বারবার ইসরায়েলের বিখ্যাত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে দেশটির রাজধানীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে আঘাত হানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। পুরো দেশ অচল করে তোলে এবং নজিরবিহীন হতাহতের পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের প্রতিরোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র (ইন্টারসেপ্টর মিসাইল) দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছিল এবং তা দ্রুত পূরণের সম্ভাবনাও ছিল না। যার ফলে যুদ্ধের চাপ ও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে ইসরায়েলের অর্থনীতিও দ্রুত ভেঙে পড়ছিল। এটিও ছিল ইরানের আরেকটি বড় সাফল্য।

১২ দিনের যুদ্ধ শেষ। টানা বোমা হামলায় ক্ষতবিক্ষত ও বিধ্বস্ত ইরান। শত শত প্রাণহানি হয়েছে দেশটিতে। তবুও ভেঙে পড়েনি এই ইসলামি প্রজাতন্ত্র। বরং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সঠিক লক্ষ্যভেদ করেছে। বিশ্বব্যাপী বেশির ভাগ দেশই ইরানকে এই যুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার হিসেবে দেখছে। পাল্টা তুমুল হামলা চালিয়েও ইরানের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়নি। বরং পাল্টা জবাব হিসেবে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার আগে সতর্কবার্তা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।

ইরান এমনভাবেই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে ট্রাম্পকে ইসরায়েলকে সতর্ক করতে বাধ্য করেছেন যেন আর কোনো হামলা না চালানো হয়।

শেষ পর্যন্ত ইরান এমনভাবে যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসেছে, যেমনটা তারা সব সময় চায়। ‘শত আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হলেও দৃঢ়ভাবে টিকে থাকা এবং ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনা রেখে দেওয়া।’

আল-জাজিরা থেকে ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গের মতামত অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক ফারহানা জিয়াসমিন।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানে তুষারপাতে পিচ্ছিল রাস্তায় ৫০টি গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫১
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত

তীব্র তুষারপাত ও পিচ্ছিল রাস্তার কারণে জাপানের মধ্যাঞ্চলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। দেশটির কান-এৎসু এক্সপ্রেসওয়েতে অন্তত ৫০টি গাড়ির স্তূপ তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরে যায়।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টোকিও থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গুনমা প্রিফেকচারের মিনাকামিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে দুটি ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পেছনে থাকা গাড়িগুলো একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকে। এই চেইন রিঅ্যাকশনের ফলে অন্তত ১০টি গাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাড়ে সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে টোকিওর একজন ৭৭ বছর বয়সী নারী রয়েছেন। এ ছাড়া একটি পুড়ে যাওয়া ট্রাকের চালকের আসন থেকে আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ২৬ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি ২১ জন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় ভারী তুষারপাতের সতর্কতা জারি ছিল। পুলিশের ধারণা, রাস্তার ওপর বরফ জমে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকগুলো পিছলে যায়। যার ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ষাটোর্ধ্ব এক প্রত্যক্ষদর্শী জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-কে জানান, সংঘর্ষের সময় তিনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন এবং দেখেন সামনের গাড়িগুলোতে আগুন ধরে গেছে। দ্রুত সেই আগুন অন্যান্য গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, তাঁকেসহ প্রায় ৫০ জনকে নিকটবর্তী একটি টোল প্লাজায় সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা সারা রাত অবস্থান করেন।

দুর্ঘটনার পর এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। রাস্তা পরিচালনাকারী সংস্থা নেক্সকো জানিয়েছে, আগুনের তাপে রাস্তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংস্থাটি আপাতত ওই রুট ব্যবহার না করার জন্য ভ্রমণকারীদের সতর্ক করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান, তবে আপত্তি হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্তে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বাহিনীতে যোগ দিতে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে পাকিস্তান। তবে এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে যদি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্ত থাকে, তবে পাকিস্তান তাতে অংশ নেবে না। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এ কথা বলেছেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেসের ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সাফল্য পর্যালোচনা করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়াজন করা হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার বলেন, গাজা শান্তি চুক্তির আওতায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ (আইএসএফ) গঠন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। পাকিস্তান যেকোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘পিস এনফোর্সমেন্ট’ (শান্তি বলবৎকরণ) নয়, বরং ‘পিসকিপিং’ (শান্তি রক্ষা) শব্দ ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে।

হামাসকে নিরস্ত্র করা প্রসঙ্গে ইশাক দার স্পষ্ট করে বলেন, ‘যদি এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে হামাসকে নিরস্ত্র করার কোনো ভূমিকা থাকে, তবে আমরা তাতে অংশ নেব না। এটি আমাদের কাজ নয়। হামাসকে নিরস্ত্র করার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা সেখানকার স্থানীয় সরকারের।’

ইশাক দার আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের ভূমিকা শুধু শান্তি বজায় রাখায় সহায়তা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কাউকে নিরস্ত্র করার কোনো অভিযানে পাকিস্তান তার সৈন্যদের জড়াতে চায় না।’

ইশাক দার জানান, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নীতিগতভাবে সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পাকিস্তান এই বাহিনীর ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ (টিওআর) এবং ম্যান্ডেট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবে।

প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজল্যুশন পাস হয়। পাকিস্তানসহ ১৩টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিলেও রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল। ওই পরিকল্পনারই একটি অন্যতম অংশ হলো এই ‘আইএসএফ’ গঠন। এখানে মূলত মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সৈন্যদের প্রাধান্য থাকবে।

ইশাক দার জানান, ইন্দোনেশিয়া এই বাহিনীতে ২০ হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও তারাও হামাসকে নিরস্ত্র করার বিষয়ে পাকিস্তানের মতোই আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং অভিজ্ঞ সামরিক বাহিনীর অধিকারী হওয়ায় গাজা শান্তি মিশনে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ ওয়াশিংটনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতিবাদ এবং হামাসের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে পাকিস্তান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই পথে এগোচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার দাবি করেন, একসময় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ বলে বিবেচিত হলেও বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় দেশটি পুনরায় বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে। তিনি জানান, প্রধান বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে পাকিস্তানের নীতিগত ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে ইসলামাবাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রুশ হামলায় রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
রুশ হামলায় রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ঠিক আগে রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ভাষ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাতভর চালানো এই হামলায় প্রায় ৫০০ ড্রোন ও ৪০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে কিয়েভের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

জেলেনস্কি এই হামলাকে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রাশিয়ার ‘সরাসরি জবাব’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর এটিই তাদের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নজিরবিহীন।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকাল পর্যন্ত হামলা অব্যাহত ছিল। রাজধানী কিয়েভে প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে চলা বিমান হামলার সতর্কতা স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে প্রত্যাহার করা হয়। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪৬ জন, যাদের মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে।

তবে এ বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা ইউক্রেনারগো জানায়, দেশজুড়ে জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। ফলে রাজধানী কিয়েভে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

এই হামলার প্রভাব ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডেও পড়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে দক্ষিণ-পূর্ব পোল্যান্ডের রেশজো ও লুবলিন বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে বিমানবন্দর দুটি আবার চালু করা হয়।

ট্রাম্প-জেলেনস্কি আলোচনার টেবিলে কী আছে

জেলেনস্কি বর্তমানে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টের উদ্দেশে বিমানে রয়েছেন। এক অডিও বার্তায় তিনি জানান, পথে কানাডায় থামবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ করবেন।

এর আগে শুক্রবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি হওয়া ২০ দফার শান্তি পরিকল্পনার ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে যুদ্ধ শেষে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হবে।’

জেলেনস্কির মতে, যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটা নির্ভর করবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী দিতে প্রস্তুত, কখন দিতে প্রস্তুত এবং কত দিনের জন্য।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেছেন, এই শান্তি প্রক্রিয়ায় মূল চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রই। পলিটিকোকে তিনি বলেন, ‘আমার অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত তাঁর (জেলেনস্কির) কিছুই চূড়ান্ত নয়। দেখা যাক, সে কী নিয়ে আসে।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, রোববারের বৈঠক ভালো হবে। তিনি আরও জানান, খুব শিগগির তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও কথা বলতে চান।

দোনেৎস্কের ভবিষ্যৎই এখন মূল প্রশ্ন

মস্কো দাবি করছে, ইউক্রেনকে দোনেৎস্কের একটি বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এই অঞ্চল রুশ বাহিনী প্রায় চার বছরের যুদ্ধেও পুরোপুরি দখল করতে পারেনি। অন্যদিকে কিয়েভ চায়, বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ থামানো হোক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এক সমঝোতার আওতায়, ইউক্রেনীয় বাহিনী দোনেৎস্কের কিছু এলাকা থেকে সরে গেলে সেখানে একটি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কথা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত ঠিক হয়নি।

জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদি চুক্তিতে বড় ধরনের আঞ্চলিক ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন আসে, তবে তিনি তা গণভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। তবে যুদ্ধের এমন পরিস্থিতিতে গণভোট আয়োজন অসম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ জানিয়েছেন, কিয়েভের ২০ দফা পরিকল্পনা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন, তবে শান্তি প্রক্রিয়ায় একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বা মোড় আসার বিষয়ে তিনি আশাবাদী। এখন সবার নজর রোববার ফ্লোরিডায় হতে যাওয়া ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের দিকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুয়াতেমালায় বাস খাদে পড়ে নিহত অন্তত ১৫, আহত ১৯

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ধারণা করা হচ্ছে, কুয়াশা বা যান্ত্রিক ত্রুটি এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।  ছবি: সংগৃহীত
ধারণা করা হচ্ছে, কুয়াশা বা যান্ত্রিক ত্রুটি এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালায় একটি যাত্রীবাহী বাস গভীর খাদে পড়ে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় ইন্টার-আমেরিকান হাইওয়েতে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আরও অন্তত ১৯ জন যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র লিয়ান্দ্রো আমাদোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ, ৩ জন নারী এবং ১টি শিশু রয়েছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাসটি গুয়াতেমালা সিটি থেকে মেক্সিকো সীমান্তবর্তী সান মার্কোস বিভাগের দিকে যাচ্ছিল। পথে টোটোনিকাপান বিভাগের ১৭২ থেকে ১৭৪ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৭৫ মিটার (২৫০ ফুট) গভীর একটি খাদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনাস্থলটি ‘আলাস্কা পিক’ নামে পরিচিত। দুর্গম ভূখণ্ড এবং খাড়া ঢালের কারণে এলাকাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

ধারণা করা হচ্ছে, কুয়াশা বা যান্ত্রিক ত্রুটি এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, তবে সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।

দেশটির ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনার কিছু ছবি শেয়ার করেছে। এতে দেখা যায়, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বাসটি থেকে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হচ্ছে।

আহত ১৯ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে কাছের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রিয়জনদের খোঁজে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছেন স্বজনেরা।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের শুরুতেই গুয়াতেমালা সিটির বাইরে একটি বাস খাদে পড়ে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। বছরের শেষ দিকে এসে আবারও একই ধরনের বড় দুর্ঘটনায় দেশটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত