Ajker Patrika

প্রতিদিন ১ লাখ নতুন ভোটারকে বার্তা পাঠাচ্ছে বিজেপি

আপডেট : ২৮ মে ২০২৪, ২১: ৪৬
প্রতিদিন ১ লাখ নতুন ভোটারকে বার্তা পাঠাচ্ছে বিজেপি

লোকসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দলটি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে প্রতিদিন এক লাখ ভোটারকে নানা ধরনের বার্তা পাঠাচ্ছে। ভোটারদের বিজেপি ‘শুভ সকাল’ এবং মিমসও পাঠাচ্ছে। 

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। 

বিজেপির এমনই একজন সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী অঙ্কুর রানা। তিনি উত্তর প্রদেশের মিরাট সংসদীয় আসনে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া শাখার সমন্বয়কারী। অঙ্কুর রানা শত শত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিজেপির নির্বাচনী বার্তা পাঠান। 

গত মাসে ভোটের প্রচারণার ব্যাখ্যা করে অঙ্কুর রানা বলেন, ‘আমার ৪০০-৫০০টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। যার প্রতিটিতে প্রায় ২০০-৩০০ জন সদস্য রয়েছে। এর বাইরে, আমার কাছে প্রায় পাঁচ হাজার মোবাইল নম্বর রয়েছে। এভাবে আমি একাই প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার ভোটারের কাছে বিজেপির বার্তা পৌঁছাই।’ 

তিনি বিজেপির একটি ‘ক্র্যাক টিমের’ সদস্য ছিলেন। ওই টিমের লক্ষ্য ছিল শুধু উত্তর প্রদেশের নির্বাচনী এলাকাতেই লাখ লাখ ভোটারদের কাছে বিজেপির বার্তা পৌঁছে দেওয়া। উদ্বেগজনক হলেও বিজেপি এমনটাই করছে। দলটি এই বছরের লোকসভা নির্বাচনে ৩৭০ আসন জিততে হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য ম্যাসেজিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোর ওপরই নির্ভর করছে। কারণ, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা ভারতীয়। দেশটিতে ৫০ কোটিরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী রয়েছে, যাঁরা দিনে কয়েক ঘণ্টা ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্মটিতে ব্যয় করেন। 

বিজেপি ভোটারদের ‘শুভ সকাল’ থেকে শুরু করে মিমস এবং বিভিন্ন ভাষায় রাজনৈতিক বক্তব্য পাঠাচ্ছে। অঙ্কুরের মতো স্বেচ্ছাসেবকেরা নির্বাচনী যন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁরা বিজেপির বার্তা পাঠাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 

হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভোটারদের বার্তা পাঠাতে ব্যস্ত বিজেপির স্বেচ্ছাসেবকেরা। ছবি: সংগৃহীতবিবিসি অঙ্কুরের মতো আরও ১০ জন বিজেপি স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে কথা বলেছে, যাঁরা উত্তর প্রদেশে নির্বাচনী এলাকা সোশ্যাল মিডিয়া সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা সবাই বলেছেন, তাঁরা শত শত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালান, যার সদস্য সংখ্যা ২০০ থেকে ২ হাজারের মধ্যে। 

মিরাটে বিজেপির স্বেচ্ছাসেবকেরা বলছেন, প্রতিদিন দলের সদর দপ্তর দিল্লি থেকে রাজনৈতিক বার্তা এবং হ্যাশট্যাগ রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে পাঠানো হয়। এসব বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির প্রশংসা ও রাজ্যে বিরোধীদের কড়া সমালোচনা করা হয়। 

কেন্দ্র থেকে শুধু মিরাটেই অঙ্কুরসহ ১৮০ জন নির্বাচনী স্বেচ্ছাসেবকের কাছে এসব বার্তা পৌঁছে। এই স্বেচ্ছাসেবকদের অধীনে আবার আরও বার্তা প্রেরক রয়েছেন। এমনকি প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের প্রচারণা পরিচালনাকারীদের কাছেও পৌঁছায় এসব বার্তা। 

অঙ্কুর বলেছেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপ তরুণদের কাছে বার্তা পৌঁছানোর জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। আর চল্লিশোর্ধ্বরা ফেসবুকে বেশি সক্রিয়। গড়ে আমাদের লক্ষ্য প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ নতুন মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছানো।’ 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণার কথা উঠলে বিজেপি অন্য যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে শত ক্রোশ এগিয়ে। কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ের তথ্য ছাড়া এসব করা সম্ভব নয়। দলীয় কর্মীরা বলছেন, বিশেষ করে প্রথমে তাঁদের মানুষের নম্বর পেতে হয়। 

মিরাটের একটি ভোটকেন্দ্রে বিজেপির প্রচারণার দায়িত্বে থাকা ভিপিন ভিপালা বলেন, ‘দলের প্রতিটি সদস্যর ওপর ৬০ জন ভোটারের নম্বর সংগ্রহের দায়িত্ব। এটি দলের নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তরের সভাপতি পর্যন্ত। নির্ধারিত ৬০ জনের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ করতে হবে এবং তাঁদের বিজেপিকে ভোট দিতে উৎসাহিত করতে হবে। তাঁদের মোবাইল নম্বর নেওয়া এবং ম্যাসেজিং গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করাও আমাদের দায়িত্ব।’ 

ভোটারদের জন্য ভিপিনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের নাম ‘হিউম্যানিটি ইজ লাইফ’। এই ক্ষেত্রে প্রকাশ্যভাবে রাজনৈতিক নাম না দেওয়া দলটির বিশেষ আবেদন সৃষ্টির অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ভোটারদের কাছে পাঠানো বার্তায় আর সেসবের কোনো রাখঢাক থাকছে না। 

মিরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসির প্রতিনিধিদল। ছবি: সংগৃহীত বেশ কয়েকটি গ্রুপে বহুবার ফরোয়ার্ড করা একটি ভাইরাল বার্তা যাচাই করেছে বিবিসি। বার্তাটিতে কংগ্রেস দল সংখ্যালঘু মুসলিমদের তুষ্ট করছে বলে অভিযোগ করা হয়। বার্তাটিতে লেখা ছিল, ‘কংগ্রেস এরই মধ্যে ভারতকে একটি ইসলামিক দেশে রূপান্তরিত করেছে। তারা শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ঘোষণা করেনি।’ 

এই বার্তা কোথা থেকে প্রথমে পাঠানো হয়েছে, তার উৎস বের করা অসম্ভব। তবে এটি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নির্বাচনী সমাবেশে বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের সারার্থ। এপ্রিলে মোদির বিরুদ্ধে ‘ইসলামবিদ্বেষের’ অভিযোগে ওঠে। তিনি এক সমাবেশে মুসলিমদের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘বিরোধীরা ক্ষমতায় গেলে “অনুপ্রবেশকারী”দের কাছে জনগণের সম্পদ বিতরণ করবে।’ 

বিজেপির নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলো এই বক্তব্যর ভিডিও অ্যানিমেটেড করে শেয়ার করেছে। দলটির নেতারা দাবি করেছেন, এমনটিই কংগ্রেসের ইশতেহারে লেখা আছে। তবে কংগ্রেসের কোনো নথিতে সম্পদ পুনর্বণ্টন বা মুসলিম শব্দের উল্লেখ নেই। এই ধরনের বার্তা প্রতিনিয়ত কোনো প্ল্যাটফর্মে ছড়াতে থাকলে অনেকেই সত্য বলে বিশ্বাস করে ফেলেন। 

সাম্প্রতিক প্রচারে বিজেপি দাবি করেছে, ভারতীয় ছাত্রদের নিরাপত্তার জন্য মোদি ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ থামিয়েছিলেন। ২০২২ সালের মার্চে প্রথম এই দাবিটি করেছিল দলটির নেতা-কর্মীরা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই এক্সে এবং কিছু নিউজ চ্যানেলে এই ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছিল। 

সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। একজন মুখপাত্র বলেন, ‘কেউ বোমা হামলা বন্ধ করে রেখেছে বলার অর্থ, আমরা যুদ্ধ সমন্বয় করছি। তাই আমি মনে করি, এমন তথ্য একেবারেই ভুল।’ 

দুই বছর পর বিজেপির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনী প্রচারে এই দাবি আবারও সামনে এনেছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়ানো হয়েছে। বিজেপি কেন এই দাবির পুনরাবৃত্তি করছে—এমন প্রশ্নের জবাব দেয়নি দলটি। 

মিরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিবিসি ২০ বছর বয়সী ছাত্রদের সঙ্গে দেখা কথা বলেছে, যাঁরা এই নির্বাচনে প্রথমবারের ভোটার। মোদির ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামানোর তথ্য তাঁরা বিশ্বাস করেছে কি না জিজ্ঞেস করলে তাঁদের অধিকাংশই জানান, তাঁরা বিশ্বাস করেছেন। 

বিশাল ভার্মা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি, ভারতের অনুরোধের কারণে যুদ্ধ থামানো হয়েছিল।’ এ সময় তাঁর বন্ধু ও চারপাশে জড়ো হওয়া অন্যরাও সম্মতিতে মাথা নাড়ে। 

মাত্র কয়েকজন ছাত্র দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁদের একজন কবির। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক নয়। আমি নিজেও যুদ্ধকবলিত ছাত্রদের বানানো ভিডিও দেখেছি, যারা বলেছে সরকার তাদের সাহায্য করেনি।’ 

বিবিসি গ্রামের লোকদেরও একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে, যাঁদের অনেকেই টিভিতে আগেই এই সংবাদ দেখেছেন। তেমনই একজন ৪১ বছর বয়সী কৃষক সঞ্জীব কাশ্যপ, ‘হ্যাঁ, যুদ্ধ বন্ধ করা হয়েছিল কারণ মোদিকে বিশ্বব্যাপী সম্মান করা হয়।’ 

৭৫ বছর বয়সী জগদীশ চৌধুরী বলেন, ‘দেখুন, আমরা শুনেছি যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা নিজেরা দেখতে যাইনি। কিন্তু আমার মনে হয়, এতে কিছু সত্যতা আছে।’ গ্রামের আরও চারজন তাঁর সঙ্গে একমত হন। 

মানুষকে ভুল তথ্য বিশ্বাস করানো এক বড় শক্তি। কারণ, ভোটাররা শেষ পর্যন্ত কাকে ভোট দেবে তা নির্ভর করে—সে যা বিশ্বাস করে তার ওপর। এখানে বিজেপি সেই সুযোগটাই নিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লন্ডন থেকে রাত সোয়া ১২টায় দেশের পথে রওনা দেবেন তারেক রহমান, বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা

রাজধানীর মগবাজারে ‘ককটেল’ বিস্ফোরণে যুবক নিহত

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

তারেক রহমানের জন্য উড়োজাহাজে এ-১ আসন নির্ধারণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তে দুই দেশের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ এলাকায় ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে ভারত। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে একটি ‘অসম্মানজনক কাজ’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট দুই দেশকেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসার আহ্বান জানিয়েছে।

কম্বোডিয়ার প্রিয়া বিহার প্রদেশের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থাই সামরিক বাহিনী একটি এক্সকাভেটর ব্যবহার করে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটি সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার আন সেস এলাকায় অবস্থিত ছিল।

প্রিয়া বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বৌদ্ধ ও হিন্দু অনুসারীদের কাছে পূজনীয় প্রাচীন মন্দির ও মূর্তি ধ্বংসের এই ঘটনা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।’ তবে থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সীমান্ত বিরোধের জের ধরে এ ধরনের কাজ অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘ভূখণ্ড নিয়ে দাবি যাই থাকুক না কেন, এ ধরনের অসম্মানজনক কাজ বিশ্বজুড়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়।’

ভারত আবারও উভয় পক্ষকে শান্তি বজায় রাখতে এবং জানমাল ও ঐতিহ্যের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সংলাপ ও কূটনীতির পথে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ঔপনিবেশিক আমলের সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের শুরু। গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের লড়াইয়ে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

বুধবার থেকে উভয় দেশের সামরিক কর্মকর্তারা আবারও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।

বিষ্ণু মূর্তি ধ্বংসের এই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল আশা করছে, সংঘাতের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান হবে। হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লন্ডন থেকে রাত সোয়া ১২টায় দেশের পথে রওনা দেবেন তারেক রহমান, বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা

রাজধানীর মগবাজারে ‘ককটেল’ বিস্ফোরণে যুবক নিহত

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

তারেক রহমানের জন্য উড়োজাহাজে এ-১ আসন নির্ধারণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই বড়দিনের আনন্দ খুঁজছে ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে

গাজা উপত্যকায় গত দুই বছর ধরে চলা ধ্বংসলীলা আর লাশের মিছিলের মাঝেও বড়দিনের আনন্দ ফিরে পাওয়ার এক বিষাদময় চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানকার ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়। একটি নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি দিলেও, ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি আর বাস্তুচ্যুত মানুষের হাহাকার অনেক ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে।

৭৬ বছর বয়সী আত্তাল্লাহ তরাজি সম্প্রতি বড়দিনের উপহার হিসেবে এক জোড়া মোজা আর স্কার্ফ পেয়েছেন। গাজার কনকনে শীত থেকে বাঁচতে এগুলোই এখন তাঁর বড় সম্বল। গির্জার অন্যান্য সদস্যদের সাথে তরাজি যখন গাইলেন—‘খ্রিস্টের জন্ম হয়েছে, হালেলুইয়া’ (একটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ প্রভুর প্রশংসা), তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বিভীষিকা ঢাকা পড়েছিল বিশ্বাসের সুরে।

গাজার সেন্ট্রাল সিটি এলাকার ‘হলি ফ্যামিলি চার্চ’ কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেওয়া তরাজি বলেন, ‘আমরা এই পবিত্র মুহূর্তে যুদ্ধ, বিপদ আর বোমাবর্ষণের কথা ভুলে যেতে চাই। খ্রিস্টের জন্মের আনন্দ আমাদের সব তিক্ততাকে ছাপিয়ে যাক।’

তবে সবার জন্য উৎসবের অনুভূতি এক নয়। শাদি আবু দাউদের জন্য এবারের বড়দিনটি অত্যন্ত কষ্টের। গত জুলাই মাসে এই ক্যাথলিক চার্চ কম্পাউন্ডেই ইজরায়েলি হামলায় তাঁর মা নিহত হন ও ছেলে আহত হয়। ইজরায়েল একে ‘দুর্ঘটনা’ বলে দুঃখ প্রকাশ করলেও স্বজন হারানোর ক্ষত এখনও দগদগে। আবু দাউদ বলেন, জখম এখনও কাঁচা। এখানে কোনো উৎসব নেই, আমরা এখনও ‘না যুদ্ধ না শান্তি’র এক অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে বাস করছি।

গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে খ্রিস্টানদের সংখ্যা এখন নগণ্য। যুদ্ধের কারণে অনেক পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ২৩ বছর বয়সী ওয়াফা ইমাদ এলসায়েঘ জানান, বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়রা না থাকায় আগের মতো আমেজ নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে সাজসজ্জা করছি ঠিকই, কিন্তু যাদের সাথে সব আনন্দ ভাগ করে নিতাম, তারা আজ গাজায় নেই। এই পরিবেশ আগের মতো করে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’

৩৫ বছর বয়সী মা এলিনোর আমাশ তাঁর সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে ঘরে বড়দিনের গাছ (ক্রিসমাস ট্রি) সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানেরা কিছু চকলেট আর মিষ্টি পেয়ে বোমার ভয় ছাড়া শ্বাস নিতে পারছে। কিন্তু তাবুগুলোতে বসবাসকারী মানুষের কষ্ট দেখে চোখে জল আসে।’

গাজার খ্রিস্টানরা মনে করেন, তাঁরা সংখ্যায় যত কমই হোক না কেন, এটি এই ভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের এক অটল সাক্ষ্য। আত্তাল্লাহ তরাজি প্রার্থনা করেন যেন তাঁর জাতি শান্তি ও স্বাধীনতা পায়। তিনি বিশ্বাস করেন, এই পরিস্থিতির চেয়েও বড়দিনের আনন্দ এবং তাঁদের বিশ্বাস অনেক বেশি শক্তিশালী।

গত অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর গাজায় হামলার তীব্রতা কমলেও মাঝেমধ্যেই প্রাণঘাতী আঘাত আসছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইজরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।

অতিবৃষ্টিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের তাবুগুলো তলিয়ে গেছে, যা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লন্ডন থেকে রাত সোয়া ১২টায় দেশের পথে রওনা দেবেন তারেক রহমান, বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা

রাজধানীর মগবাজারে ‘ককটেল’ বিস্ফোরণে যুবক নিহত

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

তারেক রহমানের জন্য উড়োজাহাজে এ-১ আসন নির্ধারণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মস্কোতে বিস্ফোরণ, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত তিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪২
মস্কোর ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিবিসি
মস্কোর ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিবিসি

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক বিস্ফোরণে দুজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা এবং আরেকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার তদন্ত সংস্থাগুলোর বরাতে জানা গেছে, দক্ষিণ মস্কোর ইয়েলেতস্কায়া স্ট্রিট এলাকায় এই বিস্ফোরণ ঘটে স্থানীয় সময় বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোরে। ঘটনাস্থলটি সেই জায়গার কাছে, যেখানে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক রুশ জেনারেল গাড়িবোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বিবৃতির বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটকের চেষ্টা করার সময় বিস্ফোরণটি ঘটে। পুলিশ কর্মকর্তারা যখন ওই ব্যক্তির কাছে যান, তখনই একটি বিস্ফোরক ডিভাইস সক্রিয় হয়ে যায়। বিস্ফোরণের ফলে ঘটনাস্থলেই দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারান। এ সময় তাঁদের পাশে থাকা আরেকজন ব্যক্তিও বিস্ফোরণে নিহত হন।

নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বয়স ছিল ২৪ ও ২৫ বছর। আল জাজিরার মস্কো প্রতিনিধি ইউলিয়া শাপোভালোভার তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে একজনের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি তাদের পরিবারের জন্য এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি।’ বিস্ফোরণের প্রকৃত উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণের শব্দ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। কাছাকাছি বসবাসকারী আলেক্সান্ডার নামের এক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘একটা ভয়ংকর শব্দ হয়েছিল, কয়েক দিন আগের গাড়ি বিস্ফোরণের মতোই।’ আরেক বাসিন্দা রোজা জানান, বিস্ফোরণের সময় তাঁদের পুরো ভবনটি কেঁপে ওঠে এবং তিনি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন।

বিস্ফোরণের পরপরই এলাকাটি ঘিরে ফেলে পুলিশ বাহিনী। রুশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তদন্তকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করেছে।

এই বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই এলাকার কাছে, যেখানে গত সোমবার রুশ জেনারেল ফানিল সারভারভ গাড়ির নিচে পেতে রাখা বিস্ফোরক ডিভাইসের মাধ্যমে নিহত হন। সারভারভ রুশ জেনারেল স্টাফের অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের জন্য সেনাদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

রাশিয়া জেনারেল সারভারভ হত্যার পেছনে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তবে ইউক্রেন এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও দখল করা ইউক্রেনীয় অঞ্চলে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনায় রুশ সামরিক কর্মকর্তা এবং এই যুদ্ধের সমর্থক বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লন্ডন থেকে রাত সোয়া ১২টায় দেশের পথে রওনা দেবেন তারেক রহমান, বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা

রাজধানীর মগবাজারে ‘ককটেল’ বিস্ফোরণে যুবক নিহত

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

তারেক রহমানের জন্য উড়োজাহাজে এ-১ আসন নির্ধারণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শানলিউরফা: নবীদের যে নগরে মিলেছে তিন ধর্মের মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তুরস্কের শানলিউরফা শহর। ছবি: সিএনএন
তুরস্কের শানলিউরফা শহর। ছবি: সিএনএন

দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের শানলিউরফা শহরকে বলা হয় ‘নবীদের নগরী’। সিরিয়া সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ মাইল উত্তরে অবস্থিত এই শহরটি হাজার বছরের ইতিহাস, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির এক অনন্য সংযোগস্থল। এখানে ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম—এই তিন একেশ্বরবাদী ধর্মের কাহিনি এসে মিলেছে।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, শানলিউরফার পুরোনো শহরের দেরগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত নীলাভ পানির ‘বালিক্লিগোল’ বা ‘মাছের হ্রদ’। মূলত এখানে আছে দুটি পুকুর। ধর্মীয় মতে, দুটি পুকুরের বড়টিতে নবী ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করেছিলেন মেসোপটেমিয়ার রাজা নমরুদ। আল্লাহ তৎক্ষণাৎ ওই আগুনকে পানি এবং জ্বলন্ত কাঠকে মাছে রূপান্তরিত করেছিলেন। এ ছাড়া ‘আইনজেলিহা’ নামের ছোট পুকুরটির নামকরণ করা হয়েছে নমরুদের কন্যা জেলিহার নামে। ইব্রাহিম নবীর প্রতি বিশ্বাসের কারণে এই পুকুরে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জেলিহা প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস।

দুটি পুকুরই কালো দাগওয়ালা কার্প মাছে ভরা। এগুলোকে পবিত্র মনে করা হয়। তাই এই মাছগুলোকে ধরা বা এগুলোর ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই কারণেই বালিক্লিগোল শুধু একটি পর্যটনস্থল নয়, বরং গভীর ধর্মীয় আবেগ ও ইতিহাসের প্রতীক। মাছের গায়ে থাকা কালো দাগগুলোকে আগুনের ছাইয়ের চিহ্ন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

বালিক্লিগোলে ভেসে বেড়ায় কালো দাগওয়ালা কার্প মাছ। ছবি: সিএনএন
বালিক্লিগোলে ভেসে বেড়ায় কালো দাগওয়ালা কার্প মাছ। ছবি: সিএনএন

ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে শানলিউরফা নানা নামে পরিচিত ছিল। আরামীয়রা একে ডাকত উরহাই, গ্রিক শাসনামলে নাম ছিল এডেসা, আরব বিজয়ের পর নাম হয় রোহা। অটোমানেরা ১৬০৭ সালে এই নগরীর নাম রাখে উরফা। পরে ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিরোধের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্ত হয় ‘শানলি’, অর্থাৎ ‘গৌরবময়’।

এই শহরটি ইব্রাহিম (আ.), আইয়ুব (আ.), নূহ (আ.) ও জেথ্রোর মতো নবীদের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিশ্বাস করা হয়। পুরোনো শহরের দেরগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত বালিক্লিগোল মুসলিম তীর্থযাত্রীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এখানেই রয়েছে মেভলিদ-ই-হালিল গুহা। বিশ্বাস করা হয়, এখানেই জন্ম হয়েছিল ইব্রাহিম নবীর। নারীরা সন্তান কামনায় ও আরোগ্য লাভের আশায় এই গুহায় আসেন।

তবে শানলিউরফার ইতিহাস শুধু ধর্মগ্রন্থেই সীমাবদ্ধ নয়। শহরটি থেকে ১৪ মাইল দূরেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। প্রায় ১১-১২ হাজার বছরের পুরোনো এই স্থাপনাটি মানবসভ্যতার ধারণাকেই বদলে দিয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৯৬০০ সালের এই নিওলিথিক স্থাপনাটি কৃষি ও মৃৎশিল্পের আগেই নির্মিত—যা প্রমাণ করে, ধর্মীয় আচার হয়তো সভ্যতার সূচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানে পাওয়া টি-আকৃতির স্তম্ভ ও খোদাই করা পশুর ভাস্কর্য বিশ্বব্যাপী বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। ছবি: সিএনএন
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। ছবি: সিএনএন

শানলিউরফা প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে ১০ হাজারের বেশি নিদর্শন। এর মধ্যে ‘উরফা ম্যান’ নামের ১১ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো মানব মূর্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাশেই হালেপলিবাহচে মোজাইক জাদুঘর ও কিজিলকয়ুন নেক্রোপলিস শহরের রোমান যুগের ইতিহাস তুলে ধরে।

ইতিহাস ও ধর্মের পাশাপাশি শানলিউরফা খাবার ও আতিথেয়তার জন্যও বিখ্যাত। উরফা কাবাব, পাটলিজান কাবাব, চি কফতে ও শিল্লিক তাতলিসি এখানকার জনপ্রিয় খাবার। স্থানীয়দের সঙ্গে ধীরে চা পান, পুরোনো বাজারে হাঁটা আর ‘সিরা গেসেসি’ নামের সাংস্কৃতিক আড্ডায় অংশ নিলে বোঝা যায়—এই শহর শুধু দেখার নয়, অনুভব করারও।

শানলিউরফা নগরীতে ‘সিরা গেসেসি’ নামে রাতের আড্ডা। ছবি: সিএনএন
শানলিউরফা নগরীতে ‘সিরা গেসেসি’ নামে রাতের আড্ডা। ছবি: সিএনএন

বলা যায়—শানলিউরফা যেন এক জীবন্ত জাদুঘর; যেখানে ধর্ম, ইতিহাস ও মানবসভ্যতার গল্প একসূত্রে গেঁথে পাশাপাশি হাঁটে অতীত ও বর্তমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লন্ডন থেকে রাত সোয়া ১২টায় দেশের পথে রওনা দেবেন তারেক রহমান, বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা

রাজধানীর মগবাজারে ‘ককটেল’ বিস্ফোরণে যুবক নিহত

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

তারেক রহমানের জন্য উড়োজাহাজে এ-১ আসন নির্ধারণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত