Ajker Patrika

চেন্নাইয়ের ব্রেকিং ব্যাড, রসায়নের ছাত্রকে নিয়ে মেথ বানাতেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ারা

চেন্নাইয়ের ব্রেকিং ব্যাডের মতো মেথ বানাতে গিয়ে গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: সংগৃহীত
চেন্নাইয়ের ব্রেকিং ব্যাডের মতো মেথ বানাতে গিয়ে গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: সংগৃহীত

নেটফ্লিক্সের অন্যত জনপ্রিয় শো ‘ব্রেকিং ব্যাড’। যেন সেই কল্পকাহিনিরই একটি পর্ব সরাসরি উঠে এল বাস্তব জীবনে। রসায়নের এক কৃতী ছাত্রকে ক্রিস্টাল মেথ বা মেথামফেটামিন তৈরির জন্য নিয়োগ করেছিল চেন্নাইয়ের এক মাদক চক্র। এমনকি, শহরে একটি গোপন পরীক্ষাগার পর্যন্ত স্থাপন করেছিল চক্রটি।

তবে, তাদের এই বিস্তৃত পরিকল্পনা সফল হয়নি। তাদের জারিজুরি ফাঁস করে দিয়েছে চেন্নাই পুলিশ। পুলিশি অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে সাতজন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। আরেকজন চেন্নাইয়ের এক নামকরা কলেজের রসায়নে স্নাতকোত্তর। অন্য এক প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বিএসসি করেছিলেন। দুর্দান্ত ফলের জন্য তাঁকে স্বর্ণপদক পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল।

এই তরুণ কৃতী ছাত্রদেরই মাদক তৈরি এবং বিক্রির কাজে লাগিয়েছিল মাদক চক্রটি। অরুণ কুমার নামে এক দাগি অপরাধীর কাছ থেকে অল্প পরিমাণে মেথামফেটামিন নিয়ে বিক্রি করে মাদক ব্যবসা শুরু করেছিল গ্র্যাজুয়েটদের ইঞ্জিনিয়ারদের এই দলটি। পরে, নিজেরাই মেথামফেটামিন তৈরির করার পরিকল্পনা করে। এরপরই তাঁরা দলে টানে রসায়নের স্নাতকোত্তরকে। তারপর তারা ক্রিস্টাল মেথ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সংগ্রহ করে।

এর জন্য নিজেদের পরিবার থেকেও টাকা এনেছিল তারা। এক ছাত্র তাঁর বাবা-মাকে বলেছিল, তাঁরা একটি ক্যাফে খুলছে, তাই কিছু টাকার প্রয়োজন। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছেলে ব্যবসা করতে আগ্রহী দেখে, তার বাবা-মাও তাকে সাহায্য করার জন্য টাকা দিয়েছিলেন।

পুলিশ যখন এই মাদক চক্রকে আটক করে, তখন তাদের পরীক্ষাগার থেকে ২৪৫ গ্রাম মেথামফিটামিন ছিল। এ ছাড়া সেখান থেকে ২টি ল্যাপটপ এবং ৭টি মোবাইল ফোনও জব্দ করেছে পুলিশ।

এখন পুলিশ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও দুই ব্যক্তিকে খুঁজছে। একজন হলেন অরুণ কুমার, যার কাছ থেকে মাদক নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল ছাত্ররা। অপরজন কার্তিক নামে আরও এক ব্যক্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ, বললেন ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ১৮
ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প জাতীয়করণকে ‘চুরি’ মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগী স্টিফেন মিলার। ছবি: এএফপি
ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প জাতীয়করণকে ‘চুরি’ মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগী স্টিফেন মিলার। ছবি: এএফপি

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগী স্টিফেন মিলার। তিনি দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির তেলশিল্প জাতীয়করণকে ‘চুরি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার মিলার এসব কথা বলেন।

এদিকে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মিলারের এই মন্তব্য ভেনেজুয়েলা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান ঘিরে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেননা ট্রাম্প প্রশাসন এত দিন দাবি করে আসছে, ভেনেজুয়েলার সঙ্গে উত্তেজনার মূল কারণ মাদক পাচার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে আমেরিকানদের ঘাম, উদ্ভাবনী শক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। এই স্বৈরাচারী দখলদারি মার্কিন সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসে নথিভুক্ত সবচেয়ে বড় চুরি। পরে এই লুণ্ঠিত সম্পদ ব্যবহার করা হয়েছে সন্ত্রাসে অর্থ জোগাতে এবং খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক দিয়ে আমাদের সড়কগুলো প্লাবিত করতে।’

তবে আন্তর্জাতিক আইন বলছে, ‘প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর স্থায়ী সার্বভৌমত্ব’ নীতির আওতায় ভেনেজুয়েলার তেল ওই দেশটিরই সম্পদ।

যদিও ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো যুক্ত ছিল। ১৯৭৬ সালে তেল খাত জাতীয়করণ করে ভেনেজুয়েলা। এরপর খাতটির নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পিডিভিএসএর হাতে।

পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালে প্রয়াত বামপন্থী প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ ভেনেজুয়েলার অবশিষ্ট বিদেশি তেল প্রকল্পগুলোও জাতীয়করণ করেন। এর ফলে কনোকোফিলিপস ও এক্সন মোবিলের মতো মার্কিন তেল জায়ান্টদের কার্যত ওই দেশ থেকে সরে আসতে হয়।

এ সময় তেল খাত জাতীয়করণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো আইনি লড়াই শুরু করে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাংকের একটি সালিসি ট্রাইব্যুনাল এক্সন মোবিলকে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে ভেনেজুয়েলাকে নির্দেশ দেয়। তবে এ-সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নিজের তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি আরও জোরদার করেন ট্রাম্প।

গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ভেনেজুয়েলার তেলবাহী জাহাজগুলোকে ‘নিষেধাজ্ঞাভুক্ত’ হিসেবে উল্লেখ করে এগুলোর ওপর অবরোধের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। আর এই অবরোধ ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ক্রমেই কঠোর ও সংঘাতমুখী নীতির অংশ। আর ট্রাম্পের এই নীতির লক্ষ্য দেশটির বামপন্থী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের আমলে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প আবারও স্টিফেন মিলারের বক্তব্যের সুরে বলেন, ভেনেজুয়েলাবাসী যুক্তরাষ্ট্রের তেল চুরি করেছে।

ট্রাম্প লেখেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠা সবচেয়ে বড় নৌবহর দিয়ে ভেনেজুয়েলাকে পুরোপুরি ঘিরে ফেলা হয়েছে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘এটি আরও বড় আকার নেবে। তাদের জন্য যে ধাক্কা আসবে, তা তারা আগে কখনো দেখেনি। যত দিন না তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আগে চুরি করা সব তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ফিরিয়ে দিচ্ছে, তত দিন এটা চলবে।’

ট্রাম্প প্রশাসন মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধেও একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। গত নভেম্বরে প্রশাসন ‘কার্টেল দে লস সোলেস’-কে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। যদিও এই নামটি কোনো সংগঠিত গোষ্ঠীকে নির্দেশ করে না।

বরং এটি ভেনেজুয়েলার সরকার ও সামরিক বাহিনীর ভেতরে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ বোঝাতে ব্যবহৃত একটি পরিভাষা। মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, তিনি ভেনেজুয়েলার শাসনব্যবস্থাকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করবেন। এর পেছনে তিনি যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছেন, ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করেছে।

তবে গত বুধবার অজ্ঞাত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যম পলিটিকো জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ব্যক্তিগত তেল কোম্পানিগুলোর কাছে যোগাযোগ করেছে। তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যদি মাদুরো ক্ষমতাচ্যুত হন, তাহলে তারা ভেনেজুয়েলায় আবার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী কি না।

এদিকে ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মারিয়া করোনা মাচাদো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যদি মাদুরো ক্ষমতাচ্যুত হন, দেশের তেল খাত বেসরকারীকরণ করা হবে এবং বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তিনি এ বছরের শুরুতে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরব বসন্তে ক্ষমতাচ্যুত একনায়কেরা এখন কোথায় কেমন আছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আল-জাজিরা
ছবি: আল-জাজিরা

১৫ বছর আগে আজকের এই দিনটিতেই (২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর) তিউনিসিয়ার তরুণ এক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা মোহাম্মদ বুয়াজিজি পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে আত্মাহুতি দেন। তাঁর এই মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত আরব বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিস্ফোরণ ঘটায়। বেকারত্ব, দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি মানুষের ক্ষোভ রাস্তায় নেমে আসে। ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিত এই আন্দোলনে তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়ায় একের পর এক পতন ঘটে দীর্ঘদিনের শাসকদের। দেড় দশক পর ক্ষমতাচ্যুত সেই নেতারা এখন কোথায়, কেমন আছেন, জেনে নেওয়া যাক—

জিনে আল আবিদিন বেন আলি (তিউনিসিয়া)

একসময় তিউনিসিয়ার নিরাপত্তা প্রধান ছিলেন বেন আলি। পরে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন এবং একপর্যায়ে নিজেকে আজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে একনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তাঁর ২৩ বছরের শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও দুর্নীতি, বৈষম্য ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ চরমে পৌঁছেছিল।

প্রকাশ্য দিবালোকে শরীরে পেট্রল ঢেলে বুয়াজিজির আত্মহত্যার পর টানা বিক্ষোভ সীমা ছাড়িয়ে গেলে ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি তিউনিসিয়া থেকে সৌদি আরবে পালিয়ে যান বেন আলি। পরে তিউনিসিয়ার আদালত তাঁকে তাঁর অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে সেই সাজা কখনো কার্যকর হয়নি। ২০১৯ সালে সৌদি আরবে নির্বাসনে থাকা অবস্থায়ই তাঁর মৃত্যু হয়।

হোসনি মুবারক (মিসর)

১৯৮১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৩০ বছর মিসরের প্রেসিডেন্ট ছিলেন দেশটির সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান হোসনি মুবারক। জরুরি আইন, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি মিসরে গণ-আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের ১৮ দিনের মাথায় পদত্যাগে বাধ্য হন মুবারক। বিক্ষোভকারীদের হত্যায় জড়িত থাকার দায়ে তাঁকে প্রথমে যাবজ্জীবন দেওয়া হলেও পরে সেই রায় বাতিল হয়। দুর্নীতির মামলায় কিছু সময় আটক থাকার পর ২০১৭ সালে তিনি মুক্তি পান। ২০২০ সালে রাজধানী কায়রোতে তাঁর মৃত্যু হয়।

আলি আবদুল্লাহ সালেহ (ইয়েমেন)

১৯৭৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছর ইয়েমেন শাসন করেছেন আলি আবদুল্লাহ সালেহ। দেশটির জটিল উপজাতীয় ও সামরিক রাজনীতির দক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। আরব বসন্তের ঢেউ লাগে ইয়েমেনেও। ২০১১ সালে বিক্ষোভের পর ক্ষমতা ছাড়লেও তিনি হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে জোট বাঁধেন এবং ২০১৪ সালে সানা দখলে সহায়তা করেন। পরে সেই জোট ভেঙে গেলে ২০১৭ সালে হুতি বাহিনীর হাতেই তিনি নিহত হন।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি (লিবিয়া)

১৯৬৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ৪২ বছর লিবিয়া শাসন করেন গাদ্দাফি। তেলের সম্পদ দিয়ে তিনি এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। ২০১১ সালে লিবিয়ার বেনগাজিতে বিক্ষোভ শুরু হলে তা দ্রুত গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। ন্যাটোর বিমান হামলা ও বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রায় সেই বছরের আগস্টেই রাজধানী ত্রিপোলির পতন ঘটে। অক্টোবরে নিজ শহর সির্তে বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়ে গাদ্দাফি নিহত হন।

বাশার আল আসাদ (সিরিয়া)

২০০০ সালে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসা বাশার আল আসাদ তাঁর পিতা হাফেজ আল আসাদের উত্তরসূরি। ২০১১ সালে দেশটির কিশোরদের লেখা সরকারবিরোধী গ্রাফিতি থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। পরে তা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে দেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীদের আকস্মিক অভিযানে দামেস্কের পতন ঘটে। আসাদ পরিবার রাশিয়ায় পালিয়ে যায় এবং সেখানে এখন নির্বাসিত জীবন-যাপন করছে।

আরব বসন্ত শাসকদের পতন ঘটালেও বহু দেশে গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও শান্তির স্বপ্ন এখনো অধরাই গেছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন নজর এড়িয়ে কীভাবে তেল পাচার করে ভেনেজুয়েলার গোপন নৌবহর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যকার উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াত করা তেলবাহী জাহাজ ঠেকাতে নৌ অবরোধের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য মূলত ভেনেজুয়েলার তথাকথিত ‘ঘোস্ট শিপ’ বা ভুতুড়ে জাহাজগুলো—যেগুলোর মাধ্যমে দেশটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে গোপনে তেল রপ্তানি চালিয়ে যাচ্ছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল মজুতের দেশ ভেনেজুয়েলার সরকারি ব্যয়ের বড় অংশই তেল রপ্তানির আয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ-এর ওপর কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় বৈধ পথে দেশটির তেল রপ্তানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকার বিকল্প পথ হিসেবে গড়ে তোলে এক গোপন নৌবহর—যা ‘ঘোস্ট ফ্লিট’ বা ‘ভুতুড়ে নৌবহর’ নামে পরিচিত।

সমুদ্রে আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যেই এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে তেল স্থানান্তর করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
সমুদ্রে আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যেই এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে তেল স্থানান্তর করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ট্যাংকারট্র্যাকার্স ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার জলসীমায় বা দেশটির দিকে অগ্রসরমাণ প্রায় ৮০টি জাহাজের মধ্যে ৩০ টির বেশি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায়। ট্রাম্প এই জাহাজগুলোকেই টার্গেট করে ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক নৌ অবরোধের’ ঘোষণা দিয়েছেন।

২০১৯ সালে প্রথম দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি অর্ধেকেরও বেশি কমে গিয়েছিল। তবে ছয় বছর পর আবার তা বেড়ে দৈনিক প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার ব্যারেলে পৌঁছেছে। এটি ১৯৯৮ সালের সর্বোচ্চ ৩০ লাখ ব্যারেলের তুলনায় অনেক কম হলেও ধীরে ধীরে রপ্তানি পুনরুদ্ধার প্রমাণ করে—মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাশিত ফল দিচ্ছে না।

ভেনেজুয়েলা একা নয়; রাশিয়া ও ইরানও একই কৌশল ব্যবহার করছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের হিসাব অনুযায়ী—বিশ্বে প্রতি পাঁচটি তেলবাহী জাহাজের একটি কোনো না কোনোভাবে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পরিবহনে জড়িত।

এই ভুতুড়ে জাহাজগুলো সাধারণত ঘনঘন নাম ও পতাকা বদলায়, স্বয়ংক্রিয় পরিচয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) বন্ধ রাখে কিংবা পুরোনো স্ক্র্যাপ করা জাহাজের পরিচয় ব্যবহার করে—যেগুলোকে বলা হয় ‘জম্বি শিপ’। অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যেই জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তর করে তেলের প্রকৃত উৎস আড়াল করা হয়।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী নৌ উপস্থিতি, বিশেষ করে ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড বিমানবাহী রণতরীর নেতৃত্বে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অভিযান, এই গোপন তেল বাণিজ্যের পথ সংকুচিত করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এতে ভেনেজুয়েলার ‘ঘোস্ট ফ্লিট’-নির্ভর তেল রপ্তানি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১০
আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ‘আলাদা’ করে দিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর হুমকির জবাব দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশে কিছু রাজনীতিকের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য’ অব্যাহত থাকলে ভারত চুপ থাকবে না এবং উচিত শিক্ষা দেবে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে হিমন্ত বলেন, ‘গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে বারবার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলাদেশে যুক্ত করার আলোচনা চলছে। কিন্তু ভারত একটি বিশাল দেশ, পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। বাংলাদেশ কীভাবে এমন চিন্তা করতে পারে?’

হিমন্ত আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণের একটি অংশের মধ্যে ‘খারাপ মানসিকতা’ কাজ করছে এবং ‘তাদের এত বেশি সাহায্য করা উচিত নয়’।

হিমন্ত বলেন, ‘তাদের খুব বেশি সাহায্য করা উচিত নয়। তারা যদি ভারতের প্রতি এমন আচরণ করে, তাহলে আমরা যে চুপ করে থাকব না—সেই শিক্ষা দেওয়া দরকার।’

এর আগে গত সোমবার এক সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ভারতকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা আমার দেশের সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না, যারা আমার দেশের সম্ভাবনাকে বিশ্বাস করে না, যারা ভোটাধিকারকে বিশ্বাস করে না, মানবাধিকারকে বিশ্বাস করে না, যারা এই দেশের সন্তানদেরকে বিশ্বাস করে না, আপনারা যেহেতু তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন, স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, ভারতের যারা সেপারেটিস্ট আছে, বাংলাদেশে আমরা তাদেরকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে আলাদা করে দেব।’

চলতি বছরের শুরুতে ভারতের তথাকথিত ‘চিকেনস নেক’ করিডরকে লক্ষ্য করে দেওয়া হুমকির বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছিলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, যাঁরা নিয়মিত ভারতের চিকেনস নেক করিডর নিয়ে হুমকি দেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত—বাংলাদেশেরও দুটি চিকেনস নেক রয়েছে, যা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথমটি হলো, ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ উত্তর বাংলাদেশ করিডর, যা দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম গারো পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে কোনো বিঘ্ন ঘটলে পুরো রংপুর বিভাগ বাংলাদেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

দ্বিতীয়টি হলো, মাত্র ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম করিডর, যা দক্ষিণ ত্রিপুরা থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি ভারতের চিকেনস নেকের চেয়েও ছোট এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রাজধানী ও রাজনৈতিক রাজধানীর মধ্যে একমাত্র সংযোগস্থল।

হিমন্ত আরও দাবি করেন, সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’ ইতিমধ্যে ভারতের শক্তিমত্তা প্রমাণ করেছে। তাঁর ভাষায়, বাংলাদেশকে ভারত আক্রমণ করার আগে ১৪ বার পুনর্জন্ম নিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ এবং ভারতের সঙ্গে এর তুলনা করা যায় না।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত। তাদের সমুদ্রে পৌঁছানোর কোনো পথ নেই। আমরাই সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত