Ajker Patrika

রণজিৎ গুহ: বামপন্থী কর্মী থেকে নিম্নবর্গের ইতিহাসবিদ

আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৭: ০১
রণজিৎ গুহ: বামপন্থী কর্মী থেকে নিম্নবর্গের ইতিহাসবিদ

আসছে মে মাসের ২৩ তারিখে শতবর্ষে পা রাখতেন তিনি। তাঁর ভক্ত, শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীরা দিনটি সাড়ম্বরে উদ্‌যাপনের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু সকলের সেই উদ্যোগ নস্যাৎ করে দিয়ে আজ শনিবার ভোরে দেহত্যাগ করলেন তিনি। তিনি রণজিৎ গুহ। একটু ইতিহাস জানা মানুষমাত্রই জানেন, তিনি ছিলেন ভারতীয় ইতিহাসবিদদের মধ্যে কিংবদন্তিতুল্য। 

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রণজিৎ গুহের বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর। তিনি স্ত্রীর সঙ্গে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার উডসে বসবাস করতেন। সেখানেই নিজ বাসভবনে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। 

রণজিৎ গুহ শীর্ষ বাঙালি ইতিহাসবিদদের অন্যতম। ১৯২৩ সালের ২৩ মে অবিভক্ত ভারতের বাকেরগঞ্জের (ঝালকাঠির জেলার নলছিটি) সিদ্ধকাঠি গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। গত শতকের তিরিশের দশকে তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় পাড়ি জমান। 

ইতিহাস গবেষণায় তিনি যে কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন, তা ঈর্ষণীয়, একই সঙ্গে তুঙ্গস্পর্শী তো বটেই। তাঁর গবেষণাকর্মগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। 

রণজিৎ গুহ। ছবি: টুইটার২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ ক্রিস মাঞ্জাপ্রার সঙ্গে ‘বাঙালি বুদ্ধিজীবীর মৌখিক ইতিহাস প্রকল্প’ নিয়ে কাজ করেছিলেন রণজিৎ গুহ। সে সময় তিনি এক বক্তৃতায় পূর্ব বাংলায় (বর্তমানে বাংলাদেশ) তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা, পারিবারিক পটভূমি ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত বলেছিলেন। 

রণজিৎ জানান, কৈশোরকালেই তিনি ডিএইচ লরেন্স, দস্তয়েভস্কি মাইকেল মধুসূদন দত্ত পড়ে ফেলেছিলেন। কীভাবে সাহিত্য ও ইতিহাসের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মেছিল, সেসবও বলেছিলেন তিনি। 

রণজিৎ গুহ নিঃসন্দেহে বেঁচে থাকবেন উত্তর-ঔপনিবেশিক ও নিম্নবর্গের ইতিহাসের পথিকৃৎ হিসেবে। ভারতের কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে ভিন্নধর্মী ইতিহাস লিখেও তিনি চিরস্মরণীয় স্থান দখল করেছেন। 

রণজিতের বাবা ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। তিনি দেশ ভাগেরও আগে ১৯৩৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে পেশা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে সেখানেই পরিবার নিয়ে থিতু হন। 

কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন রণজিৎ গুহ। পরে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। 

২০০৯ সালের এক সাক্ষাৎকারে রণজিৎ তাঁর জীবনে প্রেসিডেন্সি কলেজের অবদানের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে বুদ্ধজীবী ভাবি না, এমনকি রাজনৈতিক কর্মীও ভাবি না। আমি শুধু নিরলসভাবে একাডেমিক কাজ করে গেছি। আর আমার এ কাজের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে প্রেসিডেন্সি কলেজ।’ 

গত শতকের চল্লিশের দশকে রণজিৎ গুহ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেও নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৪৫ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ডেমোক্র্যাটিক ইয়ুথে যোগ দিতে লন্ডন গিয়েছিলেন। সে সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড তুলে তাঁর লন্ডন যাত্রার খরচ জোগাড় করেছিল। 

পরের সাত বছরও তিনি কমিউনিস্ট পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৫৩ সালে হঠাৎ তাঁর মনে হয়, তিনি আরও বেশি গবেষণায় মনোযোগ দেবেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি ওই বছরেই লন্ডন থেকে কলকাতা ফিরে আসেন। 

তিনি স্ত্রী মেকঠিল্ড গুহর সঙ্গে রণজিৎ গুহ। ছবি: পারমানেন্ট ব্ল্যাক১৯৫৩ সালে চন্দন গড় কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন রণজিৎ গুহ। এরপর সেখান থেকে সেন্ট্রাল কলকাতা কলেজে (বর্তমানে মাওলানা আজাদ কলেজ) যোগ দেন। তবে তাঁর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই চাকরি চলে যায়। 

রণজিৎ গুহ এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। কলকাতার এ বিশ্ববিদ্যালয়টি উদারতাবাদী একাডেমিশিয়ানদের জন্য লীলাভূমি ছিল। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি শেষ করে এসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগ খুলেছিলেন। 

১৯৫৯ সালে রণজিৎ গুহ ফেলোশিপ নিয়ে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। এরপর ১৯৬৩ সালে ‘দ্য রুল অফ প্রোপার্টি ফর বেঙ্গল’ নামে সাড়া জাগানো প্রবন্ধ লিখে ফেলেন রণজিৎ গুহ। 

কিন্তু রণজিৎ গুহের গবেষণাজীবনের প্রথম দিককার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। ১৯৬১ সালে তাঁর বিখ্যাত দ্য রুল অব প্রোপার্টি ফর বেঙ্গল প্রবন্ধটি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্রে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে সেটি প্রত্যাখ্যাত হয়। পরে প্যারিসেরই প্রকাশনা সংস্থা মাউটন থেকে তাঁর গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। 

১৯৬০ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত রণজিৎ গুহ সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এই সময়ে তিনি কোনো গবেষণা প্রবন্ধ কিংবা বই প্রকাশ করেননি। এমনকি কোনো একাডেমিক সম্মেলনেও যোগ দেননি। 

তবে এই স্বেচ্ছাগোপনে থাকার সময়ে তিনি কলকাতায় তাঁর সমসাময়িক বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। ‘ভারতীয় সামাজিক আন্দোলনের ওপর গান্ধীবাদী প্রভাব’ বিষয়ক গবেষণা কাজের জন্য ১৯৭০-৭১ সালে তিনি ভারতে ছিলেন। তখন তাঁর মনোযোগ ছিল ভারতের কৃষক বিদ্রোহের দিকে। তাঁর বিখ্যাত গবেষণা প্রবন্ধটি ১৯৮৩ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। 

রণজিৎ গুহের লেখা কয়েকটি বই। ছবি: টুইটাররণজিৎ কখনোই শিকড়কে ভোলেননি। তিনি ১৯৮২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ‘নিম্নবর্গের ইতিহাস’ নামে প্রবন্ধ পড়েছেন। পরে সেটি বিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী জার্নাল ‘এক্ষণ’ এ প্রকাশিত হয়। 

পরবর্তী দুই দশক ছিল রণজিৎ গুহের বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের স্বর্ণসময়। কয়েক খণ্ডে ‘সাবঅল্টার্ন স্টাডিজ’ প্রকাশ করা ছাড়াও এ সময়ে তিনি তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতা ও প্রবন্ধের ওপর ভিত্তি করে বই প্রকাশ করেছেন। 

১৯৮০ সালে রণজিৎ গুহ সাসেক্স থেকে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন। এরপর ১৯৮৮ সালে অধ্যাপনা থেকে অবসর নেন। অবসরজীবন তিনি স্ত্রী মেখঠিল্ড গুহকে নিয়ে অস্ট্রিয়ার এক শহরতলিতে কাটিয়ে দিয়েছেন।

অবসরে গেলেও তিনি তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা থেকে কখনোই অবসর নেননি। সমসাময়িক তরুণদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। সেই সময়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো তরুণ কবিদের সঙ্গেও তাঁর ছিল নিবিড় সখ্য। 

অবসরে যাওয়ার কয়েক বছর পরেই রণজিৎ ঘোষণা দেন, এখন থেকে তিনি শুধু বাংলা ভাষায় লিখবেন। তাঁর এ ঘোষণা সবাইকে বিস্মিত করেছিল। সকলের বিস্ময়কে আরও উসকে দিয়ে তিনি পরবর্তী জীবনে বহু প্রবন্ধ ও বই বাংলায় লিখেছেন। 
আজ এই কিংবদন্তির জীবনাবসান হলো। কিন্তু বাঙালির ইতিহাসচর্চা যত দিন থাকবে, তত দিন তিনি বেঁচে থাকবেন নিঃসন্দেহে। 

স্ক্রল ডট ইন থেকে অনুবাদ করেছেন মারুফ ইসলাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান আর নেই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মসজিদে নববীর প্রয়াত মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান। ছবি: সংগৃহীত
মসজিদে নববীর প্রয়াত মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান। ছবি: সংগৃহীত

মদিনার পবিত্র মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান আর নেই। দীর্ঘ ২৫ বছর এই পবিত্র দায়িত্ব পালনের পর গতকাল মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

শেখ ফয়সাল নোমান ২০০১ সালে মুয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁকে ফজর নামাজের পরপরই মদিনার আল-বাকি কবরস্থানে দাফন করা হয়। আল-বাকি কবরস্থান জান্নাতুল বাকি নামেও পরিচিত। এটি মদিনার সবচেয়ে প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি গোরস্তান। রাসুলুল্লাহর (সা.) পরিবারের সদস্য, স্ত্রী ও সাহাবীদেরসহ হাজার হাজার প্রারম্ভিক যুগের মুসলিমদের শেষ আশ্রয়স্থল এটি।

শেখ ফয়সালের মৃত্যুর পর মসজিদে নববী কর্তৃপক্ষ তাঁর দেওয়া শেষ আজানের একটি আবেগঘন ভিডিও শেয়ার করেছে। গত ২ নভেম্বর তিনি এই শেষ আজানটি দিয়েছিলেন।

আজানের সুর যেন শেখ ফয়সালের রক্তে মিশে ছিল। তাঁর পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই মহান সেবার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর বাবা ও দাদা—উভয়েই এই পবিত্র মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর দাদা যেমন মুয়াজ্জিন ছিলেন, তেমনি তাঁর বাবাও মাত্র ১৪ বছর বয়সে এই পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ৯০ বছরের বেশি বয়সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে তাঁর বাবা এই খেদমত করে গেছেন। বাবার ইন্তেকালের পরই শেখ ফয়সাল নোমানকে মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

দুই পবিত্র মসজিদের ধর্মীয় বিষয়াবলি সংক্রান্ত প্রেসিডেন্সির প্রধান শেখ ডক্টর আবদুর রহমান আল-সুদাইস তাঁর নিজের এবং মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও কর্মীদের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

শেখ সুদাইস মরহুম মুয়াজ্জিনের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন যে, আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন এবং মসজিদে নববীতে দীর্ঘকাল আজান দেওয়ার জন্য তাঁকে উত্তম প্রতিদান দেন। একইসঙ্গে তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাঁদের ধৈর্য ধারণের শক্তি কামনা করেন।

উল্লেখ্য, এই বছরের শুরুর দিকে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি এবং কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারসের প্রধান শেখ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ আল আল-শেখ ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এক রাজকীয় ডিক্রির মাধ্যমে শেখ ডক্টর সালেহ বিন ফাওজান বিন আবদুল্লাহ আল-ফাওজানকে নতুন গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিযুক্ত করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীনের ক্রমবর্ধমান সমরসজ্জার সামনে ‘অরক্ষিত’ যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ওয়াশিংটন চীনের বিরুদ্ধে কোনো জবরদস্তিমূলক কৌশল নিচ্ছে না, তবে বেইজিংয়ের ‘ঐতিহাসিক’ সমরসজ্জা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রমেই অরক্ষিত করে তুলছে। চীনের সামরিক উন্নয়ন সংক্রান্ত কংগ্রেসের বার্ষিক প্রতিবেদনে পেন্টাগন এমনটাই জানিয়েছে। খবর হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের।

গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ১০০ পৃষ্ঠার সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমরা চীনের টুটি চেপে ধরতে, আধিপত্য বিস্তার করতে কিংবা হেয় করতে চাই না...আমরা শুধু চাই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কোনো দেশ যেন আমাদের বা আমাদের মিত্রদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে।’

এতে আরও যোগ করা হয়, ‘চীনের ঐতিহাসিক সমরসজ্জা বা সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে মার্কিন ভূখণ্ড আগের চেয়ে বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।’ বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান পরমাণু অস্ত্রভান্ডার, নৌ-শক্তি, প্রথাগত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, সাইবার এবং মহাকাশ গবেষণার সক্ষমতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এসব সরাসরি আমেরিকানদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

এই প্রতিবেদনে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, আমেরিকার লক্ষ্য হলো—নিজেদের এতটাই শক্তিশালী করে তোলা যাতে শত্রুপক্ষ আগ্রাসনের কথা চিন্তাও না করে, ‘এবং এর ফলে শান্তি পছন্দনীয় ও সংরক্ষিত থাকে।’

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বারবার উচ্চারিত একটি বিষয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ওয়াশিংটনের বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে আমেরিকা ও চীনের সামরিক সম্পর্ক গত কয়েক বছরের মধ্যে সেরা অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক বহু বছরের তুলনায় এখন অনেক বেশি শক্তিশালী।’ পেন্টাগন পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সঙ্গে এই গতি বজায় রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে বলেও জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কৌশলগত স্থিতিশীলতা, বিবাদ নিরসন এবং উত্তেজনা প্রশমনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা পিএলএ-এর সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ আরও বিস্তৃত করার মাধ্যমে এটি সম্পন্ন করব। আমাদের শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য পরিষ্কার করার জন্য আমরা অন্যান্য পথও খুঁজব।’

প্রতিবেদনটিতে চীনের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতাকে উদ্বেগের কারণ এবং সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের প্রধান সামরিক কৌশল হলো ‘জাতীয় সর্বাত্মক যুদ্ধ’ বা সমগ্র জাতির সংহতি অভিযানের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাস্ত করা।

‘পিপলস রিপাবলিক অব চায়না সংশ্লিষ্ট সামরিক ও নিরাপত্তা উন্নয়ন’—শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা সামরিক বাহিনী ২০২৭ সালের তিনটি লক্ষ্য অর্জনে স্থিরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্যগুলো হলো—তাইওয়ানের ওপর ‘কৌশলগত চূড়ান্ত বিজয়’ অর্জনে সক্ষম হওয়া; পরমাণু এবং অন্যান্য কৌশলগত ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘কৌশলগত ভারসাম্য’ তৈরি করা এবং অঞ্চলের অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে ‘কৌশলগত প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ’ প্রতিষ্ঠা করা।

বেইজিং তাইওয়ানকে চীনের অংশ মনে করে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও পুনরায় একীভূত করতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অধিকাংশ দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, তবে ওয়াশিংটন এই স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটিকে শক্তি প্রয়োগ করে দখল করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধী এবং তারা তাইওয়ানকে অস্ত্র সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বার্ষিক প্রতিবেদনে লক্ষ্য করা গেছে, বেইজিং এবং মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে—সম্ভবত ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলার অভিন্ন স্বার্থে।’ তবে এতে এও বলা হয়েছে যে, তাদের পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে এই সহযোগিতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএস) প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পর এল। সেই কৌশলটিও শুক্রবার অনেকটা অনাড়ম্বরভাবে প্রকাশ করা হয়েছিল, যেখানে চীনের চেয়ে অভ্যন্তরীণ ইস্যু এবং প্রশাসনের ভাষায় ‘মনরো ডকট্রিনের ট্রাম্প অনুসিদ্ধান্ত’—যা পশ্চিম গোলার্ধের কৌশলগত গুরুত্বের ওপর জোর দেয়—সেদিকে বেশি নজর দেওয়া হয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, মঙ্গলবারের প্রতিবেদনটি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এতে কোনো সূচিপত্র নেই এবং কিছু অংশ সেকেলে বা পুরোনো মনে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, এতে চীন ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ‘খুবই সামান্য উচ্চপর্যায়ের বিনিময়সহ’ শীতল সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে, অথচ গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে চীনের বিশাল সামরিক প্যারেডে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়নি।

তা সত্ত্বেও, বিশ্লেষকদের মতে এই প্রতিবেদনটি পেন্টাগন এবং হোয়াইট হাউস দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কীভাবে দেখছে, তার একটি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। ইউরেশিয়া গ্রুপের সিনিয়র অ্যানালিস্ট জেরেমি চ্যান বলেন, ‘প্রতিবেদনের সুরটি চীনের প্রতি বিশেষভাবে গঠনমূলক, যেখানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে জোর দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদিও এই দাবিটি প্রশ্নবিদ্ধ, তবে এটি ট্রাম্পের চীন নীতি এবং গত অক্টোবরে বুসানে হওয়া সমঝোতা বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো বিষয়ে বেইজিংকে চাপ দিতে তাঁর অনীহার সংকেত দেয়।’

শেনিয়াংয়ের মার্কিন কনস্যুলেটের সাবেক কর্মকর্তা চ্যান মনে করেন, প্রতিবেদনটি চীনের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং অগ্রগতির বিষয়টি স্বীকার করলেও খুব দূরের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেনি। তিনি বলেন, ‘চীনের সামরিক শক্তি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। চীনের এই ক্রমবর্ধমান সামরিক সক্ষমতার স্বীকৃতি পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতির ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানে ফিরতে চান ইমরান খানের দুই পুত্র, ভিসার আবেদন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৩
ইমরান খানের ছেলেরা দেশে ফিরে আসতে চান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের ছেলেরা দেশে ফিরে আসতে চান। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের দুই পুত্র দেশে ফিরতে চান। এরই মধ্যে তাঁরা ভিসার আবেদনও করেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন পিটিআই ঘনিষ্ঠ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বাবর আওয়ান।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বাবর আওয়ান জানিয়েছেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের ওপর যদি এমন ‘নিপীড়ন’ চলতেই থাকে, তবে তাঁর ছেলেরা দেশে ফিরে আসতে পারেন। তিনি আরও জানান, তাঁরা ফেরার জন্য ইতিমধ্যে ভিসার আবেদনও করেছেন।

ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বাবর আওয়ান বলেন, ‘ছেলেদের নিয়ে একটা উদ্বেগ আছে যে, যদি তাঁদের (ইমরান খানের সঙ্গে) কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে তাঁরা ফিরে আসতে পারেন। আমিও এই উদ্বেগের অংশীদার। যদি এই অবিচার চলতেই থাকে, তবে তাঁরা অবশ্যই ফিরে আসবেন।’

প্রবীণ এই আইনজীবী স্পষ্ট করে বলেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার ছেলেরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আইন অনুযায়ী সপ্তাহে অন্তত একবার তাঁদের বাবার সঙ্গে কথা বলতে দেওয়ার কথা, অথচ মাসের পর মাস কেটে গেলেও কোনো যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি।’

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ও ওয়ানডে ফরম্যাটে পাকিস্তানের হয়ে একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ী দলের নেতৃত্ব দেওয়া ইমরান খানের সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হবে না বলে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন আওয়ান। তিনি বলেন, এমন নির্দেশ দেওয়ার কোনো আইনি এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘আইন অনুযায়ী এটি দুটি অপরাধ—কর্তৃত্বের অপব্যবহার এবং সংবিধান লঙ্ঘন।’

আওয়ান ব্যাখ্যা করেন, কেবল আদালত—যিনি একজন বন্দীকে জেলে পাঠান—এবং জেল কর্তৃপক্ষেরই আইনগত অধিকার আছে সাক্ষাৎ নিয়ন্ত্রণ বা অনুমতি দেওয়ার। আওয়ান বলেন, ‘অন্য কারও এই ক্ষমতা নেই। কোন অধিকারে এই মন্ত্রীরা সাক্ষাৎ বন্ধ করেছেন?’

নওয়াজ শরিফ ও শাহবাজ শরিফের কারাবন্দী সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁরা জেলের ভেতর বৈঠক করেছেন এবং ন্যাব (ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো) হেফাজতে থাকাকালীন একবারে ‘৫০ জন দর্শনার্থীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন। আওয়ান বলেন, ‘একমাত্র ভয় কেবল পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়েই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের সঙ্গে সিরিয়ার মন্ত্রীদের বৈঠক, আলোচনায় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন সিরিয়ার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা। ছবি: সংগৃহীত
মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন সিরিয়ার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা। ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই বৈঠকে সামরিক শিল্প খাতে ‘কৌশলগত সহযোগিতা’ সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সিরিয়ান আরব নিউজ এজেন্সি (সানা) জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার পুতিনের সঙ্গে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ হাসান আল-শাইবানি এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুরহাফ আবু কাসরার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক বিষয়গুলো গুরুত্ব পেলেও মূল আলোকপাত ছিল প্রতিরক্ষা খাতের ওপর।

সানার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুতিন ও সিরিয়ার মন্ত্রীরা প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে সিরীয় সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো, সামরিক সরঞ্জামের আধুনিকায়ন, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে সহযোগিতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সানা আরও জানায়, বৈঠকে দুই পক্ষ সামরিক ও কারিগরি অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নেওয়ার উপায়গুলো পর্যালোচনা করেছে। এর লক্ষ্য হলো—সিরীয় আরব সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালী করা এবং সামরিক শিল্পের আধুনিক অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা।

সংবাদ সংস্থাটির তথ্যমতে, দুই পক্ষ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়েও কথা বলেছে। আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে দামেস্ক ও মস্কোর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমন্বয়ের গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে সেখানে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সিরিয়ার পুনর্গঠন প্রকল্প, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিনিয়োগসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

পুতিন সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি রাশিয়ার ‘অবিচল সমর্থন’ পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বারবার হামলার নিন্দা জানিয়ে একে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

গত ডিসেম্বরে মস্কোর সাবেক মিত্র ও সিরিয়ার দীর্ঘকালীন শাসক বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দামেস্কের নতুন কর্তৃপক্ষের এটিই সর্বশেষ মস্কো সফর। দীর্ঘ ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে আসাদ সরকারের প্রধান সহযোগী ছিল রাশিয়া। আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে তারা গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা এবং বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালিয়েছে।

আসাদ ও তাঁর পরিবার রাশিয়ায় আশ্রয় নিলেও মস্কো এখন দামেস্কের নতুন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগর উপকূলে অবস্থিত হামেইমিম বিমানঘাঁটি এবং তারতুস নৌঘাঁটি ব্যবহারের চুক্তিগুলো বহাল রাখতে চাইছে রাশিয়া, যেখানে এখনো তাদের সেন উপস্থিতি রয়েছে।

গত অক্টোবরে সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা রাশিয়া সফর করেন। সে সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, দামেস্ক ও মস্কোর মধ্যে অতীতে হওয়া সব চুক্তি তার সরকার মেনে চলবে। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, আসাদ-পরবর্তী যুগেও রুশ সামরিক ঘাঁটিগুলো নিরাপদ থাকবে।

আল-শারার সফরের সময় পুতিন বলেছিলেন যে, দুই দেশের সম্পর্ক নবায়নের ক্ষেত্রে ‘অনেক আকর্ষণীয় ও দরকারী সূচনা’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং রাশিয়া এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। মঙ্গলবার রুশ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই সফরের অংশ হিসেবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল-শাইবানির সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এর আগে জুলাই মাসে মস্কো সফরের সময় আল-শাইবানি বলেছিলেন, তাঁর দেশ রাশিয়াকে ‘পাশে’ চায়। লাভরভকে তিনি তখন বলেন, ‘বর্তমান সময়টি নানা চ্যালেঞ্জ ও হুমকিতে ভরা, তবে এটি একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী সিরিয়া গড়ার সুযোগও বটে। আর এই পথে আমরা অবশ্যই রাশিয়াকে আমাদের পাশে পেতে আগ্রহী।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত