Ajker Patrika

বন্দুকের মুখে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করা হচ্ছে ভারতীয় মুসলমানদের—আসামে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৫, ২১: ০৫
শোনা বানু-কে গত মাসে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে আটক করে বাংলাদেশে পাঠায়; চার দিন পর তাঁকে আবার ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
শোনা বানু-কে গত মাসে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে আটক করে বাংলাদেশে পাঠায়; চার দিন পর তাঁকে আবার ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

গত কয়েক দিনের কথা মনে করে ভারতের আসাম রাজ্যের বরপেটা জেলার ৫৮ বছর বয়সী সোনা বানু এখনো শিউরে ওঠেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, গত ২৫ মে তাঁকে স্থানীয় থানায় ডেকে নেওয়া হয়। পরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে গিয়ে, সেখান থেকে তাঁকে ও আরও প্রায় ১৩ জনকে বন্দুকের মুখে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন তাঁকে এমন করা হয়েছে, তা জানানো হয়নি বলে জানান সোনা বানু।

সম্প্রতি ভারত থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে একাধিক পুশ ইনের ঘটনা ঘটেছে। ভারতের দাবি, তারা অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করে বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করছে। শুরুটা হয়েছিল গত ২২ এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর। ভারতের নানা রাজ্যে শুরু হয় এক বিশেষ অভিযান—‘অবৈধ বাংলাদেশি চিহ্নিত’ করার অভিযান। প্রথম অভিযানটা হয়েছিল গুজরাটে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বিষয়টি নিয়ে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ভুক্তভোগী অনেকের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জানতে পেয়েছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সোনা বানু, সারা জীবন আসামেই বসবাস করেছেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তাঁকে বারবার প্রমাণ করতে হচ্ছে, তিনি ভারতীয় নাগরিক। বাংলাদেশের ‘অবৈধ অভিবাসী’ নন। চোখের জল মুছতে মুছতে বানু বলেন, ‘বন্দুক ঠেকিয়ে আমাকে ওপারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দুদিন ধরে আমি ভারত ও বাংলাদেশের মাঝখানে, হাঁটুসমান জলের মাঠে মশার কামড় ও জোঁকের মধ্যে খাবার-পানি ছাড়া কাটিয়েছি।’ দুই দিন পর তাঁকে বাংলাদেশ সীমান্তের একটি পুরোনো জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুই দিন থাকার পর, তাঁকে ও আরও কয়েকজনকে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা সীমান্তের ওপারে নিয়ে যান। পরবর্তী সময় ভারতীয় কর্মকর্তারা তাঁদের গ্রহণ করেন এবং বাড়িতে ফেরত পাঠান।

সোনা বানুকে কেন হঠাৎ বাংলাদেশে পাঠানো হলো এবং আবার কেন ফিরিয়ে আনা হলো, তা স্পষ্ট নয়। তবে তাঁর ঘটনাটি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এমন একাধিক ঘটনার মধ্যে একটি। আসামের কর্তৃপক্ষ তাদের ট্রাইব্যুনাল থেকে ঘোষিত সন্দেহভাজন ‘অবৈধ বাংলাদেশি’দের ধরে নিয়ে সীমান্তে ঠেলে দিচ্ছেন। বিবিসি এমন ছয়টি ঘটনা খুঁজে পেয়েছে। ভুক্তভোগী এই মানুষজন অভিযোগ করেছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের তুলে নিয়ে সীমান্তে পাঠানো হয়েছে এবং ‘ওপারে (বাংলাদেশে) ঠেলে দেওয়া হয়েছে’।

বিবিসির পক্ষ থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), আসাম পুলিশ ও রাজ্য সরকারের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও কোনো জবাব মেলেনি।

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যার অনেক সংবেদনশীল এলাকা কড়া পাহারায় থাকা সত্ত্বেও সীমান্ত পেরোনো তুলনামূলক সহজ। তবে আইনজীবীরা বলছেন, নিয়ম মেনে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া হঠাৎ কাউকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অন্য দেশে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা বিরল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে এই ধরনের ঘটনা বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে।

মালেকা খাতুন এখনো বাংলাদেশে রয়েছেন। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি পরিবার তাঁকে অস্থায়ী আশ্রয় দিয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
মালেকা খাতুন এখনো বাংলাদেশে রয়েছেন। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি পরিবার তাঁকে অস্থায়ী আশ্রয় দিয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ভারতের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি, সাম্প্রতিক অভিযানে কতজনকে ওপারে পাঠানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশি প্রশাসনের কয়েকটি উচ্চপদস্থ সূত্র দাবি করেছে, শুধু মে মাসেই ভারত ‘অবৈধভাবে’ ১ হাজার ২০০-এর বেশি মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। শুধু আসাম নয়, অন্যান্য রাজ্য থেকেও এসেছে। এই সূত্রগুলো নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশ এই ১ হাজার ২০০ জনের মধ্যে ১০০ জনকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করে আবার তাঁদের ভারতে ফেরত পাঠিয়েছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এসব চেষ্টা রুখতে তারা সীমান্তে টহল বাড়িয়েছে। তবে ভারত বাংলাদেশ বা বিজিবির এই অভিযোগগুলো নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সাম্প্রতিক এই অভিযানে অন্যান্য রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমরাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে আসামের পরিস্থিতি তুলনামূলক জটিল ও উত্তেজনাপূর্ণ, যেখানে নাগরিকত্ব আর জাতিগত পরিচয় দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির প্রধান বিষয়।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্তবর্তী এলাকার অনেক মানুষই সুযোগের সন্ধানে বা ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ভারতে প্রবেশ করেন। ফলে আসামের স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে জনসংখ্যার বিন্যাস বদলে যাচ্ছে ও স্থানীয়দের সম্পদ কমে যাচ্ছে।

ভারত ও বাংলাদেশের মাঝখানের নির্জন এলাকা — শোনা বানুর দাবি, তিনি এখানে একটি মাঠের মধ্যে দু’দিন কাটিয়েছেন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ভারত ও বাংলাদেশের মাঝখানের নির্জন এলাকা — শোনা বানুর দাবি, তিনি এখানে একটি মাঠের মধ্যে দু’দিন কাটিয়েছেন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

আসাম ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বারবার অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজ্যের জাতীয় নাগরিক পুঞ্জি (এনআরসি) তৈরির কাজকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই পঞ্জিকা এমন একটি তালিকা যেখানে বলা হয়েছে, যাঁরা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের (বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার আগের দিন) মধ্যে আসামে এসেছিলেন, কেবল তাঁরাই স্থান পেয়েছেন। তালিকাটি একাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া যাঁদের নাম বাদ পড়েছিল, তাঁদের ‘ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল’ নামক আধা বিচারিক ফোরামে সরকারি নথি দেখিয়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

তবে নানান আলোচনা-সমালোচনার পর একটি বিশৃঙ্খল প্রক্রিয়ায় ২০১৯ সালে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে আসামের প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা বাদ পড়েন। তাঁদের মধ্যে অনেককে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়, অন্যরা তাঁদের বাদ পড়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। সোনা বানু জানান, তাঁর মামলাটিই সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এটা জেনেও তাঁকে জোর করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে।

বিবিসি আসামের আরও ছয়জন মুসলিমের কাছ থেকে একই ধরনের কথা শুনেছে। এরা সবাই অভিযোগ করেছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও সোনা বানুর সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা দাবি করেন, তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি ছিল ও তাঁরা কয়েক প্রজন্ম ধরে ভারতে বসবাস করছেন জেনেও প্রশাসন এই কাজ করেছে। এই ছয়জন মুসলিমের মধ্যে চারজন এখন বাড়িতে ফিরে এসেছেন। কিন্তু কেন তাঁদের তুলে নেওয়া হয়েছিল, তার কোনো উত্তর এখনো তাঁরা পাননি।

আসামের ৩ কোটি ২০ লাখ বাসিন্দার এক-তৃতীয়াংশ মুসলিম। তাদের মধ্যে অনেকে ব্রিটিশ শাসনের সময় এখানে বসতি স্থাপনকারী অভিবাসীদের বংশধর।

আসামের বরপেটার ৬৭ বছর বয়সী মালেকা খাতুন এখনো বাংলাদেশে রয়েছেন। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি পরিবার তাঁকে অস্থায়ী আশ্রয় দিয়েছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘এখানে আমার কেউ নেই।’ তাঁর পরিবার তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে, কিন্তু তিনি কখন ফিরতে পারবেন, তা জানেন না। তিনি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ও রাজ্যের হাইকোর্টে মামলা হেরেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেননি, তাই তাঁকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বিবিসি বরপেটা থেকে প্রায় ১৬৭ কিলোমিটার দূরে মরিগাঁওয়ের রিতা খানমের সঙ্গে কথা বলে। তিনি একটি টেবিলের কাছে বসেছিলেন, যেখানে অনেকগুলো কাগজের স্তূপ ছিল। তাঁর স্বামী খাইরুল ইসলাম (৫১), একজন স্কুলশিক্ষক। রিতা খানম জানান, সোনা বানুর সঙ্গে তাঁর স্বামী খাইরুল ইসলামকেও তুলে নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। একটি ট্রাইব্যুনাল ২০১৬ সালে তাঁকে বিদেশি ঘোষণা করেছিল। এরপর প্রায় দুই বছর তিনি একটি ডিটেনশন সেন্টারেও কাটান। সোনা বানুর মতো, তাঁর মামলাও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।

রিতা খানম বলেন, ‘আমার স্বামী ভারতীয়, তাঁর প্রমাণ হিসেবে সব নথি রয়েছে।’ তিনি তাঁর স্বামীর স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার সনদপত্র ও কিছু জমির রেকর্ডও দেখান। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে জাতীয়তা প্রমাণ করার জন্য এগুলো যথেষ্ট ছিল না।

সাঞ্জিমা বেগমের হাতে সরকারি কাগজপত্র রয়েছে, যেগুলো তাঁর দাবি অনুযায়ী তাঁর বাবার পরিচয় প্রমাণ করে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সাঞ্জিমা বেগমের হাতে সরকারি কাগজপত্র রয়েছে, যেগুলো তাঁর দাবি অনুযায়ী তাঁর বাবার পরিচয় প্রমাণ করে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

রিতা খানম জানান, গত ২৩ মে পুলিশ তাঁদের বাড়িতে এসে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই খাইরুল ইসলামকে নিয়ে যায়। কয়েক দিন পর যখন একজন বাংলাদেশি সাংবাদিকের খাইরুল ইসলামকে নিয়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়—তখনই পরিবার জানতে পারে তিনি কোথায় আছেন। সোনা বানুর মতো খাইরুল ইসলামকেও এখন ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁর পরিবার তাঁর ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে আসাম পুলিশ বিবিসিকে জানিয়েছে, তাদের কাছে খাইরুল ইসলামের ফেরত আসার ‘কোনো তথ্য নেই’।

হঠাৎ বিশেষ অভিযান কেন শুরু হলো, কেনই-বা ভারতে আটক হওয়ার পরে কয়েকজনকে বাংলাদেশে দেখা গেল, তা নিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়নি আসাম পুলিশ।

পুলিশের মহানির্দেশকের কাছে এই বিষয়ে তথ্য চেয়ে ই-মেইল করা হয়েছে, তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার জবাব আসেনি।

সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনা শুরু হওয়ার কয়েক দিন পর, মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের কথা উল্লেখ করেন। যেখানে বলা হয়েছে, ‘বিদেশি ঘোষিত’ কিন্তু ডিটেনশন সেন্টারে থাকা ব্যক্তিদের পুশ ব্যাক করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ‘যাঁরা বিদেশি হিসেবে ঘোষিত, কিন্তু আদালতে আপিল করেননি, আমরা তাঁদের ফেরত পাঠাচ্ছি।’ তিনি দাবি করেন, যাঁদের আদালতের আপিল বিচারাধীন, তাঁদের ‘বিরক্ত করা হচ্ছে না’।

তবে আসামে নাগরিকত্ব মামলা নিয়ে কাজ করা আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়া অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রতিক অনেক ঘটনায় নিয়ম মেনে (ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমন্বয় করে) কাজ করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘যা ঘটছে তা আদালতের আদেশের ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপব্যাখ্যা।’

আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়া সম্প্রতি একটি ছাত্রসংগঠনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেছিলেন, যেখানে তাঁরা ‘জোরপূর্বক ও অবৈধ পুশ ব্যাক নীতি’ বন্ধ করার জন্য আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। তবে সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের প্রথমে আসাম হাইকোর্টে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তে দুই দেশের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ এলাকায় ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে ভারত। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে একটি ‘অসম্মানজনক কাজ’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট দুই দেশকেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসার আহ্বান জানিয়েছে।

কম্বোডিয়ার প্রিয়া বিহার প্রদেশের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থাই সামরিক বাহিনী একটি এক্সকাভেটর ব্যবহার করে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটি সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার আন সেস এলাকায় অবস্থিত ছিল।

প্রিয়া বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বৌদ্ধ ও হিন্দু অনুসারীদের কাছে পূজনীয় প্রাচীন মন্দির ও মূর্তি ধ্বংসের এই ঘটনা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।’ তবে থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সীমান্ত বিরোধের জের ধরে এ ধরনের কাজ অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘ভূখণ্ড নিয়ে দাবি যাই থাকুক না কেন, এ ধরনের অসম্মানজনক কাজ বিশ্বজুড়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়।’

ভারত আবারও উভয় পক্ষকে শান্তি বজায় রাখতে এবং জানমাল ও ঐতিহ্যের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সংলাপ ও কূটনীতির পথে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ঔপনিবেশিক আমলের সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের শুরু। গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের লড়াইয়ে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

বুধবার থেকে উভয় দেশের সামরিক কর্মকর্তারা আবারও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।

বিষ্ণু মূর্তি ধ্বংসের এই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল আশা করছে, সংঘাতের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান হবে। হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই বড়দিনের আনন্দ খুঁজছে ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে

গাজা উপত্যকায় গত দুই বছর ধরে চলা ধ্বংসলীলা আর লাশের মিছিলের মাঝেও বড়দিনের আনন্দ ফিরে পাওয়ার এক বিষাদময় চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানকার ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়। একটি নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি দিলেও, ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি আর বাস্তুচ্যুত মানুষের হাহাকার অনেক ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে।

৭৬ বছর বয়সী আত্তাল্লাহ তরাজি সম্প্রতি বড়দিনের উপহার হিসেবে এক জোড়া মোজা আর স্কার্ফ পেয়েছেন। গাজার কনকনে শীত থেকে বাঁচতে এগুলোই এখন তাঁর বড় সম্বল। গির্জার অন্যান্য সদস্যদের সাথে তরাজি যখন গাইলেন—‘খ্রিস্টের জন্ম হয়েছে, হালেলুইয়া’ (একটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ প্রভুর প্রশংসা), তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বিভীষিকা ঢাকা পড়েছিল বিশ্বাসের সুরে।

গাজার সেন্ট্রাল সিটি এলাকার ‘হলি ফ্যামিলি চার্চ’ কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেওয়া তরাজি বলেন, ‘আমরা এই পবিত্র মুহূর্তে যুদ্ধ, বিপদ আর বোমাবর্ষণের কথা ভুলে যেতে চাই। খ্রিস্টের জন্মের আনন্দ আমাদের সব তিক্ততাকে ছাপিয়ে যাক।’

তবে সবার জন্য উৎসবের অনুভূতি এক নয়। শাদি আবু দাউদের জন্য এবারের বড়দিনটি অত্যন্ত কষ্টের। গত জুলাই মাসে এই ক্যাথলিক চার্চ কম্পাউন্ডেই ইজরায়েলি হামলায় তাঁর মা নিহত হন ও ছেলে আহত হয়। ইজরায়েল একে ‘দুর্ঘটনা’ বলে দুঃখ প্রকাশ করলেও স্বজন হারানোর ক্ষত এখনও দগদগে। আবু দাউদ বলেন, জখম এখনও কাঁচা। এখানে কোনো উৎসব নেই, আমরা এখনও ‘না যুদ্ধ না শান্তি’র এক অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে বাস করছি।

গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে খ্রিস্টানদের সংখ্যা এখন নগণ্য। যুদ্ধের কারণে অনেক পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ২৩ বছর বয়সী ওয়াফা ইমাদ এলসায়েঘ জানান, বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়রা না থাকায় আগের মতো আমেজ নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে সাজসজ্জা করছি ঠিকই, কিন্তু যাদের সাথে সব আনন্দ ভাগ করে নিতাম, তারা আজ গাজায় নেই। এই পরিবেশ আগের মতো করে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’

৩৫ বছর বয়সী মা এলিনোর আমাশ তাঁর সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে ঘরে বড়দিনের গাছ (ক্রিসমাস ট্রি) সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানেরা কিছু চকলেট আর মিষ্টি পেয়ে বোমার ভয় ছাড়া শ্বাস নিতে পারছে। কিন্তু তাবুগুলোতে বসবাসকারী মানুষের কষ্ট দেখে চোখে জল আসে।’

গাজার খ্রিস্টানরা মনে করেন, তাঁরা সংখ্যায় যত কমই হোক না কেন, এটি এই ভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের এক অটল সাক্ষ্য। আত্তাল্লাহ তরাজি প্রার্থনা করেন যেন তাঁর জাতি শান্তি ও স্বাধীনতা পায়। তিনি বিশ্বাস করেন, এই পরিস্থিতির চেয়েও বড়দিনের আনন্দ এবং তাঁদের বিশ্বাস অনেক বেশি শক্তিশালী।

গত অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর গাজায় হামলার তীব্রতা কমলেও মাঝেমধ্যেই প্রাণঘাতী আঘাত আসছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইজরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।

অতিবৃষ্টিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের তাবুগুলো তলিয়ে গেছে, যা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মস্কোতে বিস্ফোরণ, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত তিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪২
মস্কোর ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিবিসি
মস্কোর ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিবিসি

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক বিস্ফোরণে দুজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা এবং আরেকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার তদন্ত সংস্থাগুলোর বরাতে জানা গেছে, দক্ষিণ মস্কোর ইয়েলেতস্কায়া স্ট্রিট এলাকায় এই বিস্ফোরণ ঘটে স্থানীয় সময় বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোরে। ঘটনাস্থলটি সেই জায়গার কাছে, যেখানে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক রুশ জেনারেল গাড়িবোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বিবৃতির বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটকের চেষ্টা করার সময় বিস্ফোরণটি ঘটে। পুলিশ কর্মকর্তারা যখন ওই ব্যক্তির কাছে যান, তখনই একটি বিস্ফোরক ডিভাইস সক্রিয় হয়ে যায়। বিস্ফোরণের ফলে ঘটনাস্থলেই দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারান। এ সময় তাঁদের পাশে থাকা আরেকজন ব্যক্তিও বিস্ফোরণে নিহত হন।

নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বয়স ছিল ২৪ ও ২৫ বছর। আল জাজিরার মস্কো প্রতিনিধি ইউলিয়া শাপোভালোভার তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে একজনের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি তাদের পরিবারের জন্য এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি।’ বিস্ফোরণের প্রকৃত উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণের শব্দ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। কাছাকাছি বসবাসকারী আলেক্সান্ডার নামের এক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘একটা ভয়ংকর শব্দ হয়েছিল, কয়েক দিন আগের গাড়ি বিস্ফোরণের মতোই।’ আরেক বাসিন্দা রোজা জানান, বিস্ফোরণের সময় তাঁদের পুরো ভবনটি কেঁপে ওঠে এবং তিনি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন।

বিস্ফোরণের পরপরই এলাকাটি ঘিরে ফেলে পুলিশ বাহিনী। রুশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তদন্তকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করেছে।

এই বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই এলাকার কাছে, যেখানে গত সোমবার রুশ জেনারেল ফানিল সারভারভ গাড়ির নিচে পেতে রাখা বিস্ফোরক ডিভাইসের মাধ্যমে নিহত হন। সারভারভ রুশ জেনারেল স্টাফের অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের জন্য সেনাদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

রাশিয়া জেনারেল সারভারভ হত্যার পেছনে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তবে ইউক্রেন এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও দখল করা ইউক্রেনীয় অঞ্চলে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনায় রুশ সামরিক কর্মকর্তা এবং এই যুদ্ধের সমর্থক বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শানলিউরফা: নবীদের যে নগরে মিলেছে তিন ধর্মের মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তুরস্কের শানলিউরফা শহর। ছবি: সিএনএন
তুরস্কের শানলিউরফা শহর। ছবি: সিএনএন

দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের শানলিউরফা শহরকে বলা হয় ‘নবীদের নগরী’। সিরিয়া সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ মাইল উত্তরে অবস্থিত এই শহরটি হাজার বছরের ইতিহাস, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির এক অনন্য সংযোগস্থল। এখানে ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম—এই তিন একেশ্বরবাদী ধর্মের কাহিনি এসে মিলেছে।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, শানলিউরফার পুরোনো শহরের দেরগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত নীলাভ পানির ‘বালিক্লিগোল’ বা ‘মাছের হ্রদ’। মূলত এখানে আছে দুটি পুকুর। ধর্মীয় মতে, দুটি পুকুরের বড়টিতে নবী ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করেছিলেন মেসোপটেমিয়ার রাজা নমরুদ। আল্লাহ তৎক্ষণাৎ ওই আগুনকে পানি এবং জ্বলন্ত কাঠকে মাছে রূপান্তরিত করেছিলেন। এ ছাড়া ‘আইনজেলিহা’ নামের ছোট পুকুরটির নামকরণ করা হয়েছে নমরুদের কন্যা জেলিহার নামে। ইব্রাহিম নবীর প্রতি বিশ্বাসের কারণে এই পুকুরে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জেলিহা প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস।

দুটি পুকুরই কালো দাগওয়ালা কার্প মাছে ভরা। এগুলোকে পবিত্র মনে করা হয়। তাই এই মাছগুলোকে ধরা বা এগুলোর ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই কারণেই বালিক্লিগোল শুধু একটি পর্যটনস্থল নয়, বরং গভীর ধর্মীয় আবেগ ও ইতিহাসের প্রতীক। মাছের গায়ে থাকা কালো দাগগুলোকে আগুনের ছাইয়ের চিহ্ন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

বালিক্লিগোলে ভেসে বেড়ায় কালো দাগওয়ালা কার্প মাছ। ছবি: সিএনএন
বালিক্লিগোলে ভেসে বেড়ায় কালো দাগওয়ালা কার্প মাছ। ছবি: সিএনএন

ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে শানলিউরফা নানা নামে পরিচিত ছিল। আরামীয়রা একে ডাকত উরহাই, গ্রিক শাসনামলে নাম ছিল এডেসা, আরব বিজয়ের পর নাম হয় রোহা। অটোমানেরা ১৬০৭ সালে এই নগরীর নাম রাখে উরফা। পরে ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিরোধের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্ত হয় ‘শানলি’, অর্থাৎ ‘গৌরবময়’।

এই শহরটি ইব্রাহিম (আ.), আইয়ুব (আ.), নূহ (আ.) ও জেথ্রোর মতো নবীদের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিশ্বাস করা হয়। পুরোনো শহরের দেরগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত বালিক্লিগোল মুসলিম তীর্থযাত্রীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এখানেই রয়েছে মেভলিদ-ই-হালিল গুহা। বিশ্বাস করা হয়, এখানেই জন্ম হয়েছিল ইব্রাহিম নবীর। নারীরা সন্তান কামনায় ও আরোগ্য লাভের আশায় এই গুহায় আসেন।

তবে শানলিউরফার ইতিহাস শুধু ধর্মগ্রন্থেই সীমাবদ্ধ নয়। শহরটি থেকে ১৪ মাইল দূরেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। প্রায় ১১-১২ হাজার বছরের পুরোনো এই স্থাপনাটি মানবসভ্যতার ধারণাকেই বদলে দিয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৯৬০০ সালের এই নিওলিথিক স্থাপনাটি কৃষি ও মৃৎশিল্পের আগেই নির্মিত—যা প্রমাণ করে, ধর্মীয় আচার হয়তো সভ্যতার সূচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানে পাওয়া টি-আকৃতির স্তম্ভ ও খোদাই করা পশুর ভাস্কর্য বিশ্বব্যাপী বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। ছবি: সিএনএন
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। ছবি: সিএনএন

শানলিউরফা প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে ১০ হাজারের বেশি নিদর্শন। এর মধ্যে ‘উরফা ম্যান’ নামের ১১ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো মানব মূর্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাশেই হালেপলিবাহচে মোজাইক জাদুঘর ও কিজিলকয়ুন নেক্রোপলিস শহরের রোমান যুগের ইতিহাস তুলে ধরে।

ইতিহাস ও ধর্মের পাশাপাশি শানলিউরফা খাবার ও আতিথেয়তার জন্যও বিখ্যাত। উরফা কাবাব, পাটলিজান কাবাব, চি কফতে ও শিল্লিক তাতলিসি এখানকার জনপ্রিয় খাবার। স্থানীয়দের সঙ্গে ধীরে চা পান, পুরোনো বাজারে হাঁটা আর ‘সিরা গেসেসি’ নামের সাংস্কৃতিক আড্ডায় অংশ নিলে বোঝা যায়—এই শহর শুধু দেখার নয়, অনুভব করারও।

শানলিউরফা নগরীতে ‘সিরা গেসেসি’ নামে রাতের আড্ডা। ছবি: সিএনএন
শানলিউরফা নগরীতে ‘সিরা গেসেসি’ নামে রাতের আড্ডা। ছবি: সিএনএন

বলা যায়—শানলিউরফা যেন এক জীবন্ত জাদুঘর; যেখানে ধর্ম, ইতিহাস ও মানবসভ্যতার গল্প একসূত্রে গেঁথে পাশাপাশি হাঁটে অতীত ও বর্তমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত