আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলার আগে বেশ সময় নিয়েই ‘ওয়ার গেম’ অনুশীলন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান এবং সৌদি আরবে অবস্থানরত ৪০ হাজার মার্কিন সেনাকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন হামলার পর এবার সবার চোখ ইরানের দিকে। এই হামলার পাল্টা আঘাত হিসেবে কী করতে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটি। ইসরায়েলি হামলায় শীর্ষ নেতাদের হারানো এবং নতুন করে দায়িত্ব সমর্পণ করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খামেনি এবার মার্কিন আঘাতের পাল্টা জবাব কীভাবে দেবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।
মার্কিন হামলার জবাবে ইরানের মোক্ষম কিছু অস্ত্র রয়েছে, যা দেশটি এর আগেও ব্যবহার করেছে তবে যুক্তরাষ্ট্রের আঘাতের জবাবে সেগুলো গ্রহণযোগ্য কি না সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যেভাবে ইরান মার্কিন হামলার জবাব দিতে পারে—
মিসাইল ব্যবহার
ইরানের মোক্ষম অস্ত্র ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের হামলার জবাবে যেভাবে শত শত মিসাইল ছুড়েছিল, সেই পদ্ধতি এবারও কাজে লাগাবে দেশটি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে গোপন সূত্রের উদ্ধৃতিতে জানানো হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি শনাক্ত করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
মধ্যপ্রাচ্য ও আশপাশের অঞ্চলে অন্তত ২০টি ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। এই ঘাঁটিগুলোর বেশির ভাগই ইরানের ‘সিজিল-২’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের মধ্যেই পড়ে।
ইরান শুরুতে ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর তেহরানের নজর পড়তে পারে আরব দেশগুলোতে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর দিকে।
তবে এই চেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কেন না অতীত বলছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলার চেষ্টায় ব্যর্থতার সম্ভাবনা বেশি। যেমনটা দেখা গিয়েছিল, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে থাকা দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়। ইরানের সাবেক শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালানো হয়েছিল। ইরানের এই হামলায় কোনো মার্কিন সেনা প্রাণ হারাননি। তবে বিস্ফোরণের আঘাতে ১১০ জন সেনা মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছিলেন। অনেকের ধারণা, এই হামলার ক্ষয়ক্ষতি এত বেশি ছিল যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা জবাবে কিছু করা থেকে বিরত ছিলেন।
এছাড়াও ইরানের পাল্টা জবাবের আকর্ষণীয় লক্ষ্য হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা মার্কিন বিমানঘাঁটি বহনকারী জাহাজগুলো। বর্তমানে দুটি বিশাল যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ (এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার) সেখানে রয়েছে। আরেকটি পথে আছে।
ইরানের সক্ষমতা
বিশ্বের অন্যতম উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধ কতটা কঠিন হতে পারে সেটা ইসরায়েলে ইরানের হামলা থেকে দেখা গেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বায়ুমণ্ডলের দিকে উঠে সুপারসনিক গতিতে মাটির দিকে ধেয়ে আসে, যা থামানো অত্যন্ত কঠিন।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কাছে অন্তত দুটি কার্যকর ও পরীক্ষিত ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে—প্যাট্রিয়ট এবং টার্মিনাল হাই অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি)। গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সরিয়ে আনছে। এর পেছনে রয়েছে ইসরায়েল ও ইরান এবং তাদের মিত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা।
ইরাকের মার্কিন ঘাঁটি এরবিল ও আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটিতে ইতিমধ্যে প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি মোতায়েন রয়েছে। এগুলো আগেও জঙ্গিদের হামলা প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। সম্প্রতি, মার্কিন সামরিক কমান্ডাররা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তুলে এনে বাহরাইনের আইসা ও আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরান যেভাবে ইসরায়েলে একসঙ্গে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল তাতে যে কোনো দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হতে পারে। তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী এখন এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে আছে। তারা ধারণা করছে, ইসরায়েল ইরানের একসঙ্গে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। ইরানের চালানো সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্রের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। ইসরায়েল গত কয়েক দিনে ইরানের সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন অংশে হামলা চালিয়ে এই ক্ষতি করেছে।
তবে এটা সত্যি, সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। আগে যেখানে ইসরায়েলের দিকে একসঙ্গে ১০০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হতো, এখন সেখানে মাত্র কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে একবারে।
এ বিষয়ে ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ফাবিয়ান হফম্যান বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বেলায় ইরান এবার ভেবেচিন্তে কাজ করার অবস্থানে চলে এসেছে। তাদের পক্ষে এখন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোর সম্ভাবনা কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে যদি ইরান মার্কিন অবকাঠামোতে হামলা চালায়, তবে এর পরিণতি বেশ গুরুতর হবে। তখন যুক্তরাষ্ট্র আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়বে, যা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।’
ইরানের মিত্রদের ভূমিকা
ইরানের আঞ্চলিক প্রক্সি বা মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেই বরাবরই তাদের প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হতো। হিজবুল্লাহ ও হামাস মূলত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে ব্যস্ত রেখে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর সরাসরি হামলার সুযোগ যেন না পায়, সে ব্যবস্থাই করত। অন্যদিকে ইয়েমেনভিত্তিক হুতি বিদ্রোহীরা পশ্চিমা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাত।
ইরাকেও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ড্রোন হামলা চালিয়ে মার্কিন ঘাঁটিতে প্রাণঘাতী হামলা করেছিল। ইরাকে ইরানপন্থী গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহ হয়তো তাদের আগের হুমকি বাস্তবায়ন করতে পারে, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো, গত এক বছরে ইসরায়েল হামাস ও হিজবুল্লাহসহ এসব প্রক্সি গোষ্ঠীর বড় অংশ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সিলভারাডো পলিসি অ্যাক্সেলারেটরের চেয়ারম্যান দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, এখন ইসরায়েলের ওপর চালানো প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাই সরাসরি ইরান থেকে আসছে, যেটা নিয়ে ভাবা জরুরি।
হরমুজ প্রণালি
আরব উপদ্বীপ ও পারস্য উপসাগরের পশ্চিম প্রান্তের মাঝামাঝি অবস্থিত হরমুজ প্রণালি— যা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তেহরানের অন্যতম শক্তিশালী কৌশলগত হাতিয়ার। এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ পেট্রোলিয়াম পাড়ি দেয়। ইরান চাইলে মাইন বসিয়ে, মোবাইল ক্ষেপণাস্ত্র লাঞ্চার বসিয়ে ও সামুদ্রিক ড্রোন ব্যবহার করে তবে ১৯৮০-এর দশকে ‘ট্যাংকার যুদ্ধের’ সময় ইরান একই কৌশল নিয়েছিল, যদিও সফল হয়নি। ব্রিটিশ ও পরে মার্কিন নৌবাহিনী বাণিজ্যিক জাহাজকে নিরাপদে পৌঁছে দেয়।
প্রণালি বন্ধের আশঙ্কা থেকেই মার্কিন যুদ্ধ বিমান বহনকারী জাহাজ ইউএসএস নিমিটজ হরমুজ প্রণালিতে আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে। এই আশঙ্কায় মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, কারণ এটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোকে পারস্য উপসাগরেই আটকে ফেলবে। সাবেক রয়্যাল নেভি কর্মকর্তা টম শার্প বলেন, ‘মাইন অপসারণ মার্কিন নৌবাহিনীর দুর্বলতা।’
অবশ্য হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য হতে পারে। এর আগে লোহিত সাগরে পশ্চিমা জাহাজে হুতিরা হামলা চালালে ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যয় করে হামলা চালিয়েছেন।
তেলক্ষেত্রে হামলা
ইরান যদি মনে করে তারা এক অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি অথবা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ ধ্বংস অনিবার্য— তাহলে তারা বিশ্লেষকদের ভাষায় ‘শেষ বড় চাল’ চালাতে পারে, যেটি হলো উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা।
ইরান এর একটি নমুনা দেখিয়েছে ২০১৯ সালে। সে সময় সৌদি আরবের আবকায়েক ও খুরাইস তেল স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায় স্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ইরানকে দায়ী করে। এই হামলায় সৌদি আরবের অর্ধেক তেল উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়।
আবকায়েক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে সম্ভাব্য হামলা
আবকায়েক প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত করে—যা সৌদি আরবের মোট উৎপাদন সক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। ইরান যদি তাদের হুমকি বাস্তবায়নে যায়, তবে এই স্থাপনাটি প্রধান লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত তেল ও এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল এবং ওই এলাকার জলসীমা দিয়ে যাওয়া তেলবাহী ট্যাংকার হুমকির মুখে পড়তে পারে।
২০১৯ সালের মে মাসে ফুজাইরাহ উপকূলে লিম্পেট মাইন বিস্ফোরণে তিনটি ট্যাংকার ও একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই হামলার দায় কেউ স্বীকার না করলেও, পশ্চিমা কর্মকর্তারা সন্দেহ করেন ইরানি ‘ফ্রগম্যান’ (জলসেনারা) এটির পেছনে জড়িত ছিল।
তেল, হরমুজ প্রণালি ও ইরানের ‘শেষ অস্ত্র’
বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত সচেতন। আর হরমুজ প্রণালি দিয়েই বিশ্বে ব্যবহৃত মোট পেট্রোলিয়ামের এক-পঞ্চমাংশ আসে। এই জলপথ কোনো কারণে বন্ধ হলে জাহাজ চলাচল পুনরুদ্ধারে সামরিক হামলার অনুমোদন দেবেন ট্রাম্প।
এ ছাড়া মিত্র দেশ চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে ইরানের এই সিদ্ধান্ত। ইরানের থেকে সবচেয়ে বেশি তেল নিয়ে থাকে চীন আর এই হরমুজ প্রণালি ব্যবহার করেই দেশটিতে তেল পৌঁছায়। এ অবস্থায় প্রণালিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তোলা ছাড়া কিছু নয়।
এত কিছুর পরও ইরান জিপিএস নেভিগেশনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে প্রণালিতে চলাচলরত জাহাজগুলোর গতিপথে গোলমাল করেছে। একাধিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ধরনের জিপিএস ব্যাঘাতের কারণে দুইটি ট্যাংকার একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে আগুন ধরে যায়। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, এই জিপিএস সংকেত বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছিল ইরানের বান্দার আব্বাস বন্দরের কাছ থেকে, যা প্রণালির ঠিক উত্তরে অবস্থিত।
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরান লড়াইয়ের অংশ হিসেবে এই পথ বেছে নিবে না কারণ এতে আরব দেশগুলো সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং তেহরান আরও বেশি আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়বে।
সাইবার হামলা
ডেটা ধ্বংস করা, ফিশিং (ভুয়া ইমেইল ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য চুরি) এবং তথ্য প্রচার ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধমূলক অপারেশনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বহুবার সাইবার হামলা চালিয়েছে ইরান ও দেশটির আঞ্চলিক প্রক্সিরা। তারা এই দায় স্বীকারও করেছে।
এ ধরনের সাইবার হুমকি বেসামরিক ও সামরিক— দুই খাতের জন্যই বিপজ্জনক। যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলার জন্য দায়ী হ্যাকারদের সন্ধানে তথ্য আহ্বান করেছে। CyberAv3ngers নামের একটি গ্রুপ সম্পর্কে তথ্য দিলে ১ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রুপটির সঙ্গে ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জড়িত বলে মনে করা হয়।
তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বর্তমান সংকটে ইরান এই অস্ত্রটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, ‘ইরানি সাইবার শক্তি এখন শুধু খেলনার মতো। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এটি বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা কম।’

ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলার আগে বেশ সময় নিয়েই ‘ওয়ার গেম’ অনুশীলন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান এবং সৌদি আরবে অবস্থানরত ৪০ হাজার মার্কিন সেনাকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন হামলার পর এবার সবার চোখ ইরানের দিকে। এই হামলার পাল্টা আঘাত হিসেবে কী করতে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটি। ইসরায়েলি হামলায় শীর্ষ নেতাদের হারানো এবং নতুন করে দায়িত্ব সমর্পণ করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খামেনি এবার মার্কিন আঘাতের পাল্টা জবাব কীভাবে দেবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।
মার্কিন হামলার জবাবে ইরানের মোক্ষম কিছু অস্ত্র রয়েছে, যা দেশটি এর আগেও ব্যবহার করেছে তবে যুক্তরাষ্ট্রের আঘাতের জবাবে সেগুলো গ্রহণযোগ্য কি না সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যেভাবে ইরান মার্কিন হামলার জবাব দিতে পারে—
মিসাইল ব্যবহার
ইরানের মোক্ষম অস্ত্র ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের হামলার জবাবে যেভাবে শত শত মিসাইল ছুড়েছিল, সেই পদ্ধতি এবারও কাজে লাগাবে দেশটি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে গোপন সূত্রের উদ্ধৃতিতে জানানো হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি শনাক্ত করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
মধ্যপ্রাচ্য ও আশপাশের অঞ্চলে অন্তত ২০টি ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। এই ঘাঁটিগুলোর বেশির ভাগই ইরানের ‘সিজিল-২’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের মধ্যেই পড়ে।
ইরান শুরুতে ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর তেহরানের নজর পড়তে পারে আরব দেশগুলোতে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর দিকে।
তবে এই চেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কেন না অতীত বলছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলার চেষ্টায় ব্যর্থতার সম্ভাবনা বেশি। যেমনটা দেখা গিয়েছিল, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে থাকা দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়। ইরানের সাবেক শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালানো হয়েছিল। ইরানের এই হামলায় কোনো মার্কিন সেনা প্রাণ হারাননি। তবে বিস্ফোরণের আঘাতে ১১০ জন সেনা মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছিলেন। অনেকের ধারণা, এই হামলার ক্ষয়ক্ষতি এত বেশি ছিল যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা জবাবে কিছু করা থেকে বিরত ছিলেন।
এছাড়াও ইরানের পাল্টা জবাবের আকর্ষণীয় লক্ষ্য হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা মার্কিন বিমানঘাঁটি বহনকারী জাহাজগুলো। বর্তমানে দুটি বিশাল যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ (এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার) সেখানে রয়েছে। আরেকটি পথে আছে।
ইরানের সক্ষমতা
বিশ্বের অন্যতম উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধ কতটা কঠিন হতে পারে সেটা ইসরায়েলে ইরানের হামলা থেকে দেখা গেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বায়ুমণ্ডলের দিকে উঠে সুপারসনিক গতিতে মাটির দিকে ধেয়ে আসে, যা থামানো অত্যন্ত কঠিন।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কাছে অন্তত দুটি কার্যকর ও পরীক্ষিত ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে—প্যাট্রিয়ট এবং টার্মিনাল হাই অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি)। গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সরিয়ে আনছে। এর পেছনে রয়েছে ইসরায়েল ও ইরান এবং তাদের মিত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা।
ইরাকের মার্কিন ঘাঁটি এরবিল ও আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটিতে ইতিমধ্যে প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি মোতায়েন রয়েছে। এগুলো আগেও জঙ্গিদের হামলা প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। সম্প্রতি, মার্কিন সামরিক কমান্ডাররা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তুলে এনে বাহরাইনের আইসা ও আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরান যেভাবে ইসরায়েলে একসঙ্গে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল তাতে যে কোনো দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হতে পারে। তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী এখন এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে আছে। তারা ধারণা করছে, ইসরায়েল ইরানের একসঙ্গে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। ইরানের চালানো সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্রের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। ইসরায়েল গত কয়েক দিনে ইরানের সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন অংশে হামলা চালিয়ে এই ক্ষতি করেছে।
তবে এটা সত্যি, সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। আগে যেখানে ইসরায়েলের দিকে একসঙ্গে ১০০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হতো, এখন সেখানে মাত্র কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে একবারে।
এ বিষয়ে ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ফাবিয়ান হফম্যান বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বেলায় ইরান এবার ভেবেচিন্তে কাজ করার অবস্থানে চলে এসেছে। তাদের পক্ষে এখন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোর সম্ভাবনা কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে যদি ইরান মার্কিন অবকাঠামোতে হামলা চালায়, তবে এর পরিণতি বেশ গুরুতর হবে। তখন যুক্তরাষ্ট্র আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়বে, যা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।’
ইরানের মিত্রদের ভূমিকা
ইরানের আঞ্চলিক প্রক্সি বা মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেই বরাবরই তাদের প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হতো। হিজবুল্লাহ ও হামাস মূলত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে ব্যস্ত রেখে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর সরাসরি হামলার সুযোগ যেন না পায়, সে ব্যবস্থাই করত। অন্যদিকে ইয়েমেনভিত্তিক হুতি বিদ্রোহীরা পশ্চিমা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাত।
ইরাকেও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ড্রোন হামলা চালিয়ে মার্কিন ঘাঁটিতে প্রাণঘাতী হামলা করেছিল। ইরাকে ইরানপন্থী গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহ হয়তো তাদের আগের হুমকি বাস্তবায়ন করতে পারে, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো, গত এক বছরে ইসরায়েল হামাস ও হিজবুল্লাহসহ এসব প্রক্সি গোষ্ঠীর বড় অংশ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সিলভারাডো পলিসি অ্যাক্সেলারেটরের চেয়ারম্যান দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, এখন ইসরায়েলের ওপর চালানো প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাই সরাসরি ইরান থেকে আসছে, যেটা নিয়ে ভাবা জরুরি।
হরমুজ প্রণালি
আরব উপদ্বীপ ও পারস্য উপসাগরের পশ্চিম প্রান্তের মাঝামাঝি অবস্থিত হরমুজ প্রণালি— যা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তেহরানের অন্যতম শক্তিশালী কৌশলগত হাতিয়ার। এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ পেট্রোলিয়াম পাড়ি দেয়। ইরান চাইলে মাইন বসিয়ে, মোবাইল ক্ষেপণাস্ত্র লাঞ্চার বসিয়ে ও সামুদ্রিক ড্রোন ব্যবহার করে তবে ১৯৮০-এর দশকে ‘ট্যাংকার যুদ্ধের’ সময় ইরান একই কৌশল নিয়েছিল, যদিও সফল হয়নি। ব্রিটিশ ও পরে মার্কিন নৌবাহিনী বাণিজ্যিক জাহাজকে নিরাপদে পৌঁছে দেয়।
প্রণালি বন্ধের আশঙ্কা থেকেই মার্কিন যুদ্ধ বিমান বহনকারী জাহাজ ইউএসএস নিমিটজ হরমুজ প্রণালিতে আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে। এই আশঙ্কায় মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, কারণ এটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোকে পারস্য উপসাগরেই আটকে ফেলবে। সাবেক রয়্যাল নেভি কর্মকর্তা টম শার্প বলেন, ‘মাইন অপসারণ মার্কিন নৌবাহিনীর দুর্বলতা।’
অবশ্য হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য হতে পারে। এর আগে লোহিত সাগরে পশ্চিমা জাহাজে হুতিরা হামলা চালালে ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যয় করে হামলা চালিয়েছেন।
তেলক্ষেত্রে হামলা
ইরান যদি মনে করে তারা এক অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি অথবা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ ধ্বংস অনিবার্য— তাহলে তারা বিশ্লেষকদের ভাষায় ‘শেষ বড় চাল’ চালাতে পারে, যেটি হলো উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা।
ইরান এর একটি নমুনা দেখিয়েছে ২০১৯ সালে। সে সময় সৌদি আরবের আবকায়েক ও খুরাইস তেল স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায় স্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ইরানকে দায়ী করে। এই হামলায় সৌদি আরবের অর্ধেক তেল উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়।
আবকায়েক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে সম্ভাব্য হামলা
আবকায়েক প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত করে—যা সৌদি আরবের মোট উৎপাদন সক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। ইরান যদি তাদের হুমকি বাস্তবায়নে যায়, তবে এই স্থাপনাটি প্রধান লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত তেল ও এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল এবং ওই এলাকার জলসীমা দিয়ে যাওয়া তেলবাহী ট্যাংকার হুমকির মুখে পড়তে পারে।
২০১৯ সালের মে মাসে ফুজাইরাহ উপকূলে লিম্পেট মাইন বিস্ফোরণে তিনটি ট্যাংকার ও একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই হামলার দায় কেউ স্বীকার না করলেও, পশ্চিমা কর্মকর্তারা সন্দেহ করেন ইরানি ‘ফ্রগম্যান’ (জলসেনারা) এটির পেছনে জড়িত ছিল।
তেল, হরমুজ প্রণালি ও ইরানের ‘শেষ অস্ত্র’
বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত সচেতন। আর হরমুজ প্রণালি দিয়েই বিশ্বে ব্যবহৃত মোট পেট্রোলিয়ামের এক-পঞ্চমাংশ আসে। এই জলপথ কোনো কারণে বন্ধ হলে জাহাজ চলাচল পুনরুদ্ধারে সামরিক হামলার অনুমোদন দেবেন ট্রাম্প।
এ ছাড়া মিত্র দেশ চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে ইরানের এই সিদ্ধান্ত। ইরানের থেকে সবচেয়ে বেশি তেল নিয়ে থাকে চীন আর এই হরমুজ প্রণালি ব্যবহার করেই দেশটিতে তেল পৌঁছায়। এ অবস্থায় প্রণালিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তোলা ছাড়া কিছু নয়।
এত কিছুর পরও ইরান জিপিএস নেভিগেশনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে প্রণালিতে চলাচলরত জাহাজগুলোর গতিপথে গোলমাল করেছে। একাধিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ধরনের জিপিএস ব্যাঘাতের কারণে দুইটি ট্যাংকার একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে আগুন ধরে যায়। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, এই জিপিএস সংকেত বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছিল ইরানের বান্দার আব্বাস বন্দরের কাছ থেকে, যা প্রণালির ঠিক উত্তরে অবস্থিত।
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরান লড়াইয়ের অংশ হিসেবে এই পথ বেছে নিবে না কারণ এতে আরব দেশগুলো সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং তেহরান আরও বেশি আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়বে।
সাইবার হামলা
ডেটা ধ্বংস করা, ফিশিং (ভুয়া ইমেইল ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য চুরি) এবং তথ্য প্রচার ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধমূলক অপারেশনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বহুবার সাইবার হামলা চালিয়েছে ইরান ও দেশটির আঞ্চলিক প্রক্সিরা। তারা এই দায় স্বীকারও করেছে।
এ ধরনের সাইবার হুমকি বেসামরিক ও সামরিক— দুই খাতের জন্যই বিপজ্জনক। যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলার জন্য দায়ী হ্যাকারদের সন্ধানে তথ্য আহ্বান করেছে। CyberAv3ngers নামের একটি গ্রুপ সম্পর্কে তথ্য দিলে ১ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রুপটির সঙ্গে ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জড়িত বলে মনে করা হয়।
তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বর্তমান সংকটে ইরান এই অস্ত্রটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, ‘ইরানি সাইবার শক্তি এখন শুধু খেলনার মতো। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এটি বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা কম।’
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলার আগে বেশ সময় নিয়েই ‘ওয়ার গেম’ অনুশীলন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান এবং সৌদি আরবে অবস্থানরত ৪০ হাজার মার্কিন সেনাকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন হামলার পর এবার সবার চোখ ইরানের দিকে। এই হামলার পাল্টা আঘাত হিসেবে কী করতে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটি। ইসরায়েলি হামলায় শীর্ষ নেতাদের হারানো এবং নতুন করে দায়িত্ব সমর্পণ করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খামেনি এবার মার্কিন আঘাতের পাল্টা জবাব কীভাবে দেবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।
মার্কিন হামলার জবাবে ইরানের মোক্ষম কিছু অস্ত্র রয়েছে, যা দেশটি এর আগেও ব্যবহার করেছে তবে যুক্তরাষ্ট্রের আঘাতের জবাবে সেগুলো গ্রহণযোগ্য কি না সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যেভাবে ইরান মার্কিন হামলার জবাব দিতে পারে—
মিসাইল ব্যবহার
ইরানের মোক্ষম অস্ত্র ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের হামলার জবাবে যেভাবে শত শত মিসাইল ছুড়েছিল, সেই পদ্ধতি এবারও কাজে লাগাবে দেশটি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে গোপন সূত্রের উদ্ধৃতিতে জানানো হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি শনাক্ত করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
মধ্যপ্রাচ্য ও আশপাশের অঞ্চলে অন্তত ২০টি ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। এই ঘাঁটিগুলোর বেশির ভাগই ইরানের ‘সিজিল-২’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের মধ্যেই পড়ে।
ইরান শুরুতে ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর তেহরানের নজর পড়তে পারে আরব দেশগুলোতে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর দিকে।
তবে এই চেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কেন না অতীত বলছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলার চেষ্টায় ব্যর্থতার সম্ভাবনা বেশি। যেমনটা দেখা গিয়েছিল, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে থাকা দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়। ইরানের সাবেক শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালানো হয়েছিল। ইরানের এই হামলায় কোনো মার্কিন সেনা প্রাণ হারাননি। তবে বিস্ফোরণের আঘাতে ১১০ জন সেনা মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছিলেন। অনেকের ধারণা, এই হামলার ক্ষয়ক্ষতি এত বেশি ছিল যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা জবাবে কিছু করা থেকে বিরত ছিলেন।
এছাড়াও ইরানের পাল্টা জবাবের আকর্ষণীয় লক্ষ্য হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা মার্কিন বিমানঘাঁটি বহনকারী জাহাজগুলো। বর্তমানে দুটি বিশাল যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ (এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার) সেখানে রয়েছে। আরেকটি পথে আছে।
ইরানের সক্ষমতা
বিশ্বের অন্যতম উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধ কতটা কঠিন হতে পারে সেটা ইসরায়েলে ইরানের হামলা থেকে দেখা গেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বায়ুমণ্ডলের দিকে উঠে সুপারসনিক গতিতে মাটির দিকে ধেয়ে আসে, যা থামানো অত্যন্ত কঠিন।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কাছে অন্তত দুটি কার্যকর ও পরীক্ষিত ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে—প্যাট্রিয়ট এবং টার্মিনাল হাই অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি)। গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সরিয়ে আনছে। এর পেছনে রয়েছে ইসরায়েল ও ইরান এবং তাদের মিত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা।
ইরাকের মার্কিন ঘাঁটি এরবিল ও আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটিতে ইতিমধ্যে প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি মোতায়েন রয়েছে। এগুলো আগেও জঙ্গিদের হামলা প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। সম্প্রতি, মার্কিন সামরিক কমান্ডাররা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তুলে এনে বাহরাইনের আইসা ও আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরান যেভাবে ইসরায়েলে একসঙ্গে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল তাতে যে কোনো দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হতে পারে। তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী এখন এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে আছে। তারা ধারণা করছে, ইসরায়েল ইরানের একসঙ্গে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। ইরানের চালানো সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্রের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। ইসরায়েল গত কয়েক দিনে ইরানের সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন অংশে হামলা চালিয়ে এই ক্ষতি করেছে।
তবে এটা সত্যি, সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। আগে যেখানে ইসরায়েলের দিকে একসঙ্গে ১০০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হতো, এখন সেখানে মাত্র কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে একবারে।
এ বিষয়ে ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ফাবিয়ান হফম্যান বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বেলায় ইরান এবার ভেবেচিন্তে কাজ করার অবস্থানে চলে এসেছে। তাদের পক্ষে এখন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোর সম্ভাবনা কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে যদি ইরান মার্কিন অবকাঠামোতে হামলা চালায়, তবে এর পরিণতি বেশ গুরুতর হবে। তখন যুক্তরাষ্ট্র আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়বে, যা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।’
ইরানের মিত্রদের ভূমিকা
ইরানের আঞ্চলিক প্রক্সি বা মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেই বরাবরই তাদের প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হতো। হিজবুল্লাহ ও হামাস মূলত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে ব্যস্ত রেখে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর সরাসরি হামলার সুযোগ যেন না পায়, সে ব্যবস্থাই করত। অন্যদিকে ইয়েমেনভিত্তিক হুতি বিদ্রোহীরা পশ্চিমা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাত।
ইরাকেও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ড্রোন হামলা চালিয়ে মার্কিন ঘাঁটিতে প্রাণঘাতী হামলা করেছিল। ইরাকে ইরানপন্থী গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহ হয়তো তাদের আগের হুমকি বাস্তবায়ন করতে পারে, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো, গত এক বছরে ইসরায়েল হামাস ও হিজবুল্লাহসহ এসব প্রক্সি গোষ্ঠীর বড় অংশ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সিলভারাডো পলিসি অ্যাক্সেলারেটরের চেয়ারম্যান দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, এখন ইসরায়েলের ওপর চালানো প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাই সরাসরি ইরান থেকে আসছে, যেটা নিয়ে ভাবা জরুরি।
হরমুজ প্রণালি
আরব উপদ্বীপ ও পারস্য উপসাগরের পশ্চিম প্রান্তের মাঝামাঝি অবস্থিত হরমুজ প্রণালি— যা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তেহরানের অন্যতম শক্তিশালী কৌশলগত হাতিয়ার। এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ পেট্রোলিয়াম পাড়ি দেয়। ইরান চাইলে মাইন বসিয়ে, মোবাইল ক্ষেপণাস্ত্র লাঞ্চার বসিয়ে ও সামুদ্রিক ড্রোন ব্যবহার করে তবে ১৯৮০-এর দশকে ‘ট্যাংকার যুদ্ধের’ সময় ইরান একই কৌশল নিয়েছিল, যদিও সফল হয়নি। ব্রিটিশ ও পরে মার্কিন নৌবাহিনী বাণিজ্যিক জাহাজকে নিরাপদে পৌঁছে দেয়।
প্রণালি বন্ধের আশঙ্কা থেকেই মার্কিন যুদ্ধ বিমান বহনকারী জাহাজ ইউএসএস নিমিটজ হরমুজ প্রণালিতে আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে। এই আশঙ্কায় মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, কারণ এটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোকে পারস্য উপসাগরেই আটকে ফেলবে। সাবেক রয়্যাল নেভি কর্মকর্তা টম শার্প বলেন, ‘মাইন অপসারণ মার্কিন নৌবাহিনীর দুর্বলতা।’
অবশ্য হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য হতে পারে। এর আগে লোহিত সাগরে পশ্চিমা জাহাজে হুতিরা হামলা চালালে ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যয় করে হামলা চালিয়েছেন।
তেলক্ষেত্রে হামলা
ইরান যদি মনে করে তারা এক অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি অথবা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ ধ্বংস অনিবার্য— তাহলে তারা বিশ্লেষকদের ভাষায় ‘শেষ বড় চাল’ চালাতে পারে, যেটি হলো উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা।
ইরান এর একটি নমুনা দেখিয়েছে ২০১৯ সালে। সে সময় সৌদি আরবের আবকায়েক ও খুরাইস তেল স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায় স্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ইরানকে দায়ী করে। এই হামলায় সৌদি আরবের অর্ধেক তেল উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়।
আবকায়েক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে সম্ভাব্য হামলা
আবকায়েক প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত করে—যা সৌদি আরবের মোট উৎপাদন সক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। ইরান যদি তাদের হুমকি বাস্তবায়নে যায়, তবে এই স্থাপনাটি প্রধান লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত তেল ও এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল এবং ওই এলাকার জলসীমা দিয়ে যাওয়া তেলবাহী ট্যাংকার হুমকির মুখে পড়তে পারে।
২০১৯ সালের মে মাসে ফুজাইরাহ উপকূলে লিম্পেট মাইন বিস্ফোরণে তিনটি ট্যাংকার ও একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই হামলার দায় কেউ স্বীকার না করলেও, পশ্চিমা কর্মকর্তারা সন্দেহ করেন ইরানি ‘ফ্রগম্যান’ (জলসেনারা) এটির পেছনে জড়িত ছিল।
তেল, হরমুজ প্রণালি ও ইরানের ‘শেষ অস্ত্র’
বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত সচেতন। আর হরমুজ প্রণালি দিয়েই বিশ্বে ব্যবহৃত মোট পেট্রোলিয়ামের এক-পঞ্চমাংশ আসে। এই জলপথ কোনো কারণে বন্ধ হলে জাহাজ চলাচল পুনরুদ্ধারে সামরিক হামলার অনুমোদন দেবেন ট্রাম্প।
এ ছাড়া মিত্র দেশ চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে ইরানের এই সিদ্ধান্ত। ইরানের থেকে সবচেয়ে বেশি তেল নিয়ে থাকে চীন আর এই হরমুজ প্রণালি ব্যবহার করেই দেশটিতে তেল পৌঁছায়। এ অবস্থায় প্রণালিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তোলা ছাড়া কিছু নয়।
এত কিছুর পরও ইরান জিপিএস নেভিগেশনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে প্রণালিতে চলাচলরত জাহাজগুলোর গতিপথে গোলমাল করেছে। একাধিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ধরনের জিপিএস ব্যাঘাতের কারণে দুইটি ট্যাংকার একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে আগুন ধরে যায়। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, এই জিপিএস সংকেত বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছিল ইরানের বান্দার আব্বাস বন্দরের কাছ থেকে, যা প্রণালির ঠিক উত্তরে অবস্থিত।
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরান লড়াইয়ের অংশ হিসেবে এই পথ বেছে নিবে না কারণ এতে আরব দেশগুলো সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং তেহরান আরও বেশি আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়বে।
সাইবার হামলা
ডেটা ধ্বংস করা, ফিশিং (ভুয়া ইমেইল ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য চুরি) এবং তথ্য প্রচার ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধমূলক অপারেশনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বহুবার সাইবার হামলা চালিয়েছে ইরান ও দেশটির আঞ্চলিক প্রক্সিরা। তারা এই দায় স্বীকারও করেছে।
এ ধরনের সাইবার হুমকি বেসামরিক ও সামরিক— দুই খাতের জন্যই বিপজ্জনক। যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলার জন্য দায়ী হ্যাকারদের সন্ধানে তথ্য আহ্বান করেছে। CyberAv3ngers নামের একটি গ্রুপ সম্পর্কে তথ্য দিলে ১ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রুপটির সঙ্গে ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জড়িত বলে মনে করা হয়।
তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বর্তমান সংকটে ইরান এই অস্ত্রটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, ‘ইরানি সাইবার শক্তি এখন শুধু খেলনার মতো। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এটি বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা কম।’

ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলার আগে বেশ সময় নিয়েই ‘ওয়ার গেম’ অনুশীলন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান এবং সৌদি আরবে অবস্থানরত ৪০ হাজার মার্কিন সেনাকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন হামলার পর এবার সবার চোখ ইরানের দিকে। এই হামলার পাল্টা আঘাত হিসেবে কী করতে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটি। ইসরায়েলি হামলায় শীর্ষ নেতাদের হারানো এবং নতুন করে দায়িত্ব সমর্পণ করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খামেনি এবার মার্কিন আঘাতের পাল্টা জবাব কীভাবে দেবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।
মার্কিন হামলার জবাবে ইরানের মোক্ষম কিছু অস্ত্র রয়েছে, যা দেশটি এর আগেও ব্যবহার করেছে তবে যুক্তরাষ্ট্রের আঘাতের জবাবে সেগুলো গ্রহণযোগ্য কি না সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যেভাবে ইরান মার্কিন হামলার জবাব দিতে পারে—
মিসাইল ব্যবহার
ইরানের মোক্ষম অস্ত্র ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের হামলার জবাবে যেভাবে শত শত মিসাইল ছুড়েছিল, সেই পদ্ধতি এবারও কাজে লাগাবে দেশটি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে গোপন সূত্রের উদ্ধৃতিতে জানানো হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি শনাক্ত করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
মধ্যপ্রাচ্য ও আশপাশের অঞ্চলে অন্তত ২০টি ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। এই ঘাঁটিগুলোর বেশির ভাগই ইরানের ‘সিজিল-২’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের মধ্যেই পড়ে।
ইরান শুরুতে ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর তেহরানের নজর পড়তে পারে আরব দেশগুলোতে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর দিকে।
তবে এই চেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কেন না অতীত বলছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলার চেষ্টায় ব্যর্থতার সম্ভাবনা বেশি। যেমনটা দেখা গিয়েছিল, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে থাকা দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়। ইরানের সাবেক শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালানো হয়েছিল। ইরানের এই হামলায় কোনো মার্কিন সেনা প্রাণ হারাননি। তবে বিস্ফোরণের আঘাতে ১১০ জন সেনা মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছিলেন। অনেকের ধারণা, এই হামলার ক্ষয়ক্ষতি এত বেশি ছিল যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা জবাবে কিছু করা থেকে বিরত ছিলেন।
এছাড়াও ইরানের পাল্টা জবাবের আকর্ষণীয় লক্ষ্য হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা মার্কিন বিমানঘাঁটি বহনকারী জাহাজগুলো। বর্তমানে দুটি বিশাল যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ (এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার) সেখানে রয়েছে। আরেকটি পথে আছে।
ইরানের সক্ষমতা
বিশ্বের অন্যতম উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধ কতটা কঠিন হতে পারে সেটা ইসরায়েলে ইরানের হামলা থেকে দেখা গেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বায়ুমণ্ডলের দিকে উঠে সুপারসনিক গতিতে মাটির দিকে ধেয়ে আসে, যা থামানো অত্যন্ত কঠিন।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কাছে অন্তত দুটি কার্যকর ও পরীক্ষিত ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে—প্যাট্রিয়ট এবং টার্মিনাল হাই অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি)। গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সরিয়ে আনছে। এর পেছনে রয়েছে ইসরায়েল ও ইরান এবং তাদের মিত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা।
ইরাকের মার্কিন ঘাঁটি এরবিল ও আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটিতে ইতিমধ্যে প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি মোতায়েন রয়েছে। এগুলো আগেও জঙ্গিদের হামলা প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। সম্প্রতি, মার্কিন সামরিক কমান্ডাররা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তুলে এনে বাহরাইনের আইসা ও আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরান যেভাবে ইসরায়েলে একসঙ্গে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল তাতে যে কোনো দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হতে পারে। তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী এখন এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে আছে। তারা ধারণা করছে, ইসরায়েল ইরানের একসঙ্গে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। ইরানের চালানো সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্রের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। ইসরায়েল গত কয়েক দিনে ইরানের সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন অংশে হামলা চালিয়ে এই ক্ষতি করেছে।
তবে এটা সত্যি, সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। আগে যেখানে ইসরায়েলের দিকে একসঙ্গে ১০০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হতো, এখন সেখানে মাত্র কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে একবারে।
এ বিষয়ে ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ফাবিয়ান হফম্যান বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বেলায় ইরান এবার ভেবেচিন্তে কাজ করার অবস্থানে চলে এসেছে। তাদের পক্ষে এখন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোর সম্ভাবনা কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে যদি ইরান মার্কিন অবকাঠামোতে হামলা চালায়, তবে এর পরিণতি বেশ গুরুতর হবে। তখন যুক্তরাষ্ট্র আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়বে, যা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।’
ইরানের মিত্রদের ভূমিকা
ইরানের আঞ্চলিক প্রক্সি বা মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেই বরাবরই তাদের প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হতো। হিজবুল্লাহ ও হামাস মূলত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে ব্যস্ত রেখে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর সরাসরি হামলার সুযোগ যেন না পায়, সে ব্যবস্থাই করত। অন্যদিকে ইয়েমেনভিত্তিক হুতি বিদ্রোহীরা পশ্চিমা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাত।
ইরাকেও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ড্রোন হামলা চালিয়ে মার্কিন ঘাঁটিতে প্রাণঘাতী হামলা করেছিল। ইরাকে ইরানপন্থী গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহ হয়তো তাদের আগের হুমকি বাস্তবায়ন করতে পারে, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো, গত এক বছরে ইসরায়েল হামাস ও হিজবুল্লাহসহ এসব প্রক্সি গোষ্ঠীর বড় অংশ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সিলভারাডো পলিসি অ্যাক্সেলারেটরের চেয়ারম্যান দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, এখন ইসরায়েলের ওপর চালানো প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাই সরাসরি ইরান থেকে আসছে, যেটা নিয়ে ভাবা জরুরি।
হরমুজ প্রণালি
আরব উপদ্বীপ ও পারস্য উপসাগরের পশ্চিম প্রান্তের মাঝামাঝি অবস্থিত হরমুজ প্রণালি— যা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তেহরানের অন্যতম শক্তিশালী কৌশলগত হাতিয়ার। এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ পেট্রোলিয়াম পাড়ি দেয়। ইরান চাইলে মাইন বসিয়ে, মোবাইল ক্ষেপণাস্ত্র লাঞ্চার বসিয়ে ও সামুদ্রিক ড্রোন ব্যবহার করে তবে ১৯৮০-এর দশকে ‘ট্যাংকার যুদ্ধের’ সময় ইরান একই কৌশল নিয়েছিল, যদিও সফল হয়নি। ব্রিটিশ ও পরে মার্কিন নৌবাহিনী বাণিজ্যিক জাহাজকে নিরাপদে পৌঁছে দেয়।
প্রণালি বন্ধের আশঙ্কা থেকেই মার্কিন যুদ্ধ বিমান বহনকারী জাহাজ ইউএসএস নিমিটজ হরমুজ প্রণালিতে আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে। এই আশঙ্কায় মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, কারণ এটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোকে পারস্য উপসাগরেই আটকে ফেলবে। সাবেক রয়্যাল নেভি কর্মকর্তা টম শার্প বলেন, ‘মাইন অপসারণ মার্কিন নৌবাহিনীর দুর্বলতা।’
অবশ্য হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য হতে পারে। এর আগে লোহিত সাগরে পশ্চিমা জাহাজে হুতিরা হামলা চালালে ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যয় করে হামলা চালিয়েছেন।
তেলক্ষেত্রে হামলা
ইরান যদি মনে করে তারা এক অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি অথবা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ ধ্বংস অনিবার্য— তাহলে তারা বিশ্লেষকদের ভাষায় ‘শেষ বড় চাল’ চালাতে পারে, যেটি হলো উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা।
ইরান এর একটি নমুনা দেখিয়েছে ২০১৯ সালে। সে সময় সৌদি আরবের আবকায়েক ও খুরাইস তেল স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায় স্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ইরানকে দায়ী করে। এই হামলায় সৌদি আরবের অর্ধেক তেল উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়।
আবকায়েক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে সম্ভাব্য হামলা
আবকায়েক প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত করে—যা সৌদি আরবের মোট উৎপাদন সক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। ইরান যদি তাদের হুমকি বাস্তবায়নে যায়, তবে এই স্থাপনাটি প্রধান লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত তেল ও এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল এবং ওই এলাকার জলসীমা দিয়ে যাওয়া তেলবাহী ট্যাংকার হুমকির মুখে পড়তে পারে।
২০১৯ সালের মে মাসে ফুজাইরাহ উপকূলে লিম্পেট মাইন বিস্ফোরণে তিনটি ট্যাংকার ও একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই হামলার দায় কেউ স্বীকার না করলেও, পশ্চিমা কর্মকর্তারা সন্দেহ করেন ইরানি ‘ফ্রগম্যান’ (জলসেনারা) এটির পেছনে জড়িত ছিল।
তেল, হরমুজ প্রণালি ও ইরানের ‘শেষ অস্ত্র’
বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত সচেতন। আর হরমুজ প্রণালি দিয়েই বিশ্বে ব্যবহৃত মোট পেট্রোলিয়ামের এক-পঞ্চমাংশ আসে। এই জলপথ কোনো কারণে বন্ধ হলে জাহাজ চলাচল পুনরুদ্ধারে সামরিক হামলার অনুমোদন দেবেন ট্রাম্প।
এ ছাড়া মিত্র দেশ চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে ইরানের এই সিদ্ধান্ত। ইরানের থেকে সবচেয়ে বেশি তেল নিয়ে থাকে চীন আর এই হরমুজ প্রণালি ব্যবহার করেই দেশটিতে তেল পৌঁছায়। এ অবস্থায় প্রণালিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তোলা ছাড়া কিছু নয়।
এত কিছুর পরও ইরান জিপিএস নেভিগেশনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে প্রণালিতে চলাচলরত জাহাজগুলোর গতিপথে গোলমাল করেছে। একাধিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ধরনের জিপিএস ব্যাঘাতের কারণে দুইটি ট্যাংকার একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে আগুন ধরে যায়। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, এই জিপিএস সংকেত বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছিল ইরানের বান্দার আব্বাস বন্দরের কাছ থেকে, যা প্রণালির ঠিক উত্তরে অবস্থিত।
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরান লড়াইয়ের অংশ হিসেবে এই পথ বেছে নিবে না কারণ এতে আরব দেশগুলো সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং তেহরান আরও বেশি আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়বে।
সাইবার হামলা
ডেটা ধ্বংস করা, ফিশিং (ভুয়া ইমেইল ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য চুরি) এবং তথ্য প্রচার ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধমূলক অপারেশনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বহুবার সাইবার হামলা চালিয়েছে ইরান ও দেশটির আঞ্চলিক প্রক্সিরা। তারা এই দায় স্বীকারও করেছে।
এ ধরনের সাইবার হুমকি বেসামরিক ও সামরিক— দুই খাতের জন্যই বিপজ্জনক। যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলার জন্য দায়ী হ্যাকারদের সন্ধানে তথ্য আহ্বান করেছে। CyberAv3ngers নামের একটি গ্রুপ সম্পর্কে তথ্য দিলে ১ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রুপটির সঙ্গে ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জড়িত বলে মনে করা হয়।
তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বর্তমান সংকটে ইরান এই অস্ত্রটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, ‘ইরানি সাইবার শক্তি এখন শুধু খেলনার মতো। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এটি বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা কম।’

মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৫২ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম দেশটিতে তিন ধাপে বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটার উপস্থিতি কম।
১ ঘণ্টা আগে
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই নারী দুই ঘণ্টা গাড়িটির ভেতরে আটকে ছিলেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত তাঁকে ধর্ষণ করেন। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা থামেননি, উল্টো তাঁকে হুমকি দেন। এরপর এস জি এম নগরের রাজা চকের কাছে ওই নারীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে তাঁর মুখে গুরুতর আঘাত লাগে এবং প্রচুর
২ ঘণ্টা আগে
হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে হরহামেশাই ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তেমন হওয়াটা অসম্ভব মনে হলেও এমন সিনেমাটিক স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে জার্মানির এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।
৫ ঘণ্টা আগে
গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে...
৬ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৫২ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম দেশটিতে তিন ধাপে বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটার উপস্থিতি কম।
জান্তা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে জানান, ১০২টি টাউনশিপের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রথম ধাপে ভোট দিয়েছেন। তিনি এই উপস্থিতিকে ‘গর্বের বিষয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে জান্তা সরকার। গত রোববার (২৮ ডিসেম্বর) প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ২০১৫ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে মিয়ানমারে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এবার তা ৫২ শতাংশে নেমে আসায় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতিসংঘ, পশ্চিমের দেশগুলো এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিরোধী দলগুলোকে অংশ নিতে না দেওয়া এবং নির্বাচনের সমালোচনা করাকে বেআইনি ঘোষণা করায় আন্তর্জাতিক মহলে এই ভোট কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
তবে জান্তা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেন, ‘অনেক উন্নত গণতান্ত্রিক দেশেও ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের বেশি হয় না। সেই তুলনায় আমাদের এই হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।’
নির্বাচনের গতিবিধি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের নেতৃত্বাধীন ‘ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির’ (ইউএসডিপি) হাতেই এবার ক্ষমতা যাবে। কারণ, জনপ্রিয় বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
পরবর্তী রাউন্ডের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১১ জানুয়ারি এবং ২৫ জানুয়ারি। মোট ৩৩০টি শহরের মধ্যে ২৬৫টিতে ভোট হবে। যদিও এর অনেক অঞ্চলেই জান্তা সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।
এদিকে ২০২০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ী এনএলডি নেত্রী অং সান সু চি এখনো বন্দী অবস্থায় আছেন। তখন থেকেই মিয়ানমারের জান্তা সরকারের অধীনে ব্যাপক গৃহযুদ্ধ চলছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দখল করে নিয়েছে।
এই অস্থিতিশীলতার মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করে আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা করছে সামরিক সরকার। তবে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস জানিয়েছে, জান্তা সরকারের নির্বাচনী আইনে ভোটার উপস্থিতির কোনো ন্যূনতম সীমা নেই। এটি তাদের ভোটার উপস্থিতির যেকোনো হারকেই বৈধতা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৫২ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম দেশটিতে তিন ধাপে বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটার উপস্থিতি কম।
জান্তা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে জানান, ১০২টি টাউনশিপের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রথম ধাপে ভোট দিয়েছেন। তিনি এই উপস্থিতিকে ‘গর্বের বিষয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে জান্তা সরকার। গত রোববার (২৮ ডিসেম্বর) প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ২০১৫ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে মিয়ানমারে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এবার তা ৫২ শতাংশে নেমে আসায় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতিসংঘ, পশ্চিমের দেশগুলো এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিরোধী দলগুলোকে অংশ নিতে না দেওয়া এবং নির্বাচনের সমালোচনা করাকে বেআইনি ঘোষণা করায় আন্তর্জাতিক মহলে এই ভোট কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
তবে জান্তা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেন, ‘অনেক উন্নত গণতান্ত্রিক দেশেও ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের বেশি হয় না। সেই তুলনায় আমাদের এই হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।’
নির্বাচনের গতিবিধি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের নেতৃত্বাধীন ‘ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির’ (ইউএসডিপি) হাতেই এবার ক্ষমতা যাবে। কারণ, জনপ্রিয় বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
পরবর্তী রাউন্ডের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১১ জানুয়ারি এবং ২৫ জানুয়ারি। মোট ৩৩০টি শহরের মধ্যে ২৬৫টিতে ভোট হবে। যদিও এর অনেক অঞ্চলেই জান্তা সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।
এদিকে ২০২০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ী এনএলডি নেত্রী অং সান সু চি এখনো বন্দী অবস্থায় আছেন। তখন থেকেই মিয়ানমারের জান্তা সরকারের অধীনে ব্যাপক গৃহযুদ্ধ চলছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দখল করে নিয়েছে।
এই অস্থিতিশীলতার মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করে আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা করছে সামরিক সরকার। তবে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস জানিয়েছে, জান্তা সরকারের নির্বাচনী আইনে ভোটার উপস্থিতির কোনো ন্যূনতম সীমা নেই। এটি তাদের ভোটার উপস্থিতির যেকোনো হারকেই বৈধতা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

মার্কিন হামলার পর এবার সবার চোখ ইরানের দিকে। এই হামলার পাল্টা আঘাত হিসেবে কী করতে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটি। ইসরায়েলি হামলায় শীর্ষ নেতাদের হারানো এবং নতুন করে দায়িত্ব সমর্পণ করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খামেনি এবার মার্কিন আঘাতের পাল্টা জবাব কীভাবে দেবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।
২২ জুন ২০২৫
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই নারী দুই ঘণ্টা গাড়িটির ভেতরে আটকে ছিলেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত তাঁকে ধর্ষণ করেন। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা থামেননি, উল্টো তাঁকে হুমকি দেন। এরপর এস জি এম নগরের রাজা চকের কাছে ওই নারীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে তাঁর মুখে গুরুতর আঘাত লাগে এবং প্রচুর
২ ঘণ্টা আগে
হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে হরহামেশাই ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তেমন হওয়াটা অসম্ভব মনে হলেও এমন সিনেমাটিক স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে জার্মানির এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।
৫ ঘণ্টা আগে
গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে...
৬ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ শহরে চলন্ত গাড়িতে ২৮ বছর বয়সী এক নারীকে তুলে নিয়ে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবাহিত ওই নারী রাতে বাড়ি যাওয়ার জন্য যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় একটি গাড়ি থামে এবং দুজন যুবক তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলেন। কিন্তু গাড়িটি তাঁর গন্তব্যের বদলে গুড়গাঁও সড়কের দিকে যেতে শুরু করে।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই নারী দুই ঘণ্টা গাড়িটির ভেতরে আটকে ছিলেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত তাঁকে ধর্ষণ করেন। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা থামেননি, উল্টো তাঁকে হুমকি দেন। এরপর এস জি এম নগরের রাজা চকের কাছে ওই নারীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে তাঁর মুখে গুরুতর আঘাত লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।
এ সময় ভুক্তভোগী নারী বারবার তাঁর বোনকে ফোন করছিলেন। পরে তাঁর বোন যখন ফিরতি ফোন করেন, তখন তিনি পুরো বিষয়টি জানতে পারেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁর মুখে ১০ থেকে ১২টি সেলাই দিতে হয়েছে।
বর্তমানে ওই নারীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও ট্রমায় ভুগছেন। এ জন্য এখন পর্যন্ত তাঁর জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ভুক্তভোগীর বোন অভিযোগে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর বোন তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হওয়ায় তিনি বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছেন। তিন ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসবেন বলেও বোনকে জানিয়েছিলেন তিনি।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই নারী বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জননী। পারিবারিক কলহের কারণে তিনি স্বামী থেকে আলাদা থাকেন।
পুলিশ এরই মধ্যে অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার ও অপরাধে ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করেছে।

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ শহরে চলন্ত গাড়িতে ২৮ বছর বয়সী এক নারীকে তুলে নিয়ে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবাহিত ওই নারী রাতে বাড়ি যাওয়ার জন্য যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় একটি গাড়ি থামে এবং দুজন যুবক তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলেন। কিন্তু গাড়িটি তাঁর গন্তব্যের বদলে গুড়গাঁও সড়কের দিকে যেতে শুরু করে।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই নারী দুই ঘণ্টা গাড়িটির ভেতরে আটকে ছিলেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত তাঁকে ধর্ষণ করেন। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা থামেননি, উল্টো তাঁকে হুমকি দেন। এরপর এস জি এম নগরের রাজা চকের কাছে ওই নারীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে তাঁর মুখে গুরুতর আঘাত লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।
এ সময় ভুক্তভোগী নারী বারবার তাঁর বোনকে ফোন করছিলেন। পরে তাঁর বোন যখন ফিরতি ফোন করেন, তখন তিনি পুরো বিষয়টি জানতে পারেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁর মুখে ১০ থেকে ১২টি সেলাই দিতে হয়েছে।
বর্তমানে ওই নারীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও ট্রমায় ভুগছেন। এ জন্য এখন পর্যন্ত তাঁর জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ভুক্তভোগীর বোন অভিযোগে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর বোন তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হওয়ায় তিনি বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছেন। তিন ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসবেন বলেও বোনকে জানিয়েছিলেন তিনি।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই নারী বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জননী। পারিবারিক কলহের কারণে তিনি স্বামী থেকে আলাদা থাকেন।
পুলিশ এরই মধ্যে অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার ও অপরাধে ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করেছে।

মার্কিন হামলার পর এবার সবার চোখ ইরানের দিকে। এই হামলার পাল্টা আঘাত হিসেবে কী করতে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটি। ইসরায়েলি হামলায় শীর্ষ নেতাদের হারানো এবং নতুন করে দায়িত্ব সমর্পণ করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খামেনি এবার মার্কিন আঘাতের পাল্টা জবাব কীভাবে দেবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।
২২ জুন ২০২৫
মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৫২ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম দেশটিতে তিন ধাপে বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটার উপস্থিতি কম।
১ ঘণ্টা আগে
হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে হরহামেশাই ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তেমন হওয়াটা অসম্ভব মনে হলেও এমন সিনেমাটিক স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে জার্মানির এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।
৫ ঘণ্টা আগে
গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে...
৬ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে হরহামেশাই ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তেমন হওয়াটা অসম্ভব মনে হলেও এমন সিনেমাটিক স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে জার্মানির এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।
পশ্চিম জার্মানির গেলসেনকির্শেন শহরের স্পারকাসে সেভিংস ব্যাংকে এ ঘটনা ঘটেছে। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বড় ড্রিল ব্যবহার করে আনুমানিক ৩ কোটি ইউরো (৪৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা) নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই ঘটনাকে ডাকাতির কাহিনিনির্ভর হলিউডের সিনেমা ‘ওশানস ইলেভেন’-এর সঙ্গে তুলনা করে এএফপি বার্তা সংস্থাকে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটি অত্যন্ত পেশাদারভাবে করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই ডাকাতির সময় অর্থ, স্বর্ণ ও গহনা রাখা ৩ হাজারেরও বেশি সেফ ডিপোজিট বক্স ভেঙে ফেলা হয়েছে।
গেলসেনকির্শেন পুলিশ জানায়, গত সোমবার ভোররাতে ফায়ার অ্যালার্ম সক্রিয় হলে তারা ঘটনার বিষয়ে জানতে পারে। তখন ক্রিসমাসের ছুটি চলছিল। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বুয়ের জেলায় নিয়েনহোফস্ট্রাসে অবস্থিত ওই ভবনে ডাকাতি চালায়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তারা পাশের একটি পার্কিং গ্যারেজ ব্যবহার করে ব্যাংকে ঢোকে এবং সেখান দিয়েই পালিয়ে যায়।
তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিবিসি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শনিবার রাত থেকে গত রোববার ভোর পর্যন্ত ওই ভবনটির গ্যারেজের সিঁড়িঘরে কয়েকজন পুরুষকে বড় বড় ব্যাগ বহন করতে দেখা গেছে।
পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজে সোমবার ভোরে ডে-লা-শেভালারি-স্ট্রাসে অবস্থিত গ্যারেজ থেকে একটি কালো অডি আরএস ৬ গাড়িকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। সোমবার ভোররাতে একটি ফায়ার-অ্যালার্ম বাজলে ভূগর্ভস্থ ভল্ট রুমে ঢোকার জন্য করা গর্তটি ধরা পড়ে। এরপর পুলিশ ও দমকল বাহিনী ভবনটিতে তল্লাশি চালায়।
চুরির ঘটনায় ব্যাংকের শাখাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রাহকদের প্রায় ৯৫ শতাংশ সেফ ডিপোজিট বক্স খুলে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।

হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে হরহামেশাই ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তেমন হওয়াটা অসম্ভব মনে হলেও এমন সিনেমাটিক স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে জার্মানির এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।
পশ্চিম জার্মানির গেলসেনকির্শেন শহরের স্পারকাসে সেভিংস ব্যাংকে এ ঘটনা ঘটেছে। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বড় ড্রিল ব্যবহার করে আনুমানিক ৩ কোটি ইউরো (৪৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা) নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই ঘটনাকে ডাকাতির কাহিনিনির্ভর হলিউডের সিনেমা ‘ওশানস ইলেভেন’-এর সঙ্গে তুলনা করে এএফপি বার্তা সংস্থাকে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটি অত্যন্ত পেশাদারভাবে করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই ডাকাতির সময় অর্থ, স্বর্ণ ও গহনা রাখা ৩ হাজারেরও বেশি সেফ ডিপোজিট বক্স ভেঙে ফেলা হয়েছে।
গেলসেনকির্শেন পুলিশ জানায়, গত সোমবার ভোররাতে ফায়ার অ্যালার্ম সক্রিয় হলে তারা ঘটনার বিষয়ে জানতে পারে। তখন ক্রিসমাসের ছুটি চলছিল। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বুয়ের জেলায় নিয়েনহোফস্ট্রাসে অবস্থিত ওই ভবনে ডাকাতি চালায়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তারা পাশের একটি পার্কিং গ্যারেজ ব্যবহার করে ব্যাংকে ঢোকে এবং সেখান দিয়েই পালিয়ে যায়।
তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিবিসি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শনিবার রাত থেকে গত রোববার ভোর পর্যন্ত ওই ভবনটির গ্যারেজের সিঁড়িঘরে কয়েকজন পুরুষকে বড় বড় ব্যাগ বহন করতে দেখা গেছে।
পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজে সোমবার ভোরে ডে-লা-শেভালারি-স্ট্রাসে অবস্থিত গ্যারেজ থেকে একটি কালো অডি আরএস ৬ গাড়িকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। সোমবার ভোররাতে একটি ফায়ার-অ্যালার্ম বাজলে ভূগর্ভস্থ ভল্ট রুমে ঢোকার জন্য করা গর্তটি ধরা পড়ে। এরপর পুলিশ ও দমকল বাহিনী ভবনটিতে তল্লাশি চালায়।
চুরির ঘটনায় ব্যাংকের শাখাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রাহকদের প্রায় ৯৫ শতাংশ সেফ ডিপোজিট বক্স খুলে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।

মার্কিন হামলার পর এবার সবার চোখ ইরানের দিকে। এই হামলার পাল্টা আঘাত হিসেবে কী করতে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটি। ইসরায়েলি হামলায় শীর্ষ নেতাদের হারানো এবং নতুন করে দায়িত্ব সমর্পণ করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খামেনি এবার মার্কিন আঘাতের পাল্টা জবাব কীভাবে দেবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।
২২ জুন ২০২৫
মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৫২ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম দেশটিতে তিন ধাপে বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটার উপস্থিতি কম।
১ ঘণ্টা আগে
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই নারী দুই ঘণ্টা গাড়িটির ভেতরে আটকে ছিলেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত তাঁকে ধর্ষণ করেন। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা থামেননি, উল্টো তাঁকে হুমকি দেন। এরপর এস জি এম নগরের রাজা চকের কাছে ওই নারীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে তাঁর মুখে গুরুতর আঘাত লাগে এবং প্রচুর
২ ঘণ্টা আগে
গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে...
৬ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যাকশনএইড, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মতো পরিচিত আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (আইএনজিও) গুলোর লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করা হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশ। তারা বলছে, নতুন নিয়মগুলো ‘অতিরিক্তভাবে কঠোর’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’।
এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করে দিলে স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনো ‘বিপর্যয়কর’ উল্লেখ করে তাঁরা ইসরায়েল সরকারকে আহ্বান জানান, যাতে এনজিওগুলো টেকসই এবং আগের মতো কাজ করতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই পদক্ষেপগুলোর ফলে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহে কোনো প্রভাব পড়বে না। মন্ত্রণালয়টি জানায়, জাতিসংঘের সংস্থা, দ্বিপক্ষীয় অংশীদার এবং মানবিক সংগঠনসহ ‘অনুমোদিত ও যাচাইকৃত চ্যানেল’ দিয়ে সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
তাদের দাবি, সহায়তা সংস্থাগুলোর লাইসেন্স বাতিলের প্রধান কারণ হলো, তাদের কর্মীদের বিষয়ে সম্পূর্ণ ও যাচাইযোগ্য তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো যা মানবিক কাঠামোয় ‘সন্ত্রাসী অপারেটিভদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইসরায়েল।
এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা বলেন, অক্টোবর মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় পুষ্টি ও খাদ্য সরবরাহে কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে পরের মাসেও প্রায় ১ লাখ মানুষ ‘চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মুখোমুখি ছিল।
তবে গাজার সীমান্ত ক্রসিংগুলো নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাত দাবি করেছে, যেসব সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করা হবে, তারা বর্তমান যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কোনো সহায়তা আনেনি। সংস্থাটি আরও জানায়, অতীতেও তাদের সম্মিলিত অবদান মোট সহায়তার মাত্র প্রায় ১ শতাংশ ছিল।
ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশেরও কম নতুন নিয়ন্ত্রক কাঠামো লঙ্ঘন করেছে।
ওই নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে লাইসেন্স বাতিলের একাধিক ভিত্তি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
১. ইসরায়েলকে একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার না করা
২. হলোকাস্ট বা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলা অস্বীকার করা
৩. শত্রু রাষ্ট্র বা সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে সমর্থন করা
৪. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অবৈধতা আরোপের প্রচারণা’ চালানো
৫. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান জানানো বা তাতে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করা
৬. বিদেশি বা আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাকে সমর্থন করা
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের সংস্থা এবং ২০০টিরও বেশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম আগেই সতর্ক করে বলেছিল, নতুন নিবন্ধন নীতিমালা গাজা ও পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রমকে মৌলিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
তাদের ভাষায়, ‘এই ব্যবস্থা অস্পষ্ট, খামখেয়ালি ও অত্যন্ত রাজনৈতিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভরশীল এবং এমন সব শর্ত আরোপ করছে, যা মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন না করে বা মানবিক নীতির মূল ভিত্তি ক্ষুণ্ন না করে পূরণ করা সম্ভব নয়।’
হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিমের মতে, বর্তমানে গাজায় অধিকাংশ ফিল্ড হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা বা সহায়তা, জরুরি আশ্রয় কার্যক্রম, পানি ও স্যানিটেশন সেবা, তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুষ্টি স্থিতিশীলকরণ কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইন অপসারণ কার্যক্রম আইএনজিওগুলোর মাধ্যমেই পরিচালিত বা সমর্থিত হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক ও ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি বলেন, ‘বার্তাটি স্পষ্ট: মানবিক সহায়তা স্বাগত কিন্তু সন্ত্রাসবাদের জন্য মানবিক কাঠামোর অপব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।’
কার্যক্রম স্থগিত হতে যাচ্ছে এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে কেয়ার, মেডিকো ইন্টারন্যাশনাল এবং মেডিক্যাল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস।

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যাকশনএইড, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মতো পরিচিত আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (আইএনজিও) গুলোর লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করা হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশ। তারা বলছে, নতুন নিয়মগুলো ‘অতিরিক্তভাবে কঠোর’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’।
এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করে দিলে স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনো ‘বিপর্যয়কর’ উল্লেখ করে তাঁরা ইসরায়েল সরকারকে আহ্বান জানান, যাতে এনজিওগুলো টেকসই এবং আগের মতো কাজ করতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই পদক্ষেপগুলোর ফলে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহে কোনো প্রভাব পড়বে না। মন্ত্রণালয়টি জানায়, জাতিসংঘের সংস্থা, দ্বিপক্ষীয় অংশীদার এবং মানবিক সংগঠনসহ ‘অনুমোদিত ও যাচাইকৃত চ্যানেল’ দিয়ে সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
তাদের দাবি, সহায়তা সংস্থাগুলোর লাইসেন্স বাতিলের প্রধান কারণ হলো, তাদের কর্মীদের বিষয়ে সম্পূর্ণ ও যাচাইযোগ্য তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো যা মানবিক কাঠামোয় ‘সন্ত্রাসী অপারেটিভদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইসরায়েল।
এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা বলেন, অক্টোবর মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় পুষ্টি ও খাদ্য সরবরাহে কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে পরের মাসেও প্রায় ১ লাখ মানুষ ‘চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মুখোমুখি ছিল।
তবে গাজার সীমান্ত ক্রসিংগুলো নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাত দাবি করেছে, যেসব সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করা হবে, তারা বর্তমান যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কোনো সহায়তা আনেনি। সংস্থাটি আরও জানায়, অতীতেও তাদের সম্মিলিত অবদান মোট সহায়তার মাত্র প্রায় ১ শতাংশ ছিল।
ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশেরও কম নতুন নিয়ন্ত্রক কাঠামো লঙ্ঘন করেছে।
ওই নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে লাইসেন্স বাতিলের একাধিক ভিত্তি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
১. ইসরায়েলকে একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার না করা
২. হলোকাস্ট বা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলা অস্বীকার করা
৩. শত্রু রাষ্ট্র বা সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে সমর্থন করা
৪. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অবৈধতা আরোপের প্রচারণা’ চালানো
৫. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান জানানো বা তাতে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করা
৬. বিদেশি বা আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাকে সমর্থন করা
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের সংস্থা এবং ২০০টিরও বেশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম আগেই সতর্ক করে বলেছিল, নতুন নিবন্ধন নীতিমালা গাজা ও পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রমকে মৌলিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
তাদের ভাষায়, ‘এই ব্যবস্থা অস্পষ্ট, খামখেয়ালি ও অত্যন্ত রাজনৈতিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভরশীল এবং এমন সব শর্ত আরোপ করছে, যা মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন না করে বা মানবিক নীতির মূল ভিত্তি ক্ষুণ্ন না করে পূরণ করা সম্ভব নয়।’
হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিমের মতে, বর্তমানে গাজায় অধিকাংশ ফিল্ড হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা বা সহায়তা, জরুরি আশ্রয় কার্যক্রম, পানি ও স্যানিটেশন সেবা, তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুষ্টি স্থিতিশীলকরণ কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইন অপসারণ কার্যক্রম আইএনজিওগুলোর মাধ্যমেই পরিচালিত বা সমর্থিত হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক ও ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি বলেন, ‘বার্তাটি স্পষ্ট: মানবিক সহায়তা স্বাগত কিন্তু সন্ত্রাসবাদের জন্য মানবিক কাঠামোর অপব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।’
কার্যক্রম স্থগিত হতে যাচ্ছে এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে কেয়ার, মেডিকো ইন্টারন্যাশনাল এবং মেডিক্যাল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস।

মার্কিন হামলার পর এবার সবার চোখ ইরানের দিকে। এই হামলার পাল্টা আঘাত হিসেবে কী করতে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটি। ইসরায়েলি হামলায় শীর্ষ নেতাদের হারানো এবং নতুন করে দায়িত্ব সমর্পণ করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খামেনি এবার মার্কিন আঘাতের পাল্টা জবাব কীভাবে দেবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।
২২ জুন ২০২৫
মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৫২ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম দেশটিতে তিন ধাপে বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটার উপস্থিতি কম।
১ ঘণ্টা আগে
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই নারী দুই ঘণ্টা গাড়িটির ভেতরে আটকে ছিলেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত তাঁকে ধর্ষণ করেন। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা থামেননি, উল্টো তাঁকে হুমকি দেন। এরপর এস জি এম নগরের রাজা চকের কাছে ওই নারীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে তাঁর মুখে গুরুতর আঘাত লাগে এবং প্রচুর
২ ঘণ্টা আগে
হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে হরহামেশাই ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তেমন হওয়াটা অসম্ভব মনে হলেও এমন সিনেমাটিক স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে জার্মানির এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।
৫ ঘণ্টা আগে