Ajker Patrika

দিল্লির উপকণ্ঠে ভুয়া দূতাবাস: বেরিয়ে আসছে প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, ২৩: ১৬
উত্তর প্রদেশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের হাতে আটক হর্ষবর্ধন জৈন। ছবি: সংগৃহীত
উত্তর প্রদেশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের হাতে আটক হর্ষবর্ধন জৈন। ছবি: সংগৃহীত

দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদে আট বছর ধরে একটি ভুয়া দূতাবাস চালাচ্ছিলেন হর্ষবর্ধন জৈন। তাঁর বিষয়ে তদন্ত শুরু হওয়ার পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রায় ৩০০ কোটি রুপির কেলেঙ্কারি, গত ১০ বছরে ১৬২টি বিদেশ ভ্রমণ ও একাধিক বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে তাঁর সম্ভাব্য যোগসূত্র মিলেছে। পুলিশের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

গত সপ্তাহে গাজিয়াবাদের একটি ভাড়া করা দোতলা বাড়ি থেকে জৈন গ্রেপ্তার হন। ওই বাড়িকেই তিনি দূতাবাস বলে দাবি করেছিলেন। উত্তর প্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) তদন্তে জানা গেছে, জৈন চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং হাওয়ালা রুটের মাধ্যমে অর্থ পাচারেও যুক্ত ছিলেন।

গাজিয়াবাদের ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ভুয়া কূটনৈতিক নম্বরপ্লেটযুক্ত চারটি গাড়ি, জাল নথি ও একটি বিলাসবহুল ঘড়ির সংগ্রহ জব্দ করেছে। পুলিশ আগামীকাল সোমবার আদালতে জৈনকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানাবে। পুলিশ জানিয়েছে, জৈন প্রায় ৩০০ কোটি রুপির কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।

গাজিয়াবাদের বিলাসবহুল দোতলা ভবনের বাইরে একটি নেমপ্লেটে লেখা ছিল, ‘গ্র্যান্ড ডাচি অব ওয়েস্টার্কটিকা’ ও ‘এইচ ই এইচভি জৈন অনারারি কনসাল’। এই প্রাঙ্গণে ভারত ও ওয়েস্টার্কটিকার পতাকা ছিল। এই দেশ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের একটি মাইক্রোনেশন (ছোট দ্বীপ দেশ), বিশ্বের কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত কোনো দেশ নয়।

তদন্তকারীদের মতে, জৈন এই ভুয়া দূতাবাসকে নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করতেন। এর মাধ্যমে বিদেশে চাকরির লোভ দেখিয়ে প্রতারিত করতেন। তদন্তে জানা গেছে, এই ভুয়া দূতাবাস ২০১৭ সাল থেকে চলছিল। জৈন লোকদেখানোর জন্য ‘দূতাবাসের’ বাইরে দাতব্য অনুষ্ঠান, এমনকি ভান্ডারার (সম্প্রদায় ভোজ) আয়োজন করতেন। তিনি ছয় মাস আগে ভবনটি ভাড়া নিয়েছিলেন। যদিও তিনি প্রায় আট বছর ধরে একটি ভুয়া দূতাবাস চালাচ্ছিলেন।

এক রহস্যময় ধর্মগুরুর যোগসূত্র পেয়েছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
এক রহস্যময় ধর্মগুরুর যোগসূত্র পেয়েছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

ভুয়া দূতাবাসে তল্লাশির সময় পুলিশ জৈনের বিতর্কিত ‘গডম্যান’ চন্দ্রস্বামী ও সৌদি অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগির সঙ্গে ছবি খুঁজে পায়। স্বঘোষিত গডম্যান চন্দ্রস্বামী ৮০ ও ৯০-এর দশকে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে তাঁকে তিন প্রধানমন্ত্রী—পিভি নরসীমা রাও, চন্দ্র শেখর ও ভিপি সিংয়ের আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১৯৯৬ সালে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তিনি গ্রেপ্তার হন। তাঁর আশ্রমে তল্লাশি চালিয়ে খাশোগির সঙ্গে তাঁর লেনদেনেরও প্রমাণ পাওয়া যায়। চন্দ্রস্বামীর বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য অর্থায়নের অভিযোগও ছিল।

ইউপি এসটিএফ জানতে পেরেছে, চন্দ্রস্বামীই জৈনকে খাশোগি ও প্রতারক আহসান আলী সাঈদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। অভিযোগ করা হয়েছে যে, সাঈদ জৈনের সঙ্গে ২৫টি শেল কোম্পানি খুলতে কাজ করেছিলেন। এ ধরনের কোম্পানি অর্থ পাচারের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণকারী সাঈদ পরে তুর্কি নাগরিকত্ব নেন।

সাঈদ সুইজারল্যান্ডে ‘ওয়েস্টার্ন অ্যাডভাইজরি গ্রুপ’ নামে একটি কোম্পানি চালাতেন। এই কোম্পানি বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করত এবং ব্রোকারেজের বিনিময়ে ঋণ পেতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিত। অভিযোগ রয়েছে, এই কোম্পানি প্রায় ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড—প্রায় ৩০০ কোটি রুপি—ব্রোকারেজ সংগ্রহ করে সুইস অঞ্চল থেকে পালিয়ে যায়। আহসান ২০২২ সালে লন্ডনে গ্রেপ্তার হন। পুলিশ এখন এই বিশাল কেলেঙ্কারিতে জৈনের জড়িত থাকার মাত্রা তদন্ত করছে। এর আগে পুলিশ জানতে পেরেছিল, জৈন ভুয়া দূতাবাস ও কূটনৈতিক ছদ্মবেশ ব্যবহার করে নেটওয়ার্কিং করতেন এবং মানুষকে চাকরির লোভ দেখাতেন।

জৈনের গ্রেপ্তারের পর ওয়েস্টার্কটিকা একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘২০১৬ সালে এইচ ভি জৈন ওয়েস্টার্কটিকাকে একটি বড় অনুদান দিয়েছিলেন। পরে আমাদের আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবকদের দলে যোগদানের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। এই স্বেচ্ছাসেবক দল নিজ নিজ দেশে আমাদের পরিবেশগত ও দাতব্য মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁর আনুষ্ঠানিক পদবি ছিল ‘ভারতের অনারারি কনসাল’। তাঁকে কখনই রাষ্ট্রদূতের পদ বা ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রতারণা ও অন্যান্য অপরাধের জন্য তাঁর সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের সময়, জৈনের কাছে কূটনৈতিক নম্বরপ্লেট, পাসপোর্ট ও ওয়েস্টার্কটিকার সিলমোহরযুক্ত অন্যান্য জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। একজন অনারারি কনসাল হিসেবে এই জিনিসগুলো তৈরি করার কোনো অনুমোদন ছিল না। ওয়েস্টার্কটিকা নিজেই নম্বরপ্লেট বা পাসপোর্ট ব্যবহার করে না এবং আমরা কখনোই আমাদের প্রতিনিধিদের এটি করতে অনুমতি বা উৎসাহিত করিনি। তাঁর বাড়িকে ‘‘দূতাবাস’’ বলে অভিহিত করে জৈন আমাদের প্রতিনিধিদের জন্য ওয়েস্টার্কটিকার প্রোটোকল লঙ্ঘন করেছেন।’

ওয়েস্টার্কটিকা কী

মার্কিন নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ট্র্যাভিস ম্যাকহেনরি ২০০১ সালে ওয়েস্টার্কটিকা মাইক্রোনেশনটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজেকে এর গ্র্যান্ড ডিউক নিযুক্ত করেন। অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত ওয়েস্টার্কটিকার আয়তন ৬ লাখ ২০ হাজার বর্গমাইল। ম্যাকহেনরি অ্যান্টার্কটিক চুক্তি ব্যবস্থার একটি ফাঁক ব্যবহার করে নিজেকে সেখানকার শাসক নিযুক্ত করেন। যদিও চুক্তিটি দেশগুলোকে অ্যান্টার্কটিকার অংশ দাবি করতে বাধা দেয়। তবে এই চুক্তি ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিষয়ে কিছু বলে না।

ওয়েস্টার্কটিকা দাবি করে, তাদের ২ হাজার ৩৫৬ জন নাগরিক রয়েছে। তবে তাঁদের কেউই সেখানে বাস করেন না। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গ্র্যান্ড ডাচি অব ওয়েস্টার্কটিকা একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। তারা জলবায়ু পরিবর্তন ও অ্যান্টার্কটিকা সম্পর্কে সচেতনতা প্রচার করে। তাদের নিজস্ব পতাকা, মুদ্রা ও টাইটেলও রয়েছে। তবে কোনো সরকার তাদের স্বীকৃতি দেয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি সফল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট তিনটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বাত্মক নৌ অবরোধ’ ঘোষণার পর থেকে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ড বর্তমানে একটি তেল ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা জাহাজটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই অভিযান নিয়ে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর কেভিন হ্যাসেট আজ জানিয়েছেন, এর আগে জব্দ করা দুটি ট্যাংকার ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ বা কালোবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দেশে তেল সরবরাহ করছিল।

কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, এই আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কেবল কালোবাজারি জাহাজগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক ও তেল ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। একজন তেল ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামীকাল সোমবার এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট ভেসেলগুলোর ওপর অন্তত দুই ডজন সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এসব সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫২
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত