Ajker Patrika

কয়েক শ কোটি পাখির মরণফাঁদ হবে সৌদি আরবের নিওম শহর

আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮: ২১
কয়েক শ কোটি পাখির মরণফাঁদ হবে সৌদি আরবের নিওম শহর

সৌদি আরবে ১০০ মাইল দীর্ঘ এবং প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফুট উঁচু দুটি সমান্তরাল ভবন নিয়ে গড়ে উঠছে নিওম শহর। কিন্তু এই শহরটি কোটি কোটি পরিযায়ী পাখির মরণফাঁদ হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। 

সৌদি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বাইরে কাচের আবরণে ঢাকা সুদীর্ঘ ভবন দুটি দেশটির উপকূলীয়, পার্বত্য, ও মরুভূমির বুক চিড়ে গড়ে উঠছে। ১ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে বানানো এই শহরটি তার বাসিন্দাদের এক অভূতপূর্ব জীবনের অভিজ্ঞতা দেবে এবং পারিপার্শ্বিক প্রকৃতিকেও রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

তবে সংরক্ষণবাদীরা বিশাল এই প্রকল্পের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এটি প্রতিবছর ইউরোপ এবং আফ্রিকার মধ্যে পাড়ি জমানো পাখিদের জন্য একটি মারাত্মক বাধা হয়ে দাঁড়াবে। 

স্যাটেলাইট চিত্রগুলোতে দেখা যায়, নিওম শহরের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। সৌদি আরব এটিকে ‘সভ্যতার বিপ্লব’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও গবেষকেরা এটিকে প্রাকৃতিক সংরক্ষণকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী পৃথিবীর শীর্ষ ১৫ প্রকল্পের একটি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। 

১০০ মাইল দীর্ঘ এবং প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফুট উঁচু দুটি সমান্তরাল ভবন নিয়ে গড়ে উঠছে নিওম শহরগত সোমবার প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণে শহরটি প্রতিবছর সৌদি আরবে অভিবাসী পাখিদের জন্য একটি বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে শহরটির বাইরের দিকে কাচের আবরণ, শহরের দিকনির্দেশনা এবং সবার ওপরে থাকা উইন্ড টারবাইনগুলো। 

এ বিষয়ে দ্য টাইমসকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণা পরিচালক প্রফেসর উইলিয়াম সাদারল্যান্ড জানান, শহরের বাইরের আবরণটি কাচের হওয়ায় পাখিরা বুঝতেই পারবে না তাদের সামনে একটি বাধা অপেক্ষা করছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি নিয়ে না ভাবলে পরিযায়ী পাখিদের অনেক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর শহরের মাথায় থাকা টারবাইনগুলো নিশ্চিতভাবেই পাখিদের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাবে। 

শহরের বাইরের আবরণটি হবে কাচেরটাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পথ ধরে চলাচলকারী পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে রয়েছে নাইটিঙ্গেল, হুইটিয়েটার, লার্কস, স্যান্ডগ্রাউস এবং ঘুঘু। এ ছাড়া মিসরীয় শকুন এবং সাকার ফ্যালকনের মতো দুটি বিপন্নপ্রায় পাখিও এই পথ ধরে চলাচল করে। 

গবেষকদের সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, শহরটি সম্পন্ন হওয়ার আগেই ইতিমধ্যে প্রায় ২১ লাখ পাখির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি শরতে এই পাখিগুলো ইউরোপ এবং আফ্রিকার মধ্যে ভ্রমণ করে। 

সমীক্ষায় আরও জানানো হয়—উঁচু ভবন বিশেষ করে কাচ ও আয়নাযুক্ত ভবনগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর ৯৮ কোটি ৮০ লাখ পাখি মারা যায়। 

পাখিদের সমস্যা সৃষ্টির বিষয়ে নিওম শহরের একজন মুখপাত্র টাইমসকে জানিয়েছেন, পশু ও পাখির অভিবাসনের ধরনগুলো বোঝার জন্য এবং কীভাবে তাদের ক্ষতি প্রশমিত করা যায়—সেই বিষয়ে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে তারা যৌথ গবেষণা পরিচালনা করছেন। এ ক্ষেত্রে শহরের মধ্য দিয়েই পশুপাখির চলাফেরার জন্য কিছু ক্রসিং পয়েন্ট রাখার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

ভারতে নিকাব বিতর্ক: কাজে যোগ দেননি সেই নারী চিকিৎসক

ভোট চুরির এমপি হতে চাই না: অ্যাটর্নি জেনারেল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: চিকিৎসায় শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ন্যায়বিচারের দুয়ার বন্ধ’, রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিতে বললেন ইমরান খান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১১
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান খান । ছবি: এফপি
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান খান । ছবি: এফপি

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ন্যায়বিচার পাওয়ার সব দুয়ারই যখন রুদ্ধ, তখন প্রতিবাদের রাজপথই দলের একমাত্র ভরসা। তাই তিনি কর্মী-সমর্থকদের রাজপথের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে, তোশাখানা-২ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়ার পর শনিবার ইসলামাবাদে খাইবার পাখতুনখাওয়া হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা এই বার্তা পৌঁছে দেন।

সাংবাদিকদের রাজা জানান, দলের আইনজীবীদের তথ্যমতে—সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, আসন্ন বিচারকাজের জন্য জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে আদালত কক্ষে এমনকি পরিবারের সদস্যদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং বিচারকেরা দূর থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে হাজিরা দেবেন।

তিনি বলেন, আদালতের বিদ্যমান আদেশে ইমরান খানের জন্য উন্মুক্ত ও সুষ্ঠু বিচারের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল, অথচ মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার তাঁর নির্ধারিত সাক্ষাৎগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়মিত সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে সরকারের যে দাবি, তাকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন রাজা।

রাজার ভাষ্যমতে, খান বলেছেন তিনি নিজের অবস্থান থেকে ‘এক চুলও’ নড়বেন না এবং প্রয়োজনে শাহাদাত বরণ করতে হলেও মানুষের মুক্তির জন্য তিনি প্রস্তুত। খানকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘বিচারের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, আদালতের শুনানি হচ্ছে না এবং ন্যায়বিচার এখন আর নাগালের মধ্যে নেই—তাই প্রতিবাদই একমাত্র পথ।’

তিনি আরও জানান, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা সব রাজবন্দী, বিশেষ করে নারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন—জনগণকে এখন তাদের অধিকার আদায়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। এদিন ইমরান খান তাঁর আইনজীবী সালমান সাফদারের সঙ্গে স্বল্প সময়ের জন্য সাক্ষাৎ করেছেন বলেও নিশ্চিত করেন রাজা। তাঁর অভিযোগ, রায় দেওয়া হয়েছে খানের অনুপস্থিতিতে এবং তাঁর আইনজীবী দলের কাউকে উপস্থিত থাকার সুযোগ না দিয়েই।

রাজা বলেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা রাজপথের আন্দোলনের প্রস্তুতির ডাক দিয়েছেন। স্ত্রী বুশরা বিবির কারাদণ্ড নিয়ে তিনি ভীষণ ব্যথিত; তাঁর দাবি, কেবল তাঁর স্ত্রী হওয়ার কারণেই বুশরা বিবিকে জেলে ভরা হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার তোশাখানা মামলায় দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রীকে দেওয়া সাজার তীব্র সমালোচনা করেছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং বেশ কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতা। এই রায়কে তাঁরা গভীর অবিচারের দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে দলটির পক্ষ থেকে এই রায়কে ‘ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। উল্লেখ করা হয়, রায় ঘোষণার সময় ইমরান খান নাকি আদিয়ালা জেলের ভেতরে স্থাপিত আদালতেই উপস্থিত ছিলেন।

পিটিআই জানিয়েছে, ইমরান খানের পরিবারের সদস্যদের আদালত কক্ষে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এই রুদ্ধদ্বার বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘অবাধ বা সুষ্ঠু কোনোটাই নয়’ বলে অভিহিত করে তারা অভিযোগ করে, এটি কার্যত ছিল ‘মিলিটারি ট্রায়াল’ বা সামরিক বিচার।

পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতা ওমর আইয়ুব এক্সে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানে আইনের শাসন বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই।’ বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টির প্রধান আখতার মঙ্গল প্রশ্ন তুলেছেন, তোশাখানা সংক্রান্ত বিষয় বা দেশকে বিভক্ত করার মতো কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের কেন একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়নি। তিনি বলেন, ‘যাঁরা দেশ ও সংবিধান ভেঙেছেন, তাঁদের গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছে।’ তিনি এই পরিস্থিতিকে ‘অবিচারের স্পষ্ট উদাহরণ’ বলে আখ্যা দেন।

তেহরিক তাহাফ্ফুজ আইন-ই-পাকিস্তানের নেতা আল্লামা নাসির আব্বাস বলেছেন, এই রায় জনগণের অধিকার ও সংসদ উভয়কেই খাটো করেছে। তাঁর অভিযোগ, বিরোধীদের মনোবল ভেঙে দিতেই সরকার এমন অপচেষ্টা চালাচ্ছে। একই দলের নেতা মোস্তফা নওয়াজ খোকার যুক্তি দেন, এই নিপীড়ন কেবল রাজনীতিবিদদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। উদাহরণ হিসেবে তিনি ইমান মাজারি, মতিউল্লাহ জান এবং বিচারপতি জাহাঙ্গীরির আইনি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন।

পিটিআইয়ের ফেরদৌস শামীম নকভি বলেন, এই রায় বিচারব্যবস্থার ত্রুটিগুলোকে উন্মোচিত করে দিয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দল হয়তো আদালত বর্জনের কথা ভাবতে পারে। তাঁর দাবি, কর্মীদের বিরুদ্ধে ৬৫ হাজার মামলা রয়েছে এবং ‘মিথ্যা রায়গুলো বিপজ্জনক ব্যবধান তৈরি করছে’।

অন্যদিকে, তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এই রায়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করার আগে আদালত যথেষ্ট প্রমাণ পর্যালোচনা করেছে। তাঁর দাবি, ওই দম্পতি দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন এবং রায়টি সুষ্ঠু হয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই তোশাখানা মামলায় খানের কারাদণ্ড কার্যকর হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

ভারতে নিকাব বিতর্ক: কাজে যোগ দেননি সেই নারী চিকিৎসক

ভোট চুরির এমপি হতে চাই না: অ্যাটর্নি জেনারেল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: চিকিৎসায় শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আল জাজিরার প্রতিবেদন /ফিলিস্তিনিদের প্রলোভনে ফেলে গাজা খালি করার মিশনে ইসরায়েলঘনিষ্ঠ ভুয়া সংস্থা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫২
কিছুদিন আগে মিথ্যা আশ্বাস দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র ছাড়াই একদল ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠায় এক ভুয়া সংস্থা। যার সঙ্গে আবার ইসরায়েলের যোগ আছে। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
কিছুদিন আগে মিথ্যা আশ্বাস দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র ছাড়াই একদল ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠায় এক ভুয়া সংস্থা। যার সঙ্গে আবার ইসরায়েলের যোগ আছে। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি নামসর্বস্ব বা ‘শেল’ কোম্পানি গাজার নিরুপায় ফিলিস্তিনিদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার কাজে সহায়তা করছে। মানবিক সহায়তার নামে বিপুল অর্থের বিনিময়ে দেশত্যাগে প্ররোচিত করার এই প্রক্রিয়াকে ভূখণ্ডটি থেকে পরিকল্পিতভাবে ‘জাতিগত নিধনের’ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক অনুসন্ধানে গত মাসে গাজা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫৩ জন যাত্রী নিয়ে যাওয়া রহস্যময় ফ্লাইটের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এতে দেখা যায়, ‘আল-মাজদ ইউরোপ’ নামের একটি অনিবন্ধিত ফ্রন্ট অর্গানাইজেশন এই কাজের নেপথ্যে রয়েছে। যারা ভুয়া মানবিক সহায়তার দাবি করে আসছিল।

গত ১৩ নভেম্বর এই ফিলিস্তিনিরা জোহানেসবার্গ ও প্রিটোরিয়ার ওআর তাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। তাদের পাসপোর্টে ইসরায়েলের কোনো ডিপারচার বা বহির্গমন সিল না থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্ত পুলিশ তাদের প্রবেশাধিকার দিতে অস্বীকার করে। ১২ ঘণ্টা উড়োজাহাজে আটকে থাকার পর অবশেষে তাদের নামার অনুমতি দেওয়া হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ‘মানবিক কারণে’ তাদের গ্রহণের কথা স্বীকার করলেও জানান, তাঁর সরকার বিষয়টি তদন্ত করবে। দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের সন্দেহ, এই লোকগুলোকে গাজা উপত্যকা থেকে পরিকল্পিতভাবে ‘বের করে দেওয়া’ হয়েছে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এর আগে প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, তাঁরা ফিলিস্তিনিদের গাজা ত্যাগের বিষয়টিকে ‘স্বেচ্ছা হিজরত’ হিসেবে সমর্থন করেন। তবে বাস্তবে এটি জোরপূর্বক উচ্ছেদ ছাড়া আর কিছুই নয়। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ফিলিস্তিনিদের গাজা ত্যাগে উৎসাহিত করতে একটি বিতর্কিত ব্যুরো গঠন করে, যার প্রধান করা হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপপরিচালক ইয়াকভ ব্লিটস্টাইনকে। সে সময় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ দাবি করেছিলেন, গাজার ৪০ শতাংশ বাসিন্দা ‘দেশত্যাগে আগ্রহী’।

এর ঠিক আগের মাসে আল-মাজদ ইউরোপ তাদের ওয়েবসাইট চালু করে। সেখানে বলা হয়, তারা মুসলিম দেশগুলোতে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এবং বিশেষ করে ‘গাজাবাসীদের গাজা থেকে বের হতে’ সাহায্য করছে। তারা গাজায় ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য ক্লিনিক এবং ফিলিস্তিনি চিকিৎসকদের বিদেশ ভ্রমণের ব্যবস্থা করার মিথ্যা দাবিও করে।

দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়া সেই ফ্লাইটের এক যাত্রী নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, অনলাইনে লিংক পেয়ে তিনি এই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সংস্থাটি শুধু গাজা থেকে বের হওয়ার পথই নয়, নিরাপত্তা ও চিকিৎসার আশ্বাসও দিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘শুরুতে তারা বলেছিল এটি ফ্রি। এরপর জনপ্রতি ১ হাজার ৪০০ ডলার চাইল। শেষ পর্যন্ত সেই দাম ২ হাজার ৫০০ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল।’

আল জাজিরার সংগ্রহ করা সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা গেছে, জনপ্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার ডলার পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। যাত্রীদের গোপনীয়তা বজায় রাখার কঠোর শর্ত দেওয়া হয়েছিল এবং ফ্লাইটের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বিস্তারিত জানানো হতো।

যাত্রীরা জানিয়েছে, তাদের দক্ষিণ গাজার কারেম আবু সালেম (ইসরায়েলে যেটিকে কেরেম শালম বলা হয়) ক্রসিংয়ে যেতে বলা হয়েছিল। সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয় এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাসে করে ইলাত শহরের কাছে র‍্যামন বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজকর্মী নাইজেল ব্রাঙ্কেন আফ্রিকায় ওই যাত্রীদের সহায়তা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই অভিযানে ইসরায়েলের জড়িত থাকার স্পষ্ট ছাপ রয়েছে...এটি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার একটি প্রক্রিয়া।’ উদ্বাস্তুরা জানায়, ফ্লাইটে ওঠার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তারা জানত না তাদের গন্তব্য কোথায়।

ফ্লাইইউ নামক একটি নতুন এয়ারলাইনসের বিমানে তাদের তোলা হয়, যদিও তাদের নথিপত্রে কোনো বহির্গমন সিল ছিল না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই এয়ারলাইনসটি ইসরায়েলি বিমানবন্দর থেকে রোমানিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়ার মতো দেশগুলোতে এমন আরও অনেক ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।

আল-মাজদ ইউরোপ নিজেদের ২০১০ সালে জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত একটি মানবিক ফাউন্ডেশন হিসেবে দাবি করে, যাদের প্রধান কার্যালয় অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকায়। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে এটি একটি প্রতারণা। জার্মানি বা ইউরোপের কোনো ডেটাবেসে এই নামে কোনো কোম্পানির অস্তিত্ব নেই। জেরুজালেমের নথিতেও তাদের দেওয়া ঠিকানার কোনো হদিস মেলেনি; গুগল ম্যাপে ওই স্থানে একটি হাসপাতাল ও ক্যাফে দেখা গেছে।

অনুসন্ধানে এই সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ফিলিস্তিনি মুখ শনাক্ত করা হয়েছে। একজন মুয়াদ হিশাম সাইদাম, যাকে গাজায় সংস্থাটির মানবিক প্রকল্পের ম্যানেজার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দেখা গেছে, ২০২৪ সালের মে মাসে তাঁর স্ত্রী দেশত্যাগের সাহায্যের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। এক বছর পর সাইদাম একটি রোমানিয়ান বিমানে ওঠার ছবি পোস্ট করে জানান তিনি গাজা ছাড়ছেন।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিনি সম্ভবত ২০২৫ সালের ২৭ মে র‍্যামন বিমানবন্দর থেকে বুদাপেস্টের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, তাঁর পরিবার বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় আছে, তবে আল-মাজদ ইউরোপের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি অস্পষ্ট। দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম কেবল ‘আদনান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যার কোনো ডিজিটাল উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

১৩ নভেম্বর জোহানেসবার্গ ফ্লাইটের দিনই আল-মাজদ তাদের ওয়েবসাইট থেকে অংশীদার কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা মুছে ফেলে। আল জাজিরা সেটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সেখানে রেডক্রসের মতো প্রথিতযশা সংস্থার নাম থাকলেও একটি নাম নজর কাড়ে—‘ট্যালেন্ট গ্লোবাস।’ ২০২৪ সালে এস্তোনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এই রিক্রুটিং কোম্পানির তহবিলে ছিল মাত্র ৩৫০ ডলার। এর পরিচালক টম লিন্ড একজন ইসরায়েলি ও এস্তোনীয় নাগরিক।

ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজের রিপোর্টেও টম লিন্ডের নাম এসেছে গাজা ত্যাগের ফ্লাইটের সমন্বয়ক হিসেবে। ২০২৫ সালের মে মাসে লিন্ড দাবি করেন, তিনি ‘ফিলিস্তিনিদের মানবিক সহায়তায়’ মনোনিবেশ করেছেন এবং অনেক মানুষকে গাজা থেকে সরাতে সাহায্য করেছেন। তবে তাঁর কোম্পানির অন্য তিন কর্মীর ছবি ইন্টারনেটে পাওয়া ‘স্টক ইমেজ’ বা ভুয়া ছবি হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।

আল-মাজদ ইউরোপ আসলে একটি ভুয়া মানবিক সংস্থা। প্রশ্ন উঠেছে, এই আড়ালে তারা আসলে কী লুকাতে চাইছে? প্রকাশ্যে ইসরায়েল ‘স্বেচ্ছা হিজরত’ পরিকল্পনা থেকে পিছু হটার কথা বললেও আল জাজিরার অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা। এই গোপন ফ্লাইটগুলো কি গাজাকে জনশূন্য করার কোনো বড় পরিকল্পনারই অংশ?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

ভারতে নিকাব বিতর্ক: কাজে যোগ দেননি সেই নারী চিকিৎসক

ভোট চুরির এমপি হতে চাই না: অ্যাটর্নি জেনারেল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: চিকিৎসায় শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ট্রাম্পের ছবিসহ ১৬ এপস্টেইন নথি গায়েব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০৬
মার্কিন সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ট্রাম্পের ছবিসহ ১৬ এপস্টেইন নথি গায়েব

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইটে দেশটির পার্লামেন্টের নির্দেশে প্রকাশিত জেফরি এপস্টেইন ফাইল সিরিজের ১৬টি নথি গায়েব হয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু নথিতে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু ছবি ছিল। নিখোঁজ ফাইলগুলো গত শুক্রবার দেখা গেলেও শনিবার থেকে আর দেখা যাচ্ছে না।

বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, জেফরি এপস্টেইন-সংক্রান্ত নথিপত্রের জন্য মার্কিন বিচার বিভাগের নির্ধারিত পাবলিক ওয়েব পেজ থেকে অন্তত ১৬টি ফাইল গায়েব হয়ে গেছে, যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ছবিও ছিল।

ফাইলগুলো পোস্ট করার ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে কোনো ব্যাখ্যা বা নোটিশ ছাড়াই সরিয়ে ফেলা হয়।

নিখোঁজ ফাইলগুলোর মধ্যে ছিল নগ্ন নারীদের আঁকা কিছু ছবি এবং একটি ড্রয়ার ও ক্রেডেনজারের ওপর রাখা কিছু ছবির দৃশ্য। সেই ছবির ভেতর একটি ড্রয়ারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ছবি দেখা যায়, যেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেফরি এপস্টেইন, মেলানিয়া ট্রাম্প এবং এপস্টেইনের দীর্ঘদিনের সহযোগী ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েল।

বিচার বিভাগ ফাইলগুলো সরিয়ে ফেলার কোনো কারণ জানায়নি বা এটি ইচ্ছাকৃত কি না, তা-ও স্পষ্ট করেনি। বিভাগের একজন মুখপাত্রের কাছে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

এই ব্যাখ্যাহীন অন্তর্ধান ফাইলগুলো নিয়ে জল্পনা উসকে দিয়েছে যে কেন এগুলো সরানো হলো এবং কেন জনগণকে জানানো হয়নি। এটি এপস্টেইন এবং তাঁর চারপাশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে দীর্ঘদিনের রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে। হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাটরা এক্সে ট্রাম্পের ছবি থাকা নিখোঁজ ফাইলটির দিকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘আর কী কী গোপন করা হচ্ছে? মার্কিন জনগণের জন্য আমাদের স্বচ্ছতা প্রয়োজন।’

এই ঘটনা বিচার বিভাগের বহুল প্রতীক্ষিত নথি প্রকাশের বিষয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জনসম্মুখে আনা হাজার হাজার পৃষ্ঠার নথিতে এপস্টেইনের অপরাধ বা তাঁকে বছরের পর বছর গুরুতর ফেডারেল অভিযোগ থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার নেপথ্য সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে খুব সামান্যই নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান; যেমন ভুক্তভোগীদের এফবিআই সাক্ষাৎকার এবং বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ মেমো এতে বাদ দেওয়া হয়েছে।

আশা করা হয়েছিল, এপস্টেইন সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডগুলো পাওয়া যাবে, কিন্তু বিচার বিভাগের প্রাথমিক প্রকাশনায় সেগুলো কোথাও নেই। সেখানে বিশেষ করে ২০০৮ সালে এপস্টেইনকে কীভাবে একটি মামুলি অপরাধ স্বীকার করে পার পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তার কোনো সদুত্তর নেই।

এখানেই শেষ নয়। কংগ্রেসের সাম্প্রতিক আইন অনুযায়ী এই রেকর্ডগুলো প্রকাশ করার কথা থাকলেও, এতে এপস্টেইনের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুক্ত থাকা ব্রিটেনের সাবেক প্রিন্স অ্যান্ড্রুর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম খুব কমই এসেছে।

এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে ২০০০-এর দশকে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করার বিষয়ে বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তের কিছু অন্তর্দৃষ্টি এবং ১৯৯৬ সালের একটি অভিযোগ যেখানে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে শিশুদের ছবি চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এ পর্যন্ত প্রকাশিত নথিতে মূলত নিউইয়র্ক এবং ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডে এপস্টেইনের বাড়ির ছবি, এবং কিছু সেলিব্রিটি ও রাজনীতিবিদের ছবি রয়েছে। এর মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কিছু নতুন ছবি থাকলেও ট্রাম্পের ছবি ছিল খুবই নগণ্য। যদিও ক্লিনটন এবং ট্রাম্প উভয়েই এপস্টেইনের সঙ্গে মেলামেশার কথা অস্বীকার করেছেন এবং কারও বিরুদ্ধেই এপস্টেইন-সংক্রান্ত কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই।

কংগ্রেসের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হলেও বিচার বিভাগ জানিয়েছে যে তারা পর্যায়ক্রমে নথিগুলো প্রকাশ করবে। ভুক্তভোগীদের নাম গোপন করার প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এই দেরি হচ্ছে বলে তারা দাবি করেছে।

এই ধীরগতিতে এপস্টেইনের হাতে নির্যাতিত নারী এবং কংগ্রেসের সদস্যরা ক্ষুব্ধ। মারিনা লাসার্ডা, যিনি অভিযোগ করেছেন যে ১৪ বছর বয়সে এপস্টেইন তাঁকে যৌন নির্যাতন শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে বিচারব্যবস্থা আবারও আমাদের ব্যর্থ করছে।’

প্রকাশিত নথিগুলোর একটি বড় অংশই আগে কোনো না কোনোভাবে জনসম্মুখে এসেছিল। তবে এবারই প্রথম এগুলো এক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। যদিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পুরোপুরি কালো কালি দিয়ে ঢেকে (Blacked out) দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের রিপাবলিকান সহযোগীরা ক্লিনটনের ছবির দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যেখানে তাঁকে মাইকেল জ্যাকসন এবং ডায়ানা রসের মতো তারকাদের সঙ্গে দেখা গেছে। এ ছাড়াও অভিনেতা ক্রিস টাকার, কেভিন স্পেসি এবং নিউজকাস্টার ওয়াল্টার ক্রনকাইটের সঙ্গেও এপস্টেইনের ছবি পাওয়া গেছে। তবে এসব ছবির কোনো ক্যাপশন বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

প্রকাশিত নথির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো ২০০৭ সালের একটি ঘটনা, যেখানে দেখা গেছে ফেডারেল প্রসিকিউটরদের হাতে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তারা তখন কোনো চার্জ গঠন করেননি। গ্র্যান্ড জুরির কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, ১৪ বছর বয়সী কিশোরীসহ অনেক ভুক্তভোগী এপস্টেইনের যৌন লালসার বর্ণনা দিয়েছিলেন।

সবে শ্রমমন্ত্রী আলেকজান্ডার অ্যাকোস্টা, যিনি সেই সময় মামলার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি পরে জানিয়েছিলেন, জুরিরা ভুক্তভোগীদের কথা বিশ্বাস করবেন কি না, তা নিয়ে তাঁর সন্দেহ ছিল। তবে বর্তমানে ভুক্তভোগীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বদলেছে বলে তিনি স্বীকার করেন। এপস্টেইনের নির্যাতনের শিকার মারিয়া ফারমারের আইনজীবী জেনিফার ফ্রিম্যান বলেন, ‘এটি একই সঙ্গে একটি জয় এবং একটি ট্র্যাজেডি। মনে হচ্ছে, সরকার কিছুই করেনি। যদি তারা সামান্যতম তদন্তও করত, তবে তাঁকে অনেক আগেই থামানো যেত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

ভারতে নিকাব বিতর্ক: কাজে যোগ দেননি সেই নারী চিকিৎসক

ভোট চুরির এমপি হতে চাই না: অ্যাটর্নি জেনারেল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: চিকিৎসায় শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজায় নতুন শাসনকাঠানো কার্যকর শিগগির: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, গাজার নতুন শাসন কাঠামো খুব শিগগির কার্যকর হতে যাচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিক পরিষদ এবং ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের (কৌশলগত বিশেষজ্ঞ) সমন্বয়ে গঠিত হবে এই শাসনকাঠামো। এই শাসনকাঠামো গঠনের পরপরই সেখানে বিদেশি সৈন্য মোতায়েন করা হবে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের চালানো গণহত্যামূলক যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রুবিও বলেন, গাজায় বর্তমান অবস্থা বজায় রাখা সম্ভব নয়। গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে ইসরায়েল হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা অব্যাহত রেখেছে এবং হামাসও পুনরায় তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

রুবিও বলেন, ‘এ কারণেই আমরা প্রথম ধাপটি পুরোপুরি সম্পন্ন করার বিষয়ে জরুরি তাগিদ অনুভব করছি। এই ধাপের মধ্যে রয়েছে বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদ গঠন এবং সেখানে কাজ করার জন্য ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এর পরপরই সেখানে স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে।’

রুবিও জানান, টেকনোক্র্যাট গ্রুপে যোগ দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সম্প্রতি অগ্রগতি হয়েছে এবং ওয়াশিংটন কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ না করলেও ‘খুব শিগগিরই’ এই শাসনকাঠামো চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

গাজার জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স বা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের পরিকল্পনা করতে চলতি সপ্তাহে দোহায় সহযোগী দেশগুলোর সাথে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড একটি সম্মেলনের আয়োজন করার পর রুবিও এই মন্তব্য করলেন।

গত সপ্তাহে দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, গত নভেম্বরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই বাহিনী অনুমোদনের পর আগামী মাসেই আন্তর্জাতিক সৈন্য গাজায় মোতায়েন হতে পারে। তবে হামাসকে কীভাবে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে তা এখনও অস্পষ্ট। এছাড়া, আইএসএফ-এ সৈন্য পাঠানোর কথা বিবেচনা করছে এমন দেশগুলো এই ভয়ে আছে যে, হামাস তাদের সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।

রুবিও নির্দিষ্ট করে বলেননি যে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্ব কার হবে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, যেসব দেশ সৈন্য দিতে আগ্রহী তারা এই বাহিনীর সুনির্দিষ্ট ম্যান্ডেট এবং অর্থায়ন সম্পর্কে জানতে চায়।

রুবিও বলেন, ‘কাউকে চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি দিতে বলার আগে আমার মনে হয় আমাদের আরও কিছু উত্তর দেওয়া উচিত। তবে আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে, এমন বেশ কিছু রাষ্ট্র রয়েছে যারা সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং তারা এই স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনীর অংশ হতে ইচ্ছুক।’ তিনি উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তান এই বাহিনীতে আগ্রহ প্রকাশকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

রুবিও আরও যোগ করেন যে, গাজা পুনর্গঠনের জন্য দাতাদের তহবিল নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা ও শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। পুনর্গঠন তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি দাতা সম্মেলনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার সময় তিনি বলেন, ‘আবার যুদ্ধ শুরু হয়ে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে জেনে কে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে? তারা (দাতারা) জানতে চায় গাজার দায়িত্বে কে আছে এবং তারা সেখানে নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা দেখতে চায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

ভারতে নিকাব বিতর্ক: কাজে যোগ দেননি সেই নারী চিকিৎসক

ভোট চুরির এমপি হতে চাই না: অ্যাটর্নি জেনারেল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: চিকিৎসায় শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত