Ajker Patrika

মার্কিন হামলার জবাব যেভাবে দিতে পারে ইরান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ১১: ১৫
ইরানের জবাব কোন অস্ত্র দিয়ে হবে তা দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব। ছবি: এএফপি
ইরানের জবাব কোন অস্ত্র দিয়ে হবে তা দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব। ছবি: এএফপি

ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলার আগে বেশ সময় নিয়েই ‘ওয়ার গেম’ অনুশীলন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান এবং সৌদি আরবে অবস্থানরত ৪০ হাজার মার্কিন সেনাকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন হামলার পর এবার সবার চোখ ইরানের দিকে। এই হামলার পাল্টা আঘাত হিসেবে কী করতে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটি। ইসরায়েলি হামলায় শীর্ষ নেতাদের হারানো এবং নতুন করে দায়িত্ব সমর্পণ করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খামেনি এবার মার্কিন আঘাতের পাল্টা জবাব কীভাবে দেবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।

মার্কিন হামলার জবাবে ইরানের মোক্ষম কিছু অস্ত্র রয়েছে, যা দেশটি এর আগেও ব্যবহার করেছে তবে যুক্তরাষ্ট্রের আঘাতের জবাবে সেগুলো গ্রহণযোগ্য কি না সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যেভাবে ইরান মার্কিন হামলার জবাব দিতে পারে—

মিসাইল ব্যবহার

ইরানের মোক্ষম অস্ত্র ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের হামলার জবাবে যেভাবে শত শত মিসাইল ছুড়েছিল, সেই পদ্ধতি এবারও কাজে লাগাবে দেশটি।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে গোপন সূত্রের উদ্ধৃতিতে জানানো হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি শনাক্ত করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

মধ্যপ্রাচ্য ও আশপাশের অঞ্চলে অন্তত ২০টি ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। এই ঘাঁটিগুলোর বেশির ভাগই ইরানের ‘সিজিল-২’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের মধ্যেই পড়ে।

ইরান শুরুতে ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর তেহরানের নজর পড়তে পারে আরব দেশগুলোতে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর দিকে।

তবে এই চেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কেন না অতীত বলছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলার চেষ্টায় ব্যর্থতার সম্ভাবনা বেশি। যেমনটা দেখা গিয়েছিল, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে থাকা দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়। ইরানের সাবেক শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালানো হয়েছিল। ইরানের এই হামলায় কোনো মার্কিন সেনা প্রাণ হারাননি। তবে বিস্ফোরণের আঘাতে ১১০ জন সেনা মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছিলেন। অনেকের ধারণা, এই হামলার ক্ষয়ক্ষতি এত বেশি ছিল যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা জবাবে কিছু করা থেকে বিরত ছিলেন।

এছাড়াও ইরানের পাল্টা জবাবের আকর্ষণীয় লক্ষ্য হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা মার্কিন বিমানঘাঁটি বহনকারী জাহাজগুলো। বর্তমানে দুটি বিশাল যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ (এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার) সেখানে রয়েছে। আরেকটি পথে আছে।

ইরানের সক্ষমতা

বিশ্বের অন্যতম উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধ কতটা কঠিন হতে পারে সেটা ইসরায়েলে ইরানের হামলা থেকে দেখা গেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বায়ুমণ্ডলের দিকে উঠে সুপারসনিক গতিতে মাটির দিকে ধেয়ে আসে, যা থামানো অত্যন্ত কঠিন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কাছে অন্তত দুটি কার্যকর ও পরীক্ষিত ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে—প্যাট্রিয়ট এবং টার্মিনাল হাই অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি)। গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সরিয়ে আনছে। এর পেছনে রয়েছে ইসরায়েল ও ইরান এবং তাদের মিত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা।

ইরাকের মার্কিন ঘাঁটি এরবিল ও আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটিতে ইতিমধ্যে প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি মোতায়েন রয়েছে। এগুলো আগেও জঙ্গিদের হামলা প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। সম্প্রতি, মার্কিন সামরিক কমান্ডাররা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তুলে এনে বাহরাইনের আইসা ও আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।

ইরান যেভাবে ইসরায়েলে একসঙ্গে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল তাতে যে কোনো দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হতে পারে। তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী এখন এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে আছে। তারা ধারণা করছে, ইসরায়েল ইরানের একসঙ্গে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। ইরানের চালানো সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্রের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। ইসরায়েল গত কয়েক দিনে ইরানের সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন অংশে হামলা চালিয়ে এই ক্ষতি করেছে।

তবে এটা সত্যি, সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। আগে যেখানে ইসরায়েলের দিকে একসঙ্গে ১০০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হতো, এখন সেখানে মাত্র কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে একবারে।

এ বিষয়ে ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ফাবিয়ান হফম্যান বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বেলায় ইরান এবার ভেবেচিন্তে কাজ করার অবস্থানে চলে এসেছে। তাদের পক্ষে এখন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোর সম্ভাবনা কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে যদি ইরান মার্কিন অবকাঠামোতে হামলা চালায়, তবে এর পরিণতি বেশ গুরুতর হবে। তখন যুক্তরাষ্ট্র আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়বে, যা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।’

ইরানের মিত্রদের ভূমিকা

ইরানের আঞ্চলিক প্রক্সি বা মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেই বরাবরই তাদের প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হতো। হিজবুল্লাহ ও হামাস মূলত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে ব্যস্ত রেখে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর সরাসরি হামলার সুযোগ যেন না পায়, সে ব্যবস্থাই করত। অন্যদিকে ইয়েমেনভিত্তিক হুতি বিদ্রোহীরা পশ্চিমা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাত।

ইরাকেও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ড্রোন হামলা চালিয়ে মার্কিন ঘাঁটিতে প্রাণঘাতী হামলা করেছিল। ইরাকে ইরানপন্থী গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহ হয়তো তাদের আগের হুমকি বাস্তবায়ন করতে পারে, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো, গত এক বছরে ইসরায়েল হামাস ও হিজবুল্লাহসহ এসব প্রক্সি গোষ্ঠীর বড় অংশ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সিলভারাডো পলিসি অ্যাক্সেলারেটরের চেয়ারম্যান দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, এখন ইসরায়েলের ওপর চালানো প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাই সরাসরি ইরান থেকে আসছে, যেটা নিয়ে ভাবা জরুরি।

হরমুজ প্রণালি

আরব উপদ্বীপ ও পারস্য উপসাগরের পশ্চিম প্রান্তের মাঝামাঝি অবস্থিত হরমুজ প্রণালি— যা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তেহরানের অন্যতম শক্তিশালী কৌশলগত হাতিয়ার। এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ পেট্রোলিয়াম পাড়ি দেয়। ইরান চাইলে মাইন বসিয়ে, মোবাইল ক্ষেপণাস্ত্র লাঞ্চার বসিয়ে ও সামুদ্রিক ড্রোন ব্যবহার করে তবে ১৯৮০-এর দশকে ‘ট্যাংকার যুদ্ধের’ সময় ইরান একই কৌশল নিয়েছিল, যদিও সফল হয়নি। ব্রিটিশ ও পরে মার্কিন নৌবাহিনী বাণিজ্যিক জাহাজকে নিরাপদে পৌঁছে দেয়।

প্রণালি বন্ধের আশঙ্কা থেকেই মার্কিন যুদ্ধ বিমান বহনকারী জাহাজ ইউএসএস নিমিটজ হরমুজ প্রণালিতে আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে। এই আশঙ্কায় মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, কারণ এটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোকে পারস্য উপসাগরেই আটকে ফেলবে। সাবেক রয়্যাল নেভি কর্মকর্তা টম শার্প বলেন, ‘মাইন অপসারণ মার্কিন নৌবাহিনীর দুর্বলতা।’

অবশ্য হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য হতে পারে। এর আগে লোহিত সাগরে পশ্চিমা জাহাজে হুতিরা হামলা চালালে ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যয় করে হামলা চালিয়েছেন।

তেলক্ষেত্রে হামলা

ইরান যদি মনে করে তারা এক অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি অথবা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ ধ্বংস অনিবার্য— তাহলে তারা বিশ্লেষকদের ভাষায় ‘শেষ বড় চাল’ চালাতে পারে, যেটি হলো উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা।

ইরান এর একটি নমুনা দেখিয়েছে ২০১৯ সালে। সে সময় সৌদি আরবের আবকায়েক ও খুরাইস তেল স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায় স্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ইরানকে দায়ী করে। এই হামলায় সৌদি আরবের অর্ধেক তেল উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়।

আবকায়েক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে সম্ভাব্য হামলা

আবকায়েক প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত করে—যা সৌদি আরবের মোট উৎপাদন সক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। ইরান যদি তাদের হুমকি বাস্তবায়নে যায়, তবে এই স্থাপনাটি প্রধান লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত তেল ও এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল এবং ওই এলাকার জলসীমা দিয়ে যাওয়া তেলবাহী ট্যাংকার হুমকির মুখে পড়তে পারে।

২০১৯ সালের মে মাসে ফুজাইরাহ উপকূলে লিম্পেট মাইন বিস্ফোরণে তিনটি ট্যাংকার ও একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই হামলার দায় কেউ স্বীকার না করলেও, পশ্চিমা কর্মকর্তারা সন্দেহ করেন ইরানি ‘ফ্রগম্যান’ (জলসেনারা) এটির পেছনে জড়িত ছিল।

তেল, হরমুজ প্রণালি ও ইরানের ‘শেষ অস্ত্র’

বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত সচেতন। আর হরমুজ প্রণালি দিয়েই বিশ্বে ব্যবহৃত মোট পেট্রোলিয়ামের এক-পঞ্চমাংশ আসে। এই জলপথ কোনো কারণে বন্ধ হলে জাহাজ চলাচল পুনরুদ্ধারে সামরিক হামলার অনুমোদন দেবেন ট্রাম্প।

এ ছাড়া মিত্র দেশ চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে ইরানের এই সিদ্ধান্ত। ইরানের থেকে সবচেয়ে বেশি তেল নিয়ে থাকে চীন আর এই হরমুজ প্রণালি ব্যবহার করেই দেশটিতে তেল পৌঁছায়। এ অবস্থায় প্রণালিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তোলা ছাড়া কিছু নয়।

এত কিছুর পরও ইরান জিপিএস নেভিগেশনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে প্রণালিতে চলাচলরত জাহাজগুলোর গতিপথে গোলমাল করেছে। একাধিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ধরনের জিপিএস ব্যাঘাতের কারণে দুইটি ট্যাংকার একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে আগুন ধরে যায়। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, এই জিপিএস সংকেত বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছিল ইরানের বান্দার আব্বাস বন্দরের কাছ থেকে, যা প্রণালির ঠিক উত্তরে অবস্থিত।

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরান লড়াইয়ের অংশ হিসেবে এই পথ বেছে নিবে না কারণ এতে আরব দেশগুলো সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং তেহরান আরও বেশি আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়বে।

সাইবার হামলা

ডেটা ধ্বংস করা, ফিশিং (ভুয়া ইমেইল ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য চুরি) এবং তথ্য প্রচার ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধমূলক অপারেশনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বহুবার সাইবার হামলা চালিয়েছে ইরান ও দেশটির আঞ্চলিক প্রক্সিরা। তারা এই দায় স্বীকারও করেছে।

এ ধরনের সাইবার হুমকি বেসামরিক ও সামরিক— দুই খাতের জন্যই বিপজ্জনক। যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলার জন্য দায়ী হ্যাকারদের সন্ধানে তথ্য আহ্বান করেছে। CyberAv3ngers নামের একটি গ্রুপ সম্পর্কে তথ্য দিলে ১ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রুপটির সঙ্গে ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জড়িত বলে মনে করা হয়।

তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বর্তমান সংকটে ইরান এই অস্ত্রটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, ‘ইরানি সাইবার শক্তি এখন শুধু খেলনার মতো। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এটি বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা কম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইয়েমেন সংঘাতে মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি ও আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।

অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৭
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত